লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
কমপিউটার বিজ্ঞান শিক্ষায় মাইক্রোসফটের বিনিয়োগ ও আমাদের করণীয়
কমপিউটার বিজ্ঞান শিক্ষায় মাইক্রোসফটের বিনিয়োগ ও আমাদের করণীয়
বিশ্বের বিভিন্ন ও দেশের জগৎ খ্যাত নামী-দামী প্রতিষ্ঠানগুলো কমপিউটার বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরও বেশি মূলধারার শিক্ষা হিসেবে পরিচয় করাতে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি দেয়াসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। বলা যায়, এ ধারায় অনেকটাই এগিয়ে আছে অপারেটিং সিস্টেমের জগতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট।
কমপিউটার বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরও বেশি মূলধারায় শিক্ষা হিসেবে পরিচয় করাতে তিন বছরের একটি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে মাইক্রোসফট। এই উদ্যোগ সফল করতে সাড়ে ৭ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা এই প্রতিষ্ঠানটি। মাইক্রোসফট এই অর্থ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের স্কুলগুলোতে দেবে। কমপিউটার বিজ্ঞান শিক্ষা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে সেলসফোর্সের বার্ষিক ড্রিমফোর্স সম্মেলনে সত্য নাদেলা সাড়ে ৭ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। ২০১২ সালে ‘ইয়ুথস্পার্ক উদ্যোগ’ নামে যে উদ্যোগ নিয়েছিল এই ঘোষণা তারই অংশ বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট।
কমপিউটার বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরও বেশি মূলধারায় শিক্ষা হিসেবে পরিচয় করাতে মাইক্রোসফট তিন বছরের একটি বিশেষ পরিকল্পনায় এই অর্থ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের স্কুলগুলোতে দেবে। নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই অর্থ স্কুলগুলোর জন্য খরচ করবে মাইক্রোসফট। এর লক্ষ্য হচ্ছে, মূলধারা শিক্ষায় গণিত ও পদার্থবিদ্যাকে যেভাবে মূল বিষয় হিসেবে মনে করা হয়, কমপিউটার বিজ্ঞানকেও সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা।
যেহেতু মাইক্রোসফট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুলে কমপিউটার শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে, তাই চেষ্টা-তদ্বির করলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন স্কুলের জন্য কিছু ফান্ড পেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ, শিক্ষা বোর্ড, কমপিউটার সমিতি, বেসিস এবং আইএসপিএবির সক্রিয় তৎপরতাসহ কঠোর নজরদারিরও দরকার আছে, যাতে কেউ ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এ ফান্ড পেতে না পারে। এছাড়া এই সংগঠনগুলোকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে, যাতে প্রকৃত অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শুধু কমপিউটার বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরও বেশি মূলধারায় শিক্ষা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। এর ব্যত্যয় হলে শুধু যে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে তা নয়, বরং পরবর্তী সময় মাইক্রোসফট তো বটেই, অন্যান্য আইসিটিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, যেগুলো এ ধরনের সেবামূলক কর্মসূচি নিয়ে থাকে, সেগুলোরও বিরাগভাজন হতে হবে এ দেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
হেদায়েত হোসেন মোর্শেদ
ব্যাংক কলোনি, সাভার
একই নম্বরে অপারেটর বদলের সেবায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি
গত ১০-১২ বছর ধরে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম একটি হলো মোবাইল যোগাযোগের ক্ষেত্র। বাংলাদেশের মোবাইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রযাত্রার পরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে বিস্ময়কর ধীরগতি ও সিদ্ধান্তহীনতা। যেমন- থ্রিজি মোবাইল যোগাযোগ সিস্টেম চালু হতে দীর্ঘ সময় নেয়া, ফোরজি মোবাইল সিস্টেম এখনও চালু না হওয়া, যা বিশ্বের অনেক দেশে ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে এবং প্রযুক্তির ভাষায় মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি এখনও দেশে চালু না হওয়া।
বর্তমান ১১ ডিজিটের মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখেই অপারেটর বদলের সুবিধা এখনও দেশে চালু হয়নি। টেলিযোগাযোগ খাতের সংশ্লিষ্টদের মতে, মোবাইল প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য পেলেও নম্বর না পাল্টে অপারেটর বদলের এ সুবিধায় এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অন্তত সাত বছর ধরে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হলেও বড় অপারেটরগুলোর প্রচণ্ড অনাগ্রহের কারণে তা বাস্তব রূপ পায়নি।
বর্তমান ১১ ডিজিটের মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখেই অপারেটর বদলের সুবিধা চালুর নীতিমালায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সুবিধা চালু হলে নম্বর ঠিক রেখে বর্তমান অপারেটরের সেবা পছন্দ না হলে বেছে নেয়া যাবে অন্য অপারেটর। প্রযুক্তির ভাষায় এ সেবার নাম মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি। দীর্ঘদিন ধরে আলাপ-আলোচনা হলেও এতদিন তা দেশে চালু হয়নি।
এখন নীতিমালায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেয়ায় আগামী কিছুদিনের মধ্যে এটি চালুর প্রক্রিয়া শুরু হবে। এজন্য প্লাটফর্ম তৈরি করতে কয়েক মাসের মধ্যে নিলাম ডাকা হবে বলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। ইতোমধ্যে বিশ্বের ৭১টি দেশে এ সুবিধা বিরাজমান। এমনকি ভারতে এ সেবা চালু করা হয়েছে ২০১১ সালে ।
মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি এখন চালু হওয়ায় মোবাইল অপারেটদের সেবার মান অনেক বাড়বে নিঃসন্দেহে। কমবে গ্রাহক হয়রানি ও কল ড্রপের হার। অযথা কল ড্রপের শিকার হওয়ায় গ্রাহকদের পকেট শুধুই কাটা যেত, গ্রাহক ইচ্ছে থাকলেও মোবাইল অপারেটর বদল করতে পারত না বা করতে চাইত না শুধু মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি না থাকায়। আমরা আশা করব, খুব শিগগির মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপির জন্য প্লাটফর্ম তৈরি করা হবে এবং কয়েক মাসের মধ্যে নিলাম ডাকবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন বাস্তবায়িত হবে।
মোহাম্মদ হান্নান
আজিমপুর, ঢাকা
আইসিটি উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা সেবা কার্যক্রম সফল হোক
গত ১০-১২ বছর ধরে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের যথেষ্ট উন্নতি হলেও সফটওয়্যার খাতের তেমন উন্নতি ও অগ্রগতি হয়নি। অথচ বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল- আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফটওয়্যার রফতানি করে বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে যদিও সে ধরনের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম চোখে পড়তে দেখা যায়নি মুষ্টিমেয় কয়েকটি ছাড়া।
এ কথা সত্য, বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাত প্রত্যাশিত গতিতে না এগোনোর পেছনে অবকাঠামোগত দুর্বলতাসহ অনেক কারণ রয়েছে। এসব দুর্বলতার মধ্যে অন্যতম একটি হলো তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের মূলধন/বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান দিতে পরিপূর্ণ আর্থিক সহায়তা সেবা চালু না হওয়া।
সম্প্রতি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের মূলধন/বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান দিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেড যৌথভাবে ‘আইডিএলসি উদ্ভাবন’ নামে পরিপূর্ণ আর্থিক সহায়তা সেবা চালু করেছে। এর মাধ্যমে বিশেষ স্টার্টআপ লোন, শর্টটার্ম লোনসহ সব ধরনের লোন/ঋণ সুবিধা এমনকি দেশীয় সফটওয়্যার বা তথ্যপ্রযুক্তি সেবার কেনার জন্যও ঋণ পাওয়া যাবে।
তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের মূলধন/বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান দিতে বেসিস ও আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেড যৌথভাবে ‘আইডিএলসি উদ্ভাবন’ নামে পরিপূর্ণ আর্থিক সহায়তা সেবা কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই। দেশের সফটওয়্যার শিল্প খাতের বর্তমান যে স্থবিরতা ও মন্থরতা বিরাজ করছে তা দূর করতে বেসিসের এ ধরনের কার্যকর উদ্যোগ যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরা আশা করব, বেসিস আগামীতে এ ধারা অব্যাহত রাখবে এবং সাধারণের মনে বেসিস সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে তা দূর হবে।
কমল কান্তি বোস
লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা