লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মো: আতিকুজ্জামান লিমন
মোট লেখা:১৮
লেখা সম্পর্কিত
পেশাদার ভিডিও এডিটর হতে চাইলে
পেশা যদি সৃজনশীল কিছু হয়, তবে কাজ করতে ভালো লাগে এবং কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। তেমনই একটি পেশা ভিডিও এডিটিং। ভিডিও এডিটিং পেশাটি যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি কাজের মধ্যে ভালো লাগাটা খুঁজে পাওয়া যায়। চ্যালেঞ্জিং বলার কারণ, এই পেশায় সময় নিয়ন্ত্রণের কাজটি খুব কঠিন। নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন যে, কাজটি করতে কতটা সময় লাগবে। ক্লায়েন্ট ও প্রজেক্টের ওপর নির্ভর করে সবকিছু।
সবাই পেশাদার ভিডিও এডিটর হতে চান। তবে এজন্য প্রথমে ধাপে ধাপে অপেশাদার থেকে পেশাদারে হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য যে বিষয়গুলো জানা দরকার, তা নিয়ে এ লেখায় আলোচনা করা হয়েছে।
ভিডিও এডিটিং কী
টিভি প্রোগ্রাম, নাটক, সংবাদ, ডকুমেন্টারি, মিউজিক ভিডিও, ইউটিউব ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন পরিপাটি থাকে না। প্রথমে ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করা হয়, তখন অনেক বড় আকারে ধারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেগুলো থেকে প্রয়োজনীয় অংশগুলো আলাদা করা হয়। কাজের ভিডিও ফুটেজগুলো রেখে বাকি অংশ রেখে দেয়া হয় পরবর্তী কাজের জন্য। এরপরের পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিটি ভিডিও ফুটেজ একটির পর একটি সাজানো হয় এবং সেগুলো দৃশ্য অনুসারে কেটে রাখা হয়। এই কাজগুলোকে বলা হয় ভিডিও এডিটিং। শুধু ভিডিও নয়, সাথে থাকে ইমেজ, সাউন্ড, ইফেক্ট, টেক্সট ইত্যাদি। এই কাজগুলো যিনি করেন, তাকে বলা হয় ভিডিও এডিটর। ভিডিও এডিটর তার সৃজনশীলতা দিয়ে ভিডিওকে আকর্ষণীয় করে তোলেন। ভিডিও এডিটরকে অনেক ধৈর্যের সাথে এ কাজগুলো করতে হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে এই পেশার চাহিদা অনেক। চাহিদাসম্পন্ন এ পেশায় অনেকেই আসতে আগ্রহী হচ্ছেন। দেশের বাজারে যেমন চাহিদা, ঠিক বিদেশেও এই পেশায় দক্ষ লোকের খুব চাহিদা।
কেন শিখবেন ভিডিও এডিটিং
আমাদের দেশে বর্তমানে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেই সাথে পালস্না দিয়ে বাড়ছে চ্যানেলগুলোতে দক্ষ টেকনিক্যাল লোকের সংখ্যা। প্রতিটি চ্যানেলে কমপক্ষে ২০-৩০ জন ভিডিও এডিটর প্রয়োজন হয়। সংবাদ চ্যানেল হলে এর সংখ্যা আরও বেশি হয়। কারণ, প্রতিনিয়ত সংবাদ আসে এবং সেগুলো খুব দ্রুত চ্যানেলে প্রচারের জন্য তৈরি করতে হয়। বর্তমানে অনেক লাইভ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। সেখানে অনেক বেশি ভিডিও এডিটর দরকার। শুধু টিভি চ্যানেল নয়, অনেক প্রতিষ্ঠানে ভিডিও এডিটের জন্য রাখা হয় আলাদা বিভাগ, বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল, মাল্টিন্যাশনাল ও এনজিওতে।
কীভাবে হবেন সফল ভিডিও এডিটর
ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিলে সফলতা পাওয়াটা খুব কঠিন কিছু নয়। অনলাইনে বেশ কিছু ভিডিও এডিটিং প্লাগইন পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করলে কাজ অনেক বেশি প্রফেশনাল মনে হবে। নিয়মিত দেশি-বিদেশি ভালো ভালো ভিডিও দেখতে হবে এবং তাদের কাজগুলো অনুসরণ করতে হবে। নিজেকে রাখতে হবে সবসময় আপ টু ডেট।
ভিডিও এডিটরের কাজ কী
- বিভিন্ন র ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ, সংলাপ, সাউন্ড ইফেক্ট, মোশন গ্রাফিক্স ও স্পেশাল ইফেক্ট সম্পাদনা করা।
- ভিডিও প্রোডাকশন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা, যেমন- প্রজেক্টের আইডিয়া, স্টোরিবোর্ডং, চিত্র, এনিমেশন ইত্যাদি।
- ভিডিও প্রোডাকশনের আগের টিমের সদস্যদের সাথে একটি স্টুডিও বা নির্দিষ্ট লোকেশনে আলোচনা করা।
- শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোশন গ্রাফিক্স ও ভেক্টর গ্রাফিক্সসমূহ তৈরি ও সম্পাদনা করা।
- গ্রাফিক্স ডিজাইনের মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক।
- স্টোরি টেলিং বা গল্প সম্পর্কে ধারণা, পূর্ণাঙ্গ ভিডিও তৈরি করা অনলাইন এবং টিভিতে ব্যবহারের জন্য, ডিএসএলআর ও চিত্রগ্রহণের সাথে গ্রিন স্ক্রিন, লাইটিং সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হয়।
যারা এ পেশায় আসতে পারেন
কারিগরি ও সৃজনশীলতার দিক বিবেচনা করলে যেকেউ এই পেশার আসতে পারবেন, তবে কমপিউটার চালানোর ক্ষেত্রে আগে থেকে ভালো ধারণা থাকলে কাজটি শিখতে সময় কম প্রয়োজন হবে। তবে সবার আগে প্রয়োজন আগ্রহ। আগ্রহ কম থাকলে এ পেশায় ভালো করা খুব কঠিন। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক বেশি সময় দিতে হবে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য মাধ্যমিক বা সণাতক পাসের বিষয়গুলো খুব বেশি জরুরি নয়। অনেক ক্ষেত্রেই শিÿগত যোগ্যতা এ পেশায় খুব একটা কাজে আসে না তবে ভবিষ্যতে ভালো পজিশনে যেতে চাইলে শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্যই প্রয়োজন হবে।
কাজের চাহিদা
দক্ষ ভিডিও এডিটরের খুব চাহিদা প্রচুর। ভালোমানের ভিডিও এডিটরের আলাদা কদর রয়েছে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে তাই নিজেকে প্রকাশ করতে হবে কাজের মাধ্যমে। কাজ শেখার পাশাপাশি তৈরি করতে হবে ভিডিও এডিটিংয়ের ওপর ভিডিও পোর্টফোলিও, যাতে ভিডিও এডিটিং কাজের দক্ষতা ফুটে উঠবে। ভিডিও পোর্টফোলিও দেখে খুব অল্পতেই বোঝা যায়, এডিটর কতটুকু কাজে পারদর্শী। বর্তমানে দেশে আছে অনেক প্রোডাকশন হাউস। এডিটিং ফার্মে ভিডিও এডিটর হিসেবে যুক্ত হতে পারেন অনেকেই। দেশের বাইরে ও অনলাইনে কাজের বড় একটি মার্কেট আছে। ভালো কাজ দেখাতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব।
ভালো করতে হলে
অনেক বেশি পরিমাণ দেশি-বিদেশি ভিডিও দেখতে হবে, তাহলে কাজের ধরন সম্পর্কে জানা যাবে। ভিডিও এডিটিংয়ের বেশ কিছু ব্লগ আছে, যেখানে প্রতিনিয়ত ভিডিও এডিটিংয়ের কলাকৌশল সম্পর্কে আলোচনা ও আর্টিকল প্রকাশিত হয়। ইউটিউবে অনেক ভিডিও পাওয়া যায় ভিডিও এডিটিংয়ের ওপর, যেগুলো দেখলে বিভিন্ন কাজের কৌশল শিখতে সহজ হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে হাতে-কলমে ভিডিও এডিটিং শেখানো হয়, যা খুবই কার্যকর।
কী পরিমাণ আয় করতে পারবেন
ভিডিও এডিটের পেশার সাথে যুক্ত অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে বেতন ১৫-২০ হাজারের মধ্যে থাকে। তবে কাজের দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে টাকার অঙ্কও বাড়তে থাকবে। কঠিন অধ্যবসায় এই পেশায় অনেকেই লাখ টাকার ওপরে উপার্জন করতে সক্ষম হন। বিদেশে এই পেশার একজন ভিডিও এডিটরের বেতন দুই থেকে তিনগুণ বেশি। লিঙ্গইন হচ্ছে বেশ জনপ্রিয় একটি প্রফেশনাল সোশ্যাল মিডিয়া টুল। এখানে ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল জব সার্চের সুবিধা রয়েছে। সম্প্রতি জব সার্চ দিয়ে দেখা গেছে ‘ভিডিও এডিটর’ কীওয়ার্ড দিয়ে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ওপেন জব বর্তমানে পৃথিবীতে আছে। সুতরা, খুব সহজেই বোঝা যায় এই পেশার চাহিদা কেমন
ফিডব্যাক : infolimon@gmail.com