• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ বা ন্যাস ডিভাইস
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কে এম আলী রেজা
মোট লেখা:১৫৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
নেটওয়ার্ক
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ বা ন্যাস ডিভাইস
নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ বা ন্যাস (NAS-Network Attached Storage) হোম এবং বিজনেস উভয় ধরনের নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য এখন একটি জনপ্রিয় ডিভাইস। দাম কমতে থাকায় এবং ব্যবহারে সহজ হওয়ায় দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে। ন্যাস ইউজারের বৃহৎ আকারের ডাটা সুরক্ষা ও সংরক্ষণে সহায়তা করে এবং তা নেটওয়ার্কের অন্যান্য ইউজারের মধ্যে শেয়ার করার সুযোগ করে দেয়। এছাড়া ইদানীং ন্যাস ডিভাইসগুলো নিজস্ব ডাটা ব্যাকআপ এবং রিকোভারি অপশন, অ্যাড-অন অ্যাপ্লিকেশন সুবিধা দেয়, যা ইউজারদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ।
নেটওয়ার্কে ডাটা স্টোরেজ ও শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি কিছু কিছু ন্যাস সার্ভার মোডে কাজ করতে পারে। দেখা গেছে, বেশিরভাগ ন্যাস ইউনিভার্সাল প্ল্যাগ অ্যান্ড প্লে (UPnP) এবং ডিজিটাল লিভিং প্রটোকল অ্যাল্যায়েন্স (DLNA) ফিচার সাপোর্ট করে। ফলে এসব ডিভাইসকে মাল্টিমিডিয়া সার্ভার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ন্যাস মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট যেমন- ভিডিও সংরক্ষণ করে তা নেটওয়ার্কে অন্যান্য ইউজারের মধ্যে শেয়ার করার সুবিধা দিতে পারে। আর নেটওয়ার্কে যেসব ক্লায়েন্ট ডিভাইস ইউনিভার্সাল প্ল্যাগ অ্যান্ড প্লে এবং ডিজিটাল লিভিং প্রটোকল অ্যাল্যায়েন্স ফিচার সাপোর্ট করে, তারা ওই মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট স্ট্রিম করতে সক্ষম হবে। কোনো কোনো ন্যাস আবার আইটিউন এবং প্রিন্ট সার্ভার হিসেবে কাজ করে। ছোটখাটো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কিছু কিছু ন্যাস ডিভাইস ই-মেইল বা ডাটাবেজ সার্ভার হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। এককথায় ন্যাস ডিভাইসের বহুমুখী ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং নেটওয়ার্কে এর সফল প্রয়োগ হচ্ছে।
ন্যাস নির্মাতারা তাদের ডিভাইসের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি করে সেগুলো তাদের ফেসবুক এবং ইউটিউবের মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। ইউজারেরা সেগুলো ডাউনলোড করে সিস্টেমে সহজে ইনস্টল করতে পারেন। ছোট পরিসরে ব্যবহৃত ন্যাসের যেসব ফিচার রয়েছে, তা খুব ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং ইউজারের চাহিদা পূরণে সক্ষম। অনেক ন্যাস আবার একাধিক ড্রাইভ সাপোর্ট করে। ফলে এগুলো সিস্টেমকে ফল্ট টলারেন্ট বা বেশি দক্ষ করতে রেইড (RAID) সেটআপ সাপোর্ট করে থাকে। এ ধরনের সিস্টেমে নেটওয়ার্কভুক্ত সব ইউজার তাদের দরকারি ডাটা ন্যাসের কেন্দ্রীয় অবস্থানে অনায়াসে কপি করে সুরক্ষিত করতে পারেন। অনেক ন্যাস ভেন্ডর আবার ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ডাটা ব্যাকআপ রাখার বাড়তি সুবিধা দিয়ে থাকে।
সার্ভার মেসেজ ব্লকের (SMB) ব্যবহার হওয়া ন্যাসের রয়েছে কিছু এন্টারপ্রাইজ ফিচার যেমন- আইস্কাজি (iSCSI), যা বিজনেস নেটওয়ার্ক স্টোরেজের কাজে ব্যবহার হয়। এছাড়া একে ডিরেক্টরি সার্ভিস যেমন- উইন্ডোজ অ্যাকটিভ ডিরেক্টরির সাথে ইন্টিগ্রেট বা একীভূত করার মতো বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ন্যাসের এসব ফিচারের কারণে সে সহজেই বিদ্যমান নেটওয়ার্ক পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। নেটওয়ার্ক ইউজারেরাও তাদের প্রাপ্ত অনুমোদন নিয়ে ন্যাস ডিভাইস অ্যাক্সেস করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ন্যাস ডিভাইস অ্যাক্সেস করার জন্য আলাদা কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।
এখানে বহুলভাবে ব্যবহার হচ্ছে এমন কয়েকটি ন্যাস ডিভাইসের বিষয়ে উল্লেখ করা হলো। উপরে যেসব ফিচারের বিষয়ে বলা হয়েছে, সেগুলো এসব ন্যাসের বেলায় প্রযোজ্য হবে। অনেকে ন্যাস ডিভাইসকে তিন ভাগে ভাগ
করে থাকেন। প্রথমত, কনজুমার ন্যাস যারা মূলত একক ডিস্কবিশিষ্ট আবদ্ধ ডিভাইস। এরা সব সময় হার্ডডিস্ক ড্রাইভ সাপোর্ট করে না। এ ধরনের ন্যাস ডাটা স্টোরেজের জন্য শুধু সংযুক্ত ইউএসবি ড্রাইভ সাপোর্ট করে। দ্বিতীয়ত, প্রকারের ন্যাসকে বলা হয় প্রোসুমার (Prosumer), যারা সার্ভার মেসেজ ব্লকের উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে। এ ধরনের ন্যাস পাওয়ার ইউজার এবং ছোট আকারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশি উপযোগী। এ ধরনের ডিভাইস একাধিক ডিস্ক ড্রাইভ সাপোর্ট করে এবং এক ধরনের ডাটা রিডানডেন্সি সুবিধা দেয় অর্থাৎ এক ড্রাইভ থেকে অন্য ড্রাইভে ডাটা মিররিং করতে পারে। তৃতীয়ত, প্রকারের ন্যাসকে বলা হয় এসএমবি ন্যাস। এরা টেরাবাইট ডাটা সাধারণত সাপোর্ট করে এবং একাধিক রেইড কনফিগারেশন, ডাটা রিকোভারি অপশন ইত্যাদি সুবিধা ইউজারকে দিয়ে থাকে।
উপযুক্ত ন্যাস চেনার উপায়
ক্যাটাগরি যাই হোক না কেন, একটি ভালো ন্যাস ডিভাইস চেনার জন্য কতগুলো বৈশিষ্ট্য আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এ ধরনের কিছু বৈশিষ্ট্য এখানে তুলে ধরা হলো :
* ন্যাস ডিভাইসের সেটআপ প্রক্রিয়া সহজ কি না।
* ডিভাইসের ডাটা রিড/রাইট করার দক্ষতা বা গতি।
* কমপিউটারে ফাইল শেয়ারিং, ডাটা ব্যাক আপ সুবিধা দেয়ার ফিচার।
* ডাটা স্টোরেজ এবং ব্যাক আপের জন্য ক্লাউড সার্ভিস সুবিধা দেয় কি না।
* ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ন্যাস ডিভাইস ডাটা রিডানডেন্সি এবং সুরক্ষা সুবিধা দেয় কি না।
* ন্যাস ডাটা নিরাপত্তা বিশেষ করে ডাটা এনক্রিপশন এবং সিস্টেমে ইউজার অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সুবিধা দেয় কি না।
* নতুন ইউজারদের জন্য ন্যাস ডিভাইসের সাথে আসা ইউজার ম্যানুয়াল সহজবোধ্য কি না এবং ডিভাইস ব্যবহারের জন্য অনলাইন ও অফলাইন রিসোর্স পাওয়া যায় কি না ইত্যাদি।
বিভিন্ন ক্যাটাগরির ন্যাস ডিভাইস থেকে বেশ কিছু ডিভাইস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফলাফল বিভিন্ন প্রফেশনাল ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এদের মধ্য থেকে কয়েকটি ডিভাইসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।
ক. সিনোলজি ডিস্কস্টেশন
এটি একটি কার্যকর ন্যাস ডিভাইস। এর প্রসেসর বেশ শক্তিশালী (ডুয়াল কোর ২.১৩ গিগাহার্টজ ইন্টেল অ্যাটোম প্রসেসর)। একই সাথে এর ডাটা লেখা এবং পড়ার গতিও বেশ ভালো। এতে রয়েছে ২ গিগাবাইট ডায়নামিক র‌্যাম, যা ৪ গিগাবাইট পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে পারেন। সিনোলজি ডিস্কস্টেশনে আরও পাওয়া যাবে ৮টি হার্ডডিস্ক ড্রাইভ বে, যা ১৮টি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে পারেন। সবগুলো ড্রাইভ বে ব্যবহার করে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ৭২ টেরাবাইট পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন। এছাড়া সবশেষ ভার্সনের সিনোলজি ন্যাস ডিভাইসের সফটওয়্যার এবং ইন্টারফেস আপডেট করা হয়েছে। বড় নেটওয়ার্কে এটি একাধিক ডোমেইন নিয়ে কাজ করতে পারে। ডিস্ক রিকোভারি এবং ফল্ট টলারেন্সের দিক থেকে এটি একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
সিনোলজি ন্যাস ডিভাইসের ইনস্টলেশন প্রক্রিয়াও বেশ সহজ। ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এমন একটি নেটওয়ার্কে ন্যাস ডিভাইস প্রথমে যুক্ত করতে হবে। এরপর ওয়েব ব্রাউজারে http://find.synology.com অ্যাড্রেস টাইপ করুন। এ পর্যায়ে ওয়েব ব্রাউজার সিনোলজির ওয়েব অ্যাসিস্ট্যান্ট লোড করবে, যা নেটওয়ার্কে ডিস্কস্টেশনকে শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। ওয়েব অ্যাসিস্ট্যান্ট ন্যাস ডিভাইসের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টল করে সিস্টেমে একে সক্রিয় করবে।
খ. সিগেট সেন্ট্রাল
হোম ইউজারদের জন্য সিগেট সেন্ট্রাল একটি যথার্থ ন্যাস ডিভাইস। আকারে ছোট আনুভূমিক ডেস্কটপ ডিভাইস এটি। এর সেটআপ অনেক সহজ এবং এর থেকে অনেক উঁচুমানের পারফরম্যান্স পাওয়া যায়। এ ডিভাইসের সাহায্যে নেটওয়ার্কে ফটো, ভিডিও, মিউজিক, ডকুমেন্ট একাধিক ইউজারের মধ্যে শেয়ার করতে পারবেন। একই প্রক্রিয়ায় এসব রিসোর্স নেটওয়ার্কের বাইরে পিসি, ম্যাক বা স্মার্টফোনের মধ্যেও শেয়ার করা যায়। তবে সিগেট সেন্ট্রালের বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এটি সর্বোচ্চ ৪ গিগাবাইট ডাটা ধারণ করতে পারে, যা অনেক ইউজারের কাছে অপর্যাপ্ত বলে মনে হতে পারে।
সিগেট সেন্ট্রাল ডিভাইসের ডিজাইন সরল প্রকৃতির। এর উপরের দিকে রয়েছে একটি এলইডি (LED), যা নির্দেশ করে ডিভাইসটি সক্রিয় কি না। পেছনের দিকে রয়েছে একটি ইথারনেট পোর্ট, যার সাহায্যে একে রাউটারের সাথে যুক্ত করা যাবে, আরও আছে একটি ইউএসবি ২.০ পোর্ট, যার সাহায্যে ইউএসবি এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ এবং প্রিন্টার ন্যাস ডিভাইসের সংযুক্ত করবেন।
ন্যাস ডিভাইসকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করে অন করা মাত্রই এটি কনফিগারেশনের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যাবে এবং একে অ্যাক্সেস করা যাবে। এ সময় ডিভাইসের উপর অবস্থিত নির্দেশক এলইডি বাতি সম্পূর্ণ সবুজ রং ধারণ করবে। সিগেট সেন্ট্রালকে কনফিগার করার জন্য ওয়েব ব্রাউজার চালু করে এর অ্যাড্রেস বারে Seagate.com/central/setup টাইপ করতে হবে। সিগেট সেটআপ পেজে ম্যাক এবং উইন্ডোজ ইউজারের জন্য পৃথক পৃথক সেটআপ অপশন পাওয়া যাবে। আপনার জন্য প্রযোজ্য অপশনটি বেছে নিন এবং ডিভাইস কনফিগারেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
নেটওয়ার্কভিত্তিক ডাটার বহুমুখী ব্যবহারের কারণে ন্যাস ডিভাইসের জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আর এ কারণে ন্যাস ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ডিভাইসে নতুন নতুন ফিচার ও উপযোগিতা যোগ করে ইউজারদেরকে আকর্ষণ করার প্রয়াস চালাচ্ছে। তবে ন্যাস ডিভাইস নির্বাচনের আগে একজন ইউজার হিসেবে আপনার উচিত হবে ডিভাইসটি আপনার জন্য কতটুকু সুবিধা দেবে এবং এটি ব্যয়সাশ্রয়ী কি না তা ভালো করে যাচাই করে নেয়া
ফিডব্যাক : kazisham@yahoo.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস