রাশিয়ান সেনাবাহিনী সম্প্রতি তৈরি করেছে মাত্র চার ইঞ্চির নয়া ‘মেকানিক্যাল বাগস’ নামের পতঙ্গ ড্রোন। রাশিয়ান মিলিটারি সূত্রে এক খবরে বলা হয়েছে, কান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ইঞ্জিনিয়ার ড্যানিল বরচেভকিন ও আলেস্কি বেলোসভ বানিয়েছেন এই নয়া গুপ্তচর ড্রোন। এই দুই ইঞ্জিনিয়ার এখন মেতে রয়েছেন নয়া রোবটকে ‘ক্যামোফ্লাজ’-এ সক্ষম করে তুলতে। একেকটি আরশোলার মতো দেখতে এই রোবটের শরীরে লাগানো রয়েছে শক্তিশালী সেন্সর। সামনে কোনো বাধা পড়লেই সেন্সর মারফত তা জানতে পেরে পথ বদলে ফেলতে সক্ষম এই রোবটগুলো। রোবটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে রিমোটের সাহায্যে। আপাতত ‘প্রোটোটাইপ’ হিসেবে তৈরি করা হলেও এবার রাশিয়ান সেনারা সেগুলো সরাসরি যুদ্ধের কার্যকর হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন। এই ধরনের রোবটদের বলা হয় ‘ইনসেক্ট বটস’। হয়তো ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে একঝাঁক পায়রা উড়ে গেল কিংবা ক্ষুদ্রাকৃতির কোনো পতঙ্গের ঝাঁক। কিছুদিন পর এই পতঙ্গের ঝাঁক প্রাকৃতিক না যান্ত্রিক, আপনাকে এ ধন্দে ফেলে দিতে পারে। এদিকে জানা গেছে, প্রকৃতি থেকে প্রেরণা নিয়ে মাইক্রো এয়ার ভেহিকল (এমএভি) তৈরির কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা জানিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতে সামরিক ও গোয়েন্দা কাজে ব্যবহারের জন্য এমনতর পতঙ্গসদৃশ ‘ড্রোন’ ব্যবহার হতে পারে। মশা যেভাবে ঝাঁক বাঁধে, প্রয়োজনে রোবটও সেভাবেই ঝাঁক বাঁধবে।
বিভিন্ন ধরনের ড্রোন সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী আলোচনায় এসেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের মন্তব্য, বিশালাকার ড্রোনের চেয়ে কীটপতঙ্গের আকারের ক্ষুদ্র ড্রোন গোয়েন্দাগিরি ও সামরিক কাজে ব্যবহার হবে। এক খবরে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য ড্রোনগুলোকে ক্ষুদ্রতর আকৃতি দেয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ড্রোনগুলোর আকৃতি দেয়া হচ্ছে কীটপতঙ্গের মতো। আর এ ধরনের ড্রোন তৈরিতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রকৃতি থেকে প্রেরণা নিয়ে মাইক্রো এয়ার ভেহিকল (এমএভি) তৈরির কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র গোপনে সাইবর্গ পোকা তৈরি করছে- এ ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৭ সালে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র অনেক রাখঢাক করলেও গবেষক টম ইরহার্ড ডেইলি টেলিগ্রাফকে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন প্রকল্পটির তথ্য দিয়েছিলেন। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী মৌমাছিসদৃশ গোয়েন্দা ড্রোন তৈরির কথা প্রকাশ করেছিল, যা গোপনে তথ্য সংগ্রহ ও ছোটখাটো হামলা চালাতে সক্ষম ছিল। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ‘লেথাল মিনি ড্রোন’ বা ছোট আকারের বিষাক্ত ড্রোন তৈরি করার তথ্য প্রকাশ করে। এই ড্রোনের সাথে ক্ষতিকর বিষাক্ত ইনজেকশনের মতো উপাদান জুড়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। এই ড্রোনটি তৈরিতে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অরনিহপ্টার ফ্লায়িং মেশিনকে নকশা হিসেবে নেয়া হয়েছিল। ড্রোনটি চলতি বছরের শেষ নাগাদ তৈরি করা হবে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী।
সম্প্রতি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল রোবোটিক্স, অটোমেশন, সেন্সিং অ্যান্ড পারসেপশনস (জিআরএএসপি) ল্যাবের গবেষকেরা ‘সোয়ার্ম’ বা ঝাঁক তৈরি করতে সক্ষম এমন এক ধরনের রোবট প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এ প্রযুক্তিতে ২০টিরও বেশি ছোট রোবট একসাথে ঝাঁক বাঁধতে পারে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, প্রতিকূল পরিবেশে নজর এড়িয়ে কাজ করতে পারাই সোয়ার্ম রোবট তৈরির উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে রোবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। মশা যেভাবে ঝাঁক বাঁধে, অনেকটা সেভাবেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক রোবট চোখ ফাঁকি দিয়ে একসাথে যুক্ত হয়ে নিজেই কাজ করতে পারে এবং পরে আবার আলাদা হয়ে যায়।
গবেষকেরা ধারণা করছেন, ড্রোনের ভবিষ্যৎ প্রকৃতি থেকে প্রেরণা নিয়ে তৈরি এই ক্ষুদ্র ড্রোনগুলো। আর এ ধরনের রোবট ও ড্রোন তৈরির ক্ষেত্রে কাজ করছে ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (ডারপা)। প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের ড্রোন তৈরি ও নকশার ক্ষেত্রে ২০০৮ সাল থেকে অর্থায়ন করছে। ডারপার গবেষকেরা পোকার দেহে যোগাযোগ-যন্ত্রাংশ বসিয়ে সাইবর্গ পোকার রূপ দিতে সক্ষম হন। পোকার দেহ থেকে তৈরি বিদ্যুৎ দিয়েই যন্ত্রাংশগুলো চলবে। ফলে এই পোকার সাহায্যেই গোয়েন্দাগিরি ও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলেই জানিয়েছে ডারপা। গবেষকেরা এ ধরনের ড্রোনের সাথে রাসায়নিক, নিউক্লিয়ার অস্ত্র যুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সাইবর্গ পতঙ্গ তৈরিতে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশও গবেষণা করছে। ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডসের বায়োলজিক্যাল ইন্সপায়ারড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফর মাইক্রো এরিয়াল ভেহিকল (বায়োম্যাভ) একটি প্যারট এআর ড্রোন তৈরি করেছিল।
কীটপতঙ্গনির্ভর ড্রোন তৈরি প্রসঙ্গে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিচার্ড বমফ্রে জানান, ‘কীভাবে ক্ষুদ্র উড়ুক্কু যন্ত্র তৈরি করতে হবে, সে ধারণা প্রকৃতিই সরবরাহ করে রেখেছে। চলচ্চিত্রে দেখানো বিভিন্ন প্রযুক্তির মতো বর্তমানে রোবট ও ড্রোনগুলো অনেক বেশি উন্নত হয়েছে’