• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > দেশীয় কনটেন্টের অভাবেই তরুণরা ফেসবুকমুখী
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি ভাবনা
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি ও সমাজ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
দেশীয় কনটেন্টের অভাবেই তরুণরা ফেসবুকমুখী
আমাদের নিজস্ব কনটেন্টের অভাব রয়েছে। তাই দেশের তরুণ সমাজ ফেসবুকমুখী, ফেসবুকপ্রেমী- এই অভিযোগ বেশ পুরনো। কিন্তু কি আছে ফেসবুকে বা কি নেই ফেসবুকে? এমন প্রশ্ন হালে উঠতে শুরু করেছে। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এখন এটিই আলোচিত বিষয়। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে- যে কনটেন্ট ফেসবুকে রয়েছে তার সবকিছু কি সবার উপযোগী? তাতে কি বয়স কোনো ফ্যাক্টর নয়? দেশীয় কনটেন্ট থাকলেই কি দেশের তরুণেরা আর ফেসবুকমুখী হবে না?
এতেও ভরসা পাওয়া যায় না। কারণ, কনটেন্ট বিশারদেরা বলছেন, দেশি-বিদেশি বিষয় নয়, বিষয় হলো বয়স। ফেসবুক ব্যবহারের বয়স নির্ধারণ করে দিলেই সে নিজেই তার উপযোগী কনটেন্ট খুঁজে নেবে। তাহলে বয়স কত হতে হবে? এ নিয়ে হালে সারাবিশ্বে একটি আওয়াজ উঠেছে। এবার সেই আওয়াজ শোনা যাক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারের বয়স আসলে কত হওয়া উচিত- ১৩, ১৬ নাকি ১৮। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে এমন একটি অওয়াজ উঠেছে। ফেসবুক বলছে, ১৩ বছরের নিচে কেউ ফেসবুক ব্যবহার করতে পারবে না। ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রস্তাব করেছে ফেসবুক ব্যবহারের বয়স ১৩ থেকে ১৬’র মধ্যে হওয়া উচিত। ওদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বলছে ১৬। যদিও এই ১৬ বছর বয়স নিয়ে পার্লামেন্টে বিস্তর বাহাসও হয়েছে, কিন্তু ১৩ না ১৬ তা পাস হয়নি।
এদিকে আমাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহারের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। ফেসবুকের ওই বেঁধে দেয়া বয়সকেই নিয়ম বলে মানা হচ্ছে। তবে ঠিক কত বয়স হলে তা আদর্শ হবে- এমন আওয়াজ কোথাও পাওয়া যায়নি। এ-ও নির্দিষ্ট হওয়া যায়নি, ফেসবুক ব্যবহারের জন্য আদৌও কোনো বয়স সুনির্দিষ্ট করা উচিত কিনা। এই প্রতিবেদন লেখার আগে দেশের বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, গবেষক, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা একেকজন একেকরকম মত দিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট একটি বয়সকে কেউ চিহ্নিত করেননি।
বয়স নির্ধারণ করে দিলেই কী হবে? কনটেন্টের কোনো দরকার নেই। উত্তর হলো আছে। আমাদের দেশীয় কনটেন্ট বাড়াতে হবে। দেশীয় কনটেন্ট বাড়ানো হলে সবাই ফেসবুক থেকে নিজের পানে তাকানোর সুযোগ পাবে। বিশেষজ্ঞেরাও তাই মনে করেন। তারা বয়সের পাশাপাশি কনটেন্টেও গুরুত্ব দিতে চান। এছাড়া ইন্টারনেট দুনিয়ায় তারা কী করবে, কী করবে না এবং তাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত- এসবও নির্দিষ্ট হওয়া উচিত বলে গবেষণায় উঠে আসছে।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার মনে করেন, যে বয়স থেকে কেউ মাউস চালাতে পারে বা টাচস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারে এবং নিজেকে নিরাপদ রাখার যোগ্যতা রাখে, সেই বয়স থেকেই ফেসবুক ব্যবহার করা উচিত। এখানে শারীরিক বয়সটা মোটেই মুখ্য নয়।
উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আমাদের গ্রামের প্রকল্প পরিচালক রেজা সেলিম বলেন, বয়স ১৮ বছর হওয়ায় ভালো। যেহেতু বাংলাদেশে ১৮ বছর পর্যন্ত সবাই শিশু। এ কারণে আমি মনে করি, ফেসবুক ব্যবহারের বয়স ১৮’র নিচে হওয়া উচিত হবে না।
উন্নত বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেসব দেশে আরও কম বয়সের শিশুরা ফেসবুক ব্যবহার করে, আমাদের দেশে তা অনুসরণ করা ঠিক হবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওইসব দেশের শিশুদের ধ্যানধারণা, শিক্ষা, দায়িত্বশীলতা আলাদা। আমাদের শিশুরা ওদের থেকে অনেক পিছিয়ে। আমাদের শিশুদের সবকিছু বুঝতে, শুনতে, জানতে অনেক সময় লেগে যায়। এর কারণে ১৮ বছর বয়সই ভালো।
প্রসঙ্গত, ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই কোটি। যদিও এর মধ্যে বেশিরভাগ আইডি ফেক বা ভুয়া। ১৩ বছরের নিচে ফেসবুকে আইডি খোলার নিষেধ থাকলেও দেশে অনেক শিশুর নামে ফেসবুক আইডি দেখা যায়।
শ্রীলঙ্কাভিত্তিক টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সায়ীদ খান মনে করেন, এটা একান্তই পিতা-মাতার ব্যাপার। সন্তানের পিতা-মাতা যখন উপযুক্ত মনে করবেন, তখনই তার সন্তানকে ফেসবুক ব্যবহার করতে দেবেন। এ ক্ষেত্রে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি নজর না দেয়ার পরামর্শ দেন। কারণ, তাদের ধ্যান-ধারণা, শিক্ষা, রুচি, সংস্কৃতি আমাদের মতো নয়। ফলে কে কী করল তা না দেখে, বিচার না করে নিজেদের মতো করেই এগোনো উচিত।
বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, ফেসবুক ব্যবহারের জন্য ১৩ বছর বয়সই উপযুক্ত সময়। তার ধারণা, দেখা যাবে ১৩ বছর বয়সীরা আজকাল অনেক কিছু জানে, আবার ৩৩ বছরের একজন হয়তো কিছুই জানে না। ফলে বয়স কোনো ম্যাটার করে না। তিনি বলেন, যেসব দেশের নিজস্ব কনটেন্ট আছে সেসব দেশে ফেসবুক ততটা জনপ্রিয় নয়। আমাদের সমস্যা হলো আমাদের নিজস্ব কোনোও কনটেন্ট নেই। তাহলে আমাদের সন্তানেরা কী করবে- এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের দেশে ফেসবুক নিয়ে কোনো মাতামাতি নেই। সেখানে জনপ্রিয় হলো টুইটার। আমাদের দেশে ততটা নয়। কারণ, আমরা কম কথায় কিছু বলতে পারি না। আমাদের রচনা লেখা ছাড়া কোনো উপায় নেই যেন। তিনি মনে করেন, যতদিন না আমরা নিজস্ব (স্থানীয়) কনটেন্টে সমৃদ্ধ হতে পারব, ততদিন আমাদের ফেসবুক নির্ভরতা কমবে না।
এদিকে শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে ইউনিসেফ, টেলিনর গ্রুপ ও মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন একটি অভিভাবক গাইড প্রকাশ করেছে। গাইডটিতে শিশুদের সাথে কীভাবে ইন্টারনেট নিয়ে কথা বলবেন, সে বিষয়ে পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অভিভাবক গাইডটিতে ফেসবুক, ইউটিউব, স্যাটেলাইট, আস্ক এফএম, ইনস্টাগ্রাম, টিনডার, ইক ইয়াক, হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাট, ভাইন, কিক মেসেঞ্জার, শটস অব মি অ্যাপ ও ওয়েবসাইট সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন (বয়সসীমা সংক্রান্ত নিয়মাবলী দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করা) থাকারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আপনার সন্তান সঠিক ইন্টারনেট দুনিয়ায় বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সঠিক ট্র্যাকে আছে কিনা তা-ও পর্যবেক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। তারা শুধু প্রযুক্তিই ব্যবহার করে না, প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারণ কোনো জ্ঞান রাখে কি না, সে বিষয়েও বাবা-মাকে খোঁজ নিতে হবে। গাইডে দেয়া হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে কারও সাথে তর্ক করা, কোনো পোস্ট দেয়া, সেই পোস্ট পরে ডিলিট করা, অনলাইনে গেম খেলার সময় কারও মৌখিক আক্রমণের শিকার হওয়া, কোনো কুৎসা রটানো, কাউকে বস্নক করা হয়েছে কি না- এই ধরনের প্রশ্ন করে উত্তর বের করে নিয়ে আলোচনা করলেই বেরিয়ে আসবে আপনার সন্তান অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছে কি না। কীভাবে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরাপদে থাকা যায়, সেসব কৌশলও গাইডটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস