লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
মেটাডাটা
মেটাডাটা বরাবর আপনার সারাজীবনের অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে- তা আপনার জন্ম যখনই হয়ে থাকুক না কেনো। কিন্তু আজকের এই ডিজিটাল যুগে মেটাডাটা এখন হয়ে উঠেছে একটি পোলারাইজিং বাজওয়ার্ড বা মেরুকৃত গুঞ্জনধ্বনি। সাধারণ সরল কথায় বলতে পারি, মেটাডাটা হচ্ছে ‘ইনফরমেশন অ্যাবাউট ইনফরমেশন’-‘তথ্য সম্পর্কে তথ্য’। মেটাডাটা দেয় অন্য তথ্যের বর্ণনা।
পুরনো ধরনের লাইব্রেরি কার্ড ক্যাটালগগুলো হচ্ছে এক ধারনের মেটাডাটা। এসব কার্ডে একটি বইয়ের পুরো বিষয়বস্ত্ত বা কনটেন্ট থাকে না। বরং এর বদলে এই কার্ডে থাকে একটি বইয়ের নাম, লেখকের নাম, প্রকাশকের নাম, প্রকাশের বছর, বইটি কী ধরনের- সাহিত্যের বই হলে কোন ধরনের সাহিত্য- উপন্যাস, গল্প, নাটক না রম্যরচনা না প্রবন্ধ কিংবা এটি ইতিহাস, বিজ্ঞান না কলাকিংবা অন্য কোনো বিষয়ের বই ইত্যাদি। সেই সাথে থাকে বইটি লাইব্রেরির কোন তাকে কোথায় আছে তা সহজে বের করার জন্য সাঙ্কেতিক নম্বর। লাইব্রেরির কার্ড ক্যাটালগ বা মেটাকার্ড ব্যবহার করে আপনি লাইব্রেরির প্রতিটি বই সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য জানতে পারবেন এবং আপনার প্রয়োজনীয় বইটি বেছে নিয়ে পড়তে বা ব্যবহার করতে পারবেন। এই লাইব্রেরি কার্ড ক্যাটালগ তৈরি হতে পারে বিষয়, লেখকদের বা লেখকবিশেষের নাম কিংবা প্রকাশের বছর অনুযায়ীও। তবে বিষয় বা লেখকদের বা লেখকবিশেষের নাম অনুযায়ী ক্যাটালগ তৈরির কাজটিই বেশি চলতে দেখা যায়।
ডিজিটাল মেটাডাটা
তবে আমাদের এই ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল ফাইলগুলো নিয়ে তৈরি হয় এক বিশাল আকারের ডিজিটাল মেটাডাটা, যার সাথে পুরনো ধাঁচের লাইব্রেরি কার্ড ক্যাটালগ নামের মেটাডাটার আকারের তুলনাই চলে না। আসলে Metaহচ্ছে একটি প্রিফিক্স, যা বিভিন্ন ইংরেজি শব্দের শুরুতে যোগ করে নতুন নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ‘মেটা’ কথাটি ব্যবহার করা হয় ‘অন্তর্নিহিত সংজ্ঞা বা বর্ণনা’ তথা an underlying definition or descriptionবোঝাতে।
মেটাডাটায় কোনো নির্দিষ্ট ডাটা সম্পর্কে মৌলিক তথ্যের একটি সারাংশ তুলে ধরা হয়। এর ফলে সহজে একটি ডাটা খুঁজে বের করে নিয়ে তা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করা যায়। যেমন- কোনো একটি মৌলিক ডকুমেন্টের মেটাডাটায় থাকে এর প্রণেতার নাম ও তার সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য, ডকুমেন্ট তৈরির তারিখ, তা হালনাগাদ করার তারিখ, ফাইলের আকারসহ আরও কিছু মৌলিক তথ্য। এই মেটাডাটার মাধ্যমে আমরা কোনো ডকুমেন্ট লোকেট করে তা সেখান থেকে বের করে এনে প্রয়োজন মতো কাজে লাগাতে পারি।ডিজিটাল ক্যামেরা দেখায় কখন কোথায় ছবিটি তোলা হয়েছে। যখন আপনি একটি ফোনকল দেন, আপনার টেলিযোগাযোগ প্রোভাইডার সংগ্রহ করে আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন, সে নাম্বারের ডাটা- কত সময় আপনি কথা বললেন, আর কল করার সময় ফোনকারী ও ফোনগ্রহীতার অবস্থান কোথায় ছিল ইত্যাদি। আমাদের অনেকেই প্রতিদিন প্রচুর মেটাডাটা তৈরি করি।
ডকুমেন্ট ফাইলের বাইরে মেটাডাটা ব্যবহার হয় ইমেজ, ভিডিও, স্প্রেডশিট ও ওয়েব পেজের ক্ষেত্রসহ নানা ক্ষেত্রে। ওয়েব পেজের মেটাডাটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ওয়েব পেজের মেটাডাটায় থাকে পেজের কনটেন্টগুলোর বর্ণনা, সেই সাথে থাকে এই কনটেন্টের লিঙ্কগুলোর কথাও। এগুলো সাধারণত প্রকাশ করা হয় মেটাট্যাগস আকারে- মেটাট্যাগ হচ্ছে এমন একটি tag,অর্থাৎ হাইপারটেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজে (এইচটিএমএল) একটি কোডিং স্টেটমেন্ট, যাতে বর্ণনা থাকে ওয়েব পেজগুলোর কিছু কিছু বিষয়। মেটাট্যাগে যেসব তথ্য আপনি দেন, তা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে একটি পেজ ইনডেক্স করে, যাতে করে যিনি পেজে এ ধরনের তথ্য খুঁজছেন, তিনি যেনো পেজ কনটেন্ট পেতে পারেন। শিরোনামের অংশ হিসেবে মেটাট্যাগ রাখা হয় এইচটিএমএলের ওপরে।
ওয়েব পেজের বর্ণনা ও সারসংক্ষেপ সম্পর্কিত মেটাডাটা কখনও কখনও সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ রেজাল্টে প্রদর্শিত হয়। এর ফলে এর যথার্থতা ও বর্ণনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কেননা, এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তিনি এই সাইট ভিজিট করবেন কি করবেন না। সার্চ ইঞ্জিন কখনও কখনও মেটাট্যাগ মূল্যায়ন করে ওয়েব পেজের প্রাসঙ্গিকতা বিচারের জন্য। ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত এটিকে এ ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯০-এর দশকের শেষপাদে এসে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) বেড়ে গেলে মেটাডাটায় শুরু হয় ‘কী ওয়ার্ড স্টাফিং’। এর ফলে ওয়েবসাইট আরও প্রাসঙ্গিকতা পায়। তখন থেকে সার্চ ইঞ্জিন মেটাডাটার ওপর এদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেয়। এখনও এটি পেজ ইনডেক্সিংয়ের একটি বিষয় হিসেবে থেকে গেছে। মেটাডাটা ম্যানুয়ালিও ক্রিয়েট করা যায়। তবে এটি তৈরি করা যায় অটোমেটেড ইনফরমেশন প্রসেসের মাধ্যমেও। ম্যানুয়াল ক্রিয়েশন অধিকতর যথার্থ হয়। এটি ব্যবহারকারীদের সুযোগ করে দেয় প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন ইনপুট দেয়ার অথবা সহায়তা করে ফাইল বর্ণনা করতে। অটোমেটেড মেটাডাটা অধিকতর প্রাথমিক ধরনের, যাতে শুধু থাকে ফাইল সাইজ, ফাইল এক্সটেনশন, কখন ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে, কে তৈরি করেছেন এই ফাইলটি ইত্যাদি তথ্য।
মেটাডাটার টাইপ
মেটাডাটার ব্যবহার নানামুখী, ব্যবহার হয় নানা ক্ষেত্রে। মেটাডাটার টাইপ নির্ধারণে রয়েছে কিছু বিশেষায়িত ওপ্রায় সর্বসম্মত কিছু মডেল। ফলিত গণিতবিশারদ ও মেডিসনের উইসকনসিন ইউনিভার্সিটির বায়ুম-ল ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ব্রেদারটন অ্যান্ড সিঙ্গলি দুটি আলাদা শ্রেণির মেটাডাটার কথা বলেন- স্ট্রাকচারাল বা কন্ট্রোল মেটাডাটা এবং গাইড মেটাডাটা। স্ট্রাকচারাল মেটাডাটা ব্যবহার হয় ডাটাবেজ অবজেক্টের স্ট্রাকচার বর্ণনা করতে। যেমন- কলাম, টেবল, কী(key) ও ইনডেক্স আকারে। গাইড মেটাডাটা আমাদের সহায়তা করে সুনির্দিষ্ট আইটেম খুঁজে পেতে এবং সাধারণত প্রকাশ করা হয় স্বাভাবিক ভাষায় এক সেট কীওয়ার্ডের মাধ্যমে।ডাটাওয়্যারহাউজিং ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্সবিষয়ক লেখক রালফ কিম্বলের মতে, মেটাডাটাকে দুই ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়- টেকনিক্যাল মেটাডাটা বা বিজনেস মেটাডাটা। টেকনিক্যাল মেটাডাটা সম্পর্কিত ইন্টারনাল মেটাডাটা ও বিজনেস মেটাডাটা সম্পর্কিত এক্সটারনাল মেটাডাটার সাথে। কিম্বল সংযোজন করেন তৃতীয় ক্যাটাগরির আরেক মেটাডাটা। এর নাম প্রসেস ডাটা। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রেরন্যাশনাল ইনফরমেশন স্ট্যান্ডার্ডস অরর্গানাইজেশন (এনআইএসও) মেটাডাটাকে ভাগ করে তিনটি আলাদা ধরনের ডাটায়- ডেসক্রিপটিভ, স্ট্রাকচারাল ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ।
ডেসক্রিপটিভ ডাটা বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে ব্যবহার হয় ডিসকভারি ও আইডেন্টিফিকেশনের জন্য, যেমন- একটি অবজেক্ট সার্চ ও লকেট করার জন্য ব্যবহার করা ইনফরমেশন-শিরোনাম, লেখকের নাম, কী ওয়ার্ড, প্রকাশকের নাম। স্ট্রাকচারাল মেটাডাটা বর্ণনা করে একটি অবজেক্টের উপাদানগুলো কী করেসংগঠিত হয়। স্ট্রাকচারাল মেটাডাটার একটি উদাহরণ হচ্ছে, যেভাবে একটি বইয়ের পাতাগুলো সাজানো হয় একটি অধ্যায় তৈরি করতে। সবশেষে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ মেটাডাটা দেয় সোর্স ম্যানেজমেন্টের ইনফরমেশন।এটি হচ্ছে সোর্স ম্যানেজমেন্ট করার জন্য একটি সঠিক ম্যানেজমেন্ট মেটাডাটা ও প্রিজারভেশন মেটাডাটা। এটি রেফার করে ফাইল টাইপসহ টেকনিক্যাল ইনফরমেশন অথবা কীভাবে ও কখন ফাইলটি তৈরি করা হয়েছিল সে তথ্য। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ মেটাডাটার দুটি সাব-টাইপ হচ্ছে রাইটস ম্যানেজমেন্ট মেটাডাটা ও প্রিজারভেশন মেটাডাটা। রাইটস ম্যানেজমেন্ট ডাটা ব্যাখ্যা দেয় ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস। অপরদিকে প্রিজারভেশন মেটাডাটায় থাকে সেইসব ইনফরমেশন, যেগুলোর দরকার হয় রিসোর্স প্রিজারভ ও সেভ করতে।
মেটাডাটার ব্যবহার
এন্টারপ্রাইজে ভার্চুয়ালাইজেশন স্ট্যাক সম্পন্ন করার জন্য নতুন সফটওয়্যার প্রযুক্তি হিসেবে ডাটা ভার্চুয়ালাইজেশনের আবির্ভাব ঘটেছে। মেটাডাটা ব্যবহার করা হয় ডাটা ভার্চুয়ালাইজেশন সার্ভারে, যেগুলো ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন সার্ভারের পাশাপাশি এন্টারপ্রাইজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার কম্পোনেন্টও। এসব সার্ভারে মেটাডাটা কাজ করে একটি পারসিসট্যান্ট রিপোজিটরি বা অটল ভা-ার হিসেবে এবং বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ সিস্টেম ও অ্যাপ্লিকেশনে বিজনেস অবজেক্ট বর্ণনা করে। ডাটা ভার্চুয়ালাইজেশন সাপোর্টের ক্ষেত্রে স্ট্রাকচারাল মেটাডাটা কমনালিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিসংখ্যান ও আদমশুমারির ক্ষেত্রেও মেটাডাটার ব্যবহার আছে। পরিসংখ্যান সমাজে কাজের প্রমিতকরণের বা স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের একটা বড় প্রভাব অতীতে ছিল এবং এখনওআছে মেটাডাটা গড়ে তোলার প্রচেষ্টার ওপর। বেশ কয়েকটি মেটাডাটা স্ট্যান্ডার্ড বর্ণিত হয় এবং পরিসংখ্যান সংস্থায় এগুলোর গুরুত্বও আলোচিত হয়। আদমশুমারি ব্যুরো, পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা, শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোতে স্ট্যান্ডার্ডের প্রয়োগের বিষয়টি আলোচিত।
লাইব্রেরি ও ইনফরমেশন সায়েন্সে রয়েছে মেটাডাটার ব্যবহার। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে লাইব্রেরিগুলো ক্যাটালগ কার্ডে মেটাডাটা ব্যবহার করে। সমন্বিত লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে লাইব্রেরিগুলো তা করে। রিসোর্স ক্যাটালগিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া যায় মেটাডাটা। যেমন- এই রিসোর্সগুলোর মধ্যে আছে বই, সাময়িকী, ডিভিডি, ওয়েবপেজ বা ডিজিটাল ইমেজ। এমআরসি (মেশিন রিলেটেড ক্যাটালগিং) মেটাডাটা স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে এসব ডাটা জমা করা হয় ইন্টিগ্রেটেড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তথা আইএলএমএসে। উদ্দেশ্য, পেট্রনদেরকে তাদের প্রত্যাশিত আইটেমের ফিজিক্যাল বা ইলেকট্রনিক লোকেশনে বা এরিয়ায় নিয়ে যাওয়া। একই সাথে সংশ্লিষ্ট আইটেমের বর্ণনা তুলে ধরা। লাইব্রেরি মেটাডাটার অতি সাম্প্রতিক ও বিশেষায়িত উদাহরণ হচ্ছে, ই-প্রিন্ট রিপোজিটরি ও ডিজিটাল ইমেজ লাইব্রেরিসহ ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা।
ডাটা ওয়্যারহাউস (ডিডব্লিউ)হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রনিক উপায়ে জমা করা ডাটার রিপোজিটরি বা ভা-ার। ডাটা স্টোর ও ম্যানেজ করার জন্য ডাটা ওয়্যারহাউস ডিজাইন করা হয়েছে। অপরদিকে বিজনেস ইন্টেলিজেন্স (বিআই) আলোকপাত করে রিপোর্টিং ও অ্যানালাইসিসে সহায়তা করার জন্য ডাটা ব্যবহারের ওপর। একটি ওয়্যারহাউসে ডাটা কীভাবে স্টোর করা হবে, সে ক্ষেত্রে মেটাডাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাটা ওয়্যারহাউসের উদ্দেশ্য সময় মতো, সঠিক, প্রমিত করা, অটল, কাঠামো করা সমন্বিত ডাটা হাউস করা বা জমা করা। আর এসব ডাটার নির্যাস তুলে নিয়ে আসা হয় একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অপারেশনাল সিস্টেম থেকে। একটি এন্টারপ্রাইজকে প্রশস্ততর প্রেক্ষাপটে ‘ওয়ান ভার্সন অব ট্রুথ’-এর সুযোগ সৃষ্টির জন্য নির্যাসিত ডাটা সমন্বিত করা হয় ডাটা ওয়্যারহাউস এনভায়রনমেন্টে। ডাটা এমনভাবে স্ট্রাকচারড বা কাঠামো করা হয়, যাতে তা বিশেষত প্রয়োজন মেটায় রিপোর্ট ও বিশেস্নষণ করার কাজের।
অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসাবিষয়ক গবেষকেরা স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহারের জন্য প্রচুরসংখ্যক মেটাডাটা ডেফিনিশন শুরু করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার অধীনের প্রোপ্রাইটরি স্ট্যান্ডার্ড সংজ্ঞায়নের বদলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড সংজ্ঞায়নে এটিই প্রথমস্বীকৃত প্রয়াস। এরপরেও চিকিৎসক সমাজ মেটাডাটা স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা অনুমোদন দেয়নি, যদিও এ ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণা রয়েছে।
ডিজিটাল ফটোফাইলেও মেটাডাটা লেখা যাবে। এটি চিহ্নিত করবে কে এর মালিক, কপিরাইট ও যোগাযোগসম্পর্কিত তথ্য, কোন ক্যামেরায় এই ফাইল ক্রিয়েট করা হয়েছে। সেই সাথে থাকবে এক্সপোজার ইনফরমেশন ও ডেসক্রিপটিভি ইনফরমেশন- যেমন কমপিউটারে বা ইন্টারনেটে ফাইলটি সার্চেবল করার জন্য ফটোসংশ্লিষ্ট কী ওয়ার্ড। কিছু মেটাডাটা লেখা হয় ক্যামেরা দিয়ে এবং কিছু থাকে কমপিউটার থেকে ডাউনলোডের পর ফটোগ্রাফারের বা সফটওয়্যারের ইনপুট। বেশিরভাগ ডিজিটাল ক্যামেরা মেটাডাটা লিখে। কোনো কোনোটি আপনাকে এডিট করার সুযোগ দেয়। এই ফাংশন রয়েছে নাইকনডি-৩ পরবর্তী বেশিরভাগ নাইকন ডিএসএলআর ক্যামেরায়, ক্যানন এফওএস ৭ডিপরবর্তী বেশিরভাগ নতুন ক্যানন ক্যামেরায় এবং পেনটেক্স কে-৩ পরবর্তী বেশিরভাগ পেনটেক্স ডিএসএলআর ক্যামেরায়। প্রডাকশনের পর কী ওয়ার্ডিংয়ের সাহায্যে মেডটাডাটি সহজেই ব্যবহার করা যাবে অর্গানাইজিংয়ের কাজে। সুনির্দিষ্ট কিছু ফটোগ্রাফ বিশেস্নষণে ফিল্টার ব্যবহার করা যাবে। ফটোগ্রাফিক মেটাডাটা স্ট্যান্ডার্ড নিয়ন্ত্রণ করে কয়টি প্রতিষ্ঠান। এসব নিচে বর্ণিত স্ট্যান্ডার্ডগুলো ডেভেলপ করেছে।
মেসেজ কনটেন্টের বিপরীতে ফোনকল, ইলেকট্রনিক মেসেজ, ইনস্ট্যান্ট মেসেজ ও অন্যান্য ধরনের টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে সময়, উৎস ও গন্তব্যসম্পর্কিত তথ্য হচ্ছে আরেক ধরনের মেটাডাটা। এসব কল ডিটেইল বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে, যদিও এ নিয়ে আছে নানা বিতর্ক।
যেখানে কনটেন্টসম্পর্কিত ইনফরমেশন সরাসরি কমপিউটারের কাছে বোধগম্য নয় অথচ দক্ষ সার্চ প্রত্যাশিত, বিশেষত ভিডিওর- সেসব ক্ষেত্রে মেটাডাটা খুবই উপকারী। দুটি সোর্সে ভিডিও মেটাডাটা উদ্ভূত হয়। একটি হচ্ছেঅপারেশনাল গেদার্ড মেগাডাটা- যা তৈরি করা কনটেন্টসম্পর্কিত কতগুলো ইনফরমেশনের সমাহার; যেমন- ইকুইপমেন্টের ধরন, সফটওয়্যার, তারিখ ও লোকেশন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে হিউম্যান-অথরড মেটাডাটা- যা উন্নত করে সার্চ ইঞ্জিন ভিজিবিলিটি, শ্রোতার সম্পৃক্ততা এবং ভিডিও পাবলিশারদের প্রচারের সুযোগ। আজকের সমাজে বেশিরভাগ ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার মেটাডাটায় অ্যাক্সেস রয়েছে। অ্যাভিডের মেটাসিঙ্ক এবং অ্যাডোবির ব্রিজ এর দুটি প্রধান উদাহরণ।
মেটাট্যাগের আকারে ওয়েবপেজগুলোতেও কখনও কখনও থাকে মেটাডাটা। মেটাট্যাগের বর্ণনা ও কীওয়ার্ড সাধারণত ব্যবহার হয় ওয়েবপেজের কনটেন্ট বর্ণনা করতে। মেটা এলিমেন্টেরসুনির্দিষ্ট করেপেজের বর্ণনা, কীওয়ার্ড, ডকুমেন্টের প্রণেতা ও ডকুমেন্ট হালনাগাদ করার সবশেষ তারিখ।
সম্প্রচার শিল্পে মেটাডাটা
ব্রডকাস্টিং তথা সম্প্রচার শিল্পে মেটাডাটাসংশ্লিষ্ট অডিও ও ভিডিও সম্প্রচার মাধ্যমের তিনটি ক্ষেত্রে : ০১. মিডিয়া আইডেনটিফাই করতে- ক্লিপ অথবা প্লেলিস্টের নাম, সময়ের ব্যাপ্তি বা ডিউরেশন, টাইমকোড ইত্যাদি; ০২. কনটেন্ট বর্ণনা করতে- ভিডিও কনটেন্টের মানসম্মত কোড, রেটিং, বর্ণনা (যেমন খেলার অনুষ্ঠানের সময়ের কী ওয়ার্ড: সংশ্লিষ্ট ক্লিপে গোল, লাল কার্ড ইত্যাদি); ০৩. মিডিয়ার শ্রেণিকরণ- মেটাডাটা ভিডিও শর্টআউট করে সহজেই ভিডিও কনটেন্ট পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। এর ফলেটিভি নিউজসংশ্লিষ্ট ভিডিও ক্লিপ আর্কাইভ থেকে সহজেই বের করে নেয়া যায়। যেমন বিবিসির রয়েছে বড় ধরনের ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম। এর নাম Lonclass। এটিঅধিকতর সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ইউনিভার্সেল ডিসিমাল ক্লাসিফিকেশনের একটি কাস্টোমাইজ সংস্করণ।
ভিডিও সার্ভারের সাহায্যে ভিডিও মিডিয়ার সাথেও মেটাডাটা লিঙ্ক করা যায়।ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ কিংবা অলিম্পিক গেমসের মতো বড় বড় খেলার অনুষ্ঠানের বেশিরভাগ সম্প্রচারে কী ওয়ার্ডের মাধ্যমে টেলিভিশন কেন্দ্রগুলোতে তাদের ভিডিও কনটেন্ট পাঠাতে এই মেটাডাটা ব্যবহার হয়। মেটাডাটা অর্গানাইজিংয়ের দায়িত্বে থাকা হোস্ট ব্রডকাস্টার এর ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্ট সেন্টার ও এর ভিডিও সার্ভারগুলোর মাধ্যমে তা করে থাকে। ইমেজসহ যেসব মেটাডাটা রেকর্ড করা হয়, সেগুলো মেটাডাটা অপারেটর তথা লগারদের মাধ্যমে এন্টার করা হয়। এই লগারেরা সফটওয়্যারের মাধ্যমে মেটাডাটা গ্রিডে পাওয়ার উপয়োগী লাইভ মেটাডাটার সাথে সংশ্লিষ্ট।
মেটাডাটা ও ইন্টারনেট
এইচটিএমএল ফরম্যাট ব্যবহার হয় সেইসব ওয়েবপেজ সংজ্ঞায়িত করতে, যেগুলো সুযোগ দেয় বিভিন্ন ধরনের মেটাডাটা অন্তর্ভুক্ত করার। এসব মেটাডাটায় থাকে মৌলিক বর্ণনামূলক বিষয়বস্ত্ত, তারিখ, কী ওয়ার্ড থেকে শুরু করে আরও অগ্রসর মেটাডাটা স্কিম পর্যন্ত; যেমন- ডাবলিন কোর, ইজিএমএস ও এজিএলএস স্ট্যান্ডার্ডস। পেজগুলোকে কো-অর্ডিনেট দিয়ে জিও ট্যাগ করা যাবে। মেটাডাটা অন্তর্ভুক্ত করা যাবে পেজের হেডারে কিংবা আলাদা ফাইলে। মাইক্রোফরম্যাট সুযোগ করে দেয় মেটাডাটাকে অন-পেজ ডাটায় এমনভাবে যুক্ত হতে, যেখানে ইউজার তা দেখেন না কিন্তু কমপিউটার অনায়াসে এতে অ্যাক্সেস করতে পারে।
মেটাডাটা এক্সপেস্নায়েটেশনের ও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) কারণে অনেক সার্চ ইঞ্জিন তাদের র্যা ঙ্কিং অ্যালগরিদমে মেটাডাটা ব্যবহারে খুবই সতর্ক। এই সতর্কতা অবলম্বনের প্রবণতা যৌক্তিক; কারণ, মানুষ তাদের মেটাডাটা তৈরির সময় সতর্কতা ও অধ্যবসায় প্রদর্শন করছে না এবং ক্রিয়েটরের স্বার্থে তৈরি নিজস্ব মেটাডাটা তৈরির ক্ষেত্রে মেটাডাটা হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের একটি অংশ। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, মেটাডাটা ইমপ্লিমেন্টেশনসমৃদ্ধ ওয়েব পেজে সার্চ ইঞ্জিন সাড়া দেয়। আর গুগল ঘোষণা দিয়েছে। তাদের সাইটে শো করা মেটা ট্যাগসের সার্চ ইঞ্জিন বুঝতে পারে। এন্টারপ্রাইজ স্টার্টআপ সুইফটাইপ মেটাডাটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে একটি প্রাসঙ্গিক সিগন্যাল হিসেবে, যা ওয়েব মাস্টারেরা বাস্তবায়ন করতে পারেন তাদের ওয়েব স্পেসিফিক সার্চ ইঞ্জিনের জন্য। এমনকি এরা তা করতে পারেন মেটা ট্যাগ ২ নামে তাদের নিজস্ব এক্সটেনশন রিলিজ করেও।
মেটাডাটা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা
মেটাডাটা স্টোরেজ : মেটাডাটা স্টোর করা যাবে ইন্টারনালি বা এক্সটারনালি (অভ্যন্তরীণভাবে কিংবা বাহ্যিকভাবে)। প্রথম ক্ষেত্রে স্টোর করা হয় একই ফাইলে বা স্ট্রাকচার করা হয় একটি ডাটা হিসেবে (একে এমবেডেড মেটাডাটাও বলা হয়)। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ডাটা স্টোর করা হয় আলাদা ফাইলে কিংবা বর্ণিত ডাটার ফিল্ডে। উভয় অপশনের বা বিকল্পে রয়েছে সুবিধা ও অসুবিধা :০১. ইন্টারনাল স্টোরেজের অর্থ ডাটা সব সময় ট্রাভেল করে তাদের বর্ণিত ডাটার একটি অংশ হিসেবে। মেটাডাটা সব সময়ই পাওয়া যায় এর ডাটার সাথে এবং স্থানীয়ভাবে তা ম্যানিপুলেট করা যাবে। এই পদ্ধতি বাহুল্যের জন্ম দেয় এবং একটি স্থানে সব মেটাডাটা ব্যবস্থাপনার সুযোগ দেয় না। যৌক্তিভাবেই এটি পূর্বাপর মিল বা সঙ্গতি বাড়িয়ে তোলে;কারণ, ডাটা পরিবর্তনের সাথে সাথে মেটাডাটা পরিবর্তন হয়ে যায়।০২. এক্সটারনাল স্টোরের সুযোগ দেয় সব কনটেন্ট কোলকেটিংয়ের সুযোগ। যেমন, ডাটাবেজে কার্যকর দক্ষ সার্চিং ও ম্যানেজমেন্টের জন্য। মেটাডাটার অর্গানাইজেশন নরমালাইজিং করে বাহুল্য এড়ানো যায়।এই উদ্যোগে ইনফরমেশন স্থানান্তরের সময় মেটাডাটাকে একীভূত করা যাবে কনটেন্টের সাথে, যেমন- স্ট্রিমিং মিডিয়ায়। অথবা ট্রান্সফারড কনটেন্ট রেফারেন্স করা যাবে (যেমন- একটি ওয়েব লিঙ্ক হিসেবে)।
মেটাডাটা স্টোর করা যাবে মানুষের পাঠযোগ্য (হিউম্যান রিডেবল) আকারে কিংবা বাইনারি আকারে। হিউম্যান রিডেবল আকারে (যেমন- এক্সএসএল)মেটাডাটা স্টোর করা উপকার বয়ে আনতে পারে। কারণ, ইউজার তা বুঝতে পারবে এবং কোনো বিশেষায়িত টুল ছাড়াই তা এডিট করতে পারবে। অপরদিকে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি, কমিউনিকেশন টাইম ও প্রসেসিং স্পিডের জন্য এসব ফরম্যাট খুব কমই অপটিমাইজ করা হয়। এসব ব্যাপারে বাইনারি ফরম্যাট দক্ষতাসক্ষম করে তোলে। কিন্তু দরকার বাইনারি ইনফরমেশনকে হিউম্যান রিডেবল কনটেন্টে রূপান্তর করতে। এখানে দরকার স্পেশাল লাইব্রেরি।
ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট: মেটাডাটা স্টোর করার জন্য প্রতিটি রিলেশনাল ডাটাবেজ সিস্টেমের রয়েছে এর নিজস্ব কৌশল বা মেকানিজম। রিলেশনাল ডাটাবেজ মেটাডাটার উদাহরণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে : ০১.একটি ডাটাবেজে থাকা সব ছকের ছক, এগুলোর নাম আকার এবং প্রতিটি ছকে থাকা সারির সংখ্যা এবং ০২.প্রতিটি ডাটাবেজের কলামের ছক, ভেতরে কোন ছক ব্যবহার হয়েছে এবং প্রতিটি কলামে স্টোর করা ডাটার টাইপ।
ডাটাবেজ টার্মিনালজিতে বা নামকরণে মেটাডাটার এসব সেটকে বলা হয় ক্যাটালগ। এসকিউএল স্ট্যান্ডার্ড সুনির্দিষ্ট করেছে ক্যাটালগে অ্যাক্সেসের একটি সাধারণ উপায়, যার নাম ইনফরশেন স্কিম।কিন্তু সব ডাটাবেজ তা বাস্তবায়ন করে না। এমনকি এরা বাস্তবায়ন করে এসকিউএল স্ট্যান্ডার্ডের অন্যান্য বিষয়।
মেটাডাটা ও ই-কমার্স :(indecs)ও ONIX
ই-কমার্স অ্যাপ্লিকেশনকে সহায়তা করতে ক্রমবর্ধমান হারে মেটাডাটা স্কিম ডেভেলপ করা হচ্ছে।(indecs) Framework (Interoperability of Data in E-commerce System)হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইনফো ২০০০ প্রোগ্রামের সহয়তায় একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। উদ্যোক্তারা ছিলেন বড় বড় রাইট ওউনার অর্থাৎ পাবলিশার ও রেকর্ডিং কোম্পানির সদস্যরা। এরা চেয়েছিলেন মেটাডাটার স্ট্যান্ডার্ডের জন্য মেধাসম্পদের নেটওয়ার্ক কমার্সের সহায়ক একটি ফ্রেমওয়ার্ক ডেভেলপ করতে। (indecs) কাজের ফাউন্ডেশন হচ্ছে ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি ও এর ট্রান্সফারের একটি ডাটা মডেল। একটি নতুন মেটাডাটা স্কিম ডেভেলপ করার বদলে বরং (indecs)চেয়েছে একটি কমন ফ্রেমওয়ার্ক ডেভেলপ করতে- যাতে বই, জার্নাল, আর্টিকল মিউজিক ইত্যাদিও ট্রানজেকশন-সম্পর্কিত ও বিশেষ করে মেধাসম্পদ-সম্পর্কিত সব স্কিমকে সুযোগ করে দেয়া যায় ইনফরমেশন ইন্টারচেঞ্জ করার। এই কমন ফ্রেমওয়ার্ককে সহায়তা দেয়ার জন্য(indecs) প্রয়োজনীয় মেটাডাটার একটি মিনিমাল কার্নেল ডেভেলপ করেছে। সুনির্দিষ্ট মেটাডাটা স্কিম ডেভেলপ করার জন্য কতগুলো অর্গানাইজেশন গড়ে উঠেছে (indecs)ফ্রেমওয়ার্কের ওপর। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছেONIX(অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ) নামের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড। ওনিক্স হচ্ছে এক্সএমএল-ভিত্তিক একটি মেটাডাটা স্কিম, যা ডেভেলপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপের বই শিল্পের বেশ কয়েকটি ট্রেড গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু পাবলিশার। মূল ওনিক্স স্পেসিফিকেশন ছিল অনলাইনে বই বিক্রি ব্যাপক বেড়ে যাওয়ার প্রতি সরাসরি একটি সাড়া দেয়ার প্রতিফল।এছাড়া এ ক্ষেত্রে উপলব্ধি ছিল বইয়ের ছবি, বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা লেখক বা প্রকাশকের দেয়া বিবরণ, বই আলোচনা ও এ ধরনের তথ্যের উল্লেখ থাকলে বই বিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এ কারণে ‘ওনিক্স ফর বুকস’-এর উপাদানে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণ মূল্যায়নমূলক ও বিক্রি বাড়ানোমূলক তথ্যের রেকর্ড। পাশাপাশি রয়েছে বই ও বই বাণিজ্য সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত। ‘ওনিক্স ফর সিরিয়ালস’-এ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সিরিয়ালসম্পর্কিত মেটাডাটা টাইটেল, আইটেম ও সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ লেভেল।
অপরদিকে ‘ওনিক্স ইনফরমেশন’ ডিজাইন করা হয়েছে একটি পাবলিকেশনের কমার্স সাইকেলে ব্যবহারের জন্য। লাইব্রেরি-ক্রিয়েটেড ক্যাটালগ রেকর্ড সমৃদ্ধ করার কাজেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের দ্য বিবলিওগ্রাফিক এনরিচমেন্ট অ্যাডভাইজরি টিম (বিইএটি) প্রজেক্ট এই ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছে। শুরুর দিকে বিবলিওগ্রাফিক রেকর্ড সৃষ্টির জন্য ভবিষ্যতের লাইব্রেরিগুলোও ওনিক্স মেটাডাটা ব্যবহার করতে পারে।
মেটাডাটা ক্রিয়েশন
কে ক্রিয়েট করে মেটাডাটা? ডিসিপ্লিন বা বিষয়ক্ষেত্র, কোন বিষয় বর্ণিত হচ্ছে, প্রাপ্তব্য টুল ও প্রত্যাশিত ফল অনুযায়ী এর উত্তর বিভিন্ন, কিন্তু এটি সব সময় একটি সমষ্টিগত উদ্যোগের বিষয়। বেশিরভাগ বেসিক স্ট্রাকচারাল ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ মেটাডাটা সরবরাহ করা হয় টেকনিক্যাল স্টাফদের দিয়ে, যারা প্রাথমিকভাবে ডিজিটাইজ করে বা অন্য কোনো উপায়ে সৃষ্টি করে ডিজিটাল অবজেক্ট অথবা সৃষ্টি হয় স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায়। ডেসক্রিপটিভ মেটাডাটার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটাই সর্বোত্তম, যদি রিসোর্সের মূল স্রষ্টা তথা অরিজিনেটর তথ্যটির জোগান দেয়। বিশেষ করে এটি সত্য সায়েন্টিফিক ডাটাবেজ ডকুমেন্টেশনের ক্ষেত্রে, যেখানে অরিজিনেটরের রয়েছে ডাটাসেট তৈরির যৌক্তিকতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত বোধজ্ঞান। তা সত্ত্বেও অনেক প্রজেক্ট দেখেছে, এটি আরও কার্যকর করে তোলা যায় যদি ইনডেক্সার বা পেশাজীবীরা ডেসক্রিপটিভ মেটাডাটা ক্রিয়েট করেন। কারণ, অথর বা ক্রিয়েটরদের হাতে সে সময় ও দক্ষতা নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রে গবেষক ও তথ্য পেশাজীবীদেরএকসাথে এ কাজে লাগানো হয়। গবেষকেরা উপাদানগুলোজুড়ে দিয়ে একটি উপরিকাঠামো তৈরি করতে পারেন। সামঞ্জস্য বিধানের জন্য বিশেষজ্ঞেরা তা পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন। প্রয়োজনে এতে এরা তথ্য সংযোজন-বিয়োজন করতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে এরই মধ্যে এসেছে কিছু ক্রিয়েশন টুল। অনেক মেটাডাটা প্রকল্প উদ্যোগ নিয়ে কিছু ক্রিয়েশন টুল ডেভেলপ করেছে। এগুলো যাতে অন্যেরা ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগুলো বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগও আছে। ক্রমবর্ধমান হারে কমার্শিয়াল সফটওয়্যার টুলও পাওয়া যাচ্ছে। ক্রিয়েশন টুল বিভিন্ন ধরনের- টেমপ্লেইট, মার্ক-আপ টুল, এক্সট্রাকশন টুল ও কনভারশন টুল।
মেটাডাটার পক্ষে-বিপক্ষে
বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো ক্রমবর্ধমান হারে আগ্রহী হয়ে উঠছে তাদের নিজেদের নাগরিকদের ও অন্যদের সৃষ্ট মেটাডাটায় প্রবেশ ও তা বিশেস্নষণ করে দেখার ব্যাপারে। মেটাডাটার সমর্থকেরা বলছে,এরা শুধু সার্চ করছে সন্দেহজনক প্যাটার্ন, কনটেন্ট পরীক্ষা করছে না। আর এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। গত বছর মার্চে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল জন ব্র্যান্ডিস সূচনা করেন ফোন ও ইন্টারনেট প্রোভাইডারদের জন্য প্রয়োজনীয় আইন, যাতে এরা গ্রাহকদের মেটাডাটা দুই বছর সংরক্ষণ করতে পারে। তিনি বলেন, প্রতিটি কাউন্টার টেরোরিজম, কাউন্টার এসপায়োনেজ ও পরিকল্পিত অপরাধ তদন্তে মেটাডাটা হচ্ছে বেসিক বিল্ডিং বস্নক। অন্যদের রয়েছে একই ধরনের উদ্বেগ।
মেটাডাটার বিরোধীরা বলেন, মেটাডাটা রিটেনশন অর্থাৎ মেটাডাটা ধারণ ইনফরমড কনফিডেন্সিয়াল সোর্সকে নিরুৎসাহিত করবে সেইসব তথ্য উদঘাটনে, যা জনগণের জানা দরকার। কারণ, তাদেরআইডেনডিটি রক্ষা করা যাবে না। এরা আরও বলেন, সাধারণ নাগরিককে সন্দেহভাজন হওয়ার ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউএস ল অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিষয়ের প্রফেসর ডেভিড কোল উদাহরণ দেন এক ব্যক্তির, যিনি ফোনকল দিয়েছিলেন তার এক আত্মীয়কে, আর সেই আত্মীয় ফোন করেছিলেন এক পিজ্জা ডেলিভারি ড্রাইভারকে। আর এই ড্রাইভারকে এমন এক ব্যক্তি ফোন করেছিলেন, যাকে সন্দেহ করা হয়েছিল সন্ত্রাসী কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার ব্যাপারে। মূল ফোন কলারের নাম নিরাপত্তা বাহিনীর সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর তালিকায় উঠে যাওয়ার জন্য এ ধরনের সংশ্লিষ্টতাই যথেষ্ট।
মেটাডাটার ভবিষ্যৎ
একদম প্রথম দিকের মেটাডাটার আলোকপাত ছিল ডিসকভারি আইডেন্টিফিকেশন ও রিট্রিভালের বা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় বর্ণনামূলক উপাদানের ওপর। এরপর যখন এলো আরও মেটাডাটার উদ্যোগ, তখন বিশেষত অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মেটাডাটা ও এগুলোর রাইট ও প্রিজারভেশনের ক্ষেত্রের ওপর আরও জোর দেয়া হলো। একটি ক্ষেত্র হচ্ছে টেকনিক্যাল মেটাডাটা, যেখানে এখনও মেটাডাটা স্কিমের তেমন মনোযোগ দেয়া হয়নি। কার্যকর এক্সচেঞ্জ ও মেটাডাটা বর্ণিত ডিজিটাল অবজেক্টের জন্য কখনও কখনও প্রয়োজন হয় এর ফাইল নেম ও টাইপের বাইরে অবজেক্ট সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট কারিগরি জ্ঞান বা টেকনিক্যাল নলেজ। নবতর স্ট্যান্ডার্ড এসব প্রয়োজন মেটাতে শুরু করেছে। এনআইএসও/এআইআইএম স্ট্যান্ডার্ড (জেড৩৯.৮৭), ডাটা ডিকশনারি- টেকনিক্যাল মেটাডাটা স্টিল ইমেজেস আলোকপাত করেশুধু ডিজিটাল ইমেজ ফাইলগুলোর মধ্যে ইন্টারঅপারেবিলিটি সহায়ক প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল ডাটার ওপর। এই স্ট্যান্ডার্ডে সংজ্ঞায়িত মেগাডাটা উপাদানগুলোতে রয়েছে বেসিক ইমেজ প্যারামিটারগুলো। যেমন- কমপ্রেশন ও কালার প্রোফাইল, ইমেজ সৃষ্টিতে ব্যবহারের ইকুইপমেন্ট ও সেটিং সম্পর্কিত তথ্য, স্যাম্পলিং ফ্রিকুয়েন্সি ও কালার ম্যাপের মতো পারফরম্যান্স অ্যাসেসমেন্ট ডাটা। বেশ কিছুসংখ্যক স্ট্যান্ডার্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে মেটাডাটা ওয়ার্ক চলছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনে (আইএসও) টেকনিক্যাল কমিটি (টিসি) ৪৬ (ইনফরমেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন)-এর একটি সাব-কমিটি বিবলিওগ্রাফিক অ্যাপ্লিকেশনে মেটাডাটা ডেভেলপমেন্টের সমস্যাগুলো দূর করছে। আইএসও টিসি ২১১ (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন/ জিওমেট্রিক) জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেমে অ্যাপ্লিকেশনের জন্য মেটাডাটা স্ট্যান্ডার্ড ডেভেলপ করছে। আইএসও-আইইসি জেটিসি১ (ইনফরমেশন টেকনোলজি)-এর ডাটা ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারচেঞ্জ সাব-কমিটি মেটাডাটা স্পেসিফিকেশন ও ম্যানেজমেন্টের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ডেভেলপ করছে এবং সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ‘প্রসিডিউর ফর অ্যাচিভিং মেটাডাটা রেজিস্ট্রি কনটেন্ট কনজিসট্যান্সি’ সম্পর্কিত রিপোর্ট। ফরমাল স্ট্যান্ডার্ডস কমিউনিটির বাইরে ডেভেলপ করেছে মেটাডাটা স্পেসিপিকেশন। এরা চাইছে এদের স্পেসিফিকেশন রূপ নিক ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে। ‘ডাবলিন কোর’ এরই একটি উদাহরণ। এটি একটি ওয়ার্কশপে প্রথম ডেভেলপ করা হয় ১৯৯৫ সালে, আর এর স্পন্সর ছিল ওসিএলসি এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর সুপারকপিউটিং অ্যাপ্লিকেশন। ২০০১ সালে পরিণত হয় একটি অফিসিয়াল এএনএসআই/এনআইএসও স্ট্যান্ডার্ডে (জেড ৩৯.৮৫)। আর ২০০৩ সালে ডাবলিন কোর ইস্যু করা হয় একটি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড (আইএসও ১৫৮৩৬) হিসেবে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসোর্টিয়ামের (ডব্লিউ৩সি) মেটাডাটা অ্যাকটিভিটি সেমান্টিক ওয়েবে ইনকরপোরেট করা হয়েছে। এদের উদ্যোগ হচ্ছে একটি কমন ফ্রেমওয়ার্ক প্রোভাইড করা, যাতে অ্যাপ্লিকেশন, এন্টারপ্রাইজ ও কমিউনিটি বাউন্ডারিজুড়ে ডাটা শেয়ার ও রিইউজের সুযোগ করে দেয়া যায়। আরডিএফ স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে মুখ্য এনাবলিং স্ট্যান্ডার্ডগুলোর একটি।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তথ্যে প্রবেশযোগ্যতার ক্ষেত্রে জন্ম দিয়েছে একটি বিপ্লবের। ইনফরমেশন উদঘাটন ও ব্যবহারের উপায়ের ক্ষেত্রে মেটাডাটার ডেভেলপমেন্ট ও অ্যাপ্লিকেশন উপস্থাপন করেছে একটি বড় ধরনের উত্তরণ। নতুন নতুন প্রযুক্তি, স্ট্যান্ডার্ড ও সর্বোত্তম অনুশীলন অব্যাহতভাবে মেটাডাটার অ্যাপ্লিকেশনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।