লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - ফেব্রুয়ারী
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তামাশা: ২০১৩ সালের আইসিটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো এ বছরের জানুয়ারিতে
২০১৩ সালে পরিচালিত জরিপের তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে এই বছরের জানুয়ারিতে এসে প্রকাশ করা হলো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর আইসিটি-বিষয়ক জরিপ প্রতিবেদন। এটি এই সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা পরিচালিত এ ধরনের প্রথম জরিপ। ‘আইসিটি ইউজঅ্যান্ডঅ্যাক্সেস বাইইনডিভিজ্যুয়ালসঅ্যান্ডহাউসহোল্ডস ইন বাংলাদেশ ২০১৩’ শীর্ষক এই রিপোর্টটিপ্রকাশেরপরপরইপ্রবলসমালোচনারমুখেপড়ে। শুরুতেইপ্রশ্ন ওঠে- এই জরিপের তথ্য-পরিসংখ্যানসংগ্রহকরাহয়েছে ২০১৩ সালে, আরএররিপোর্ট প্রকাশকরাহলো ২০১৬ সালেরজানুয়ারিতে-এটিকিএকটিতামাশানয়? কারণ,আইসিটিখাতটিহচ্ছেএকটি দ্রুতপরিবর্তনশীলখাত। জরিপপ্রতিবেদনটিপ্রকাশেরপরপরইসমালোচনারমুখেপড়ে দেশেরসংশ্লিষ্টবিশেষজ্ঞ-নীতিনির্ধারকদেরকাছে। এরাবলছেন, জরিপেপ্রকাশিত তথ্য-পরিসংখ্যানবিগত দুইবছরেরবাস্তবপরিস্থিতির সাথে খাপখায়না। এমনকিআইসিটি-বিষয়কপ্রতিমন্ত্রীজুনাইদ আহমেদ পলকও এই জরিপেরফলপ্রত্যাখ্যানকরেন। পরিসংখ্যানব্যুরো অবশ্য বলছে, জনবল সঙ্কটের কথা।
জরিপটিবিভ্রামিত্মকর:পলক
আইসিটিপ্রতিমন্ত্রীজুনাইদ আহমেদ পলক এই জরিপপ্রতিবেদনপ্রত্যাখ্যানকরেবলেছেন, এই জরিপেবাংলাদেশেরবিকাশমানআইসিটিখাতকেভুলভাবেতুলেধরাহয়েছে। তিনিমনেকরেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যানব্যুরোর (বিবিএস) এই জরিপঅসম্পূর্ণ ও অযৌক্তিক। রাজধানীরআগারগাঁওয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি‘বাংলাদেশে ব্যক্তি ও পরিবারপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রবেশাধিকার ২০১৩’ শীর্ষক এক কর্মশালায়বিবিএসেরজরিপনিয়েতিনি এই ক্ষোভপ্রকাশকরেন। বাংলাদেশ হাইটেকপার্ক কর্তৃপক্ষ এ কর্মশালারআয়োজনকরে।
কর্মশালারশুরুতেইআলোচ্য জরিপপ্রতিবেদনটিরবিভিন্নদিক উপস্থাপনকরেনবিবিএসেরযুগ্ম পরিচালককবিরউদ্দিনআহমেদ। এরপরআলোনায় অংশ নিয়েআইসিটিপ্রতিমন্ত্রীজুনাইদ আহমেদ পলকবলেন, ‘রিপোর্টটিঘরেঘরেগিয়েনয়, ঘরেবসেইকরাহয়েছে। এই জরিপ তথ্যপ্রযুক্তি খাতেবিশ্বেরকাছেবাংলাদেশেরভাবমর্যাদাবিনষ্টকরবে।’তিনিএমনহুশিয়ারিও দেন, এই জরিপেরফলেআইসিটিখাতের কোনোক্ষতিহলেতা মেনে নেয়াহবেনা। আইসিটিপ্রতিমন্ত্রীআরওবলেন, আইসিটিবিভাগ ও বেসিসসহকয়েকটিপ্রতিষ্ঠানেরহিসাবমতে দেশে এখনইন্টারনেটব্যবহারকারীরসংখ্যা ৫ কোটি ৪০ লাখ। অথচ কেউ যদি বিবিএসেরওয়েবসাইটে দেখে এই ব্যবহারকারীরসংখ্যামাত্র দেড় কোটি, তবেএটি নেতিবাচকফলইবয়েআনবে।
বিবিএসেরজরিপেরসময়উপযোগিতানিয়েপ্রশ্নতুলেতিনিবলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতেবিনিয়োগকরতেবিনিয়োগেআগ্রহী দেশগুলোএকটিনির্ভরযোগ্য সূত্র খোঁজে, যেখান থেকে এরা দেশের প্রযুক্তি খাতসম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেতেপারে। কিন্তু বিবিএস ২০১৩ সালেকরাজরিপপ্রতিবেদনপ্রকাশকরেছেতিনবছর পর। তাই এই সময়েএসে এই জরিপের কোনো যৌক্তিকতা থাকেনা।
তিনিবিবিএস-কে পরামর্শ দেন, তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক কোনোজরিপপ্রতিবেদন তৈরিকরতেচাইলেতারা যেনোআইসিটিবিভাগেরপরামর্শ নিয়েকাজকরে। আইসিটিবিভাগের সাথে কথাবলেসঠিক তথ্য যাতে নেয়া যেতেপারে, সে ব্যাপারে দৃষ্টিরাখারপরামর্শও দেনতিনি। প্রতিমন্ত্রীরঅভিযোগেরজবাবেবিবিএসেরমহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুলওয়াজেদ বলেন, ‘বেশকিছুবিষয়েসক্ষমতারঅভাবেআমরাজরিপপ্রতিবেদনসময়মতোপ্রকাশকরতেপারিনি, এ কথাঠিক। তবেপদ্ধতিগতভাবেআমাদেরপ্রতিবেদননির্ভুল। কাউকেবিব্রতকরারজন্য এসব তথ্য দেয়া হয়নি। দেশেরভাবমর্যাদাক্ষুণ্ণ হয় এমনকিছু এ প্রতিবেদনে রাখাহয়নি।’
আইসিটিসচিবশ্যামসুন্দরশিকদারবলেন, ‘যেকোনোজরিপে ভৌগোলিকসহ বেশকিছুবাধা থাকে।তবে সেগুলোঅতিক্রমকরেইজরিপের তথ্য সংগ্রহকরতে হয়। আশাকরব, এ বিষয়গুলোপরবর্তীসময়েরজরিপের ক্ষেত্রেমাথায়রাখবে।’
প্রতিমন্ত্রীজুনাইদ আহমেদ পলকবলেন, ‘আমরাজরিপে উপস্থাপিত তথ্য-পরিসংখ্যাননিয়েসন্তুষ্টনই। আমাদেরহিসাবমতে,বর্তমানেবাংলাদেশের ৩৪ শতাংশমানুষইন্টারনেটব্যবহারকরে। আর এইহার ২০২১সালেরমধ্যে ১০০ শতাংশে পৌঁছবে। তিনিবলেন, গত বছর ৪৪ লাখ স্মার্টফোন এ দেশে বিক্রি হয়েছে। এ বছরতাদ্বিগুণে পৌঁছবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগনিয়ন্ত্রণকমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ইন্টারনেটব্যবহারকারীরসংখ্যাএখন ৫ কোটি ৪১ লাখ। দেশে সক্রিয়ইন্টারনেটব্যবহারকারীরমানদ-হলো, ৯০ দিনবাতিনমাসেরমধ্যে একজন ব্যক্তি একবারইন্টারনেটব্যবহারকরলেইতিনিইন্টারনেটব্যবহারকারীবলেবিবেচিতহবেন। তবেইন্টারনেটব্যবহারকারীরসংখ্যানিয়েসরকারের দেয়া হিসাবের সাথে দ্বিমত পোষণকরেবিশ্বব্যাংকও।বিশ্বব্যাংকবলছে, বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেটব্যবহারকারীরসংখ্যা১ কোটি ২০ লাখ, যাবাংলাদেশের মোটজনসংখ্যারমাত্রসাড়ে ৭ শতাংশ। চলতিবছরেরজানুয়ারিতেবিশ্বব্যাংকপ্রকাশিত‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্টরিপোর্ট ২০১৬: ডিজিটালডিভিডেন্টস’শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ইন্টারনেটব্যবহারকারীর এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত একক জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবেবাংলাদেশের অবস্থানবিশ্বে পঞ্চম।
জরিপরিপোর্ট যাবলে
জাতীয়পরিসংখ্যানসংস্থা বিবিএসপরিচালিত ২০১৩ সালেরআইসিটি-বিষয়কজরিপপ্রতিবেদনে বলাহয়-বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশেরও বেশিপরিবার মোবাইল ফোনব্যবহারকরে। এই পরিসংখ্যানজানিয়ে দেয়, বর্তমানসরকারবাংলাদেশে দ্রুতডিজিটালকানেকটিভিটিগড়েতুলছে। জরিপমতে, বাংলাদেশের ৩ কোটি ১৪ লাখপরিবার মোবাইল ফোনব্যবহারকরছে। রিপোর্টে আরওজানানো হয়, ৪ দশমিক ৮ শতাংশপরিবারেরপ্রবেশাধিকাররয়েছেইন্টারনেটে। রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৬ শতাংশপরিবারেকমপিউটারব্যবহারকরা হয়। দেশের ৩৬ হাজার ২৬৮টি পরিবার ও ১ লাখ ৩০ হাজার ৭১৪ জন ব্যক্তির ওপরজরিপচালিয়েএসব তথ্য তুলেআনা হয়। জরিপে অংশ নেয়া লোকদেরবয়সপাঁচবছরেরওপর।
রিপোর্টে আরওজানানো হয়, দেশের ৩ দশমিক ১ শতাংশপরিবারল্যান্ডফোনব্যবহারকরে। ১৩ দশমিক ৯ শতাংশেরয়েছে রেডিওরব্যবহার। মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত রয়েছেশহরের ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ ও গ্রামের ৮৫ দশমিক ২ শতাংশপরিবার। গ্রামেরপ্রতিচারজনেমহিলারমধ্যে একজন সংযুক্ত রয়েছেন মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে। মোবাইলব্যবহারকারীদেরসবচেয়েবড়অংশটিহচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ বছরবয়সী।জরিপমতে, মোবাইল ক্রেতাদের ৯১ দশমিক ৪ শতাংশই এই বয়সী ক্রেতা।
বিবিএসেরজরিপমতে, ৩ কোটি ৫৮ লাখপরিবারেরমধ্যে ১৭ লাখ ১২ হাজারপরিবারইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এরমধ্যে ১১ দশমিক ৮ শতাংশশহুরে ও ২ দশমিক ৫ শতাংশগ্রামীণপরিবারেররয়েছেডাটাকানেকটিভিটি।
বিভাগভিত্তিকহিসাবে দেখা গেছে- ঢাকাবিভাগেররয়েছেসর্বোচ্চসংখ্যকইন্টারনেটইউজার। রংপুরবিভাগেমাত্র ১ শতাংশপরিবারইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত। রাজশাহীতে এ হার দেড় শতাংশ। যাদের মোবাইলইন্টারনেটসংযোগরয়েছে, তাদের ৯২ দশমিক ৭ শতাংশইশহুরেমানুষ। জরিপে দেখা গেছে. ইন্টারনেটব্যবহারকারীদেরমাত্র ৫ দশমিক ৯ শতাংশওয়াই-ফাইব্যবহারকরেন।
মোবাইলব্যবহারকারীদেরসংখ্যাওসবচেয়ে বেশিঢাকাবিভাগে। ৯১ দশমিক ৩ শতাংশ মোবাইলব্যবহারকারীইঢাকাবিভাগের। এ বিভাগের ১০ দশমিক ৫ শতাংশপরিবারকমপিউটারব্যবহারকরে। ৫ দশমিক ২ শতাংশপরিবারেররয়েছেল্যান্ডফোনএবং ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশপরিবারেররয়েছে টেলিভিশন। তবেচট্টগ্রামবিভাগের লোকেরাসবচেয়ে বেশিসংখ্যায় রেডিওব্যবহারকরে। এ বিভাগের ২৪ দশমিক ২ শতাংশপরিবারেরয়েছে রেডিও। এ ক্ষেত্রেবরিশালবিভাগের অবস্থানদ্বিতীয় স্থানে। এ বিভাগের ১৮ দশমিক ২ শতাংশপরিবার রেডিও শোনে।
মোবাইলকানেকশনেরদিক থেকে চট্টগ্রামের অবস্থানদ্বিতীয় স্থানে। এ বিভাগের ৯০ দশমিক ৮ শতাংশপরিবার মোবাইলব্যবহারকরে। এরপরইরয়েছেখুলনার স্থান (৮৭ দশমিক ১শতাংশ)। এরপরযথাক্রমে সিলেট (৮৬ দশমিক ৯ শতাংশ), রংপুর (৮২ দশমিক ২ শতাংশ) এবংরাজশাহী (৮১ দশামক৯শতাংশ)।
ইন্টারনেটব্যবহারসবচেয়ে বেশি হয় সফটওয়্যারডাউনলোডিং ও ব্যাংকখাতে। এ দুইখাতেইন্টারনেটব্যবহার হয় যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ ও ১৯ শতাংশ। ১০ শতাংশব্যবহার হয়পণ্য ও সেবা কেনারকাজে। বিনিয়োগেরকাজেব্যবহার হয় ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ।