• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইন্টেল কোরআই প্রসেসর : কোনটি আপনার জন্য প্রযোজ্য?
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কে এম আলী রেজা
মোট লেখা:১৫৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রসেসর
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইন্টেল কোরআই প্রসেসর : কোনটি আপনার জন্য প্রযোজ্য?
নিঃসন্দেহে বলা যায়, একটি কমপিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বা কম্পোনেন্ট হচ্ছে এর প্রসেসর। হোক ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ অথবা ট্যাবলেট পিসি বা ট্যাব- সবক্ষেত্রেই প্রসেসর সবচেয়ে বিবেচ্য একটি বিষয়, যা অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। এখানে আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রসেসর যত বেশি উন্নত বা আপগ্রেডেড হবে, তার দামও তত বেশি হবে। আর প্রসেসরের দাম কমপিউটারের দামে প্রতিফলিত হবে। অর্থাৎ একটি কমপিউটারের দাম ও মান কিন্তু নির্ভর করছে ওই প্রসেসরের ওপরই।
প্রসেসরের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ইন্টেল কোর প্রসেসর। আবার ইন্টেল প্রসেসরের দাম অন্যান্য যেকোনো প্রসেসরের চেয়ে বেশি। বর্তমানে ইন্টেল কোরের তিনটি প্রসেসর ভার্সন সমভাবে আদৃত। এগুলো হলো- আই৩, আই৫ ও আই৭। এর মধ্যে ক্ষমতার দিক থেকে নিচের দিকে রয়েছে আই-৩, মধ্যবর্তী অবস্থায় আই৫ এবং সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রসেসর হচ্ছে আই৭। প্রসেসিং ক্ষমতার পাশাপাশি দামের দিক থেকেও সবার আগে আই৭ প্রসেসর। এ তিনটি বহুল ব্যবহৃত প্রসেসরের মধ্যে কোনটি আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারবে, সেটি নির্ভর করবে আপনার কাজের ধরন ও পরিমাণের ওপর।
আপনি যদি খুব উঁচুমানের কোনো প্রফেশনাল কাজ, যেমন- হাই রেজ্যুলেশন গ্রাফিক্স বা নেটওয়ার্কের ডাটা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ না করে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য আই৭ ইন্টেল কোর প্রসেসরের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি সাধারণ দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো আই৩ বা আই৫ প্রসেসর দিয়ে সম্পন্ন করতে পারেন। নিচে আই৫ ও আই৩ প্রসেসরের মধ্যে তুলনামূলক কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

চিত্র : ইন্টেলের কোর আই প্রসেসর
ক্লোক স্পিড : একটি কমপিউটারের দক্ষতা নির্ভর করে তার প্রসেসরের ওপর। আবার একটি প্রসেসরের দক্ষতা নির্ণয় করা হয় তার প্রসেসিং ক্ষমতা বা স্পিড দিয়ে। প্রসেসিং স্পিড হলো একটি প্রসেসর সেকেন্ডে কতগুলো কাজ প্রসেস বা সম্পন্ন করতে পারে সেটি। প্রসেসিং বা ক্লোক স্পিড মাপা হয়ে মেগাহার্টজ বা গিগাহার্টজ এককে।
সঙ্গত কারণেই কোর আই৫-এর ক্লোক স্পিড তার পূর্ববর্তী ভার্সন আই৩-এর তুলনায় বেশি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। ক্লোক স্পিড বেশি হওয়ার কারণে কোর আই৫-এর প্রসেসিং ক্ষমতাও বেশি। জটিল কোনো প্রসেস বা টাস্ক প্রক্রিয়াকরণে যে সময়ের প্রয়োজন হয়, তার থেকে আপনি আই৫ ও আই৩-এর প্রসেসিং ক্ষমতা সহজেই অনুধাবন এবং তুলনা করতে পারবেন। যেমন- বৃহৎ আকারের একটি মাইক্রোসফট এক্সেল ফাইল বা ফটোশপে ফিল্টারের প্রয়োগের সময় আপনাকে প্রসেসিং স্পিডের পার্থক্যটি ভালো করে বুঝতে সাহায্য করবে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যেকোনো জটিল প্রকৃতির প্রসেস বা টাস্ক সম্পন্ন করতে আই৩-এর তুলনায় আই৫ কম সময় নিচ্ছে। অর্থাৎ প্রসেসিং গতির দিক থেকে আই৫ বেশি দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে পারে।

চিত্র : ইন্টেল কোরআই প্রসেসরসম্পন্ন মাদারবোর্ড
উচ্চ ওয়ার্কলোডের সময় যেসব প্রসেসরে টার্বো বুস্ট ফিচার রয়েছে, সেগুলোতে ক্লোক ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে যায়। এর ফলে তার প্রসেসিং গতিও বাড়ে। কিছু কিছু কোর আই৫ প্রসেসরে টার্বো বুস্ট ফিচার রয়েছে। অপরদিকে আই৩ প্রসেসরে টার্বো বুস্ট ফিচারটি নেই। টার্বো বুস্টের কারণে আই৫ প্রসেসর তার মৌলিক ক্লোক স্পিডের তুলনায় বেশি দ্রুত কাজ করতে সক্ষম হয়।
ডুয়াল কোর বনাম কোয়াড কোর : ইন্টেল প্রসেসর কোরআই৩ ও কোরআই৫-এর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাবে আই৩ সবচেয়ে কম শক্তিসম্পন্ন। তবে দামে সাশ্রয়ী। পঞ্চম প্রজন্মের সব সিপিইউতে (সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট) দুটো কোর প্রসেসর থাকে, যা ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কমপিউটারে ব্যবহার করা হয়। আই৫ তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষমতাধর ও ব্যয়বহুল। তা সত্ত্বেও আকারে ছোট ও বেশি শক্তিশালী কোরআই৫-এর ল্যাপটপ ভার্সন রয়েছে, যা ডুয়াল কোরসম্পন্ন। কোরআই৫-এর ডেস্কটপ ভার্সন আকারে বড় এবং এতে কোর সংখ্যা ৪। অর্থাৎ এটি কোয়াড কোরসম্পন্ন।
ডেস্কটপ ব্যবহারকারীকে ব্যাটারির স্থায়িত্ব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। সুতরাং, এ ক্ষেত্রে বেশি ক্ষমতাধর কোরআই৫ প্রসেসর ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। মাল্টিকোর প্রসেসরের সুবিধা নিতে হলে বিশেষ সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে হবে। আবার প্রসেসরের ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর জন্য সফটওয়্যার নির্মাতাদের একটি প্রচেষ্টা থাকে, বিশেষ করে উঁচুমানের কমপিউটার গেম, গ্রাফিক্স বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরির ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রযোজ্য। দেখা গেছে, এ ধরনের গেম বা সফটওয়্যার কোয়াড কোর প্রসেসরে বেশি দ্রুত রান করে। এর ফলে ডেস্কটপ পিসির ক্ষেত্রে কোরআই৫ প্রসেসর তার প্রতিপক্ষ কোরআই৩-এর চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
হাইপার থ্রেডিং ফিচার : কিছু কিছু কোর প্রসেসরে রয়েছে হাইপার থ্রেডিং (Hyper-Threading) ফিচার। এটি ইন্টেলের নিজস্ব প্রযুক্তি, যা সিপিইউর কর্মকা-কে অধিকতর কার্যকরভাবে সিডিউলিং করে দেয়, বিশেষ করে মাল্টিকোর আর্কিটেকচারের বেলায় এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়। হাইপার থ্রেডিং টাস্ক সিডিউলিংয়ের মাধ্যমে কমপিউটারের পুরো কার্যক্রমকে বেশি গতিসম্পন্ন করে। তবে এর ব্যবহার উঁচুমানের প্রোগ্রাম যেমন- মিডিয়া এডিটের ক্ষেত্রে বেশি দৃশ্যমান হয়। তবে সব কোরআই৫ ও কোরআই৩ প্রসেসরে হাইপার থ্রেডিং ফিচার পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয় প্রজন্মের কোরআই৫ ও চতুর্থ প্রজন্মের কোরআই৩ প্রসেসরে ফিচারটি পাবেন। ফিচারটির সুবিধা নিতে কমপিউটার কেনার আগে নিশ্চিত হোন এর মাদারবোর্ড বায়োস এটি সাপোর্ট করে কি না।
প্রসেসরের বিদ্যুৎ চাহিদা : সাধারণভাবে বলা যায়, কোরআই৫ প্রসেসর কোরআই৩ প্রসেসরের তুলনায় বেশি শক্তিশালী। সাথে সাথে এ কথা স্বীকার করতে হবে, কোরআই৫ প্রসেসর কোরআই৩-এর তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ কমপিউটারের সাপ্লাই থেকে ব্যবহার করে থাকে। দেখা গেছে, একই কাজের জন্য কোরআই৩ যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, কোরআই৫ তারচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে। কিছু কিছু ইন্টেল প্রসেসর, বিশেষ করে যেগুলোতে M, U বা UM লেবেল দেয়া থাকে, সেগুলো মূলত বিদ্যুৎসাশ্রয়ী করে তৈরি করা হয়। যেহেতু ল্যাপটপ ব্যবহারকারীরা ব্যাকআপ ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্ভর করে থাকেন এবং কোরআই৩ ইন্টেলের বিদ্যুৎসাশ্রয়ী প্রসেসর, এ কারণে কোরআই৩ প্রসেসরচালিত ল্যাপটপ অনেকেই পছন্দ করে থাকেন।
তাপ : সাধারণত যে প্রসেসর যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে এবং যার প্রসেসিং সাইকেল যত বেশি, সে সচল অবস্থায় তত বেশি তাপ উৎপাদন করবে। যেহেতু কোরআই৩ প্রসেসর কোরআই৫-এর তুলনায় কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে, এর কারণে কোরআই৩ কম তাপ তৈরি করে এবং অপেক্ষাকৃত শীতল অবস্থায় থাকে। এই একই কারণে ল্যাপটপে কোরআই৩ প্রসেসর অনেকেরই পছন্দ। বেশি সময় কাজ করার ফলে শুধু প্রসেসরের কারণে ল্যাপটপ বেশি মাত্রায় গরম হয়ে গেলে তা ইউজারের জন্য স্বসিত্মকর নয়। তবে ডেস্কটপ কমপিউটারের ক্ষেত্রে এটি কোনো সমস্যা নয়। এতে প্রসেসর ঠা-া করার জন্য আলাদা একটি কুলিং ইউনিট বা ফ্যান অবিরতভাবে কাজ করে।
এটি সত্যি, ইন্টেল প্রসেসর কোরআই৫ এর পূর্ববর্তী ভার্সন কোরআই৩-এর তুলনায় বেশি শক্তিশালী। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী কোরআই৩ প্রসেসরের দাম একদিকে যেমন কম, অন্যদিক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। তাই এটি দিয়ে আপনি অনায়াসে প্রায় সব কমপিউটার অ্যাপ্লিকেশন বা প্রোগ্রাম রান করাতে পারেন। আপনি যদি দৈনন্দিন কাজ যেমন- ওয়েব ব্রাউজিং, ডকুমেন্ট তৈরি ও এডিটিং বা অডিও-ভিডিও ফাইল রান করাতে চান, তাহলে কোরআই৩ প্রসেসর আপনার প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে বেশি দামি ও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহাকারী কোরআই৫ প্রসেসর আপনাকে বাড়তি কোনো সুবিধা দেবে না। আর ল্যাপটপ ব্যবহারকারীরা বিদ্যুৎ ব্যাকআপের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কোরআই৩ প্রসেসরভিত্তিক ল্যাপটপই বেছে নেবেন।
ফিডব্যাক : kazisham@yahoo.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস