• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সময় এখন মোবাইল কমার্সের
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: এস. এম. মেহদী হাসান
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-কমার্স
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সময় এখন মোবাইল কমার্সের
মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তার সূত্র ধরেই মোবাইল কমার্সের উত্থান। বাংলাদেশে মোবাইল কমার্স নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে দেখে নেয়া যাক মোবাইল কমার্স কী? Tech Target সূত্র মতে-
M-commerce (mobile commerce) is the buying and selling of goods and services through wireless handheld devices, such as cellular telephone and personal digital assistants (PDAs). Known as next-generation e-commerce, m-commerce enables users to access the Internet without needing to find a place to plug in.
মোবাইল কমার্সের আওতায় পড়ে : মোবাইলে টাকা-পয়সা ট্রান্সফার করা; মোবাইল এটিএম;মোবাইল টিকেটিং; মোবাইল ভাউচার, কুপন, লয়াল্টি কার্ড;ডিজিটাল কনটেন্ট (অডিও, ভিডিও) কেনাকাটা;অবস্থানভিত্তিক সেবা;তথ্যভিত্তিক সেবা : খবর, স্টক মার্কেটের খবর, খেলার খবর, ফিন্যান্সিয়াল তথ্য, ট্রাফিক রিপোর্ট, জরুরি বার্তা;মোবাইল ব্যাংকিং;মোবাইলে স্টক কেনাবেচা;মোবাইলে নিলাম;মোবাইল ব্রাউজিং;মোবাইলে কেনাকাটা;অ্যাপ্লিকেশনে মোবাইল পেমেন্ট;মোবাইল মার্কেটিং এবং বিজ্ঞাপন।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
মোবাইল কমার্সের জন্ম ফিনল্যান্ডে। ১৯৯৭ সালে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি শহরে প্রথমবারের মতো ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে কোকাকোলা ভেন্ডিং মেশিনে কোকের দাম মেটানো যেত। ওই একই বছর ফিনল্যান্ডেই প্রথমবারের মতো ক্ষুদে বার্তাভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়। পরের বছরে ফিনল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল কনটেন্ট ডাউনলোড চালু হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াতে ট্রেনের এবং জাপানে প্লেনের টিকেট কেনা শুরু হয়। ২০০০ সাল থেকে নরওয়ের অধিবাসীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পার্কিং টিকেট কেনা শুরু করে।
২০০৭ সালে অ্যাপল আইফোন চালু হয়। ২০০৮ সালে গুগল তাদের অ্যান্ড্রয়িডভিত্তিক স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ে। ২০১০ সালে অ্যাপল আইপ্যাড বাজারে আসে। এই তিনটি ঘটনা মোবাইল কমার্স খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। কারণ, এর আগ ফিচার ফোনে মোবাইল কমার্সের ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত। স্মার্টফোনের প্রসেসর শক্তিশালী হওয়ার কারণে এতে ফোন করা এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি অনেক কিছু করা যায়। এরই ফলে মোবাইল কমার্স বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আকারে বেড়েছে।
এশিয়াতে মোবাইল কমার্স
আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা’র উক্তি দিয়েই শুরু করা যাক। চীনের অনলাইন বাজারের সাথে বিশ্বের অন্যান্য বাজারের তুলনা করতে গিয়ে জ্যাক মা বলেছিলেন- ‘in other countries, e-commerce is a way to shop, in China it is a lifestyle।’ এ কথার অর্থ হচ্ছে অন্যান্য দেশে ই-কমার্স শুধু পণ্য ও সেবা কেনাবেচার একটি মাধ্যম, কিন্তু চীনে ই-কমার্স লাইফস্টাইল। এর কারণ হচ্ছে চীন বিশাল একটি দেশ এবং এখানে অনেক প্রদেশ আছে। কিন্তু চীনের সব জায়গায় ভালো শপিং মল বা দোকান নেই। এর ফলে দেখা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পণ্যের চাহিদা থাকলেও সেখানকার লোকে পণ্যটি কিনতে পারছে না। এই যখন অবস্থা, তখন ই-কমার্স তাদের সামনে সম্ভাবনার বিশাল দুয়ার উন্মোচন করে দিয়েছে। আর মোবাইল কমার্স আসাতে এখন তাদের বাণিজ্যিক সুবিধা আরও বেড়েছে। চীনে স্মার্টফোনের দাম অনেক সস্তা এবং সব জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে। তাই লোকে স্মার্টফোনের মাধ্যমেই অনেক কাজ সারছে।
এশিয়ার দেশগুলোতে মোবাইল কমার্সের উত্থান ঘটছে। আন্তর্জাতিক অনলাইন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান গো-গ্লোবের সূত্র মতে, গত বছরে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মোট ওয়েবসাইট ট্রাফিকের ৪৩.৩ শতাংশ এসেছে মোবাইল ডিভাইস থেকে। ২০১১ সালে এ হার ছিল ৯.৬ শতাংশ, ২০১২ সালে ১৮.৩ শতাংশ, ২০১৩ সালে ২৬.১ শতাংশ এবং ২০১৪সালে ৩৮.০ শতাংশ।
২০১৫সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অনলাইন ক্রেতাদের ৪৫.৬ শতাংশ তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা কিনছেন।
স্মার্টফোনে কেনাকাটা করার দিক দিয়ে এশিয়ার যেসব দেশ প্রথম দিকে আছে সেগুলো হলো- চীন (৭০.১ শতাংশ), ভারত(৬২.৯ শতাংশ), থাইল্যান্ড (৫৮.৮ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়া(৫৪.৯ শতাংশ), কোরিয়া (৫৩.৮ শতাংশ), মালয়েশিয়া (৪৫.৬ শতাংশ), ভিয়েতনাম (৪৫.২ শতাংশ), হংকং (৩৮.২ শতাংশ), ও সিঙ্গাপুর (৩৬.৭ শতাংশ)।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অনলাইন ক্রেতাদের প্রায় অর্ধেক (৪৯.৫ শতাংশ) মোবাইল কমার্স ব্যবহার করে। কারণ এটি অনেক সাশ্রয়ী; সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে।
৪৩.৯ শতাংশ মোবাইল কমার্স পছন্দ করেন। কারণ এরা যানবাহনে করে চলমান অবস্থায় কেনাকাটা সারতে পারেন।৩৯.৫ শতাংশ মোবাইল কমার্স পছন্দ করেন। কারণ অনেক অ্যাপ্লিকেশন আছে, যেগুলো মাধ্যমে স্মার্টফোনে খুব সহজেই কেনাকাটা করা যায়।
চীনের অনলাইন ক্রেতাদের ৩৭.৪ শতাংশ এবং কোরিয়ার ৩৬ শতাংশ স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফ্যাশন পণ্য এবং অ্যাক্সেসরিজ কিনে থাকেন।
এ অঞ্চলের ভোক্তাদের ২৭.৯ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছে।
চীন : বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স বাজার হচ্ছে চীন। মোবাইল কমার্স চীনের ই-কমার্সের সবচেয়ে বড় শক্তি। গত বছরে দেশটিতে মোবাইল পেমেন্টের বাজার ব্যাপক বেড়েছে। চীনের শিল্প ও আইটি মন্ত্রণালয়ের দেয়া মতে, বর্তমানে দেশটির ১৩০ কোটি লোকের কাছে মোবাইল ডিভাইস আছে। এরা এদের ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ও অফলাইনে দোকানেও কেনাকাটা করে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ই-মার্কেটার ধারণা করছে, ২০১৫ সালে চীনে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট পিসির মাধ্যমে বিক্রি ৮৫.১ শতাংশ বেড়ে ৩৩৩৯৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা চীনের মোট খুচরা বিক্রির ৪৯.৭ শতাংশ। চীনে উইচ্যাট (WeChat) খুবই জনপ্রিয় একটি মেসেজিং সার্ভিস। ২০১১ সালে চীনের অন্যতম বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড এই অ্যাপ্লিকেশনটি চালু করে। বর্তমানে ৬৫ কোটি লোক উইচ্যাট ব্যবহার করেন। লাখ লাখ চীনা ব্যবহারকারী উইচ্যাটের মাধ্যমে বন্ধুদের টাকা পাঠান, জিনিস কেনাকাটা, এমনকি চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্টও ঠিক করেন। চীনে এমন কোনো স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে পাওয়া যাবে না, যার উইচ্যাট অ্যাকাউন্ট নেই। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ছাত্র সবাই এটি ব্যবহার করেন। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে গেছে, লোকেরা এখন আর বিজনেস কার্ড বিনিময় করেন না। এরা এদের উইচ্যাট ইউজার নেম বিনিময় করে থাকেন।
ভারত : টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়ার তথ্য মতে, ভারতে গত বছরের অক্টোবরে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০৩ কোটি পৌঁছায়। চীনের পর ভারতেই মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা শত কোটিছাড়িয়েছে। ভারতের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর ওয়েবসাইট নিয়ে চিন্তা করছে না। এরা এখন ‘মোবাইল-অনলি’ হয়ে যাচ্ছে। ফ্লিপকার্ট ইন্টারনেট প্রাইভেট লিমিটেড বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং মার্কেটপ্লেস অপারেটর।ফ্লিপকার্ট তাদের যাবতীয় ব্যবসায়িক পরিকল্পনা স্মার্টফোনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করছে। গুগল প্লেস্টোর থেকে ফ্লিপকার্টের অ্যাপ্লিকেশন এক কোটির বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে। ভারতে মোবাইল ব্যাংকিংও খুব জনপ্রিয় এবং এইচএসবিসি ব্যাংক ধারণা করছে, আগামী ১৮ মাসে দেশটিতে মোবাইল পেন্টের পরিমান হবে ১০০ বিলিয়ন ডলার।
জাপান :ফ্রান্সের বিখ্যাত ই-কমার্স টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান ক্রিটিওর State of Mobile Commerce Report Q2 2015 রিপোর্ট মোতাবেক বিশ্বজুড়ে মোবাইল কমার্সে দ্বিতীয় স্থানে ছিল জাপান। এরপর যুক্তরাজ্য।
জাপানে গত বছরের প্রথম কোয়ার্টারে ই-কমার্স লেনদেনের ৪৭ শতাংশ এবং দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ৫২ শতাংশ মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মোবাইল কমার্স
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মোবাইল কমার্স আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব অঞ্চলকে এখন বলা হচ্ছে ‘Mobile First’ এবং ক্ষেত্রবিশেষে ‘Mobile Only’ অঞ্চল। কারণ, এসব অঞ্চলের লোকজন স্মার্টফোন খুব বেশি ব্যবহার করে। এসব অঞ্চলের মধ্যে আছে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ান।
পশ্চিমা দেশে মোবাইল কমার্স
ইউরোপ : ইউরোপে মোবাইল কমার্সের উত্থান শুরু হয়েছে। তরুণ ইউরোপিয়ান অনলাইন ক্রেএরা এখন মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে শপিং করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। বিখ্যাত ই-কমার্সভিত্তিক ওয়েবসাইট ইন্টারনেট রিটেইলারের প্রকাশিত ২০১৫ সালের ইউরোপের ৫০০ সেরা ইন্টারনেট রিটেইলারের মধ্যে ৩৮৭টি ইন্টারনেট রিটেইলার তাদের সাইটকে মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে ব্রাউজ করার জন্য অপটিমাইজ করেছেন। আরও ২৪৪ জন ই-রিটেইলার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করেছেন।
২০১৩ সালে ইউরোপে মোবাইল কমার্সের পরিমান ছিল ২৩৮০ কোটি ডলার। ২০১৪ সালে এটি ৮৯.১ শতাংশ বেড়ে ৪৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। ২০১৩ সালে ইউরোপে ই-কমার্সের পরিমাণ ছিল ৩৫৪০০ কোটি ডলার, যার মধ্যে মোবাইল কমার্সের হার ৬.৭ শতাংশ ২০১৪ সালে ইউরোপের মোট ৪১০৯০ কোটি ডলার ই-কমার্স সেলসের ১১ শতাংশ এসেছে মোবাইল কমার্স থেকে।
মোবাইল শপিংয়ের জনপ্রিয়তার কারণে ফ্রান্সের ফ্ল্যাশ সেল ই-রিটেইলার VenteePrivee.com-এর ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আইফোন, আইপ্যাড, অ্যান্ড্রয়িড মোবাইল ডিভাইসের জন্য আটটি ইউরোপিয়ান ভাষায় অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইটে প্রতিদিন বিভিন্ন আকর্ষণীয় ডিল এবং ডিসকাউন্ট অফার করে। ২০১৪ সালে এ ওয়েবসাইটের মাসিক ভিজিটর সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৩৩ লাখের মিলিয়নের মধ্যে ৬৩ শতাংশ বা ৫ কোটি ২৫ লাখ মিলিয়ন ভিজিটর মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন। গত বছর তাদের ওয়েব সেলসের ৪২ শতাংশ বা ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ মিলিয়ন ডলার এসেছে মোবাইল শপিং থেকে।
কানাডা : ২০১৬ সালে কানাডাতে মোবাইল কমার্স বাড়বে। বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট তাদের ‘2016 Canadian Technology, Media & Telecommunications (TMT) Predictions’ শিরোনামের এক রিপোর্টে এ তথ্য দিয়েছে। আগামী ১৮ মাসে প্রযুক্তি, মিডিয়া এবং টেলিকম খাতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা এ রিপোর্টে দেয়া হয়েছে। এ বছর রিটেইলারেরা মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমে আরও বিনিয়োগ করবেন।
আগামী ১২ থেকে ১৮ মাসে কানাডায় থার্ডপার্টি টাচভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫০ শতাংশবাড়বে। দশ লাখের বেশি লোক এ টাচভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করবেন। টিএমটি রিসার্চের পরিচালক ডানকান স্টুয়ার্ট বলেন, ‘গত বছর থেকে মোবাইল পেমেন্ট মূলধারার পেমেন্ট হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করা শুরু করেছে এবং এ বছরও তা অব্যাহত থাকবে। এখন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা নিরাপদে এবং সহজে তাদের ডিভাইসের মাধ্যমেই লেনদেন করতে পারছেন এবং চেক আউট প্রক্রিয়াও এখন খুবই সহজ। ক্রেতার আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে অথেন্টিকেশন করা হচ্ছে এবং এরপর মাত্র দুইবার টাচ করেই পেমেন্ট প্রসেস হচ্ছে।’
গত বছরের মাঝামাঝিতে কানাডার জনগণের ২৯ শতাংশ প্রতি সপ্তাহে শপিং ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেছে, কিন্তু মাত্র ৬ শতাংশ কেনাকাটা করেছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে সফটওয়্যারের আয়ের দিক দিয়ে মোবাইল হবে সবচেয়ে জনপ্রিয় গেমস প্লাটফর্ম। কানাডাতে মোট গেমস বেচার ৩৭ শতাংশ আসবে মোবাইল থেকে।
যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইন ক্রেএরা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ভিডিও দেখা এবং অনলাইনে আকর্ষণীয় ডিল খুঁজে বের করার পেছনে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন। ডাটাভিত্তিক মার্কেটিং কোম্পানি স্টিলহাউজ তাদের ‘২০১৫ হলিডে ডিজিটাল মার্কেটিং গাইড’ নামের এক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। স্টিল হাউজ বিগত ১২ মাসে ট্যাবলেট পিসি, স্মার্টফোন, ডেস্কটপ কমপিউটারেলাখ লাখ অনলাইন লেনদেন থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে : অনলাইন ক্রেএরা তাদের মোবাইল ডিভাইসে যে সময় ব্যয় করেন, এর ৮২ শতাংশ এরা যেসব অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করেছেন তা দেখে থাকেন, বাকি১৮ শতাংশ সময় এরা অনলাইন রিটেইলারদের মোবাইল ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে থাকেন। এ কারণে ইন-অ্যাপ্লিকেশন বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন অনেক বেশি ফলদায়ক। ইন-অ্যাপ ক্যাম্পেইন হচ্ছে মোবাইল ডিভাইসের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকালে যে বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন চালানো হয় তা। ধরুন, আপনি একটি গেম খেলছেন আপনার মোবাইল ডিভাইসে। গেম খেলার সময় আপনার ডিভাইসের ডিসপ্লের নিচের দিকে বিজ্ঞাপন দেয়া হলো ওই গেমের একটি টি-শার্টের।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইন-অ্যাপ বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইনে মোবাইল ওয়েবসাইটের তুলনায় কনভার্সন রেট ৫-১০গুণ বেশি।যেসব বিজ্ঞাপনে ব্যাকগ্রাউন্ডে ভিডিওসহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, সাধারণ বিজ্ঞাপনের তুলনায় দশগুণ বেশি ক্রেতা সেসব বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হন।স্ট্যাটিক মার্কেটিংয়ের তুলনায় ডায়নামিক মার্কেটিংয়ে কনভার্সন রেট ৬৯ শতাংশ বেশি। স্ট্যাটিক মার্কেটিং হচ্ছে সবসময় একই ধরনের বিজ্ঞাপন থাকবে। ডায়নামিক মার্কেটিংয়ে ক্রেতার সবশেষ কর্মকা--র ওপর তথ্য সংগ্রহ করে পরিবর্তন আনা হয়।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল কমার্সের প্রধান প্রবনতা
এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল কমার্স কেমন হতে পারে, তা নিয়ে বিজনেস ইনসাইডার (বিআই) ইন্টেলিজেন্স এবং সফটওয়্যার ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান মুভওয়েব দু’টি রিপোর্ট তৈরি করেছে। এ দুটি রিপোর্টে ২০১৬ সালে মোবাইল কমার্সে কী হবে, তার সার-সংক্ষেপ দেয়া হয়।
বিজনেস ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের ই-কমার্সের ৪৫ শতাংশ হবে মোবাইল কমার্স। এই ৪৫ শতাংশকে ডলার হিসেবে নিলে দাঁড়াবে ২৮৪০০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে দেশটির ই-কমার্সের ২০.৬ শতাংশ হবে মোবাইল কমার্স। ডলারে এর পরিমাণ ৭৯০০ কোটি ডলার।
গত বছরের ক্রিসমাস শপিং সিজনে মোবাইল কমার্সের উত্থান আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অ্যাডোবি মার্কেটিং ক্লাউডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট অ্যাসেবলেন, ‘স্মার্টফোনে কেনাকাটা যদিও মানসিক চাপ বাড়িয়ে থাকে। এ বছরের হলিডে সিজন মোবাইলে কেনাকাটা করার জন্য ছিল চমৎকার একটি সময়।’
বিজনেস ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জেমি টপলিন বলেন, ‘এ বছরে বেশ কয়েকটি কারণে মোবাইল কমার্স আরও জনপ্রিয় হয় উঠবে। স্মার্টফোন মিলেনিয়ালদের (যারা ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে জন্ম নেন) প্রাইমারি ডিভাইস। অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে এরা স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন। একই সাথে রিটেইলারেরাও মোবাইল কমার্সের দিকে ঝুঁকবে।
অনলাইন-অফলাইন কেনাকাটার মধ্যে পার্থক্য থাকবে না
বর্তমানে দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান ন্যূনতম দুটি ডিভাইস এবং এক-তৃতীয়াংশ আমেরিকান তিনটি ডিভাইস ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে তাদের কেনাকাটা করার ধরনও বদলে গেছে। রিটেইলারেরা এটি ভালোভাবে অনুধাবন করছেন। এদের এখন মূল চিন্তা- ক্রেতা দোকানে, ঘরে, অফিসে যেখানেই থাকুন না কেন, তিনি যেন সেখানেই কেনাকাটা সেরে ফেলতে পারেন। ওয়ালমার্ট, বেস্ট বাইয়ের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান, যাদের দোকান আছে এবং যারা অনলাইনেও পণ্য বিক্রি করে থাকে, এরা তাদের অফলাইন অবকাঠামো, ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সব মিলিয়ে এমনি একটি পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেখানে বাস্তব দোকান বা ভার্চুয়াল দোকানের মধ্যে কেনাকাটা করায় কোনো পার্থক্য থাকবে না। ক্রেতা যদি উক্ত বিক্রেতার দোকানে গিয়ে স্মার্টফোনে পণ্য রিভিউ বা কেনার জন্য ব্যবহার করে তাও করতে পারবেন।
অনেক রিটেইলার থার্ডপার্টি অ্যাপ্লিকেশনের সাথে পার্টনারশিপ করছেন। একজন ক্রেতা উক্ত অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে পণ্য কিনে পরে তার কাছাকাছি দোকান থেকে পিকআপ করছেন। ক্রেএরা অনলাইনে একটি পণ্য বা সেবার বুকিং দিতে পারেন। পরে এরা দোকানে গিয়ে উক্ত পণ্যটি দেখলেন ঠিক আছে কিনা। অনেক বিক্রেতা সেইম-ডে-ডেলিভারি দিচ্ছেন।
রিটেইলারেরা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে পুশ নোটিফিকেশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বাই বাটনের মাধ্যমে ক্রেতাদের পণ্য কিনতে উৎসাহিত করছে। শুধু তাই নয়, এরা এদের ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ক্রেতাদের সম্পর্কে আরও তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করছে, যেমন- কাজকর্ম, গন্তব্য, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি। সোজা কথা, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো একটি ইনফরমেশন হাব গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে এরা আরও ভালোভাবে ক্রেতাদের কাছে মার্কেটিং করতে পারবে।
আইবিএম কমার্সের রবি শাহ বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি, যেখানে ক্রেতাদের আচার-আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে লোকেশন এবং অ্যানালিটিক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রিটেইলারেরা ক্রেতা কোথায় যান বা থাকেন, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। ২০১৬ সালে রিটেইলারেরা আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।’ ক্রেতা শপিং মল গিয়ে কোনো পণ্য দেখে কেনার আগে মোবাইলে তার রিভিউ দেখলে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানও দেখবে এ ক্রেতা দোকানের কোন সেকশনে আছেন এবং রিটেইলারও জানতে পারবে একজন ক্রেতা কীভাবে তার দোকানে ঘুরছেন। ক্রেতাদের মোবাইল ব্যবহারের মানসিকতার জন্যই রিটেইলারেরা মোবাইল কমার্সে ঝুঁকছে।
ধরা যাক, আপনি অফিসে যাচ্ছেন বাসে করে। হঠাৎ মনে হলো আজকে আপনার বিয়েবার্ষিকী। বিকেলে আপনার স্ত্রীর জন্য একটি উপহার কিনতে হবে। আপনার মনে হলো, আপনার স্ত্রী যাত্রা স্টোরের ফেসবুকপেজে একটি শাড়ি দেখেছিলেন, যা তার খুব মনে ধরেছে। আপনি ঠিক করলেন যাত্রা স্টোর থেকে সেই শাড়িটি কিনবেন। আপনি আপনার স্মার্টফোন খুলে যাত্রা স্টোরের ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখলেন যে শাড়িটি স্টোরে আছে এবং কিনে ওই স্মার্টফোনের মাধ্যমেই দাম মিটিয়ে ফেললেন এবং বাসায় ডেলিভারির অর্ডার দিলেন। এখন যদি দেখেন, শাড়িটি আউট অব স্টক বা মোবাইলে পেমেন্ট গ্রহণ করার তাদের অপশন নেই, তাহলে কিন্তু আপনি আর ওই শাড়িটি নিয়ে চিন্তা করবেন না।
উন্নত বিশ্বে ক্রেএরা ঠিক এভাবে মোবাইল কমার্স ব্যবহার করে থাকেন। এরা কাজের মধ্যে দ্রুত মোবাইলে কেনাকাটা সেরে ফেলতে চান। ৯১ শতাংশ ক্রেতা অন্য কাজ করার সময়ে তাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন। এরা মোবাইল ডিভাইসে যে সময়ে যে জিনিস কিনতে চান, তখনই যদি সেই জিনিসটি সহজে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিনে ফেলা যায়, তবেই এরা মোবাইলে সেটি কিনবেন নতুবা নয়। ক্রেতাদের এ ধরনের মানসিকতা বুঝে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইলারেরা মোবাইল কমার্সে ঝুঁকছে। এরা বুঝতে পেরেছে, ক্রেএরা মোবাইল ডিভাইসে দ্রুত কেনাকাটা সেরে ফেলতে চান। তাই এখানে ক্রেতাদের দ্রুত এনগেজ করতে হবে। একবার তাদেরকে আরামে কেনাকাটা করার স্বাদ পাইয়ে দিলে এরা বারবার আসবেন।
কিন্তু এখানে চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে, ক্রেতা যাতে দ্রুত এবং আরামে কাজ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা। রিটেইলারকে অবশ্যই একটি সুন্দর ডিজাইন করা এবং রেসপনসিভ ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে, যা মোবাইল ডিভাইসে দ্রুত লোড হয়। অ্যাডোবি ইঙ্ক তাদের ‘The State of Content Rules of Engagement For 2016’ শীর্ষক এক রিপোর্টে বলেছে- ডিজিটাল ভোক্তাদের ৫৯ শতাংশ সুন্দর করে ডিজাইন করা কনটেন্ট পড়বে।৬৫ শতাংশ ভোক্তার কাছে কীভাবে কনটেন্ট দেখানো হচ্ছে তা খুবই জরুরি। ৫৪ শতাংশ ভোক্তার কাছে সুন্দর লেআউট ডিজাইন, ভালো ফটো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কনটেন্ট আপলোড হতে সময় বেশি নিলে বা কনটেন্ট সুন্দরভাবে সাজানো না থাকলে প্রতি ১০ জন ভিজিটরের ৯ জন ডিভাইস বদলে ফেলেন। খুব বড় কনটেন্ট হলে ৬৭ শতাংশ ভিজিটর কনটেন্ট আর দেখেনই না।
সোশ্যাল কমার্স
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ৫০০ রিটেইলার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ৩৩০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেন। ফেসবুক, টুইটার, পিন্টারেস্ট, ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো গত বছর তাদের সাইটে বাই বাটনের মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটার অপশন যোগ করে। প্রচুর লোক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটের মাধ্যমে পণ্য কেনেন। ২০১৬ সালে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটা আরওবাড়বে। সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক রিটেইল ও রেফারাল আরও বাড়বে। তাই রিটেইলারেরা মোবাইল ডিভাইসে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কীভাবে বিক্রি আরও বাড়ানো যায় তা দেখবেন।
মোবাইল ওয়েবসাইট গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন নয়
বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা যতক্ষণ তাদের স্মার্টফোনে সময় কাটান, তার ৮৫ শতাংশ খরচ করেন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে। কিন্তু সব অ্যাপ্লিকেশনে নয়। শুধু তাদের পছন্দের ২-৩টি অ্যাপ্লিকেশনে এরা সময় কাটান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমসারির ৩০টি রিটেইল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ও ওয়ালমার্ট অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। রিটেইলারদের মোবাইল সেলসের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এসেছে অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। দ্য স্টেট অব অনলাইন রিটেইলিং ২০১৫ রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬ শতাংশ রিটেইলার মনে করে মোবাইল অ্যাপ তাদের মোবাইল সেলস স্ট্র্যাটেজির জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মোবাইলের মাধ্যমে বিক্রির ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আসে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। তাই ২০১৬ সালে মোবাইল কমার্সের ক্ষেত্রে মোবাইল ওয়েব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
গত বছরে অনেক রিটেইলার মোবাইল ডিভাইসে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রথমবারের মতো তাদের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন ছেড়েছে। এ বছর এরা এসব অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করে দেবে না, তবে এসব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে রিটেইলারেরা তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের ডিসকাউন্টসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেবে।
মোবাইল চেকআউট ব্যবস্থা উন্নত করা জরুরি
ভালো চেকআউট ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি তিনজন অনলাইন ক্রেতার দুজনই শপিং কার্টে পণ্য অর্ডার করে রেখে দেন। এরা পণ্যটি আর কেনেন না। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইলারেরা বছরে ১৮০০ কোটি ডলার হারাচ্ছে।
বিআই ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোবাইল কমার্স জনপ্রিয়তা লাভ করলেও এখানে কনভার্সন রেইট ডেস্কটপের তুলনায় কম। এখানে কনভার্সন বুঝতে একজন ভিজিটরকে ক্রেতায় পরিণত হওয়া। এই ভিজিটর থেকে বায়ারে কনভার্সনের ব্যাপারটাই সাধারণ ভাষায় কনভার্সন বলা হয়। ২০১৬ সালে মোবাইলে ক্রেতাদের কেনাকাটা করতে আকৃষ্ট করার জন্য রিটেইলারেরা তাদের মোবাইল চেকআউট প্রক্রিয়া আরও উন্নত করবে।
স্টোর লয়ালটি প্রোগ্রাম ক্রেতাকে মোবাইল পেমেন্ট সেবা নিতে উৎসাহী করবে
অ্যাপল পে, অ্যান্ড্রয়িড পে, পে-পল, স্যামসাং পে চালু হয়েছে ২০১৫ সালে। কিন্তু এখনও এসব মোবাইল পেমেন্ট সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। তার অর্থ এই নয় মোবাইল পেমেন্ট লোকে পছন্দ করছেন না। ইতোমধ্যেই দশ লাখ মার্চেন্ট অ্যাপল পে’র সাথে যুক্ত হয়েছেন। ই-মার্কেটারের ভাষ্যমতে, ২০১৬ সালে মোবাইল পেমেন্ট ২১০ শতাংশবাড়বে। ২০১৬ সালে মোবাইল পেমেন্টকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় রিটেইল প্রতিষ্ঠানগুলো বিশাল ভূমিকা রাখবে। কফিশপ চেইন স্টারবাকসের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে পেমেন্ট সুবিধা আছে এবং বর্তমানে এদের আয়ের ১৬ শতাংশ এই পেমেন্ট থেকে আসে। ওয়ালমার্ট ডিসেম্বরে ওয়ালমার্ট পে ছেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিখ্যাত রিটেইলার ‘টার্গেট’ও তাদের নিজস্ব মোবাইল পেমেন্ট সেবা চালু করবে, সেরকম খবর শোনা যাচ্ছে। অনেক লোকেই এসব পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করবেন এবং এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে, এসব রিটেইলার তাদের মোবাইল পেমেন্টের সাথে তাদের লয়ালটি প্রোগ্রামকে ইন্টিগ্রেট করবে। মানে ক্রেতা মোবাইলে পেমেন্ট করতে থাকলে পয়েন্ট অর্জন করবেন এবং সেই পয়েন্টের ভিত্তিতে ডিসকাউন্টসহ নানা ধরনের সুবিধা পাবেন।
পরিধানযোগ্য টেকনোলজি ও ইন্টারনেট অব থিংস
আমরা এখন ধীরে ধীরে এমন এক যুগে চলে যাচ্ছি, যেখানে ইন্টারনেটের সাথে সবসময় সবখানে যুক্ত থাকব। আমাদের ফোন, গাড়ি, কমপিউটার ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকবে। এখন স্মার্টওয়াচও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই যে সার্বক্ষণিক বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে বিভিন্নভাবে যুক্ত থাকা, একে ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। উন্নত দেশের মানুষ আসেত্ম আসেত্ম এদিকে চলে যাচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে রিটেইলারেরা ইন্টারনেট অব থিংসের সাহায্যে নানাভাবে ক্রেতার সাথে সংযুক্ত হয়ে তাকে অফার দেবে এবং কেনাকাটা করতে আকৃষ্ট করবে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর চেইন ব্র্যান্ড কোহল’স অ্যাপল স্মার্টওয়াচের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা দোকানে কেনাকাটা করার সময় অ্যাপল ওয়াচে কুপন স্ক্যান করে চেকআউট করার সময় ওই স্ক্যান দেখিয়ে লয়ালটি রিওয়ার্ড পেতে পারবেন। অনেক রিটেইলার স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে ক্রেতাকে তাদের স্টোরে শুরু হওয়া ফ্ল্যাশ সেল সম্পর্কে নোটিফিকেশন দিতে পারবে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
এতক্ষণ উন্নত দেশে মোবাইল কমার্সে কী হবে তা নিয়ে অনেক কিছুই বলা হয়েছে। এবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। বাংলাদেশেও এ বছর ই-কমার্সের জায়গায় মোবাইল কমার্স চলে আসবে এবং উপরে মোবাইল কমার্সের যেসব ট্রেন্ড উল্লিখিত হয়েছে, তার অনেকটাই এ বছর বাংলাদেশেও সীমিত আকারে শুরু হয়ে যাবে।
কেন এটা হবে?
আপনি যদি খেয়াল করে দেখেন, তাহলে দেখবেন বাংলাদেশ মোবাইল কমার্সের উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এখন যারা ই-কমার্স উদ্যোক্তা আছেন- ছোট-বড়-মাঝারি, এরা সবাই জানেন আমাদের দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো মোটেও ভালো নয়। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় বিভাগীয় শহরের বাইরে সাধারণ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ মোটেও ভালো নয় এবং সেরকম ভালো আইএসপি নেই। কিন্তু আমাদের দেশের সব জায়গায় থ্রিজি মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে। বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটির (বিটিআরসি) ডিসেম্বর ২০১৫ পরিসংখ্যানঅনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩ কোটি ৩৭ লাখ মোবাইল গ্রাহক আছেন। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ৪১ লাখ এবং এর মধ্যে ৫ কোটি ১৪ লাখ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
দৈনিক ডেইলি স্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশে স্মার্টফোন আমদানি ২০১৪ সালের তুলনায় ২৮.২৫ শতাংশ বেড়েছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৪০.৪৫ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাষ্যমতে, দেশজুড়ে থ্রিজি নেটওয়ার্ক আসার কারণে স্মার্টফোনের বিক্রি বেড়েছে। ঢাকা ট্রিবিউনের আগস্ট ২০১৫-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে যেসব হ্যান্ডসেট বিক্রি হয় তার ২০ শতাংশের বেশি স্মার্টফোন।এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং স্মার্টফোন হাত ধরাধরি করেই জনপ্রিয় হবে।
চীনে সব প্রদেশে যেমন ভালো দোকান বা বড় শপিং মল নেই, আমাদের দেশেও কিন্তু অবস্থা একই। আমাদের দেশে সবকিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে ভালো দোকান বা শপিং মল নেই, যেখান থেকে লোকে ভালো মানের পণ্য, বইপত্রসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে পারেন। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার ফলে বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরে এখন একটা ক্রেতাশ্রেণি গড়ে উঠেছে, যারা ভালো মানের পণ্য খোঁজে এবং কিনতে চায়। এসব ক্রেতা যদি স্মার্টফোনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে স্মার্টফোনেই মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম মিটিয়ে দিতে পারেন,তাহলে এরা সেই সুযোগ লুফে নেবেন। এক কথায় বলতে গেলে মোবাইল কমার্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বত্র অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব।
এবার বাংলাদেশের গ্রামের চিত্র দেখা যাক। দৈনিক কালের কণ্ঠগত ৪ জানুয়ারি ‘জীবন বদলে গেছে অজপাড়াগাঁয়েও’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়েছে- গ্রামে এখনও দারিদ্র্য আছে, কিন্তু না খেয়ে থাকা মানুষ আর নেই। এখনও অাঁতুড়ঘরে সদ্যোজাত শিশু শেষ চিৎকার দিয়ে চিরবিদায় নেয়, কিন্তু সংখ্যায় অনেক কম। গ্রামের শিশুদের এখনও লাঙল ধরতে হয়, তবে বিদ্যালয় থেকে ফিরে। রোগ-শোক-জরা আছে, সেই সাথে আছে চিকিৎসার ব্যবস্থাও। জীবন বদলানোর আশায় এখনও শহরে যায় গ্রামের বহু তরুণ-তরুণী, তবে সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্ন এখন গ্রামে থেকেও দেখা যায়। শুধু নৌকাবাইচ আর হাডুডু নয়, গ্রামের ছেলেটি এখন লা লিগার বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচেরও খবর রাখে।
ওই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের ১৩ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহকের বড় অংশ গ্রামের মানুষ। আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের কারণে গ্রামের মানুষ এখন শ্যাম্পু, সাবান, সুগন্ধি কেনে। বাড়িতে বাড়িতে এখন মোটরসাইকেল আছে।
স্মার্টফোন নিয়ে রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে,তাদের কেউ কেউ স্কাইপি ব্যবহার করতেও শিখে গেছে। বিদেশে থাকা স্বজনরা এখন আর টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে নিজের গলার আওয়াজ পাঠায় না। গ্রামের অল্পশিক্ষিত অনেক তরুণ-তরুণীরও এখন ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। গ্রামের মানুষ এখন ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বড় গ্রাহক। প্রায় এক কোটি কৃষকের আছে নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুতের আওতায়। ৮০ লাখ পরিবার সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় ৩৩০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের সাথেগ্রামে গেছে টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীও।
পাঠক, এখন কি চিত্রটি একটু একটু করে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এটা থেকে আপনার অনুমান করতে কষ্ট হচ্ছে না যে, অদূর ভবিষ্যতে অনেক গ্রামের লোকের হাতে স্মার্টফোন থাকবে। স্মার্টফোন চালানো সহজ, ডেস্কটপ কমপিউটারের মতো বিশাল জায়গা লাগে না বা অনেক বিদ্যুৎ লাগে না। ডিসপ্লেও মোটামুটি বড়। তাই সব মিলিয়ে অদূর ভবিষ্যতে গ্রামে-গঞ্জে মানুষের কাছে স্মার্টফোনই হয়ে উঠবে কমপিউটার।
গত বছরের অক্টোবরে বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি) ‘Bangladesh The Surging Consumer Market Nobody Saw Coming’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়- দেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ উচ্চ ও মধ্যবিত্ত এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে মধ্য ও উচ্চবিত্ত মানুষের সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ। এটা তো আর বলা লাগবে না যে, এদের সবার হাতেই স্মার্টফোন থাকবে। কারণ ততদিনে ইন্টারনেট সংযোগ আরও উন্নত হবে।
বুঝতেই পারছেন, সময় এসে গেছে বাংলাদেশে মোবাইল কমার্স শুরু করার এবং যেসব ই-কমার্স উদ্যোক্তা মোবাইল প্রযুক্তির ওপরে জোর দেবেন, এরাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবেন এবং লাভের মুখ দেখবেন।
মোবাইলবান্ধব ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে যে কথা বলা হয়েছে, বাংলাদেশেও মনে করি সে কথা খাটে। আমাদের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা দুই-তিনটি অ্যাপ্লিকেশন খুব বেশি ব্যবহার করেন। তাই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ক্রেতা আকৃষ্ট করা বাংলাদেশের ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র এবং মাঝারি প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং নিয়মিত আপগ্রেড অনেক খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার।
সুতরাং, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের ওপর জোর না দিয়ে মোবাইল ওয়েবসাইটের ওপর জোর দিতে হবে। একজন ভিজিটর তার স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট পিসি থেকে যেন নির্ঝঞ্ঝাটে ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারেন এবং ব্রাউজ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। স্মার্টফোনে ওয়েবসাইট যেন লোড হতে বেশি সময় না নেয়, সুন্দর ডিজাইন হয় এবং আরামে ব্রাউজ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সোশ্যাল কমার্স
যুক্তরাষ্ট্রের আগেই বাংলাদেশে সোশ্যাল কমার্স চালু হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এখন এক কোটির বেশি লোক ফেসবুক ব্যবহার করেন। স্মার্টফোনে অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও লোকে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। ই-কমার্সকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে ফেসবুকের ভূমিকাকে অস্বীকার করার উপায় নেই।অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ছোট উদ্যোক্তা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিক্রি করছেন। আমাদের দেশের অনেকেই ফেসবুকের মাধ্যমে কাপড়-চোপড় কিনছেন এবং এদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
মোবাইল কমার্সের ক্ষেত্রে ফেসবুক আরও বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ, আমাদের দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর একটি বড় অংশই ফেসবুকে প্রচুর সময় কাটান। আর যদি এমন হয়, ফেসবুকে পণ্য দেখেই সাথে সাথে ‘বাই বাটনে’ চাপ দিয়ে কয়েক ক্লিকে স্মার্টফোনেই পণ্যটি কেনা যাচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশে প্রচুর লোক এভাবে পণ্য কিনবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মোবাইল পেমেন্ট হবে ক্যাশ-অন-ডেলিভারির বিকল্প
বর্তমানে বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ক্যাশ-অন-ডেলিভারি বিশাল সমস্যা। অনলাইনে কার্ডে পেমেন্ট করে এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। মোবাইল কমার্স হচ্ছে পেমেন্ট সমস্যার উপযুক্ত সমাধান। আমাদের দেশে মোবাইলের সাথে যা কিছু সম্পর্কিত, তা লোকে সাদরে গ্রহণ করে এবং এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে বিকাশ। বিকাশের সাফল্য দেখে বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক এখন তাদের নিজস্ব মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু করেছে।
এ কারণে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের মোবাইল কমার্সে যাতে ক্রেতা আরামে পেমেন্ট করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। মোবাইল ওয়ালেট বা অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে পেমেন্ট ইন্টিগ্রেট করা বা মোবাইল ওয়েবসাইটের সাথে মোবাইল ওয়ালেট/বিকাশ ইন্টিগ্রেট করে দেয়া, এ ধরনের কাজগুলো বাংলাদেশের অনলাইন রিটেইলারদের অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমের সাথে রিটেইলারেরা তাদের নিজস্ব লয়ালটি প্রোগ্রাম ইন্টিগ্রেট করবে। বাংলাদেশের অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের মোবাইল পেমেন্টের সাথে এরকম লয়ালটি প্রোগ্রাম ইন্টিগ্রেট করে, তাহলে ক্রেএরা পেমেন্ট করতে আরও উৎসাহী হবেন।
মানুষের স্মার্টফোনে কেনাকাটার মানসিকতার সাথে মানিয়ে নেয়া
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রেএরা কাজের মধ্যে খুব দ্রুত মোবাইল শপিং করেন এবং মোবাইল ডিভাইসে কনভার্সন রেটও কম। বাংলাদেশেও স্মার্টফোনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে একই দৃশ্যের অবতারণা হবে। লোকে চলাফেরা-কাজকর্মের মধ্যেই স্মার্টফোন ব্রাউজ করে পণ্য কিনবেন। চীনে স্মার্টফোনে লোকে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা করেন যখন এরা যানবাহনে ভ্রমণ করেন সেই সময়।
বাংলাদেশেও লোকে বাসে করে অফিসে যাতায়াত করেন। ট্রাফিক জ্যামে কিছু করার থাকে না, তখনএরা স্মার্টফোন খুলে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে পছন্দের পণ্যটি কিনে ফেলবেন। এই যে একটা কাজের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে কেনাকাটা সেরে ফেলা, এটা বাংলাদেশেও প্রচুর ঘটবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রেতার এই মানসিকতা বুঝে এ সুযোগটিকে কাজে লাগাতে হবে। তাই বাংলাদেশের অনলাইন স্টোরগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টোরগুলোর মতোই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। মোবাইলে কত আরামে এবং দ্রুত ক্রেতা কেনাকাটা করতে পারবেন সেটা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে।
মোবাইল কমার্সের চ্যালেঞ্জগুলো
পণ্য ডেলিভারি
ভারতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে আয়ের ৩০ শতাংশ লজিসটিক্স খাতে ব্যয় করতে হয় পণ্য ডেলিভারির জন্য। বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পণ্য ডেলিভারি এবং মোবাইল কমার্সের ক্ষেত্রেও এটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হবে। মোবাইল কমার্সে ক্রেতা সঠিক সময়ে পণ্যের ডেলিভারি না পেলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবসায় করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে।
নিরাপত্তা
মোবাইলে লেনদেন জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে এ খাতের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কোটি কোটি লোক মোবাইল ওয়ালেট বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করবেন এবং তখন তাদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং লেনদেন যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
শেষ কথা
২০১৮ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী মোবাইল কমার্সের আয় দাঁড়াবে ৬৩৮ বিলিয়ন ডলার। দ্য অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অব ইন্ডিয়া (অ্যাসোচ্যাম) এবং অডিট, কনসাল্টিং, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজরি প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট কর্তৃক মিলিতভাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে ই-মার্কেটপ্লেসগুলোর ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে কেনাকাটা করা ভোক্তারা খুবই উপভোগ করছেন।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মোবাইল ডিভাইসে ক্রেতাদের ধরে রাখতে হলে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতার বিশ্বস্ততা, স্বচ্ছতা এবং তার যাবতীয় তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ক্রেএরা তাদের ডিভাইসে বিভিন্ন ধরনের অফার এবং তথ্য পেতে পছন্দ করেন।
বাংলাদেশও এখন মোবাইল কমার্সের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত আর মোবাইল কমার্স বাস্তবায়ন করা গেলেই সারাদেশে ই-কমার্সকে ছড়িয়ে দেয়া যাবে।
সূত্র : বিভিন্ন ওয়েব সাইট ও পত্র পত্রিকা

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - মার্চ সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস