• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো
কমপিউটার নিয়ে দেশে মেলার সূচনা হয় ১৯৯৪ সালে। মেলা আয়োজনের মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে প্রযুক্তি সচেতনতা গড়ে তুলতে এ উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি। নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে মেলাটি ঢাকার গ-- পেরিয়ে বিভাগীয় শহরেও শুরু হয়। সবচেয়ে প্রাচীন মেলা হলেও বাণিজ্যিকতার কাছে দেশে প্রযুক্তি অঙ্গনের সবচেয়ে বড় এই মেলাটি সময়ের স্রোতে প্রাণ হারাতে থাকে। সফটওয়্যার ও ইন্টারনেট নিয়ে নতুন করে মেলা শুরু এবং হার্ডওয়্যার খাতের বিশেষায়িত পণ্য অর্থাৎ ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন নিয়ে ঘন ঘন মেলা শুরু হলে বিসিএস আয়োজিত মেলাটি উপেক্ষেত হতে শুরু করে। তবে গত বছর থেকে দেশের প্রযুক্তি খাতের আবিভাজ্যতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো।
প্রযুক্তির প্যাকেজ মেলায়
দেশী প্রযুক্তি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে গত ৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রযুক্তি সম্মিলনের দ্বিতীয় আসর। তিন দিনের এই এক্সপোতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পাশাপাশি প্রাধান্য পেয়েছে দেশী ব্র্যান্ডগুলো। হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সীমিত পরিসরে অংশ নিয়েছে সফটওয়্যার ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এতে ডেল, এইচপি, মাইক্রোসফটের পাশাপাশি দোয়েল, ওয়ালটন, সিম্ফোনি, আমরা টেকনোলজিস, কনা সফটওয়্যার লিমিটেড ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে হাজির হয়েছিল। ১২টি সেমিনার ও প্রতিযোগিতার পাশাপাশি প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শনী, সফটওয়্যার সলিউশন এবং নেটওয়ার্ক সেবা- সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো হয়ে ওঠে প্রযুক্তির প্যাকেজ মেলা। দেশের প্রযুক্তি খাতের প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের যৌথ আয়োজনে এই আসরে সহযোগী হিসেবে ছিল দেশের প্রযুক্তি অঙ্গনের অপরাপর সংগঠন- বেসিস, বাক্য, আইএসপিএবি ও সিটিও ফোরাম। এক্সপোর পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ডেল, মাইক্রোসফট, এইচপি, হিউলেটপ্যাকার্ড এন্টারপ্রাইজ, মাইক্রোল্যাব, নিউমেন এবং দেশের উদীয়মান প্রযুক্তি ব্র্যান্ড কনা সফটওয়্যার, সিম্ফোনি ও ওয়ালটন।
আয়োজনে নতুন মাত্রা
মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ ও বের হওয়ার আয়োজনটি ছিল একমুখী- ওয়ান ওয়ে জার্নি। এর ফলে দর্শনার্থীরা মেলার প্রতিটি আয়োজন পরখ করার সুযোগ পেয়েছেন। মেলায় প্রবেশ থেকে শুরু করে বের হওয়া পর্যন্ত দেশী প্রযুক্তির একটি ফ্লেভার নিতে পেরেছেন। ফলে দেশী প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ও পণ্যের তুলনামূলক ঘাটতি থাকলেও কাব্যিক ভাষায় প্রকাশ করেছে ‘মেইক বাই বাংলাদেশ’ থেকে উৎসারিত ‘মিট ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রত্যয়। মেলা প্রাঙ্গণের সবচেয়ে বেশি জায়গা জুড়ে ছিল স্থানীয় প্রযুক্তি জোন ও উদ্ভাবন জোন। এই দুটি জোনই বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপোকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। মেলায় প্রবেশ করতেই হাত-পা নেড়ে দর্শনার্থীদের বাংলায় সম্ভাষণ জানায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণের তৈরি যন্ত্রমানব রিবো। মেলা থেকে বের হওয়ার সময় বাংলাদেশী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলম্বটেকের তৈরি মুঠোফোন নিয়ন্ত্রিত ‘স্মার্টপর্দা’ দর্শনার্থীদের চোখের ওপর থেকে হতাশার প্রলেপ সরিয়ে আশার আলো জ্বেলেছে।
মেলায় নতুন
হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং ইন্টারনেট নিয়ে দেশে বছরজুড়েই কোনো না কোনো মেলা হয়ে থাকে। সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৬ ছিল তা থেকে অনেকটাই ভিন্ন। প্রদর্শনীটি প্রযুক্তি খাতে আমাদের সক্ষমতা ও অবহেলার মূল্যায়ন ছাপিয়ে প্রামিত্মক মানুষের কাছে দেশী ব্র্যান্ড-প্রীতিকেই তুলে ধরেছে। নিত্যব্যবহার্য প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শনীকে ছাপিয়ে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের চমৎকার কিছু উদ্ভাবন। অবমুক্ত হয়েছে নতুন সাতটি ব্র্যান্ড পণ্য। অভিষেক ঘটেছে তিনটি নতুন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের।
মেলায় অবমুক্ত নতুন ৭ ব্র্যান্ড
দেশী-বিদেশী মিলে তিন দিনের বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপোতে অবমুক্ত হয়েছে সাতটি নতুন ব্র্যান্ড পণ্য। অবমুক্ত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ডিজিটাল সেস্নট-স্বদেশ ট্যাবটিতে ছিল শিশুদের জন্য বংলা কনটেন্ট ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার। এটি অবমুক্ত করে বিজয় ডিজিটাল। দোয়েল ব্র্যান্ডের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ট্যাব-নেটবুক অবমুক্ত করে বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা। মেলায় নমুনা কপি নিয়ে চীনের লিফো ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন বাংলাদেশের বাজারে অবমুক্ত করে ড্যাফোডিল কমপিউটার্স। এছাড়া পানির বিশুদ্ধতা পরিপামক ডিজিটাল মিটার অবমুক্ত করে গ্যাজেট গ্যাং সেভেন। আর লজিটেক এম১৭১ তারহীন মাউস ছাড়াও সিএসএম গেমিং পিসি ফেরারি অবুমক্ত করে কমপিউটার সোর্স।
৩ নতুন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান
বছর দুয়েক গবেষণা আর উন্নয়ন শেষে বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৬-তে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিষেক ঘটেছে অ্যাপলম্বটেক নামের একটি আইওটি সলিউশনভিত্তিক ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সভাপতি এএইচএম মাহফুজুল আরিফ, প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অ্যাপলম্বটেকের প্রতিষ্ঠাতা সিইও মোহাম্মদ সাইফ সাইফুলস্নাহ জানান, স্মার্ট মিটার, সুইচ, লাইট, ফ্যান এবং পর্দাসহ তারা মোট ৯টি ডিভাইস বাংলাদেশেই তৈরি করছেন। দেশের তরুণ প্রযুক্তিকর্মীরাই এ কাজ করছেন। আগামীতে তারহীন ইন্টারনেটের পাশাপাশি যেনো ঘরের প্রতিটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেজন্য তারা ইতোমধ্যেই একটি বিশেষ রাউটার তৈরি করেছেন। রাউটারটির একটি নমুনাও মেলায় প্রদর্শন করা হয়। এটি চলতি মাসেই বাজারে ছাড়া হবে বলে তিনি জানান।
বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রেজেন্টেশন দিতে সক্ষম ব্র্যান্ডিং রোবট ‘প্লানেটর’ নিয়ে মেলা থেকে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করেছে আইআরএ। পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাকে অবহিত করতে এই অনুভূতিহীন যন্ত্রমানবটিকে দেয়া হয়েছে একজন সেলস এক্সিকিউটিভের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী এই প্রোগ্রামটি দেয়া হয় বলে জানালেন আইআরএ প্রতিষ্ঠাতা দম্পতি রিনি ইশান খুশবু ও রাকিব রেজা।
স্মার্টটিভি ও বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে এক্সপোতে প্রযুক্তি জগতে ভিশন ব্র্যান্ড নিয়ে অভিষেক হয় আরএফএলের।
উদ্ভাবিত দেশী প্রযুক্তি
নানামাত্রিক উদ্ভাবন নিয়ে দেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫০টি প্রকল্প প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপোতে। প্রদর্শিত এসব উদ্ভাবনের মধ্যে তিন বিভাগে ৯টি প্রকল্পকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আর স্মার্ট এবং এমবেডেড সিস্টেম বিভাগ থেকে সেরাদের সেরা হয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় দলের তৈরি মেরিন বস্ন্যাক বক্স। এটি দিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে এই প্রয়োজনীয় তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে। বস্ন্যাক বক্সের দাম সাধারণত লাখ টাকার বেশি হলেও তাদের উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটির তৈরিতে খরচ পড়বে মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
এছাড়া একই বিভাগ থেকে দ্বিতীয় হয়েছে ইন্টারনেট হোম অটোমেশন অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম (আহসানউলস্নাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) এবং তৃতীয় হয়েছে স্মার্ট ইরিগেশন অ্যান্ড ফার্টিলাইজেশন (সিটি ইউনিভার্সিটি)।
আর রোবটিকস বিভাগ থেকে স্বর-যান-ভয়েস কন্ট্রোলড ডিসট্যান্ট মোশন (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথম, অ্যান অটোনোমাস রোবটিক সিস্টেম টু মেনটেইন ফ্রি ফ্লোয়িং ড্রেইনস (ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি) দ্বিতীয় এবং অটোনোমাস ক্র্যাক ডিটেক্টর রোবট ফর রেলওয়ে ট্র্যাক-স্ক্যানবট (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ) তৃতীয় হয়েছে।
কন্ট্রোল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগে পাওয়ার ডিসি মোটরবাইক (সিটি ইউনিভার্সিটি), পিএলসিভিত্তিক স্মার্ট অটোমেটিক কার পার্কিং সিস্টেম (ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম) এবং সেচ-বন্ধু (ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি) যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে।
মেলার আয়োজন নিয়ে প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আশা করছি সহসাই বাংলাদেশের ওয়ালটন, সিম্ফনি, আমরা টেকনলোজিস এবং নিজস্ব গবেষণায় কাজের মাধ্যমে যে পণ্য তৈরি করছে তা স্যামসাং, ডেল ও এইচপির মতো প্রতিষ্ঠান হয়ে যাবে। অ্যাপলম্বটেকের মতো আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, যারা বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
মেলার সহআয়োজক বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সভাপতি এএইচএম মাহফুজুল আরিফ বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি ব্র্যান্ডের বেশিরভাগ পণ্যই অ্যাসেম্বেল হয়। ইন্টেলের চিপ, এমএসআই মাদারবোর্ড, ডব্লিউডির হার্ডডিস্ক নিয়েই কিন্তু ডেল, এইচপি, ফুজিৎসুর মতো প্রতিষ্ঠান ল্যাপটপ তৈরি করে থাকে। তাই অ্যাসেম্বেল আর তৈরি নিয়ে বিতর্ক না করাই ভালো। নিজস্ব ব্র্যান্ড নামই প্রযুক্তি গেজেটের ক্ষেত্রে মুখ্য- তা এই তিন দিনের এক্সপোতে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই এক্সপো তারুণ্যের উদ্ভাবন এবং দেশী প্রযুক্তি ব্র্যান্ড পণ্য ও সেবার প্রতি সব বয়সী মানুষের আগ্রহ আমাদের আশা জাগিয়েছে। এটা বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন ভাবনার সঞ্চার করেছে।

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - মার্চ সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস