লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি ও সমাজ
নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তি
বাংলাদেশ একটি উন্নয়ণশীল দেশ। এ দেশের জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই নারী। এই নারী সমাজকে সঙ্গী করেই আমাদের উন্নয়নের পথে এগোতে হবে। সৃষ্টির আদি থেকেই নারীরা কোনো না কোনোভাবে পরিবার, সমাজ, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের অংশীদার। আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশ গড়ার লক্ষে্য যে উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো নারীর ক্ষমতায়ন কার্যক্রম, যাতে নারীরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের শামিল করতে পারে। বিশ্বায়নের যুগে তথ্যপ্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নারীকে তার অধিকার রক্ষায় যেমন এগিয়ে নিতে পারে, তেমনি তা নারীর ক্ষমতায়নেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য
০১. প্রযুক্তির ব্যবহার ও ধ্যানধারণার ক্ষেত্রে সবধরনের বৈষম্য দূর করা।
০২. তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
০৩. নারী ও কন্যাশিশুর জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সেবা নিশ্চিত করা।
০৪. তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারী ও কন্যাশিশুর অংশগ্রহণ বাড়ানো।
০৫. কমপিউটার চালনা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, অনলাইন যোগাযোগ, ওয়েব সেবা এবং অনলাইন সংবাদ সম্পর্কে ধারণা দেয়া।
০৬. নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সব ধরনের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্য দূর করা।
০৭. সহকর্মীর আচরণ ও মনোভাব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করা।
০৮. আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়া।
০৯. নারীকে ব্যবসায়-বাণিজ্য ও চাকরির ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করা।
১০. নারীকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা।
১১. অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনয়নের জন্য নারীকে সহযোগিতা করা।
নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার
তথ্যে অ্যাক্সেস দেয়া
ক্ষমতাপ্রাপ্ত নারী ও মেয়েশিশুদের স্বাস্থ্য, জীবিকা, কৃষি, আবহাওয়া এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে তথ্য ও তারঅ্যাক্সেস করার উপায় প্রয়োজন। নারীর ক্ষমতায়নের ওপর কোনো প্রকল্পের সবচেয়ে মৌলিক উপাদান এক হতে হবে। যেমন-ইন্টারনেটের মাধ্যমে, একটি ফোন (মোবাইল বা ল্যান্ডলাইন), একটি বই/সাময়িকপত্র প্রকাশ বা অন্য কোনো ব্যক্তি, নারী ও মেয়েশিশুর তথ্য এবং এটি পাওয়ার একটি উপায় প্রয়োজন।
ক্ষমতায়নের পরিবেশ তৈরি করা
প্রযুক্তি এবং তথ্যে অ্যাক্সেস করার জন্য নারী ও মেয়েদের নিরাপদ স্পেস প্রয়োজন, যেখানে তারা সমর্থন পেতে পারে। তাদেরপ্রকৃত নিরাপদ এবং ক্ষমতায়নের স্পেস প্রয়োজন, কিন্তু ক্ষমতায়নের এমন পরিবেশ যেখানে আইন প্রয়োগ করা হবে এবং আইন অনুমতি দেয় তরুণীদের প্রযুক্তি অ্যাক্সেস করতে। প্রোগ্রাম এবং পরিসেবার জন্য আর্থিক বরাদ্দ নীতিমালা পর্যায়ে বিবেচনা করা জরুরি। যেখানে মেয়েরা সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বাদ পড়েছে, সেখানে সরকারকে শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য বাধা রোধে কাজ করতে হবে।
অফার সমর্থন
তথ্যপ্রাপ্তি যথেষ্ট নয়। সবসময় নারীরা তাদের জীবন উন্নত করার যে তথ্য ব্যবহার করতে পারে, সে সম্পর্কে আরও জানতে সুযোগ করে দিতে হবে। সম্প্রদায় যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি প্রধান বিষয়, সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বাজারে ছোট ব্যবসায়ের উন্নতি করা যায়, সে সম্পর্কে কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
অপ্রথাগত শিক্ষা এবং জ্ঞান ভাগ করে প্রচার করা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীরা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা তাদের এ দক্ষতাকে ব্যবহার করে যেকোনো কাজ করে নিজে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে পারে এবং দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে পারে। শুধু তাই নয়, আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা আইসিটি ক্ষেত্রে কাজ করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। আত্মবিশ্বাস, নিজস্ব দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নারীরা অংশ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারে এবং তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও লিঙ্গ সংক্রান্ত বাধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক উন্নতির জন্য আইসিটি কোর্সে প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।নারীদের অবস্থানের ওপর আইসিটির প্রভাব হিসেবে বেশিরভাগ নারী আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও জ্ঞান অর্জন করে তাদের কর্মসংস্থানে নিজের অবস্থান এবং রোজগারের ক্ষমতা বৃদ্ধি বা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবন-মান উন্নত করার চেষ্টা করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন লাভ করার ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব বোঝা যায়। নারীর সামাজিক ও সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য আইসিটি ব্যবহার করার ক্ষমতাএকটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।আইসিটি প্রশিক্ষণ ও ব্যবহার ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে। নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বায়নের এই যুগে কোনো দেশকে এগিয়ে যেতে হলে, কোনো জাতিকে উন্নত করতে হলে নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি সেই কাঙিক্ষত সাফল্যের সোপান খুলে দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া যেমন উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি নারীদের এ খাতে অংশ নেয়া ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এ কারণেই অগ্রগণ্য।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে নারীর ক্ষমতায়নের উপায়
অর্থনৈতিক সক্ষমতা :তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসে নারীরা কমপিউটারে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের দক্ষ করে তুলছে এবং সাবলম্বী হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের পথ সুগম হচ্ছে। পথের দূরত্বকে অতিক্রম করে প্রযুক্তির কল্যাণে যেকোনো নারী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে সক্ষম। দেশের বিশালসংখ্যক নারী অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হলে জাতীয় উন্নয়নে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়বে। বর্তমানে নারীরা উপার্জন থেকে শুরু করে অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন সেবার প্রতিটি পদক্ষেপ প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করছে।
রাজনৈতিক কর্মকা-- অংশ নেয়া : তথ্যপ্রযুক্তি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশ নেয়ার ব্যাপারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন- স্থানীয় সরকার, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য তথ্য উপস্থাপন ও প্রচার এ প্রযুক্তির ব্যবহার নারীদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থার তাৎক্ষণিক তথ্যসমাহার প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে সবার হাতের নাগালে, যা নারীদের করেছে আত্মপ্রত্যয়ী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মবিশ্বাসী।
জাতিসংঘ নারীদের জন্য রাজনৈতিক সহযোগিতামূলক কনসালটেশনের অনলাইন কমিউনিটি চালু করেছে, যা বিশ্বব্যপী নারী নেত্রীদের যোগাযোগের এক নতুন মাধ্যম।
সামাজিক সহযোগিতা : সামাজিক সহযোগিতায় সামাজিক সেবা ও নারীদের অধিকার ভোগের বিষয়টি অগ্রগণ্য। সমাজে নারী তথ্যপ্রযুক্তির সেবা দিয়ে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করতে পারে এবং এই ভূমিকা সমাজের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য, শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ ত্বরান্বিত করা, পারিপার্শ্বিক বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায়। পরিবেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝুঁকিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবাইকে অবহিত করা এবং এ ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সামাজিক সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত।
সচেতনতা বাড়ানো : নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অবদান নারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। সঠিক নির্দেশনা, তথ্য ও জ্ঞানের সমাবেশে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে তারা অগ্রগামী। একমাত্র সচেতনতাই নারীদের মনে কর্মস্পৃহা তৈরি করেছে। সমাজে নানা কুসংস্কার,হুমকি উপেক্ষা করে নিজেদের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে পথে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তেই জেনে নিচ্ছে যেকোনো সমস্যার সমাধান, আইন, সহযোগিতার অবলম্বন। ইন্টারনেটের ব্যবহার, বিভিন্ন সময়োপযোগী অ্যাপস ও মিডিয়ার মাধ্যমে নারীরা আজ বিশ্বের সব বিষয় সম্পর্কে অবহিত।
গ্রামীণ উন্নয়ন : গ্রামীণ সমাজে মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষে্য নারী ও শিশু, মহিলা উদ্যোক্তা, মহিলাবিষয়ক সংবাদ, নারী নীতি, সরকারি বিধি-বিধান, মহিলাবিষয়ক গবেষণা ও প্রকাশনা, আইনি সহায়তা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাসহ নানা বিষয়ে সচেতনতায় প্রযুক্তির বিকাশ সাফল্য পেয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেটের কর্মপোযোগী করে তুললে দেশের উন্নয়নে বিপ্লব ঘটবে। তাতে নারীদের ক্ষমতায়নের সঠিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রধান লক্ষ্য। সেজন্যই এসডিজির আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষে্য সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে্য ডিাজটাল নাগরিক হিসেবে নারীর আত্মপ্রকাশ তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদেরকে এগিয়ে নিতে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জেলাভিত্তিক মহিলা কমপিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করছে।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
শিক্ষেত মহিলাদের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর করে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা।
সবশেষ প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানকে দেশজ টেকসই প্রযুক্তির সাথে প্রয়োগের মাধ্যমে আত্মস্থ করা।
শিক্ষেত বেকার মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বনির্ভর হওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা।
নারীসমাজকে মানব পদে পরিণত করার লক্ষে্য ধারণাগত পরিবর্তনে উৎসাহ দেয়া।
বর্তমানের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং ভবিষ্যতের চাহিদা মোকাবেলার লক্ষে্য কমপিউটার দক্ষতার উন্নয়ন এবং বহুমুখীকরণ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক নারীবান্ধব উৎকর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষে্য উন্নয়ন সহযোগী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা।
প্রায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল মেয়াদে পাঁচ বছরে বাস্তবায়িত হবে। ৬৪টি জেলায় ২৮,০৭০ জন শিক্ষেত বেকার মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী কমপিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়। প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে জুন এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুটি ব্যাচে ৪৬ জন করে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি হয়। সর্বনিমণ এসএসসি পাস ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত বেকার মহিলা এ কোর্সে ভর্তি হতে পারে। কোর্স ফি ১০০০ টাকা। ইতোমধ্যে ৬৪টি জেলায় ৭,৫০০ প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত‘তথ্যআপা প্রকল্প’। তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তারের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে সমাজে জেন্ডার বৈষম্যের অন্তরায় দূর করার অভিনব, সৃজনশীল ও দৃষ্টি-উন্মোচনকারী উদ্যোগের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হলো তথ্যআপা প্রকল্প।বাংলাদেশের গ্রামীণ, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত এবং কম সুবিধাপ্রাপ্ত মহিলাদের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা পৌঁছে দিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে অভূতপূর্ব অবদান রাখছে তথ্যআপা প্রকল্প।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
কম সুযোগপ্রাপ্ত মহিলাদের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহজে তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে নারীর ক্ষমতায়ন।
নির্বাচিত ১৩টি উপজেলায় ১৩টি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে এক লাখ মহিলাকে সচেতন করা।
একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা, যেখানে বিষয়বস্ত্ত উপস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে নারী, শিশু, মহিলা উদ্যোক্তা, মহিলাবিষয়ক সংবাদ, সরকারি বিধি-বিধান, মহিলাবিষয়ক গবেষণা ও প্রকাশনা, আইনি সহায়তা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ইত্যাদি।
শুধু নারী ও শিশুবিষয়ক সমস্যাদি ও তার প্রতিকার বিষয়ে সুপারিশ দানের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কলসেন্টার প্রতিষ্ঠা করা।
তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে মহিলাদের জন্য তথ্যসেবা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ডোর টু ডোর সেবা।
সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও মুক্ত আলোচনা-উঠান বৈঠক।
ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের সার্বিক অগ্রগতি
ব্যাংক, অফিস, আদালত ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীর সরব উপস্থিতি। ই-গভর্ন্যান্স অফিস-আদালতে গতানুগতিক কাগজনির্ভর নোটিস জরিপ, বিল এবং কন্ট্রাক্ট বিষয়কে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক রূপদান করে অফিসকে কাগজবিহীন অফিসে রূপান্তর করা হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টরে জনবল নিয়োগ করা হচ্ছে। এখন প্রতিটি ব্যাংকের শাখা ই-অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।ই-ব্যাংকিং সেবা হচ্ছে অতিদ্রুত এবং নির্ভুলভাবে গ্রাহকের জন্য পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রম। এসব ব্যাংকিং কার্যক্রমে পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও অনেক বেশি অবদান রাখছে। কমপিউটার আউটসোর্সিং ঘরে বসে আয় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। আউটসোর্সিংয়ের মাধমে নারীরা ঘরে বসেই আয় করতে পারছে। এছাড়া টেইলারিং, রান্না, বিউটিফিকেশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত ডিজাইনের ধারণা পেয়ে নিজেদেরকে দক্ষ করে তুলছে। নারীর উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ নারীকর্মী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাসহ নারীর সামগ্রিক বিকাশে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতা তৈরির নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি-ঘনিষ্ঠ অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে, যাতে হাজারো নারী উন্নয়ন আর মুক্তির দিশা খুঁজে পায়। বাংলাদেশে আইসিটি খাতে নারীর অংশ নেয়া এবং অন্যদিকে নারীর অবস্থার উন্নয়নের জন্য আইসিটির ব্যবহার- এ দুটি বিষয়কেই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। এ দুটি বিষয়কে আলাদাভাবে বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব রয়েছে সরকারের। আবার বেসরকারি খাতেরও দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এছাড়া গণমাধ্যমের অনেক কিছু করার রয়েছে। সবার সামগ্রিক প্রচেষ্টা ও অংশ নেয়ার মাধ্যমে এ দুটি ক্ষেত্রেই উন্নয়ন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে এশিয়ার জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ যদি এ খাতে চেষ্টা করে তবে সারাবিশ্বেই বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে অগ্রপথিক।