• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ফিলিভিশন: আগামীর টেলিভিশন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুনীর তৌসিফ
মোট লেখা:৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
টিভি
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ফিলিভিশন: আগামীর টেলিভিশন
কল্পনা করুন। গরমের মৌসুমে আপনি যোগ দিয়েছেন সন্ধ্যেবেলার কোনো পার্টিতে। আপনি দেখতে পাচ্ছেন চারপাশের সবুজের সমারোহ। ডুবন্ত সূর্য। ঘ্রাণ পাচ্ছেন সদ্য কেটে আনা ঘাসের। অভ্যাগতদের জন্য পরিবেশিত ঠা-া কোমল পানীয়ের স্বাদও পাচ্ছেন। শুনতে পাচ্ছেন পাশ দিয়ে চলে যাওয়া কারও হেঁটে যাওয়ার আওয়াজ। ঠাহর পেলেন আপনার কাঁধে রাখা কারও হাতের ছোঁয়া। সবকিছুই যেনো প্রাণবন্ত। এবার ভাবুন আপনি আসলে কোনো পার্টিতে নেই। বসে আছেন নিজের বাড়িতে। টিভি সেটের সামনে। টিভি সেটের পর্দায় ভেসে ওঠা চিত্রের সব রূপ-রস-গন্ধ ভেসে আসছে আপনার কাছে। পর্দায় দৃশ্যমান বৃষ্টির বাস্তব ছোঁয়া যেনো উপলব্ধি করছেন বৃষ্টির পানি ছাড়াই। এমন টিভি হলে কী মজাই না হয়। তাই না?
কী করে টেলিভিশন প্রোগ্রামের একটি দৃশ্য একদিন আপনার সব সেন্স বা সণায়বিক অনুভূতিতে নাড়া দিয়ে সবকিছুই প্রাণবন্ত করে তুলবে? কী করে দৃশ্যের যাবতীয় বাস্তবের ছোঁয়া আপনি পেতে পারেন? এগুলো নিশ্চয় গবেষকদের কাছে মজার প্রশ্ন। যেসব গবেষক ভবিষ্যতের টিভি নিয়ে গবেষণা করছেন, তারা সে প্রশ্নের উত্তর উদঘাটনে এখন ব্যস্ত। কিন্তু আরও বড় প্রশ্ন হচ্ছে- পর্দায় যা কিছু ঘটছে সেসবের সবগুলোর কৃত্রিম রূপ আমরা দিতে পারি না। একটি অনুষ্ঠানকে ঘিরে যে রূপ-রস-গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তা আমরা দর্শকদের কাছে বাস্তবসম্মত করে তুলে ধরতে পারি না। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, আগামী দিনের টিভিতে আমরা সে সুযোগ পাব।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা তৈরি করছেন এক ধরনের মাল্টিসেন্সরি টিভি। এর মাধ্যমে সিনেমার দৃশ্যেও বৃষ্টি পড়া ও বায়ুপ্রবাহের অনুভূতি পাওয়া যাবে। এরা এর নাম দিয়েছেন ফিলিভিশন। কারণ, সিনেমার দৃশ্যের বাস্তবতার ছোঁয়া পাওয়া যাবে এই টেলিভিশন দেখে। আসলে ফিলিভিশন হচ্ছে আগামী দিনের টিভি। একে টেকটাইল টিভি বা স্পর্শগ্রাহ্য টিভিও বলা হচ্ছে।
অনলাইন ভিডিওর উত্থান সত্ত্বেও লাখ লাখ মানুষ এখনও টেলিভিশন সেটের মাধ্যমে প্রচলিত সম্প্রচার মাধ্যমের চলচ্চিত্র উপভোগ করে। প্রোগ্রাম তৈরি ও দেখার ক্ষেত্রে টেলিভিশন এখনও রয়ে গেছে শক্তিশালী ফরম্যাটে। টেলিভিশন অনুসরণকরে সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ ও নির্দেশিকা। কিন্তু বেশি থেকে বেশি মানুষ এখন টিভি অনুষ্ঠান অনলাইনে দেখছে এর মূল সম্প্রচারের পর। এ ক্ষেত্রে এরা ব্যবহার করছে ট্যাবলেট ও মোবাইল ফোনসহ এ ধরনের অন্যান্য ডিভাইস। এমনকি এরা ব্যবহার করছে মাল্টিপল স্ক্রিন। এর মাধ্যমে এরা একই সময়ে একাধিক প্রোগ্রাম বা কনটেন্ট উপভোগ করতে পারছে। সম্প্রচারকদের দরকার টিভি দেখার নতুন অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করা, যা দর্শকদের মনোযোগ আরও বেশি করে আকর্ষণ করতে পারে এবং দর্শকদের মাতিয়ে বা ডুবিয়ে রাখতে পারে মাল্টিরসেন্সরি জগতে।
সেন্স নিয় গবেষণা
আমাদের সব সেন্সকে সতেজ করে তুলতে পারে, কিংবা সব অনুভূতিতে নাড়া দিতে পারে এমন ধরনের টেলিভিশন তৈরির কাজ খুব সহজ নয়। তবে প্রোগ্রাম প্রস্ত্ততকারক ও প্রযুক্তির উদ্ভাবকেরা জানেন- কী করে তাদের প্রোডাক্ট ডিজাইন করতে হয়, যাতে দর্শকেরা পর্দায় দেখা কোনো দৃশ্যের গভীরতা ও দূরত্ব দেখতে বা অনুভব করতে পারে। কিন্তু সাউন্ড ও ভিশন সব সময় এজন্য পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু আমরা চাই এমন সিনেমা দেখতে, যেখানে কোনো দৃশ্যেও পাত্র-পাত্রীরা যে গন্ধ-রস অনুভব করবে দর্শকেরাও তা অনুভব করবে। দর্শকেরা পাবেন আবহাওয়া ও বস্ত্তর আমেজও। অনুভব করবে সিনেমার দৃশ্যের বাস্তবতা।
সিনেমা জগতে এরই মধ্যে গবেষণা চলছে এসব এক্সট্রা সেন্স নিয়ে। চলচ্চিত্রে ছোঁয়া ও গন্ধের সেন্স বা অনুভূতির অভিজ্ঞা পাওয়া যাবে নতুন সূচিত ৪ডিএক্স সিনেমাগুলোতে। Milton Keynes এমনি ধরনের একটি চলচ্চিত্র। সিনেমায় স্বাদ পাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টির বিষয়টি মনে হয় গবেষণার পরবর্তী ক্ষেত্র, যে জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন দরকার। টেস্ট বা স্বাদ সম্পর্কিত গবেষণা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যেমন- এডিবল সিনেমায় দর্শক-শ্রোতারা সবাই পাবেন একটি করে খাবার ও পানীয়ের প্যাকেজ, যার সাথে মিল থাকে চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলোর খাবার ও পানীয়ের।
টেলিভিশন শিল্পের সামনে প্রশ্ন হচ্ছে- কোন ধরনের মাল্টিসেন্সরি এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন করা হবে? আর সেই ডিজাইনই বা কী করে করা হবে? ‘মাই সাসেক্স কমপিউটার হিউম্যান ইন্টারেকশন’ নামের গবেষণাগার চেষ্টা করছে সেই বিষয়টি সম্পর্কে আরও ভালো করে জানতে ও বুঝতে, আমরা কী করে আমাদের সেন্স ব্যবহার করি। তা জানতে ও বুঝতে পারলে ডিজাইনার ও ডেভেলপারেরা আমাদের সহায়তা করতে পারবেন তাদের প্রযুক্তির সাথে যথাসম্ভব উত্তম উপায়ে ইন্টারেক্ট করতে।
গবেষকদের সবশেষ নজর ছিল কাটিং এজ টেকনোলজির ওপর। যেমন- মিড-এয়ার টাচ ফিডব্যাক বা ব্রিস্টলের নতুন কোম্পানি আল্ট্রাহেপটিকসের ডেভেলপ করা ‘হেপটিক’ ডিভাইসের ওপর। গবেষকেরা নজর রাখছেন, কী করে এই টেকনোলজি দর্শক-শ্রোতাদের অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে, যাতে এরা প্রকৃত বস্ত্ত না ছুঁয়েও ফিজিক্যাল সেন্সেশন বা বাস্তব সংবেদনঅনুভব করতে পারে। উদাহরণ টেনে বলা যায়, আপনার হাতের ওপর একটি আল্ট্রাসাউন্ডের রশ্মি আপতিত করে বিভিন্ন ধরনের টেকটাইল সেন্সেশন বা স্পর্শগ্রাহ্য সংবেদন তৈরি করা যায়। যেমন-পানি ছাড়াই মনে হবে হাতের তালুতে বৃষ্টি পড়ছে। কিংবা মনে হবে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে, যেমনটি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে রাখলে হাতে বায়ুর ছোঁয়া অনুভব হয়। যত্নের সাথে ডিজাইন করা হলে এই হেপটিক ফিডব্যাক দিয়ে বরং আরও সুনির্দিষ্ট প্যাটার্নও তৈরি করা যাবে, যাতে আপনি বিভিন্ন আকারও অনুভব করতে পারবেন, যা আকার পরিবর্তন করে দ্রুত চলতে পারে।
ইমোশনাল ফিডব্যাক
বিভিন্ন আকার নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, কী করেবিভিন্ন আকারের হেপটিক ফিডব্যাক তৈরি করতে পারে বিভিন্ন ইমোশন। দেখা গেছে, বুড়ো আঙুল ও এর পাশের আঙুল ও তালুর মধ্যাংশের চারপাশের বায়ুর শর্ট ও শার্প বার্স্ট এক্সাইটমেন্ট বা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। তালুর বাইরের দিকটা ও হাতের কানি আঙুল ধীর ও মাঝারি ধরনের উদ্দীপনা দুঃখভরা সংবেদন সৃষ্টি করে। এখান থেকেই আমরা পেয়ে যাচ্ছি, কী করে মিড-এয়ার টাচ সেনসেশন অর্থপূর্ণভাবে সমন্বিত করা যাবে অন্যান্য অভিজ্ঞতার সাথে, যেমন সিনেমা দেখা। একটি চ্যালেঞ্জ হবে, এমন হেপটিক ফিডব্যাক তৈরি করা, যা তোলার অভিজ্ঞতাকে আরও জোরালো করে তুলতে পারে।
সম্প্রতি শুরু করা হয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদি SenseX নামের একটি প্রকল্প। এর লক্ষ্য, টেস্ট ও স্মেল সম্পর্কিত গবেষণার সম্প্রসারণ। এই প্রকল্প সেসব গাইডলাইন ও টুল জোগাবে, যা ইনভেন্টর ও ইনোভেটরেরা ব্যবহার করবে কী করে সেন্সরি স্টিমুলি ডিজাইন ও সমন্বিত করবে অধিকতর ইন্টারেকটিভ অভিজ্ঞতা সৃষ্টির জন্য। তুলনামূলকভাবে শিগগিরই আমরা উপলব্ধি করতে পারব সত্যিকারের কমপেলিং ও মাল্টি-ফ্যাসেটেড মিডিয়া অভিজ্ঞতা। যেমন- ‘নাইন-ডাইমেনশনাল টিভি (৪ডিএক্সের ওপর টেস্ট সংযোজন করে)। এটি আমাদের সব অনুভূতিকেউদ্দীপ্ত করবে।

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - মার্চ সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস