লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
একজন শাহজাহান সজীব এবং একটি মানবিক আবেদন
বিশ্বের প্রথম বাংলাভাষায় আইসিটি ও কমপিউটার বইয়ের লেখক আইসিটি ও কমপিউটার বই প্রকাশনার পথিকৃৎ শাহ সৈয়দ শাহজাহান সজীব এখন অসুস্থ ও ঋণভারে দিশেহারা। তার ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফসহ তার অমূল্য আইসিটি ও কমপিউটার বইগুলো বাজারজাতকরণে সরকারি আর্থিক অনুদান, উদ্যোগ ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। শাহ সৈয়দ শাহজাহান সজীব একটি নাম। যে নামে জড়িয়ে আছে বাংলাভাষায় আইসিটি ও কমপিউটার বই লেখার এবং প্রকাশনার সেই সোনালি ইতিহাস। যখন কমপিউটার শেখার ও বোঝার মতো বাংলায়ভাষায় একটি বইয়েরও অস্তিত্ব ছিল না, কমপিউটার কী জিনিস তা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া অন্য কেউ জানতও না, কিছু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, গোটা দুই ব্যাংক এবং শৌখিন ধনাঢ্য পরিবারই শুধু কমপিউটার নামের যন্ত্রটি ব্যবহার করত, তখন তথ্যপ্রযুক্তির জানা-অজানার ভিড়ে নিজস্ব উদ্যোগে কিছু কিছু স্ব লেখক আইসিটি ও কমপিউটারকে সবার সামনে বাংলাভাষায় অত্যন্ত সহজ, সাবলীলভাবে তুলে ধরেন। তাদেরই একজন হলেন শাহ সৈয়দ শাহজাহান সজীব। তিনি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে সর্বপ্রথম বাংলাভাষায় আইসিটি ও কমপিউটারের ওপর লেখেন বেশ কিছু মৌলিক বইসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামের প্রশিক্ষণ উপযোগী বই।
বিগত ২৭ বছ’রে লিখেছেন শতাধিক আইসিটি ও কমপিউটারবিষয়ক বই। তার জন্ম ১৯৬৮ সালে। চুয়াডাঙ্গা জেলার ভালাইপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শাহী (সৈয়দ) পরিবারে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে বিএসএস (সম্মান) ও এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কমপিউটার প্রযুক্তির জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করেন এবং অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে কমপিউটার সায়েন্সে ডিপেস্নামা ডিগ্রি অর্জন করেন। যুগপৎ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইন বিষয়েও অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি বিএসসি (অনার্স) ও এমএসসি ইন কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন এবং মাস্টার্স ইন কমপিউটার অ্যাপ্লিকেশনস (এমসিএ) সম্পন্ন করেন। প্রাতিষ্ঠানিক কমপিউটার প্রোগ্রামিং অনুশীলন এবং তা অর্থনীতির Linear & Non-Linear প্রোগ্রামিং তত্ত্বের সাথে সমন্বয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনসহ প্রথিতযশা গ্রম্নপ অব ইন্ডাস্ট্রিতে কমপিউটার প্রোগ্রামার পদে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। বর্তমানে তিনি তার বিলুপ্ত-প্রায় ইউনিভার্স গ্রম্নপ অব কোম্পানিজের কর্ণধার।
১৯৮৮ সালে ঢাকাস্থ কমপিউটার ব্যুরো (প্রা.) লিমিটেড নামে কমপিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনুধাবন করেন, ইংরেজি ভাষায় রচিত কমপিউটারবিষয়ক বইগুলো আমাদের প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে সহজবোধ্য নয়। ফলে তারা এতে উৎসাহবোধ করেন না এবং আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন। তাই প্রশিক্ষণার্থীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাতৃভাষার মাধ্যমে কমপিউটার বিজ্ঞানের বিভিন্ন বই প্রকাশের উদ্যোগ নেন। তার প্রণীত প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে Word Star 4.0। বাঙালিদের মধ্যে তিনিই প্রথম উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এবং তৎসম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রোগ্রামের বই লেখেন। প্রশিক্ষণার্থী ও প্রশিক্ষক উভয়ের জন্য সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত শাহজাহান সজীবের গ্রন্থগুলো সংশ্লিষ্ট সবার প্রশংসা কুড়ায়। তার প্রণীত গ্রন্থগুলো বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে দীর্ঘদিন ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। এ যাবত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক এবং বর্তমানে প্রকাশিতব্য আছে প্রায় ২০০ বই।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তিনবার হার্ট অ্যাটাক করে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন থেকে হার্টের সমস্যার সাথে মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। তার এ অসুস্থতার মাঝে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা তার অতি বিশ্বাস ও আত্মীয়দের প্রতি অতি উদারতার সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকার বই, নগদ টাকা এবং প্রেস থেকে কাগজ, প্লেট ইত্যাদি বিক্রি করে তারা লেখক শাহজাহান সজীবকে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত করেছে। তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত কতিপয় কর্মচারী কাগজের সাপ্লায়ার, প্রেস, লেমিনেটিং, কমপিউটার সামগ্রী ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যবসায়িক সহযোগীদের অনুকূলে তার কাছ থেকে চেক ইস্যু করে নিয়ে হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে না দিয়ে লাপাত্তা হয়। এসব চেক ও স্ট্যাম্পের ভিত্তিতে তার সাবেক বিশ্বাসঘাতক কতিপয় কর্মচারীর সহযোগিতা ও মদদে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাকে মিথ্যা হয়রানি করে জেল খাটানোর জন্য এবং অন্যায়ভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এনআই অ্যাক্টসহ অন্যান্য ধারায় তার বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
২০১১ সালে তিনি মানসিক সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হলেও তার হার্ট, লাঞ্চ, নার্ভ, ব্রেন, প্রেসার ও অন্যান্য জটিল সমস্যা বিদ্যমান এবং নিয়মিত ওষুধ সেবনে কোনোমতে বেঁচে আছেন। অসুস্থ অবস্থা থেকেই শাহজাহান সজীবকে একই সাথে এসব মিথ্যা দেনার বোঝা ও মিথ্যা মামলা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তৎসঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে তার বইগুলো বাজারজাত করতে না পারায় তিনি ব্যাংকে ঋণ খেলাপিসহ বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। তার ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ না হলে তার পৈতৃক ভিটামাটি পর্যন্ত কিছুই থাকবে না। তার বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাগুলোর সঠিক তদন্ত না হওয়া এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিলে তাকে মিথ্যা মামলায় জেলের ঘানি টানতে হবে এবং বাঙালি জাতি তার প্রণীত বহুল জনপ্রিয় ও তথ্যনির্ভর বই পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে; নিঃশেষ হয়ে যাবে এক তরুণ লেখকের জীবন, অথৈ জলে হাবুডুবু খাবে তার পরিবার-পরিজন। সর্বোপরি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজের অন্যতম রূপকার ও অগ্রদূত সৈনিক এই প্রতিভাধর লেখকের অমূল্য জীবন প্রদীপ যেকোনো সময় নিবে যেতে পারে। কিন্তু যিনি তার তথ্যবহুল লেখা দিয়ে আমাদের এই বাঙালি জাতিকে আইসিটি ও কমপিউটার তথ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তার ব্যাপারে আমাদের সমাজ কতটুকু খেয়াল রাখে!
আজকে শাহজাহান সজীবের জন্য আশার বাণী হলো, এখনও তার কাছে প্রায় ২০০ আইসিটি ও কমপিউটারের বইয়ের পা-ুলিপির সফটকপি প্রস্ত্তত রয়েছে। এনসিটিবি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির আবশ্যিক পাঠ্যবই আইসিটি গ্রন্থের অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়ে শুধু অর্থাভাবে উক্ত বইগুলো বাজারজাত করতে পারছেন না। এছাড়া আছে তার প্রণীত ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণি পর্যন্ত আইসিটি বিষয়ের ওপর রেফারেন্স বই। আছে অনেক প্রোগ্রামভিত্তিক আইসিটি ও কমপিউটারবিষয়ক বই। গ্রন্থস্বত্ব আইন অনুযায়ী উক্ত বইগুলোর ১০ বছরের রয়্যালটি প্রায় ৪০ কোটি টাকা আসবে বলে লেখকের প্রত্যাশা। কিন্তু টাকার অভাবে বইগুলো বাজারজাত করতে পারছেন না এবং কোনো প্রকাশকেও তাকে কোন সহযোগিতা করছে না। ফলে তিনি ব্যাংকসহ বিভিন্ন পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ নিয়ে প্রচ- ঝামেলায় আছেন। যার ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজের অন্যতম রূপকার ও অগ্রদূত সৈনিক এই প্রতিভাধর লেখকের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন এখন দারুণ হুমকির মুখে।
তাই আজ লেখকের প্রত্যাশা, তিনি নতুনভাবে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়, তাহলে তিনি আবার তার আইসিটি ও কমপিউটারবিষয়ক অমূল্য বইগুলো পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। ফলে জাতির সুযোগ্য সন্তানেরা বিশ্বব্যাপী দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবেন। তার প্রত্যাশা- নিমণ থেকে উচ্চতর শ্রেণি পর্যন্ত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তার লেখা আইসিটি বই দেশব্যাপী বাজারজাত করলে একদিকে যেমন ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে, অন্যদিকে এ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে তিনি সুচিকিৎসা এবং ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের পাওনা মিটিয়ে ঋণের দায়ে জেলের ঘানি টানা থেকে রেহাই পাবেন। এজন্য প্রয়োজন তার সব ব্যাংকের সুদ মওকুফ করা, তার বিরুদ্ধে আনীত চেকের মিথ্যা মামলাগুলোর সঠিক তদন্ত হওয়া ও তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া। তার প্রণীত বইগুলো বাজারজাতকরণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা তথা আর্থিক অনুদান দেয়া এবং তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগ নেয়া তথা আর্থিক অনুদান দেয়া। আসুন আমরা সবাই তার দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেই। যিনি দেশ ও সমাজকে এতটা দিয়েছেন, তার জন্য আমরা কিছুটা দায়িত্ব কি পালন করতে পারি না? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার সহায়তায় এগিয়ে আসবেন, এমন প্রত্যাশাও তিনি করেন।
সোহেল রানা
ধানমন্ডি, ঢাকা