লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে আয়-রোজগার
লেইছ ফিতা লেইছ...। হাঁড়ি-পাতিল..., সেণা-পাউডার..., শাড়ি-থ্রিপিস..., কিনবেন স্যান্ডেল। শহরতলির অলিগলি ঘুরে পণ্য ফেরি করার দৃশ্যটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রচ- গরমেও ফুল সিস্নভ শার্ট গায়ে, গলায় টাই বেঁধে আর হাতে একখানা ব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেলে দোকানে দোকানে পণ্যের ফরমায়েশ গ্রহণ করার কায়দাও খুব বেশিদিন টিকবে বলে মনে হয় না। পিসি-ফোন-ইন্টারনেটের প্রসার বিপণনে সংযুক্ত বিলবোর্ড, রোড শোর মতো আধুনিক কৌশলও এখন সেকেলে হতে চলেছে। আর সেখানে যুক্ত হয়েছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। পণ্য বিপণন কৌশলের অমোঘ এই হাতিয়ারটি এখন হামেশাই ব্যবহার করছে বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই আয়-রোজগার করতে এখন আর ঘড়ি ধরে অফিসে যাওয়া কিংবা পণ্য বিক্রি করতে ক্রেতার দ্বারে ধর্না দিতে দিতে ঘর্মাক্ত হওয়ার দরকার নেই। প্রাযুক্তিক দক্ষতা আর মেধা থাকলেই হয়। ঘরে বসেই জুটবে অর্থ। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু অ্যাফিলিয়েট মাকের্টিংয়ের মাধ্যমে মার্কেটারেরা আয় করছেন ৫০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এই বাজারের ১ শতাংশও যদি আমরা ধরতে পারি, তাহলে প্রতিবছর দেশে আসবে ৫০০ কোটি টাকা।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে আয়-রোজগার
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে একটি ইনবাউন্ড বা অন্তর্মুখী বিপণন কৌশল। এখানে প্রথাগত প্রচার-প্রচারণার বাইরে ভোক্তাকে দিক-নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমে তার আরাধ্য পণ্য বা সেবা সরবরাহ করাটাই মূল। আর এভাবে ‘ডিজিটাল ডিলার’ বা ব্যাপারী হয়ে একেকটি পণ্য বা সেবা বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা পেয়ে থাকেন একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। বাজারটি এখন পর্যন্ত উন্নত বিশ্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও এখান থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথটি সবার জন্য উন্মুক্ত। একটু দক্ষ হলেই মাসে লাখ টাকা আয় করা ব্যাপারই নয়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস
অনলাইনে ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল দুই ঘরনায় পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। এসব পণ্য বিক্রির জন্য অনলাইনে উভয় বিভাগেরই বেশ কিছু নেটওয়ার্ক রয়েছে। এসব নেটওয়ার্কে সাইনআপ করে আপনি বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট পণ্য বিক্রি করতে পারেন। এর মধ্যে
অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট (https://affiliate-program.amazon.com), ই-বে (http://pages.ebay.com/affiliate/referral.html),
ক্লিকব্যাংক (http://www.clickbank.com), ক্লিকসিউর (https://www.clicksure.com), কমিশন জাংশন (http://www.cj.com),
ওয়ান নেটওয়ার্ক ডিরেক্ট (http://www.onenetworkdirect.com), লিঙ্কশেয়ার (http://www.linkshare.com), কমিশনসোপ (https://www.commissionsoup.com), শেয়ারএসেল (http://www.shareasale.com), ওয়ারিয়রপ্লাস (http://www.warriorplus.com), অ্যাফিলিয়েটউইন্ডো (http://www.affiliatewindow.com), জেভিজু (Jvzoo.com), ক্লিকবেটার (ClickBetter.com), পেডটকম (PayDot.com), ভিআইপিঅ্যাফিলিয়েটস (VIPAffiliates.com), টুইস্ট ডিজিটাল (TwistDigital.com) ইত্যাদি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের যোগ্যতা
ই-কমার্সের এই যুগে বিলিয়ন ডলারের বাজার থেকে ঘরে বসেই আয় করতে হলে টেকসই বিপণন কৌশলটি আগে রপ্ত করতে হয়। এই বিপণন কৌশলটি অনলাইনকেন্দ্রিক হওয়ায় এখানে কাজ করতে হলে বুনিয়াদি কিছু কমপিউটার জ্ঞান যেমন থাকা চাই, তেমনি প্রয়োজন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মৌলিক অনুষঙ্গের বিষয়ে দখল থাকা। তবে সবার ওপর প্রয়োজন ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং জানতে হবে। ই-মেইল মার্কেটিংয়ের দক্ষতা থাকতে হবে। আর ইংরেজি লেখায় পারদর্শিতা থাকলে এবং ঠিকমতো অধ্যবসায় করলে যে ডিসিপ্লিনেরই শিক্ষার্থী হোক না কেন, তিনি ৫ থেকে ৭ মাসের ভেতরেই দক্ষ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে পারবেন।
যেভাবে শুরু করবেন
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে হলে কমপিউটার ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট দরকার হয়। প্রয়োজন হবে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ই-মেইল মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করাতে প্রতিটি প্লাটফর্মে নিজস্ব আইডি। এ ক্ষেত্রে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার প্রথমেই নিজের একটি ব্লগ তৈরি করতে পারেন। ব্লগ প্রমোশনের বা মার্কেটিংয়ের জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) করতে হবে। বিপণনের জন্য কাজে লাগাতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপর কোনো ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসের সাথে এই কাজ শুরু করতে পারেন। যেমন- কোনো একটি রিভিউ সাইট তৈরি করে তারপর সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে ভিজিটর জেনারেট করে অথবা প্রোডাক্ট রিভিউর মাধ্যমে ভোক্তার নজর কেড়ে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা ই-মেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেও আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত পণ্য তাদের বাজারেই বিক্রি করে আয় করতে পারেন বৈদেশিক মুদ্রা।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের কৌশল
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মৌলিক কৌশলের মধ্যে রয়েছে- ট্রাফিক টার্গেটিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতাকে চেনা, নিশ নির্বাচন করে তাদেরকে আরাধ্য পণ্য সংগ্রহ, সেলস ফানেল তৈরি করে ক্রেতার পণ্য কেনার মাধ্যমে তার প্রয়োজন মেটানো এবং ক্রেতার আস্থা অর্জনে তাদের ফিডব্যাকের প্রতি নজর রাখা।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে আপনি বেশ কিছু মেথডে কাজ করতে পারেন। যেমন- ব্লগ লিখে কিংবা নিশ ওয়েবসাইট তৈরি করে। ব্লগ লিখে অ্যাফিলিয়েট করার থেকে নিশ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা খুব ভালো। নিশ ওয়েবসাইট বলতে একটি নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর ওয়েবসাইট তৈরি করে সেই পণ্যের ওপর ভালো করে ইনফরমেশন দেয়া, যাতে সবাই আপনার ইনফরমেশনগুলো পড়ে সেই পণ্যটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এছাড়া বেশ কিছু কাজ আছে এটি করার জন্য। যেমন- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য প্রথমে আপনাকে নির্দিষ্ট পণ্য নির্বাচন করতে হবে, পণ্যের কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে, আপনাকে মার্কেটিং করতে হলে খুব ভালো করে ব্লগ বা ওয়েবসাইট করতে হবে যদি আপনি নিশ পণ্যের ওপর মার্কেটিং করেন, নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর খুব ভালো হাইকোয়ালিটির রিভিউ কনটেন্ট লিখতে হবে এবং আপনার ব্লগে বা ওয়েবসাইটে কাঙিক্ষত ভিজিটর আনতে হবে, এর জন্য আপনি এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিং করতে পারেন। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্য মার্কেটিং করে কাঙিক্ষত ফল পেতে পারেন। কিন্তু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মার্কেটারেরা ‘ক্লিক আনার’ যুদ্ধে নেমে পড়েন। এরচেয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ইন্ডাস্ট্রি বা নিশ সম্পর্কে দক্ষতা থাকলে তবেই ভালো মানের কনটেন্ট তৈরি, অ্যাড বানানো, ল্যান্ডিং পেজ বানানো ও ফলোআপ করতে সক্ষম হবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে আপনি সরাসরি কাস্টমারদের পণ্যের সেলস পেজে না পাঠিয়ে সেলস ফানেল করে কাস্টমারদের কন্টাক্ট ইনফো নিয়ে তাদেরকে পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে জানিয়ে এরপর পণ্যের সেলস পেজে পাঠিয়ে দিতে পারেন। মনে রাখবেন, সেলস ফানেল হিসেবে সবচেয়ে ভালো কাজ করে ভিডিও ল্যান্ডিং পেজ। এরপর হচ্ছে মাইক্রো ব্লগ, এরপর নরমাল ল্যান্ডিং পেজ। আর ভালো হয় যদি আপনি একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ করতে পারেন আর আপনার ব্লগের আর্টিকলের সাথে ভিডিও ল্যান্ডিং পেজ লিঙ্ক করেন। সাধারণত দেখা যায়, একজন ক্রেতা একটি পণ্য কেনার আগে অনলাইনে পণ্যটি সম্পর্কে জানতে চান। যেমন- একজন ব্যক্তি একটি মোটরবাইক কিনতে চান। তখন তিনি হয়তো গুগল বা ইয়াহু সার্চ ইঞ্চিনে সার্চ করেন। এজন্য তিনি সাধারণত ‘Best motor bike’, ‘motor bike review’, ‘motor bike price’, ‘motor bike price in bd’ কিংবা ‘cheapest motor bike’ এসব কিওয়ার্ড লেখেন। নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডের জন্য আপনার প্রোডাক্ট রিভিউ সাইটটি যদি আপনি বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে আপনি প্রোডাক্ট অ্যাফিলিয়েটের মাধ্যমে ভালো টাকা আয় করতে পারবেন।