• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্যাবল টিভি সার্ভিসের ডিজিটালায়ন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: রবিউজ্জামান শাওন
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
টিভি
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি ধারা
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্যাবল টিভি সার্ভিসের ডিজিটালায়ন
বিগত দুই যুগ ধরে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ অ্যানালগ ক্যাবল টিভি দেখে আসছে। এই মুহূর্তে দুই প্রধান বিতরণকারী সংস্থা এবং প্রায় এক হাজারের বেশি বৈধ ক্যাবল টিভি অপারেটর দেশের সর্বত্র ১৬ কোটি মানুষের দোরগোড়ায় এই ক্যাবল টিভি সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে সারাদেশে আজ আনুমানিক দুই কোটি টেলিভিশন ক্যাবল টিভি সংযোগের আওতাভুক্ত রয়েছে।
বলা বাহুল্য, এই অ্যানালগ ক্যাবল টিভির মাধ্যমে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ৮০ থেকে ৯০টি টিভি চ্যানেল প্রদর্শনের সামর্থ্য থাকলেও জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এই সংখ্যা কমে ২৫ থেকে ৪০টি টিভি চ্যানেল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এর ফলে অনেক জরুরি সংবাদ ও দেশী টিভি চ্যানেল গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এর মূল কারণ হিসেবে অ্যানালগ ক্যাবল টিভিভিত্তিক বিতরণ ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে প্রযুক্তি খাতকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। এর ফলে আজ সারাদেশের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সেবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনে এবং সম্প্রতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের ফলে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের টেলিযোগাযোগ শিল্পের বিকাশ বিশেষভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ক্যাবল টিভি বিতরণ ব্যবস্থার তেমন কোনো উন্নয়ন করা হয়নি।
অ্যানালগ ক্যাবল টিভি বিতরণ পদ্ধতিতে ছবি ও সিগন্যালের মান খুবই নিমণমানের হয়ে থাকে, যার মূল কারণ আমাদের ক্যাবল টিভির তার, তারের কানেক্টর, স্পিস্নটার এবং অ্যামপ্লিফায়ার। অ্যানালগ পদ্ধতিতে ক্যাবল টিভির তারের ভেতর দিয়ে ১ গিগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ১০৬টি চ্যানেল বিতরণ সম্ভব হলেও বাস্তবে তা ৯০ থেকে ৯৬টির বেশি নয়। এছাড়া এই পদ্ধতিতে কিছু উচ্চ তরঙ্গবিশিষ্ট চ্যানেল ধারণ করা সম্ভব হয় না। যার ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার তুলনায় অনেক কম চ্যানেল পরিবেশন করা হয়। অ্যানালগ ক্যাবল টিভি বিতরণ ব্যবস্থা ২০ বছর আগের প্রযুক্তি, যার পরিবর্তে বিশ্বব্যাপী এখন ডিজিটাল বিতরণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
এই মুহূর্তে সারাদেশে আনুমানিক দুই কোটি টিভি সংযোগ থাকলেও বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয় হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা, যা সম্মিলিত সংযোগের শতকরা ১ ভাগ। এই অঙ্কের শতকরা ৪০ ভাগ জোগান দেয় মাত্র দুই প্রধান বিতরণকারী সংস্থা এবং বাকি ৬০ শতাংশ আসে অন্য এক হাজারেরও বেশি ছোট-বড় ক্যাবল টিভি অপারেটরদের কাছ থেকে। প্রচলিত অ্যানালগ প্রযুক্তি থেকে উন্নত ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তির প্রবর্তন ঘটলে শতকরা ১৫ ভাগ হারে এই খাত থেকে বছরে আনুমানিক ১,০৮০ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব।
ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তির কিছু সুবিধা
০১. অ্যানালগ ক্যাবল টিভি প্রযুক্তির তুলনায় ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তিতে দেখা ছবি ও শব্দের মান অধিকতর পরিষ্কার ও স্পষ্ট।
০২. ডিজিটাল প্রযুক্তির ফলে ছবির সিগন্যালের সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব। এর ফলে হয় ছবি আসবে, না হয় ছবি আসবে না। কিন্তু ছবির মান খারাপ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।
০৩. ক্যাবল টিভি অপারেটরদের বিদেশি চ্যানেল সিগন্যাল পাইরেসির ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তি সংযোজনের ফলে পাইরেসি বন্ধ করা সম্ভব।
০৪. ডিজিটাল ক্যাবল টিভির প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার সব গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে পারবে, যা টেলিযোগাযোগ খাতে দেখা যায়।
০৫. সরকার ক্যাবল টিভি খাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবে এই ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে।
০৬. এই ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তির ফলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সব চ্যানেলের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ সম্ভব।
০৭. যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সব টিভি চ্যানেলে জরুরি তথ্য সম্প্রচার করা সম্ভব।
০৮. বিদেশি টিভি চ্যানেল ডাউনলিঙ্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি আরোপ করা সম্ভব।
০৯. জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ জোরদার করা সম্ভব।
১০. পাশের দেশ ভারতসহ সিঙ্গাপুর, হংকং, পাকিস্তান, দুবাই ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তি সংযোজনের ফলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিগত ব্যবহারের আন্তর্জাতিক সূচক বাড়বে।
১১. ক্যাবল টিভি ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আরও স্বচ্ছতা যাচাই করা সম্ভব।
১২. বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোর পাশাপাশি দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোর সক্ষমতা ও স্বকীয়তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
১৩. শিশু ও তরুণদের হাতের নাগাল থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক টিভি চ্যানেলগুলোর প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, যা পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের তরুণ সমাজকে রক্ষা করবে।
১৪. শিশুদের মানসিক বিকাশের পাশাপাশি শিক্ষার হার বাড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষামূলক টিভি অনুষ্ঠান সম্প্রচার সম্ভব।
১৫. ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে রাস্তার ওপর ঝুলন্ত তারের পরিমাণ কমানো সম্ভব।
১৬. এলাকাভিত্তিক ক্যাবল শিল্পকে ঘিরে সন্ত্রাসীমূলক কর্মকা- কমাতে অনেকাংশে সাহায্য করবে এই ডিজিটাল প্রযুক্তি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে লাইসেন্সধারী ছোট ও বড় এলাকাভিত্তিক ক্যাবল টিভি অপারেটরদের সুবিধা দেয়া সম্ভব।
১৭. এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১-এর আদলে প্রযুক্তিগত আধুনিকতা নির্ভরশীল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ডিজিটাল ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের বিকল্প নেই।
ডিজিটাল ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক সংযোগে কী কী দরকার?
ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তি সংযোজনের জন্য প্রচলিত ক্যাবল টিভি অপারেটরদের তাদের নেটওয়ার্কে কিছু এককালীন পরিবর্তন করতে হবে। এই এককালীন বিনিয়োগ ভবিষ্যৎবান্ধব এবং তাদের প্রচলিত নেটওয়ার্ক অ্যানালগ থেকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটালে পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। এইসব আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো বিস্তারের মাধ্যমে লোকাল ক্যাবল টিভি অপারেটরেরা একরাশ নতুন সেবা গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারবে।
ডিজিটাল ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের জন্য দরকার উঁচু মানের হেডএন্ড- যেখানে থাকবে বড় মাপের হাই গেইন স্যাটেলাইট অ্যান্টেনা, যার সাথে এলএনবি ও ব্যান্ডপাস ফিল্টার, প্রফেশনাল আইআরডি রিসিভার, এনকোডার, নেটওয়ার্ক সুইচ, কোয়াম, মনিটরিং সিস্টেম, সাবস্ক্রাইবার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং কন্ডিশনাল অ্যাক্সেস সিস্টেম। সাটেলাইট থেকে সুরক্ষিতভাবে তরঙ্গ নামাবার জন্য দরকার উঁচু মানের, বড় সাইজের হাই গেইনসম্পন্ন সি-ব্যান্ড স্যাটেলাইট অ্যান্টেনা- যার সাথে এলএনবি ও ব্যান্ডপাস ফিল্টার থাকবে, যা আমাদের নিরবছিন্নভাবে চ্যানেলের তরঙ্গ নামাতে সাহায্য করবে। এই তরঙ্গ থেকে নিখুঁত ছবি ও স্পষ্ট শব্দ গ্রহণ করার জন্য দরকার প্রফেশনাল ইন্টিগ্রেটেড রিসিভার অ্যান্ড ডিকোডার (আইআরডি)। খোলা বাজারে পাওয়া কম দামি রিসিভারের মতো এই প্রফেশনাল আইআরডি রিসিভার বহুগুণে ভালো ছবি ও শব্দ উপস্থাপনে সক্ষম, যার মূল কারণ এর ভেতরে থাকা উচ্চ মানসম্পন্ন ভিডিও প্রসেসর। সব চ্যানেলের ছবি ও শব্দ প্রফেশনাল আইআরডি রিসিভার থেকে আইপি নেটওয়ার্ক সুইচের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কোয়াম নামে একটি যন্ত্রের কাছে পাছানো হয়, যা এইসব চ্যানেলকে একত্রিত করে বিতরণ করতে সাহায্য করে।
এছাড়া গ্রাহক নিয়ন্ত্রণে সাবস্ক্রাইবার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দিয়ে গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ ও মাস শেষে বিল পরিশোধের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং কন্ডিশনাল অ্যাক্সেস সিস্টেম দিয়ে গ্রাহকদের পছন্দ ও সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী টিভি চ্যানেল বিতরণ করা সম্ভব। এছাড়া কন্ডিশনাল অ্যাক্সেস সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহকের সেটটপ বক্সের চিপসেট শনাক্ত করা সম্ভব, যার ফলে সুরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে তথ্য বিনিময় করা যাবে। এইসব প্রযুক্তিগত অবকাঠামো যেকোনো ক্যাবল অপারেটরের একটি মানসম্মত সেবাদানে সাহায্য করবে।
ডিজিটাল ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক কীভাবে করা সম্ভব?
একটি ডিজিটাল ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক অপারেশন শুরু করা দুটি বাস্তবমুখী ধাপে সম্ভব। প্রথম ধাপ হলো একটি উন্নত ‘ডিজিটাল হেডএন্ড’ তৈরি করা অথবা প্রচলিত উপায়ে একজন ‘ফিড অপারেটর’ হিসেবে সরকারের পরীক্ষিত ও অনুমোদিত উন্নত ডিজিটাল হেডএন্ডের সাথে সংযুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক পরিচালনা করা।
যেহেতু ডিজিটাল ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক অপারেশনের জন্য একটি ডিজিটাল হেডএন্ড থাকা বা এর সাথে সংযুক্ত থাকা আবশ্যক, তাই যেকোনো ব্যবসায়ের মতো এই প্রযুক্তির ওপর এককালীন একটি বিনিয়োগ দরকার। সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেয়ার পর ক্যাবল একজন অপারেটর বিশ্বমানের ডিজিটাল হেডএন্ড প্রযুক্তি সরবরাহকারী কোম্পানি থেকে এসব প্রযুক্তি আমদানি করতে পারবে। আমদানির পর এসব যন্ত্রাংশ দিয়ে অপারেশন শুরুর আগে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে গুণগত মান যাচাই করে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করবে, যাতে গ্রাহকের কাছে নিখুঁত ছবি ও শব্দ সম্প্রচার করা সম্ভব হয়।
এছাড়া ফিড অপারেটর হিসেবে যেসব ক্যাবল অপারেটর কাজ করতে ইচ্ছুক, সেগুলোর মাঠ পর্যায়ে কিছু তারের কানেক্টর, স্পিস্নটার এবং অ্যামপ্লিফায়ারে পরিবর্তন করা দরকার। এর ফলে ক্যাবল অপারেটরেরা তাদের সাথে সংযুক্ত গ্রাহকদের দোরগোড়ায় ডিজিটাল ক্যাবল সার্ভিস পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে। সব ফিড অপারেটর নিজ উদ্যোগে একজন ডিজিটাল হেডএন্ড অপারেটরের সাথে ফাইবার অপটিক তারের মাধ্যমে সংযুক্ত হতে পারবে। সব ডিজিটাল ক্যাবল অপারেটর এ ক্ষেত্রে তাদের নেটওয়ার্কে সম্প্রচারের আগে ডিজিটাল সিগন্যাল পরীক্ষা নিরূপণ করে সম্প্রচার করতে পারবে।
যেহেতু ক্যাবল টিভি হেডএন্ড অপারেটর থেকে কিছু সুবিধা দেয়া সম্ভব, যেমন- গ্রাহক পর্যায়ে বিলিং, ফলে মাঠ পর্যায়ে ফিড অপারেটরেরা সব সংযুক্ত গ্রাহকের নির্ভুল হিসাব রাখতে পারবে। এর ফলে সরকার যেকোনো সময় সাবস্ক্রাইবার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও কন্ডিশনাল অ্যাক্সেস সিস্টেম থেকে গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে এবং মাঠ পর্যায়ে ভালো অঙ্কের রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
ডিজিটাল ক্যাবল টিভির অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
এই মুহূর্তে ক্যাবল টিভি খাত থেকে বাংলাদেশ সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে থাকে, তার শতকরা ৪০ ভাগ আসে দুটি মূল পরিবেশক থেকে। বাকি শতকরা ৬০ ভাগ আসে এক হাজারেরও বেশি ছোট-বড় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্যাবল টিভি অপারেটর থেকে। এ অবস্থায় ক্যাবল টিভি খাত থেকে উদ্ধৃত ১০ কোটি টাকার রাজস্ব পর্যায়ক্রমে কিছু বাস্তবমুখী ধাপে ১,০০০ কোটি টাকায় উন্নত করা সম্ভব।
বর্তমানে ক্যাবল টিভি গ্রাহকেরা বিভাগীয় শহরে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক ফি পরিশোধ করে থাকেন, যা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এখানে গ্রাহকেরা একটি টিভির ফি পরিশোধের বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রে বহুবিধ টিভিতে সংযোগ স্থাপন করে থাকেন। কিন্তু এর পরিবর্তে ক্যাবল টিভি অপারেটরেরা সরকারকে রাজস্ব খাতে তেমন বেশি টাকা পরিশোধ করছে না। একটি জরিপে দেখা গেছে, সারাদেশে আনুমানিক ২ কোটি টেলিভিশন সচল আছে যার মধ্যে ক্যাবল টিভি সংযোগ রয়েছে। এসব টিভি যদি সরকারের রাজস্ব খাতের আয়তায় আসত, তাহলে মাসে ক্যাবল টিভি অপারেটরদের কাছ থেকে আনুমানিক ৯০ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর আদায় করতে পারত, যা বছরে ১,০৮০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি কোষাগারে জমা হতো। এছাড়া ডিজিটাল ক্যাবল টিভির জন্য সেটটপ বক্স বিক্রি থেকে সরকারের শুল্ক আয়ের সম্ভাবনা ব্যাপক হারে বাড়বে।
বলা বাহুল্য, সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই খাত একটি উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। এছাড়া ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণে এই কার্যক্রম সরকারের রাজস্ব খাতকে আরও সুদৃঢ় করতে সাহায্য করবে এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থান শক্তিশালী করে তুলবে।
ডিজিটাল ক্যাবল টিভি পরিচালনায় সামাজিক ও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা
ডিজিটাল ক্যাবল টিভি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সমন্বিত নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা অপরিহার্য। একটি নিয়ন্ত্রক হিসেবে সরকারের প্রয়োজন-
০১. সরকারের ডিজিটাল ক্যাবল টিভি সেবা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি ‘ডিজিটাল ক্যাবল টিভি নীতিমালা’ এখন সময়ের দাবি।
০২. উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির আদলে বিদেশি টিভি চ্যানেলের ডাউনলিঙ্কের আগে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়া।
০৩. সব ক্যাবল টিভি অপারেটরের ও ফিড সম্প্রচার কার্যক্রম ও সম্প্রচারের মান পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ বেষ্টনীর আওতায় আনা।
০৪. সব ক্যাবল টিভি ও ফিড অপারেটরের গ্রাহক পর্যায়ে সব তথ্য একটি আবেদনপত্রের (সাবস্ক্রাইবার অ্যাপ্লিকেশন ফরম) মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হবে।
০৫. সব ক্যাবল টিভি ও ফিড অপারেটরের মাসিক ভিত্তিতে একটি করে তথ্যবিবরণী দাখিল করতে হবে, যেখানে তাদের গ্রাহক পর্যায়ে তথ্য থাকবে।
০৬. ডিজিটাল ক্যাবল টিভির মান নিয়ন্ত্রণের ও ভিডিও পাইরেসি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কার্যনির্বাহী দল গঠন করতে হবে।
০৭. একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা/কমিশন স্থাপন করতে হবে।
০৮. বাংলাদেশ সরকারের ও বেসরকারি পর্যায়ে ফাইবার অপটিক ক্যাবল ও ভূ-অবকাঠামো স্বল্পমূল্যে ব্যবহারে ব্যবস্থা নেয়া।
০৯. ডিজিটাল ক্যাবল টিভি অবকাঠামোর জন্য এককালীন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ঋণদানে সহায়তা করা এবং দীর্ঘমেয়াদি আয়কর ছাড় দেয়া।
১০. ডিজিটাল ক্যাবল টিভি সেটটপ বক্স আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে আনা।
পরিশেষে কিছু সুপারিশ
ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তি একটি বর্তমান সময়ের চাহিদা। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির অঙ্গনে আমাদের প্রবেশের লক্ষ্যে এই প্রযুক্তির জুরি নেই। এই প্রযুক্তির প্রচলন ও বিকাশে সরকারের আন্তরিক ও উন্মুক্ত সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। এই বিবরণীর মাধ্যমে সরকারের কাছে ডিজিটাল ক্যাবল টিভি প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকের ও সরকারের তথা সারাদেশের জনসাধারণের সার্বিক সেবার মান উন্নয়নের একটি বাস্তবসম্মত তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রযুক্তির এই আশীর্বাদের সুফল মানসম্মতভাবে সবার কাছে সহজলভ্য করতে সরকারের একটি বলিষ্ঠ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা প্রত্যাশিত


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস