• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > পাইরেসি প্রতিরোধে সরকারের সাফল্য চাই
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:৯৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ক্লিপার
তথ্যসূত্র:
নীতিপ্রসঙ্গ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
পাইরেসি প্রতিরোধে সরকারের সাফল্য চাই

শেষ পর্যন্ত সরকারের উপদেষ্টা পর্যায়ে মেধাসম্পদ সংরক্ষণের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বসহকারে আলোচিত হতে শুরু করেছে৷ এর আগে কোনো সরকার মেধাসম্পদ বিষয়ে এমনিভাবে সংশ্লিষ্টদের সাথে সরাসরি কথা বলেনি৷ ধন্যবাদ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীকে৷ কিছুদিন আগে তিনি কপিরাইট বোর্ডের একটি সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন৷ সেখানে তিনি পাইরেসি বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন৷ সেই ধারাবাহিকতায়ই কিছুদিন আগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব কপিরাইট বিষয়ে আরো একটি সভা করেন৷ আরো উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করতে এসে সরকারকে এ বিষয়ে কিছু কড়া কথা বলে গেছেন৷

এসব প্রেক্ষাপট যে কপিরাইট বিষয়টি জরুরিভাবে সরকারের নজরে এনেছে, তাতে কারো কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই৷ সভা অনুষ্ঠানের সাথে এসব কার্যকারণ যুক্ত রয়েছে৷ বলা যায়, গত পহেলা জুলাই ২০০৮ পাইরেসি প্রতিরোধ বিষয়ক অনুষ্ঠিত এ সভার কার্যপত্রে খুব সহজেই এর প্রতিফলন দেখা যায়৷

কার্যপত্রটিতে বলা হয়েছে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং কমপিউটারের প্রসারমান সাফল্যের এযুগে বাংলাদেশে মেধাস্বত্ব তথা কপিরাইট লঙ্ঘন এবং মেধাস্বত্ব কর্মের পাইরেসি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে৷ মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্যে একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ বাংলাদেশ বিভিন্ন চুক্তিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তি/কনভেনশনের কপিরাইট সংক্রান্ত সব শর্ত মেনে চলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ৷ বাংলাদেশে যথাযথভাবে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস বাস্তবায়ন হচ্ছে না বিধায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক International Intellectual Property Allaince (IIPA)-এর স্পেশাল ৩০১ প্রতিবেদবে কালো তালিকাভুক্তকরণের জন্য United States Trade Representative (USTR)-এর কাছে সুপারিশ করে৷ এর প্রেক্ষিতে এ বছরে USTR প্রতিনিধি ঢাকায় এ মন্ত্রণালয়ে সচিবের সাথে সাক্ষাত্কালে মেধাস্বত্ব কর্মের পাইরেসি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সচিবের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন৷

এতে আরো বলা হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপেট এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রণীত কপিরাইট আইন, ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও মেধাস্বত্ব কর্মের পাইরেসি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে৷ কপিরাইট আইনের আওতায় মেধাস্বত্ব কর্ম তথা সাহিত্যকর্ম, নাট্যকর্ম, সংগীতকর্ম, শিল্পকর্ম, চলচ্চিত্র ফিল্ম, স্থাপত্যকর্ম, শব্দ রেকর্ডিং, সম্প্রচার প্রোগ্রাম, কমপিউটার প্রোগ্রাম ইত্যাদি সৃজনশীল কর্মের কপিরাইট লঙ্ঘন এবং পাইরেসির মাধ্যমে অডিও ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, সফটওয়্যারের অনুলিপি ও প্লেট জব্দ করা এবং এর প্রস্তুত, বিক্রিয়, বিতরণ ও সংরক্ষণের সাথে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে আইনের আওতায় সোপর্দ করা দরকার৷ এ লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে গত ২৩ মার্চ ২০০৮ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় র্যা ব-এর সম্পৃক্ততায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করে মেধাস্বত্ব কর্মের পাইরেসি বন্ধকল্পে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ উল্লেখ্য, ট্রেড রিলেটেড আসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস বা TRIPS চুক্তির আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে কিছু শর্তসাপেক্ষে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ তথা কপিরাইট বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা ২০১৩ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু এ দেশের কপিরাইট আইন মোতাবেক কপিরাইট লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ কপিরাইট লঙ্ঘন ও পাইরেসির জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷ এ আইন অনুযায়ী সাব-ইন্সপেক্টরের নিম্নতর পদাধিকারী নন, এমন যেকোনো পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই কপিরাইট লঙ্ঘনজনিত/মেধাস্বত্ব কর্মের সব পাইরেটেড অনুলিপি এবং অনুলিপি তৈরির উদ্দেশ্য ব্যবহৃত সব প্লেট বা যন্ত্রপাতি যেখানেই পাওয়া যায়, তা জব্দ করতে পারেন৷
কপিরাইট আইনের আওতায় মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও মেধাস্বত্ব কর্মের পাইরেসি রোধকল্পে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা নির্দেশনায় এবং সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তক্রমে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র্যা ব, কমপিউটার কাউন্সিল এবং অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও মেধাস্বত্ব পাইরেসি বন্ধকল্পে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে৷ টাস্কফোর্সের কার্যক্রম/অভিযান সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থা, বেসরকারি সংগঠন এবং স্টেক হোল্ডার সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে৷

গঠিত টাস্কফোর্সের কার্যকর অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে কপিরাইট লঙ্ঘন এবং পাইরেসির মাধ্যমে অডিও ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, সফটওয়্যার ইত্যাদির অনুলিপি ও প্লেট জব্দ করা এবং এর প্রস্তুত, বিক্রিয়, বিতরণ ও সংরক্ষণের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় সোপর্দ করবে৷

কপিরাইট আইনের ৯৩ ধারা অনুযায়ী পরোয়ানা ছাড়াই সাব-ইন্সপেক্টরের নিম্নতর পদাধিকারী নন, এমন যেকোনো পুলিশ কর্মকর্তা পাইরেটেড অনুলিপি বা অনুলিপি তৈরিতে ব্যবহৃত সব প্লেট যেখানেই পাওয়া যাক জব্দ করার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করবে৷

সাধারণের মাঝে কপিরাইট সচেতনতা বাড়ানো লক্ষ্যে সংবাদপত্র, বেতার এবং টেলিভিশনে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচারণাসহ অন্যভাবে ব্যাপক প্রচারণার কার্যক্রম নেবে৷

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহ এবং সুশীল সমাজের মাঝে কার্যকর অবদান রাখার লক্ষ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে নিয়মিত সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করবে৷

কপিরাইট অফিসে দক্ষ ও উপযুক্ত জনবল কাঠামো সৃষ্টি ও নিয়োগ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশে-বিদেশে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করে অফিসটিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শক্তিশালী অফিসে রূপান্তর করা হবে৷

কপিরাইট আইনের ৪১ ধারার বিধানমতে কপিরাইট সংক্রান্ত প্রত্যেক খাতের জন্য একটি করে সোসাইটি গঠন করা হবে৷কপিরাইট সংক্রান্ত দ্রব্যাদি আমদানি-রফতানীর ক্ষেত্র এতদসংক্রান্ত আইনানুগ বিষয়াদি যথাযথভাবে প্রতিপালনের বিষয়টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শুল্ক বিভাগ একটি ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস সেল গঠন করবে৷

পাইরেসি প্রতিরোধের জন্য আয়োজিত সভার এই কার্যপত্র পাঠ করে আমার মনে হয়েছে, সরকার শুধু আমেরিকার চাপটিই অনুভব করেছে৷ সেই চাপের প্রকাশটিই ঘটেছে সরকারের একটি এন্টিপাইরেসি টাস্কফোর্স গঠনের মধ্য দিয়ে ৷

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত টাস্কফোর্সের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে৷ এতে আরো বলা হয়, এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে৷ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুনিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কপিরাইট পরিস্থিতির ‌উন্নয়নে একটি মাইলফলক কাজ হলো৷

আমার বক্তব্য হচ্ছে, কেবল আমেরিকার সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখা বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি মেনে চলা নয়, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করা বা পাইরেসি রোধ করার অন্যতম ও মূল কারণ হচ্ছে দেশীয় মেধাসম্পদ সংরক্ষণ, গবেষণা ও মৌলিক আবিষ্কারের বিকাশ এবং সফটওয়্যার ও আইটি সেবা খাতকে সমৃদ্ধ করা৷ যারা মনে করেন, পাইরেসি রোধ করলে অ্যাডোবি-মাইক্রোসফটই উপকৃত হবে, তারা এটি অনুভব করেন না, বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার কপি হলে কার্যত তাদের কোনো ক্ষতিই হবে না৷ কারণ, এটি তাদের প্রধান বাজার নয়৷ বরং বাংলাদেশে আমরা যারা মেধাসম্পদ সৃষ্টি করি, তারা যদি পাইরেসির হাত থেকে মুক্তি না পাই, তবে এদেশে সব সৃজনশীলতা স্তব্ধ হয়ে যাবে৷ সেজন্যই এন্টিপাইরেসি টাস্কফোর্সের সাফল্য চাই৷

কজ ওয়েব


ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - জুলাই সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস