লিল্যান্ড নাম্বার
যেকোনো দুটো সংখ্যা নিই৷ সংখ্যা দুইটি ধরা যাক ২ এবং ৩৷ এ দুটি সংখ্যা ব্যবহার করে আমরা দুটি সংখ্যা প্রকাশ করতে পারি এভাবে ২৩ এবং ৩২ এবং এদের সমষ্টি সংখ্যা ২৩ + ৩২ = ৮ + ৯ = ১৭৷ এখানে ২ ও ৩ দিয়ে শুরু করে নতুন দুটি সংখ্যা তৈরি করে এদের সমষ্টি হিসেবে পাওয়া ১৭ সংখ্যাটির নাম Leyland Number৷
এবার দেখা যাক ২ আর ৯ নিয়ে শুরু করে লিল্যান্ড সংখ্যাটি কী হয়? আগের দেয়া উদাহরণটি যদি বুঝে থাকি তবে নিশ্চয়ই সহজেই ধরতে পারবো ২ ও ৯ দিয়ে তৈরি করা লিল্যান্ড সংখ্যাটি হবে ২৯ + ৯২ = ৫১২ + ৮১ = ৫৯৩৷ ঠিক একইভাবে ১৫ আর ৩২ দিয়ে তৈরি লিল্যান্ড নাম্বার হবে ১৫৩২ + ৩২১৫ = ৪৩১৪৩৯৮৮৩২৭৩৯৮৯৫৭২৭৯৩৪২৪১৯৭৫০৩৭৪৬০০১৯৩৷
গণিতে সংখ্যাতত্ত্বে এ লিল্যান্ড সংখ্যার একটা সাধারণ সংখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এভাবে : লিল্যান্ড সংখ্যা হচ্ছে yx + xy আকারের একটি সংখ্যা যেখানে x ও y স্বাভাবিক সংখ্যা, x ও y-এর মান সমান কিংবা একটি অপরটির চেয়ে ছোট কিংবা বড়ও হতে পারে, তবে x ও y-এর মান সব সময় ১-এর চেয়ে বড় হবে অবশ্যই৷
সংজ্ঞায় দেয়া যে আকারের লিল্যান্ড সংখ্যার কথা বলা হয়েছে, তেমনি কয়েকটি লিল্যান্ড সংখ্যা এখানে তুলে ধরা হলো :
২৩ + ৩২ = ১৭
২৯ + ৯২ = ৫৯৩
২১৫ + ১৫২ = ৩২৯৯৩
২২১ + ২১২ = ২০৯৭৫৯৩
২৩৩ + ৩৩২ = ৮৫৮৯৯৩৫৬৮১
৫২৪ + ২৪৫ = ৫৯৬০৪৬৪৪৭৮৩৩৫৩২৪৯
৩৫৬ + ৫৬৩ = ৫২৩৩৪৭৬৩৩০২৭৩৬০৫৩৭২১৩৬৮৭১৩৭
১৫৩২ + ৩২১৫ = ৪৩১৪৩৯৮৮৩২৭৩৯৮৯৫৭২৭৯৩৪২৪১৯৭৫০৩৭৪৬০০১৯৩
২০০৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেখা গেছে ২৬৩৮৪৪০৫ + ৪৪০৫২৬৩৮ সংখ্যাটি হচ্ছে প্রমাণিত বৃত্ততম মৌলিক লিল্যান্ড সংখ্যা৷ সম্ভবত এরচেয়েও বড় মৌলিক লিল্যান্ড সংখ্যা থাকতে পারে তবে সেটি যে মৌলিক তা প্রমাণ করা কঠিন কাজ৷ Paul Leyland সম্প্রতি তার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, অতি সম্প্রতি উপলব্ধি করা গেছে, প্রাইমালিটি প্রুভিং প্রোগ্রাম অর্থাৎ মৌলিক সংখ্যা প্রমাণের কর্মসূচি হিসেবে এ আকারের সংখ্যা একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র৷
জন্মদিন নিয়ে ভাবনা
আপনার সবচেয়ে কাছের এক বন্ধুর কথা ভাবুন৷ নিশ্চয় আপনার একটি জন্মদিন আছে, তেমনি বন্ধুটির আছে একটি নির্দিষ্ট জন্মদিন৷ হতে পারে দুজনের জন্মদিন একই৷ আবার দুজনের জন্মদিন হতে পারে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি দিনে৷ এ দুজনের জন্মদিন এক হওয়ার সম্ভাবনার চেয়ে ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি৷ স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে, দুজনের জন্মদিন একই দিনে হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? আর ভিন্ন ভিন্ন দিনে হওয়ার সম্ভাবনাই বা কতটুকু? গণিতে এ ধরনের নানা সম্ভাবনা নিয়ে একটি শাখায় কাজ করা হয়৷ এর নাম প্রবাবিলিটি৷ যাই হোক, গণিত বলে, উপরেও উল্লিখিত দুই বন্ধুর জন্মদিন এক হওয়ার সম্ভাবনা বা প্রবাবিলিটি ৩৬৫ ভাগের ১ ভাগ, আর ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ৩৬৫ ভাগের ৩৬৪ ভাগ৷ এখন এদের সাথে যদি তৃতীয় আরেক বন্ধুর জন্মদিনের বিষয়টি যোগ করে ভাবা হয়, তবে এ তিনজনের জন্মদিন একই দিনে হওয়া ও ভিন্ন দিনে হওয়ার বিবেচনাটি মাথায় আসে৷ তখন আপনার নিজের জন্মদিন এই দুই বন্ধুর জন্মদিন থেকে ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ ভাগ৷ চারজনের বেলায় জন্মদিন ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ ৩৬২/৩৬৫ ভাগ৷
এভাবে লোকের সংখ্যা বাড়ালে জন্মদিন একই দিনে না হওয়ার সম্ভাবনার হিসেবের একটা প্যাটার্ন পেতে পারি এরূপ :
০২ জন : ৩৬৪/৩৬৫ = ০.৯৯৭২৬ শতাংশ৷
০৩ জন : ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ = ০.৯৯১৮০ শতাংশ৷
০৪ জন : ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ ৩৬২/৩৬৫ = ০.৯৮৩৬৮ শতাংশ৷
০৫ জন : ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ ৩৬২/৩৬৫ ৩৬১/৩৬৫ = ০.৯৭২৮৬ শতাংশ৷
০৬ জন : ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ ৩৬২/৩৬৫ ৩৬১/৩৬৫ ৩৬০/৩৬৫ = ০.৯৫৯৫৪ শতাংশ৷
০৭ জন : ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ ৩৬২/৩৬৫ ৩৬১/৩৬৫ ৩৬০/৩৬৫ ৩৫৯/৩৬৫ = ০.৯৪৩৭৬ শতাংশ৷
০৮ জন : ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ ৩৬২/৩৬৫ ৩৬১/৩৬৫ ৩৬০/৩৬৫ ৩৫৯/৩৬৫ ৩৫৮/৩৬৫ = ০.৯২৫৬৬ শতাংশ৷
০৯ জন : ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ ৩৬২/৩৬৫ ৩৬১/৩৬৫ ৩৬০/৩৬৫ ৩৫৯/৩৬৫ ৩৫৮/৩৬৫ ৩৫৭/৩৬৫ = ০.৯০৫৩৮ শতাংশ৷
১০ জন : ৩৬৪/৩৬৫ ৩৬৩/৩৬৫ ৩৬২/৩৬৫ ৩৬১/৩৬৫ ৩৬০/৩৬৫ ৩৫৯/৩৬৫ ৩৫৮/৩৬৫ ৩৫৭/৩৬৫ ৩৫৬/৩৬৫ = ০.৮৮৩০৫ শতাংশ৷
এভাবে এ প্যাটার্নটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলে দেখা যাবে, যত বেশি লোকের সংখ্যা বাড়ানো হবে, জন্মদিন ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনার মাত্রাও দ্রুত থেকে দ্রুততর কমে আসবে৷ যখন আমরা ২৩ জনের জন্মদিন নিয়ে ভাববো তখন সবার জন্মদিন আলাদা আলাদা হওয়ার সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটিতে নেমে আসবে৷ আর লোকের সংখ্যা ৪১ পর্যন্ত বাড়ালে ভিন্ন ভিন্ন দিনে জন্মদিন হওয়ার সম্ভাবনা ১০ ভাগের ১ ভাগের নিচে নেমে আসবে৷ আর যদি ৫০ জনের একদল মানুষের জন্মদিনের কথা ভাবা হয় তবে ৩০ ভাগের ১ ভাগে নেমে আসবে৷ অতএব এক্ষেত্রে জন্মদিন এক না হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বাজি ধরার কাজে নেমে পড়তে পারেন আপনি৷ কারণ বিষয়টি এমন তা অনেকের ভাবনায়ই নেই৷
সবশেষে আরেকটি প্রশ্ন৷ আমরা যদি ১০০ জনের একদল মানুষের জন্মদিনের কথা ভাবি তবে সবার জন্মদিন ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নেমে আসবে ০.০০০০৩ শতাংশে৷ অর্থাৎ ১ কোটিতে মাত্র ৩ ভাগ সম্ভাবনা থাকবে এই ১০০ জনের জন্মদিন ভিন্ন ভিন্ন দিনে হওয়ার৷
গণিতদাদু
..................................................................................
বলুন তো কার ছবি : ২৮
তিনি ভারতের একজন মেধাবী গণিতবিদ৷ হিসাব-নিকাশে দক্ষ এক ক্যালকুলেটিং প্রডিজি৷ কোনো যন্ত্র ছাড়াই তিনি জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানে দক্ষ বলে তাকে ডাকা হয় হিউম্যান কমপিউটার বলে৷ তার জন্ম ১৯৩৯ সালের ৪ নভেম্বর ভারতের ব্যাঙ্গালোরে৷ তার বাবা ছিলেন সার্কাস শিল্পী৷ তার বাবাই তাকে গণিত শেখার জগতে নিয়ে যান তাসের খেলার চাতুর্যের মধ্য দিয়ে৷ তার ছিল অসাধারণ স্মরণ ক্ষমতা৷ তিন বছরের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে তোলেন সংখ্যার সাথে৷ সময়ের সাথে তার ক্যালকুলেটিং ক্ষমতা বেড়েই চলে৷ এক সময় জটিল মানসাঙ্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন৷ তার অসাধারণ দক্ষতার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে৷ তিনি তার এ ক্ষমতাবলে ছাত্র-শিক্ষকদের বিমোহিত করতে পারেন৷ তার প্রদর্শনীতে ট্রুম্যান হেনাধর মতো অন্যান্য ক্যালকুলেটিং প্রডিজিরাও উপস্থিত থেকেছেন৷ তিনি দ্রুত যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগসহ বর্গমূল, ঘনমূল ও অন্যান্য জটিল অ্যালগরিদম সমাধানে সক্ষম৷ যেমন ১৯৭৭ সালে ডালাসের সাউদার্ন মেথোডিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৫ সেকেন্ডে ২০১-এর ২৩তম মূল বের করতে সক্ষম হন৷ বলুন তো কে এই গণিতবিদ৷
..................................................................................
গত সংখ্যার ছবি : ২৭-এর উত্তর
গত সংখ্যার ছবিটি ছিল গণিতবিদ মিনা স্পাইজেল রেস-এর৷ সঠিক উত্তরদাতার নাম তাহসিন, প্র: মো: আ: ছালাম খান, প্লট-৫০২, ব্লক-সি, খিলগাঁও আবাসিক এলাকা ঢাকা-১২১৯৷
আপনার ঠিকানায় এ সংখ্যা থেকে শুরু করে আগামী ৬ মাস বিনামূল্যে কমপিউটার জগৎ পৌঁছে যাবে৷