গত কয়েক বছর ধরে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি, ফরমেট এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অপটিক্যাল মিডিয়ার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে৷ এইচডি-ডিভিডির আবির্ভাবের সাথে সাথে স্টোরেজ মিডিয়ার পরবর্তী প্রজন্মের সূচনা ঘটে, যা এইচডি কনটেন্ট ডেলিভারিতে সক্ষম৷ ডিভিডি মিডিয়ার চেয়ে এইচডি-ডিভিডির স্টোরেজ ক্যাপাসিটি অনেক বেশি হলেও এর স্থায়িত্ব খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি৷ বলা যায়, অনেকটা হঠাৎ হাই-ডেফিনেশনের বাজার চলে যায় ব্লু-রে ডিস্কের দখলে৷ মূলত অপটিক্যাল মিডিয়ার উত্তরসূরি ব্লু-রে ডিস্কের আগমনের সাথে সাথে অবসান ঘটে এইচডি-ডিভিডির যুগের, যা খুব বেশি দিনের পুরনো ঘটনা নয়৷ এইচডি-ডিভিডি যুগের অবসান সুস্পষ্ট হয়ে যায় ২০০৮-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি তোশিবা প্রধান আতশুতোশি নিশাদার চূড়ান্ত ঘোষণার মাধ্যমে। তিনি বলেন, বাজার পর্র্যালোচনার ভিত্তিতে আমরা এইচডি-ডিভিডি প্লেয়ার রেকর্ডার ও পিসি ড্রাইভার আর তৈরি বা বাজারজাত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ আমরা আমাদের কোম্পানিকে ও ক্রেতাদেরকে হতাশ করেছি৷ কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ ধরনের জোরালো সিদ্ধান্ত আমাদের বাজার উন্নয়নে সহায়তা করবে৷
ব্লু-রে ডিস্ক
ব্লু-রে ডিস্ক হলো অপটিক্যাল ডিস্ক স্টোরেজ মিডিয়া, যা সংক্ষেপে ব্লু-রে বা বিডি নামে পরিচিত৷ ডিভিডি বা সিডির মতো ব্লু-রে ডিস্কের রয়েছে একই স্ট্যান্ডার্ড ডাইমেনশন৷ এর প্রধান কাজ হচ্ছে হাই-ডেফিনেশন ভিডিও ও ডাটা স্টোর করা৷
ব্লু-রে ডিস্ক-এর নামটি আসে ব্লু-লেজার (ভায়োলেট রঙ)-এর ব্যবহার থেকে, যা এ ধরনের ডিস্কের ডাটা রিড ও রাইট করে৷ এটি হলো আগামী প্রজন্মের অপটিক্যাল ডিস্ক ফরমেট, যা যৌথভাবে ডেভেলপ করে ব্লু-রে ডিস্ক অ্যাসোসিয়েশন, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কনজ্যুমার ইলেক্ট্রনিক্স গ্রুপ, পার্সোনাল কমপিউটার ও মিডিয়া ম্যানুফ্যাকচারার যেমন এপলসহ ডেল, হিটাচি, এইচপি, জেভিসি, এলজি, প্যানাসনিক, পাইওনিয়ার, ফিলিপস, স্যামসাং, শার্প, সনি, টিডিকে এবং থমসন৷ এ ফরমেটটি ডেভেলপ করা হয়, যাতে এটি রেকর্ডিং, রিরাইটিং এবং হাই-ডেফিনেশন ভিডিও প্লে-ব্যাকে যেমন সক্ষম হবে, তেমনি বিপুল পরিমাণে ডাটা স্টোরিংয়ে সক্ষম হবে৷ এই ফরমেট অফার করে গতানুগতিক ডিভিডির স্টোরেজ ক্ষমতার চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্ষমতা এবং ধারণ করতে পারে সিঙ্গেল লেয়ার ২৫ গি.বা. এবং ডুয়াল লেয়ার ৫০ গি.বা৷
ইদানীংকার অপটিক্যাল ডিস্ক টেকনোলজি যেমন DVD, DVD±R, DVD±RW এবং ডিভিডি-র্যা ম নির্ভর করে লাল লেজারের ওপর, যা ডাটা রিড ও রাইট করে৷ পক্ষান্তরে ব্লু-রে ফরমেট ব্যবহার করে ব্লু-রে ভায়োলেট লেজার, যার কারণে বলা হয় ব্লু-রে৷ যদিও এতে ভিন্ন ধরনের লেজার ব্যবহার করা হয়েছে তথাপি ব্লু-রে পণ্য খুব সহজেই সিডি এবং ডিভিডির সাথে ব্যাকওয়ার্ড কম্পাটিবল৷ ব্লু-রে ডিস্ক ব্লু-রে ভায়োলেট লেজার যা ডাটা রিড ও রাইট করার জন্য ৪০৫ এনএম (ন্যানোমিটার) অপারেটিং ওয়েবেলংথ ব্যবহার করে৷ পক্ষান্তরে গতানুগতিক ডিভিডি ও সিডি ডাটা রিড করার জন্য ব্যবহার করে লাল ও প্রায় ইনফ্রারেড লেজার, যার ওয়েবেলংথ যথাক্রমে ৬৫০ ও ৭৮০ এনএম৷ এ কারণে ব্লু-রে ডিস্কে ডাটা আরো সুদৃঢ়ভাবে প্যাক ও স্টোর হয় ক্ষুদ্রতর স্পেসে৷ ফলে ডিস্কে আরো অনেক বেশি ডাটা স্টোর করা সম্ভব হয় যদিও এর সাইজ সিডি/ডিভিডির সমান৷
বিভিন্ন মিডিয়ার স্টোরেজ ক্যাপাসিটির তুলনামূলক পার্থক্য
মিডিয়া সিঙ্গেল লেয়ার ডুয়াল লেয়ার
সিডি ৭০০ মে.বা. প্রযোজ্য নয়
ডিভিডি ৪.৭ গি.বা. ৮.৪ গি.বা.
এইচডি-ডিভিডি ১৫ গি.বা. ৩০ গি.বা.
ব্লু-রে ২৫ গি.বা. ৫০ গি.বা.
ব্লু-রে বনাম ডিভিডি
ব্লু-রে ডিস্ক প্রসঙ্গে বলতে গেলে দুটি বিষয় আমাদের স্বাভাবিক বিবেচনায় আসে৷ আর তাহলো হাই-ডেফিনেশন কনটেন্ট এবং স্টোরেজ ক্যাপাসিটি৷ ব্লু-রে-এর স্টোরেজ ক্ষমতা ৫০ গি.বা. উন্নীত হলেও এটি পুনঃউত্পাদন করতে পারে এইচডি মুভি, যার রেজ্যুলেশন ১৯২০X১০৮০ পিক্সেল পর্যন্ত এবং ব্যান্ডউইডথ ৪০ মে.বিট/সে.৷ এক্ষেত্রে ডিভিডির ক্ষমতা ৪.৭ গি.বা. এবং ভিডিও প্রদান করতে পারে ৭২০X৫৭৬ পিক্সেল, যার ব্যান্ডউইডথ ১০ মে.বিট/সে.৷ ব্লু-রে-এর অন্যতম একটি ফাংশন হলো চওচ বা পিকচার-ইন-পিকচার এবং এনহ্যান্স মেনু৷ এছাড়া ভিডিওর ক্ষেত্রে সাউন্ড হয় লসলেস ও আরো অনেক উন্নত৷
ব্লু-ভায়োলেট লেজার ওয়েবেলংথকে আরো ক্ষুদ্রতর করায় ১২ সে.মি. সিডি/ডিভিডতে অনেক বেশি ডাটা স্টোর করা সম্ভব হয়েছে৷ লেজার যেভাবে ফোকাস হবে তার ন্যুনতম স্পটসাইজকে সীমিত করা হয়েছে আলোকরশ্মিকে বর্ণালি রূপে বিচ্ছুরিত করার মাধ্যমে এবং আলোর ওয়েবেলংথের ওপর ভিত্তি করে ও লেন্সের নিউমেরিক্যাল অ্যাপারচার ব্যবহার করে এতে ফোকাস করা হয়৷ ওয়েবেলংথ কমানোর মাধ্যমে নিউমেরিক্যাল অ্যাপারচারকে ০.৬০ থেকে ০.৮৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয় এবং তৈরি করা হয় অতি পাতলা লেয়ার যাতে করে অনাকাঙ্ক্ষিত অপটিক্যাল এফেক্টকে এড়ানো যায়৷ এতে লেজার বীমকে ক্ষুদ্রতম স্পটে ফোকাস করা যায়৷ এ কারণে একই পরিমাণ ক্ষুদ্রতম স্পেসে অনেক বেশি তথ্য স্টোর করা সম্ভব হয়৷ ব্লু-রে ডিস্কের এই স্পট সাইজ ৫৮০ এনএম৷
বর্তমানে আমরা সবাই মুভি উপভোগ করার জন্য ডিভিডি ব্যবহার করি, যা আমাদের সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আছে৷ ডিভিডি উপভোগ করার জন্য দরকার ৭২০X৫৭৬ রেজ্যুলেশনের স্ক্রিন অথবা টিভি, যাতে করে মুভি যথার্থভাবে উপভোগ করা যায়৷ পক্ষান্তরে ব্লু-রে-এর জন্য দরকার ন্যুনতম ২৪ ইঞ্চি মনিটর অথবা টিভি, যা সাপোর্ট করে সম্পূর্ণ এইচডি কনটেন্ট৷ শুধু তাই নয়, ব্লু-রে মুভি উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে টিভিও বদলাতে হতে পারে৷
বর্তমানে বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় কনজ্যুমার ইলেক্ট্রনিক্স, পার্সোনাল কমপিউটার, রেকর্ডিং মিডিয়া, ভিডিও গেম ও মিউজিক কোম্পানি ব্লু-রে ডিস্ক সাপোর্ট করছে৷ বর্তমানে প্রধান প্রধান শীর্ষস্থানীয় মুভি স্টুডিওগুলো এই ফরমেটকে সাপোর্ট করছে৷ বস্তুত বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় ৮টি মুভি স্টুডিও-এর মধ্যে ৭টি মুভি স্টুডিও যেমন- ডিজনি, ফক্স, ওয়ার্নার, প্যারামাউন্ট, সনি, লায়নগেট ও এমজিএম তাদের ইদানীংকার মুভি ব্লু-রে ফরমেটে প্রকাশ করছে৷ এদের মধ্যে ডিজনি, ফক্স, সনি, ওয়ার্নার, লায়নগেট ও এমজিএম প্রভৃতি মুভি স্টুডিও এক্সক্লুসিভলি ব্লু-রে ফরমেটে তাদের ছবি রিলিজ করছে৷ এছাড়া অন্য মুভি স্টুডিওগুলোও তাদের নতুন ছবিগুলো ব্লু-রে ফরমেটে রিলিজ করার কথা ভাবছে বা আশা ব্যক্ত করেছে৷
ব্লু-রে ডিস্কের ব্যাপক ডাটা স্টোরিং ক্ষমতাসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্য এবং বিশ্বখ্যাত মুভি স্টুডিওগুলোর এ ফরমেট সাপোর্টের প্রবণতাই বলে দেয়, স্টোরেজ মিডিয়া হিসেবে ব্লু-রে ডিস্ক হবে আগামী দিনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম৷
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com