• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > তথ্যপ্রযুক্তির আজকাল
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
তথ্যপ্রযুক্তির আজকাল
এক বছর হলো দেশের সফটওয়্যার ও সেবা খাতের একমাত্র বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতির দায়িত্ব পার করলাম। ১৫ জুলাই ছিল এর বর্ষপূর্তি। আমার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কোনো বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেয়া একদমই নতুন নয়। সেই ’৯২ সালে প্রথম বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সাথে যুক্ত হই। প্রথমে সাধারণ নির্বাহী সদস্য ও পরে কোষাধ্যক্ষ্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর’৯৬ সালে প্রথম সেই সমিতির সভাপতি হই। সেই সময়ে ’৯৭ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলাম। একনাগাড়ে ছয় বছর ছিলাম বলে সেবার প্রার্থী হতে পারিনি। এরপর লম্বা বিরতি দিয়ে ২০০৮, ০৯, ১০, ১১, ১২ ধারাবাহিকভাবে ও এক বছর বিরতির পরএপ্রিল ’১৩-মার্চ ’১৪ সময়কালে আবার সেই সমিতির সভাপতি ছিলাম। ২০০৩-০৪ সালে একই সাথে বেসিস-বিসিএসের পরিচালক ছিলাম। বিসিএস সভাপতি হিসেবে সেই সময়ে যে অভিজ্ঞতা পেয়েছিলাম, তাতে প্রচুর চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ এই শিল্প সফলতার সাথে মোকাবেলা করে।’৯৭ সালে জেআরসি কমিটির রিপোর্ট পেশ, ৪৫টি সুপারিশ প্রদান ও ২৮টি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এই শিল্প তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে।’৯৮-৯৯ সালে কমপিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহারের পর এই শিল্প অসাধারণ গতিতে সামনে পা বাড়ায়। তখনই কপিরাইট আইন, তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা ইত্যাদির সাথে যুক্ত হই। বেসিস গঠিত হয় জেআরসি কমিটির সুপারিশ অনুসারে’৯৭ সালে। ঘটনাচক্রে এই ঘটনাগুলোর আবর্তনের কেন্দ্রে ছিলাম আমি।২০০১ থেকে ২০০৮ সময়কালটা তথ্যপ্রযুক্তির জন্য প্রচ- মন্দায় গেলেও বেসরকারি খাত তাকেও দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করেছে। ২০০৮ সালে স্কুল-কলেজে বাধ্যতামূলকভাবে তথ্যপ্রযুক্তিকে একটি বিষয় হিসেবে পাঠ্য করার জন্য সুপারিশ করার কাজটি কঠোর হলেও সেটির সূচনা করা সম্ভব হয়, যা ২০১১ সাল থেকে বাস্তবায়িত হতে থাকে। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করার পর ’০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার এই খাতকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। যেহেতু এই সময়েও বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সাথে প্রায় ৬ বছর যুক্ত ছিলাম, সেহেতু সরকারের সর্বাত্মক সহায়তার বিষয়টি আমার নজরে পড়েছে। বস্ত্তত ’১৭ সালের বাংলাদেশ ডিজিটাল রূপান্তরের অসাধারণ অগ্রগতির দেশ।
মজার বিষয়, এক বছর আগে বেসিসের সভাপতি হওয়ার পর অনুভব করলাম, সময়টি আগের মতো নেই। বিসিএসের কাজ ছিল কমদামে দেশে কমপিউটার আনা ও জনগণকে কমপিউটারের বিষয়ে সচেতন করা। বেসিসের পরিধিটা একেবারেই ভিন্ন। এমনকি জন্মের সময় আমরা যে বেসিসকে যে কাজের জন্য গড়ে তুলব বলে মনে করেছিলাম, এখন আর সেই অবস্থাটি বিরাজ করে না।
বেসিসের জন্মের সময় ১৯৯৮-৯৯ সালে সহ-সভাপতি এবং ২০০৩-০৪ সালে পরিচালক থাকার পর এবার ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি নতুন চিত্র দেখতে পাচ্ছি। ১৪ জুলাই ’১৭ পর্যন্ত এই কমিটির এক-তৃতীয়াংশের মেয়াদ থাকার কথা ছিল। তবে ডিটিওর নির্দেশনা অনুসারে নির্বাহী কমিটির মেয়াদ দুই বছর করার ফলে এই মেয়াদ ৫ মাস বাড়তে পারে বা এক বছর বাড়তে পারে এবং সর্বোচ্চ ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই শেষ হতে পারে। হিসেব করলে তথ্যপ্রযুক্তির বাণিজ্য সংগঠনের এই পথচলা ছোট বা সংক্ষক্ষপ্ত নয়। নিজেকে যদি এই কথাটি বলে বোঝাতে চাই, কেমন মনে হচ্ছে নতুন দায়িত্ব পেয়ে, তবে এটি মনে হতেই পারে যে, চ্যালেঞ্জটি মোটেই কম নয়। সেই ’৮৭ সালে এই জগতে প্রবেশ করে শুধু স্রোতের বিপক্ষেই চলতে থেকেছি। মানুষ যখন কমপিউটারকে বাইনারি যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরেছে, আমি তখন সেটাকে প্রকাশনার যন্ত্র বানিয়েছি-ছবি অাঁকার যন্ত্র বানিয়েছি। আমার এসব কাজের খেসারতও আমাকে দিতে হয়েছে। বহু বছর আমি কমপিউটার বিক্রেতার সম্মানও পাইনি। আমাকে বলা হতো মুদ্রণ যন্ত্র বিক্রেতা। তখন থেকেই সফটওয়্যার বানিয়েছি, কিন্তু সফটওয়্যার নির্মাতার মর্যাদা এখনও পাইনি। এখনও এমন ধারণা বিরাজ করে যে, সফটওয়্যার বিক্রি করা একটি মহাঅপরাধ। মেধাজাত সম্পদ তৈরি করাও যেন বিশাল অপরাধ। সবাইকে সব ফ্রি দিতে হবে এবং নিজের মেধাসম্পদ অন্যকে ছেড়ে দিতে হবে। আমি আমার কপিরাইট ও প্যাটেন্ট করা সফটওয়্যার নিজের দাবি করলে আমাকে কুৎসিতভাবে বিভিন্ন গালি দেয়া হয়। নোংরা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়া হয়। আর আমার মেধাসম্পদযারা চুরি করে, তারা নায়কে পরিণত হয়। তবুও দেশের প্রথম কমপিউটার মেলা, প্রথম রফতানি টাস্কফোর্স, শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত আন্দোলন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সম্প্রচার-অনলাইন নীতিমালাসমূহ ও কপিরাইট আইন,ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সম্প্রচার আইনসহ বিভিন্ন আইন প্রণয়নসহ এমন কোনো মুহূর্ত যায়নি যাতে নিজে সরাসরি যুক্ত হইনি। লক্ষ করেছি, এক সময়ে কমপিউটার বিজ্ঞানীরা যখন এটাকে প্রোগ্রামিংয়ের যন্ত্র বানাতে চেয়েছেন, আমি তখন সেটিকে সৃজনশীলতার যন্ত্র বানিয়েছি। এরপর বাণিজ্য সংগঠনের হাত ধরে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে এলাম। বিসিএস ও বেসিস এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফরম হিসেবে কাজে লেগেছে। যদি এসব সংগঠনের জন্ম না হতো, তবে কমপিউটার এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার ল্যাবেই আবদ্ধ থাকত। এখন সেটি দেশের প্রতিটি নাগরিককে স্পর্শ করছে। এমন একটি অবস্থায় মোট ৯ জন পরিচালককে নির্বাচিত করে বেসিস সদস্যরা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম প্রধান এই সংগঠনটির মাধ্যমে শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথাই ভাবছেনা, ভাবছে ’৪১ সালের জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথাও। এই এক বছরে বেসিস নিয়ে যে কাজগুলো আমাকে করতে হয়েছে, তার সংক্ষক্ষপ্ত বিবরণ হলো-০১. রাষ্ট্রভাষা বাংলায় বেসিসের যাবতীয় যোগাযোগ করা।০২. জাতির জনক ও সরকার প্রধানকে বেসিসের সম্মানের জায়গায় স্থাপন করা।০৩. বেসিস শুধু ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা করে তেমন একটি ধারণাকে বদলানো।০৪. বেসিসের নিজস্ব আয়োজন যেমন সফটএক্সপো সফলভাবে সম্পন্ন করা।০৫. বেসিস সদস্যদেরকে স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে সক্রিয় করা। ২৪টি স্থায়ী কমিটির সহায়তায় সেই কাজটি সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে।০৬. সরকারের সাথে বেসিসের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করা। এর মাঝে ছিল বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সমস্যা, কর ও ভ্যাট বিষয়ক সমস্যা এবং নানা খাতে নানা ধরনের সঙ্কটে পতিত সদস্যদেরকে সহায়তা করা। এই সময়ে সরকারের সাথে চলমান কাজগুলো করার পাশাপাশি যেটি সবচেয়ে বড় অর্জন, সেটি হচ্ছে রফতানিতে শতকরা ১০ ভাগ নগদ সহায়তা পাওয়া।০৭. বেসিসের সংঘবিধি সংশোধন ও সেই আলোকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও সচল করা। ০৮. বেসিসের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে গতিশীল করা ও এর দ্বিতীয় স্তরটিকে আরও সুবিন্যস্ত করা। ০৯. সরকারের আইন ও নীতিসমূহ হালনাগাদ করার পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে সহায়তা করা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করা। ১০. একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেসিসের ইনকিউবেটর নামের প্রতিষ্ঠানটি যাকে এসটিপি-১ বলা হয়, তার ৫ কোটি টাকার বকেয়া ভাড়া আদায় করা। সুদসহ এটি ২০১১ সাল থেকে বহমান হয়ে ৯ কোটি অতিক্রম করেছে। ১১. এই এক বছরেই বেসিস সদস্যদের আগের সুবিধাগুলোর সাথে বহুমুখী সুযোগের সদস্য কার্ড, ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড, বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণ সুবিধাসহ বেসিস সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়। ১২.এর বাইরে সরকারি-বেসরকারি ইভেন্টগুলোতে অংশ নেয়া, অ্যাপিক্টা, জাপান আইটি উইক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহে যুক্ত থাকা ও বেসিসের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়গুলো ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমরা এবারের নারী দিবসে মেয়েদের নিয়ে একটি অনন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। চট্টগ্রামের রিকশাচালিকা জাহানারাকে সম্মানিত করা একটি বড় মাইলফলক। ২৪টি স্থায়ী কমিটিকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে দেখা একটি বড় পাওনা বলেই আমার মনে হয়েছে।
অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের দেশটিও সামনে চলার পথে নানা স্তরের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।যেভাবে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সামনের দিকে পা বাড়াচ্ছে, তাতে এখনই মূল্যায়ন করার সময়, এই খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী? বিষয়গুলো এত ব্যাপক যে, প্রতিটি প্রসঙ্গ নিয়ে অনেক বড় করে একটি থিসিস লেখা যায়। কিন্তু আমি বিষয়গুলোকে একটি ছোট প্রেক্ষক্ষতে ক্যাপসুল আকারে পরিবেশন করছি।
সবাই জানেন, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংস্থাটি ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স। এর সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটির পূর্বপুরুষকে তিনি তার প্রথম শাসনকালে গড়ে তুলেছিলেন। এই আমলে তার নাম বদলেছে। এই টাস্কফোর্সের একটি সহায়ক কমিটি আছে, সেটির নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স নির্বাহী কমিটি। এটিও উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। কারণ, এর সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে বিশেষত আমত্মঃমন্ত্রণালয় বিষয়ক জটলা ছাড়াতে এর চেয়ে শক্তিশালী সংস্থা আর হতে পারেনা। আমরা এই টাস্কফোর্সের সভা চাই। খুব সঙ্গতকারণেই এই গুরুত্বপূর্ণ টাস্কফোর্সের সভায় আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আমত্মঃমন্ত্রণালয়ের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
আমাদের সবারই মনে থাকার কথা, ৬ আগস্ট ২০১৫ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় গৃহীত সিদ্ধামেত্মর প্রেক্ষক্ষতে পরবর্তী সময় ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ এবং ২৭ মার্চ ২০১৭ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: আবুল কালাম আজাদ ও কামাল আবদুল নাসেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুটি সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। উক্ত তিনটি সভায় গৃহীত সিদ্ধামেত্মর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং এতদবিষয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের পরবর্তী সভা আহবান করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। উলিস্নখিত বিষয়গুলো একাধিক বা ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে যুক্ত বিধায় ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের মূল কমিটির সভায় এই বিষয়গুলো আলোচিত হতে পারে। যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হতে পারে, সেগুলো নিমণরূপ-
ক. মেধাস্বত্ব: ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে মেধাস্বত্ব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেধাস্বত্ব বিষয়ক আইনগুলো আপডেট করা নেই। কপিরাইট আইন ২০০০ সালের। এতে ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষার সঠিক উপায় নেই। প্যাটেন্ট আইন ২০১১ সালের। সেটি সফটওয়্যারের চাহিদা মেটাতে পারে না। এজন্য আইন প্রণয়ন ও এর প্রয়োগ জরুরি একটি বিষয়। কিন্তু বিষয়গুলো সেভাবে এগোচ্ছেনা।এই বিষয়ে সংস্কৃতি ও শিল্প মন্ত্রণালয় ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা মেধাস্বত্বে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি-০১.কপিরাইট আইন সংশোধন, ০২.প্যাটেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন আইন প্রণয়ন ও০৩.ডিজিটাল রাইটস বিষয়ক আইন প্রণয়ন বা কপিরাইট আইনে তার অন্তর্ভুক্তিকরণ। ২৭ মার্চের সভায় প্রসঙ্গটি আলোচিত হলেও বহুদিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অবশেষে ১২ জুলাই২০১৭ কপিরাইট আইন সংশোধন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরের সপ্তাহে এর দ্বিতীয় সভাটিও অনুষ্ঠিত হয়। তবে তৃতীয় সভাটি বাতিল হয়। এরই মাঝে কপিরাইট অফিস থেকে একটি আপডেটেড খসড়া আমরা হাতে পেয়েছি।এসব ঘটনায় এটি প্রতীয়মান হয়, এবার হয়তো আইনটি সংসদ অভিমুখে যাত্রা করবে। তবে প্যাটেন্ট ও ডিজাইন আইনের কোনো খবর নেই এখনও। সেটি সংশোধন করার কোনো পদক্ষেপ এখনও নেয়া হয়নি। বেসিস এসব ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখছে। পুরো প্রক্রিয়াতেই আমি যুক্ত আছি।
খ. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বহুল আলোচিত ৫৭ ধারার বিষয়টিকে মাথায় রেখেই ২০১৫ সালে আমরা যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া বানিয়েছিলাম, তা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী সংসদ অধিবেশনে সেটি হয়তো আইনে পরিণত হবে। আইনটির খসড়া তৈরি থেকে আপডেট করার সব প্রক্রিয়ায় আমরা যুক্ত আছি।
গ. মেধাশ্রম আইন: সম্প্রতি একসেঞ্চার নামে একটি বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পেছনে প্রচলিত ট্রেড ইউনিয়নিজম বড় কারণ ছিল বলে মনে করা হয়। আমরা ২০১৫ সালেই মেধাশ্রমভিত্তিক আইন প্রণয়ন করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। শ্রম আইনকে সংশোধন করে এই সমস্যাটির সমাধান করা হবে বলে আশা করা যায়।
ঘ. নীতিমালা: আমরা মনে করি, কিছু নীতিমালা বিষয়ক আলোচনা হওয়া জরুরি। বিদ্যমান তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালাকে হালনাগাদ করা ছাড়াও কিছু নতুন নীতিমালা প্রণীত হতে পারে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা আপডেট করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। ২৭ মার্চের সভায় এটি আলোচিত হওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এই বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি, এটি অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হবে। এই বিষয়ক একটি সেমিনার আমাদেরকে আশান্বিত করেছে। ই-কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়াও এই বিষয়ক জটিলতা নিরসন, ডিজিটাল সার্ভিসেস নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাংলা ভাষার প্রমিতকরণ মানগুলো প্রয়োগ করার বিষয়টি খুবই জরুরি। এই খাতে আলোচ্য বিষয় হতে পারে-০১.তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা অবিলম্বে নবায়ন,০২.ই-কমার্সকে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা হিসেবে প্রণয়ন ও ডিজিটাল কমার্স সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা নিরসন,০৩.ডিজিটাল সার্ভিসেস (ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসেস বা VAS) নীতিমালা প্রণয়ন এবং০৪.ডিজিটাল রূপান্তরের সব পর্যায়ে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও নীতিমালা প্রণয়ন। সরকার তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধকরণ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এই চ্যালেঞ্জটি মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে বলে আশা করি।
ঙ. ইন্টারনেট বিষয়ক: ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল অবকাঠামো ইন্টারনেট। কিন্তু ইন্টারনেট যেমনি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় নেই, তেমনি ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথ নেই। চ্যালেঞ্জ হলো-ইন্টারনেটের মূল্যহ্রাস ও যথেষ্ট গতিপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ।
চ. শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর: ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর। এজন্য যেমনি ক্লাসরুমগুলো ডিজিটাল করা প্রয়োজন, তেমনি শিক্ষার্থীদের হাতে ডিজিটাল যন্ত্র প্রদান করা প্রয়োজন। এর চেয়েও বড় কাজ শিক্ষার কাগজের উপাত্তকে ইন্টারেকটিভ মাল্টিমিডিয়া বা ডিজিটাল কনটেন্টে রূপান্তর করা। এর জন্য একটি পথনকশা থাকতে হবে এবং কাজগুলো সমন্বিত করতে হবে। নির্বাহী কমিটির সভায় সেই নির্দেশনা দেয়া হলেও এখনও তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ডিজিটাল ক্লাসরুম গড়ে তোলা, ছাত্রছাত্রীদের হাতে ডিজিটাল যন্ত্র প্রদান ও ডিজিটাল উপাত্ত উন্নয়ন করতে হবে এবং এজন্য পথনকশা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। জানা মতে, সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডিজিটাল শিক্ষার প্রচলনে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ হাজার ছাত্রছাত্রীকে ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষক্ষত করার জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ডিজিটাল ল্যাব করছে। শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ডিজিটাল ক্লাসরুম করছে। কিন্তু এই কাজগুলো সমন্বিত নয়। টাস্কফোর্স নির্বাহী কমিটির সভায় একটি পথনকশা তৈরির কথা বলা হলেও তার কোনো নমুনা দেখতে পাওয়া যায় না।
ছ.দেশীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ: ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভায় প্রধানমন্ত্রী দেশে ডিজিটাল যন্ত্র বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই আলোকে এবারের বাজেটে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেশীয় সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাইলফলক অগ্রগতি সাধন করব বলে আশা করি।
জ. তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ: দেশে ব্যাপক হারে বিনামূল্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও নতুন প্রকল্পের অধীনে আরও প্রশিক্ষণ হবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব প্রশিক্ষণ সমন্বিত হওয়া উচিত। একেকজন একেকরকম প্রশিক্ষণ দিলে তার সুফল জাতি পাবেনা। এজন্য একটি সমন্বিত মানবসম্পদ উন্নয়ন পথনকশা তৈরি করা দরকার। বিচ্ছিন্নভাবে মানবসম্পদ তৈরি করা যাবেনা, সেটি আমাদেরকে বুঝতে হবে।
ঝ.রফতানি সহায়তা:২০১৭-১৮ সালে একটি মাইলফলক কাজ করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি রফতানিতে শতকরা ১০ ভাগ রফতানি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর ফলে আমরা ১ বিলিয়ন বা ৫ বিলিয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি,সেটি সময়ের আগেই অতিক্রম করে যাবে। ব্যাংকিং লেনদেন ও কর কাঠামোতে এখনও কিছু জটিলতা রয়ে গেছে। সেইসব জটিলতা দূর করতে হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে তথা ২০২১ সাল নাগাদ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক বলে মনে করি।
ফিডব্যাক :mustafajabbar@gmail.com


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - আগস্ট সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা