লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
বেসিস সফটএক্সপো: দেশের সফটওয়্যারের সম্ভাবনা
বেসিস সফটএক্সপো: দেশের সফটওয়্যারের সম্ভাবনা
দেশী সফটওয়্যারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা জানিয়ে অনুষ্ঠিত হলো‘বেসিস সফটএক্সপো ২০১৮’। ‘ডিজাইনিং দ্য ফিউচার’ স্লোগান নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সফটওয়্যার খাতের বৃহত্তম এ প্রদর্শনী। চারদিনব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বেসিস সফটএক্সপোর আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও বেসিস। এ লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় বেসিস সফটএক্সপো। এর মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক মানের সেবাদানে সক্ষমতা ফুটে ওঠে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ভাষার মাসে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির অন্যতম মাইলফলক বেসিস সফটএক্সপো ২০১৮। এবারের আয়োজন পরিসরে যেমন বড়, তেমনি বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির পরিচয়ও বহন করছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির সাক্ষ্য বহন করছে বেসিস সফটএক্সপো। এই সফটএক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে সক্ষম, সেটা ¯পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে।
মেলার প্রাপ্তি
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে উদ্দেশ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেটে ভ্যাট কমান। ১০০ কোটি টাকা কম রাজস্ব হলেও প্রতিদান পাবেন হাজার কোটি টাকা। মোস্তাফা জব্বার অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বরে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের সমাপনীতে বেসিস সভাপতি হিসেবে দাবি করেছিলাম। আমি আবারো দাবি করছি, মন্ত্রী হিসেবে বা বেসিসের সাবেক সভাপতি হিসেবে বা সাধারণ সদস্য হিসেবে যা আপনি বলেন। বাংলাদেশের মানুষের একটা প্রত্যাশা আছে আপনার কাছে। আপনি জানিয়েছেন, এ বছর অবসর নেবেন। তার মানে হচ্ছে ২০১৮-১৯ সালের বাজেটই হচ্ছে আপনার শেষ বাজেট। এই বাজেটে আপনার কাছে প্রত্যাশা করি। এই প্রত্যাশা হচ্ছে, ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেন।’ টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তখন অর্থমন্ত্রীকে বলেন, ‘এনবিআর হিসাব করে দেখাবে কত টাকা লোকসান হবে। কিন্তু আপনার যদি ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব কম হয় বিপরীতে প্রতিদান পাবেন হাজার কোটি টাকার বেশি।’
এরপর অর্থমন্ত্রী বক্তব্য দিতে এসে মোস্তাফা জব্বারের দাবির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আপনারা আপনাদেও প্রয়োজন জানিয়ে দিয়েছেন এবং সে ব্যাপারে আমি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়ার ইচ্ছা ও আশা করছি। সুতরাং সেদিক দিয়ে আপনাদের অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
আগামী বাজেটে ইন্টারনেটের দাম কমাতে ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ‘বেসিস সফট এক্সপো ২০১৮’ উদ্বোধনকালে এই আশ্বাস দেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বাজেটে দেশে উৎপাদিত পণ্য থেকে ২০ শতাংশ রাজস্ব আদায় করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ রাজস্ব দেশের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গত কয়েক বছরের বাজেটে আপনারা নিশ্চয়ই সেটা দেখতে পেরেছেন।’
বেসিসের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির সাক্ষ্য বহন করছে বেসিস সফটএক্সপো। এই সফটএক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে সক্ষম সেটা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে।’
মেলার আয়োজন
প্রদর্শনী এলাকাকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। ছিল সফটওয়্যার সেবা প্রদর্শনী জোন, উদ্ভাবনী মোবাইল সেবা জোন, ডিজিটাল কমার্স জোন, আইটিইএস ও বিপিও জোন। মেলায় ৩০টিরও বেশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক সেমিনার, শতাধিক দেশী-বিদেশী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বক্তা ছিলেন। দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পকে জানান দিতে অনুষ্ঠিত হয় ‘সফটএক্সপো’। এবারের ‘সফটএক্সপো’র আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, স্থানীয়সহ বিশ্ব বাজারে নিজস্ব সক্ষমতা তুলে ধরাই সফটএক্সপোর প্রধান লক্ষ্য ছিল। আর এ কারণেই আমরা আয়োজনে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ফিন্যান্স ইন্ডাস্ট্রিসহ অন্য নীতিনির্ধারকদের। ফলে দেশীয় সফটওয়্যার সংশ্লিষ্টরা আগ্রহী আর বিশ্বাসী হতে পারে।
দেশের সফটওয়্যার শিল্পোন্নয়ন এবং বিদেশি বাজার প্রসারে ‘সফটএক্সপো’ বেসিসের নিয়মিত আয়োজন। প্রতি বছরের এ আয়োজন দেশের সফটওয়্যার শিল্পখাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। সফটএক্সপোর মূল লক্ষ্য দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পখাতের সক্ষমতা প্রদর্শন করা। সোহেল বলেন, নীতিনির্ধারক পর্যায়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত ৩০টির মধ্যে ২২টি সেমিনারই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের। যেখানে দেশী সফটওয়্যার খাতের বিদ্যমান সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধানগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখানে নীতিনির্ধারণে যদি দেশীয় সফটওয়্যারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যায়, তবে তা দেশীয় সফটওয়্যার শিল্প উন্নয়নে সহায়তা করবে।
আগামী দিনের প্রযুক্তি এবং তার প্রস্তুতির প্রদর্শন ছিল মেলায়। প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়লে চলবে না। সময়ের সাথে এগিয়ে যেতে হবে। তাই এক্সপোতে নতুন নতুন কিছু আয়োজন করা হয়। আর এসব আয়োজনের ওপর ভিত্তি করেই এবারের সফটএক্সপোর থিম ছিল ‘ডিজাইন দ্য ফিউচার’। তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী করতে আয়োজন করা হয়েছিল ‘আইসিটি ক্যাম্প’। এবার গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর), অগমেট্রিক্স, আইওটি এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো বিষয়গুলোতে। এবারের মেলার মূল্য লক্ষ্য ছিল বাণিজ্যিক প্রসার। তাই দর্শক চমক নয়, বরং সম্পৃক্ত শিল্পখাতের ‘বিজনেস-টু-বিজনেস’ উন্নয়ন লক্ষ্য থেকে মেলার আয়োজন।
ই-কমার্সের প্রসারে নেট নিউট্রালিটির দাবি
রাজধানীর বেসিস সফটএক্সপো প্রদর্শনীতে ‘নেট নিউট্রালিটি’ বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। এ বিষয়ে মূল বক্তব্য দেন ড. এম রোকনুজ্জামান, অধ্যাপক, তড়িৎ ও কমপিউটার প্রকৌশল বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেন, সাধারণত কোনো ধরনের প্লাটফর্ম প্রদানকারী যদি ওই প্লাটফর্মের সব সেবা সরবরাহ করে, তাহলে একই প্লাটফর্মের অন্য সেবা সরবরাহকারীরা কি ন্যায্যভাবে প্রবেশ করতে পারবে? টেলিকম ক্ষেত্রে এই উদ্বেগকে মূলত ‘নেট নিউট্রালিটি’বলা হয়।
প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেট হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূল ভিত্তি।ইন্টারনেট ন্যায্যতার দাবি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ই-কমার্সে ও প্রসারে। আমরা বিটিআরসিকে নতুনভাবে সাজাতে কাজ করছি। আশা করি, এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে।
আইওটির ব্যবহার বাড়বে
আগামী বছরগুলোতে সেন্সর প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাবে বহুগুণে। সেই সাথে জনপ্রিয়তা পাবে আইওটি, মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্বিমত্তার মতো প্রযুক্তিগুলো, যা পাল্টে দেবে জীবনযাত্রা। আর এর সুফল পেতে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি, আইওটি প্রযুক্তিভিত্তিক ডিভাইস, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং অর্থ সহায়তা।সফটএক্সপো ২০১৮ আসরের দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত ‘আইওটি-চেঞ্জিং লাইফ স্টাইল অ্যাপ্লিকেশন ইন এনার্জি অ্যান্ড আদার ইউটিলিটি সার্ভিসেস’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মো: হোসাইন। মূল বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সৈয়দ আকতার হোসেইন এবং ডাটাসফটের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর সামিআল ইসলাম।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সৈয়দ আকতার হোসেইন বলেন, আইওটি মূলত একটি ডাটা অ্যানালাইটিক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রমকে আরো সহজ ও গতিশীল করে। আইওটি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত প্রযুক্তি সেবাপণ্য এবং মাথাপিছু ব্যয় কমিয়ে সাহায্য করবে ব্যবসায় কার্যক্রমকে। সেই সাথে সেন্সর প্রযুক্তিই নেতৃত্ব দেবে আগামী দিনের প্রযুক্তির উন্নয়নকে। আইওটি সেবার ফলপ্রসূ ব্যবহারে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের সহজলভ্যতা,সঠিক নীতিনির্ধারণ এবং গণসচেতনতাÑ সেই সাথে মেধাবী তরুণ সমাজের সম্পৃক্ততা।
ডাটাসফটের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর সামিআল ইসলাম বলেন, আইওটির বাজার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০২০ সালে এই প্রবৃদ্ধির হার ৩৮.৩ শতাংশ হবে। এ বাজার ২৬৭ বিলিয়নে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে এনার্জি ম্যানেজমেন্ট, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, স্মার্টসিটি, সোলার প্যানেল,সাপোর্ট পেভমেন্ট, স্মার্ট ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, ইলেকট্রনিক কার, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ে আইওটির ব্যবহারে এসেছে সফলতা। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ ও এনার্জি ম্যানেজমেন্টে আইওটির ব্যবহারে এগিয়ে এসেছে ডেসা। এছাড়া কৃষি খাতে আইওটির ব্যবহার এনেছে সফলতা।
ইউল্যাবের অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আমাদের তরুণেরা মেধাবী, আইওটি সেবাপণ্য বিদেশ থেকে না এনে তাদেরকে দিয়েই বানানোর উদ্যোগ নিতে হবে। হয়তো সময় লাগবে, তবে আমাদের তরুণেরা পারবে। এ বিষয়ে প্রয়োজন গবেষণা এবং গবেষণাব্ধ ফলাফলের প্রয়োগে প্রয়োজন বিনিয়োগ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. তৌফিক-ই-এলাহি বলেন, পরিকল্পিত গবেষণা প্রকল্পে আমরা ফান্ড দিতে আগ্রহী, তবে তা যেন লক্ষ্যহীন না হয়। শুধু গবেষণা নয়, বরং পণ্য প্রস্তুত থেকে শুরু করে মার্কেটিং পর্যন্ত আমরা সহযোগিতা করতে আগ্রহী ।
এছাড়া বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনিকোর পরিচালক ও সিওও মো: সাখাওয়াত সোবহান, লিডস সফটের সিটিও পাপিয়াস হাওলাদার। সেমিনার পরিচালনায় ছিলেন সিএসিটিএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলাম। সফটএক্সপোর দ্বিতীয় দিনে ফেসবুক মার্কেটিং, হ্যাকএক্সপো: প্লেইং উইথ ম্যালওয়্যার, ইনফরমেশন সিকিউরিটি কনফারেন্স, সাসটেইনেবল ই-গভ : প্রসপেক্টাস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস,আউটসোর্সিং কনফারেন্সসহ মোট ১২টি সেশন ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
নিরাপদ হবে ডিজিটাল লেনদেন
ডিজিটাল লেনদেনকে নিরাপদ করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইএমভি (ইউরোপে, মাস্টারকার্ড ও ভিসা) প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ব্যাংকার ও প্রযুক্তিবিদেরা। ইএমভি হলো ইউরোপে মাস্টারকার্ড ও ভিসার সমন্বিত রূপ, যা আর্থিক লেনদেনের আন্তর্জাতিক মান হিসেবে স্বীকৃত। বেসিস সফট এক্সপোর শেষ দিন ডিজিটাল পেমেন্ট প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠান কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেডের আয়োজনে ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টারঅপারেবিলিটি ইন ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রকৌশলী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেন। সেমিনারের শুরুতে ইএমভি প্রযুক্তির ওপর মৌলিক ধারণা দেন কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেডের বিপণন বিভাগের প্রধান মাহবুব বিন রহিম। তিনি আর্থিক লেনদেনে চিপভিত্তিক সেবা প্রণয়নের আন্তর্জাতিক মান ও বাংলাদেশের পরিস্থিতির তুলনা করেন।
ইএমভি প্রযুক্তির প্রকৌশলগত দিক তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল শামীম। বিভিন্ন ধরনের কার্ডের প্রযুক্তি সুবিধাগুলো বর্ণনা করে তিনি বলেন, প্রতিটিলেনদেনের সময় একই ডাটা বারবার ইস্যুয়ারের কাছে যাবে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়ে যায়। ক্লোন করা সহজ হয়। তিনি বলেন, ইএমভি প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে কার্ডভিত্তিক প্রতারণা দূর করা সম্ভব। এ প্রযুক্তির কার্ডের তথ্যের অনুলিপি করা অসম্ভব। অনলাইন লেনদেনে এখনও ঝুঁকি আছে। যেহেতু সেখানে কার্ডের উপস্থিতি থাকে না, তবে এর উত্তরণেও কাজ করছি আমরা। এছাড়া এর ব্যয়ও কম, কারণ কার্ড অফলাইনেও কার্যকর, ফলে সেবার খরচ কমে যায়। আমরা একই টার্মিনাল ব্যবহার করে ইএমভি কম্পোনেট ব্যবহার করতে পারব। তবে এক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা জরুরি। মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল লেনদেন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, যেখানে কার্ড একটি অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু নিরাপত্তার অনিশ্চতায় এর ব্যবহার আশানুরূপভাবে বাড়ছে না। এক্ষেত্রে অনলাইন লেনদেনে নিরাপত্তার নিশ্চয়তার অন্যতম সমাধান হলো ইএমভি কার্ড প্রযুক্তি। সাধারণ প্রযুক্তির কার্ডগুলো ক্লোন করা যায়, তাই প্রতারিত হওয়ার সুযোগও বেশি।
বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত (ডিজিটাল) আর্থিক সেবার বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন কনা সফটওয়্যারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তৌহিদ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, মানুষ এখনও নগদ লেনদেন বেশি করে থাকে। গত তিন বছরে ই-কমার্সে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবহার বাড়লেও কমে যাচ্ছে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার। এর কারণ কার্ডভিত্তিক প্রতারণা। তবে ইএমভি প্রযুক্তি এবং টু-লেয়ার অথেন্টিকেশনে আগ্রহী হচ্ছে ব্যাংক। ইএমভি প্রযুক্তিভিত্তিক কার্ডে ডাটা চিপ থাকে বলে তা ক্লোন করা কঠিন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মোবাইল অ্যাপ হলো আগামী দিনের লেনদেনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এর সুবিধা দু’দিক থেকেই আছে। ব্যবহারকারীরাও উপকৃত হবেন, ব্যাংকারেরাও তাদের পণ্য ও সেবার তথ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারবেন।
সমাপনী বক্তব্যে কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনাওয়ার হোসেন তানজিল বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস সেবাটি ব্যাংক দিচ্ছে না, কাজ করছে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমরা চাই ফিনটেক সেবার নেতৃত্বে আসুক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ, ব্যবহারকারীর আস্থার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমরা ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের প্রযুক্তিগত সেবা দেব। তবে ডিজিটালাইজেশনে এগিয়ে আসতে হবে বড় ব্যাংকগুলোকে। কারণ, তাদেরকে পেছনে রেখে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
আউটসোর্সিংয়ে তৃতীয় বাংলাদেশ
বর্তমানে বিশ্বে আউটসোর্সিং তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচ লাখ কাজ করেন মাসিক আয়ের ভিত্তিতে। বেসিস সফটএক্সপোর দ্বিতীয় দিন বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সেলিব্রিটি হলে ‘ফ্রিল্যান্সার কনফারেন্স’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে ফ্রিল্যান্সিং খাতের বিভিন্ন অবস্থা তুলে ধরেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। উপস্থিত ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আরফান আলী, গুগল লোকাল গাইডস কমিউনিটি মডারেটর সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন খাতের ব্যক্তিরা।
সৈয়দ আলমাসকবীরবলেন, শুধু ফ্রিল্যান্সার হলেই শর্ত সাপেক্ষে বেসিস সদস্য হওয়া সম্ভব। মুনাফা অর্জিত হলেই তাকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলে তা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। সরকার স্টার্টআপদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ব্যাংকও এ খাতে কাজ করছে। অর্থাৎ, বাজার তৈরি আছে। বেসিস থেকে ফ্রিল্যান্সারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, ফ্রিল্যান্সারদের সুবিধা দিতে বেসিসের সাথে মিলে স্বাধীন নামে প্রি-পেইডকার্ড চালু করা হয়েছে। এ কার্ডের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারেরা বিদেশ থেকে দেশে লেনদেন করতে পারবেন। আউটসোর্সিং এখন বাংলাদেশী তরুণদের কাছে দারুণ একটি ক্যারিয়ার হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। দেশী তরুণেরা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে যেকেউ ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন। তবে কাজে দক্ষ হয়ে তবে এ পেশায় আসা উচিত। দেশে বিল্যান্সার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট রয়েছে। এছাড়া পেওনার ফ্রিল্যান্সারদের আন্তর্জাতিক অর্থ প্রাপ্তিতে দারুণ কাজ করছে। ফ্রিল্যান্সারদের উৎসাহ দিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সরকার।
সফটওয়্যার রফতানির জরিপ হবে
সরকারি হিসাবে গত বছর ৮০০ মিলিয়ন (৮০ কোটি) ডলারের সফটওয়্যার রফতানি করেছে বাংলাদেশ। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ১ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সফটওয়্যার নির্মাতাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবার আনুষ্ঠানিকভাবে সফটওয়্যার ও সেবাপণ্যের রফতানি আয় নিয়ে একটি জরিপ বা গবেষণা করতে যাচ্ছে। এতে দেশ থেকে আসলেই কত টাকার সফটওয়্যার বা সেবাপণ্য রফতানি হয়, সেই হিসাব বের হয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের টার্গেট ২০১৮ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন এবং ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রফতানি করা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষের ঘোষিত ৮০০ মিলিয়ন ডলার রফতানি আয় নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। কারণ, এই ঘোষণার সাথে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবের বিশাল ফারাক। ফলে অনেকেই বিষয়টি বিশ্বাস করতে চান না। আর এসব বিবেচনায় নিয়েই বেসিস আনুষ্ঠানিক জরিপ বা গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে।
বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবিরের ভাষ্য, ‘ইপিবি যে হিসাব দেয় তার বাইরে ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার ডেভেলপার ও কল সেন্টারগুলোর সেবা রফতানি আয়ের সাথে যুক্ত করে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলা হয়। আমাদের ইনফরমাল সার্ভে রয়েছে। তাতে দেখা যায়, সফটওয়্যার ও সেবাপণ্যের রফতানির পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার। তবে এবার একটি ফরমাল সার্ভে (আনুষ্ঠানিক জরিপ) করতে যাচ্ছি। ওই সার্ভের রিপোর্ট পেলেই সবাইকে জানাতে পারব আমাদের রফতানির পরিমাণ কত। শিগগিরই টেন্ডারের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়ে সার্ভের দায়িত্ব দেয়া হবে।
ইবিপি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) দেশ থেকে সফটওয়্যার রফতানি (তথ্যপ্রযুক্তি রফতানি) হয়েছে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলারের। ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি রফতানি আয় ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সফটওয়্যার রফতানির হিসাব দিয়েছে ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের। এর মধ্যে ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার ডেভেলপার ও কল সেন্টারগুলোর আয় অন্তর্ভুক্ত নয়। ফ্রিল্যান্সারদের আয় যোগ করে বলা হয়েছে ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলার।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ২২ ফেব্রæয়ারি সফটওয়্যার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা সফটওয়্যার তথা তথ্যপ্রযুক্তি রফতানিতে ৮০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছি। চলতি বছরের বাকি সময়ে ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাব। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানি করা।’
বেসিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২৮ লাখ (২.৮ মিলিয়ন) ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সফটওয়্যার রফতানি শুরু করে। ওই বছর রফতানির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ ডলার। এরপর ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪ কোটি ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলার অতিক্রম করে। ওই অর্থবছরে মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এই আয় বেড়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার ও ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রায় ১৩ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাত থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন (৭০ কোটি) ডলার রফতানি আয় হয়।
মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ‘সফটওয়্যার রফতানি খাতে বাংলাদেশ যে পরিমাণ আয় করে তার বেশিরভাগই ব্যক্তি উদ্যোগে। বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের সফটওয়্যার নির্মাতাদের তৈরি ইআরপি সলিউশনের চাহিদা বেশি। এর পাশাপাশি চ্যাটধর্মী অ্যাপ্লিকেশন, বিলিং সফটওয়্যার, মোবাইল অপারেটর ও নেটওয়ার্ক পরিচালনার সফটওয়্যারের চাহিদা রয়েছে। সফটওয়্যার রফতানির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি পর্যায়ের ডিজিটালাইজেশনের কাজে বাংলাদেশের একাধিক প্রতিষ্ঠান ভালো কাজ করছে। দোহাটেক নেপালে ই-প্রকিউরমেন্টের কাজ করছে। সাউথটেক একটি দেশের সরকারের ডিজিটালাইজেশনের কাজ করছে। টাইগার আইটি বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। এমনকি রিভ সিস্টেম ভালো কাজ করছে। ডাটাসফটের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তার নিজের প্রতিষ্ঠানও মালয়েশিয়া ও ভারতে কাজ করছে বলে তিনি জানান। সিসটেক ভুটানে বিডিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশনের কাজ পেয়েছে।
সফটএক্সপোর পুরস্কার পেল যারা
চার দিনব্যাপী আয়োজিত বেসিস সফটএক্সপোর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয় ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী বলেন, দেশী সফটওয়্যার নির্মাতাদের জন্য বেসিস সফটএক্সপো দেশের সর্ববৃহৎ একটি প্লাটফর্ম। এবারের চেষ্টা ছিল নীতিনির্ধারক পর্যায়ে দেশী সফটওয়্যারের সক্ষমতা এবং বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ ক্রেতাদের সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া। আগামী বছর আবারও এ সফটএক্সপোতে অংশ নেয়ার জন্য এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেন। সরকারি-বেসরকারি খাতে দেশী সফটওয়্যারের গুণগত আর কৌশলগত মান তুলে ধরতে বেসিস কাজ করবে বলেও তিনি জানান।
মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, দিনব্যাপী সেশনগুলোতে তরুণদের আগ্রহ আর উদ্দীপনা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগ্রহী বিশেষ করে নড়াইল, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা এবং যশোর থেকে আসা তরুণেরা ফিল্যান্সার সেমিনারে অংশ নেন। এসব আগ্রহীকেকানেক্ট করতে আগামী দিনে বেসিস নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, এ ধরনের একটি বড় আয়োজন করা সব সময়ই চ্যালেঞ্জের কাজ। আর কাজটি যারা সহজ করেছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ইথিওপিয়া থেকে একটি প্রতিনিধিদল এবারের সফটএক্সপো পরিদর্শন করে আমাদের কাছে এ ধরনের আয়োজন করার পরামর্শ চেয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ আইসিটি খাতে বহির্বিশ্বে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। আমাদের এ সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। আগামীতে আরও বড় ধরনের আয়োজনে বেসিস এখন থেকেই কাজ করবে।
এবারের সফটএক্সপোর শ্রেষ্ঠ স্টলের পুরস্কার পায় ‘আইপে’। শ্রেষ্ঠ মিনি প্যাভিলিয়ন নির্বাচিত হয় ‘বেক্সিমকো অনলাইন লিমিটেড’ (বিওএল)। শ্রেষ্ঠ প্যাভিলিয়নের পুরস্কার জিতে নেয় ‘এরা ইনফোটেক’।উদ্ভাবনী প্রকল্পে প্রথম রানারআপ হয় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবন ‘কাকতাড়ুয়া’, দ্বিতীয় রানারআপ হয় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ‘রোবোটিক আর্ম’ আর চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার জিতে নেয় দেশী রোবট ‘ব্যাংরো’।
সফটএক্সপোকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, বাংলালিংক, ব্যাংক এশিয়া, মাস্টার কার্ড, রিং আইডি, আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আয়োজক কমিটি।