লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মো: সাদা’দ রহমান
মোট লেখা:১৩
লেখা সম্পর্কিত
বিজ্ঞানীদের গবেষণার উদঘাটন স্মার্টফোন তরুণদের করে তুলছে আরো বেশি অসুখী
বিজ্ঞানীদের গবেষণার উদঘাটন
স্মার্টফোন তরুণদের করে তুলছে আরো বেশি অসুখী
সান দিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে স্মার্টফোনের ব্যবহার ও তরুণদের অসুখী হওয়া বেড়ে যাওয়ার মধ্যে একটা আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বের প্রধান প্রধান বার্তাসংস্থা গুরুত্বের সাথে বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা জরিপের ফল নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। এই গবেষণার সার্বিক ফলাফল বাবা-মা, অভিবাবক ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তরুণদের প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে এটিই একমাত্র গবেষণা নয়। বিগত কয়েক বছরে এ ধরনের আরো অনেক গবেষণা জরিপ পরিচালিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এসব গবেষণা পরচালিত হলেও এগুলোর ফলাফল মোটামুটি একই ধরনের। তথাকথিত অনলাইন সামাজিক গণমাধ্যমের অতিমাত্রিক ও অপব্যবহার এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পর্দায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আঠার মতো লেগে থাকার ফলে তরুণ ও যুবসমাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ব্যাপক
নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এসব তরুণদের ওপর।
বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ইলেকট্রকি-টেক মেডিসট্রোসও নানা গোপন তথ্য ফাঁস করছেন, জনাচ্ছেন প্রযুক্তি অপব্যবহারের নানা ক্ষতিকর প্রভাবের কথা। তাদের মধ্যে কমপক্ষে একজন তার টেক-ট্যাক্ট প্র্যাকটিস ঘোষণা করেছেন। অনেক শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক ও মনস্তত্ত¡বিদসহ অনেক বিজ্ঞানী এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা উদ্বিগ্ন তরুণদের স্মার্টফোনের অতিমাত্রিক ও অপব্যাহার নিয়ে। তরুণদের এই অতিমাত্রিক ও অপব্যবহার সীমিত করার ব্যাপারে আইন প্রণয়নের প্রশ্নেও আলাপ-আলোচনা এখন চলছে। তারা আন্দোলনের সূচনা করছেন এ সমস্যা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করে তোলার জন্য। এই আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে কমবয়েসিদের স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত করার জন্য। প্রযুক্তির অভিশাপ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য গড়ে তোল হচ্ছে প্রযুক্তিমুক্ত স্কুল। ধনীদের একটি অংশ এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু প্রযুক্তির এই মহাযুগে প্রযুক্তিমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা কতটুকু সম্ভব এবং কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নও পাশাপাশি আসে। আসলে, আমাদেরকে প্রযুক্তিকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকে উদ্ভাবন করতে হবে প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকানোর কার্যকর কৌশল। তরুণ সমাজকে প্রযুক্তির অভিশাপ থেকে বাঁচানোর এই উদ্ভাবন আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তবে
প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে সে চিন্তা অমূলক।
প্রযুক্তির অতিমাত্রিক ও অপব্যবহার আমাদের তরুণ সমাজকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এই তথ্যটি এখনো পিছিয়ে থাকা বা অনুন্নত সমাজগুলোতে ঠিকমতো পৌঁছেনি। এসব সমাজ তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ নামের এক ধরনের মাদকতায় ভুগছে। এরা মনে করেছে প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারেরর মাধ্যমেই শুধু উন্নয়ন সম্ভব। এরা মনে করছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, এটাই তাদের মন্ত্র। প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিক নিয়ে তাদের কোনো প্রশ্ন নেই। তাদের ধারণা এখন এমনটিই যে, সব কাজ চালাতে হবে এই স্মার্ট মেশিন দিয়েই। বিজ্ঞানী, কবি, দার্শনিক যাই হতে চাই, যথাসম্ভব ছোটকাল থেকেই আমাদেরকে প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে হবে। ভাবটা যেনো এমন, বস্তুজগতের যাবতীয় সাফল্য নিহিত তরুণদের টেক এক্সপার্ট বানানোর মধ্যে। পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এই স্টাইলে যে, প্রযুক্তিরর যোগব্যায়ামটা শুরু করতে হবে দোলনা থেকেই, সম্ভব হলে সন্তান গর্ভে থাকার সময়েই। সবশিশুকে উৎসাহিত করতে হবে প্রযুক্তি দিয়ে জগৎ জয়ের ব্যাপারে, কারণ এটিই হচ্ছে সমৃদ্ধিরএকমাত্র পথ।
এর পরিণামে কী ঘটছে? আজ কোটি কোটি তরুণ আঠার মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকছে সামান্য কয় ইঞ্চির স্মার্টফোনের পর্দায়। দিনের একটি বড় সময়ে তাদের যাবতীয় মগজ খরচ করা হচ্ছে স্মার্টফোনের পেছনে। তাদের মনোযোগে পরিমাণ নির্ধারিত হচ্ছে ওই শক্তিশালী স্মার্টফোনের মাধ্যমে, কল্পনা নির্ধারিত হচ্ছে এই প্রযুক্তি দিয়ে, তাদের সৃজনশীলতা সৃজিত হচ্ছে ওই ছোট্ট মেশিন দিয়ে, তরুণমনের গতি নির্ধারিত হচ্ছে প্রযুক্তি দিয়ে। এর ফলে মুক্তভাবে উড়ে চলা তরুণমন হারিয়ে ফেলছে তরুণমনে লেগে থাকা নিজস্ব মজা। এতে তাদের চিন্তার দিগন্ত স্মার্টফোন সঙ্কুচিত করে আনছে। মেশিনে ডিজাইন করা সমস্যা ছাড়া অন্যের সমস্যাকে উপলব্ধি করার সুযোগ হারিয়ে ফেলছে তরুণ সমাজ। শারিরীক কর্মকাÐ ও সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা যেন আমাদের তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তির দাসে পরিণত করে তুলছি।
আজকের আমরা যেভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের মনকে টেক-কন্ট্রোল্ড করে তুলেছি, তা আমাদের অবস্থানকে ধরে রাখতে সক্ষম হবো না। যদিও এখনো আমাদের কেউ কেউ বলছেন নতুন সমাজ গড়ে তোলার কথাÑ যে সমাজকে তারা দেখছেন যৌক্তিক, মানবিক, সুষ্ঠু ও মর্যাদাকর হিসেবে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, স্থিতাবস্থা বজায় রাখা সম্ভব নয় ছেলেমিপূর্ণ গেম-এফিশিয়েন্ট মাইন্ড দিয়ে। স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন বাস্তব জীবনের সমস্যা মোকাবেলা সক্ষমতা। অর্থনীতি ও রাজনীতির সমীকরণ, ভূরাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত নানাধর্মী খেলা মোকাবেলার সক্ষমতা। পদার্থবিজ্ঞাান, রসায়ন, দর্শন ও এমনকি অপপ্রচারসংশ্লিষ্ট সমস্যা মোকাবেলার সক্ষমতা।
যন্ত্রের মাঝে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবে থেকে এসব চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। যন্ত্রের পক্ষে সম্ভব নয় ভালোবাসার ফুল ফোটানো। যন্ত্র সমাজের শ্রেণীতে শ্রেণীতে বিদ্যমান বৈপরীত্য চিহ্নিত করতে পারে না। যন্ত্রের ক্ষমতা নেই ধারণা, মতবাদ কিংবা দর্শন সৃষ্টি করার। মেশিন আমাদের সহায়তা করে কিছু কাজ অকল্পনীয় গতিতে যথার্থ সঠিকভাবে সম্পাদন করতে। কাজের গতিকে ত্বরান্বিত করতে। ফলে এসব যন্ত্রে ডুবে থেকে আমরা আমাদের নিজস্ব সৃজনশীলতাকেই ধ্বংস করে ফেলছি। এই আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ। আমাদের তরুণ সমাজ প্রযুক্তি বিচ্ছিন্ন থাকার কথা তারা বলছেন না। তারা বলেছেন তরুণদের সচেতনভাবে প্রাযুক্তি যন্ত্রের অপব্যবহার ও অতিমাত্রিক নির্ভরশীলতা থেকে তাদের বাঁচাতে। বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে এই বার্তাটিই দিলেন্। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে আমাদের সমাজে এ শ্রেনীর বাবা-মায়েরা মনে করেন, স্মার্মফোন ছাড়া তাদের সন্তানদের স্মাট করে তোলা সম্ভব নয়। নীতি-নির্ধারকেদের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে একই ধরনের ধারণা কাজ করে। তারা মনে করেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়লেই দেশ উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যাবে। এটাই বিপদের জায়গা