লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
চাই নিরবচ্ছিন্ন ফোরজি সেবা
চাই নিরবচ্ছিন্ন ফোরজি সেবা
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি উন্নত হয়েছে টেলিকমিউনিকেশনেরমোবাইল খাতে। দেশে মোট মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটির ওপর। এতদিন দেশে মোবাইল সেবা দেয়া হতো টুজি ও থ্রিজি অর্থাৎ দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তিভিত্তিক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফোরজি তথা চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তিতে প্রবেশ করেছে। এরফলে দেশে সার্বিকভাবে মোবাইল টেলিযোগাযোগের মান আরো উন্নত হবে। এর আগে থ্রিজি সেবার মান আমরাঅনাকাক্সিক্ষত বিভিন্ন কারণে নিশ্চিত করতে পারিনি। ফোরজির বেলায়ও ওইসব বিষয় সেবার মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে আমাদেরকে।
চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তির কারণে বাড়বে ইন্টারনেটের গতি, স্মার্টফোনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার। কমবে ভয়েস ও ভিডিও উভয় ক্ষেত্রের কলড্রপ।
তবে এক্ষেত্রে উন্নত অপটিক্যাল ফাইবার ট্র্যান্সমিশন নেটওয়ার্ক ও পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইডথ পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো রয়েই গেছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ।এ ছাড়া এখনো ফোরজির উপযোগী স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বর্তমানে বাজারে ফোরজির উপযোগী স্মার্ট হ্যান্ডসেট রয়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ। থ্রিজি সেবা চালু হওয়ার পর সেবার মান নিশ্চিত করা দূরে থাক, কলড্রপ বেড়ে যাওয়াসহ সার্বিকভাবে টেলিযোগাযোগের মান নিম্নগামী হয়েছিল। ফোরজির ক্ষেত্রেও একইভাবে চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
বিটিআরসি সম্প্রতি মোবাইল অপারেটরদের বেতার তরঙ্গের প্রযুক্তি নিরপেক্ষ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে বেতার তরঙ্গের সীমিত ও এককেন্দ্রিক ব্যবহারের বাধা দূর হয়েছে। তাই শুধু ফোরজি নয়, মোবাইল অপারেটরেরা এখন থ্রিজিতেও আরো উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারবে। বেতার তরঙ্গের নিরপেক্ষ ব্যবহার, অর্থাৎ একই ব্যান্ডের বেতার তরঙ্গ দিয়ে টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি সেবা দেয়ার ফলে এখন উঁচু ভবন কিংবা বেতার তরঙ্গের পকেট এলাকাগুলোতেওনেটওয়ার্ক পৌঁছে দিতে আগের মতো সমস্যায় পড়তে হবে না। গ্রাহকেরা নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক পাবেন।
ইন্টারনেটের গতি বাড়লে মানুষ অনলাইনে কোনো বাধা ছাড়ই হাই ডেফিনিশন মানের ছবি কিংবা ভিডিও দেখতে পাবে। থ্রিজি সেবা, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারে কল করার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কল বিচ্ছিন্ন হওয়ার মাত্রা কমবে। স্মার্টফোনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহারও বাড়বে।
ফোরজি চালু ডিজিটাল বাংলাদেশে অগ্রগতির জন্য একটি মাইলফলক।
বিটিআরসি এখন সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করতে অনেক বেশি তৎপর। সেবা মানসম্পন্ন না হলে তা হবে ফোরজি চালু করা আর না করার সমান।
নিরবছিন্ন ফোরজি সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই বলা যায় ফোরজি সেবা চ্যালেঞ্জমুক্ত হয়েছে। ফোরজি সেবার সুবিধা দিতে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছেউন্নত অপটিক্যাল ফাইবার ট্র্যান্সমিশন নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা। এ জন্য শক্তিশালী অপটিক্যাল ফাইবার ট্র্র্যান্সমিশন নেটওয়ার্কের কোনো বিকল্প নেই। এই নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণে আগে থ্রিজিতেও সমস্যা হয়েছে এবং এই বড় সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। স্মার্ট নিরপেক্ষ ও দক্ষ ট্র্যান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরিতে বাংলাদেশ এখনো যথেষ্ট সফল নয়। ফোরজিতে যাতে এ সমস্যা না হয়, সেজন্য এ বিষয়ে এখনই গুরুত্ব দিতে হবে। থ্রিজি সেবার মান নিশ্চিত করার সমস্যাগুলো যাতে ফোরজিতে না থাকে, সেজন্য প্রথমেই প্রয়োজন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, যা পুরোপুরি নির্ভর করছে মোবাইল অপারেটরদের ওপর। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেস ট্র্যান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) বসানো না হলে ফোরজিতেওনিরবচ্ছিন্ন্ টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করা যাবে না।
আসলে ফোরজি সেবায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, ফোরজি যত বিস্তৃত হবে,এর ব্যবহার তত বাড়বে, ব্যান্ডউইডথের চাহিদাও তত বাড়বে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল থেকে পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইডথ পাওয়া গেলে এনিয়েদুশ্চিন্তা থাকত না। কারণ, এখান থেকে ১৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিটিসিএলের ট্র্যান্সমিশন লিঙ্কের দুর্বলতার কারণে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৪০ জিবিপিএস।
বিটিসিএলের ট্র্যান্সমিশন লিঙ্কের এ দুর্বলতার কারণে অনেকেই এখন আশঙ্কিত ফোরজি সেবার মান নিশ্চিত করার ব্যাপারে। সরকার এখন থেকে পুরো বিষয়টির ওপর সচেতন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ায়আন্তরিক হলেই আমাদের পক্ষে সংশয় থেকে মুক্তি পাওয়া যেমন সম্ভব হবে, তেমনই সম্ভব হবে নিরবচ্ছিন্ন ফোরজি সেবা পাওয়া।
কাউছার হোসেন
লালবাগ, ঢাকা
সিলিকন রিভিউয়ের তালিকায় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান
এ কথা সত্য, ৯০ দশকে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির খাত বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তথ্যপ্রযুক্তির খাতের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। তখন এ দেশের সাধারণ জনগণ তথ্যপ্রযুক্তির খাত বলতে শুধু হার্ডওয়্যারসংশ্লিষ্ট খাতকে বুঝত। সফটওয়্যার যে একটি শিল্পখাত হতে পারে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না বলা যায়। তবে এখন সে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাংলাদেশে বিভিন্ন হার্ডওয়্যারসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিপণ্য যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনই তৈরি বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার পণ্য। শুধু তাই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সফটওয়্যার পণ্য রফতানিও হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য রফতানিও হচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসায় ও প্রযুক্তিবিষয়ক ম্যাগাজিন দ্য সিলিকন রিভিউ ২০১৭ সালে এশিয়াতে দ্রæত বর্ধনশীল ৩০টি সফটওয়্যার কোম্পানির তালিকা করেছে। ওই তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশভিত্তিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পিএমস্প্যায়ার। ওই তালিকায় ২৩ নম্বরে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটি। ওই প্রতিবেদনে পিএমস্প্যায়ার সম্পর্কে বলা হয়েছে, সফটওয়্যার কোম্পানিটির বাংলাদেশ, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে বৈশ্বিক অফিস রয়েছে। ২০১৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পিএমস্প্যায়ার সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রকল্প ব্যবস্থাপকেরা পরীক্ষায় পাস করে সনদ পান। বিশ্বের অন্যতম প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণ সাইট পিএমস্প্যায়ার। ক্লাউড প্রযুক্তির সফটওয়্যার হিসেবে এটি অন্যতম উদ্যোগ। ১০০টির বেশি দেশে ১০টির বেশি পিএমআই চ্যাপ্টার, ৬০টির বেশি পিএমআই নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ২০ হাজারের বেশি প্রকল্প ব্যবস্থাপককে সেবা দিচ্ছে এটি।
শাওন
বাঁশেরপুল, ঢাকা