সম্পাদকীয়
লেখক সম্পাদক
প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম
সৈয়দ হাসান মাহমুদ
সৈয়দ হোসেন মাহমুদ
মো: আবদুল ওয়াজেদ
নতুন কল রেট : গ্রাহকের ঘাড়ে ৮০ শতাংশ বাড়তি বোঝা
মোবাইল ফোন ব্যবহারে সব অপারেটরে অভিন্ন কল রেট সম্প্রতি চালু করার ফলে গ্রাহকের ঘাড়ে অস্বাভাবিকভাবে খরচের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে পাঠানো চিঠিতে কল রেট বাড়ানোর নির্দেশ দেয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসি। নতুন এই নির্দেশনা অনুযায়ী অন নেটে (একই অপারেটর নম্বরে) পূর্বের ২৫ পয়সা থেকে ২০ পয়সা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৪৫ পয়সা। অন্যদিকে অফ নেট (ভিন্ন অপারেটরের নম্বরে) কথা বলার জন্য ১৫ পয়সা কমিয়ে প্রতি মিনিট করা হয় ৪৫ পয়সা। এর আগে একই অপারেটরে ফোন করতে এই চার্জ ছিল মিনিটপ্রতি ২৫ পয়সা। আর অন্য অপারেটরে সর্বনিম্ন চার্জ ছিল ৬০ পয়সা। দৃশ্যত অন নেটে কথা বলার খরচ বেড়ে যাওয়া এবং অফ নেটে কমে যাওয়ার হিসাব দেয়া হলেও গ্রাহকের কাছে বাড়তি খরচ হিসেবে দেখা দিয়েছে এই নতুন কল রেট।
যেসব গ্রাহক সাধারণত একই অপারেটরে ফোন করে থাকেন, তাদের কারো কারো ফোন বিল ৮০ শতাংশের মতো বেশি বেড়ে গেছে। তাই অনেকের মতে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দেয়া নির্দেশনাটি গ্রাহকের পক্ষে যায়নি। এমনকি কারো অভিমত সরকারি সংস্থার এমন সিদ্ধান্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য এর বিরুদ্ধে গিয়েছে। নতুন কল রেট বাস্তবায়নের ঘোষণার পর থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছেন গ্রাহকেরা। অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, রাজপথে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করে সব জায়গায় এই নতুন কল রেট বাস্তবায়নের দাবি জানান সাধারণ গ্রাহকেরা। সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
নিয়ামুল আজিজ সাদেক নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘১ মিনিটে ২ টাকায় কি পোষায় আপনাদের? আরো দাম বাড়ান। গ্রামীণফোনের ১০ টাকার যুগে ফিরে যাই। বিটিআরসিকে অসংখ্য ধন্যবাদ সাহসী উদ্যোগের জন্য। এটাই তো আপনাদের প্রধানতম কাজ হওয়ার কথা ছিল, কল রেট বাড়ানো।’ ইমাম উদ্দিন লিখেছেন, ‘সর্বনি¤œ কল রেট বিটিআরসির বেঁধে দেয়ার দরকার কী? এটা কোম্পানিগুলোর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছুই না।’ কেউ লিখেছেন, ‘স্যাটেলাইট পাঠানোর প্রথম সুফল হিসেবে কল রেট বেড়েছে। এটাই হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ।’ আবার অনেকেই কল রেট বাড়ানোর প্রতিবাদে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানোর মেসেজ দিচ্ছেন। রাজধানীর পূর্ব কাজীপাড়ার গৃহকর্ত্রী রিফাত জাহান আগে ১০ মিনিটের টকটাইম কিনতেন ৫ টাকা ৭ পয়সায়। তিনি বলেন, হঠাৎ আমার ফোন খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিটিআরসির কল রেট নির্ধারণকে ‘হাস্যকর’ বলে বক্তব্য করেছেন সিটিজেন রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান। তিনি বলেন, কল রেট বিষয়ে বিটিআরসির ভাষ্য শুনলে মনে হয়, এরা মোবাইল ফোন কোম্পানির মুনাফা বাণিজ্যের অংশীদার বই কিছু নয়।
দেশের মানুষ সাধারণত অন নেটে কথা বলার ক্ষেত্রেই বেশি অভ্যস্ত। খরচ কমানোর জন্য পরিবারের সদস্যরা একই অপারেটরের ফোন ব্যবহার করে থাকেন এবং ওই অপারেটরের দেয়া সর্বনিম্ন কল রেট ২৫ পয়সা। ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি প্যাকেজের মাধ্যমে সুবিধা নিতেন তারা। অভিন্ন কল রেট চালু হওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ ধরনের গ্রাহকেরা। এখন একটি কলের চার্জ যদি সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা হয়, তাহলে তা ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জসহ গিয়ে দাঁড়ায় ৫৫ পয়সায়।
বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেকে এখন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ইন্টারনেট কলের মাধ্যমে কথা সেরে নিচ্ছেন। গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। এ অপারেটরের গ্রাহকেরা এই সিদ্ধান্ত বেশি ভোগ করায় এখন দেখা যাচ্ছে ৯০ শতাংশ ফোন কল তারা ইন্টানেটে সারছেন। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট অপারেটরেরা অভিন্ন সর্বনি¤œ কল রেট থেকে সুবিধা পাবে বলে বিটিআরসির এক শীর্ষ কর্মকর্তার অভিমত। সংস্থাটির মতে, অভিন্ন কল রেটের লক্ষ্য হচ্ছে সব অপারেটরের জন্য সমান প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি করা। এর ফলে গ্রাহকেরা ভুতুড়ে বিলের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। এছাড়া সব ধরনের ফোন কলের মধ্যে সমতা আনার জন্যই অভিন্ন সর্বনিম্ন কল রেটের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের দাবি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফোন কলের খরচ কমে যাবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত প্রতিযোগিতা শুরু হবে। তবে এর ফলে যদি গ্রাহকের খরচ প্রকৃতপক্ষে বেড়ে যায় তবে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা যাবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহুরুল।
বাস্তবে এরই মধ্যে গ্রাহকদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া থেকে জানা গেছে, প্রকৃত পক্ষেই গ্রাহকদের ফোন কল খরচ বেড়ে গেছে। তাই বিটিআরসির উচিত অবিলম্বে এই অভিন্ন কল রেটের মাত্রা কমিয়ে আনা। নইলে ফোন ব্যবহারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।