লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রাসঙ্গিক কথা
ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রাসঙ্গিক কথা
হামিদুর রহমান
কোনো কাজে যদি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা থাকে এবং তা বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ হয়, তাহলে তার সুফল একদিন ঘরে আসবেই। সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগতসহ সব ক্ষেত্রের জন্য এ কথা সত্য। এ কথার সত্যতার আংশিক প্রমাণ পাওয়া যায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সব সেবা-পরিসেবা যেমন ডিজিটাল হচ্ছে, তেমনই বাড়ছে সাইবার আক্রমণ-ঝুঁকির সম্ভাবনাও। এই ঝুঁকি প্রতিরোধে এবং বাংলাদেশ সরকারের ই-গভর্ন্যান্সকে সুরক্ষিত রাখতে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট কমপিউটার ইনসিডেন্স রেসপন্স টিম বা ইএউ e-GOV CIRT। এটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাইবার অঙ্গনে দেশকে নেতৃত্ব দেয়া এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, ফোরাম ও সংস্থার সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে সাইবার সূচক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং তাদেরকে সব প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া হয়। তথ্যাবলি যাচাই-বাছাই করার পর উক্ত প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ ইনডেক্সে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স হলো একটি বিশ্বব্যাপী সূচক, যা সাইবার হুমকি প্রতিরোধ ও সাইবার অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য দেশগুলোর প্রস্তুতি এবং গৃহীত ব্যবস্থাসমূহের পরিমাপ করা। ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স সবার জন্য উন্মুক্ত প্রমাণ, উপাত্ত ও তথ্যাবলির একটি ডাটাবেজ এবং একই সাথে সাইবার সিকিউরিটি সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স যেকোনো দেশের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি পরিস্থিতি এবং গৃহীত উদ্যোগসমূহ সম্পর্কে নির্ভুল ও হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করে। পাঁচটি ধাপে এই সূচক তৈরি করা হয় ০১. জাতীয় পর্যায়ের সাইবার হুমকি শনাক্তকরণ। ০২. জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সক্ষমতা শনাক্তকরণ। ০৩. গুরুত্বপূর্ণ ও পরিমাপযোগ্য বিষয়াদির নির্বাচন। ০৪. সাইবার নিরাপত্তা সূচকসমূহের উন্নয়ন। ০৫. সাইবার সিকিউরিটি সূচকগুলোকে তাদের বিষয় অনুযায়ী বিন্যাস করা।
এনসিএসআই কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে ৭৩তম অবস্থানে আছে। একই সংস্থার তথ্য মতে, গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৩তম।
এনসিএসআইয়ের তথ্যানুযায়ী সাইবার ইনসিডেন্সে রেসপন্স, সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় পুলিশের সক্ষমতা এবং সামরিক বাহিনীর সাইবার সক্ষমতায় বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া ক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা পলিসি, সাইবার থ্রেট অ্যানালাইসিস, গুরুত্বপূর্ণ ই-সেবাসমূহের সুরক্ষা, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নীতিমালা ইত্যাদি। এই পিছিয়ে পড়া ক্ষেত্রসমূহের উন্নতির লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান আছে। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ ইতোমধ্যেই সংসদে পাস হয়েছে। যদিও এ নিয়ে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে দেশব্যাপী। আমরা আশা করি সরকার ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি আইন প্রণয়ন করবে। যার বাস্তবায়নে সাইবার নিরাপত্তা পলিসি, গুরুত্বপূর্ণ ই-সেবাসমূহের সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এই তিনটি ক্ষেত্রে মানোন্নয়ন ঘটবে।
লক্ষণীয়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা সর্বপ্রথম সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ শুরু করলেও এই ইনডেক্সে তাদের ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ (শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৭৭)।
বর্তমান সরকারের হাতে নেয়া কার্যকরী উদ্যোগ এবং প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর। পরবর্তী বছরের সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে বলা যায়।
আগামী প্রজন্মকে একুশ শতকের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে
যেকোনো দেশের উন্নতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বহুলাংশে নির্ভর করে সে দেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি হলো তরুণ প্রজন্ম, যা বিশ্বের অনেক দেশেই নেই। সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশ তরুণ প্রজন্মসমৃদ্ধ এক দেশ। দেশের এই তরুণ প্রজন্মকে যদি তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে এ দেশ অর্থনৈতিকভাবে এক সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। সুতরাং বাংলাদেশের এই তরুণ প্রজন্মকে আগামী একুশ শতকের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য এখন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ দিতে হবে।
আগামী প্রজন্মকে একুশ শতকের উপযোগী করে গড়ে তুলতে তথা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। লক্ষণীয়, তথ্যপ্রযুক্তি খাত গত কয়েক দশকে যে গতিতে এগিয়েছে, যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে সেভাবে এগোবে না। আগামী দিনে আমাদের সন্তানেরা কী টুলস ব্যবহার করবে, তা এখন থেকেই নির্ধারণ করতে হবে।
আমি মনে করি, ছোটবেলা থেকেই শিশুদের প্রোগ্রামিংয়ের ওপর শিক্ষা দিতে হবে। কারণ প্রোগ্রামিংয়ের চর্চাটা শিশু বয়স থেকেই হওয়া উচিত। প্রাথমিক স্তর থেকে প্রোগ্রামিং শেখা বাধ্যতামূলক করা দরকার। আমরা আমাদের যে প্রজন্মকে এখন প্রাইমারি স্কুলে যেতে দেখি, তাদের হাতে স্মার্টফোন না দিয়ে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ বা নোটবুক দেয়া উচিত এবং প্রোগ্রামিংয়ে উৎসাহ ও প্রেরণা দেয়া উচিত। সেই সাথে প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত শিশু-কিশোরদের কমপিউটিং কর্মকান্ডে ওপর তীক্ষ্ন নজর রাখা। আমাদের মূল লক্ষ থাকবে আগামী প্রজন্মকে একুশ শতকের উপযোগী করে গড়ে তোলা। প্রোগ্রামিং শিক্ষায় সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দিতে হবে।
একজন প্রোগ্রামারকে যদি বিদেশে পাঠানো যায়, তাহলে তিনি বছরে সোয়া লাখ ডলার আয় করতে পারবেন। অন্যদিকে একজন কায়িক শ্রমিকের ক্ষেত্রে মাসিক আয় ২০ হাজারের মধ্যে সীমিত। তাই সোয়া লাখ ডলারের টার্গেট করাটাই সহজ কাজ।