• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > অবিলম্বে ডাটা সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করা হোক
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: আমিনুল ইসলাম সজীব
মোট লেখা:৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৮ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সিকিউরিটি
তথ্যসূত্র:
সিকিউরিটি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
অবিলম্বে ডাটা সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করা হোক
অবিলম্বে ডাটা সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করা হোক
মো: আমীন উদ্দিন

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করার পর দেশব্যাপী এক নতুন কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সরকারের বিভিন্ন ম্যাকানিজম ডিজিটাইজ করার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার অনেকগুলো ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, আবার কিছু আছে সম্পন্ন হওয়ার পথে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ডাটা সিকিউরিটি তথা তথ্যের নিরাপত্তার ব্যাপারটি সম্পর্কে সরকার তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না, বরং বলা যায় সরকার এ ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন।

যেহেতু সরকার ডাটা সিকিউরিটির ব্যাপারে বেশ উদাসীন, তাই এ দেশে তথ্যের কোনো নিরাপত্তা নেই। অথচ তথ্য হলো প্রযুক্তিবিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। আর তাই বাংলাদেশ আইসিটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর কারণ বাংলাদেশে অভাব রয়েছে ডাটা সিকিউরিটি নিশ্চয়তা করার ক্ষেত্রে নীতিমালা, বিধিবিধান তথা আইনের অভাব। এ কারণে বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে আইসিটি খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাচ্ছে না। আমরা ডাটা সিকিউরিটি বিষয়ে একটি নীতিমালা সূত্রায়নে ব্যর্থ হয়েছি। এ কারণে আমরা উন্নত দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছি।

মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু তারা বিনিয়োগে পিছুটান দেয়, যখন দেখে দেশে সুনির্দিষ্ট কোনো ডাটা নিরাপত্তা বিধান নেই, যেখানে ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রি প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ডাটা সৃষ্টি করছে, সেখানে পার্সোনাল ডাটা একটি বিপুল পরিমাণ সম্পদ।
ফেসবুকের মতো সামাজিক গণমাধ্যম ও গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলো ব্যবহারকারীদের বিনামূল্যে বিপুল পরিমাণ সেবা সরবরাহ করছে তাদের পার্সোনাল ডাটার বিনিময়ে। যেকোনো ধরনের পার্সোনাল ডাটা খুবই মূল্যবান এবং গ্রাহকেরা তা বিনিময় করছে যথাযথ সচেতনতার সাথে। সরকারি সংস্থাগুলো এবং বেসরকারি খাত বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে আক্রমণের শিকারে পরিণত হচ্ছে। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য।

ইদানীং সারা বিশ্বে সাইবার হামলার মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। স্ইাবার হামলা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আমাদের রয়েছে যথেষ্ট দুর্বলতা। আমাদেরকে সাইবার হামলা প্রতিহত করার দিকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান একটি মাত্র দিনে ৪৬০০ আক্রমণ প্রতিহত করে। যেহেতু প্রতিদিন দেশে ডিজিটাল সার্ভিসের পরিধি বেড়ে চলেছে, সরকারের উচিত ব্যাংক, হাসপাতাল ও অন্যান্য ডিজিটাল সেবাদাতাদের সাথে বসা, যাতে করে এগুলো নিয়ন্ত্রণের একটি বিধান সূত্রায়ন করা যায়।

বর্তমানে ৩০ শতাংশেরও কম মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এরা বিপুল পরিমাণ ডাটা সৃষ্টি করছে। আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ গ্রাহক স্মার্টফোন ব্যবহার করবে। তখন দেশে ডাটা জেনারেশন পরিস্থিতিটা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে? হ্যান্ডসেট ইন্ডাস্ট্রি চেষ্টা করবে প্রতিটি স্মার্টফোনের ডাটা সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে।
অনেক দেশে ডাটা সিকিউরিটি আইন নেই। তবে এসব দেশ তা নিয়ন্ত্রণ করে যথাযথ নীতিমালার মাধ্যমে। বিশ্বের অনেক কোম্পানি আমাদের সাথে ব্যবসায়ের জন্য কথা বলেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ‘সরি’ বলেছে, কারণ আমাদের দেশে নেই কোনো ডাটা সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা পলিসি। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। কারণ, বাংলাদেশে মেধাসম্পদ অধিকার সংরক্ষিত নয়। বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আমাদেরকে যথাসম্ভব দ্রুত একটি ডাটা সিকিউরিটি আইন বা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। আশা করি, সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


আইসিটি খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির কাজে চাই সরকারের নজরদারি
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাইলে এবং আধুনিক বিশ্বের সাথে সমানতালে এগিয়ে চলতে চাইলে আমাদের দরকার আইসিটিতে দক্ষ জনবল তৈরি করা। বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ আইসিটি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল তৈরি হচ্ছে, তা মোটেও দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। শুধু তাই নয়, দেশে আইসিটি শিক্ষায় শিক্ষিত যে জনবল তৈরি হচ্ছে, তার সব যে মানসম্মত তা কোনোভাবে বলা যায় না। কেননা পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইসিটিতে যে শিক্ষাদান করা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই এই শিক্ষাদানের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। তা ছাড়া পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইসিটিতে যে শিক্ষাদান করা হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই ইন্ডাস্ট্রির চাহিদার সাথে মানানসই নয়, এমন অভিযোগও আছে।

তবে যাই হোক, সরকার দেশের আইসিটি খাতকে শক্তিশালী করতে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে আরো ৩০ হাজার দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কাজ করছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং (ইওয়াই) আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যাস (এলআইসিটি) প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের প্রকল্পে ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার তরুণকে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষকেরা বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং এতে সময় লেগেছে সাড়ে তিন বছর।’ সুতরাং এখন আশা করা যায়, এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণেরা বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরের দক্ষতার যে অভাব তা কিছুটা পূরণে সক্ষম হবেন এবং দেশের আইসিটি সেক্টরে উন্নয়নে অবদান রাখবেন।

এ প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার তরুণের মধ্যে ১০ হাজার টপআপ আইটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং ২০ হাজার নিয়েছেন ফাউন্ডেশন স্কিল ট্রেনিং। এর মধ্যে ১০ হাজার টপআপ আইটি প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীর মধ্যে এ বছরের জুলাই নাগাদ ৪ হাজার ৫৯ জনকে আইটি ও আইটি এনাবল সার্ভিস (আইটি-আইটিইএস) সেক্টরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আমরা চাই, সরকার আইসিটি সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি তৈরির কাজ করার পাশাপাশি যথাযথ নজরদারির কাজটিও করবে। কেননা, সরকারের নজরদারির অভাবে অনেক চলমান কাজ ব্যর্থ হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও যদি এমন কিছু হয়, তাহলে সরকারের আইসিটি সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি তৈরির কাজ ব্যর্থ হবে।

মো: আমীন উদ্দিন
বনানী, ঢাকা
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৮ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস