লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
তাসনুভা মাহমুদ
মোট লেখা:১০৩
লেখা সম্পর্কিত
ইন্টারনেট সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য
ইন্টারনেট সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য
তাসনুভা মাহমুদ
ইন্টারনেট হলো গ্লোবাল কানেক্টেড নেটওয়ার্ক সিস্টেম, যা ঞঈচ/ওচ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের মিডিয়ার মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সমিট করে। হাজার হাজার মাইলের ক্যাবল ডাটা সেন্টারের সাথে যুক্ত হয়ে আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ-সরল করেছে। কতজন লোক অনলাইনে যুক্ত, অনলাইনে তারা কী করছে এবং পরবর্র্তী সময়ে নতুন কী আসছে ইত্যাদি ধরনের প্রচুর প্রশ্ন ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে আমাদেরকে পরিবিষ্ট করে রেখেছে। আর এ লেখাটি উপস্থাপন করা হয়েছে ইন্টারনেটসংশ্লিষ্ট কিছু প্রশ্ন ও উত্তরের আলোকে।
ইন্টারনেট কী?
ইন্টারনেট হলো এক ব্যাপক বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, যা সারা বিশ্বের কমপিউটার নেটওয়ার্ক রান করার সুযোগ করে দেয় বিভিন্ন কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একে অপরের সাথে কথা বলা তথা সংযোগ স্থাপন করার জন্য। এর ফলে বিপুল পরিমাণে ক্যাবল, কমপিউটার, ডাটা সেন্টার, রাউটার, সার্ভার, রিপিটার, স্যাটেলাইট এবং ওয়াইফাই টাওয়ার ইত্যাদি সব ডিজিটাল তথ্য সারা বিশ্বে পরিভ্রমণ করার অনুমোদন করে।
মূলত ইন্টারনেট হলো এমন এক অবকাঠামো, যা আপনাকে সাপ্তাহিক বাজার তথা শপ, ই-মেইল করার, ফেসবুকে আপনার জীবনকে শেয়ার করা, ওয়েবে সার্চ করাসহ আরো অনেক কাজের সুযোগ করে দেয়।
ইন্টারনেট কত বড়?
যে পরিমাণ তথ্য একটি পথে ইন্টারনেটে প্রবাহিত হয়, তার পরিমাণ হলো দিনে প্রায় ৫ এক্সাবাইট। ১ এক্সাবাইট হলো দুই ঘণ্টা স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনেশনে প্রতি সেকেন্ডে ৪০ হাজার মুভির সমতুল্য।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভূমিতে স্থাপিত হাজার হাজার মাইলের ক্রিস-ক্রস ক্যাবল লাইন, সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দ্বীপ ও দেশকে প্রায় ৩০০ সাবমেরিন ক্যাবল লাইন যুক্ত করা সাপোর্ট করে আধুনিক ইন্টারনেট। আধুনিক ইন্টারনেটের বেশিরভাগই হলো অতি সূ² ফাইবার অপটিকসসমৃদ্ধ, যা ডাটা প্রবাহ করে আলোর গতিতে।
ক্যাবলের রেঞ্জ ডাবলিন থেকে অ্যাঞ্জেলসি সংযোগ পর্যন্ত ৮০ মাইল, সেখান থেকে এশিয়া থেকে আমেরিকা গেটওয়ে পর্যন্ত ১২ হাজার মাইল, যা লিঙ্ক করে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সিঙ্গাপুর, হংকং এবং এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল। গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবল পরিবেশন করে বিচলিত সংখ্যক জনগণ। ২০০৮ সালে মিসরীয় বন্দরের কাছাকাছি আলেকজান্দ্রিয়ায় দুটি মেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের ১০ মিলিয়নের বেশি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত বছর ব্রিটিশ ডিফেন্স চিফ অব স্টাফ স্যার স্টুয়ার্ট পীচ সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমার্সে এবং ইন্টারনেটে উপস্থাপন করতে পারে এক হুমকি।
ইন্টারনেট কতটুকু এনার্জি ব্যবহার করে?
চীনের টেলিকমস প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের হিসাব মতে ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশনস টেকনোলজি (আইসিটি) ইন্ডাস্ট্রি ব্যবহার করতে পারে বিশ্বের ২০ শতাংশ ইলেকট্রিসিটি তথা বিদ্যুৎশক্তি এবং ২০২৫ সালের মধ্যে রিলিজ করতে পারে বিশ্বের ৫ শতাংশের বেশি কার্বন নিঃসরণ।
গবেষণা পরিচালক অ্যান্ড্রেস অ্যান্ড্রেয়ে (অহফবৎং অহফৎধব) বলেন, এজন্য আগামী দিনের ডাটা সুনামিকে দায়ী করা যায়।
২০১৬ সালে ইউএস গভর্নমেন্টের লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির (Lawrence Berkeley National Laboratory) হিসাব মতে, ২০২০ সালের মধ্যে আমেরিকান ডাটা সেন্টার সুবিধা সংবলিত ক্ষেত্রে কমপিউটার মজুদ, প্রক্রিয়া এবং শেয়ার করা ইনফরমেশনের জন্য দরকার হতে পারে৭৩০০ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা এনার্জি। এই শক্তি ১০টি হিঙ্কলে পয়েন্ট বি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনের সমান।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কী?
ইন্টারনেটে তথ্য ভিউ এবং শেয়ার করার এক উপায় হলো ওয়েব। এ তথ্য হতে পারে এর টেক্সট, মিউজিক, ফটো অথবা অন্য যা কিছুই ওয়েব পেজে লিখে ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে সার্ভ করা হয়।
গুগল প্রতি সেকেন্ডে ৪০ হাজারের বেশি সার্চ হ্যান্ডেল করে এবং ক্রোমের মাধ্যমে রয়েছে ৬০ শতাংশ গ্লোবাল ব্রাউজার মার্কেট। প্রায় ২শ’ কোটি কাছাকাছি ওয়েবসাইটের অস্তিত্ব থাকলেও বেশিরভাগেই কদাচিৎ ভিজিট করা হয়। শীর্ষ ০.১ শতাংশ ওয়েবসাইট (আনুমানিক ৫০ কোটি) আকৃষ্ট করে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি ওয়েব ট্রাফিক।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক, চাইনিজ সাইট বাইডু (Baidu), ইনস্টাগ্রাম, ইয়াহু, টুইটার, রাশিয়ান সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ভিকে ডটকম (VK.com), ইউকিপিডিয়া, অ্যামাজন এবং ভাসাভাসা জ্ঞানসম্পন্ন পর্নো সাইট।
ডার্ক ওয়েব কী?
ডার্র্ক ওয়েব হলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের একটি অংশ, যেখানে অ্যাক্সেস করার জন্য দরকার হয় বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার। আসলে ডার্ক ওয়েব হলো একটি টার্ম, যা বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে রেফার করে একটি ওয়েবসাইটের কালেকশন, যা একটি এনক্রিপটেড নেটওয়ার্কে বিদ্যমান থাকে এবং ট্রাডিশনাল সার্চ ইঞ্জিন অথবা ট্রাডিশনাল ব্রাউজার ব্যবহার করে ভিজিট করার মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায় না। সহজ কথায় বলা যায়, ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেটের অংশ, যা সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ইনডেক্স হয় না। টর এনক্রিপশন টুল ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েব তাদের আইডেন্টিটি হাইড করে রাখে।
ওয়েবের একটা সার্চ এর সবকিছু সার্চ করে না। সার্চ করতে হয় সুনির্দিষ্ট টার্ম ব্যবহার করে। ধরুন, আপনি “ঢ়ঁঢ়ঢ়রবং” ওয়ার্ডটি গুগল করলেন এবং আপনার ব্রাউজার ডিসপ্লে করবে ওয়েব পেজসমূহ, যেগুলো সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে পায়। এগুলো সার্চ ইনডেক্সে লগ হয়। যেহেতু সার্চ ইনডেক্স ব্যাপক ও বিশাল, তাই এটি ধারণ করে ওয়েবের এক ভগ্নাংশ মাত্র।
সম্ভবত সার্চ ইনডেক্সে ৯৫ শতাংশই হলো আনইনডেক্সড অর্র্থাৎ ইনডেক্স ছাড়া এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্রাউজারে দৃষ্টির অগোচরে থাকে। ওয়েব সম্পর্কে ভাবুন, যেহেতু এর রয়েছে তিনটি লেয়ার, যেমন সারফেস, ডিপ ও ডার্ক। স্ট্যান্ডার্ড ওয়েব ব্রাউজার সারফেস ওয়েব টুল তথা সার্চ করে সবচেয়ে দৃশ্যমান পেজসমূহ। সারফেসের অন্তর্গত হলো ডিপ ওয়েব, পেজের পরিমাপ, যা ইনডেক্স হয়নি। এসব সম্পৃক্ত পেজ পাসওয়ার্ড ধরে রাখে, যেগুলো অফিস ইন্ট্রানেটে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, যেসব পেজের গুগলে লিঙ্ক নেই এবং অন্যরা তাদের সার্চ ইনডেক্স তৈরি করে এক ওয়েব পেজ থেকে আরেক ওয়েব পেজের লিঙ্ক অনুসরণ করার মাধ্যমে।
ডিপ ওয়েবে হিডেন থাকে ডার্ক ওয়েব। এটি অ্যাড্রেসসহ এক গ্রুপ সাইট, যেগুলো এদেরকে হাইড করে রাখে যাতে না দেখা যায়। ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস করার জন্য দরকার বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার, যেমন টর (The Onion Router)। এই টুলটি আসলে অনলাইন ইন্টেলিজেন্সের জন্য ইউএস নেভি তৈরি করে। ডার্ক ওয়েবের রয়েছে প্রচুর বৈধ ব্যবহার। ডার্ক ওয়েবে অবৈধ মার্কেটপ্লেস ড্র্যাগ থেকে শুরু করে অজ¯্র এবং নকল টাকাসহ সবকিছু হ্যাকারদের কাছে বাণিজ্য করে।
অনলাইনে কতজন লোক আছেন?
অনলাইনে কতজন লোক আছেন তা নির্ভর করে আপনি কীভাবে তা পরিমাপ করছেন তার ওপর। ইউনাইটেড ন্যাশনের এক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক জনপ্রিয় মেট্রিক হলো অনলাইনে থেকে শেষ তিন মাসে কতজন লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন তার সংখ্যা।
এর অর্থ হচ্ছে জনগণকে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কেননা এরা একটি শহরে ইন্টারনেট ক্যাবল অথবা ওয়াইফাই টাওয়ারের কাছাকাছি এলাকায় বাস করেন। এই স্ট্যান্ডার্ড পরিমাপে দেখা যায়, ৩৫৮ অথবা ২০১৭ সালের শেষে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশ অনলাইনে ছিলেন। ২০১৮ সালের শেষে এ সংখ্যা হওয়া উচিত ৩৮ কোটি বিলিয়ন অথবা ৪৯.২ শতাংশ। আর ২০১৯ সালের মে মাসের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক অনলাইনে থাকবে।
উন্নয়নশীল দেশে ফিক্সড-লাইন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশিরভাগ জনগণ তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়। এই প্রবণতা ইন্টারনেটের দুই-টায়ার এক্সপেরিয়েন্সের দিকে চালিত করে, যা হিডেন থাকে ক্রমোন্বতির ফিগারের মাধ্যমে। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ অথবা ট্যাবলেট দিয়ে যা অর্জন করা যায়, তার এক ভগ্নাংশ কাজ করা যায় মোবাইল ফোন দিয়ে। যারা তাদের মোবাইলে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করতে চেষ্টা করেন, তারা ব্যাপারটা ভালো বুঝতে পারবেন।
ওয়েব ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ডিরেক্টর ধনরাজ ঠাকুর বলেন, ‘আমরা বলতে পারি যে, বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, কিন্তু বেশিরভাগই তাদের ফোনে এটি ব্যবহার করছে। উৎপাদনশীলতার আলোকে এ সংখ্যা ডেস্কটপ অথবা ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।’
মোবাইল ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা অন্যান্য ইস্যু পরিচালনা করে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকায় টেলকো জনগণকে উৎসাহিত করছে ২০ মেগাবাইট থেকে ১ গিগাবাইট ডাটা বান্ডেল কেনার জন্য এবং অফার করছে ফেসবুক, হোয়াটসআপ, ইনস্টাগ্রাম, জি-মেইল এবং টুইটার প্রভৃতি প্রধান প্রধান অ্যাপে অ্যাক্সেসের সুবিধা এমনকি ডাটা প্যাকেজ শেষ হওয়ার পরও। এর ফলে জনগণ ওপেন ওয়েবের পরিবর্তে ওইসব প্ল্যাটফরমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ বুঝতেই পারেন না যে তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।
এ ব্যাপারটি প্রকাশ পায় প্রথম যখন আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সার্ভে ও ফোকস গ্রæপ সেখানকার বিভিন্ন লোকের সাথে সাক্ষাৎকারে জানতে পারে যে, তারা অনলাইনে যাওয়ার চেয়ে ফেসবুক ব্যবহার করে। ওয়েবে অ্যাক্সেসের সমতা উন্নতি করার জন্য ওয়েব ফাউন্ডেশনের পরিচালক ন্যানজিরা সামবুলি বলেন, ‘তাদের কাছে ফেসবুক হলো ইন্টারনেট। তারা এর বাইরে কিছুই এক্সপ্লোর করতে পারছে না।’
অনলাইনে এরা কারা?
কোনো কোনো দেশে প্রায় সবাই অনলাইনে থাকেন। আইসল্যান্ডের ৯৮ শতাংশ জনগণ ইন্টারনেটে যুক্ত। আইটিইউর মতে ডেনমার্ক, নরওয়ে, লুক্সেমবার্গ ও বাহরাইনের একই পরিমাণের জনগণ অনলাইনে থাকেন। ব্রিটেনের প্রায় ৯৫ শতাংশ জনগণ অনলাইনে যুক্ত। সেই তুলনায় স্পেনের ৮৫ শতাংশ, জার্মানির ৮৪ শতাংশ, ফ্রান্সের ৮০ শতাংশ ও ইতালির ৬৪ শতাংশ অনলাইনে যুক্ত।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক রিপোর্টে ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে ৮৯ শতাংশ আমেরিকান অনলাইনে থাকবেন। অপেক্ষাকৃত বেশি গরিব, বয়স্ক, কম শিক্ষিত এবং গ্রামীণ জনগণ থাকবেন ইন্টারনেট সংযোগবিহীন অবস্থায়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০ কোটি, সেখানে ২০১৮ সালে চীনের অনিয়মিত ব্যবহারকারী ৮০ কোটিও বেশি এবং মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি এখনো ইন্টারনেট সংযোগবিহীন। এ বছর ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে এবং দেশের ৬০ শতাংশ এখনো অফলাইনে আছে।
অনলাইনে এরা কী করছে?
ইন্টারনেটে ১ মিনিট ১৫ কোটি ৬০ লাখ ই-মেইল, ৯০ লাখ মেসেজ, ১৫ লাখ স্পুটিফাই গান, ৪০ লাখ গুগল সার্চ, ২০ লাখ মিনিট স্কাইপি কল, ৩ লাখ ৫০ হাজার টুইট, ফেসবুকে ২ লাখ ৪৩ হাজার ফটো পোস্ট, ৮৭ হাজার ঘণ্টা নেটফ্লিক্সে, ইনস্টাগ্রামে ৬৫ হাজার ছবি রাখা হয়, টাম্বলারে ২৫ হাজার পোস্ট, টিন্ডারে ১৮ হাজার ম্যাচ ও ইউটিউবে ৪০০ ঘণ্টার ভিডিও আপলোড হয়।
যুুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্টান সিসকোর তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি কনজ্যুমার ইন্টারনেট ট্র্যাফিক হলো ভিডিও, যেমনÑ ওয়েবসাইটে দেখা সব অন লাইন ভিডিও, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স ও ওয়েবক্যাম বিশ্বের ৭৭ শতাংশ ইন্টারনেট ট্রাফিক্স।
কোনগুলো অফলাইনের ক্ষেত্র?
বিশ্বে ডিজিটাল বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা আছে এবং নেই এই দুইয়ের মাঝে অর্থাৎ ঐধাবং ও ঐধাব-হড়ঃব এবং দারিদ্র্যতার মাঝে কঠিন বিভাজন এক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফ্রিকান কোনো কোনো শহুরে সেন্টারে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস রুটিনমাফিক।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও মরক্কোর অর্ধেকের বেশি জনগণ অনলাইনে থাকেন এবং অন্যান্য দেশের অংশ বিশেষ করে বতসোয়ানা, ক্যামেরুন ও গ্যাবন প্রভৃতি আগে ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে। মোবাইল ফোন হলো এই ক্রমোন্নতির চালক। এজন্য গত তিন বছরে মোবাইল ব্রডব্যান্ডের দাম ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
অনেক জায়গা আছে, যা সমানতালে চলতে পারছে না। তানজানিয়া, উগান্ডা ও সুদানের মোট জনসখ্যার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ অনলাইনে অ্যাক্সেস সুবিধা পায়। আর গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনের ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের সুবিধা মাত্র ৭ থেকে ১১ শতাংশ।
ইরিত্রিয়া ও সোমালিয়ার ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের সুবিধা ২ শতাংশের কম। সুতরাং, এসব দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় অর্থাৎ অফ-গ্রিড গ্রামে মোবাইল হটস্পট তৈরি করতে চাইলে শহরের চেয়ে খরচ তিনগুণের বেশি হয়। ফলে শহর এলাকায় অনেক বেশি লোক ইন্টারনেট সুবিধা যেমন পায়, তেমনি ব্যবসায় বিনিয়োগের রিটার্নও পায় অনেক বেশি। গ্রামীণ কমিউনিটিতে ইন্টারনেটের চাহিদা কমই হয়, কেননা এ সম্পর্কে তাদের ধারণা কম থাকায় ওয়েব তাদের আগ্রহ অনুযায়ী কাজ করতে পারে না।
নির্দিষ্ট কিছু গ্রুপ কি অফলাইনে?
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বয়স বৈষম্য সুস্পষ্ট। যুবকদের তুলনায় বয়স্ক লোকেরা অনেক কম ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য মতে, ব্রিটেনে ১৬-৩৪ বছরের বয়স্ক লোকের ৯৯ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করে, ৭৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়স্কদের অর্থাৎ ৪৫ লাখের অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক জনগণ কখনোই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না।
সারা বিশ্বেই লিঙ্গবৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশ্বের দুই- তৃতীয়াংশ জাতির ইন্টারনেট ব্যবহার পুরুষের নিয়ন্ত্রণে। বৈশ্বিকভাবে পুরুষের তুলনায় ১২ শতাংশের কিছু কম নারী অনলাইনে। ২০১৩ সালের পর থেকে বেশিরভাগ অঞ্চলে নারী-পুরুষের ডিজিটাল বৈষম্য কমে আসতে শুরু করেছে। এটি সম্প্রসারিত হয় আফ্রিকায়। আইটিইউর তথ্য মতে, পুরুষের তুলনায় ২৫ শতাংশের কিছু কম নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
পাকিস্তানে অনলাইনে পুরুষের সংখ্যা নারীর সংখ্যার চেয়ে এগিয়ে আছে, যেখানে ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৭০ শতাংশই পুরুষ। এই বৈষম্য ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত করে গতানুগতিক পিতৃশাসিত মানসিকতা এবং এই অসমতা তারা এক সময় বুঝতে পারবে।
কোনো কোনো দেশে এ প্রবণতার ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। যেমন জ্যামাইকার কথা উল্লেখ করা যায়। এখানে পুরুষের চেয়ে নারীরা অনলাইনে বেশি থাকেন। এর কারণ হচ্ছে পুরুষদের চেয়ে বেশিসংখ্যক নারী কিংস্টোনের ইউনিভার্সিটি অব দি ওয়েস্ট ইন্ডিজে রেজিস্টার করে। বিশ্বে এ দেশে রয়েছেন সর্বোচ্চ অনুপাতের আইটি ম্যানেজার।
কীভাবে সারা বিশ্ব অনলাইনে আসবে?
গরিব ও গ্রামীণ এলাকায় যৌক্তিক মূল্যে অর্থাৎ ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইন্টারনেট পাওয়া হলো এক প্রধান চ্যালেঞ্জ। সম্প্রসারিত বাজারের দিকে খেয়াল রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কিছু আশার আলো দেখছে। গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যাফাবেট সোলার পাওয়ার ড্রোনের জন্য করে স্ক্র্যাপড প্ল্যান এবং বর্তমানে ফোকাস করছে হাই অলটাচ্যুট বেলুনের ওপর, যাতে স্পেসের প্রান্তে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া যায়। বিশ্বের সবার কাছে ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের সুবিধা আনার জন্য Elon Musks SpaceX I OneWebনামের কোম্পানির রয়েছে নিজস্ব পরিকল্পনা।
ভারতের নেট নিউট্রেলিটি আইনে ফেসবুকের ফ্রি বেসিক সার্ভিস নিষিদ্ধ করা হয় এবং ইন্টারনেট-বিমিং ড্রোনের পরিকল্পনাও বাতিল করে এবং বর্তমানে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সাথে কাজ করছে যৌক্তিক দামে মোবাইল সার্ভিস দেয়ার জন্য।
মাইক্রোসফট ইতোমধ্যে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডের জন্য টিভি হোয়াইট স্পেস অর্থাৎ অব্যবহৃত ব্রডকাস্ট ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছে। আরেকটি অ্যাপ্রোচ হলো কমিউনিটি নেটওয়ার্ক, যা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। এই মোবাইল নেটওয়ার্ক বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে ব্যবহার করে সোলার পাওয়ারড স্টেশন, যা তৈরি ও ব্যবহার করা হয় লোকাল কমিউনিটির জন্য। পরিচালিত হয় কো-অপারেটিভের মাধ্যমে। এগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা