• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > করোনাভাইরাস দমনে কন্ট্যাক্ট ট্রাচিং
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুনীর হোসেন
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২০ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
করোনাভাইরাস দমনে কন্ট্যাক্ট ট্রাচিং
করোনাভাইরাস দমনে কন্ট্যাক্ট ট্রাচিং
জি. মুনীর

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের একজন সংক্রমণ-বাহক আরো আড়াইজনে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়, যদি যথাসময়ে তাকে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে নেয়া না হয়। এই যদি সত্যি হয়, তবে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত একজন মানুষ তার সংস্পর্শে আসা আড়াইজনকে সংক্রমিত করতে পারে। পরবর্তী ধাপে এই আড়াইজন সংক্রমিত ব্যক্তি প্রত্যেকে আরও আড়াইজন করে সংক্রমিত করতে পারে। এভাবে এই সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা কেবল বাড়তেই থাকবে। এভাবে একজন মানুষের সংক্রমণ লাখ-লাখ, এমনকি কোটি-কোটি মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তেমনটি যাতে না ঘটে, তাই সংক্রমণ-বাহক প্রতিটি ব্যক্তিকে যথাশিগগির চিহ্নিত করে তাকে নির্দিষ্ট কয়দিন কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনে নিয়ে সংক্রমণ অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায়। আর করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে একমাত্র উপায় এটি। বিশ্বের নানা দেশে এই উপায় বিভিন্নভাবে অবলম্বন করা হচ্ছে। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন ইত্যাদি নামে।

তাহলে করোনা দমনে মুখ্য কাজ হচ্ছে ‘সংক্রমণ-বাহক অনুন্ধান’। এরই ইংরেজি নাম contact tracing। আর এ কাজে ব্যবহার করা হয় ব্লুটুথ প্রযুক্তি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এর জন্য তৈরি করছে কভিড-১৯ স্মার্টফোন অ্যাপ। এসব অ্যাপের সাহায্যে চেষ্টা-সাধ্যি চলছে সংক্রমণ-বাহককে চিহ্নিত করে তাকে ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও প্রয়োজনে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর। এভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া সীমিত করে লকডাউনের বিধিনিষেধের কড়াকড়ি প্রশমিত করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সংক্রমণ-বাহকের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই অ্যাপের দুটি সংস্করণ লক্ষ করা গেছে : সেন্ট্রালাইজড ভার্সন এবং ডিসেন্ট্রালাইজড ভার্সন। উভয় ধরনের অ্যাপেই ব্যবহার হচ্ছে ব্লুটুথ সিগন্যাল। যখন স্মার্টফোনের মালিকেরা একজন আরেকজনের কাছাকাছি আসে, তাদের মধ্যে কারও মধ্যে যদি কোনো ভাইরাসের লক্ষণ থাকে, তখন অন্য স্মার্টফোনের মালিকের কাছে এই মর্মে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়Ñ তিনিও সম্ভাব্য সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকতে পারেন।

সেন্ট্রালাইজড মডেলের আওতায় সংগৃহীত বেনামি ডাটা আপলোড করা হয় একটি রিমোট সার্ভারে। সেখানে অন্যান্য সংক্রমণ-বাহকের সাথে তা ম্যাচ করা হয় এবং দেখা হয় তার করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখার সম্ভাবনা আছে কি না। এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার হচ্ছে যুক্তরাজ্যে।

অপরদিকে ডিসেন্ট্রালাইজড মডেলে ব্যবহারকারীকে তার ফোনের মাধ্যমে তাদের তথ্যের ওপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়া হয়। এখানে সম্ভাব্য সংক্রমণ-বাহক ব্যক্তিদের মধ্যে ম্যাচ করা হয়। এই মডেল প্রমোট করছে গুগল, অ্যাপল ও একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম।

উভয় সংস্করণের অ্যাপেরই সমর্থক রয়েছে। সেন্ট্রালাইজড মডেলের সমর্থকেরা বলেন, এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ গভীরভাবে ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে এবং জানতে পারে কতটুকু ভালোভাবে এই অ্যাপ কাজ করছে। অপরদিকে ডিসেন্ট্রালাইজড মডেলের সমর্থকেরা বলেন, এটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা সর্বোচ্চমাত্রায় সুরক্ষা দেয়, তাদেরকে হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচায় এবং তাদেরকে বলে দেয় তাদের সামাজিক যোগাযোগের বিষয়টি।

তাহলে
আমরা বলতে পারি জনস্বাস্থ্যে কন্ট্যাক্ট ট্রাচিং বা ‘সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান’ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো নিশ্চিত ছোঁয়াছে রোগাক্রান্ত বা নিশ্চিত রোগজীবাণু-সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, এমন সম্ভাব্য সব সংক্রমণ-বাহক (ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘কন্ট্যাক্ট’) ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা চিহ্নিত করা হয়। এরপর ওইসব সংক্রমণ-বাহক বা ‘কন্ট্যাক্ট’ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রথম সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সংক্রমণ-বাহকদের খুঁজে বের করে তাদের সংক্রমণ পরীক্ষা করা হয়। সংক্রমিত হলে এদের চিকিৎসা ও আইসোলেশন বা অন্তরিত করে রাখা হয়। এরপর এসব সংক্রমণ-বাহকের সংস্পর্শে এসেছেন এমন দ্বিতীয় স্তরের সংক্রমণ-বাহকদের অনুসন্ধানও চালানো হয়। এভাবে প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত সংক্রমিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা না যায়।

এর লক্ষ্য

এই প্রক্রিয়ার অবলম্বনের প্রধান লক্ষ্য হলো জনসাধারণের মধ্যে সংক্রমণের সংখ্যা সীমিত করে শূন্যে নামিয়ে আনা। য²ার মতো বেশ কিছু ছোঁয়াছে রোগ, হামের মতো টিকা দিয়ে প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমণ, এইডসের মতো যৌন উপায়ে সংক্রমিত রোগ এবং সার্স-কোভ-২ ও করোনাভাইরাসের মতো কিছু নতুন ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রমণের বেলায় এই কন্ট্যাক্ট ট্রাচিং প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতি অবলম্বনের আরও কিছু লক্ষ্য হচ্ছে : ০১. চলমান সংক্রমণে বাধা সৃষ্টি করে এর বিস্তার রোধ করা, ০২. সম্ভাব্য সংক্রমণের ব্যাপারে সংস্পর্শে আসা সংক্রমণ-বাহকদের সাবধান করা এবং তাদের প্রতিরোধমূলক পরামর্শ কিংবা প্রতিকারমূলক সেবা দেয়া, ০৩. ইতোমধ্যেই সংক্রমিত ব্যক্তিদের রোগ নির্ণয়, পরামর্শ দান ও প্রতিকার বিধান। ০৪. যদি সংক্রামক রোগটি প্রতিকারযোগ্য হয়, তাহলে সংক্রমিত রোগী যেন নতুন করে সংক্রমিত না হয়, তা প্রতিরোধ করা এবং ০৫. কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য একটি রোগের রোগতত্ত¡ীয় দিকগুলো সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা।

প্রক্রিয়াটি নতুন কিছু নয়

অনেকের মনে হতে পারে আজকের এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়েই এই সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান বা কন্ট্যাক্ট ট্রাচিং প্রক্রিয়াটির সূচনা হয়েছে। আসলে তা ঠিক নয়। জনস্বাস্থ্য খাতে এই প্রক্রিয়াটি সংক্রমক রোগ-ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে কয়েক দশক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী গুটিবসন্ত নির্মূল করার কাজটি শুধু টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে সফলই হয়নি। বরং এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম একটি নিয়ামক ছিল সব সংক্রমিত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার জন্য ব্যাপকভাবে এই কন্ট্যাক্ট ট্রাচিং প্রক্রিয়া কাজে লাগানো। তখন সংক্রমিত ব্যক্তিদের অন্তরিত বা আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল এবং সংক্রমিত ব্যক্তিদের চারপাশের জনগোষ্ঠীক টিকা দেয়া হয়েছিল।
তবে এই কন্ট্যাক্ট ট্রাচিং কোনো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সব সময় সর্বোত্তম কার্যকর পদ্ধতি না-ও হতে পারে। যেসব অঞ্চলে রোগের বিস্তার বেশি, সেখানে স্ক্রিনিং সিস্টেম বা ছাঁকন পদ্ধতি অধিকতর কার্যকর ও সাশ্রয়ী হতে পারে।

প্রযুক্তি

মোবাইল ফোন : অ্যাপল ও গুগলই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম পরিচালনা করে। ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল এই দুই কোম্পানি আইওএস ও অ্যান্ড্রয়িড ফোনের জন্য করোনাভাইরাস ট্রাচিং টেকনোলজির ঘোষণা দেয়। ওয়্যারলেস রেডিও সিগন্যাল ইষঁবঃড়ড়ঃয খড়ি ঊহবৎমু (ইখঊ)-নির্ভর এই প্রযুক্তি এই নতুন অ্যাপ জনগণকে সাবধান করে দেবে অন্যদের সম্পর্কে, যারা ইতোমধ্যেই অন্যান্য ‘সার্স-কোভ-২’ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ মাসেই করোনাভাইরাস ট্রাচিং অ্যাপ চালু করা হবে। এবং অ্যাপটি পরবর্তী সময়ে এ্ বছরেই আরও উন্নত করে তোলা হবে।

প্রটোকল : ‘প্যান-অ্যামেরিকান প্রাইভেসি-প্রিজারভিং প্রক্সিমিটি ট্রাচিং’ (পিইপিপি-পিটি), ‘হুইশপার ট্রাচিং প্রটোকল’, ডিসেন্ট্রালাইজড প্রাইভেসি-প্রিজারভিং প্রক্সিমিটি ট্রাচিং’ (ডিপি-পিপিটি/ডিপি-থ্রিটি), টিসিএন প্রটোকল, কন্ট্যাক্ট ইভেন নাম্বার্স (সিএইএন). প্রাইভেসি সেন্সেটিভ প্রটোকলস অ্যান্ড মেকানিজমস ফর মোবাইল কন্ট্যাক্ট ট্রাচিং (পিএসিটি) ও অন্যান্য প্রটোকল নিয়ে আলোচনা চলছে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা সংরক্ষণের ব্যাপারে।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০২০ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস