• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ই-লাইব্রেরি : তথ্যপ্রযুক্তির নবতর ফসল
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ঈদিশতা নবী
মোট লেখা:১২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
দেশ ও প্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ই-লাইব্রেরি : তথ্যপ্রযুক্তির নবতর ফসল

লাইব্রেরি বা পাঠাগারের সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত৷ বড় বড় সেলফ থেকে মনের মতো বই নিয়ে পড়ার আনন্দ শুধু লাইব্রেরিতেই পাবেন৷ অনেকেই লাইব্রেরিকে পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচনা করেন৷ কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের প্রচলিত সেই লাইব্রেরির ধারণাটি এখন বদলে যাচ্ছে৷ তথ্যপ্রযুক্তি লাইব্রেরির মূল কাঠামোর সাথে সংযুক্ত হয়ে লাইব্রেরিগুলোতে একটি নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে, যার নাম ই-লাইব্রেরি (e-library) বা ই-পাঠাগার৷ সাধারণ পাঠাগারের সাথে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধাগুলোকে ব্যবহার করে লাইব্রেরির কাজগুলো আরো দ্রুত ও যেকোনো জায়গা থেকে লাইব্রেরির বই পড়ার সুবিধাগুলো ভোগ করাই এর উদ্দেশ্য৷


ই-বই পড়ার ডিভাইসে ডিজিটাল বই পড়তে পারবেন৷ ছবিতে দেখছেন একটি Sony PRS-505 eBook Reader

এবার দেখা যাক ই-লাইব্রেরি বলতে কী বুঝায়? ই-লাইব্রেরির প্রথম ধাপেই থাকবে ডিজিটাল ক্যাটালগ৷ যারা লাইব্রেরিতে বই খুঁজতে যান, তারা নিশ্চয় ক্যাটালগ কার্ড দিয়ে বই খোঁজার চেষ্টা করেছেন৷ সনাতন কাগজের কার্ডগুলো রূপান্তরিত হচ্ছে ডিজিটাল কার্ডে, অর্থাৎ বইয়ের তথ্যগুলো অর্থাৎ বইয়ের নাম, লেখক, প্রকাশক, বছর ও অন্যান্য তথ্য থাকবে ডিজিটালে৷ এর ফলে খুব সহজেই আপনি আপনার কাঙ্খিত বইটি খুঁজে পাবেন ক্যাটালগ কার্ডে৷ সব লাইব্রেরি এভাবে তাদের বইয়ের তথ্যগুলো ডিজিটালে রূপান্তর করছে, তারা সাধারণত লাইব্রেরির ভেতরেই কমপিউটার দিয়ে বই খোঁজার সুবিধাটি দেয়৷ আবার অনেক ই-লাইব্রেরি বই খোঁজার এই সুবিধাটি দেয় অনলাইনে বা কোনো ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে৷ এই সিস্টেমটি দিয়েই আপনি কোনো বই ইচ্ছে করলে বুকিং করতে পারবেন, কিংবা আপনার ডিপার্টমেন্টের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে পারবেন৷ অর্থাৎ পুরো লাইব্রেরির বই ম্যানেজমেন্টের কাজগুলো ই-লাইব্রেরির কল্যাণে দ্রুত ও সহজেই করতে পারবেন৷ আপনার নামে লগইন করে দেখে নিতে পারেন আপনি কী কী বই বর্তমানে লাইব্রেরি থেকে ধার নিয়েছেন এবং কবে তা ফেরত দিতে হবে৷

এরপরের স্তরে ই-লাইব্রেরি যে সুবিধা দেবে তা হলো শুধু বইয়ের তথ্যগুলো ডিজিটালে নয়, বইগুলোই থাকবে ডিজিটালে৷ অর্থাৎ বই বলতে যে কাগজের মলাট দেয়া বস্তুটিকে আমরা বুঝছি, সেটি লুপ্ত হয়ে আসছে ই-বুক বা ই-বই৷ বইটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন কমপিউটারে এবং তা পড়তে পারেন৷ এ ছাড়া মাইক্রোফিল্মে সংগৃহীত আর্কাইভগুলোকে ডিজিটালে রূপান্তর করে কমপিউটারে তা দেখার সুযোগ থাকছে৷ এছাড়া সহজে বই পড়ার জন্য বেশ কিছু ডিভাইস বাজারে এসেছে৷ এর মধ্যে সনির ই-বুক রিডার বেশ জনপ্রিয়৷


নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে অনলাইনে বই খোঁজার সুযোগ রয়েছে৷ আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করে দেখে নিতে পারেন যে কোনো বই আপনি ধার নিয়েছেন এবং কবে তা ফেরত দিতে হবে

বিশ্বের বেশিরভাগ লাইব্রেরিসহ বাংলাদেশের অনেক লাইব্রেরিতে ই-লাইব্রেরির এ ধারণাগুলো প্রয়োগ হচ্ছে৷ বাংলাদেশের বেশ কিছু লাইব্রেরিতেও এই ই-লাইব্রেরির ধারণাটি প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ই-লাইব্রেরি কয়েকটি ধাপে প্রয়োগ করা যেতে পারে :

প্রথম ধাপ :

বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইব্রেরিসমূহ ডিজিটাল লাইব্রেরিতে বা ই-লাইব্রেরিতে রূপান্তর করা যেতে পারে৷ এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ উদ্যোগ নিতে পারে অথবা এর জন্য অন্য দাতা সংস্থাগুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে৷
দ্বিতীয় ধাপ :

দ্বিতীয় ধাপে বাংলাদেশের লাইব্রেরিগুলো একে অপরের সাথে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়ে একটি আন্তঃলাইব্রেরি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে এবং লাইব্রেরিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস অর্থাৎ বই খোঁজা ও বই নেবার অনুরোধ করতে পারে৷ এর ফলে একটি লাইব্রেরি আরেকটি লাইব্রেরির তথ্যগুলো ব্যবহার করার সুযোগ পাবে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি হয়তো দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো কলেজে বসেই অনলাইনে ই-লাইব্রেরির মাধ্যমে খুঁজতে পারেন ঢাকা পাবলিক লাইব্রেরিতে কী কী বই রয়েছে এবং কোনো বই যদি আপনার প্রয়োজন হয়, সে বইটি দিনাজপুরের লাইব্রেরিতে পাঠানোর অনুরোধ করতে পারেন৷ পরবর্তীতে দিনাজপুরের লাইব্রেরিতে বইটি পড়তে পারেন৷

তৃতীয় ধাপ :

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ই-লাইব্রেরি স্থাপন হয়ে গেলে আমরা বিশ্বের ই-লাইব্রেরিগুলোর সাথে সংযোগ করতে পারি৷

ই-লাইব্রেরি নিয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্ক হচ্ছে কপিরাইট সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো৷ ই-লাইব্রেরির প্রথম স্তর যেখানে লাইব্রেরির বইগুলোর ব্যবস্থাপনা চলবে ডিজিটালের মাধ্যেমে, সে ব্যাপারে কারো আপত্তি নেই৷ কিন্তু আপত্তি হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপে যেখানে বইগুলোকেই ডিজিটালে রূপান্তরিত করা হবে৷ কেননা, বইগুলো ডিজিটাল হলে বাধাই করা কাগজের বইয়ের বিক্রি কমে যাবে৷ এতে প্রকাশনা শিল্প নামে প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে৷ ইতোমধ্যেই অনলাইনে অসংখ্য বইয়ের ডিজিটালে রূপান্তর করে গুগল এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে৷

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেসব বইয়ের কপিরাইটে কোনো সমস্যা হবে না, সে ধরনের পুরনো ও লুপ্ত প্রায় বইগুলো ডিজিটালে রূপান্তর করা জরুরি৷ এছাড়া কোনো লেখক বা প্রকাশক যদি তাদের প্রকাশিত বইকে ডিজিটালে রূপান্তর করার অনুমতি দেন তবে ডিজিটালে রূপান্তর করে তা সংরক্ষণ করা যেতে পারে৷ একথা অনস্বীকার্য, ডিজিটালে রূপান্তরের মাধ্যমে আমরা বইগুলোকে আজীবন সংরক্ষণ করতে পারি এবং খুব সহজেই তা পাঠকের কাছে পৌঁছান সম্ভব৷ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক বেশ কয়েকটি বই লেখকের মাধ্যমে কপিরাইটটি উন্মুক্ত অর্থাৎ পাবলিক ডোমেইন করার উদ্যোগ নেয়৷ বাংলাদেশে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের কপিরাইটগুলো উন্মুক্ত হবে সেটিই আশা করব৷

লাইব্রেরিতে না গিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই লাইব্রেরির বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এভাবেই ই-লাইব্রেরির মাধ্যমে উপভোগ করা সম্ভব৷ যদিও ই-লাইব্রেরির ধারণাটি বাংলাদেশে নতুন, তবুও সামনে এটি ব্যবহার করে শিক্ষার্থী, গবেষক ও বইপিপাসু মানুষ উপকৃত হবেন বলেই আমার বিশ্বাস৷

ড. মশিউর রহমান বর্তমানে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক৷ এছাড়া বর্তমানে e-learning, e-healthcare, e-gov, VoIP, call center ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করছেন৷ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে লেখকের সম্পাদিত পোর্টাল www.biggani.org। কজ


ফিডব্যাক : Mashiur.Rahman@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস