আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোপন প্রজেক্টের কাজ হাতে নিয়েছিলেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস৷ তার এ গোপন প্রজেক্টের কোড নাম ছিল মিলান৷ ২০০৭ সারে শেষের দিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্মাল কনফারেন্স-এ তিনি তার গোপন প্রজেক্টটি সবার সামনে তুলে ধরেন৷ একটি সাধারণ Surface বা টেবিল হয়ে যাবে অসাধারণ এক কমপিউটারে৷ তিনি তার এ কমপিউটারের নাম দিয়েছেন সার্ফেস কমপিউটার৷ আসলে এ সার্ফেস কমপিউটারই আগামী প্রজন্মের জন্য মাইলফলক হয়ে উঠবে যা সেতুবন্ধন তৈরি করবে ফিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল বিশ্বের মধ্যে৷ এরকম একটি সার্ফেস কমপিউটারের চিত্র-১-এ তুলে ধরা হয়েছে৷ এটি একটি ৩০ ইঞ্চি পর্দার মাল্টি টাচ সার্ফেস বা টেবিল কমপিউটার, যা শুধু হাতের আঙ্গুল দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবে৷ এখানে কোনো ধরনের কী বোর্ড, মাউস বা তারের ব্যবহার হবে না৷ এই মাল্টি টাচ পর্দা দিয়ে আপনি চালাতে পারবেন গান কিংবা সিনেমা৷ তেমনিভাবে ছবি ছোট করা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করা যাবে হাতের আঙ্গুলের মাধ্যমে৷ সেই সাথে যারা গেম খেলতে ভালোবাসেন কমপিউটারে তাদের জন্য থাকছে নতুন আঙ্গিকে নতুন ধরনের গেম যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না৷ এই একটি টেবিলে অনেক লোক একসাথে কাজ করার সুযোগ পাবে৷ এই সার্ফেস কমপিউটার ব্যবহার হবে হোটেল, ক্যাসিনো ও দোকানে৷ অনেকে এই সার্ফেস কমপিউটারকে বলছেন মাইক্রোসফট ইউনিভার্সেল কফি টেবিল৷ কেউ বলছেন মাল্টি টাচ সার্ফেস কমপিউটার৷ মাইক্রোসফট এই গোপন প্রজেক্টটির নাম দিয়েছে মাইক্রোসফট সার্ফেস কমপিউটিং সিস্টেম৷ বর্তমানে কিছু ক্যাসিনো ও হোটেলে এই টেবিল ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এখানে ক্রেতারা কোনো পণ্য সেই টেবিলে রাখার সাথে সাথে সেই পণ্য সম্পর্কে সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন৷ আসলে আপনি কোনো দোকানে একটি মোবাইল ফোন কিনতে গেলে সেই টেবিলে মোবাইলটি রাখার সাথে সাথে সেই মোবাইলের সব তথ্য পেয়ে যাবেন৷ আর এটি সম্ভব হবে মোবাইলের পেছনে রাখা বারকোডের মাধ্যমে৷ আবার কোনো হোটেলে খাবারের অর্ডার দিতে পারবেন এই টেবিলের মাধ্যমে৷ আর যারা কমপিউটার গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করছেন তারা হাতের দুই আঙ্গুলের সাহায্যে করতে পারবেন ছবি এডিটিং থেকে শুরু করে প্রিন্ট পর্যন্ত সবকিছু৷ আসলে কি আছে এই সার্ফেস কমপিউটারের ভেতরে৷ চিত্র-২-এ এই সার্ফেস কমপিউটারের ভেতরের অংশগুলো তুলে ধরা হয়েছে৷ এই কমপিউটারের অপারেটে সফটওয়্যার হবে উইন্ডোজ ভিসতা৷ এই টেবিলের ভেতরে থাকবে 1. Core 2 Duo Intel CPU, 2. Newish Video Card যা চলবে 2GB RAM-এ, 3. Impact resistant acrylic plastic screen, 4. পাঁচটি Semi-infrared Scanners/Cameras, 5. Projector, 6. Wirless Modem৷
এই সার্ফেসের দৈর্ঘ্য হবে ২২ ইঞ্চি, প্রস্থ হবে ৪২ ইঞ্চি৷ তাই আগামী প্রজন্মের কাছে এই কমপিউটার কি পরিমাণ জনপ্রিয়তা পায় তা সময়ই বলে দেবে৷ চিত্র-৩-এ দেখা যাচ্ছে একজন সাধারণ কমপিউটার ব্যবহারকারী অনেকগুলো ছবি থেকে শুধু নিজের হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে ছবি বাছাই করছেন৷ এবার তাকান চিত্র-৪-এ৷ এখানে একজন ব্যবহারকারী তার দুই হাতের সব আঙ্গুল ব্যবহার করে তৈরি করছেন গ্রাফিক্যাল ইমেজ৷ তেমনি যারা তুলি দিয়ে ছবি আঁকতে অভ্যস্ত তারাও তুলি ব্যবহার করে আঁকতে পারবেন ছবি৷ এরকম একটি ছবি চিত্র-৫-এ তুলে ধরা হয়েছে৷
এবার আসা যাক লেখালেখির জগতে- আপনার মাকে একটি চিঠি পাঠাতে চান তো আঙ্গুল দিয়ে লিখে পাঠিয়ে দিন আপনার মায়ের মোবাইল ফোনে৷ চিত্র-৬-এ এ রকমই বহির্প্রকাশ তুলে ধরা হয়েছে৷ আবারও হোটেলের কথায় আসি৷ ইচ্ছেমতো খাবারের অর্ডার করতে পারবেন এ টেবিলের মাধ্যমে৷ চিত্র-৭-এর দিকে তাকান৷ আর যত সব ব্লু-টুথ বা ওয়্যারলেস ডিভাইস আছে সেগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পারবে এই টেবিলের মাধ্যমে৷ চিত্র-৮-এ দেখা যাচ্ছে একটি ওয়্যারলেস ভিডিও ক্যামেরা হতে ছবি অন্য একটি ব্লু-টুথ যুক্ত মোবাইল ফোনে নেয়া হচ্ছে৷ তাই বলা যায় আগামী প্রজন্ম তাদের পড়াশোনা হতে শুরু করে আঁকাআঁকি, গান শোনা, ছবি দেখা সব কিছুই করবে ওই টেবিল টপ কমপিউটারে৷ চিত্র-৯-এ দেখা যাচ্ছে টেবিল টপ বা সার্ফেস কমপিউটারের মাধ্যমে রাস্তার মানচিত্র তৈরি করতে৷ এরকম আরো মজার মজার পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের সামনে আসছে মাইক্রোসফটের আগামী প্রজন্মের কমপিউটার-মাইক্রোসফট সার্ফেস কমপিউটার৷
কজ
ফিডব্যাক : redu0007@yahoo.com