• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সম্ভাবনার এফ-কমার্স এবং বিড়ম্বনার ফেসবুক
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: নিজস্ব প্রতিবেদক
মোট লেখা:১৪৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২১ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সম্ভাবনার এফ-কমার্স এবং বিড়ম্বনার ফেসবুক
সম্ভাবনার এফ-কমার্স এবং বিড়ম্বনার ফেসবুক

ড. বিএম মইনুল হোসেন

সম্প্রতি বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বন্ধ বা 
সাময়িকভাবে বিঘ্নিত থাকার ঘটনা ঘটেছে। এ কথা অস্বীকার 
করার উপায় নেই যে, সামাজিক বা ব্যক্তিগত খবরাখবর শেয়ারের 
পাশাপাশি ফেসবুকে খুব দ্রæতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে গুজব কিংবা ফেক 
নিউজ। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যবহারকারী কোনটি গুজব আর কোনটি 
আসল সংবাদ, সেটি আলাদা করতে ব্যর্থ হন। এই সুযোগে বিভিন্ন 
সময়ে আমরা দেখেছি, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকের মাধ্যমে 
ছড়িয়ে পড়া খবর ভাইরাল হয়ে অনেক বড় ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি 
করেছে। ফলে ফেসবুকের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই 
আশঙ্কায় গুজব প্রতিরোধের তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে সাময়িকভাবে 
ফেসবুক বন্ধ রাখা হয়ে থাকে। কিন্তু, এই ধরনের জোড়াতালি সমাধান 
যে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করবে এবং লাভের চেয়ে ক্ষতি 
বেশি হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে, সেটি চিন্তা করার সময় এসে গেছে। 
যদিও ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবেই সুপরিচিত, 
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের অংশ হিসেবেই ফেসবুককে কেন্দ্র করে 
এখন তৈরি হয়েছে অসংখ্য শিক্ষা কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট গ্রæপ, জীবন 
বাঁচাতে রক্ত দেয়া-নেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের জনহিতৈষী কার্যক্রম 
পরিচালিত হয় ফেসবুককে কেন্দ্র করে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য 
ব্যাপার হচ্ছে, ফেসবুককে কেন্দ্র করে বর্তমানে দেশে গড়ে উঠেছে 
এফ-কমার্স বা ফেসবুক কমার্স। বাংলাদেশে প্রায় চার কোটি ফেসবুক 
ব্যবহারকারী আছেন এবং ইতিমধ্যে এফ-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা 
শুরু করেছেন তিন লাখের অধিক উদ্যোক্তা। এর মধ্যে রয়েছেন 
উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী উদ্যোক্তা। বিভিন্ন হিসাব বলছে, কিছুদিনের 
মধ্যে এটি কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়ে উঠবে। খুব সহজেই 
অনুমান করা যায় যে, সময়ের সাথে সাথে আরো উদ্যোক্তা যুক্ত হতে 
থাকবেন এই মাধ্যমটিতে। ইতিমধ্যেই ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক 
যোগাযোগমাধ্যমের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত ব্যবসা বা সোশ্যাল 
কমার্স খাত সারা বিশ্বে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে গেছে। 
এফ-কমার্স দ্রæতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ার বেশ কিছু যৌক্তিক কারণও 
আছে। প্রথমত, নিজস্ব একটি সাইট তৈরি করার জন্য হোস্টিংসহ 
অন্যান্য যে আয়োজন করতে হয়, সেটি এফ-কমার্সে প্রয়োজন হয় না। 
বলতে গেলে একটি বিশ্বমানের সাইট অর্থাৎ ফেসবুক ইতিমধ্যে এই 
ধরনের উদ্যোক্তাদের প্রস্তুত হয়ে আছে। দ্বিতীয়ত, প্রাথমিক পর্যায়ের 
যে মার্কেটিং বা বাজার যাচাইকরণ সেটিও প্রয়োজন পড়ছে না। কারণ, 
ফেসবুকে থাকা বন্ধু বা ফলোয়ারদের কাছে সহজেই নিজ পণ্যের বা 
ব্যবসার তথ্য পৌঁছে দেয়া যায় এবং পণ্যের চাহিদা কেমন সে ব্যাপারে 
প্রাথমিক একটা ধারণা পাওয়া যায়। তৃতীয়ত, সাইট ব্যবহারকারীদের 
আলাদাভাবে সময় ব্যয় করে জানতে হয় না, প্ল্যাটফর্মটি কীভাবে 
ব্যবহার করতে হয়। কারণ, ক্রেতারা ফেসবুক ব্যবহারকারী হওয়ার 
কারণে ইতিমধ্যে জানেন কীভাবে সাইটটি কাজ করে। একজন ক্ষুদ্র 
উদ্যোক্তার জন্য এই সুবিধাগুলো আশীর্বাদ এবং পণ্য প্রস্তুত থাকলে 
বলতে গেলে তৎক্ষণাৎই ব্যবসা শুরু করে দেয়া যায়। 
এফ-কমার্সনির্ভর এই উদীয়মান অর্থনীতি সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা 
না পেলে অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে। এখানে অর্থনীতির আকারের 
চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, প্রান্তিক মানুষের এই ব্যবসায় অংশগ্রহণ করার 
সুযোগ, নারী উদ্যোক্তাদের স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করতে পারার 
ড. বিএম মইনুল হোসেন
২৭ কমপিউটার জগৎ মে ২০২১এফ-কমার্স
সুযোগ। এমনকি বেকার সমস্যা 
দূরীকরণের একটি প্রাথমিক হাতিয়ারও 
হয়ে উঠতে পারে এই এফ-কমার্স। 
এই মুহূর্তে এই খাতটিতে প্রয়োজন 
কার্যকর নীতিগত সহায়তা এবং 
ব্যবসায়বান্ধব পরিবেশ। ট্রেড লাইসেন্স 
নামক নিয়মটি যতই সহজকরণ করা 
হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া হোক না কেন, 
প্রান্তিক মানুষের মনে এটি নিয়ে এক 
ধরনের অনীহা কাজ করে। যার ফলে 
ফেসবুকনির্ভর এই ব্যবসাগুলো ট্রেড 
লাইসেন্সের পরিবর্তে অন্য কোনো একটি 
নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোতে নিয়ে আসা 
সম্ভব হলে একদিকে সরকারের কাছে 
যেমন হিসেব থাকবে, অন্যদিকে এফ-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্যও আইনি 
বা অন্যান্য সুবিধাদি পাওয়া সহজ হবে। 
প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রেড লাইসেন্স পেতে অনীহা থাকলে জাতীয় 
পরিচয়পত্র ব্যবহার করে, সহজে অন্য কোনো ব্যবসা পরিচালনার 
আইডি বা নিবন্ধন দেয়া যায় কিনা সেটিও ভেবে দেখা যেতে পারে। 
এফ-কমার্স ব্যবসার এই ধরনের নিবন্ধন থাকলে পেজের সাথে 
নিবন্ধন নম্বরটি সংশ্লিষ্ট থাকলে, সেটি অনেক বেশি বিশ্বস্ত হয়ে উঠবে। 
ফেসবুক পেজের কাভারে বা সাইটের ওপরে নিবন্ধন নাম্বারটি থাকলেই 
ক্রেতা সেটি সহজেই দেখতে পারবে। শুধু তাই নয়, অনলাইনে আগে 
থেকে নির্দিষ্ট করার একটি সাইটে সেই নম্বর দিয়ে যাচাই করে নেয়া 
যাবে, সংশ্লিষ্ট এফ-কমার্স সাইটটি আসলেও নিবন্ধিত কিনা। বাণিজ্য 
মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন বা দপ্তর এই নিবন্ধন ব্যবস্থাপনার 
কাজটি করতে পারে।
কিন্তু আশঙ্কার কথা হচ্ছে, কিছুদিন পরপরই আমরা যদি ফেসবুক 
বন্ধ পাই, সেক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা 
সৃষ্টি হয়, সকল স্তরের অংশীজনেরা যে 
বিড়ম্বনার শিকার হয়, তা কাটিয়ে ওঠা 
দিন দিন আরো কঠিন হয়ে পড়বে। 
এরকম চলতে থাকলে ফেসবুককেন্দ্রিক 
যে বাণিজ্যের দরজা উন্মুক্ত হয়েছে, 
সেটি বন্ধ হয়ে যেতে বা সেটিতে 
অনাগ্রহ সৃষ্টি হতেও বেশি সময় 
লাগবে না। বিনিয়োগকারী, ক্রেতা, 
বিক্রেতাসহ শুরু করে সকল স্তরেই 
সৃষ্টি হবে হতাশার। ‘অনিশ্চয়তা’ 
ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বড় 
ধরনের অন্তরায়। 
লেখার শুরুতেই বলেছি যে, 
গুজব সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যে ভ‚মিকা 
থাকে, সেটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু, সেই সমস্যার 
একমাত্র সমাধান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া নয়। 
ক্ষেত্রবিশেষে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পাওয়ার কথাও 
আলোচনায় এসেছে। রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটলে এই অজুহাতে কেউ রাস্তা 
বন্ধ করে বসে থাকে না; কোনো দেশের সাথে চুক্তি সফল না হলে কেউ 
সে দেশের সাথে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় না, আলোচনা করে, ক‚টনৈতিক 
পন্থা অবলম্বন করে; ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যৌক্তিক কথা শুনতে না চাইলে 
ফেসবুক বন্ধ করে দেব আওয়াজ তোলাটাও কোনো সমাধান হতে 
পারে না, বরং অব্যাহতভাবে আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে সমস্যার 
সমাধান করা যাবে, তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আমরা কীভাবে 
লাভবান হতে পারি, সেটি খুঁজে বের করাই হওয়া উচিত আমাদের 
পরবর্তী পদক্ষেপ
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০২১ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস