লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
নিজস্ব প্রতিবেদক
মোট লেখা:১৪৪
লেখা সম্পর্কিত
ইন্টারনেট মার্কেটার আপনার কাস্টমারের ডাটা ট্র্যাক করছেন তো?
ইন্টারনেট মার্কেটার আপনার কাস্টমারের ডাটা ট্র্যাক করছেন তো?
মাহফুজ ইসলাম নিলয়
ইদানিংকালের ফেসবুকের বিজনেস পেজ বা গ্রুপগুলোতে
আলোচনার অন্যতম হট টপিক ‘আপনার বিজনেসের জন্য কেন
ওয়েবসাইট থাকা জরুরি’। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বেশিরভাগই
যে যুক্তি দেন সেটা হলো যারা এফ-কমার্স করেন মানে শুধুমাত্র
ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে যারা বিজনেস করেন, কোনো কারণে
যদি বাংলাদেশ সরকার ফেসবুক বন্ধ ঘোষণা করে বা ফেসবুকই যদি
তার পেজকে বন্ধ করে দেয়, তাহলে তার পুরো বিজনেস এখানেই
শেষ। তার নিজের কোনো কন্ট্রোল নেই এখানে।
আর কিছু মানুষ হয়তো যুক্তি দেন যে, ওয়েবসাইট থাকলে
আপনার কাস্টমাররা দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই আপনাকে খুঁজে পাবেন।
যখন খুশি তখন অর্ডার করতে পারবেন। সব প্রোডাক্ট সাজানো
গোছানো অবস্থায় ওয়েবসাইটে খুঁজে পাবেন। প্রাইস, কালার, সাইজ,
অন্য যেকোনো স্পেসিফিকেশন জানতে পারবেন কোনো ধরনের
হয়রানি ছাড়াই। এজন্য আপনার মেসেজের রিপ্লাইয়ের অপেক্ষায় বসে
থাকতে হবে না। আপনাকেও আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে হবে
না মেসেজিংয়ের পেছনে।
ওপরের সবগুলো কারণই ভ্যালিড। কিন্তু তারপরও আমার মনে হয়
এক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট সবাই মিস করে যায়। কেউই
আলোচনা করে না। তা হলো ওয়েবসাইট থাকলে কাস্টমারের বধপয
্ বাবৎু ফধঃধ ট্র্যাক করতে পারবেন। অবশ্য বুস্টিংনির্ভর বাংলাদেশে
হয়তো এতটা আশা করাও বোকামি। সবাই শুধু শর্টকাট খোঁজেন।
এখানে বধপয ্ বাবৎু ফধঃধ বলতে আবার কাস্টমারের পার্সোনাল
ডাটাকে বুঝায় না। এমন নয় যে কাস্টমারের নাম, ঠিকানা, বয়স
পেয়ে যাবেন। তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই। কাস্টমারের ডাটা
বলতে এখানে কাস্টমার আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর কেমন
বিহেভিয়ার করছেন, কোন কোন পেজ ভিজিট করছেন, কত সময় ধরে
ভিজিট করছেন, কাস্টমার টেম্পারাচার কেমন (কোল্ড, ওয়ার্ম, হট)
ইত্যাদি বুঝায়।
ধরুন, আপনি একটি ফেসবুকে অ্যাড ক্যাম্পেইন রান করলেন,
সেই ক্যাম্পেইনে একটি লিংকের মাধ্যমে আপনার কাস্টমারদেরকে
ওয়েবসাইটের একটি নির্দিষ্ট ল্যান্ডিং পেজে ল্যান্ড করালেন। পেজে
ল্যান্ড করার পর কাস্টমার দুটি কাজ করতে পারেন। হয় তিনি ল্যান্ডিং
পেজ ঘুরেই চলে যেতে পারেন অন্য কোনো পেজ ভিজিট না করেই,
অথবা ল্যান্ডিং পেজ দেখে আকৃষ্ট হয়ে ওয়েবসাইটের অন্যান্য পেজেও
তিনি ভিজিট করতে পারেন।
ধরলাম, কাস্টমার ল্যান্ডিং পেজ দেখে আকৃষ্ট হয়ে আরো কিছু
রিলিভেন্ট পেজ ভিজিট করলেন। সম্ভাব্য কাস্টমার জার্নিটা নিচে
দেখানো হলোÑ
ল্যান্ডিং পেজ > প্রোডাক্ট পেজ-১ > প্রোডাক্ট পেজ-২...৫ > অ্যাড
টু কার্ট > ভিউ কার্ট > প্রোসিড টু চেক আউট > বিলিং ডিটেইলস >
প্লেস অর্ডার।
এখন কিছু মানুষ ল্যান্ডিং পেজ থেকে প্রোডাক্ট পেজ পর্যন্ত যাবেন,
কিছু মানুষ ১টি প্রোডাক্ট পেজ ভিজিট করবেন, কিছু মানুষ ২টি, কিছু
মানুষ ৩/৪/৫...। এখন যে মানুষ ১টি প্রোডাক্ট পেজ ভিজিট করবেন
তার তুলনায় যে ২টি/৩টি পেজ ভিজিট করবে তিনি বেশি পটেনশিয়াল,
তাই না? এভাবে যে কাস্টমার ৪/৫ বা আরো বেশি প্রোডাক্ট পেজ
ভিজিট করবেন তিনি ২/৩টি পেজ ভিজিট করা মানুষের তুলনায় আরো
বেশি পটেনশিয়াল?
এভাবে যে কাস্টমার শুধু প্রোডাক্ট পেজ ভিজিট করবেন তার
তুলনায় যিনি অ্যাড টু কার্ট করবেন তিনি বেশি পটেনশিয়াল? কারণ,
তিনি আরো একধাপ বেশি এগিয়েছেন। যিনি ভিউ কার্ট করেছেন
তিনি অ্যাড টু কার্ট করা মানুষের তুলনায় বেশি পটেনশিয়াল? আবার
যিনি প্রোসিড টু চেক আউট করেছেন তিনি ভিউ কার্টের তুলনায় বেশি
পটেনশিয়াল? যিনি বিলিং ডিটেইলস দিয়ে প্লেস অর্ডার করেছেন
তিনি সবার চেয়ে বেশি পটেনশিয়াল। এক কথায় বলতে গেলে তিনি
অলরেডি কনভার্সন করেই ফেলেছেন।
এতকিছু বলার কারণ আপনাদেরকে কাস্টমার জার্নিটা বুঝানো
আর কাস্টমার টেম্পারাচার সম্পর্কে আইডিয়া দেওয়া। গুরুত্বটা
বুঝানো।
মাহফুজ ইসলাম নিলয়
২৯ কমপিউটার জগৎ মে ২০২১ইন্টারনেট
একজন কাস্টমার আপনার
ওয়েবসাইটে আসার পর কত
সময় থাকলেন, কোন কোন
পেজ ভিজিট করলেন, কোন
পেজ কত পার্সেন্ট স্ক্রল করলেন,
কোনো ফাইল ডাউনলোড
করলেন কিনা, ওয়েবসাইটে
কোনো ভিডিও থাকলে তা
ওপেন করলেন কিনা, করলে
কত পার্সেন্ট ভিউ করলেন,
ভিডিওর প্লে, পস অথবা স্টপ
বাটনে ক্লিক করলেন কিনা,
ওয়েবসাইটের কোনো ইমেজের ওপর ক্লিক করলেন কিনা, অ্যাড টু
কার্ট-ভিউ কার্ট-প্রোসিড টু চেক আউট-প্লেস অর্ডার-সাবস্ক্রিপশনসাবমিট বাটনে ক্লিক করলেন কিনা, কোনো আউটবাউন্ড লিংকে ক্লিক
করলেন কিনা, ওয়েবসাইটে থাকা ফোন নাম্বার-ইমেইল অ্যাড্রেসে ক্লিক
করলেন কিনা এসব কিছু ট্র্যাক করা যায় খুব সহজেই।
শুধু তাই নয়, কাস্টমারের লোকেশন, ডেমোগ্রাফি, ইন্টারেস্ট,
ডিভাইস, কোন কোন পথ পাড়ি দিয়ে মানে কোন ডিভাইস/মিডিয়াম
ব্যবহার করে এসে আপনার প্রোডাক্ট কিনেছেন ইত্যাদি ছাড়াও আরো
অনেক কিছু ইনডিটেইলস ট্র্যাক করা যায়, যা আপনার ধারণারও
বাইরে।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন, এত কিছু ট্র্যাক করে কী হবে?
কাস্টমারের এত ইনফরমেশন দিয়ে কী করব?
এই প্রশ্ন আপনার মাথায় আসার কথা নয়। আর যদি ভুলক্রমে
আসেও তাহলে বলার কিছুই নেই। আপনি ব্যবসা করবেন অথচ
আপনার কাস্টমার বিহেভিয়ার বোঝার গুরুত্বটা আপনি এখনো বুঝতে
পারছেন না? কাস্টমার কী করেন, কোথায় থাকেন, ইন্টারেস্ট কী,
আপনার ওয়েবসাইটে গিয়ে তিনি কী করেনÑ এসব কিছু জানার
কোনোই প্রয়োজন নেই? কী বলেন আপনি এসব?
বিশ্বখ্যাত ম্যানেজমেন্ট গুরু পিটার ড্রাকার একটি কথা বলেছেন,
“ওভ ুড়ঁ পধহ’ঃ সবধংঁৎব রঃ, ুড়ঁ পধহ’ঃ রসঢ়ৎড়াব রঃ.”
আসলেও তাই। আপনি ব্যবসায় উন্নতি করতে চান অথচ আপনার
কাছে কাস্টমারের ডাটা নেই, স্ট্যাটিস্টিক্স নেই এটা একপ্রকার
ব্যর্থতাই বলা চলে।
পরিশেষে দুই-একটি স্ট্যাটিস্টিক্স বলে যাই যাতে করে আপনার
মনে কিছুটা হলেও চিন্তার উদ্রেক হয়।
১। ই-কমার্স জগতে অ্যাভারেজ কার্ট এবান্ডনমেন্ট রেট ৬৯.৫৭
শতাংশ। মানে এত মানুষ প্রোডাক্ট কার্টে অ্যাড করার পরও না কিনেই
চলে যান।
২। মোবাইল ইউজারদের মধ্যে এরচেয়েও বেশি এবান্ডনমেন্ট
রেট দেখা যায়, যা ৮৫.৬৫ শতাংশ।
৩। ই-কমার্স ব্র্যান্ডগুলো প্রতি বছর ১৮ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ
লস করে এই উচ্চ এবান্ডনমেন্ট রেটের কারণে। (যঃঃঢ়ং://ঃরহুঁৎষ.
পড়স/৫৪৭৪বশহয)
৪। ২৫ শতাংশ অনলাইন ভিউয়ার রিটার্গেটেড অ্যাড দেখতে
পছন্দ করেন।
৫। যেসব ওয়েবসাইট ভিজিটরদেরকে রিটার্গেটেড অ্যাড দেখানো
হয় তাদের কনভার্ট হওয়ার হার
৪৩ শতাংশ।
৬। ই-মার্কেটারের
তথ্যমতে, প্রতি ৫ জন
ভিজিটরের মধ্যে ৩ জন
রিটার্গেটিং অ্যাডসকে গুরুত্ব
দিয়ে থাকেন যেসব প্রোডাক্টের
অ্যাড তারা ইতোমধ্যে অন্য
কোথাও দেখেছেন।
৭। যেকোনো সচরাচর
ডিসপ্লে অ্যাডের চাইতে
রিটার্গেটিং অ্যাডের ঈঞজ ১০
গুণ বেশি হয়। (যঃঃঢ়ং://ঃরহুঁৎষ.পড়স/৪ংয৩ু৬াঁ)
৮। যেখানে সাধারণ অ্যাড থেকে কনভার্সন রেট আসে সর্বোচ্চ
১-২ শতাংশ, সেখানে রিটার্গেটিং অ্যাডের কনভার্সন রেট ৫-৭ শতাংশ
পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই যে এত মানুষ কার্টে প্রোডাক্ট অ্যাড করছেন তারা কিন্তু
আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে ইন্টারেস্টেড বলেই কার্টে অ্যাড করছেন।
কিন্তু বিভিন্ন কারণে তারা এবান্ডন করছেন। সেটা হতে পারে
বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব, টেকনিক্যাল ইরোর, পরে কিনবেন বলে কার্টে
অ্যাড করে রাখেন কিন্তু পরে ভুলে যান, পেমেন্ট করার মতো অবস্থায়
থাকেন না ইত্যাদি। এখন এসব হাইলি ইন্টাররেস্টেড মানুষকে যদি
আপনি রিটার্গেটিং করে বারবার প্রোডাক্টের অ্যাড দেখাতে থাকেন
সম্ভাবনা খুবই বেড়ে যায় যে তারা আপনার প্রোডাক্ট কিনবেন। এক্ষেত্রে
কনভার্সন রেট খুবই হাই হয়। রিটার্গেটিংয়ের ফলে একই জিনিস
বারবার দেখতে দেখতে প্রোডাক্টের কথা কাস্টমারের মনে গেঁথে যায়
ভালোভাবে, তাদের স্মরণে পড়ে যে প্রোডাক্ট কার্টে অ্যাড করেছিলেন,
প্রোডাক্টটি তাদের প্রয়োজন, বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
আর এতসব কিছু করার জন্য আপনার কাস্টমারের ডাটা ট্র্যাক
করা প্রয়োজন। আপনার কাছে যদি ডাটাই না থাকে, তাহলে আপনি
জানবেন কী করে যে আপনার ওয়েবসাইটে আসার পর কে কী করলেন?
আপনি যখন সাধারণ বুস্টিং মারেন তখন সবার কাছেই
অ্যাড যায়। কিন্তু তা না করে আপনি যদি ডাটা-ড্রিভেন ওয়েতে
অ্যাডভার্টাইজিং করেন, সঠিক কাস্টমার ইনসাইট ইউজ করেন,
তাহলে শুধুমাত্র আপনার প্রোডাক্টের প্রতি ইন্টারেস্টেড এমনসব
মানুষের কাছেই আপনার অ্যাড পৌঁছে যাবে। প্রাথমিক ফিল্টার করে
হাইলি ইন্টারেস্টেড অডিয়েন্সের প্রতি রিটার্গেটিং অ্যাড চালালে তো
কথাই নেই। কনভার্সন রেট বেড়ে যাবে হু হু করে।
এই ডাটা-ড্রিভেন মার্কেটিংয়ের আরেকটি বড় অ্যাডভান্টেজ
হচ্ছে আপনি আপনার অডিয়েন্সকে বিভিন্ন সেগমেন্টে ভাগ করে
বিভিন্ন ধরনের কাস্টম অডিয়েন্স তৈরি করতে পারেন এবং তা থেকে
পরবর্তীতে লুকএলাইক অডিয়েন্স তৈরি করতে পারেন। (লুকএলাইক
অডিয়েন্স বলতে বুঝায় আপনার ওয়েবসাইটে যেসব অডিয়েন্স অ্যাড
টু কার্ট করেছেন তাদের মতো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আরো যেসব অডিয়েন্স
আছেন তারা)।এখনো কি আপনি যথেষ্ট ইম্প্রেসড নন কাস্টমার ডাটা ট্র্যাক করার প্রতি?