• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > স্মার্ট বাংলাদেশ ও আমাদের অগ্রযাত্রা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: নিজস্ব প্রতিবেদক
মোট লেখা:১৪০
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২৪ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
স্মার্ট বাংলাদেশ ও আমাদের অগ্রযাত্রা
সাইবার সিকিউরিটির বিদ্যমান সক্ষমতা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সৃষ্ট চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ব্যাপকভিত্তিক ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে হঠাৎ করে বিপুল ডিজিটাল কর্মকাণ্ড অচল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে। তিনি স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর হতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। জিরো ডিজিটাল ডিভাইড ও সর্বজনীন সংযোগ নিশ্চিতকরণে করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড সর্বজনীন সংযোগ নিশ্চিত করতে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংযোগ প্রদানের চেষ্টা করছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) জানায় যে, আইএসপিএবি গ্রাহক সংযোগ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে নেশানওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) দেশব্যাপী ক্যাবল সংযোগ দিয়ে থাকে। বিদ্যমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনা করে বর্তমান এনটিটিএন—এর সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। তাই এ সংখ্যা বাস্তবতার নিরিখে বৃদ্ধি করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে বিভাগীয় পর্যায়ে এনটিটিএন লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার সময় এসেছে।

ইন্টারনেট ক্যাবল দেশব্যাপী আন্ডারগ্রাউন্ড না ওভারহেড হবে— সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত থাকা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ঢাকার ধানমন্ডিতে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল সংযোগের পাইলটিং সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত পাইলটিংয়ের ফলাফলের আলোকে দেশব্যাপী তা বাস্তবায়ন করা হলে ঝুলন্ত ক্যাবলের দৃষ্টিকটু উপস্থিতি দূর করা সম্ভব হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে ক্যাবল কাটার বিড়ম্বনা নিরসনে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা সম্ভব না হলে সর্বজনীন, মানসম্পন্ন ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা দুরূহ হবে। এ প্রসঙ্গে এ বিভাগের সচিব আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল সংযোগের বিষয়ে আইএসপিএবি হতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনার জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এছাড়া একটিভ শেয়ারিং চালু করা হলে ক্যাবলের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে মর্মে আইএসপিএবির পক্ষ থেকে জানানো হয়। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর্স অব বাংলাদেশ (এমটব) এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, কানেক্টিভিটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মৌলিক স্তম্ভ। এটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম। তাই কানেক্টিভিটি সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটিভ শেয়ারিং কার্যক্রম গ্রহণ করে তা স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

এনটিটিএন—এর ক্ষেত্রে রোল আউট অবলিগেশন মানতে বাধ্য করে অথবা নতুন এনটিটিএন অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তারবিহীন সংযোগ প্রদানে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমটব) প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশব্যাপী গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভবপর হবে।

সংযোগের ক্ষেত্রে সেইফ প্যাসেজ ওয়ান সাইবার সিকিউরিটির ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন করেন। এছাড়া ক্যাবল, ট্রান্সমিশন ও ডাটার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন। এছাড়া বেইজ ট্রানসিভার স্টেশন (বিটিএস) ফাইবারাইজেশন ও একটিভ শেয়ারিং এর প্রস্তাব করেন।

সাইবার সিকিউরিটির বিদ্যমান সক্ষমতা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সৃষ্ট চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ব্যাপকভিত্তিক ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে হঠাৎ করে বিপুল ডিজিটাল কর্মকাণ্ড অচল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।

বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্টসমূহ (এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। এর জন্য সরকার যুবকদের বিভিন্ন চাকরির সুযোগ তৈরি করছে। এছাড়াও সুনির্দিষ্ট চাকরি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। কর্মসংস্থান এবং আত্ম—কর্মসংস্থানের জন্য এগিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এটি করাই এখন জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার সফলভাবে বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশ এখন নতুন কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করছেন। আজকের শিক্ষার্থীরাই একদিন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর গড়ে উঠবে ২০৪১ সাল একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যার চার ভাগের একভাগ তরুণ, যা প্রায় ৫ কোটির কাছাকাছি। নির্বাচনে তরুণদের ভোট মূল ফ্যাক্ট হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমান সরকার তরুণবান্ধব সরকার। শেখ হাসিনা তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে কাজ করে যাচ্ছে।

দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মহীন যুব সমাজকে জনশক্তিতে রূপান্তর ও তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুবদের বিভিন্ন পেশায় প্রশিক্ষণ অর্জন এবং তাদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার পথ নির্দেশকসমূহ হচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

দেড় দশকে বাংলাদেশ একটি গতিশীল ও দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মর্যাদা লাভ করেছে। নতুন করে সরকারে এসে সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নয়নে আরও পদক্ষেপ নিয়েছে দলটি, যার মধ্যে আছে উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। আর সেটি বাস্তবায়নে তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। সে লক্ষ্যে নির্বাচনের সময় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ ও যুবসমাজকে মূল ভূমিকা রাখার ওপর নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন বক্তব্যে ফুটে ওঠে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যে ১১ বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় নম্বরে কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। এটি অবশ্যই একজন তরুণের জন্য আনন্দের। একজন তরুণ হিসেবে অপর তরুণদের সঙ্গে তারুণ্যের আড্ডাই দেশের বিভিন্ন প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নানা আলাপ হয়। সবারই মতামত, আকাক্সক্ষা, চাহিদা, বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের পথে। সবাই বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে সমর্থন করে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ সমাজকে শিক্ষা—দীক্ষায়, জ্ঞানে এবং প্রযুক্তি বিজ্ঞানে অত্যন্ত দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি ও ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ইন্টারনেটে ও স্মার্ট ফোনের সহজলভ্যতার কারণে সরকারি সব সেবা দ্রুত ও ঘরে বসে পাচ্ছে। একসময় যে কাজ করতে প্রচুর অর্থ, শ্রম ও সময় লাগত তা বর্তমানে এক ক্লিকে ঘরে বসে করা যাচ্ছে। তারুণ্যের শক্তি স্মার্ট ও আধুনিক বাংলাদেশের মূল প্রতিনিধিত্ব হিসেবে কাজ করছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের সহযোগিতা বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা আশা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত রূপকল্প ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করতে যে মহাপরিকল্পনা তা বাস্তবায়নের অগ্রসৈনিক হিসেবে কাজ করবে তারুণ্যের দল।

বেকার যুবকদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩.০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। নিরক্ষর ও স্বল্প—শিক্ষিত তরুণ ও যুব—সমাজের জন্য যথোপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগীদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এবং ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হবে। যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ধীরে ধীরে দেশের সকল উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হবে।

শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা ১৭.৮ শতাংশ যুবদের অনুপাত আগামী ৫ বছরে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। আগামী ৫ বছরে ২ লাখ যুবকের মাঝে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ বিতরণ করা এবং ২ লাখ ৫০ হাজার যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে দেশে—বিদেশে বিকাশমান কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটগুলো ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

যুবসমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় পাঠাগার স্থাপন, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক ও শরীরচর্চা কেন্দ্র এবং ‘স্মার্ট ইয়ুথ হাব’ গড়ে তোলা হবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ পদওয়ার জন্য বিশেষ সেল গঠন করে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে। অসহায়, অসমর্থ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম যুবদের শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হবে। এসব সবার পাশাপাশি হালকা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ এবং উপকরণে বিনিয়োগ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তাই ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তরুণদের পছন্দ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাতে দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নির্বাচনে ভোট দিয়েছে তরুণরা।
স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর হতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে এবং স্টেম যেমন সায়েন্স, টেকনোলজি, প্রকৌশল, আর্টস ও ম্যামমেটিকস শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

বিটিআরসি কর্তৃক টেলিকম অপারেটরদের লাইসেন্স নবায়নের সময় রোল আউট অবলিগেশন যাচাই করে দেখা হলে ইন্টারনেট সংযোগ বিস্তার সহজ হবে। রোল আউট অবলিগেশন পূরণে ব্যর্থ হলে, সরকার প্রয়োজনে আইএসপি সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। সভাপতি বলেন যে, বিটিআরসির বিদ্যমান জনবল দিয়ে রোল আউট অবলিগেশন পূরণ ও গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয়টি যাচাই করার সক্ষমতা নেই। বিটিআরসিকে এ বিষয়ে জোর দিতে হবে।
কেবল সর্বজনীন সংযোগই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যথেষ্ট নয়। এ জন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর থেকে সেন্টার অফ এক্সিলেন্স তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিটিআরসির নিকট থেকে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু বিটিআরসিতে কোনো টেস্টিং ল্যাব নেই। সেক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত কিংবা আমদানিকৃত টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতির গুণগতমান যাচাই করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টেস্টিং ল্যাব থাকা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে টেলিযোগযোগ অধিদপ্তরে একটি সমীক্ষা প্রকল্প চলমান রয়েছে।
গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ নিতে ফাইবার প্রয়োজন। এনটিটিন অপারেটর বিশেষ করে বিটিসিএল যদি এমএনওগুলোর সঙ্গে কাজ করে কোথায় কোথায় টাওয়ার বসাতে হবে তা নির্ধারণ করে নিতে পারে এবং ক্যাবল টাঙানোর পথে যত স্কুল, কলেজ বা গ্রোথ সেন্টারে যদি সংযোগ দেওয়া যায়, তাহলে একই বিনিয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। এ ধরনের ক্যাবল সংযোগের ক্ষেত্রে বিটিসিএলের আর্থিক সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। তবে এমএনওগুলো থেকে অগ্রিম নিয়ে বিটিসিএল হতে এ ধরনের সংযোগ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে। বর্তমানে প্রায় সকল উপজেলা পর্যায়ে সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এর পরবর্তী ধাপ হবে গ্রাম। গ্রাম থেকে বাড়ি বাড়ি সংযোগের বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। গ্রামপর্যায় পর্যন্ত সংযোগের পরিকল্পনা মধ্যমেয়াদি এবং বাড়ি বাড়ি সংযোগের লক্ষ্যমাত্রা দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে করা যায়।

বিটিআরসি পক্ষ থেকে জানানো হয় রিইনফোর্সমেন্ট প্ল্যানিং করা প্রয়োজন হবে। প্রতিটি ডিজিটাল ডিভাইসে সংযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে রিসোর্স শেয়ারিং—এর বিকল্প নেই। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থায় ডিজিটাল নিটারেসি অন্তর্ভুক্ত করার কার্যক্রম গ্রহণের জন্য হিউম্যান রিসোর্স আই ডিজিটাল রিসোর্স—এর মধ্যে ইন্টারফেস বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তিনি নন—ফাঙ্গিবল টোকেন (এনএফটি) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) স্পেস টেকনোলজি ইত্যাদির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া সেমি কন্ডাক্টর উৎপাদন, ন্যানো টেকনোলজি, প্রপার টেকনোলজির জন্য অবকঠামো উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন।

টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষ থেকে রাস্তা মেরামত, সংস্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানির লাইন মেরামত ও সংস্কারের সময় বিপুল পরিমাণ ক্যাবল কাটা পড়ে। এক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। অন্যথায় সর্বজনীন সংযোগ নিশ্চিত করে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে।

লক্ষ্য অর্জনে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও দাখিলের জন্য দপ্তর ও সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দদের নিয়ে কারিগরি উপকমিটি গঠন করতে হবে। গঠিত কারিগরি উপকমিটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য ক্ষেত্রসমূহের কার্যক্রমের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। উক্ত কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নকারী এবং লক্ষ্যমাত্রা ও সময়সীমা উল্লেখ করতে হবে। জিরো ডিজিটাল ডিভাইড ও সর্বজনীন সংযোগ কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সকল দপ্তর ও সংস্থা হতে ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করতে উদ্দেশ্য, সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয় নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ও মতামত প্রেরণ করতে হবে। কার্যপরিধি সংশ্লিষ্ট করণীয় সম্পর্কে আইএসপিএবি, এমটব ও বাক্কো একসাথে কাজ করবে। কানেক্টিভিটির বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যয় কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। বাংলা ভাষায় প্রযুক্তির ব্যবহােও জোর দিতে হবে এবং নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলা ব্যবহার করতে হবে।

স্মার্ট বাংলাদেশের মূল সারমর্ম হবে— দেশের প্রতিটি নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে, সেই সঙ্গে অর্থনীতির সমস্ত কার্যক্রম আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে করব। আমাদের সমস্ত সমাজটাই হবে স্মার্ট সমাজ। সেই বিবেচনায় ২০২১ থেকে ৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন শুরু হয়ে গেছে অর্থাৎ ২০২১ থেকে ২০৪১ কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নটা হবে, তার একটা কাঠামো পরিকল্পনা বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি শত শত বছরের পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করে সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি পাল্টে দিয়েছে চিরচেনা বাংলাদেশ, অভাবনীয় রূপান্তর ঘটেছে মানুষের জীবনযাত্রার। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপান্তরের স্থপতি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদের সুচিন্তিত দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমানে শতভাগ মানুষের হাতের নাগালে মোবাইল ফোন এবং শতভাগ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায়। ২০০৮ সালে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ছিল চার কোটি ৬০ লাখ, বর্তমানে এ সংখ্যা এসে তা ১৮ কোটি ৮৬ লাখ অতিক্রম করেছে। সে সময় ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল মাত্র ৪০ লাখ, বর্তমানে যার ১৩ কোটি ৩০ লাখ। টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত লাইসেন্স ছিল যেখানে ৬০৮টি, বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৯৬টি। স্মার্টফোন ব্যবহার করছে প্রায় ৫.৯২ গ্রাহক। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হাজার হাজার তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফাইবার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণ করা হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, হাওড়, বিল, চর, পাহাড়, উপকূলীয় ও দ্বীপ এলাকায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে।

দেশে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানি শুরু হয়েছে। সারাদেশ ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা ফাইভজি যুগে প্রবেশ করেছি। ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট—২ উৎক্ষেপণ, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ স্থাপন এবং ফাইভজি চালুর বিষয়ে যে প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে তা বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হয়েছে করেছে।

মোবাইল ফোন ও নেটওয়ার্ক এখন মানুষের জীবনের শ্বাস—প্রশ্বাসের মতো। বর্তমানে মোবাইল ফোনের বাজারের শতকরা ৯৭ ভাগই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। মোবাইল ফোন এবং এর বিভিন্ন অ্যাপসের ব্যবহার, উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ওভার দ্য টপ (ওটিটি) অ্যাপস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্যাটেলাইটসহ আধুনিক টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি দেশের জনগণের জীবনকে সহজ ও সাবলীল করেছে। আমাদের মূল লক্ষ্য সবার কাছে মানসম্মত, নিরাপদ ও সুলভমূল্যে টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করা। এ দেশের মেধাবী, তারুণ্যদীপ্ত ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ প্রতিটি গ্রাম ডিজিটাল গ্রামে রূপান্তর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে ঘরে বসেই তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা নিচ্ছে প্রান্তিক মানুষ, ঘরে বসে পাচ্ছে টেলিমেডিসিন সেবা, সেই সঙ্গে শহরের ন্যায় গ্রামেও ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্প্রসারণ হয়েছে। দেশে মোবাইল প্রযুক্তিকে আরও সুরক্ষিত করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ সিম নিবন্ধনের পাশাপাশি মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের জন্য চালু হয়েছে ন্যাশনাল ইকুইপেমন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার এনইআইআর। এতে সিম ও মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন পূর্ণাঙ্গভাবে ডিজিটালাইজড হয়েছে। ফলে, সাইবার অপরাধ প্রবণতা কমার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পথ তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে চালু হয়েছে সারাদেশের জন্য একই মূল্যে ব্রডব্যান্ড ‘এক দেশ এক রেট’ সেবা। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে ৬০০০ জিবিপিএস—এরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হতে পারে। আমাদের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পরও হাতে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যান্ডউইথ আছে ও থাকবে। দেশে নেটওয়ার্কের বর্ধিত চাহিদা মিটিয়ে ফ্রান্স, সৌদি আরব ও ভারতের ত্রিপুরায় ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা হচ্ছে। ভুটান ও নেপাল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করার বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। তৃতীয় সাবমেরিন সংযোগ সম্পন্ন হলে ২০২৫ সালে অতিরিক্ত আরও প্রায় ১৩২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সংযুক্ত হবে। এছাড়াও প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে আরও ৩৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সংযুক্ত হচ্ছে অর্থাৎ বর্তমানে বিদ্যমান ক্যাপাসিটির চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি। করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।

২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মতো দুঃসাহসিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মসূচি না নিলে আজকের এই বাংলাদেশ আমরা পেতাম না। ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন ও ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়নের সদস্যপদ অর্জন, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূ—উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, টিএন্ডটি বোর্ড গঠন ও কারিগরি শিক্ষা প্রসারে গৃহীত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন। এর ফলে শতশত বছরের পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করে ১৯৬৯ সালে বিশ্বে শুরু হওয়া ইন্টারনেট ভিত্তিক শিল্প বিপ্লব বা তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে অংশ গ্রহণের যাত্রা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় শিল্প বিপ্লব বা স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিপ্লব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও প্রজ্ঞাবান নেতৃত্ব সাড়ে উনিশ বছরে বাংলাদেশকে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্বের সক্ষমতায় উপনীত করেছে। আমরা জানি, ডিজিটাল সংযুক্তি সম্প্রসারণের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা একটি উদ্বেগের বিষয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধানেও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করছে। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধানের জন্য ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করে তা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির নিমিত্তে ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সুবিধাবঞ্চিত, দুর্গম এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পার্বত্য এলাকার পাড়াকেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর ‘সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটালকরণ’ শীর্ষক একটি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অগ্রসরমান ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগাতে হবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিভিন্ন কাজে মানুষের প্রয়োজনীতা পাবে না তা নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য দক্ষ মানুষের প্রয়োজন হবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। মানুষের ভিতরে যে সৃজনশীলতা রয়েছে, সেটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। ডিজিটাল বিভাজন কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রামের তৃণমূল মানুষের কাছেও প্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে পুরোপুরিভাবে। আর্থিক সংগতি ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল হওয়ায় পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। দক্ষ জনগোষ্ঠী প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিকল্পে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে, সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে। ফ্রি—ল্যান্সারদের ভাষা শেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে এবং একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে মানুষ নতুনভাবে চিন্তা করবে এবং উদ্ভাবনী শক্তিগুলোকে বিকশিত করে নিজেদের জীবনমানের উন্নয়ন করবে। লক্ষ্য অর্জনে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারলে, তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে।

হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট
ছবি: ইন্টারনেট
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস