লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
নিজস্ব প্রতিবেদক
মোট লেখা:১৪৪
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্বের সব বিষয়ে পরিবর্তন নিয়ে আসছে
রিস্কিলিং হলো বর্তমানে দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য দক্ষতা অর্জন। আর আপস্কিলিং হলো বর্তমানে ব্যবহার করা প্রযুক্তির চেয়ে অধিকতর উদীয়মান বা নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য যে দক্ষতা অর্জন করা হয় তাকেই বলা হয় আপস্কিলিং। যেমন—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, ব্লক চেইন, বিগডাটার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা। স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান, কারিগরি ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভরতা শুরু হয়। ইন্টারনেটের সঙ্গে ডিভাইসের যুক্ততা মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি, ব্যবসা—বাণিজ্য, উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে বিশ্বে উন্নয়ন দারুণ গতি পায়। বঙ্গবন্ধুর সময়ে সোনার বাংলা বিনির্মাণে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকারে পর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দেশ পরিচালনায় এসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিকাশে গুরুত্ব দেন।
এখন বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ডেটা সেন্টার বাংলাদেশে, শুধু তথ্যের সুরক্ষাই নয়, বছরে সাশ্রয় হচ্ছে ৩৫৩ কোটি টাকা। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জাতীয় ডাটা সেন্টার। শুধু দেশীয় তথ্যের সুরক্ষা নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন এই তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের এ অর্জন একদিনে আসেনি। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে উপলব্ধি এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশি—বিদেশি গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে গত এক দশকে রফতানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার একটি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।
বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ৬৫০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৩০০—এর অধিক ধরনের সরকারি বেসরকারি সেবা জনগণ পাচ্ছেন। একসময় প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি এমবিপিএস ৬০ টাকার নিচে। দেশের সকল সরকারি অফিস একই নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসছে। ৫ হাজার ৫০০ ইউনিয়নে পৌঁছেছে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।
দেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটি ৮৬ লাখের অধিক। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১৪ কোটি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতবেদনে যথার্থভাবেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় আর্থ—সামাজিক ব্যবধান কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে আর্থিক সেবায় মানুষের অন্তর্ভুক্তি রীতিমতো বিস্ময়কর। অনলাইন ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার, এটিএম কার্ড ব্যবহার শুধু ক্যাশলেস সোসাইটি গড়াসহ ই—গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে তাই নয়, ই—কমার্সেরও ব্যাপক প্রসার ঘটাচ্ছে। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সাইবার নিরাপত্তায় গৃহীত আইনি ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সাংগঠনিক ব্যবস্থা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা সূচকে আইটিইউতে ৫৩তম স্থানে এবং জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এনসিএসআই সূচকে ৩৭তম স্থানে অবস্থান করছে। দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক দেশের মধ্যে প্রথম।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যে প্রসার ঘটেছে তাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যেই সরকার বাংলার আধুনিক রূপ জ্ঞানভিত্তিক উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে খুব দ্রুত। প্রযুক্তির এই প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিতে পারে, আবার নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে। শুধু পোশাক শিল্প নয়, আরও অনেক পেশার ওপর নির্ভরতা কমে আসবে, রোবট এবং যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে। মেধাভিত্তিক পেশার প্রয়োজন বাড়বে। যেমনÑপ্রোগ্রামার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইনটারনেট অব থিংস (আইওটি) ইত্যাদিতে দক্ষ লোকের চাহিদা বাড়বে। আমাদেও দেশে দক্ষ গ্রোগ্রামারের অনেক অভাব আছে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে আসবে। আমাদের দক্ষ প্রোগ্রামার তৈরি করতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে তরুণরা ছোট—বড় আইটি ফার্ম, ই—কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক পরিষেবা এবং অন্যান্য সংস্থা তৈরি করছে। এ ছাড়াও ই—কমার্স, আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং, ভিডিও স্টি্রমিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের ধারণক্ষমতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। গত ১৫ বছরের ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলা আমাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও তৈরি করেছে। দেশের তরুণরা এখন কেবল স্বপ্ন দেখে না, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করতে জানে। বাংলাদেশের অদম্য যাত্রায় অচিরেই গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বনির্ভর ও আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ।
আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে আরও দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। যারা বিদেশে যান তাদের কারিগরি বিষয়ে পারদর্শী হতে হয়। আর এ কারণেই কারিগরি শিক্ষার গুরুত্বের সঙ্গে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সরকার যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তাদের সহায়তা করছে। দেশ গড়ার জন্য দক্ষ জনশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটাই আমরা সব সময় ভাবি এবং আমরা দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কাজ করছি। সরকার এমনভাবে জনশক্তি তৈরি করছে, যাতে তারা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের যেকোনো জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারে।
আমাদের এ জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামের, ডাটা অ্যানালিস্টসহ কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন লোকের চাহিদা বাড়ছে। আশার কথা হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এবং এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। ২০১৯ সালে এটুআই প্রোগ্রাম ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত যৌথ সমীক্ষায় ছয়টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে সনাতনী শিক্ষা পদ্ধতির রূপান্তর, অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবনী, গবেষণা ও উন্নয়ন বিকশিত করা, সরকারি নীতিমালা সহজ করা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষতা কাজে লাগানো এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা। এই সমীক্ষার আলোকে স্কুল পর্যায়ে উদ্ভাবনে সহযোগিতা, প্রোগ্রামের শেখানোসহ নানা উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রায় এক বছর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এলআইসিটি প্রকল্প ১০টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওপর দক্ষ মানুষ তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু করে। এসব উদ্যোগ আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঝুঁকিকে সম্ভাবনায় পরিণত করার জন্য আশাবাদী করছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কারিগরি শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করছেন। কারিগরি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের জন্যই দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। যারা বিদেশে যাবেন, তাদের কারিগরি বিষয়গুলোয় দক্ষ হয়ে যেতে হবে। আর সে জন্যই কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতে পরিবর্তন করা হয়েছে। যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সরকার তাদের সহায়তা করছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘একটি দেশ গঠনের জন্য দক্ষ জনশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এটা আমরা সবসময় মনে করি এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকার জনশক্তিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চায়, যাতে তারা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের যেকোনো জায়গায় প্রতিযোগিতা করতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে তরুণরা ছোট—বড় আইটি ফার্ম, ই—কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক পরিষেবা এবং অন্যান্য সংস্থা তৈরি করছে। এ ছাড়া মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ কিছু বড় অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কয়েক হাজার বছরে মানবসভ্যতা এগিয়েছে অনেক। উৎকর্ষ, অপটিমাইজেশন এবং দক্ষতা হচ্ছে এই শতকের মূলমন্ত্র। সেটার প্রয়োজনে এসে যোগ দিয়েছে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’।
মানুষের সহজাত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার যোগসূত্র না থাকলে পরবর্তী শতকে যাওয়া দুষ্কর। ‘অ্যাপভিত্তিক নানা ধরনের সেবাও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দৈনন্দিন কাজ, উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন এমন নানা স্তরে সময়, শ্রম ও ব্যয় কমানোর জন্য এখন অনেকেই প্রযুক্তিকে বেছে নিচ্ছেন। বড় কোম্পানিগুলো ইআরপি (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং) সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তার (এসএমই) একটি বড় অংশই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছে।
মহামারি মোকাবিলা থেকে নানা কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নানামুখী ব্যবহার দেখছে বিশ্ব। ‘আগামী দিনে ব্যবসার ধারণা আমূল পাল্টে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর নানা প্ল্যাটফর্ম। আগামী দিনগুলোয় চিকিৎসাসেবায়, অফিস—আদালতে, শিল্প—কারখানায়, সংবাদ সংস্থা বা গণমাধ্যমে, ভাষান্তর প্রক্রিয়া, টেলিফোনসেবা, বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, হোটেল—রেস্তোরাঁ এমনকি বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র বা রোবটের ব্যাপক ব্যবহারের আভাস দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেও আমাদের রিস্কিলিং এবং আপস্কিলিং করতে হবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জানান দিচ্ছে। অতীতে যন্ত্র মূলত মানুষের শ্রমকে প্রতিস্থাপন করত। ক্যালকুলেটর ও কম্পিউটারের মাধ্যমে গণনা করা যায় ঠিক, কিন্তু চিন্তা করে মানুষই। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শক্তি ও চিন্তা এ দুই জায়গায় মানুষকে সরাসরি প্রতিস্থাপন করবে। তবে এখন পর্যন্ত আসা প্রযুক্তি অনেক কাজকে অপ্রয়োজনীয় করে দিলেও নতুনভাবে আবার কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছে। লন্ডনভিত্তিক ডিজিটাল আর্টিস্ট অ্যানা রিডলার জানায়, এআইয়ের অক্ষমতা কোন কোন জায়গায় রয়েছে। এআই কনসেপ্ট বা ধারণা ব্যবহার করতে পারে না। সময়, স্মৃতি, চিন্তা, আবেগÑ এসয়ের মিশ্রণ মানুষের অনন্য দক্ষতা যা এআইয়ের কাজ থেকে তাদের কাজকে আলাদা করে। নিছক দেখতে সুন্দর এমন কিছু নয়, মানুষের এসব বৈশিষ্ট্য সত্যিকারের ‘চিত্রশিল্প’ তৈরি করে। অ্যানা এবং আরেক ডিজিটাল আর্টিস্ট ম্যাট ড্রাইহাস্টর্ মনে করেন, এআইয়ের ‘শিল্পী প্রতিস্থাপন’—এর ধারণা মানুষের শৈল্পিক প্রক্রিয়াকে অবমাননা করে। মেশিন লার্নিংয়ের কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র চারপাশের পরিবেশ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিখতে পারে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টারনেট অব থিংসের অগ্রগতির দ্বারা চালিত বিশ্ব অর্থনীতির চলমান রূপান্তরকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বলা হয়। মানুষের সবচেয়ে বেশি শক্তির স্থান চিন্তা ও কল্পনা করার সক্ষমতা, কায়িক শ্রম নয়। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তির সহায়তা পেয়ে মানুষের চিন্তা ও কল্পনার জায়গা অনেকটাই সরল ও সংকীর্ণ হয়েছে। এটা ঠিক যে, অনিবার্যভাবে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ পাল্টে দেবে। যে কারণে এটি যুগপৎ বিস্ময় ও ভীতি তৈরি করছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সুবিধা করে দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অনিকেত মিত্র বলেন, আসল বিষয় হলো বাজেট। যদি বাজেট ও ইকুইপমেন্ট থাকে, তাহলে হয়তো আমিও শূটই করতাম ওই দৃশ্যের। বিশাল ইউনিটকে এক জায়গায় জড়ো করে লোকেশনে নিয়ে গিয়ে কয়েকদিন শূটের যথেষ্ট খরচ আছে। বিকল্প হিসেবে এআইয়ের কথা ভেবেছি। আমার ছবিতে অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য ইতোমধ্যেই প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। তাই আবার ফ্ল্যাশব্যাকের দৃশ্যের জন্য খরচ করা কঠিন ছিল। এটি ছবির ওপরেও নির্ভর করে। কী ধরনের ছবি নির্মাণ করছেন, তার বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তাতে কৃত্রিম প্রযুক্তির ব্যবহার করবেন কিনা তা বোঝা যাবে। পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গির ওপরে এআইয়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। তবে কাজ করে বুঝেছি, এআই খুবই উপযোগী।
তবে সুবিধা যেমন হচ্ছে কিছু মানুষের, আবার কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাও হবে। এরপরে সুপার হিউম্যান ইউনিভার্স নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।’ এআই কখনোই আবেগের বিকল্প হবে না। এ প্রসঙ্গে পরিচালক অভিরূপ বসু বলেন, ‘হলিউডের পরিচালক জো রুসো এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় এআই সৃষ্ট চলচ্চিত্র দর্শকরা দেখতে পাবেন। তবে এর সঙ্গে আমি বলব ‘শিন্ডলারস লিস্ট’ বা ‘ফ্লাওয়ার অব দ্য মুন’—এর মতো ছবি বানাতে পারবে না। কারণ, বিভিন্ন আবেগের অভিজ্ঞতা না থাকলে এ ধরনের ছবি নির্মাণ কখনো সম্ভব নয়। এআই হয়তো ‘টাইগার থ্রি’ বা ‘ট্রান্সফর্মারস’ তৈরি করে দিতে পারবে। আগে যেমন কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি (সিজিআই) ছিল, এখন নিজেদের স্টুডিওর গ্রিন স্ক্রিনেও অনেকে শূট করেন। পরিবর্তন আসবে; তবে যে ধরনের কনটেন্টে হিউম্যান এক্সপেরিয়েন্স লাগে, সে ধরনের কনটেন্ট এআই পারবে না।
এতে করে অনেক সময় এ যন্ত্রগুলো আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে। গুগলের সাবেক চেয়ারম্যান এরিক স্মিডের মুখেও সতর্কবাণী শোনা গিয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের কাছ থেকে শিখতে পারে। তাহলে ভেবে দেখুন, যদি এটি ভুল কিছু শেখে কিংবা ভুল সুপারিশ করে— তবে যে কোনো কিছু ঘটতে পারে, এমনকি যুদ্ধও লেগে যেতে পারে।’ মাত্র ৩০ থেকে ৪০ বছর আগেও সায়েন্স ফিকশনের বাইরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে খুব একটা ভাবা হতো না। সে সময় যন্ত্রকে আরও বুদ্ধিমান করে তোলার চিন্তাভাবনা চলতে থাকলেও সাধারণ মানুষের নিকট এটি ছিল এক অবাস্তব কল্পনার মতো। অনেকেরই বিশ্বাস ছিল না যে, এআইয়ের এত উন্নতি সম্ভব। ফেসবুক, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রিকমন্ডেশন সিস্টেম, বুদ্ধিমান রোবট কিংবা চ্যাটবট, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, অ্যামাজানের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যালেক্সা বা আইফোনের সিরি সবই এআইয়ের অংশ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অনিকেত মিত্র একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তিদের নিয়ে ‘মহাভারত’ কল্পনা করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাদের অনেককেই তরুণ বয়সে দেখিনি, আমার পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়। তাই এআইয়ের সাহায্য নিয়েছি। কিন্তু এখন অডিয়োতেও এআইয়ের ব্যবহার চলে এসেছে। যে শিল্পীরা নেই, তাদের গলায় নতুন গান শুনছি। কিশোর কুমারের গলায় নতুন গান তৈরি করেছে অনেক প্ল্যাটফর্ম। অনিকেত মিত্র বলেন, আমি যেমন ‘মহাভারত’—এর জন্য সমালোচিত হয়েছিলাম, তেমনই অনেক মানুষ প্রশংসাও করেছিলেন। আমার মনে হয়েছিল, এটা একটা পাওয়ারফুর টুল। তাহলে কেন ব্যবহার করব না! প্রযুক্তিকে অস্বীকার করা সুযোগ নেই। প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে।
প্রোগ্রামড ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং কখনো আবেগ তৈরি করতে পারবে না। এআই হয়তো গ্রাফিক্স, ডিএফএক্স এ অনেকটা এগিয়ে দেবে। এটি হয়তো সিনেমা বানানোকে কিছু মানুষের নিকট সহজ করে তুলবে। ডল—ই টু, মিডজার্নি, নাইটক্যাফে এআই, স্টেবল ডিফিউশন ইত্যাদি বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেকেন্ডের মধ্যেই চাহিদা অনুযায়ী, যে কোনো থিমের ছবি তৈরি করা সম্ভব। কেউ কেউ মনে করছেন, এতে মানুষের সৃজনশীলতা হুমকির মুখে পড়ছে। অনেকেই শঙ্কিত হলেও, আবার অনেকে এসব ইমেজ জেনারেটর নিয়ে সৃষ্ট নেতিবাচক ধারণাকে ভিত্তিহীন মনে করছেন। ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠিত রিসার্চ কোম্পানি ওপেনএআই ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মেশিন লার্নিং মডেল ডল—ই প্রকাশ্যে আনে। এই মডেলকে আরও উন্নত করে এআই ইমেজ জেনারেটর ডল—ই টু—এর প্রকাশ করা হয় ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর সে বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর এটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে ক্রয়ের পাশাপাশি বিনামূল্যে অনেক ছবি তৈরি করতে পারছেন। একই বছরের জুলাই ও আগস্টে মুক্তিপ্রাপ্ত যথাক্রমে মিডজার্নি ও স্টেবল ডিফিউশন, এই দুই ইমেজ জেনারেটরসহ ডল—ই টু হয়ে উঠেছে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।
এআই ইমেজ টুলগুলোর ব্যবহার সুবিধাজনক হওয়ায় অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও আশ্চর্য করে দেওয়া ডিজিটাল ক্যানভাস তৈরি করতে পারেন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই সুপারচার্জড সৃজনী সম্ভাবনাকে বেশ আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। কনসেপ্ট আর্টিস্ট এবং ইলাস্টে্রটর গ্রেগ রুটকোস্কি সোনালি আলো মিশ্রিত কাল্পনিক দৃশ্য আঁকার জন্য বিখ্যাত।
এআই টুল দিয়ে ছবি আাঁকার জন্য সফটওয়্যারগুলোতে তার নাম বহুবার উচ্চারিত হয়েছে। ফলে মিডজার্নি এবং স্টেবল ডিফিউশনের মতো সফটওয়্যারে তার কাজের অনুরূপ কাজ সৃষ্টি করা হচ্ছে তার অনুমতি ছাড়াই। গ্রেগ বলেন, ‘এসব সফটওয়্যার ঠিকঠাক এসেছে কেবল এক মাসের মতো হলো। এতেই এত কাজ চুরি হয়েছে, আর বছর হয়ে গেলে কী হবে! এআই আর্ট দিয়ে ভরা ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আমি নিজের কাজগুলোই সম্ভবত আর খুঁজে পাব না। এটি খুব উদ্বেগের বিষয়।’ এআই টুলগুলোকে ঠিক কোন কোন ডেটা বা কোড দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়Ñ তা কেবল ডিফিউশন প্রকাশ করলেও ওপেনএআই প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। হ্যাভ আই বিন ট্রেইনড নামক একটি টুল প্রতিষ্ঠা করেছে শিল্পীগোষ্ঠী স্পনিং। স্টেবল ডিফিউশনে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ৫০০ কোটির অধিক ছবির মাঝে নিজের ছবি আছে কিনা তা খুঁজতে স্পনিং শিল্পীদের সহযোগিতা করে। এছাড়াও ভবিষ্যতে এরূপ প্রশিক্ষণ সেটে নিজেদের ছবি থাকবে কি না তা বাছাই করতেও শিল্পীদের এটি সাহায্য করে। কিন্তু কনসেপ্ট আর্ট অ্যাসোসিয়েশন জোর দিয়ে বলে যে, ক্ষতি এর মধ্যেই হয়ে গেছে। কারণ, ইতোমধ্যে শিল্পীদের অনুমতি ছাড়াই তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে টুলগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
কেবল চিত্রকর্ম নয়, স্টেবল ডিফিউশনের প্রশিক্ষণ ডেটাবেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি ব্যক্তিগত মেডিক্যাল ফটোগ্রাফি এবং পর্নোগ্রাফিকেও ব্যবহার করেছে। কনসেপ্ট আর্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিএএ) এর বোর্ড সদস্য এবং ইলাস্টে্রটর কার্লা ওর্টিজ স্টেবিলিটি এআইয়ের বাণিজ্যিক অংশ ড্রিমস্টুডিও নিয়ে বেশি আপত্তি জানান। তিনি বলেন, ‘এই কোম্পানিগুলো অনুমতি ছাড়াই সবার কপিরাইট থাকা এবং ব্যক্তিগত ডেটা ব্যবহার করছে। আবার বলছে, এ নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।’ যুক্তরাজ্যের আইন কপিরাইট করা সৃজনশীল কাজগুলো ব্যবহার করে এআই কোম্পানিগুলোতে আরও বেশি স্বাধীনতা দিতে পারে এবং তা পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করা যাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিএএ। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্টে্র কপিরাইট আইন নিয়ে আলোচনার জন্য সিএএ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছে এবং এআইয়ের এ ক্ষেত্রের এমন অপব্যবহার কীভাবে ঠেকানো যায় সে বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। কপিরাইট লঙ্ঘন ছাড়াও আরও একটি বড় সমস্যার কথা বলেন আরজে পামার। এআই টুলগুলো সমগ্র সৃজনশীল গোষ্ঠীকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। স্টক ছবির পরিবর্তে জায়গা করে নিচ্ছে এআই টুল দ্বারা নির্মিত ছবি। বিখ্যাত ছবি লাইব্রেরি শাটারস্টক সম্প্রতি তাদের ছবিতে ডল—ই এর ব্যবহার করতে ওপেনএআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। পামার মনে করেন, অ্যালবামের প্রচ্ছদ, বই বা প্রবন্ধের জন্য আঁকা ইলাস্টে্রশনের মতো চিত্রকর্মগুলো এআই থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে পারে; যা বাণিজ্যিক চিত্রকর্মের একটি উদীয়মান ক্ষেত্রকে দুর্বল করে দেবে। তবে এআই ইমেজ জেনারেটরের মালিকরা বলছেন, টুলগুলো শিল্পকে গণতান্ত্রিক করে তুলে। স্টেবিলিটি এআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা এমাদ মোস্তাক বলেন, বিশে^র অনেকটাই সৃজনশীলভাবে কোষ্ঠবদ্ধ। কিন্তু সবাই যদি এআইকে কাজে লাগিয়ে প্রাযুক্তিকভাবে নিপুণ ছবি সৃষ্টি করতে পারে, এটিও তো সৃজনশীলতার অংশ। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গণিতবিদ মার্কুস ডু সটি মনে করেন, ‘ডল—ই সহ অন্যান্য ইমেজ জেনারেটরগুলো সম্ভবত এক প্রকার সম্মিলিত সৃজনশীলতার কাছাকাছি আসতে পারে। কারণ, লাখ লাখ ডেটাসেটের ধরন অনুসরণ করে নতুন ছবি তৈরি করতেই এই টুলগুলোর অ্যালগরিদম বানানো। মার্কুসের মতে, অ্যানা রিডলারের কাজগুলো ‘ট্রান্সফর্মেশনাল’ সৃজনশীলতার কাছাকাছি পর্যায়ে পড়ে; যাতে সম্পূর্ণ নতুন ধাঁচে কিছু সৃষ্টি করা হয়। তবে সৃজনশীলতার এমন বিধিবদ্ধ সংজ্ঞা প্রদানে অ্যানা আপত্তি তোলেন। তিনি আরও বলেন, ‘এর মাধ্যমে চিত্রশিল্পকে অনুভূতি বা ধারণা প্রকাশ এবং সত্যের সন্ধান নয়, বরং আকর্ষণীয় ওয়ালপেপার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তামিল গীতিকার ও সংলাপ লেখক মাধান কার্কি বলেছেন, কোনো গল্প বা দৃশ্য লিখতে গেলেও আমি এআইকে সহকারী লেখক হিসেবে ব্যবহার করি। অ্যানিমেশন ও লিরিক ভিডিয়ো তৈরির ক্ষেত্রেও কাইবার বা জেন—২ এর মতো এআই টুলস খুব কাজে দেয়। এতে অনেক সময় বাাঁচে, খরচও কম হয়। তিনি এআই টুল ব্যবহার করে ‘এন মেলে’ শীর্ষক এআই সৃষ্ট তামিল গানও তৈরি করেছেন। আধুনিক প্রজন্ম মিম তৈরি এবং শেয়ার করতে ভালোবাসে। মিম তৈরিতে এআই প্রধান সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করছে। মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে ‘উইয়ার্ড ডল—ই জেনারেশনস’ নামে একটি একাউন্ট রয়েছে, যেখানে মিমপ্রেমীরা মিম তৈরি ও শেয়ারের মাধ্যমে আনন্দে মেতে থাকেন। ‘জেনারেটিভ এআই’ এর যুগে পা রাখতেই হইচই পড়ে গেছে প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ইমেজ—জেনারেটর সফটওয়্যারগুলোর দক্ষতা শুধু ছবি তৈরির মাঝে সীমাবদ্ধ নেই, এখন ছবির পাশাপাশি চমৎকার সব ভিডিও তৈরি করা যাচ্ছে। যেমন : গুগলের ‘ইমাজেন ভিডিও’ এবং ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি মেটা’র তৈরি মেক—আ—ভিডিও। নিত্যনতুন সৃজনশীলতা নিয়ে রীতিমত অবাক করেই চলেছে এআই সফটওয়্যারগুলো।
২০১৬ সালে গুগলের ডিপ মাইন্ড কম্পিউটারের আলফাগো প্রোগ্রাম আরও একটি জটিল বোর্ডগেমÑ গো’র এক সেরা খেলোয়াড়কে হারিয়ে দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কনসেপ্ট আর্টিস্ট এবং ইলাস্টে্রটর আর. জে. পামার ডল—ই ২ এর মাধ্যমে তৈরি সূক্ষ্ম গঠনশৈলীর ফটোরিয়েলিজম দেখে তিনি বেশ অস্বস্তির মুখে পড়েন। পামার বলেন, ভবিষ্যতে এটি কেবল আমার শিল্পের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা নয়, আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো মোটাদাগে সৃজনশীল মানুষের শিল্পগুলো নিয়ে। এআই প্রযুক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিশাল ডেটাবেজকে একত্র করা হয়। এরপর এক প্রাযুক্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এআই ডেটাবেজের তথ্যের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলে, কিন্তু অবিকল নয় এমন নতুন কন্টেন্ট বা আধেয় তৈরি করে।
চলচ্চিত্রকে মনে হতে পারে অঙ্কের সূত্রের মতো এগোচ্ছে এবং পরিণতিও দর্শকের নিকট অনুমানযোগ্য হতে পারে। তবে মানব চলচ্চিত্র নির্মাতাদের লেখা ও পরিচালনার মতো সৃজনশীল কাজগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা জরুরি। ‘শিল্পকলার জগতে দু’টি উপাদানের মধ্যে মেলবন্ধনের সুযোগও আমার কাছে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। একদিকে শিল্পকলা, অন্যদিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে শিল্পকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাওয়া সত্যি অভিনব। সেইসঙ্গে শিল্পের মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন পথে পাড়ি দেওয়া, শিল্পকলাকে আরও উদ্ভাবনী করা যাচ্ছে।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে টিকে থাকতে প্রয়োজন রিস্কিলিং ও আপস্কিলিং
চ্যাটজিপিটি, মাইক্রোসফট বিং, গুগল বার্ডের মতো এআই টুল মানুষের জীবনকে আরো সহজ ও গতিশীল করেছে। এআই যেমন বর্তমান চাকরির বাজারের জন্য এক আসন্ন বিপদ, তেমন ভবিষ্যৎ চাকুরির জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা। এআইয়ের ফলে প্রায় ১০ ধরনের চাকরি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে কন্টেন্ট তৈরির কাজের মতো সৃজনশীল পেশাও। বিভিন্ন এআই টুলের সহায়তায় এখন অতি সহজে এবং স্বল্প সময়েই তৈরি করা যাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইন ও ভিডিও বানানোর কাজ। এছাড়া, ব্যাংকার, ট্যাক্সি ড্রাইভার, ট্রান্সলেটর, ক্যাশিয়ারের মতো কাজ অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে বদলে যাচ্ছে চাকরির ধরন। হারিয়ে যাচ্ছে পুরোনো পেশা এবং তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র। এর ফলে সারা বিশ্বে চাকরির বাজারে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটে চলেছে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চাকরি হারাবে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের পরিবর্তে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ চালাবে বলে এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এআই হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রযুক্তি। মানুষের মস্তিষ্কের মতো চিন্তা—ভাবনা, বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা থাকায় এআই দিয়ে সহজেই করা যাচ্ছে প্রাত্যহিক জীবনের অনেক কাজ।
বর্তমানে বেশির ভাগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই এআই ব্যবহার করছে এবং অন্যান্য খাতের প্রতিষ্ঠানেও এর ব্যবহার দিনে দিনে বাড়ছে। ভবিষ্যতে শিল্পক্ষেত্রে বেশির ভাগ কাজই সম্পন্ন হবে এআইয়ের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, বেশির ভাগ শিল্প খাতেই আংশিকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের পরিপূরক হিসেবেই কাজ করবে, তবে মানুষের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া সম্ভব হবে না।
এআই কেবল চাকরি কেড়েই নেবে না, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এআইয়ের রয়েছ বিরাট ভূমিকা। যেসব নতুন কর্মসংস্থান এআই তৈরি করবে, তার মধ্যে রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার উল্লেখযোগ্য। এছাড়া নিত্যনতুন গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত হওয়ায় গবেষক ও বিজ্ঞানীদের চাহিদা বাড়বে। ডেটা বিশ্লেষক, ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্পেশালিস্ট এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ বেড়ে যাবে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে। ওয়ার্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)—এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে; ডেটা বিশ্লেষক, বিজ্ঞানী বা বিগ ডেটা অ্যানালিস্টের সংখ্যা বাড়বে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং ইরফরমেশন সিকিউরিটি অ্যানালিস্টের সংখ্যা ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অন্যান্য দেশের মতো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়া শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালে এটুআইয়ের উদ্যোগে ১৬টি সেক্টরের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের ওপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। সেক্টরসমূহ হলো রেডিমেড গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল, ফার্নিচার, এগ্রো—ফুড, লেদার, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি, সিরামিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, হেলথ কেয়ার, আইসিটি, কনস্ট্রাকশন, রিয়েল এস্টেট, ট্র্যান্সপোর্টেশন, ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, ক্রিয়েটিভ মিডিয়া এবং ইনফরমাল ও সিএমএসএমই। ফলাফলে দেখা যায়, ২০৪১ সাল নাগাদ এসব সেক্টরের বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭০ লক্ষাধিক লোক চাকরি হারাবে, আবার নতুন নতুন পেশায় ১ কোটি ১০ লক্ষাধিক চাকুরির বিশাল সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় উল্লেখযোগ্য পেশাসমূহ হলো এআই স্পেশালিস্ট, ব্লকচেইন এক্সপার্ট, থ্রি ডি ডিজাইনার, কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ম্যানেজার, এআর অ্যান্ড ভিআর ডেভেলপার, অকোনোমাস ভেহিক্যাল টেকনিশিয়ান, ড্রোন সার্ভেয়ার, সাইবার ফিজিক্যাল কন্টে্রাল সিস্টেম অপারেটর ও রোবট ডক্টর ভার্চুয়াল হোম এসিসট্যান্ট। নতুন এই বাজার চাহিদা অনুযায়ী, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেকার যুবকদের জন্য নানা রকম দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে।
২০১৯ সালেও পাঁচটি সেক্টরের এগ্রো—ফুড, ফার্নিচার, রেডিমেড গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি এবং লেদার এর ওপর এটুআই কর্তৃক অনুরূপ গবেষণা পরিচালিত হয়। সেই গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, রেডিমেড গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল সেক্টরে বিদ্যমান পেশার ৬০ ভাগ, ফার্নিচার সেক্টরে ৬০ ভাগ, এগ্রো—ফুড সেক্টরে ৪০ ভাগ, লেদার সেক্টরে ৩৫ ভাগ এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি সেক্টরের ২০ ভাগ পেশা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যেসব পেশা, তা হলো গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল সেক্টরের ম্যানুয়াল সুইং মেশিন অপারেটর ও ফ্যাব্রিক কাটার; ফার্নিচার সেক্টরের ফার্নিচার ডিজাইনার ও ম্যানুয়াল অপারেটর; এগ্রো—ফুড সেক্টরের ম্যানুয়াল ফুড সর্টার ও প্যাকেজিং অপারেটর; লেদার সেক্টরের লেদার কাটার ও লেদার পলিশার এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি সেক্টরের ট্যুর গাইড ও ট্র্যান্সলেটর। ইতিমধ্যে এসব পেশায় কর্মরতদের চাকরি চলে যাওয়া শুরু হয়েছে, যাদের রিস্কিলিং বিদ্যমান পেশা থেকে নবসৃষ্ট পেশায় স্থানান্তর ও আপস্কিলিং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যমান পেশার উন্নয়ন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ লক্ষাধিক বেকার যুব শ্রমবাজারে আসে। চাকরির বাজার প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল হওয়ার কারণে বিশাল এই যুব জনগোষ্ঠীকে চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এর অন্যতম কারণ হলো, ৯৫ শতাংশ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রকার কোচ বা পরামর্শদাতা নেই, ৫৬ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন সম্পর্কিত সহায়ক কোনো সেবা নেই এবং ৯৪ শতাংশ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রম নেই। বাংলাদেশে ৫০টির বেশি সরকারি—বেসরকারি ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেন্টার থাকলেও তাদের মধ্যে তেমন কোনো সমন্বয় নেই। প্রতি বছর শ্রমবাজারে আসা বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে ভবিষ্যৎ কর্মোপযোগী স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারি—বেসরকারি এ ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেন্টারসমূহ নিয়ে গড়ে সরকার এটুআই এর মাধ্যমে স্মার্ট ক্যারিয়ার গাইডেন্স নেটওয়ার্ক।
বর্তমানে বাংলাদেশে যুব বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ এবং শিক্ষিত বেকারত্বের হার ৪৭ শতাংশ। পাশাপাশি শিক্ষা—দক্ষতা—কর্মসংস্থানের বাইরে রয়েছে এনইইটিনট ইন এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ যুব। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ২০১৯ :টারশিয়ারি এডুকেশন অ্যান্ড জব স্কিল শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্নাতক শেষ করার পর ৩৭ শতাংশ তরুণ ও ৪৩ শতাংশ তরুণীর চাকরি পেতে ন্যূনতম এক—দুই বছর সময় লাগে এবং মাত্র ১৯ শতাংশ তরুণ—তরুণী স্নাতক পাশের পরপরই পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন চাকরি পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপের ত্রৈমাসিক তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এই বেকারত্বের মূল কারণ হলো সাপ্লাই শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান ও ডিমান্ডের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান থেকে পাশকৃত যুবরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবসহ নানা কারণে দ্রুত পরিবর্তনশীল কর্মক্ষেত্র ও পেশার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারা এর একটি বড় কারণ। আর এ কারণেই বেকার যুবদের কর্মসংস্থানে যুক্ত করার লক্ষ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে জেলায় জেলায় নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হয় স্মার্ট এমপ্লয়মেন্ট ফেয়ার।
সাপ্লাই শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান ও ডিমান্ডের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভার্চুয়ালি সমন্বয় সাধন করে বেকার যুবদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এটুআই কর্তৃক ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ফর স্কিলস, এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিষয়ক একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি রিয়েল টাইম ডেটা প্ল্যাটফরম। এর আওতায় দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানবিষয়ক ২০টি বিভাগ ও অধিদপ্তরের নিজস্ব পোর্টাল রয়েছে। বর্তমানে নাইসে ১০ লক্ষাধিক বেকার যুব, সহ¯্রাধিক দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান, ২ হাজারেরও অধিক কোম্পানি নিবন্ধিত রয়েছে। চাকরির বাজার সম্পর্কিত তথ্য ও আবেদন, ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেবা, দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক তথ্য ও আবেদনসহ বেকার যুবদের জন্য প্রয়োজনীয় নানাবিধ সেবা রয়েছে এই প্ল্যাটফরমে। একজন বেকার যুব এই প্ল্যাটফরমে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের দক্ষতা উন্নয়নমূলক অকুপেশন বা পেশায় ভর্তির আবেদন করতে পারে কিংবা বিভিন্ন কোম্পানির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চাকরিতে আবেদন করতে পারে। পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা দেখে তাদের নতুন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছে। আবার শিল্পপ্রতিষ্ঠান তার চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ লোক এই প্ল্যাটফরম থেকে বাছাই করে নিতে পারছে। এভাবে নাইস বেকার যুবদের কাছে হয়ে উঠছে দক্ষতা ও কর্মসংস্থান সংক্রান্ত ওয়ান স্টপ হাব। নাইস প্ল্যাটফরম দেশের সীমানা পেরিয়ে দেশের বাইরেও বেকার সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। এটুআইয়ের সহযোগিতায় সোমালিয়া ও জর্ডান সরকার এই প্ল্যাটফরর্মকে তাদের নিজ নিজ দেশের জন্য ব্যবহার করছে। আফ্রিকার দেশ সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপ ও ঘানা এই প্ল্যাটফরমকে তাদের দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে স্মার্ট কর্মসংস্থানের বিকল্প নেই। আর এ কারণেই বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের একটি বড় লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ইশতেহােও বেকার যুবদের সর্বশেষ হার ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩.০ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ কোটি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা অর্জনে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীসহ সবাইকে কাজ করা প্রয়োজন একসঙ্গে, একযোগে ও এক লক্ষ্যে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট
ছবি: ইন্টারনেট