তথ্যপ্রক্তির বর্তমান সময়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি পেশাজীবী মানুষও ইন্টারনেট ব্যবহার করছে প্রতিদিন৷ ইন্টারনেটে লেখা, পড়া, গবেষণা, চিকিত্সাসহ জ্ঞান বিজ্ঞানের বিচিত্র সমাবেশকে কাজে লাগানোর চেষ্টা প্রতিনিয়ত৷ প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে ইন্টারনেটের বিশ্বে সংযোজিত হচ্ছে নিত্য নতুন তথ্যপ্রযুক্তির সেবা৷ এমনই এক সেবার বহিঃপ্রকাশে জন্ম নিয়েছে ওয়েবভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা৷ এই লেখায় ওয়েবভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার জন্ম লগ্ন থেকে এর পরিসরে বিশ্ব ও বাংলাদেশে এর সফল প্রয়োগের দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে৷
যেভাবে শুরু
মার্ক জুকারবার্গ৷ নামটা বর্তমান সময়ে বেশ আলোচিত৷ বিভিন্ন পত্রিকায় এ যুবকের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক আলোচনা, অনেক গুঞ্জন৷ মজার ব্যাপার হলো, মার্কের লেখাপড়াটা আর শেষ হলো না, হয়তো শেষ হবে৷ যদিও বিল গেটসের বেলায় ড্রপ আউট কথাটা সত্য রয়েই গেল৷ মার্ক ইলিয়ট জুকারবার্গের জন্ম ১৯৮৪ সালের ১৪ মে, আমেরিকান এক পরিবারে৷ নিউইয়র্কের, ডবস ফেরি-তে বড় হয়ে ওঠা জুকারবার্গ ফিলিপস ইকসিটর একাডেমিতে পড়ার সময় মাইক্রোসফটে কাজ করার সুযোগ পায়৷ হাই স্কুল পড়ুয়া ছাত্র জুকারবার্গ মাইক্রোসফটে কাজ করছে, এটা আনন্দেরই বিষয়৷ বিভিন্ন কাজের জটিল কৌশল দ্রুত রপ্ত করে জুকারবার্গ ভর্তি হয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই বিভিন্ন ক্লাস প্রজেক্টের কাজে তার পারদর্শিতা তাকে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নেটওয়ার্ক তৈরিতে উপযোগী করে তোলে৷ অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ভাঙ্গার অপরাধে তাকে অনেক তিরস্কার শুনতে হয়েছে৷
লেখাপড়ার সময়ে ২০০৪ সালে তার ডরমিটরিতে প্রথম ফেসবুক নামের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের একটা সাইট হোস্টিংয়ের পর এক সপ্তাহে হার্ভার্ডের দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্রছাত্রী সবাই আগ্রহী হয়ে ওঠে জুকারবার্গের এই অভিনব ব্যবস্থাপনায়৷ হার্ভার্ড ছাড়িয়ে আরো ৩০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে ফেসবুক সবচাইতে আলোচিত ওয়েবসাইট আজ৷ মার্ক জুকারবার্গ বিশ্বের সবচাইতে কমবয়সী ধনকুবের৷ ২৩ বছর বয়সী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ছাত্রের ব্যক্তিগত ধনসম্পদের পরিমাণ দেড়শ কোটি ডলার৷ ফর্বস পত্রিকার জরিপে ফেসবুক-এর মূল্য আনুমানিক ১৫০০ কোটি ডলার৷ এর ৩০ শতাংশ মালিকানা জুকারর্বাi| MZ eQi G cÖwZôv‡bi 1 `kwgK 6 kZvsk gvwjKvbvi Rb¨ gvB‡µvmdU 24 †KvwU Wjvi w`‡q‡Q|
তথ্যপ্রযুক্তি ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কি
তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার আর প্রতিদিনের জীবনে এর ব্যবহার আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের পারস্পরিক ভাব বিনিময় থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য আদানপ্রদানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে৷ উদ্ভাবন হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তির৷ সেবা সবচেয়ে সেরা ধর্ম৷ তথ্যপ্রযুক্তির বিকেন্দ্রীকরণেও এর ব্যতিক্রম নেই৷ এ প্রসঙ্গে বলতে গেলে সমাজব্যবস্থায় আজকের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তির সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট, গুগল, ইয়াহু সবাই এই সেবায় অংশীদারিত্ব দাবি করছে প্রতিনিয়ত৷ এমনই এক সেবার নাম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং বা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের যথাযথ বাংলা করলে একে বলা যায় সামাজিক জালক বা বন্ধন সৃষ্টি, তবে এই বন্ধন ইন্টারনেটনির্ভর৷
ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক জালক বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের দ্রুততর প্রসারের ব্যাপ্তি গত দুই-তিন বছরে বিশেষভাবে লক্ষণীয়৷ বিশেষত মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে সমাজের মূল স্রোতধারায় পারস্পরিক এই ভাববিনিময় ইন্টারনেটনির্ভর, যেখানে রাত দিনের কোনো প্রশ্ন নেই৷ পাশাপাশি সব প্রচার মাধ্যমে এ ইন্টারনেটভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে৷ এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক প্রয়োগ মানুষের এক ভিন্নতর জীবনের প্রতিচ্ছবি৷ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিতে ব্যক্তিগত সমাজ ব্যবস্থার সফল বহিঃপ্রকাশ বলা যেতে পারে এই ইন্টারনেটভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা৷
সোশ্যাল নেটওয়ার্কভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলোকে সামগ্রিকভাবে বলা যেতে পারে ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট৷ একজন ব্যবহারকারী নিজের পছন্দমতো প্রোফাইল তৈরি করতে পারে এবং আমন্ত্রণ জানাতে পারে তার বন্ধুদের৷ এই প্রোফাইল পেজটি ব্যবহারকারীর নিজস্ব ওয়েবসাইটে পরিণত হয়৷ ব্যবহারকারীর জন্ম তারিখ, ধর্ম, বর্ণ, ঠিকানা থেকে শুরু করে তার পছন্দের ছবি, প্রিয় পঙক্তি, পছন্দের মানুষের তালিকা, অবসরে পছন্দের সময় কাটানোর পরিসর এ প্রোফাইল পেজে চিত্রায়িত করে৷ প্রোফাইল পেজটি ব্যবহারকারী নিজের পছন্দমতো ডিজাইন করতে পারে৷ নিজের ইচ্ছেমতো ছবিভিত্তিক ক্লিপিং বা পছন্দের গান সংযোজন করতে পারে৷ এর জন্য প্রয়োজন নেই বিশেষ প্রযুক্তি বা প্রযুক্তিবিষয়ক জ্ঞান৷ ইন্টারনেটভিত্তিক এই সমাজ ব্যবস্থার কেন্দ্র হচ্ছে এই প্রোফাইল পেজ৷ ব্যবহারকারী এ প্রোফাইল পেজটির মাধ্যমে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে এবং আমন্ত্রণ জানায় বন্ধুদের৷ বন্ধুরাও অনুরূপ নিজেদের প্রোফাইল পেজ তৈরি করে এবং তাদের বন্ধুদেরকে আমন্ত্রণ জানায়৷ এই বন্ধুরা সবাই অনলাইন বন্ধু৷ বন্ধুদের যোগাসূত্রে তৈরি হয় অনলাইন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং৷
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের বির্বতন : বিশ্ব ও বাংলাদেশ
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের ইতিহাস অনেক পুরনো৷ মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী৷ এ জন্যই অনেক দিক থেকেই এ সোশ্যাল নেটওয়ার্কভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলোর ধারণা খুব নতুন নয়৷ ইন্টারনেটের জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে নানাভাবে৷ ই-মেইল, কথোপকথন, ফোরাম, বার্তা, নিজস্ব ওয়েবসাইট ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যম এর উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত৷ ১৯৯০-এর দশকের শেষ ভাগের অনেক ওয়েবসাইটকে তুলনা করা যেতে পারে বর্তমানের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের সাথে৷ শোনা যায়, ফ্রেন্ডস্টার (FriendSter) হচ্ছে প্রথম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট৷ এর আবির্ভাব হয় ২০০২ সালে ব্রিটেনে৷ ২০০৫ সালে ব্রিটেনের টেলিভিশন চ্যানেল আইটিভি ১২ কোটি পাউবে সাইটটি কেনার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে৷ ২০০৩ সালে আত্মপ্রকাশ করে LinKedIn, MySpace এবং Hi5 নামের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট৷ ক্রমেই প্রসার লাভ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কভিত্তিক সাইটগুলোর নানা দিক৷ ২০০৪ সালে ভিন্নমাত্রা সংযোজন করে Filckr, Piczo এবং Facebook, তবে শুধু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবহারকারীদের জন্য৷ এ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো শেয়ারিং সেবাসহ অন্যান্য সেবা দেয়৷ ২০০৫ সালের উল্লেখযোগ্য ইবনড় এবং ঋধপবনড়ড়শ বিশেষ করে স্কুলের ছেলেমেয়েদের জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট৷ Facebook সবার জন্য উন্মুক্ত করে অনেক আকর্ষণ৷ নিত্যনতুন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য SagaZone৷ যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের সূচনা ২০০৭ সালে৷ পঞ্চাশোর্ধ বয়সের মানুষের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট সমাজ ব্যবস্থার বিশ্বায়নের ফলাফল৷
বিশ্বের ইন্টারনেটভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার এ আন্দোলনে আমরা শরিক হয়েছি মাত্র৷ বাংলাদেশের ইন্টারনেটভিত্তিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের পথিকৃৎ Hott Media Limited ২০০৪ সালে প্রথম ছবি শেয়ারিংয়ের সোশ্যাল নেটওয়ার্কভিত্তিক ওয়েবসাইট তৈরি করে৷ এর পাশাপাশি ২০০৫ সালে Somewherein- এর সোশ্যাল নেটওয়ার্কভিত্তিক সেবা দেয়া বাংলা ব্লগ সার্ভিস উল্লেখযোগ্য৷ একই সময়ে এই দলে যোগ দেয় Amanspace, CircleBD, Bondhu.Net এবং MyBanglaSpace৷
আমাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং আধুনিক বিশ্বের তুলনায় পিছিয়ে আছে এবং এর যথাবিহিত কারণ রয়েছে৷ আজকের এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের বিশ্বব্যাপী প্রসার ঘটার উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে৷ উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে বলতে হয় বাসাবাড়িতে ইন্টারনেটের ব্যবহার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ এবং এর সুলভ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং৷ দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার কারণে সম্ভব হচ্ছে ছবি এবং অন্যান্য মাধ্যমের তথ্যের বিনিময়৷ বিশেষ করে বর্তমান সময়ে ছবিভিত্তিক তথ্যের ব্যাপক সমাহার ঘটেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েব সাইটগুলোতে৷ দ্বিতীয়ত, সবার কমপিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক জ্ঞান আহরণ সমৃদ্ধ হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত প্রযুক্তি ব্যবহারে নির্ভরতা বেড়েছে৷ অনেকাংশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজনীয় ধারণা সম্পর্কিত কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে প্রভাবিত করেছে৷ তৃতীয় উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ব্যবহারকারীভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তির সেবার উন্নয়ন এবং প্রণয়ন৷ কমপিউটার প্রোগ্রামগুলো ব্যবহারকারীর সর্বোচ্চ সুবিধা বিবেচনা করে তৈরি হচ্ছে, যাতে করে ব্যবহারকারী নিজের সুবিধামতো প্রয়োজনীয় ছবি এবং তথ্যাদি সংযোজন বা বিয়োজন করতে পারে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের ব্যবহার সামগ্রিকভাবে সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের জন্য আরো সমৃদ্ধ পরিসর তৈরি করেছে৷ ফলে সফটওয়্যার তৈরিতে প্রকৌশলীরা পারদর্শিতা অর্জন করছে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের বিশ্বব্যাপী প্রসার ও ব্যবহার এবং নানা বর্ণ, গোত্র, বয়সের বিচিত্র সংমিশ্রণ এই সমাজ ব্যবস্থাকে অনেক প্রাণবন্ত করে তুলেছে৷ বর্তমান সময়ে এর সাথে যোগ হয়েছে নিরাপত্তাহীনতা৷ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সমাজ ব্যবস্থার খুবই প্রয়োজনীয় উপকরণ৷ ওয়েব ভিত্তিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই৷ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ওয়েবভিত্তিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে যথেষ্ট উদ্যোগী, বিশেষ করে ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কিত বিধান প্রণয়নে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য প্রয়োজন ইন্টারনেট কানেকশন৷ দ্রুতগতির ইন্টারনেট কানেকশন ও ব্রডব্যান্ড কানেকশন এই নেটওয়ার্কিংয়ের প্রয়োজনীয় কাজকে সমৃদ্ধ করে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের মূল কাজে অংশ নেয়ার পূর্বশর্ত ভালো ইন্টারনেট সংযোগ৷ ২০০৮ সালের বয়েড-এর জরিপে বলা হয়, ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীরা বাসাবাড়ি থেকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বেশি অংশ নেয় ৷ যদিও কিছু কিছু স্কুল, লাইব্রেরি ও প্রতিষ্ঠান এসব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করছে, তথাপি বাসাবাড়ি থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের গুরুত্ব বাড়াতে এ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে সদস্যের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে৷
চিত্র-১-এ দেয়া ছবিতে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রতিফলিত৷ ছবিতে দেখা যায়, আনুমানিক দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৪ শতাংশ বাসায় ইন্টারনেট ব্যবহার হয়, যদিও বয়স ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এর ভিন্নতা আছে৷ ৬৫ বয়সোর্ধ্ব ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য৷ কম বয়সসীমার ব্যবহারকারীরাই এর সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী, যা শতকরা ৩৩ ভাগ৷ এ জরিপে যুক্তরাজ্যের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বয়সসীমা এবং আর্থ-সামাজিক কাঠামোর ভিত্তিতে ভিন্নতা প্রতিফলিত৷ আমাদের বর্তমান সময়ের বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর জরিপ এবং এর ভিত্তিতে কার্যক্রম প্রণয়ন অপরিহার্য৷
যুক্তরাজ্যের অপর একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান AdKg (Ofcom) অতি সম্প্রতি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলো নিয়ে গবেষণা করে৷ এ গবেষণা জরিপে সর্বোচ্চ ব্যবহারের দিক থেকে তিনটি জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের নাম আসে৷ এগুলো যথাক্রমে ফেসবুক, মাইস্পেস এবং বিবো৷ ব্যবহারকারীদের শতকরা ৬২ ভাগ ফেসবুক-এর সদস্য৷ বাকীগুলোর মধ্যে শতকরা ৩৫ ভাগ মাইস্পেস ও বিবোর সদস্য৷ এর মধ্যে ব্যবহারকারীদের শতকরা ৩৯ ভাগ দুই বা তথোধিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের সদস্যভুক্ত৷ এ জরিপের ফলাফল চিত্র-২-এ দেখানো হলো৷
AdKg-এর অপর এক জরিপে বাবা-মা এবং বাচ্চাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ব্যবহারের এক তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ পায়, যা চিত্র-৩-এ দেখানো হলো৷
এ সমীক্ষায় দেখা যায়, বাচ্চাদের শতকরা ৬৩ ভাগ ব্যবহারকারী বিবোর সদস্য৷ শতকরা ৩২ ভাগ বাবা-মা বিবোর ব্যবহারকারী৷ আবার শতকরা ৪১ ভাগ বাবা-মা ফেসবুক-এর ব্যবহারকারী৷ শতকরা ১৮ ভাগ সন্তান ফেসবুক ব্যবহার করে৷ কিন্তু মাইস্পেস এবং এমএসএন গ্রুপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এই ব্যবধান অনেক কম৷
আবারো উল্লেখ্য, এ ধরনের গবেষণা কার্যক্রম শিক্ষা, বাণিজ্য, রাজনীতি ও সমাজ তথা গোটা জাতির জন্য অনেক দিকনির্দেশনামূলক৷ শিক্ষার প্রসার, ব্যবসায়ের নতুন দিকনির্দেশনা, রাজনীতির নতুন পটভূমি রচনা এবং সমাজের সংশোধনে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত অনেক অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে৷
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের ব্যবহার
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ব্যবহারকারীর জন্য সব ধরনের আনুষাঙ্গিক নির্দেশনা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া থাকে৷ সর্বপ্রথম রেজিস্ট্রেশনের কাজ৷ এ কাজের জন্য প্রয়োজন ইন্টারনেট সংযোগ এবং নিজস্ব ই-মেইল৷ রেজিস্ট্রেশনের পরে প্রথম কাজ হলো প্রোফাইল সেট করা৷ প্রোফাইল তৈরি করা একান্তই ব্যক্তিগত এবং প্রতিটি সদস্যের প্রোফাইল পেজটি একদম স্বতন্ত্র৷ নিজের ব্যক্তিগত তথ্য নাম, ঠিকানা, যোগাযোগের বৃত্তান্ত, ধর্ম, বর্ণ এবং সেই সাথে পছন্দ-অপছন্দের প্রতিটি বিষয় এ প্রোফাইল পেজে অন্তর্ভুক্ত৷ প্রোফাইল পেজটি অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ প্রোফাইল পেজটি দেখতে কেমন হবে, ছবি সংযোজন এবং অন্যান্য ফিচার পরিবর্তন করে ব্যবহারকারী এটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পারে৷ কবির ভাষায় বলতে হয়, ওয়েবের ক্যানভাসে আত্মপ্রতিকৃতি৷
প্রোফাইল পেজ তৈরির পর ব্যবহারকারীরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের মূল কাজ নেটওয়ার্কিং শুরু করে৷ বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানানো এবং বন্ধুদের আমন্ত্রণ রক্ষার মাধ্যমে বন্ধুদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়৷ বন্ধুদের এক সুবিশাল নেটওয়ার্ক৷ জানা বন্ধু, অজানা বন্ধু, পুরনো বন্ধু, বন্ধুর খোঁ জে বন্ধু, এক অনবদ্য বন্ধু বত্সল নেটওয়ার্ক৷ আর সবাই যেনো এক সুতায় গাঁ থা৷ ভিন্ন দেশ, ভিন্ন সভ্যতা, ভিন্ন বর্ণ, গোত্র, ভিন্ন ধর্ম, কিন্তু এক ও অভিন্ন মিলনমেলা৷ একে অন্যের সাথে ভাবের, ভাবনার ও তথ্যের বিনিময়ের মধ্যদিয়ে সৃষ্ট এক অপূর্ব বিশ্বমেলা, যেখানে কোনো ভেদাভেদ নেই৷ কোনো সীমারেখা নেই৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের এটাই মূল কথা৷
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের সদস্যদের অনেক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো প্রোফাইল পেজ দেখা৷ প্রোফাইল পেজ দেখার অনেক দিক আছে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় আর জ্ঞানের ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করা৷ কোনো কোনো সমৃদ্ধ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বন্ধুদেরকে শ্রেণীবিভাজন করে এবং জনপ্রিয়তার একটি তালিকা তৈরি করে৷ বন্ধুদের সাথে খোলামেলাভাবের তথ্যের বিনিময় এবং চেনা-অচেনা গন্ডির আবর্তে পরিভ্রমণে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত উন্নয়ন করছে আত্মসচেতনতা৷ নিজেদেরকে বহিঃপ্রকাশ করার এমন সহজ আর আর কি ই-বা হতে পারে? সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তৈরি একটি চলমান প্রক্রিয়া৷ নিজস্ব প্রোফাইল এবং সাইট তৈরির কাজ শেষ হলে শুরু হয় যোগাযোগ৷ যোগাযোগের অনেক মাধ্যম রয়েছে৷ সাঙ্কেতিক চিহ্ন, ছবি, ভিডিও, ই-মেইল নানা মাধ্যমে যোগাযোগ হতে পারে৷ আবার ফোরাম বা কারো দেয়ালে লেখার মাধ্যমে টেক্সটভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপন হতে পারে৷ ব্যবহারকারী এই যোগাযোগ প্রোফাইল পেজের মাধ্যমে সরাসরি দেখাতে পারে৷ নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে যে যোগাযোগের কাজ সবচেয়ে বেশি হয় তা হলো কথা, যাকে আমরা বলি কথোপকথন৷ এই কথোপকথনের ভুবনে বন্ধু, চেনা-অচেনা, পরিবারের নিকটাত্মীয় থেকে শুরু করে সবাই কথার মালা তৈরি করে৷ দৈনন্দিন এই কথার ভুবনে সবাই একে অন্যের সাথে কথা বলে৷ অপর এক জরিপে প্রকাশ, ৪৭ শতাংশ ব্যবহারকারী পুরনো বন্ধুদের সাথে কথা বলে এবং শতকরা ৩৫ ভাগ নতুন বন্ধুর সাথে কথা বলে৷ উল্লেখযোগ্যভাবে শতকরা ১৭ ভাগ ব্যবহারকারী কথা বলে অপরিচিত বন্ধুদের সাথে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বৈশিষ্ট্যসমূহে ব্যবহারের একটি চার্ট চিত্র-৪-এ দেয়া হলো৷
বন্ধু তৈরি এবং যোগাযোগের পাশাপাশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর রয়েছে ভিন্নমাত্রার আয়োজন৷ সবার সার্বিক অংশ নেয়ার মাধ্যমে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো হয়ে উঠছে ভিন্ন মাত্রার এক সাইবারপল্লী৷ এ পল্লীতে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে জন্ম নিচ্ছে নতুন তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভার ও প্রযুক্তির প্রয়োগ৷ ব্যবহারকারী নতুন প্রিয় গান, ছবি, ভিডিও গেম, উপহারসহ আরো নানা বিষয় ইচ্ছেমতো সংযোজন করতে পারে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে এই নেটওয়ার্কিংকে শিক্ষা, বাণিজ্য, রাজনীতি ও সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সফলভাবে প্রয়োগ করার প্রচেষ্টাও লক্ষণীয়৷ এ প্রচেষ্টার মূলে রয়েছে সামাজিক সম্পর্ককে সফলভাবে কাজে লাগানো এবং মানুষের সফল নেটওয়ার্ক আদান-প্রদানকে বাহন করে উন্নয়নের ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করা৷
নতুন প্রজন্মকে উন্নয়নের মূলধারার সাথে একাত্ম করা দেশ ও জাতির একান্ত পরিহার্য৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের প্রয়োগ এ কাজকে সুন্দরভাবে সমাধা করতে পারে৷ ব্যক্তিগত প্রোফাইল পেজের পাশাপাশি কোনো কোনো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট পছন্দের গ্রুপ প্রোফাইল তৈরিতে সহায়তা করে৷ এই গ্রুপ প্রোফাইলে ব্যবহারকারী স্বাচ্ছন্দ্যে বন্ধুদেরকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে এবং প্রতিনিয়ত গ্রুপের আওতায় বিভিন্ন তথ্য ও পারস্পরিক সোহার্দ্য বিনিময় করতে পারে৷ বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে রয়েছে অনেক গ্রুপ, পছন্দের ব্র্যান্ড, ভৌগোলিক অবস্থান, কর্মকান্ড, সামাজিক বিষয়াদি, রাজনীতি এবং আরো কত কি৷ অনেকের ধারণা, এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে প্রাণের সঞ্চার ঘটাতে পারে, যা শুধু সময়ের অপেক্ষামাত্র৷
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের বাস্তব প্রয়োগের আরো একটি দৃষ্টান্ত হলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং স্টপ দ্য ট্র্যাফিক-এর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গ্রুপ৷ এই গ্রুপের মাধ্যমে যাবতীয় প্রচারণার কাজ সম্পাদন করছে আন্তর্জাতিক এসব প্রতিষ্ঠান৷ ২০০৭ সালের অক্টোবরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বার্মার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গ্রুপে ৪ লাখেরও বেশি ভিক্ষু যোগ দেয়৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে যথেষ্ট অবদান রাখে৷ জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতির ক্ষেত্রে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের প্রয়োগ লক্ষণীয়৷ ২০০৮-এর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে নতুন প্রজন্মকে রাজনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য এবং প্রতিনিধি প্রচারণায় সফলভাবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংকে ব্যবহার করা হয়েছে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংকে রাজনীতির সাথে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজন রাজনীতিবিদদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রোফাইল তৈরি করে অনুসারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার, পরিবর্তন আর পরিমার্জন তথা জাতীয় বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধ আনা৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং মানুষের নেটওয়ার্কিং৷ এক থেকে হাজার হাজার কোটি মানুষের বন্ধুত্ব আর পরিচিতি এর ভিত্তি৷
ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজন বিপণন ও প্রচার৷ আর এ কাজে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সফলভাবে ব্যবহার করা সম্ভব৷ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সফলভাবে ব্যবহার হতে পারে৷ একজন নিয়োগ কর্মকর্তা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের সহায়তায় যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করতে সক্ষম৷ ব্যবসায়ের এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং কর্মকান্ডকে আরো সুদৃঢ়ভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব৷ গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য৷ Customer Relationship Managment System : CRMS নামের ব্যবস্থা মূলত গ্রাহকের উপাত্ত নিয়ে কাজ করে, ব্যক্তিগত যোগাযোগ নয়৷ অন্যদিকে অনলাইন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একজন গ্রাহক অপর গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান করে৷ এ ধরনের যোগাযোগ ও তথ্যের আদান-প্রদানে ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উন্নতি হয়৷
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের প্রয়োগ ও ব্যবহার রাজনীতি, ব্যবসায়ের পাশাপাশি শিক্ষায় অনেক বেশি এগিয়ে গেছে৷ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমে গত দশ বছরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়৷ আগেই বলা হয়েছে, বিবো এবং মাইস্পেস নামের সোশ্যাল নেটওয়ার্কংয়ের ব্যবহারকারীরা মূলত স্কুল এবং সমপর্যায়ের৷ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো প্রাণন্ত করার জন্য এ সোশ্যাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রয়াস লক্ষণীয়৷ যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট মিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয় নভেম্বর ২০০৭-এ এমনি এক উদ্যোগ নিয়েছে কানেক্ট নারে একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার৷ এ পদ্ধতিতে সব ছাত্রছাত্রী তাদের নিজেদের প্রোফাইল তৈরি করবে, ছবি এবং প্রয়োজনীয় নথি সংযোজন করবে, আলোচনার বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করবে, মেসেজ বিনিময় করবে, ব্লগ ও প্রেজেন্টটেশেন প্রকাশ করবে৷ পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্যও অনুরূপ সব সুবিধা থাকবে৷ এই শিক্ষাভিত্তিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কটি শিক্ষার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করবে৷ বর্তমানে কানেক্ট নারে নেটওয়ার্কে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অন্যদের মিলিয়ে মোট ৫,০০০ সদস্য আছে৷ এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে নতুন ছাত্রছাত্রীরা আরো বেশি উপকৃত হচ্ছে৷ ক্লাস, শিক্ষক, পরিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের কোনো বিকল্প নেই৷
ওয়েব ভিক্তিক সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের করণীয়
ওয়েব ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি ইন্টারনেট এবং দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ আজ সহজ লভ্য৷ বিশ্বায়নের এই যুগে যেভাবে ব্যবসা বাণিজ্যের ভৌগলিক পরিসীমার বাহিরে প্রসার ঘটছে, এতে বোঝা যায় ইন্টারনেট নির্ভর সেবার বিকেন্দ্রীকরণ আরো বেশি বেশি দরকার৷ বাংলাদেশের তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি প্রসারে অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে ২২ গিগাবাইটের ইন্টারনেট সংযোগের ব্যান্ডউইথ৷ যদিও এই বিপুল ক্ষমতার শতকরা দশভাগ ব্যবহারে আসছে শুধুমাত্র উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাবে৷ বিজ্ঞান তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় এবং বিটিআরসির সফল সমন্বয়ে উপযুক্ত প্রযুক্তি, যথাযথ ব্যবহার এবং বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চত করে এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷
ওয়েবভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি প্রসার অনেক বাড়ানো সম্ভব৷ এরজন্য প্রয়োজন ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সাথে সুলভতা৷ ইন্টারনেট সেবাকে আরো সুলভ করতে হবে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামের মানুষ যারা নিত্য দিনের কায়িক পরিশ্রমে দেশের শতকরা ২০ ভাগ মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে, তাদের জন্য ইন্টারনেট ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার বিবর্তন এখনো ভাবনা করা যায়নি৷ তথাপি বিভাগ, জেলা এবং থানা পর্যায়ে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ব্যবহারকে আরো উপযোগী করে তোলা দরকার৷ দেশের সকল স্কুল এবং কলেজগুলোতে অবিলম্বে ইন্টারনেট সংযোগ বিনামূল্যে দিয়ে এর সফল প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, প্রশিক্ষণ এবং আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা দরকার৷ দেশের বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামোকে আরো সুদৃঢ় ভিক্তি তৈরি করবে আগামী দিনের ওয়েবভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার এক বর্ণিল বাংলাদেশ৷
প্রসঙ্গ : হটঢাকা
বর্তমান সময়ে অনলাইন কমিউনিটি বা ওয়েবভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বাংলাদেশে এখন প্রায় ৪৫ হাজার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে যারা নিয়মিত এসব নেটওয়ার্ক মেইন্টেইন করে চলেছে৷ তারা সাধারণত ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার সাথে এরকম নেটওয়ার্ক তৈরি করে চলেছে৷ বলতে গেলে এই নেটওয়ার্ক পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে৷ বাংলাদেশে এই অনলাইন কমিউনিটি খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করছে৷ এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা শুধু নিজেদের যোগাযোগের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ রাখেনি৷ তারা একে ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং কনটেন্ট শেয়ার করছে৷ এই কনটেন্ট হতে পারে বই, ভিডিও, গান বা যেকোনো কিছু৷ বাংলাদেশে এই মুহুর্তে ৬ থেকে ৮ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে৷ সেই তুলনায় কিন্তু এই অনলাইন কমিউনিটির সহযোগীদের সংখ্যা বেশি নয়৷ হট মিডিয়া লিমিটেডের যাত্রা শুরু ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে, বাংলাদেশের প্রথম সোশ্যাল নেটওয়ার্কভিত্তিক ছবি শেয়ারভিত্তিক ওয়েবসাইট প্রকাশের মধ্য দিয়ে৷ হট মিডিয়া বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রণয়ন, বিকেন্দ্রীকরণ এবং প্রসার ঘটানোর কাজে নিয়োজিত৷
এই অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে hottdhaka৷ hottdhaka ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে৷ খুব শিগগির তারা তাদের নতুন ধরনের অনলাইনভিত্তিক সেবা hottdhaka.com অবমুক্ত করতে যাচ্ছে৷ পুরো বাংলাদেশকে তারা একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে যাচ্ছে৷ তাদের চাওয়া হচ্ছে, মানুষ এই সাইটের মাধ্যমে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কার্যক্রম পালন করবে৷ অনলাইনের মাধ্যমে যা যা সুবিধা দেয়া যায় তার সবই তারা এই সাইটের মাধ্যমে দিতে চাচ্ছেন৷ এই সাইটের সব কনটেন্ট হবে বাংলাদেশী৷ hottdhaka-এর কর্মকর্তারা জানালেন, তারা নতুন কিছু দেবার উদ্দেশ্যেই তাদের কাজ করে চলেছেন৷
ওয়েবভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে যে যা বললেন
প্রফেসর লুত্ফর রহমান
কমপিউটার বিজ্ঞান অনুষদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইন্টারনেটভিত্তিক অনেক ধরনের ফোরাম আছে৷ এসব ফোরাম ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে৷ এ ধরনের ফোরামের মাধ্যমে খুব সহজেই ও দ্রুত ভাবের বিনিময় চলে৷ আর ইচ্ছেমতো বন্ধুত্ব করা যায় বলে খুব সহজেই সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাও সম্ভব৷ অনেক সময়, এসব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পুরোনো বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনের সাথে নতুন করে যোগাযোগ ঘটে৷ আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অনেক আগে আমি নিয়মিত ই-মেইল চেক করে দেখতাম৷ কিন্তু এখন আর নিয়মিতভাবে ই-মেইল চেক করা সম্ভব হয় না বা সব ই-মেইল পড়ার মতো সময় পাই না৷ এসব ক্ষেত্রে আইটিভিত্তিক এধরনের সামাজিক নেটওয়ার্ক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে, যা আধুনিক জীবনের সামাজিক বন্ধন জোরদার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷
প্রসের আব্দুল মান্নান
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ
ওয়েবভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নতুন নতুন সম্ভাবনা অনুসন্ধান করা যায়৷ এর মাধ্যমে একটা কমিউনিটি তৈরি হয়, যেটা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বা ই-মেইলের মাধ্যমে সম্ভব হয় না৷ সামাজিক নেটওয়ার্ক বলতে এখানে নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করা যায় এবং সার্কেল আলাদাভাবে মেইন্টেইন করা যায়৷ অনেক সময় হারানো বন্ধুকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া যায়৷ এই সময়ে হঠাৎ করেই এ ধরনের নেটওয়ার্ক বিস্তার করেছে৷ আমার এক বন্ধু জাপান থেকে আমাকে এইসব নেটওয়ার্কের বিষয়ে জানতে চেয়েছে৷ অনেক সময়ই আমরা সবগুলো ই-মেইল চেক করার সময় পাই না৷ এ ধরনের সেবা তার কিছুটা বিকল্প হতে পারে৷
ড. অনন্য রায়হান
নির্বাহী পরিচালক
ডি.নেট
ফেসবুক বা এধররে সাইটগুলোতে যা হয় তা হচ্ছে exchange of view৷ আধুনিক জীবনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে বন্ধুবান্ধব বা প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করার সময় আমরা খুব কমই পাই৷ এর সুযোগ খুব কম৷ কিন্তু এ ধরনের সাইটগুলোর মাধ্যমে দেখা যায় সুযোগ হয়ে যায়৷ অনেকক্ষেত্রে নতুন করে যোগাযোগ তৈরি হয়৷ এটা একটা যোগাযোগ বা নেটওয়ার্ক তৈরি করার বা নেটওয়ার্ক মেইন্টেইন করার জন্য বেশ কার্যকর৷ আর যারা খুব ব্যস্ত মানুষ তারাও এর সুফল ভোগ করতে পারেন৷ আর সবারই সচেতন থাকতে হবে যাতে এর কোনো বাজে ব্যবহার না হয়৷ কারণ এসব সাইটে যেকেউ তার ইচ্ছেমতো নেটওয়ার্ক গড়ার বা ভাঙ্গার সুযোগ নিতে পারে৷ এই বাজে ব্যবহারের কথা বাদ দিলে আমি বলবো সামাজিক নেটওয়ার্কের জন্য এধরনের সাইট আদর্শ৷
প্রসের এস. আই. নুসরাত চৌধুরী
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সটি
ওয়েবভিত্তিকবিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্ক খুব কাজের৷ বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ৷ প্রযুক্তির সুবাদে আমরা এখন অনেক কিছুই করতে পারছি, যা আগে সম্ভব ছিল না৷ ওয়েবভিত্তিক এ ধরনের সামাজিক নেটওয়ার্ক এমনি একটি উদাহরণ৷ ফেসবুক জাতীয় সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা আমাদের দেশে নতুন৷ স্বভাবতই এই নতুন সামাজিক ব্যবস্থা তরুণদের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ছে৷ তরুণরা এর ব্যবহারে যথেষ্ট উত্সাহী৷ এ ধরনের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নতুন নতুন অনেক কিছু জানা যায়৷ এগুলো সবই এর ইতিবাচক দিক৷ এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে৷ এ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় নিজেকে যেমন অন্যদের মাঝে প্রকাশ করা যায়, তেমনি যেকেউ ইচ্ছে করলেই অসৎ উদ্দেশ্যে নিজের ইচ্ছেমতো অন্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে পারে৷ এর ফলে কাউকে সামাজিকভাবে হেয় করা বা ছোট করা খুব সহজ৷ এর পাশাপাশি ভুল তথ্য দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করাও বেশ সহজ৷ তাই কোনটা গ্রহণ করা উচিৎ, কোনটা পরিহার করা উচিৎ, তা সমাজের সব স্তরের মানুষকেই ঠিক করে নিয়ে এগুতে হবে৷ ওয়েবভিত্তিক সামাজিক নেটওইয়ার্কে দুভাবে এগোনো যায়৷ একটি হচ্ছে নিছক সময় কাটানো বা বন্ধুত্ব করার উদ্দেশ্যে৷ অন্যটি হচ্ছে পেশার খাতিরে৷ পেশার ক্ষেত্রে, এ ধরনের নেটওয়ার্ক থেকে একই পেশার মানুষ নিজেদের মধ্যে নিজ পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে কর্মজীবন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে৷
এ এইচ এম বজলুর রহমান
ফেসবুক-এর বাংলাশের প্রমোটার এবং
প্রধান নির্বাহী, বিএনএনআরসি
ওয়েবভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক হছে একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক৷ এ ধরনের বেশ কিছু ওয়েব আছে৷ ভধপবনড়ড়শ ছাড়াও আছে সুংঢ়ধপব, হবঃষড়ম ইত্যাদি৷ এর সুষ্ঠু ব্যবহার থেকে সবাই উপকৃত হতে পারে৷ এর ব্যবহারের ফলে সবাই নিজ নিজ পেশা ছাড়াও অন্য পেশা বা কাজ সম্পর্কে জানতে পারবে৷ এ ধরনের নেটওয়ার্ক মানুষ দুইভাবে ব্যবহার করতে পারবে৷ প্রথমত, জানার জন্য বা নিজেদের জ্ঞানের পরিধিকে বাড়িয়ে নেয়ার জন্য৷ দ্বিতীয়ত, ব্যক্তি সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য৷ যেকোনো সাধারণ মানুষ এ ধরনের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হাই প্রোফাইল মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবে, যেটা অন্য কোনো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় সাধারণত সম্ভব নয়৷ আর সব ব্যবস্থার মতো এ ব্যবস্থারও কিছু খারাপ দিক আছে৷ কেউ যদি নিষিদ্ধ কোনো গ্রুপ বা জনহিতকর নয় এমন কিছু বা ক্ষতিকর কোনো উদ্দেশ্যে কিছু করতে চায়, তাহলে এসব সাইটগুলোর প্রশাসনকে সে ব্যাপারে জানালে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ তাই নিরাপত্তার ব্যপারে একটু সজাগ থাকলেই কোনো সমস্যা হবার কথা নয়৷
আফসানা রহমান
সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
বর্তমান প্রজন্ম ইন্টারনেটে অনেক বেশি সময় কাটাচ্ছে৷ যার ফলে এরা পরিবার এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটা নিজস্ব সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে, যেখানে তাদের তথ্য আদান প্রদানের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে৷ এর ফলে তাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ আমাদের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের মধ্যে যে গ্রুপ গড়ে উঠেছে, তার ফলে আমরা আগে থেকেই কোর্স আউটলাইন থেকে শুরু করে ফ্যাকাল্টি এবং পড়ানোর সিস্টেম সবই আগে শেয়ার করতে পারছি৷ যে কোনো তথ্য আমরা অল্প সময়েই পেয়ে যাচ্ছি, বিভিন্ন জায়গায় কর্মরতদের কাছ থেকে৷ এর ফলে সময় এবং কষ্ট অনেক বেঁচে যাচ্ছে এবং এমবিএ প্রোগ্রাম অনেক কম সময় দিয়েই সফলভাবে শেষ করতে পারছি৷ সামাজিক নেটওয়ার্কিংয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তাই আমার কাছে অপরিসীম৷
অপরুপ চৌধুরী এবং মহিউদ্দিন আহদে
সরকারী কর্মকর্তা
সামাজিকনেটওয়ার্ক সমাজের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে একটি উন্নততর, দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে৷ তাই এটি উন্নততর যোগাযোগ, চিন্তা ভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির আদান প্রদান, কার্যকর দলগত কার্যক্রম এবং চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমাজকে সাহায্য করে৷ সামাজিক নেটওয়ার্ক তৃণমূল জনগণ এবং সমাজের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং সামাজিক বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে তার সমাধানে ভূমিকা রাখে৷
মো: আসিফ ইকবাল রিচি
সন্মান শেষ বর্ষ
ইংরেজি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আইসিটির মাধ্যমে সামাজিক বিভিন্ন নেটওয়ার্ক সমাজে কার্যকর ব্যবস্থা রাখতে পারে৷ বিশেষ করে আমাদের মতো জনবহুল দেশে৷ এটা ঠিক, বর্তমানে facebook, hi5 এসব ওয়েবভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্কের ব্যবহার বাড়ছে এবং তরুণ প্রজন্ম এর দিকে ঝুঁকে পড়ছে৷ তাই বলে বড়রা বা অন্য পেশার মানুষ এর দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ছে না, তা নয়৷ এগুলো এখন সব বয়সী মানুষের জন্য উপযোগী৷ আমি নিজে facebook এবং hi5 ব্যবহার করি৷ facebook কিছুটা সুরক্ষিত মনে হলেও আমার কাছে যর৫ মোটেও সুরক্ষিত মনে হয় না৷ facebook এ বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনের লিঙ্ক পাওয়া যায়৷ আমার কথা হচ্ছে, এ ধরনের সামাজিক শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এসব সংগঠন দ্রুত নিজেদের বিস্তার করতে পারে৷ সামাজিক নেটওয়ার্কের ভালো এবং খারাপ দুই দিকই আছে৷ আমাদের সচেতন থাকতে হবে ভালো-মন্দের ব্যাপারে৷
মৌরীন সানজানা জামান
মাস্টার্স শেষ বর্ষ
হিসাব বিজ্ঞান অনুষদ, ইনে কলেজ
অনলাইন কমিউনিটি বা ওয়েবভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক এখন সারাবিশ্বেই আলোচিত নাম৷ আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়৷ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে এখন অনেক পেশাজীবী মানুষ সুযোগ পেলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজেদের নেটওয়ার্ক বা কমিউনিটি সমৃদ্ধ করে চলেছে৷ এর সুফল এবং কুফল দুটোই আছে৷ সুফল হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুবান্ধব সহজেই পুনরায় খুঁজে পাওয়া যায়৷ আর এর কুফল হচ্ছে এর মাধ্যমে খুব সহজেই নিজেদের বাজে উদ্দেশ্য সফল করতে পারে৷ আর সামাজিক নেটওয়ার্ক এখন আগের চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে- এটি বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এর অনেক অংশজুড়ে অনলাইন কমিউনিটি আছে তা ঠিক৷ তবে বর্তমান সময়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতিও এক্ষেত্রে একটি বড় কারণ বলে আমি মনে করি৷
শীলা ফারহানা
শেষ বর্ষ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
ফেসবুক এখন খুব জনপ্রিয় একটি নাম একথা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এর মাধ্যমে আমরা অবসর সময়ে অনেক মজা করে থাকি৷ শুধু মজা করার উদ্দেশ্যেই যে এই সাইট জনপ্রিয় হয়েছে তা কিন্তু নয়৷ এই সাইটের মাধ্যমে আমরা নতুন বন্ধুবান্ধব খুঁজে নিতে পারি৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো আমরা খুব সহজেই এর মাধ্যমে নিজ নিজ সার্কেলের খবর পেতে পারি৷ কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু হঠাৎ হারিয়ে যায়৷ কিন্তু আমরা কেউই তার কোন খবর জানতাম না৷ কিন্তু অনলাইনের মাধ্যমে আমরা সবাই দ্রুত জানতে পেরেছি, যা অন্যান্য কোন মাধ্যমে এত দ্রুত জানতে পারতাম না৷ তবে তাই বলে যে এর পুরোটাই ভালো তা কিন্তু নয়৷ ফেসবুকে দেখা যায় অনেক সময় অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা, যা আমাদের কাম্য নয়৷
তারিকুল হাসান
তৃতীয় বর্ষ, কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রৗকোশল অনুষদ, আহছানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়৷
আমরাসোশ্যাল সাইটগুলো থেকে সবচাইতে বড় যে জিনিসটা পাই তা হলো, আমরা আমাদের নিজের একটা পেজ পাই যেখানে আমরা নিজেদের প্রোফাইল রাখতে পারি৷ একদম ফ্রি একটা ওয়েব পেজ পাচ্ছি যেখানে নিজের পছন্দমতো সব কিছু বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারি ৷ আরো মজার ব্যাপার হলো যেকেউ চাইলে আমার প্রোফাইল ভিজিট করে যদি পছন্দ হয় তাহলে বন্ধু হিসেবে রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারে, চ্যাট করতে পারে আবার ইচ্ছে করলে ই-মেইলও করতে পারে৷ এই সাইটগুলো মনের মানুষকে খুঁজে পেতে অনেক সাহায্য করছে৷ এ রকম সাইট থেকে আমি অনেক বন্ধু পেয়েছি যাদের অনেকেই ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগত থেকে এখন আমার বাস্তব জীবনের বন্ধু৷ এই সব সাইটের কিছু খারাপ দিক থাকলেও এর ভালো দিকও অনেক আছে৷ এখানে অনেক গ্রুপ আছে যেখানে গ্রুপ মেম্বাররা তাদের ইচ্ছেমতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে ৷ আবার কেউ যদি তার প্রোফাইল সবার জন্য উন্মুক্ত না করতে চায় সেটাও করতে পারে৷ বাংলাদেশের একজন ছাত্র হিসেবে আমি বলতে পারি, এই সাইটের জন্য আমার
অরিল্ড ক্লোকারহগ
somewherein
somewherein সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর৷ সারা বিশ্বে আমরাই প্রথম বাংলা ব্লগ সাইট প্রকাশ করি৷ বর্তমানে গড়ে এই সাইটে প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ দর্শনার্থী ভিজিট করে এবং প্রায় ৫০,০০০ বার বিভিন্ন পেইজ প্রদর্শিত হয়৷ facebook বা যর৫ বাংলাদেশে যেভাবে সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে somewhereinও তার ব্যতিক্রম নয়৷ আমি মনে করি, বাংলাদেশের অনলাইন কমিউনিটিতে somewherein-এর বড় ভূমিকা রয়েছে৷ আমরা এই নেটওয়ার্ককে মোবাইল ফোনেও প্রবেশের জন্য এখন কাজ করে চলেছি৷ www.aawaj.com এখন পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে৷
ফিডব্যাক: akrarhossain@yahoo.com