লিনআক্স ধারাবাহিকের গত কয়েকটি পর্বে লিনআক্স ইনস্টলের বিভিন্ন দিক এবং ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷ সিস্টেমের ডাটা অক্ষুণ্ন রেখে কিভাবে লিনআক্স ইনস্টল করতে হয়, সেটাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য৷ এই পর্বে লিনআক্সের কন্সোল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷
আজ আমরা সবাই জানি সব অপারেটিং সিস্টেমই মোটামুটি গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস GUI মেইন্টেইন করে চলে৷ কিন্তু সব সময়ই এমনটি ছিল না৷ শুরুতে সব অপারেটিং সিস্টেমই কমান্ড দিয়ে চলতো৷ মাইক্রোসফট তার ডস অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে অপারেটিং সিস্টেমের জগতে বিপ্লব সাধন করে৷ এই ডস ছিল পুরোপুরি কমান্ডভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম৷ পরে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে অপারেটিং সিস্টেমের জগতে আরেকবার সবাইকে চমকে দেয় গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস দিয়ে৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের চেয়ে কমান্ডভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম অনেক শক্তিশালী৷ কারণ, কমান্ডগুলো সরাসরি অপারেটিং সিস্টেমের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে৷ আর যারা শুধু কমান্ডের ওপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেম চালান, তারা অন্যদের থেকে অনেক দ্রুত কাজ করতে পারেন৷ কিন্তু কমান্ড দিয়ে কাজ করার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, ব্যবহারকারীদের অনেক কমান্ড মনে রাখতে হয়৷ এজন্য শুরুতে একটু অসুবিধা হলেও পরে এরা অনেক দক্ষ হয়ে ওঠেন৷
লিনআক্সের কমান্ড লাইন জানতে হলে শুরুতেই কয়েকটি বিষয় জানা প্রয়োজন৷ এগুলো হচ্ছে শেল, কন্সোল ও টার্মিনাল৷ লিনআক্সের শেল বলতে বুঝায় বিশেষ এক ধরনের প্রোগ্রাম৷ এই প্রোগ্রামটি নিজেই একটি কমান্ড ইন্টারপ্রিটর৷ ব্যবহারকারীর দেয়া কমান্ডকে সিস্টেম লেভেলের কার্যকরি কমান্ডে পরিণত করে, তা সম্পাদন করাই শেলের কাজ৷ লিনআক্সে অনেক ধরনের শেল ব্যবহার হয়৷ এগুলোর মধ্যে sh, ksh, csh, dash প্রভৃতি খুব জনপ্রিয়৷ উইন্ডোজ ৯৫ বা ৯৮ অপারেটিং সিস্টেমে আমরা ডস মোডে সিস্টেম চালু করতে পারতাম৷ এই অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে ডস সমন্বিত অবস্থায় থাকত৷ লিনআক্সের কন্সোল অনেকটা একই রকমের৷ যাবতীয় কমান্ড এই কন্সোলের মাধ্যমেই দিতে হয়৷ লিনআক্সে কন্সোলে প্রবেশের জন্য লগইন করার সময় সেশন থেকে কন্সোল সিলেক্ট করে দিলেই এটি চালু হবে৷ আর টার্মিনাল হচ্ছে অন্য যেকোনো সেশন বা ডেস্কটপ, যেমন জিনোম, কেডিই বা অন্য কিছু চালু থাকা অবস্থায় পারশিয়ালি কন্সোলের কোনো কমান্ডকে চালানোর ব্যবস্থা৷ অনেকটা উইন্ডোজের কমান্ড প্রম্পটের মতো৷
আপনার সিস্টেমে যে লিনআক্সই ইনস্টল করা থাকুক, তা থেকে কন্সোল চালু করুন৷ লিনআক্স ইনস্টল করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অটোমেটিক লগইন অপশন এনাবল করায় হয়তো সরাসরি ডেস্কটপে প্রবেশ করে থাকবেন৷ তাই লিনআক্সে বুট করার পর ডেস্কটপে লগ আউট করে সেশন থেকে কন্সোল নির্বাচন করার মাধ্যমে কন্সোলে প্রবেশ করা যেতে পারে৷ সিস্টেমে ডুয়াল বুটিং করা থাকলে অনেক লিনআক্সের অপারেটিং সিস্টেম সিলেকশন মেনু থেকেও কন্সোলে প্রবেশ করা যায়৷ লিনআক্সের ক্ষেত্রে একটি কথা সব সময় মনে রাখবেন, লিনআক্স কেস সেনসিটিভ৷ ডস কেস সেনসিটিভ ছিল না৷ ডসে টাইপ করার সময় ছোট বা বড় হাতের অক্ষর নিয়ে কোনো সমস্যা হতো না৷ লিনআক্সে এই ক্ষেত্রে সমস্যা হবে৷ তাই কমান্ড ইনপুট করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে৷ লিনআক্সের এই পর্বে কন্সোলের কিছু কমান্ড নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷
Login
এই কমান্ড দিয়ে ব্যবহারকারী লগইন করতে পারবেন৷ লিনআক্সের মাল্টি ইউজার এবং মাল্টি টা িস্কং অত্যন্ত শক্তিশালী হবার কারণে চমত্কারভাবে মাল্টি ইউজার সুবিধা এই কমান্ডের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়৷ লিনআক্স থেকে কন্সোলে প্রবেশ করে লগইন কমান্ড দিলে লিনআক্স ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড চাইবে৷ ধরা যাক, ইউজার নেম স৷ এখন এই ইউজার হিসেবে লগইন করলে প্রম্পটে বা কমান্ড লাইনে দেখাবে [x@localhost X]৷
startx
কন্সোল থেকে সরাসরি এক্স উইন্ডোজ বা লিনআক্সের গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসে প্রবেশ করার জন্য এই কমান্ড ব্যবহার করা হয়৷ লগইন করার পর এই কমান্ড দিয়ে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসে প্রবেশ করে আবার লগ আউট করলে আগের মোডে ফিরে যাওয়া যায়৷
halt
সিস্টেম বন্ধ করার জন্য এই কমান্ড ব্যবহার করা হয়৷ এই কমান্ডে সিস্টেমের রান লেভেল ০ নির্ধারিত হয়৷
Ctrl+Alt-Del
সিস্টেম বন্ধ করে পুনরায় চালু অর্থাত্ রিস্টার্ট করতে চাইলে এই তিনটি কী একসাথে একবার চাপলেই সিস্টেম রিস্টার্ট করার প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ এই কমান্ডের ফলে সিস্টেমের রান লেভেল ৬ নির্ধারিত হবে৷
শেল চালু করা
যে শেল চালু করতে চান সেই শেলের নাম কমান্ড হিসেবে লিখে এন্টার করলেই হবে৷ একেকটি শেল একেক ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে৷ যেমন bash শেল চালু করতে চাইলে কমান্ড লাইনে bash লিখলেই হবে৷ একইভাবে অন্যান্য শেল চালু করা যায়৷
শেল সম্পর্কিত তথ্য
অনেক সময় শেলের তথ্য জানা প্রয়োজন হতে পারে৷ ব্যবহারকারী কোন শেলে অবস্থান করছেন, তা জানার জন্য কমান্ড লাইনে $ echo $ echo কমান্ড লিখে এন্টার করলেই হবে৷ ঠট্রদ শেলে অবস্থানকালে এই কমান্ডটি লিখলে আউটপুট পাওয়া যাবে /bin/bash৷ অর্থাত্ আপনি bash শেলে অবস্থান করছেন৷ অন্যান্য শেলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷
কারেন্ট ডাইরেক্টরি সম্পর্কিত তথ্য
ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন সময়েই কারেন্ট ডাইরেক্টরি জানার প্রয়োজন হতে পারে৷ এই তথ্য জানার জন্য কমান্ড লাইনে $ pwd কমান্ড লিখতে হবে৷ ধরা যাক আপনি etc ডাইরেক্টরিতে অবস্থান করছেন৷ তাহলে এর আউটপুট দেখাবে /etc৷
ls
আপনি যে ডাইরেক্টরিতে অবস্থান করছেন, সেই ডাইরেক্টরিতে আরো কী কী আছে তা দেখার জন্য ফ্র কমান্ডটি ব্যবহার করা হয়৷ ফ্র-এর পুরো অর্থ হচ্ছে লিস্ট৷
mkdir
নতুন ডাইরেক্টরি তৈরি করার জন্য এই কমান্ড ব্যবহার করা হয়৷ কমান্ড লাইনে এই কমান্ড লিখে একটি স্পেস দিয়ে যে নামে ডাইরেক্টরি তৈরি করা যায়, সেটি লিখতে হবে৷ তাহলেই নতুন ডাইরেক্টরি তৈরি হবে৷ mkdir-এর পুরো অর্থ হচ্ছে মেক ডাইরেক্টরি৷
rmdir
কোনো খালি ডাইরেক্টরি মুছে ফেলার জন্য এই কমান্ড ব্যবহার করা হয়৷ কমান্ড লাইনে এই কমান্ড লিখে একটি স্পেস দিয়ে যে নামে ডাইরেক্টরি আছে, সেটি লিখতে হবে৷ তাহলেই খালি ডাইরেক্টরি মুছে যাবে৷ rmdir-এ পুরো অর্থ হচ্ছে রিমুভ ডাইরেক্টরি৷ ফিডব্যাক : mortuza_ahmad@yahoo.com