• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > গণিতের অলিগলি পর্ব-৪০
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গণিতদাদু
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গণিত
তথ্যসূত্র:
গণিতের অলিগলি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
গণিতের অলিগলি পর্ব-৪০




২-এর বর্গমূল ও ‘সোনালী আওয়তক্ষেত্র’

কোনো একটি সংখ্যার ওপর পাওয়ার (Power) বা ঘাত বসানোর অর্থ হচ্ছে সে সংখ্যাটি সেই সংখ্যাটি দিয়ে বারকয়েক গুণ করে গুণফল বের করা। সংখ্যাটির ওপর পাওয়ার বা ঘাত যত বসবে, গুণ করার সংখ্যাও তত হবে। এর সবচেয়ে সরল উদাহরণ হচ্ছে একটি সংখ্যার বর্গ নির্ণয় করা। অর্থাৎ সংখ্যাটির পাওয়ার বা ঘাত ২ বসানো। ৩-এর বর্গ বা ৩২ হচ্ছে ৩ x ৩ = ৯। ৪-এর বর্গ হচ্ছে ৪২ = ৪x৪ = ১৬। এর নাম বর্গ দেয়ার কারণ একটি বর্গক্ষেত্রের যে কোনো এক বাহুর দৈর্ঘ্যের বর্গ করলে বর্গক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়। যেমন ৭ ফুট দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট কোনো বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = (৭ ফুট)২ = ৭ ফুট x ৭ ফুট = ৪৯ বর্গফুট। আবার কোনো সংখ্যার ওপর ঘাত ৩ বসানোর অর্থ এর ঘন বা কিউব করা। যেমন ৫৩ = ৫ x ৫ x ৫ = ১২৫। ৪৩ = ৪ x ৪ x ৪ = ৬৪। (২ ফুট)৩ = ২ ফুট x ২ ফুট x ২ ফুট = ৮ ঘনফুট। এভাবে যেকোনো সংখ্যার পাওয়ার আমরা বাড়িয়েই যেতে পারি। যেমন ৩৪। এই ৩৪ = ৩x৩x৩x৩ = ৮১।

আমরা দেখলাম কোনো সংখ্যাকে ওই সংখ্যা দিয়ে গুণ করে গুণফল বের করার নাম বর্গ করা। ইংরেজিতে বলে স্কয়ারিং। এই স্কয়ারিং বা বর্গ করার উল্টো কাজটি হচ্ছে বর্গমূল করা বা স্কয়ার রুট বের করা। যেমন ৩-এর বর্গ ৯। অপরদিক ৯-এর বর্গমূল ৩। কারণ, ৩২ = ৩x৩ = ৯। ‘৯-এর বর্গমূল’ লিখতে গণিতের ভাষায় আমরা লিখি ৯ বা ৯১/২। তাহলে ৯ = ৯১/২ = ৩। এভাবে বেশকিছু সংখ্যার বর্গমূল আমরা সহজেই বের করে নিতে পারি। যেমন :

১৬-এর বর্গমূল = ১৬ = ৪x৪) = ৪
২৫-এর বর্গমূল = ২৫ = ৫x৫) = ৫
৬৪-এর বর্গমূল = ৬৪ = ৮x৮) = ৮
৯/২৫-এর বগূর্মল৯২৫ = ৩/৫

এভাবে আমরা অসংখ্য সংখ্যা পাবো, যেগুলোর বর্গমূল সহজেই বের করা যায়। তবে বড় বড় সংখ্যার বর্গমূল বের করতে বর্গমূল বের করার গাণিতিক পদ্ধতি শিখে নিয়ে তা করতে হবে। আমরা স্কুলের গণিতে তা শিখে থাকি।

গণিতে আমরা অনেক ধরনের সংখ্যার কথা জানি। এর মধ্যে আছে মূলদ সংখ্যা এবং অমূলদ সংখ্যা। ইংরেজিতে এগুলোর যথাক্রমিক নাম rational number এবং irrational number। মূলদ সংখ্যা হচ্ছে সেইসব সংখ্যা যেগুলো দুটি সংখ্যার অনুপাতের আকারে অর্থাৎ ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করা যায়। যেমন উপরে ৯/২৫-এর বর্গমূল একটি মূলদ সংখ্যা, কারণ ৯/২৫)= ৩/৫, যা একটি অনুপাত বা ভগ্নাংশ। তেমনি ২৫ ও একটি মূলদ সংখ্যা। কারণ ২৫ = ৫ = ২৫/৫, যা একটি ভগ্নাশ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সব সংখ্যার বর্গমূল কী একটি মূলদ সংখ্যা? এর জবাব হচ্ছে সব সংখ্যার বর্গমূল মূলদ সংখ্যা নয়। যেমন, ২-এর বর্গমূল অর্থাৎ ২ মূলদ সংখ্যা নয়, এটি একটি অমূলদ সংখ্যা। প্রাচীন গ্রিকরা প্রমাণ করেন ২ মূলদ সংখ্যা নয়। বিষয়টি তাদের অনেককেই অবাক করেছিল।

বীজগণিতের সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করে আমরা সহজেই প্রমাণ করতে পারি ২ একটি অমূলদ সংখ্যা। আমরা এরই মধ্যে জেনে গেছি মূলদ বা র্যা শনাল নাম্বারগুলোকে দুটি সংখ্যার অনুপাত অর্থাৎ ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করতে পারি। আর এ-ও জানি একটি ভগ্নাংশকে নানাভাবে আমরা প্রকাশ করতে পারি। যেমন ৫/১০, ৩/৬, ২৫/৫০ এই ভগ্নাংশ তিনটির চেহারা ভিন্ন হলেও এদের প্রতিটির মান কিন্তু একই। অর্থাৎ এদের প্রতিটির মান ১/২। আমরা স্কুল গণিতে শিখেছি প্রতিটি ভগ্নাংশে সবচেয়ে সরল আকারে প্রকাশ করা যায় এর হর (নিচের সংখ্যাটি) ও লবকে (উপরে সংখ্যা) একই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে। যেমন ২৫/৫০ ভগ্নাংশটিতে হর ৫০ ও লব ২৫-কে একই সাধারণ সংখ্যা ২৫ দিয়ে ভাগ করে ২৫/৫০-এর মান দাঁড়ায় ১/২। এরপর ১/২ ভগ্নাংশটির হর ও লবকে কোনো সাধারণ একই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এর আকার আর ছোট করা যাবে না। অতএব ২৫/৫০ ভগ্নাংশটির সরলতম আকার হচ্ছে ১/২।

এখন যদি ২ একটি মূলদ সংখ্যা হয় তবে আমরা লিখতে পারি ২ = a/b, যেখানে a ও b দুটি পূর্ণসংখ্যা এবং এগুলোর কোনো সাধারণ উৎপাদকও নেই। অর্থাৎ এমন কোনো পূর্ণ সংখ্যা নেই, যা দিয়ে a ও b-কে নিঃশেষে ভাগ করা যায়। অর্থাৎ a/b সরলতম আকারের একটি ভগ্নাংশ।

2 = a/b
 2 = a2/b2
 2b2 = a2

এর অর্থ হচ্ছে, a2 সংখ্যাটি জোড় সংখ্যা, অতএব a অবশ্যই জোড় সংখ্যা হতে হবে। অতএব আমরা a-এর মান ধরতে পারি 2c, যেখানে c একটি পূর্ণ সংখ্যা।

 2b2 = (2c)2
বা, 2b2 = 4c2
বা, 62 = 2c2

এর অর্থ দাঁড়ায় b2 একটি জোড় সংখ্যা, অতএব b সংখ্যাটিও জোড় হতে হবে। অতএব বলতে হয় a ও b উভয়ই জোড় সংখ্যা, কিন্তু তা অসম্ভব। কারণ শুরুতেই আমরা ধরে নিয়ে ছিলাম a ও b-এর কোনো সাধারণ উৎপাদক থাকবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখলাম a ও b উভয়ই জোড় সংখ্যা হবে, অর্থাৎ উভয়ই ২ দিয়ে বিভাজ্য হবে। অতএব ২ কে আমরা কখনোই দুইটি সংখ্যার অনুপাত বা ভগ্নাংশের আকারে লিখতে পারবো না। অর্থাৎ ২ সংখ্যাটি মূলদ সংখ্যা নয়।

প্রাচীন গ্রিকরা বীজগণিত ব্যবহার করে তা প্রমাণ করেননি। তবে এদের একজন এ ধারণার ওপর গবেষণা চালিয়েছিলেন। বাকি গ্রিক গণিতবিদেরা তা মোটেও পছন্দ করেননি। কারণ, তাদের বিশ্বাস ছিল, সব সংখ্যাই দুটি পূর্ণ সংখ্যা ব্যবহার করে, কিংবা দুটি পূর্ণ সংখ্যা অনুপাতের আকারে লেখা সম্ভব। এটি তাদের কাছে যেমনি ছিল সুন্দর ধারণা, তেমনি ছিল সত্য ধারণা। এখন আমরা জানতে পেরেছি মূলদ সংখ্যার রয়েছে এর নিজস্ব সৌন্দর্য। তবে সুন্দরের চেয়ে সত্য আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৯ - মার্চ সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস