• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আসছে বাধ্যতামূলক কমপিউটার শিক্ষা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:৯৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
কমপিউটার কমপিউটার শিক্ষা, 
তথ্যসূত্র:
নীতিপ্রসঙ্গ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আসছে বাধ্যতামূলক কমপিউটার শিক্ষা

বর্ষীয়ান প্রফেসর মুনিরুজ্জামান থেকে শুরু করে আমলা, শিক্ষাবিদ, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষক সবাই এখন কমপিউটার শিক্ষার গুরুত্ব অনুভব করেছেন। সেজন্য আমি বিস্মিত হইনি এই ভেবে যে, আমরা সবাই ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে আইসিটিকে বাধ্যতামূলক হিসেবে পাঠ্য দেখতে চাইছি। আশা করা যায় টাস্কফোর্স এমন সুপারিশ করবে যে, আমরা আমাদের দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য কমপিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক হিসেবেই দেখতে পাবো।

প্রায় একশ বছর আগে আমার দাদা টোলে পড়েছিলেন। প্রায় পৌনে শতবর্ষ আগে আমার বাবা স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলেন। বছর তিরিশেক আগে আমি বিশ্ববিদ্যালয় অতিক্রম করেছি। কিন্তু সত্যটি হলো আমদের এই তিন প্রজন্মে শিক্ষার বিষয়বস্ত্ত, শিক্ষাদান পদ্ধতি বা মাধ্যম- কোনোটিতেই তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং ব্রিটিশদের চালু করা তথাকথিত ইংরেজি শিক্ষার ফসল আমরা তিন প্রজন্ম। আমার মেয়েরাও সেই একই শিক্ষা গ্রহণ করেছে। ছেলেটি একটি ভিন্ন ধরনের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পার হবার চেষ্টা করছে। ওর ব্যাপারটা সম্ভবত একটু আলাদা। কারণ, মাত্র বাইশ মাস বয়সে ওর হাতে মাউস পড়েছিল।

যদি কোনো বয়স্ক মানুষকে জিজ্ঞেস করেন, তবে তিনি বলবেন আছে- চার প্রজন্মের শিক্ষায় অনেক পরিবর্তন আছে। তারা বলবেন, এখন হাতেগোনা কিছু স্কুল ছাড়া অন্য কোথাও কোনো পড়াশোনা হয় না। ওদের ধারণা, আমার দাদা টোলে পড়ে যা জানতেন, আমার বাবা স্কুলের শেষ মাথায় গিয়েও নাকি তারচেয়ে বেশি জানতেন। অনেকে বলেন, আমার বাবা যা জানতেন, আমি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও ততটা শিক্ষিত নই। আমি নিজেকে এতটা মূর্খ মনে করি না। কিন্তু সাধারণ মাুনষের ধারণা এমনই। তারা মনে করেন, দিনে দিনে শিক্ষার অধঃপতন হয়েছে। প্রতিদিন শিক্ষার মান নিচে নামছে।

আমি আমার সমত্মানদের সম্পর্কে তা বলি না। ওরা ভালো স্কুলে পড়েছে, যেটি আমি পারিনি। আমার বাবা আমাকে যেভাবে পড়িয়েছেন, আমি তারচেয়ে অনেক ভালোভাবে ওদের পড়িয়েছি। তারা গ্রামের স্কুলে আমার মতো যুদ্ধ করে পড়াশোনা করেনি। হয়ত সেজন্যই তাদের মেধার চর্চা অনেক ভালো। ওরা আমার চেয়ে অনেক মেধাবী। আমার ছেলে যখন নবম শ্রেণীতে অঙ্কে ৯৮ পায় তখন আমি বিস্মিত হই। আবার যখন মেয়েরা সব বিষয়ে লেটার পেয়েছে তখনও গর্বিত হয়েছি। কিন্তু অন্য অভিজ্ঞতাও আছে্। প্রায় চার হাজার স্নাতক মেয়েকে কেজি স্কুলের টিচার হিসেবে নিয়োগ দিতে গিয়ে ভিরমি খেয়েছি ওদের দক্ষতা দেখে। ওদের প্রায় কেউ নিজেকে নিয়ে পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারেনি। আবার বাংলা বা ইংরেজি একটি শুদ্ধ অনুচ্ছেদও পাওয়া যায়নি ওদের কাছ থেকে।

এই শিক্ষার সবচেয়ে বড় বলি হচ্ছে আমাদের নতুন প্রজন্ম। এই শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এখন দেশে প্রায় তিন কোটি শিক্ষিত লোক বেকার। দিনে দিনে এই সংখ্যা বাড়ছে। অথচ এই দুরবস্থাটি এড়িয়ে যাওয়া যেত। কর্মমুখী শিক্ষাই ছিল এর একমাত্র পথ। শিক্ষার বিষয়বস্ত্তর পরিবর্তন, শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তন ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা দিয়ে আমরা শতবর্ষের প্রাচীন অপ্রয়োজনীয় শিক্ষার অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসতে পারতাম। আমরা এটি জানতাম যে, অন্যান্য বিষয়ের প্রাচীন শিক্ষার পাশাপাশি যদি শুধু কমপিউটার শিক্ষার ধারাটি যুক্ত করা যেত তবে শিক্ষিত বেকারদের বর্তমান চরম সঙ্কট সৃষ্টি হতো না।

আমরা কমপিউটার শিল্পের পক্ষ থেকে এই চরম অবস্থাটির কথা আন্দাজ করেছিলাম ১৯৯২ সালে। তখন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির হয়ে আমি স্কুলে কমপিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি করেছিলাম। প্রায় জোর করে আমরা প্রবেশ করেছিলাম কমপিউটার শিক্ষার সিলেবাস তৈরিতে। এরপর নিজে বই লিখেছি । কিন্তু একটি মহলের দূরদর্শিতাহীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেই শিক্ষাক্রম শুরু হতে ১৯৯৬ সাল অবধি সময় লেগে গেছে। কিন্তু তারপরও এটি এমনভাবে পাঠ্য হয় যে, সেটি পাঠের কোনো আগ্রহ থাকেনি ছেলেমেয়েদের। ঐচ্ছিক কমপিউটার শিক্ষা কার্যত কোনো প্রভাব ফেলেনি। সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য, ১৯৯৮ সাল থেকে পাঠ্য হওয়া উচ্চ মাধ্যমিক কমপিউটার শিক্ষা বইটির সিলেবাস আপডেট হয়নি ২০০৮ সাল পর্যমত্ম। এর মাঝে একমুখী শিক্ষা নামের একটি বিশেষ কার্যক্রম একটু আশার আলো দেখিয়েছিল আইসিটি বা কমপিউটার শিক্ষার গুরুত্ব কিছুটা বাড়িয়ে। বিশেষত এর সিলেবাস দেখে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু কিছু লোকের প্রতিবাদের মুখে সেটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে দেশের দুই দশকের কমপিউটার শিক্ষা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়।

স্বভাব অনুযায়ী এই বিষয়টি নিয়ে চিৎকার করে আসছি আমি অনেক দিন থেকে। এবার মার্চ মাসে যখন মাল্টিপ্লান সেন্টারে আমি কমপিউটার সমিতির একটি মেলা করি তখনও শিক্ষা উপদেষ্টাকে এই চরম দুর্গতির কথা বলেছিলাম। তিনিও অনুভব করেছিলেন যে, একটি বিরাট পরিবর্তন প্রয়োজন। অবশেষে নভেম্বর মাসে বর্তমান সরকার শুধু কমপিউটার বিষয়টিই নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলাম পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রথমে একটি জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করা হয় যেখানে সবাই একমত হন যে, দশম শ্রেণী পর্যমত্ম সব ছাত্রছাত্রীর কিছু মৌলিক বিষয় অবশ্যই পাঠ করা উচিত। সেই সেমিনারের সিদ্ধামত্ম অনুযায়ী সরকার ২০ নভেম্বর ২০০৮ একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এবং ২৩ নভেম্বর সেই টাস্কফোর্সের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৭ নভেম্বর দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৪ ডিসেম্বর এর তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল।

যে দুটি সভা হয়েছে তাতে এটি অত্যমত্ম স্পষ্ট যে, বর্ষীয়ান প্রফেসর মুনিরুজ্জামান থেকে শুরু করে আমলা, শিক্ষাবিদ, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষক সবাই এখন কমপিউটার শিক্ষার গুরুত্ব অনুভব করেছেন। সেজন্য আমি বিস্মিত হইনি এই ভেবে যে, আমরা সবাই ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে আইসিটিকে বাধ্যতামূলক হিসেবে পাঠ্য দেখতে চাইছি। আমি আশা করি টাস্কফোর্স এমন সুপারিশ করবে যে, আমরা আমাদের দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য কমপিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক হিসেবেই দেখতে পাবো।

কজ ওয়েব


ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - ডিসেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস