লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সম্পাদকীয়
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, স্যাটেলাইট ফোন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
গত মধ্য-নভেম্বরে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে গেলো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সিডর-এর ভয়াবহ তাণ্ডব৷ এ তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দক্ষিণাঞ্চলীয় জনপদ, ফসল, মাছসম্পদ ও সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ৷ মাত্র কয়েক মিনিটের ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস যে ভয়াবহ ক্ষতি করে গেলো, তা পূরণ করা সত্যিই কঠিন৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ক্ষতি অপূরণীয়৷ কারণ, এর ফলে আমরা আমাদের যে স্বজনদের হারিয়েছি, তাদের কখনোই আর ফিরে পাবো না৷ সিডর যে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে আমাদের ঠেলে দিয়েছে, তাও কিন্তু কম নয়৷ এখনো এ ক্ষতির পরিমান নির্ণয়ের অপেক্ষায়৷ তবে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক যেসব তথ্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে- এ ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আজকের এ দিনে বিশ্বের ছোট-বড় অনেক দেশ যথাযথ সচেতনতা প্রদর্শন করে তথ্যপ্রযুক্তির লাগসই ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে পেরেছে৷ স্বীকার করতেই হবে, আমরা সেক্ষেত্রে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে দিচ্ছি৷ এটুকু প্রতিষ্ঠিত সত্য, বাংলাদেশ আজ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুযোর্গের শিকার৷ এই বছরেই আমাদেরকে দু-দুটি বন্যা আর শক্তিশালী সিডরের মতো একটি ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের মুখোমুখী হতে হয়েছে৷ ভবিষ্যতে আমাদেরকে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে পথ চলতে হবে, সে কথা কে অস্বীকার করে৷ অতএব, আমাদের প্রয়োজন প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগের মাত্রা কমিয়ে আনা৷ এক্ষেত্রে স্যাটেলাইট টেলিফোন ও কমিউনিটি রেডিও যে বড় মাপের ভূমিকা পালন করতে পারে, তারই বিবরণ তুলে ধরে রচিত হয়েছে আমাদের এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন৷ আশা করি, এ প্রতিবেদন আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখাবে এবং আমাদের নীতি-নির্ধারকেরা এ ব্যাপারে যথার্থ মনোযোগী হবেন৷
এদিকে আমাদের স্বপ্নের সাবমেরিন ক্যাবল নিয়ে দেশে একের পর এক লঙ্কাকাণ্ড ঘটে চলেছে৷ বারবার সাবমেরিন ক্যাবল লাইন কে বা কারা কেটে দিয়ে আমাদেরকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা৷ এ পর্যন্ত ২৮ বার কাটা পড়েছে এই ক্যাবল লাইন৷ সর্বশেষ লাইন কাটা পড়লে তা মেরামত করতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা৷ এর আগের কাটাটি মেরামত করতে সময় লাগে ১৬ ঘণ্টা৷ তারও আগের কাটা পড়া লাইন মেরামত করতে সময় নেয় ৯ ঘণ্টা৷ তবে সব মিলিয়ে এই ২৮ বার কাটা ক্যাবল লাইন সংযোগ ফিরে পেতে প্রতিবারে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে৷ মোটকথা এই ২৮ বার বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ২৮৫ ঘণ্টা সাবমেরিন ক্যাবল লাইন অকেজো থাকে৷ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর মতে, প্রতিঘণ্টা ক্যাবল লাইন অচল থাকায় আমাদের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ ৭০ হাজার ডলার৷ প্রতিবারে গড়ে ক্ষতি সাত লাখ মার্কিন ডলার৷ মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৯৫০ লাখ ডলার৷ টাকার অঙ্ক এই অর্থের পরিমাণু দাঁড়ায় ১৩৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা৷ এতো গেলো শুধু রাজস্ব আয়ের ক্ষতি হিসাব? ফাইবার অপটিক ক্যাবল লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে শিল্পের প্রতিটি খাতকে আলাদা আলাদাভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে৷ যেমন, সফটওয়্যার খাতকে এজন্য ঘণ্টায় ক্ষতি গুণতে হয় আড়াই লাখ ডলার৷ এভাবে তৈরী পোশাক শিল্প খাতসহ অন্যান্য খাতের ক্ষতির হিসাবটা যোগ হলে সহজেই অনুমান করা যায়, সাবমেরিন ক্যাবল লাইন কেটে আমাদেরকে কী বড় ধরনে ক্ষতির মুখেই ঠেলে দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে৷ অতএব অবিলম্বে সাবমেরিন ক্যাবল লাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদটা যে এসে যায়, তা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়! পাশাপাশি সাবমেরিন ক্যাবল লাইন কাটার মতো নাশকতামূলক কাজে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷ পাশাপাশি আমাদের তাগিদ হচ্ছে, সম্মত কারণেই সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনাকে কেপিআই তথা কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন ঘোষণা করে এর নিশ্চিত নিরাপত্তা বিধান করতে হবে৷
এদিকে দেশের অন্যতম বেসরকারি উচ্চাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আয়োজনে আগামী ৮ জানুয়ারি ঢাকা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এসিএম রিজিওনাল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট ২০০৭৷ এ ধরনের বড় মাপের একটি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিতভাবে ধন্যবাদ পাবার দাবি রাখে৷ আমরা এ প্রতিযোগিতার সফল সমাপ্তি কামনা করছি৷
আগামী ৩১ ডিসেম্বর মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণপুরুষ ও এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক মরহুম আবদুল কাদেরের ৫৮তম জন্মবার্ষিকী৷ তার এ জন্ম দিনে আমরা তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি৷ পাশাপাশি কামনা করছি তার আত্মার শান্তি৷
ডিসেম্বর৷ আমাদের বিজয়ের মাস৷ গৌরবের মাস৷ এদেশের সোনার ছেলেরা এ মাসেই আজ থেকে ৩৬ বছর আগে হানাদার পাকিস্তানী সেনাদের দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের স্বাধীনতার রক্তিমসূর্য৷ আজকের বিজয়ের মাসে আমরা গভীর শ্রদ্ধার জানাই সেইসব বীর মুক্তিসেনাদের, যাদের অসমান্তরাল ত্যাগের পথ ধরে আমাদের কাছে এসেছিল সেই জাতীয় বিজয়৷