• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > মালয়েশিয়ার নলেজ ইকোনমি উদ্যোগ ও আমরা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৭ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইটি
তথ্যসূত্র:
দেশ ও প্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
মালয়েশিয়ার নলেজ ইকোনমি উদ্যোগ ও আমরা

সম্ভবত এই কয়েক বছর আগেও এমনটি ভাবা কঠিন ছিল, একটি কিয়স্ক সাধারণ মানুষের জ্ঞান আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, কিংবা হতে পারে সমাজ জীবনের উল্লেখযোগ্য অংশ৷ বিশেষ করে তা হতে পারে উন্নয়নশীল দেশের সমাজ উন্নয়নের উত্তম হাতিয়ার৷ এখন প্রায়ই বলা হয়, সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু জনগোষ্ঠীকে বরাবর বাইরে রাখা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সেবার সুযোগের৷ তাদের সেবার সুযোগে প্রবেশ কিংবা সরকারি কাজে অংশ নেয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এরা এ বঞ্চনার শিকার৷ এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধাবঞ্চিত বলে বিবেচনা করা হয় গ্রামের জনগোষ্ঠীকে৷ কারণ, এদের কানেকটিভিটির হার যেমনি নিচু মাত্রার, তেমনি শিক্ষার হারও কম৷ শিক্ষার হার বলতে প্রধানত সাক্ষরতার হার বলাই এক্ষেত্রে সবিশেষ উল্লেখ্য৷ কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমিউনিটি টেলিসেন্টার গড়ে তোলার ফলে অনেক দেশে এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষের এ ধরনের সমস্যা ব্যাপকভাবে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে৷ পাশাপাশি এও সত্যি যে, এতে করে সামনে উঠে এসেছে কিছু কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ৷ তবে সামান্যসংখ্যক টেলিসেন্টার সমাজের জন্য উপকার বয়ে আনার ব্যাপারটি সুপ্রমাণিত করতে পেরেছে৷ মালয়েশিয়ায় জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি তথা কে-বেজড ইকোনমি গড়ে তোলার উদ্যোগের অভিজ্ঞতা সে দিকটিই নির্দেশ করে৷ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামাজিক ও জাতীয়ভাবে উপকৃত হতে পারে৷ সে বিশ্বাস-তাড়িত হয়েই এ লেখায় মালয়েশিয়ার কে-বেজড ইকোনমির অভিজ্ঞতা তুলে ধরার প্রয়াস পাবো৷

টেলিসেন্টার : মালয়েশিয়ার আইসিটি উদ্যোগের অংশ

অষ্টম মালয়েশিয়া প্ল্যান : ২০০১-২০০৫-এর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন৷ পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বিশ্বায়ন ও উদারীকররে মূখে মালয়েশিয়াকে অধিকতর প্রতিযোগিতা-সক্ষম করে তোলা৷ এ প্ল্যানের প্রতিশ্রুতি ছিল, বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে এবং প্রযুক্তিকে সবখানে ছাড়িয়ে দেয়া হবে৷ প্রযুক্তিকে আরো সম্প্রসারিত করে তোলা হবে৷ কারণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে আইসিটির একটি কৌশলগত ভূমিকা রয়েছে৷ এ পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তসূচক সাংবিধানিক, আইনী ও বিচারিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়৷ এতে করে আইসিটি ও আইসিটিসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়৷ সারাদেশে আইসিটি সেবায় প্রবেশের সুযোগ বাড়াতে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়৷ এর মাধ্যমে ধনী-গরিব ও শহর-গ্রামের এবং বিভিন্ন খাতের মানুষের মধ্যকার ডিজিটাল ডিভাইড সমস্যার সমাধান করা হয়৷

মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল, এরা জাতীয় উন্নয়নে আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিত করবে৷ এর মাধ্যমে এরা দেশকে নিয়ে যাবে একটি আইসিটিভিত্তিক তথা কে-বেজড ইকোনমিতে৷ মালয়েশিয়া সরকার সে প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে৷ আমাদের জাতীয় আইসিটি নীতিতেও সে ধরনের প্রতিশ্রুতি আমরাও ঘোষণা করেছি সত্য৷ তবে সে প্রতিশ্রুতি পালনে আছে আমাদের সীমাহীন ব্যর্থতা৷ সেজন্য মালয়েশিয়া সামনে এগিয়ে গেছে, আর আমরা পেছনে পড়ে আছি৷ আমরা দেখেছি, মালয়েশিয়া সরকার সে দেশে একটি নতুন ধরনের সূচক চালু করেছে৷ এর নাম দেয়া হয়েছে কেডিআই৷ পুরো কথায়-নলেজ-বেজড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স৷ এই সূচক চালুর উশ্যে হচ্ছে, নলেজ-বেজড ইকোনমির অগ্রগতিতে দেশটি কতটুকু এগিয়ে গেল, তা মনিটর বা তদারকি করা৷ ২০০০-২০০৫ সময় পরিধিতে এই কেডিআই নামের সূচক সে দেশে বেড়েছে ৫৯১ পয়েন্ট৷ ২০০০ সালে এ সূচক ছিল ২৪১৩৷ ২০০৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০০৪-এ৷ এই সূচকে দেখা গেছে, সব ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে৷ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে কমপিউটার অবকাঠামোতে৷ উল্লিখিত ৫ বছর সময়ে এ খাতে অগ্রগতি ঘটেছে ১৯৬.৪ শতাংশ৷ এরপর অগ্রগতি ঘটেছে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে৷ এক্ষেত্রে অগ্রগতির হার ২৫.৯ শতাংশ৷ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতে অগ্রগতি ২২.৯ শতাংশ৷ বিভিন্ন দেশের কেডিআই বিবেচনায় ২০০৫ সালে মালয়েশিয়ার অবস্থান ১৭তম স্থানে৷

নবম মালয়েশিয়া প্ল্যানে এটুকু নিশ্চিত করা হয়, মালয়েশিয়াকে বিশ্বে আইসিটি বিনিয়োগের একটি প্রেফারডডেস্টিনেশন বা অগ্রাধিকর স্থানে পরিণত করাসহ আইসিটি সলিউশরে সেরা বাজারে রূপ দেয়ার জন্য সরকারি কার্যক্রম জোরদার করবে৷ নবম প্ল্যানে বলা আছে, এ কাজ অব্যাহতভাবে এগিয়ে নেয়া হবে ন্যাশনাল আইটি কাউন্সিল তথা এনআইটিসির মাধ্যমে৷ আইসিটি উদ্যোগের সমন্বয় ও এগুলোর বাস্তবায়ন তদারকিতে এনআইটিসি হবে আইসিটি নীতি-কৌশল প্রণয়নে কাজ করার মূল ফোরাম৷ সে দেশের সরকার প্রত্যাশা করছে, প্রতিবছর দেশের আইসিটি জনশক্তি ১০.৪ শতাংশ বাড়বে৷ এতে করে যেখানে ২০০৬ সালে সেদেশে আইসিটি জনশক্তির পরিমাণ ছিল ১৮৩২০৪ জন, সেখানে ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩ লাখ৷ মালয়েশিয়া সরকারের নেয়া আইসিটি পদক্ষেপ দেশের টেলিসেন্টার উদ্যোগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে৷

মালয়েশিয়া সরকার ও তার সহযোগীরা সাফল্যের সাথে সম্পাদন করেছে গ্রামীণ সমাজের জন্য দুটি আইসিটি সেবা প্রকল্প৷ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় দেশের বিভিন্ন অংরে গ্রামের মানুষের জন্য৷ এ প্রকল্পসমূহে অন্তর্ভুক্ত আছে আইটি কমিউনিটি সেন্টার৷ সেলাঙ্গর স্টেট গভর্নমেন্টের এসব কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে ৬০টি স্থানে৷ e-Bario নামের একটি প্রকল্প প্রত্যন্ত অঞ্চলের সমাজে প্রযুক্তিসেবা যোগাচ্ছে৷ আরো বেশিকিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন এগিয়ে চলছে৷
স্থানীয় সমাজে পৌঁছা

মালয়েশিয়া সরকার ও জনগণের সংশ্লিষ্টতায় সারাদেশে টেলিসেন্টার গড়ে তোলার কাজ চলছে৷ এ উদ্যোগের লক্ষ্য সারাদেশের গোটা জনগোষ্ঠীকে তথ্যসমৃদ্ধ করে তোলা ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির আওতায় নিয়ে আসা৷ দেশজুড়ে স্থাপন করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের টেলিসেন্টার৷ এমনি একটি হচ্ছে লোকাল ফোন শপ৷ এসব ফোন শপ থেকে সাধারণ মানুষ টেলিফোন ও ফ্যাক্স সুবিধা পাচ্ছে৷ ই-মেইল ও ইন্টারনেট সুবিধাও পাচ্ছে৷ এটি তথ্য সেবা যোগানোর একটি মৌলিক নমুনা, যেখানে উদ্যোক্তা বা ফ্র্যাঞ্চাইজগুলো ক্ষুদ্র পরিসরে এসব তথ্যসেবা যোগায়৷ পাশাপাশি রয়েছে মাল্টিপারপাস কমিউনিটি টেলিসেন্টার৷ এসব সেন্টার যোগাছে আইটিসংশ্লিষ্ট সেবা৷ আছে টেকনোলজি হার, যা চাহিদামতো প্রোগ্রাম ও সার্ভিস সহায়তা দেয়৷

টেলিসেন্টার গড়ে তোলার উদ্যোগের নেতৃত্বে রয়েছে মালয়েশিয়া সরকার৷ কিন্তু বিশ্বে নানা প্রান্তে গড়ে ওঠা টেলিসেন্টারগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, টেলিসেন্টার প্রোগ্রামের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এ প্রোগ্রামে স্থানীয় সমাজের অংশ নেয়া অপরিহার্য৷ সে কথা বিবেচনায় রেখে মালয়েশিয়া এ প্রোগ্রাম তৈরি করেছে সমাজের সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে সামনে রেখে৷ তা করা হয়নি গোটা দেশের জন্য কোনো জেনেরিক প্রোগ্রামের মাধ্যমে৷ এই উদ্যোগ কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুব কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা বেড়ে গেছে৷

মালয়েশিয়ায় স্থাপন করা হয়েছে অনেক কমিউনিকেশন অ্যাক্সেস সেন্টার৷ এসব সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে সেসব এলাকায়, যেখানকার জনগোষ্ঠী দেশের অন্যান্য এলাকার মানুষের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে৷ বিশেষ করে এ সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে এক হাজারের মতো মানুষ বসবাস করছে সীমিত কমিউনিকেশন অ্যাক্সেস সার্ভিস নিয়ে৷ এসব গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলোতে বেশকিছু প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে৷ ধরা যাক, কমিউনিটি কমিউনিকেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-এর কথা৷ এ প্রোগ্রারে আওতায় ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের সহায়তায় কমিউনিকেশন অ্যাক্সেস সেন্টার স্থানের উপযোগী জায়গা চিহ্নিত করা হয়৷ এর নাম দেয়া হয়েছে kedai.com , যার অর্থ দাঁড়ায় কমিউনিকেশন রিটেইল শপ৷ এটা অনেকটা গ্রামের সাধারণ দোকানের মতোই, যেখানে বেশিরভাগ গ্রামবাসী আসে৷ উল্লেখ প্রয়োজন, এই টেলিসেন্টারগুলো এমন একটি স্থান নয়, যেখানে শুধু আইসিটি সুবিধাই দেয়া হয়৷ বরং এখানে গ্রামের মানুষ এসে একসাথে বসে আলাপ-আলোচনাও করতে পারে৷

kedai.com পরিচালনা করে স্থানীয় উদ্যোক্তারা৷ এসব সেন্টার পরিচালনার মাধ্যমে এরা সেবার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে৷ kedai.com গড়ে তুলতে প্রাথমিকভাবে কমপিউটার কিনতে হয়৷ প্রয়োজন হয় একটি ইন্টারনেট কানেকশনের৷ এ ধরনের kedai.com মালয়েশিয়ার সর্বত্র গ্রামীণ এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে৷ প্রমোট করা হয়েছে ওয়ানস্টপ রুরাল আইসিটি সেন্টার৷ গ্রামীণ সমাজের জন্যই এই সেন্টার৷ এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে MEDAN INFODESA৷ সংক্ষেপে এমআইডি৷ এর টার্গেট গ্রুপ বা লক্ষিত জনগোষ্ঠী, ব্যক্তিবিশেষ বা স্থানীয় সমাজের সদস্য, ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়, যুব সম্প্রদায়, পঙ্গু লোক, কৃষক, নারীগোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগ৷ মেডান ইনফোদেশা কর্মসূচির মাধ্যমে যেসব সেবা যোগানো হয়, তার মধ্যে আছে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দূরশিক্ষণ, সামনা-সামনি বয়স্ক ও সমাজ শিক্ষা, কমপিউটার প্রশিক্ষণ (বেসিক কমপিউটার লিটারেসি-কী-বোর্ড, মাউস, উইন্ডোজ ইত্যাদি), প্রিন্টিং-(লেজার প্রিন্টিং ও কপিইং), স্ক্যানিং, ই-মেইল ইত্যাদি৷

গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে বিভাজন দূর করতে আরো বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যার সমাধান করা হয়েছে৷ e-Warga নামের একটি প্রোগ্রাম আছে৷ এটি তৈরি করা হয়েছে শহরের মানুষের প্রতি লক্ষ রেখে৷ এটি চালু করে কুয়ালালামপুর সিটি হল৷ এই প্রজেক্টের মাধ্যমে আইসিটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ পাবলিক হাউসের অধিবাসীদের আইসিটি সেবা প্রবেশ সুবিধা দেয়া হয়৷ ই-লার্নিং চালু করা হয়েছে ইসলামী স্কুলগুলোতেও৷ এছাড়া বধিরদের জন্য আছে বিশেষ আইসিটি প্রোগ্রাম ePek@k , এর কাজও শুরু করা হয়েছে৷ মালয়েশিয়ায় এর আগে বধিরদের জন্য তেমন কমিউনিকেশন ফ্যাসিলিটি ছিল না৷ বেশি দূরত্বে তাদের জন্য যোগাযোগ ছিল কঠিন ব্যাপার৷ এরা সাধারণ টেলিফোন ব্যবহার করতে পারতো না৷ বধিরদের ব্যবহারের উপযোগী টেক্সট ফোন ও ফ্যাক্স মেশিন ছিল না৷ যদিও টেলিভিশন প্রোগ্রাম চোখে দেখার বিষয়৷ কিন্তু এটা বধিরদের জন্য ছিল প্রায় অর্থহীন৷ কারণ, তাতে সাব-টাইটেল প্রদর্শনের ব্যবস্থা ছিল না৷ ইন্টারনেট সমন্বিত কমপিউটার বধিরদের জন্য কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠেছে তথ্য, সংবাদ, সেবা, চাকরি ও সহায়ক সেবার রাজ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে৷ অন্যান্য ভাষা-সঙ্কেত ব্যবহার করে বিশ্বের সবখানে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে এরা ব্যবহার করতে পারছে এই ইন্টারনেট সমন্বিত কমপিউটার৷ এর সম্ভাবনার দিকটি অনুধাবন করতে পেরেছে মালয়েশিয়ানফেডারেশন অব দ্য ডিফ৷ ফলে এরা গড়ে তুলছে ePek@k প্রজেক্ট৷

লোকাল কনটেন্ট তৈরি

স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ ও তাদের জন্য উপকার বয়ে আনতে পারে তেমন কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু তৈরির কাজটা ছিল রীতিমতো একটা চ্যালেঞ্জ৷ কিন্তু মালয়েশিয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় এ সমস্যার সমাধানে৷ সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রমোট করেছে অনেক লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারফেস৷ বেশিরভাগ মালয়েশীয় ওয়েবসাইটই এখন দ্বিভাষিক৷ বেশকিছু পোর্টাল সৃষ্টি করা হয়েছে বিশেষত স্থানীয় লোকজনের উপযোগী করে৷

দেশের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান MIMOS Bhd এবং কৃষি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে মালয়েশিয়ার কৃষি খাত বিকাশের জন্য৷ এজন্য কৃষক, উত্পাদক, খুচরা বিক্রেতা ও রফতানিকারকদের জন্য প্রতিদিন তাদের পণ্যের অনলাইনে বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ডিজিটাল ডিভাইড দূর করে ডিজিটাল ব্রিজ গড়ে তোলা, উত্পাদনশীলতা জোরদার করা এবং কৃষি খাতে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি৷ MIMOS ডেভেলপ করেছে সহনীয় খরচের ই-কমার্স বি-টু-বি সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট (SCM) অ্যাপ্লিকেশন৷ ডেভেলপ করা হয়েছে কৃষি শিল্পের জন্য AgriBazar নামের পোর্টাল৷ কৃষক সমাজের জন্য এগ্রিবাজার হচ্ছে গেটওয়ে ও বিনিময় কেন্দ্র৷ কৃষি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই এর উপকারভোগী৷ এদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে খুচরা বিক্রেতাও৷ পোর্টালটি টেকনোলজি প্রোভাইডার, ইন্ড্রাস্ট্রি প্লেয়ার ও সরকারি সংস্থাসমূহের জন্য কৃষি শিল্পে ই-ইকোনমি বিপ্লব ঘটানোর ক্ষেত্রে একটি প্ল্যাটফরম হিসেবে কাজ করে৷ agribazer.com my ওয়েবসাইট ডেভেলপ করা হয়েছে ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারীদের মধ্যে কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ের উন্নয়নের প্রতি লক্ষ রেখে৷ এটি কৃষিপণ্যের ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক ট্রেডিং হার সুবিধা সৃষ্টি করে৷ MIMOS এবং কৃষি বিভাগ যৌথভাবে এ উদ্যোগ নেয়৷ বেশ কিছুসংখ্যক নলেজ শেয়ারিং পোর্টাল সৃষ্টি করা হয় বিভিন্ন কমিউনিটির জন্য৷ e-Homeseeker নারীদের জন্য একটি পোর্টাল৷ তাদের মতামত প্রকাশের জন্য এই পোর্টাল৷ অপরদিকে e-kauntan, e-kundasung, sim @ sy পোর্টালগুলোর টার্গেট গ্রামীণ সমাজ৷ Akinset, Taninet FAMA অনলাইনের মতো বিশেষায়িত ই-কমার্স পোর্টালগুলো প্রচলিত পেশাজীবী কৃষক ও মত্স্যজীবীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এসব প্রোগ্রাম ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও কৃষিখাতের মধ্যে ই-কমার্স প্রমোট করায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে৷ এগুলো স্থানীয় লোকদের চাহিদা অনুযায়ী ইলেকট্রনিক কনটেন্ট সৃষ্টিতে সহায়তা করে৷ এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সহজে নলেজ শেয়ারিংয়ে অংশ নিতে পারে৷

মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শেখা

শুরুতেই বলেছি মালয়েশিয়ার নলেজভিত্তিক প্রোগ্রাম মালয়েশিয়াকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে৷ আর মালয়েশিয়ার এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশও এক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনতে পারে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে৷ এ লেখায় বর্ণিত টেলিসেন্টার প্রোগ্রামগুলো-০১. গ্রামীণ সমাজের মানুষকে সক্ষম করে তুলতে দক্ষতা অর্জন এবং কমিউনিকেশন ও মাল্টিমিডিয়া সুবিধাদি কাজে লাগিয়ে নিজেদের জ্ঞান ও

অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ করবে৷ৎ

০২. এসব জনগোষ্ঠীকে নলেজ ইকোনমিতে সংযুক্ত করে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে এদের দক্ষ করে তোলে৷ ০৩. তথ্যে প্রবেশের সুযোগ বাড়ায়, সেই সাথে বাড়ায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ৷

এসব সুযোগ সৃষ্টির অর্থ হচ্ছে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়া৷ আর আমাদের লক্ষ্যও তো তাই৷ তবে কেন আমরা আমাদের প্রযুক্তি উদ্যোগে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবো না? এ প্রশ্ন রাখতে চাই আমাদের নীতি-নির্ধারকদের কাছে৷ পাশাপাশি বলতে চাই, মালয়েশিয়া যদি এসব উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের দেশকে এগিয়ে নিতে পারে, তবে আমরাও পারবো৷ তবে এর চ্যালেঞ্জগুলোকে মাথায় নিয়েই আমাদের কাজে নামতে হবে৷ এ চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে-প্রাথমিক পর্যায়ের বাস্তবায়ন খরচ অনেক বেশি, প্রত্যন্ত অঞ্চলের সীমিত টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো, সীমিত ব্যবহার, উঁচু মাত্রার পরিচালনা ব্যয়, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে নিরুত্সাহ ভাব, কার্যকর ব্যবস্থাপনার অভাব, সমাজের জোরালো সমর্থনের অভাব, আইসিটি প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতা, দ্রুত চলা প্রযুক্তির সাথে সাথে চলায় আমাদের ব্যর্থতা৷ এগুলো সম্পর্কে সচেতন থেকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নামলেই আমরাও পারবো তথ্যপ্রযুক্তিকে আমাদের অর্থনীতির সহায়ক শক্তিতে পরিণত করতে৷ একদিন আমরাও হতে পারবো নলেজ ইকোনমির যোগ্য অধিকারী৷ সে তাগিদেই আজকের এ লেখা৷
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৭ - অক্টোবর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস