লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
সুপার কমপিউটার
হাতের তালুতে আসছে সুপার কমপিউটার
সুপার কমপিউটার শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দানবাকৃতির কোনো কমপিউটারের ছবি৷ এখন পর্যন্ত আমরা যেসব সুপার কমপিউটার দেখছি তার আকার সত্যি ঢাউস৷ এসব কমপিউটারে প্রতি সেকেন্ডে ১শ কোটি কিংবা তারও বেশি গাণিতিক কার্যাবলী সম্পাদন করা যায়৷ এসব কমপিউটার সবয়ে শক্তিশালী, অতি দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং খুবই ব্যয়বহুল৷ তাই এর ব্যাপক ব্যবহার কেবল উন্নত বিশ্বেই সীমাবদ্ধ৷ সাধারণত বহুজাতিক কোম্পানি, খনিজ তেল অনুসন্ধান, যুদ্ধ পরিচালনা, মহাকাশ গবেষণা, আবহাওয়া পূর্বাভাস ইত্যাদি কাজে এই কমপিউটার ব্যবহার হয়৷ স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল প্রকৌশলী ঘোষণা করেছেন, তারা এমন এক উপায় খুঁজে পেয়েছেন যা বাস্তবায়ন করা গেলে সুপার কমপিউটার রাখা যাবে হাতের তালুতে৷ পামটপ কমপিউটার যেমন হাতের তালুতে রেখে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করা যায়, ওই সুপার কমপিউটারও হবে তেমনি আকারের৷ প্রকৌশলীরা এমন তারের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেছেন যার আকার মানুষের চুলের চেয়ে ১ হাজার গুণ চিকন বা পাতলা৷ এরপর তারা তৈরি করেছেন একটি টুল, যা ক্ষুদ্র মাইক্রোচিপ তৈরিতে তাদেরকে সহায়তা করবে৷ স্কটিশ প্রকৌশলীদের সাথে এই প্রকেল্প একযোগে কাজ করছেন জার্মানি এবং ইতালির বিশেষজ্ঞরা৷ তাদের এই আবিষ্কার শিগগিরই প্রকাশিত হবে সায়েন্স সাময়িকীতে৷
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, তাদের এই আবিষ্কার চিকিত্সা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, বহনযোগ্য পিসি এবং মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধন করবে৷ এদের ক্ষমতা বেড়ে যাবে বহুগুণে৷ এটা সবারই জানা, একটি মোবাইল ফোন আকারের একটি শক্তিশালী কমপিউটার তৈরি করতে হলে অতি ক্ষুদ্র মাইক্রোচিপ এবং অতি সূক্ষ্ম তারের প্রয়োজন হবে৷ প্রকৌশলীরা তাই এই বিষয়টি নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন৷ গবেষণা কাজে এডিনবরার গবেষকদের সাথে অংশ নিয়েছেন জার্মানির কার্লসরুহে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ইতালির রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷ তারা গভীরভাবে লক্ষ্য করেছেন, কোনো ডিভাইসে ক্ষুদ্র তার ব্যবহার করা হলে তা কিরকম আচরণ করে৷
কমপিউটারের সাহায্য নিয়ে তারা দেখেছেন, এক মিলিমিটারের লক্ষ্ম ভাগের একভাগ একটি অতি সূক্ষ্ম তার বড় আকারের তারের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের আচরণ করে৷
এডিনবরার স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্সের ড. মাইকেল জাইসার বলেছেন, তারা যখন অতি সূক্ষ্ম তার তৈরি করলেন এবং সেটির ব্যবহার ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করলেন তখন তারা অবাক হয়েছেন৷ কারণ যেমনটি ভাবা হয়েছিল তারের আচরণ ছিলো তারচেয়ে ভিন্ন৷ তার ভাষায়, তারের আচরণ ছিলো অদ্ভুত ধরনের৷ তিনি বলেন, তাদের এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ডিভাইসকে আরো শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে৷ এমন দিন আসবে যখন একটি শক্তিশালী সুপার কমপিউটার থাকবে মানুষের হাতের তালুতে৷ তারা এখন এটা নিশ্চিত করতে চাইছেন, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তার সঠিকভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে কিনা৷
গবেষণা এগিয়ে নেয়ার জন্য এডিনবরার বিশেষজ্ঞরা একটি কমপিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন৷ এর মাধ্যমে প্রকৌশলীরা জানতে পারছেন ঠিক কি ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং কিভাবেইবা সেই সমস্যা সমাধান করা যাবে৷ এই আবিষ্কার ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তারের ব্যবহারকে আরো কার্যকর করে তুলবে৷ ফলে একটি সুপার কমপিউটারের আকার দাঁড়াবে ম্যাচ বাক্সের সমান৷
এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বাণিজ্যিক সুপার কমপিউটার অবমুক্ত করেছে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান আইবিএম৷ ব্লু জিন/পি নামের এই কমপিউটার বর্তমানে দ্রুতগতির মেশিন ব্লু জিন/এল-এর চেয়ে ৩ গুণ বেশি শক্তিশালী৷ ব্লু জিন/এল তৈরিও করেছে আইবিএম৷ নতুন ব্লু জিন/পি প্রতিসেকেন্ডে ১ হাজার ট্রিলিয়ন হিসেব করতে পারে৷ এই গতিকে এখন বলা হয় পেটাফ্লপ গতি৷ এতে প্রসেসর রয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৯১২টি৷ একটি পিসির চেয়ে এই সুপার কমপিউটার প্রায় ১ লাখ গুণ বেশি শক্তিশালী৷ মার্কিন সরকার আইবিএমের প্রথম ব্লু জিন/পি মেশিনটি কিনে নিয়েছে৷ চলতি বছরের শেষ দিকে ইলিয়নিসে ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির (ডিওই) আরগনে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে এই সুপার কমপিউটারটি স্থাপন করা হবে৷ দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি যুক্তরাষ্ট্র এবং চতুর্থ ব্লু জিন/পি কেনার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাজ্যের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাসিলিটিজ কাউন্সিল৷ অতি ক্ষমতাশালী এই মেশিন পদার্থবিদ্যা থেকে ন্যানোটেকনোলজি পর্যন্ত সব জটিল গবেষণা কাজে ব্যবহার করা হবে৷
এটি চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন সুপার কমপিউটার ব্লু জিন/এল রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে৷ এর গতি সেকেন্ডে ২৮০ দশমিক ৬ টেরাফ্লপ৷ প্রসেসর রয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭২টি৷ যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার সুরক্ষিত আছে কিনা তা নিশ্চিত রাখার কাজে ব্যবহার হচ্ছে এই কমপিউটার৷ এর গতি সেকেন্ডে ৩৬৭ টেরাফ্লপ পর্যন্ত নেয়া সম্ভব বলে তাত্ত্বিকভাবে বলা হয়৷ এদিকে ব্লু জিন/ পিতে প্রসেসরের সংখ্যা ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৬ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে৷ এটা করলে মেশিনটি সেকেন্ডে ৩ হাজার ট্রিলিয়ন (৩পেটাফ্লপ)হিসেব করতে পারবে৷
আইবিএমের ডিপ কমপিউটিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেভ টুরেক বলেছেন, সুপার কমপিউটিং প্লাটফর্মে ব্লু জিন/পি হচ্ছে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী কমপিউটার৷ বিশ্বে যে ৫শ সুপার কমপিউটার রছে তার প্রায় অর্ধেকই তৈরি করেছে আইবিএম৷ বর্তমানে নিউ মেক্সিকোর লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির জন্য একটি বেসপোক সুপার কমপিউটার তৈরি করছে কোম্পানিটি৷ এর কোডনেম রোডরানার৷ এটি সেকেন্ডে ১ দশমিক ৬ হাজার ট্রিলিয়ন হিসেব করতে পারবে৷ এতে থাকছে ১৬ হাজার স্ট্যান্ডার্ড প্রসেসর এবং ১৬ হাজার সেল প্রসেসর৷
অন্যদিকে সান অবমুক্ত করেছে রেঞ্জার নামের সুপার কমপিউটার৷ এর সর্বোচ্চ গতি ১ দশমিক ৭ পেটাফ্লপ৷ এটি স্থান পাবে অস্টিনে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ এটি চালানো হবে ৫শ টেরাফ্লপ গতিতে৷ এছাড়াও অন্য আারো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও সুপার কমপিউটার তৈরি করেছে৷
এসব সুপার কমপিউটারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে এগুলো কিনে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না৷ তবে প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তি পণ্যের দাম যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে তাতে আশা করা যায় এক সময় এসব সুপার কমপিউটারের দামও কমে আসবে৷ তখন হয়তো বাংলাদেশেও ব্যবহার হবে সুপার কমপিউটার৷ এই সময়টা যত দ্রুত আসে ততই মঙ্গল৷
ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com