• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বিশ একুশের বিজয় দিবসের স্বপ্ন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ভিডিও সিস্টেম
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি বিপ্লব
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বিশ একুশের বিজয় দিবসের স্বপ্ন

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নটাকে আর অসম্ভব স্বপ্ন মনে হয় না। কারণ, আমরা এখন একটি স্বাধীন জাতি। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা আটত্রিশ বছর ধরে সামনেই পা ফেলেছি। অনেক ব্যর্থতা, অনেক পশ্চাৎপদতার মাঝেও আমাদের অনেক সাফল্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় সফলতা এই যে, আমরা সাড়ে সাত কোটি থেকে সাড়ে ষোলো কোটি মানুষ হয়েও এখনো খেয়ে বেঁচে আছি। সেই সব কারণেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নটা এমন একটি স্বপ্ন, যিনি যেভাবেই দেখুন না কেন, যে ভাষাতেই এর প্রকাশ ঘটুক না কেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের এক অপূর্ণ স্বপ্নের নাম। স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পার হবার পর এই জাতি তার অতীতের সব সাফল্য-ব্যর্থতাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে রূপকল্প তৈরি করেছে। এই রূপকল্প তাকে সন্ধান দিয়েছে তার স্বপ্নের দেশের। সেই স্বপ্নটা আমাদের সত্যিকারের সোনার বাংলার-একুশ শতকের ডিজিটাল বাংলাদেশের।

সেই স্বপ্নটা এমন সুন্দর : মাঝে মাঝে দুই হাজার একুশ সালে চলে যাই। তখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়মত্মীতে দেখতে পাই, সমাজে জ্ঞানই শক্তির কেন্দ্র হয়েছে বলে অর্থ-বিত্তের চাইতে জ্ঞানের প্রভাব শুধু বেশি নয়, নিরঙ্কুশভাবে সবখানে বিরাজ করছে। এখন থেকে সেদিন পর্যন্তে বিদ্যমান সমাজে, রাষ্ট্রে, সংস্কৃতিতে, জীবনাচারে বা জীবনধারায় একটি বিশাল পরিবর্তন ঘটবে। প্রচন্ড রূপান্তেরের মাঝে সামনে যাবে দেশ-সমাজ। সমাজে জ্ঞানী ও পন্ডিত ব্যক্তিরা সর্বত্র সম্মানিত হবেন। শারীরিক শক্তিবান ও আর্থিকভাবে ধনবানদের চাইতে মেধার ধারসম্পন্ন জ্ঞানীদের মর্যাদা হবে অনেক বেশি। এই সময়ের মাঝে জীবনের সব ক্ষেত্রেই নতুন একদল জ্ঞানকর্মী তৈরি হবে। এই জ্ঞানকর্মীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র নেতৃত্ব দেবে। পেশীশক্তি ও অর্থবিত্তের আধিপত্য বিলীন হবে। জ্ঞানীদের সংখ্যা বেশি হবে বলে সাধারণভাবে বাংলাদেশের একুশ শতকের ইতিহাস তারাই রচনা করবেন। অর্থনীতি ডিজিটাল ও জ্ঞানভিত্তিক হবে বলে কৃষি ও শিল্পের চাইতে মেধাভিত্তিক সেবা ও শিল্প-কারখানার প্রসার বেশি হবে। কৃষিতে কাজ করবে শতকরা বড়জোর সাত ভাগ লোক। এরা কেউ অশিক্ষিত থাকবে না। কৃষি তাদের পেশা হবে। কারণ, সেই খাতে এরা অনেক বেশি উপযোগ যুক্ত করতে সক্ষম হবে। ষাট ভাগের বেশি লোক কাজ করবে সেবাখাতে। এই সেবাখাতের পরিধি হবে সুবিসত্মৃত। বাকিরা কাজ করবে বর্তমান ধারণার শিল্প-কলকারখানায়। বস্ত্তগত সম্পদের চাইতে মেধাজাত সম্পদ সৃষ্টির প্রতি সবার বেশি আগ্রহ থাকবে। মেধার বিকাশ, সংরক্ষণ ও সৃজনশীলতাই হবে নীতি ও নৈতিকতার কেন্দ্র। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের জ্ঞানভিত্তিক সৃষ্টির বিশাল বাজার তৈরি হবে। প্রচলিত কৃষি-শিল্প-ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ সবকিছুতে আমাদের বিজ্ঞানচর্চা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কল্যাণে তথা মেধার স্পর্শে মূল্য সংযোজন এমনভাবে হবে, বস্ত্তগত মূল্যের চাইতে মেধাজাত মূল্য সংযোজন অনেক বেশি হবে। নারী ও তরুণরা এসব কাজে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকবেন। বয়স্করা প্রধানত অভিভাবকত্ব এবং অবসর জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন। অর্থনীতি হবে চাঙ্গা। দুই ডিজিটের নিচে প্রবৃদ্ধি হবে না। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের অপবাদ ঘুচবে। নিজেদের অর্থ দিয়ে আমরা আমাদের উন্নয়ন করতে থাকব। দাতারা আমাদের জন্য প্রেসক্রিপশন দেবে না। বরং বলা যায় দিতে পারবে না। বরং আমরা দুনিয়াকে দেখিয়ে দেবো জ্ঞানভিত্তিক সমাজের রূপরেখা কেমন হয়।

আমরা স্বপ্ন দেখি, এই সময়ের শেষে পুরো দেশে দারিদ্রসীমার নিচে কোনো মানুষ বসবাস করবে না। দেশে ন্যূনতম সচ্ছল মানুষ সবাই হবে। সমাজে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক- এমন খুব বেশি ধনী কোনো মানুষ বা পরিবার থাকবে না। লুটেরা বিকারগ্রস্ত ধনবাদী শিল্পগোষ্ঠীর বিপরীতে রাষ্ট্রীয় সম্পদে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। বড় বড় শিল্প-কল-কারখানা থাকবে। তবে এসব কারখানার শেয়ারহোল্ডার বা মালিক থাকবে সাধারণ জনগণ। দেশে ব্যাপকভাবে ছোট ও মাঝারি পুঁজির বিকাশ ঘটবে। এসব পুঁজি হবে ব্যক্তি বা পারিবারিক মালিকানার। তবে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার জন্য ধনী আরো ধনী হবার সুযোগ পাবে না। মাঝারি আয়ের মধ্যবিত্তের সংখ্যাই অধিক হবে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তা কোনোটাই কোনো মানুষের সঙ্কট হবে না। সবাই তার ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে পারবে। অন্নের অভাবে পড়বে না কোনো মানুষ। সারাদেশে থাকবে না কোনো বস্ত্রহীন মানুষ। ছিন্নমূল-বাসস্থানহীন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না। রাস্তায় ভিক্ষুক পাওয়া যাবে না। সরকারি খাস জমি, ফুটপাত, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট বা অন্য কোথাও ঝুপড়ি ঘরের বস্তিতে কেউ বাস করবে না। নিজের হোক, ভাড়ায় হোক একটি নিরাপদ আবাস প্রতিটি মানুষের থাকবে। প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সেবা পাওয়া যাবে। বিনা চিকিৎসায় মরবে না কেউ। প্রতিটি মানুষের জন্য ডাক্তার-হাসপাতাল-ওষুধ পাওয়া যাবে। গ্রামের হোক আর শহরের হোক ন্যূনতম চিকিৎসার ব্যবস্থা সবার জন্যই বিরাজ করবে। সরকার সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। বেনিয়া চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সে পেতে পারবে। ডিজিটাল যন্ত্র প্রতিটি মানুষের কাছে সেই সুযোগ পৌঁছে দেবে।

রাজনীতি হবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিনির্ভর। রাজনৈতিক দলগুলো ডিজিটাল উপায়ে তাদের দলের ও রাজনীতির ব্যবস্থাপনা করবে এবং জনমত গঠনের জন্য ডিজিটাল উপায় ব্যবহার করবে। তাদের নিজস্ব তথ্যভান্ডারের পাশাপাশি জনমত জরিপের ব্যবস্থা থাকবে এবং তাদের রাজনীতিতে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। পুরো দেশটির প্রতিইঞ্চি মাটি তার বা বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগে যুক্ত থাকবে। মানুষের জীবনধারায় ইন্টারনেট হবে অপরিহার্য। জীবনের সব কাজের কেন্দ্র থাকবে ইন্টারনেটে। জাতীয় সংসদ হবে ডিজিটাল। সংসদের সদস্যরা ডিজিটাল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবেন এবং তাদের সব কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে। তারা সবাই ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করবেন এবং সংসদের সব কর্মকান্ড ডিজিটাল উপায়ে প্রকাশিত হবে ও দেশবাসীর কাছে সহজলভ্য হবে। কোনো সাংসদ নিজে উপস্থিত না থেকেও সংসদের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। জনগণও ডিজিটাল উপায়ে সংসদের কাজকর্মে অংশ নিতে পারবেন। রাজনীতি নষ্টামিতে ভরা থাকবে না। সংসদ সদস্যরা উপজেলা পরিষদ বা টিআর-এর পেছনে লেগে থাকবেন না। তারা জাতীয় সংসদে বসে আইন প্রণয়নে নিমগ্ন থাকবেন। এরা দেশের জন্য একুশ শতকের আইন প্রণয়ন এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় মানুষের করণীয় বিষয়াদি নিয়ে গবেষণা করবেন ও জাতিকে দিকনির্দেশনা দেবেন। দেশে একটি সচেতন নাগরিক সমাজ দেশবাসীর সব ধরনের বিষয়সহ মানবাধিকারের বিষয়ও মনিটর করবে। প্রশাসনে স্পিড মানির প্রয়োজন থাকবে না। কাজ হবে আপন গতিতে। টিআইবির অফিস তালাবদ্ধ হয়ে যাবে। দেশজুড়ে বিরাজ করা তাদের শাখা অফিসগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সরকার হবে দক্ষ ও জনগণের সেবক। সরকারের সব তথ্য নাগরিকরা যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে জানতে পারবে।

বিচার হোক আর সরকারের কাছে কোনো আবেদন হোক, কমপিউটার বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ডিজিটাল যন্ত্রে ডিজিটাল উপায়ে নাগরিকরা সরকারের কাছে পৌঁছাতে পারবে। কাউকে সশরীরে সরকারি অফিসে আসতে হবে না। সরকারের নাগরিক সেবা হবে এমন যেন সরকারি অফিস নামের কোনো বস্ত্ত অদৃশ্যে বসবাস করে। সরকারের সব তথ্য থাকবে ডিজিটাল পদ্ধতিকে সংরক্ষিত। তারা নিজেরা এবং অন্যের সাথে যোগাযোগ করবে ডিজিটাল উপায়ে। কাগজের ফাইল বা কাগজের চিঠি দুর্লভ বস্ত্ততে পরিণত হবে এবং সেইসব দেখার জন্য মানুষ জাদুঘরে যাবে। সরকারি কর্মচারীরা বাড়িতে, অবকাশ কেন্দ্র বা বিদেশে থেকে অফিস করতে পারবেন এবং তাদের শারীরিক উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হবে না। মানুষ ঢাকা শহরে সরকারের কাছে আসবে না, সরকার যাবে তার গ্রামের বাড়িতে, পর্ণকুটীরে। সে নিজে সিদ্ধান্তে নেবে কোথায় তার উন্নয়ন হবে- সরকার তার সিদ্ধান্তে অনুসারে কাজ করবে। উৎপাদন ব্যবস্থা যাবে বদলে। শ্রমঘন বিপজ্জনক শিল্পকারখানায় মানুষের কাজ হবে শুধু নিয়ন্ত্রণ করা। যন্ত্রপাতি করবে উৎপাদন। মানুষ করবে সেই উৎপাদন ব্যবস্থার মনিটরিং। কৃষি কাজ পর্যন্তে চিপসনির্ভর হবে। কাস্টমস অফিসাররা ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করবেন। আমদানি ও রফতানিকারকরা বন্দরে না গিয়েই আমদানি-রফতানি করবেন- কর বা শুল্ক দেবেন ও মাল পাঠাবেন বা খালাস করবেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ইন্সপেক্টর, কমিশনার বা অন্য কারও চেহারা কোনো নাগরিককে দেখতে হবে না। তারা ডিজিটাল উপায়ে কর রিপোর্ট ও কর দেবেন। কৃষক তার বাড়িতে বসে জানতে পারবে তার জমিতে এখন কি পরিমাণ সার বা সেচ দিতে হবে। কৃষিঋণের জন্য তাকে আবেদন করার জন্য উপজেলায় বা ব্যাঙ্কে যেতে হবে না। পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সে সহায়তা পাবে মোবাইল ফোনে। কৃষিপণ্যের বাজার দর সে জানতে পারবে তার হাতের ডিজিটাল যন্ত্রে। আগাম বা অকাল বন্যার খবর পাবে সে মাসখানেক আগে। অতিউন্নত জাতের বীজের জন্য তার ফসল যাবে বেড়ে। হাঁসমুরগি গবাদিপশু বা কৃষির সাথে সম্পর্কযুক্ত সব বিষয়ে সে তার নিজের ঘরেই তথ্য পাবে। ভূমির সব তথ্য ঘরে বসে পাওয়া যাবে। ভূমির মালিক তার ভূমির নকশা, চিত্র, মালিকানা ও অন্য দলিলাদি নিজের ঘরে বসে দেখতে পাবেন। জমি রেজিস্ট্রি করার সাথে সাথে দলিল পাওয়া যাবে। সেই অফিসের রেজিস্ট্রার বা অন্যরা ঘুষ কাকে বলে চিনবে না। এমনকি কেউ সেই অফিসে না গিয়েই দলিল রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। ভূমি কর তিনি দিতে পারবেন মোবাইলে। বাণিজ্যের নাম হবে ডিজিটাল কমার্স। শোরুম-শপিং মল বা ভিড়াক্রান্তে জায়গায় কেনাকাটার জন্য কেউ যাবেন না। উইন্ডো শপিং বা সামাজিকতার জন্য এসব স্থান ব্যবহার হলেও বেশিরভাগ মানুষ ইন্টারনেটেই তাদের কেনাকাটা সেরে নেবেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, দোকান বা সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকবে এবং তারা ইন্টারনেটে লেনদেন করবে। ততদিনে দোকানপাট আর মার্কেটনির্ভর ব্যবসায়-বাণিজ্য উধাও হয়ে যাবে। মানুষ তার ঘরে বসে পছন্দমতো পণ্য কিনবে। কাগজের টাকা জাদুঘরে থাকবে। মাছ-মুরগির ব্যবসায়ী, চানাচুরওয়ালা ও অন্য ফেরিওয়ালারা ক্রেডিট কার্ড নেবে। পুলিশ এসএমএস বা ই-মেইলে মামলা নেবে। আদালতে চার্জশীট দেবার জন্য তারা ই-মেইল বা ডিজিটাল উপায় ব্যবহার করবে। তারা ঘুষ কাকে বলে জানবে না। দেশের যেকেউ চিহ্নিত অপরাধীকে ইন্টারনেটে দেখতে পাবে। বিচারক প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সহায়তা নিয়ে বিচারকার্য সম্পাদন করতে পারবেন। আইন-বিচার কার্যক্রম, আইনের ব্যাখ্যা, আদালত, উকিল এবং বাদী-বিবাদী সবার কাছেই ঘরে বসে পাবার মতো তথ্য সহজলভ্য থাকবে।

সরকার গ্যাস, পানি-বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশনসহ সব সাধারণ সেবাই মানুষের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে দেয়া হবে। দেশের সর্বত্র পৌর সেবা ঘরে বসেই পাওয়া যাবে। মানুষ ঘরে বসেই তাদের সব বিল পরিশোধ করবে। প্রতিটি মানুষের জন্য মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে এবং সরকার সেই শিক্ষা বিনামূল্যে দেবে। শিক্ষার ন্যূনতম এই স্তরটিতে কোনো বৈষম্য থাকবে না। স্কুল হোক, মাদ্রাসা হোক সবার জন্যই এক ধারার পাঠ্য বিষয় থাকবে। শহর-গ্রাম, ছোট-বড়, ধনী-গরিব সবার জন্য ন্যূনতম শিক্ষার একটিই ধারা প্রবহমান থাকবে। দেশের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর নিজের কমপিউটার বা অন্য কোনো ডিজিটাল যন্ত্র থাকবে। ক্লাসরুমগুলো কমপিউটার বা ডিজিটাল যন্ত্র দিয়ে ভরা থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ডিজিটাল যন্ত্রে সজ্জিত থাকবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের সব স্থানে থাকবে ইন্টারনেট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা হবে ইন্টারনেটে।

পাঠাগারগুলো হয়ে যাবে ডিজিটাল। সব পাঠ্যপুস্তক ইন্টারনেটে বা ডিজিটাল ফরমেটে পাওয়া যাবে। হতে পারে এরই মাঝে সব বই, মূল্যায়ন, শিক্ষক-শিক্ষিকা নির্দেশিকা ইত্যাদি ইন্টারঅ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যারে পরিণত হবে। শিক্ষকরা নিজেরা তৈরি করবেন সফটওয়্যার। ছাত্রছাত্রীরাও তাদের পাঠ নিজেরা ডিজিটাল উপায়ে পেশ করবে। বাড়িতে বসে ক্লাস করা যাবে। এমনকি বিদেশে বসে ক্লাস করা যাবে। দেশে বসে বিদেশের ক্লাসেও যোগ দেয়া যাবে। পরীক্ষা দেয়া যাবে ঘরে বসে। ফল পাওয়া যাবে পরীক্ষা দেবার পরপরই। সার্টিফিকেট কোনো জরুরি বিষয় হবে না। যেকেউ ইন্টারনেটে গিয়ে জেনে নিতে পারবে কার কী ফল। নিরাপত্তার অভাব রবে না কারো। তার নিজের জীবন নিয়ে কোনো ভয় থাকবে না। সে ভয়লেশহীনভাবে দেশের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো সময় চলতে পারবে। দেশের যেকোনো স্থানের যেকোনো পথে রাত বারোটায় মানুষ একা হাঁটবে বা সাইকেল চালাবে। তার নিরাপত্তার কোনো অভাব হবে না।

সব মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো থাকবে নিশ্চিত। দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হবে না। টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি ইতিহাসের বিষয় হবে। দেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকবে। সেটি শুধু কাগজে থাকবে না, বিরাজ করবে আইনের শাসন। সংবিধান অনুযায়ী নিয়ম কাঠামোর মাঝে সংবাদপত্রের-মিডিয়ার স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে। শহরের পাতাল-আকাশ রেল তাদের চলাচলের উপায় হবে। এক শহর থেকে অন্য শহরে যাবার জন্য নাগরিকরা ট্রেনে চড়ে বা রেলে উঠে দ্রুত চলাচল করবে। নদী-খাল দিয়ে আরামদায়ক দ্রুতগতির নৌযান চলবে। সড়কপথগুলো প্রশস্ত, নিরাপদ ও আরামদায়ক গণবাহনে ভরা থাকবে। পদ্মা সেতু ততদিনে শেষ হয়ে যাবে-দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজও ততদিনে শেষ হয়ে যাবে। শীতলক্ষ্যা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া, ধনু, সুরমা, কংস, যমুনায় আরো অনেক সেতু হবে। রেললাইন যাবে বরিশাল-টেকনাফ পর্যন্তে। ঘরে বসে টিকেট কাটা-যানবাহনের চলাচলের খবর জানা এসব অনেকে পুরনো ব্যাপার হয়ে যাবে। আমাদের স্বপ্নের মাঝে থাকতে পারে, দেশের নদীগুলো মিষ্টি পানি আর সুস্বাদু মাছে পরিপূর্ণ থাকবে। পত্রিকাগুলোর সকালের সংস্করণ প্রকাশিত হলেও সারা দিনই এগুলো অনলাইনে আপডেট থাকবে। কাগজ-শব্দ-ভিডিও এমন আলাদা কোনো মিডিয়া থাকবে না-সবকিছু ইন্টারনেটনির্ভর হবে। মানুষ মোবাইল ফোনে স্যাটেলাইট টিভি দেখবে। ইন্টারনেটেও সব চ্যানেল দেখা যাবে। মানুষের সাংস্কৃতিক জীবন এমন হবে যে বিদ্যমান কম্পোনেন্ট দিয়ে সে তার নিজের নাটক, কবিতা, উপন্যাস, চলচ্চিত্র ইত্যাদি বানিয়ে তাতে মিউজিক দিতে পারবে।

চিকিৎসার জন্য মানুষকে বিদেশ তো দূরের কথা শহরেও আসতে হবে না। রোগী দেখা, রোগ শনাক্ত করা, ব্যবস্থাপত্র দেয়া এমনকি অপারেশনসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা ডাক্তাররা যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো স্থানে দিতে পারবেন। স্বপ্ন দেখতে চাই, দেশের দুই কোটি শিক্ষিত বেকার নিজেদেরকে একুশ শতকের উপযুক্ত করবে এবং তাদের বেকারত্ব ঘুচবে। নতুন যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বের হবে, তারা তৈরি হবে জ্ঞানকর্মী হিসেবে। চাকরি চাওয়া বা পাওয়া এবং চাকরি করার জন্য শারীরিক উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হবে না। বিদ্যমান পেশাগুলোর অনেক বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নতুন নতুন পেশার উদ্ভব হবে। সাধারণভাবে কায়িক শ্রমের পেশার জন্য কম মজুরি পাওয়া যাবে এবং মেধাশ্রমের মূল্য অধিক হবে। আদম রফতানি নামের ব্যবসায় এবং আদম বেপারী নামের পেশাটি দিনে দিনে বিলুপ্ত হবে। মানুষ নিজের বাড়িতে বসেই বিদেশের কাজ করবে এবং বৈদেশিক মুদ্রায় বেতন পাবে। কখনো কখনো এমনটি মনে হতে পারে, এটি হয়ত উচ্চাভিলাষী, অলীক বা বাস্তবায়ন অযোগ্য একটি কল্পনার ফানুস। ভাবলেই সব হবে, স্বপ্ন দেখলেই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যাবে- এমনটি নাও হতে পারে। কিন্তু চেষ্টা করলে সেটি হতেও পারে। আসুন না সবাই মিলে স্বপ্নটা দেখি। শুনেছি সবাই মিলে কিছু চাইলে সেটি পাওয়া যায়।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস