• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আইজেএফ সম্মেলনে বাংলাদেশ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: মিজানুর রহমান
মোট লেখা:১১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডোমেইন নেম
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আইজেএফ সম্মেলনে বাংলাদেশ



গত ১৫ থেকে ১৮ নভেম্বর ২০০৯ মিসরের পর্যটন শহর শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত হয় ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম তথা আইজিএফ-এর চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলন। জাতিসংঘের উদ্যোগে মিসরের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত চারদিনব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির এ সম্মেলনে পৃথিবীর ১১২টি দেশের ১৮০০ প্রতিনিধি অংশ নেন। এদের মধ্যে ছিলেন ৬০০ জন সরকারি, ৫০০ জন সিভিল সোসাইটি, ২০০ জন প্রাইভেট সেক্টর, ১২০ জন আন্তের্জাতিক সংস্থার এবং ১২০ জন সাংবাদিক প্রতিনিধি। এবারের আইজিএফ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘Internet Governance- Creating Opportunities for All’। বাংলাদেশ এ সম্মেলনে অংশ নেয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু’র নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সম্মেলনের চারদিনেই প্রতিটি মূল আলোচনা ও ওয়ার্কশপে অংশ নেয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী; ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির একান্তে সচিব মো: মিজানুর রহমান; বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক অ্যান্ড রেডিও কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান এবং মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর সহকারী সম্পাদক এম. এ. হক অনু। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আইটি বিশেষজ্ঞ আইজিএফ সম্মেলনে যোগ দেন।

১৫ নভেম্বর মিসরের শার্ম আল শেখের মেরিটাইম আন্তের্জাতিক কংগ্রেস সেন্টারে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মিসরের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ নাজিফ। উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, আইজিএফ বিগত চার বছরে তার সাফল্যের মাধ্যমে ইন্টারনেট প্রযুক্তিজ্ঞান বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এর মাধ্যমে তিনি তরুণ সমাজকে জ্ঞান অর্জনের আহবান জানান। মিসরের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. তারেক কামালের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল শাজুক্যাং। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আন্তের্জাতিক টেলিকম ইউনিয়ন তথা আইটিইউ’র মহাসচিব হামাদন ট্যুরে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভ কনসোর্টিয়াম বা ডবি­উথ্রিসি’র প্রধান কর্ণধার টিম বানসি লি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মিসরের আইসিটি মন্ত্রী জানান, ইন্টারনেট ডোমেইনে মিসরের আরবী বর্ণমালা অন্তের্ভুক্ত হয়েছে।


আইজিএফ সম্মেলনে হাসানুল হক ‍ইনু’র নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাথে ‍আইকানের প্রধান নির্বাহী রড বেকস্ট্রম

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা হাসানুল হক ইনু মিসরের আইসিটি মন্ত্রী, আইটিইউ’র মহাসচিব, আইজিএফ সচিবালয়ের নির্বাহী সমন্বয়ক মারকুস কুমারসহ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, জর্ডান, সৌদি আরব, ফিলিস্তিন থেকে আসা প্রতিনিধিদের সাথে সৌজন্য মতবিনিময় করেন।

মিসরের আন্তের্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক নরমাইন আল সাদানির সঞ্চালনায় ১৫ নভেম্বর ২০০৯ সকালে ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রামে বিভিন্ন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন। আইজিএফ সচিবালয়ের নির্বাহী সমন্বয়ক মারকুস কুমার জানান, আইজিএফের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে নেয়ার ক্ষমতা না থাকলেও আন্তের্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করার ক্ষমতা রাখে। সংশি­ষ্ট সবার মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা, পরামর্শ, ভাব বিনিময়ের জন্য মূলত আইজিএফ গঠিত হয়। তিউনিসে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি’ তথা ডবি­উএসআইএস-এর ‘তিউনিস এজেন্ডা’য় স্টেকহোল্ডারদের নিজেদের পারস্পরিক আলোচনা, মতামতের মাধ্যমে ৫ বছরের জন্য একটি ফোরাম গঠনের সিদ্ধান্তে নেয়া হয় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে। আইজিএফের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে গ্রিসের অ্যাথেন্সে। দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে ব্রাজিলের রিওডি জেনেরিওতে এবং তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে ভারতের হায়দারাবাদে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে ১৫ নভেম্বর ২০০৯ মধ্যাহ্নে সম্মেলনের মূল কেন্দ্রে আঞ্চলিক অভিজ্ঞতা বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় মূলত আইজিএফ গঠিত হওয়ার পর থেকে আজো এর মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ১৩ নভেম্বর ২০০৯ ম্যানেজিং ক্রিটিক্যাল ইন্টারনেট রিসোর্চ, সিকিউরিটি, ওপেননেস অ্যান্ড প্রাইভেসি। তৃতীয় দিন ১৭ নভেম্বর ২০০৯ ডাইভারসিটি, অ্যাক্সেস, আইজি ইন দ্য ফাইট অব ডবি­উএসআইএস প্রিন্সিপলস বিষয়ে ওয়ার্কশপ ও আলোচনা হয়। চতুর্থ দিন ১৮ নভেম্বর ২০০৯ মিসরের ফার্স্ট লেডি সুজানা মোবারকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় অনারারি সেশনে ‘প্রিপেয়ারিং দ্য ইয়াং জেনারেশন ইন দ্য ডিজিটাল এইজ, অ্যা শেয়ারড রেসপনসিবিলিটি। এছাড়া টেকিং স্টক, পার্ট ১ ও পার্ট ২-তে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। চারদিনব্যাপী আইজিএফ সম্মেলনে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় মূলত জলবায়ু পরিবর্তনে ইন্টারনেটের প্রয়োগ, ডোমেইন নেম পদ্ধতি, ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস, কারিগরি আদর্শ, সাংস্কৃতিক বিভেদ, সাইবার-ক্রাইমের বিরুদ্ধে প্রচারণা, সোশ্যাল নেটওয়ার্কের প্রভাব প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনের তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর ২০০৯ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ‘ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস’ বা আইকান-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রড বেকস্ট্রমের সাথে সম্মেলন ভিলেজে ৪০ মিনিটব্যাপী এক আন্তেরিক বৈঠক করে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দলনেতা হাসানুল হক ইনু আইকানের নন-লাতিন বর্ণমালার বাইরের বর্ণমালার ডোমেইন অন্তের্ভুক্তির প্রক্রিয়ায় বাংলা ডোমেইন অন্তের্ভুক্তির জন্য আইকানের সহায়তা চান। আইকান প্রধান এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়ে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ আন্তের্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেই তা বিশ্বব্যাপী ঘোষণা করা যেতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, আইকানে ডোমেইন অন্তের্ভুক্তির প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক ও কারিগরি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় পুরো অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৬ থেকে ৯ মাস সময়ের প্রয়োজন হয়।

সম্মেলনের শেষ দিন অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর ২০০৯ মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষে সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী তার বক্তৃতায় সাইবার-ক্রাইম থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেবার জন্য আইজিএফের প্রতি আহবান জানান। তিনি আইজিএফের চলমান ধারা অব্যাহত রেখে এতে পার্লামেন্টারি প্যানেল অন্তের্ভুক্তিসহ দক্ষিণ এশিয়ায় আইজিএফের একটি প্লাটফর্ম গঠনের বিষয়ে প্রস্তাব রাখেন। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল শাজুক্যুাং-এর সঞ্চালনে মুক্ত আলোচনা পর্বের ৬ষ্ঠ বক্তা ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটালাইজড করাসহ বর্তমান সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১-এর বিষয়েও অবহিত করেন।

সমাপ্তি অধিবেশনে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল শাজুক্যাং শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত আইজিএফ সম্মেলনে বলেন, শিশু ও তরুণ সমাজ যে কোনো নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবক, তাই তাদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপের বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং আইজিএফ চলমান রাখার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর তার সুপারিশ পাঠানোর কথা জানান। সমাপ্তি অধিবেশনে ঘোষণা করা হয় আইজিএফের ৫ম সম্মেলন লিথুয়ানিয়ার ভিলুনিয়াসে ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ মিসরে অনুষ্ঠিত আইজিএফ সম্মেলনে আইকান প্রধানের সাথে টপ লেভেল ডোমেইনে বাংলা বর্ণমালা অন্তের্ভুক্তির বিষয়ে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সরকারি পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সংশি­ষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে সবার প্রত্যাশা।

মিসরের শার্ম আল শেখ থেকে ফিরে

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : rehman.mohammad@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস