• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আবুধাবির মাসদার প্ল্যান ও ডিজিটাল বাংলাদেশ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশদেশ, প্রযুক্তি, 
তথ্যসূত্র:
দেশ ও প্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আবুধাবির মাসদার প্ল্যান ও ডিজিটাল বাংলাদেশ

আবুধাবি Masdar Plan নামে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা চালু করেছে। আবুধাবির জ্বালানি কোম্পানি মাসদার-এর নামে এর নাম। এর লক্ষ্য মরুভূমিতে একটি ‘জিরো-ইমিশন ক্লিন-টেক সেন্টার’ গড়ে তোলা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এটা কি কার্যকর উপকার বয়ে আনবে? সে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করে আজকের এ লেখা। পাশাপাশি এ পরিকল্পনা থেকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটা ধারণাও যে পেতে পারি, সে বিষয়ে ভাববার একটা সুযোগ করে দেয়া।

বাস্তবে দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানুষই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা পরিবেশের মানুষ। কারণ, বিশ্বের মধ্যে সেদেশেই মাথাপিছু গ্রিন-হাউস গ্যাসের উদ্গিরণ সবচেয়ে বেশি ঘটে। দেশটি তেলসমৃদ্ধ হওয়ায় সে দেশে প্রচুর গাড়ি চলে। গাড়িগুলো পুড়ে প্রচুর পরিমাণে তেল। বাড়িগুলোতেও ব্যবহার হয় প্রচুর তেল জ্বালানি। এর বাইরে দেশটির আবহাওয়া গরম অতিমাত্রায়। সে কারণে সেখানকার প্রায় সবগুলো ভবনই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আর প্রায় সব পানিই আসে ব্যাপক জ্বালানিনির্ভর ডিসেলাইনেশন প্ল্যান্ট বা লবণাক্ততা দূরীকরণ কারখানা থেকে। এর ফলে বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে প্রচুর পরিমাণ কার্বন গ্যাস। ঘটে বায়ুদূষণ। এখানেই শেষ নয়। আবুধাবি হলো সে দেশের সাতটি রাজকীয় নগর-রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় নগর-রাজ্য। ফসিল জ্বালানির আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে এর অব্যাহত কায়েমী স্বার্থ রয়েছে বিশ্বের অর্থনীতিতে। বিশ্বের সূপ্রমাণিত ৮ শতাংশ তেলের রিজার্ভ বা সঞ্চিতির মাধ্যমে এ দেশটি এক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানটি দখল করে আছে। বর্তমান হারে তেল উত্তোলন চললে তেলের এ রিজার্ভ শেষ হতে ৯২ বছর লাগবে। অতএব এ দেশে গ্রিন-হাউস গ্যাস কিংবা পরিবেশ দূষণকারী গ্যাসের উদ্গিরণ সহজে শেষ হওয়ার নয়। এমনি প্রেক্ষাপটে আবুধাবি শুরু করেছে মাসদার পরিকল্পনা। যাতে বলা হয়েছে, আবুধাবি হবে a crucible of greenery’ বা ‘একটি সবুজের পাত্রবিশেষ’। সেখানে থাকবে না বায়ুদূষণের কোনো অবশেষ।



২০০৬ সালে আবুধাবির ‘ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ চালু করে মাসদার পদক্ষেপ। বলা হয়, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান করা হবে মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো। জ্বালানি নিরাপত্তা, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও সত্যিকারের টেকসই মানব উন্নয়ন সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে এ মাসদার পরিকল্পনার আওতায়।

এ পদক্ষেপে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়টি। এ ইনস্টিটিউটে উদ্ভাবন করা হবে নতুন নতুন অত্যাধুনিক সব পরিবেশপ্রযুক্তি বা এনভায়রনমেন্টাল টেকনোলজি। এর থাকবে একটি বিনিয়োগ শাখা, যার কাজ হবে এ পরিবেশপ্রযুক্তির বাণিজ্যিকায়ন ও বিকাশ ঘটানো। একটি ইকো-সিটিতে সঙ্কুলান করা হবে এ দুটি বিভাগকে। এসব ধারণার টেস্ট-বেড হিসেবে কাজ করবে এই ইকো-সিটি। আশা করা হচ্ছে, এসব পদক্ষেপ আবুধাবিকে পরিণত করবে একটি ক্লিন-টেকনোলজির সিলিকন ভ্যালিতে, যেখানে এসে ভিড় করবেন বিশুদ্ধ পরিবেশমনা শিক্ষাবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা ও অর্থ যোগানদাতারা।

বড় মাপের ভাবনা

প্রকল্পটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বৈ কিছুই নয়। মাসদারের ব্যবস্থাপকরা বলছেন, তারা গড়ে তুলবেন ‘ম্যাচাচুচেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ তথা এমআইটি’র মতো একটি অ্যাকাডেমিক ইনস্টিটিউট, প্রযুক্তির জন্য অর্থাৎ সৌরশক্তি ও লবণাক্ততা দূর করার জন্য একটি বিশ্ব উৎপাদন কেন্দ্র (global manufacturing hub for technology) এবং ৪০ হাজার লোকের বসবাসের উপযোগী একটি নগরী। এ নগরীতে কোনো গ্রিনহাউস গ্যাসের উদ্গিরণ ঘটবে না। থাকবে না কোনো বর্জ্য। সবকিছুই এখানে হবে লাভজনক। আবুধাবি সরকার এর জন্য প্রাথমিক মূলধন দিচ্ছে ১৫০০ কোটি ডলার। কিন্তু অন্যান্য কোম্পানির সহযোগে এর বিনিয়োগ শাখা ও মাসদার নগর চলবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে।

অতীতে আবুধাবির আড়ম্বরপূর্ণ কিছু পরিকল্প বা স্কিম খুব একটা সুখকর ছিল না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যটি হচ্ছে, এক দশক আগে কোনো ধরনের সহায়সম্বল ছাড়া শুরু করা ‘গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল হাব’ তৈরির পরিকল্পনা। অতি সম্প্রতি ডেভেলপারদের পরামর্শ এসেছে অগোছালো অন্য প্রকল্পগুলোও গুটিয়ে ফেলতে, কিন্তু এগিয়ে যেতে হবে মাসদার পরিকল্পনা নিয়ে। আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মুহাম্মদ আল-নাহিয়ান শুরু থেকে এ ধারণা লুফে নিয়েছেন। মাসদার শীর্ষ কর্মকর্তা সুলতান আল-জাবের জানিয়েছেন, সুলতান আল-নাহিয়ান ব্যক্তিগত আগ্রহে এ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি তদারকি করছেন।

মাসদার ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) আগামী বছর এর প্রথম ব্যাচে ছাত্র ভর্তি করবে। মাসদার সিটির প্রথম পর্বের নির্মাণ কাজ এখন চলছে এবং মাসদার গড়ে তুলেছে একটি বড় আকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানির পোর্টপোলিও, এতে বিনিয়োগ রয়েছে ব্রিটেনের একটি উইন্ড ফার্ম ও স্পেনের তিনটি সোলার-থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের। ইতোমধ্যেই অর্ডার দেয়া হয়েছে দুইটি সোলার-প্যানেল প্ল্যান্টের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির। এর একটির ইতোমধ্যেই নির্মাণ চলছে জার্মানিতে। অপরটি নির্মিত হবে আবুধাবিতেই।

বিদেশীরা এ প্রকল্পে অংশ নিতে প্রবল আগ্রহী বলেই মনে হচ্ছে। এর ফ্যাকাল্টির নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রশ্নে এমআইটি সহায়তা দিচ্ছে এমআইএসটিকে। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ‘ক্রেডিট সুইস’ ‘ক্লিন-টেক ফান্ড’-এ বিনিয়োগ করেছে ১০ কোটি ডলার। একই পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে মাসদার নিজে। Foster+Partners নামের একটি ব্রিটিশ স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান মাসদার সিটির একটি মাস্টার প্ল্যান নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বিখ্যাত তেল কোম্পানি বিপি এবং বিখ্যাত খনি কোম্পানি রাইও টিনটো সহযোগিতা দেবে একটি ‘কার্বন-ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ স্কিম’-এ। মাসদার এসব সহযোগীর সাথে কাজ করছে তহবিলের অভাবের কারণে নয়- জানালেন সুলতান আল-জাবের। বরং বিদেশী বিশেষজ্ঞ সার্ভিস পাওয়ার জন্য এই একযোগে কাজ করা। তবে মাসদার স্বাধীনভাবে সব ধারণা বাছাই করে। সেখানে বিদ্যমান একটি অনাহূত পরিবেশেও মাসদার সিটি কাজে লাগাবে সব ধরনের উদ্ভাবনামূলক ও অবাক করা প্রযুক্তি। স্বাভাবিকভাবে সব ভবনই হবে জ্বালানি ব্যবহারে কার্যকর, অর্থাৎ এনার্জি এফিসিয়েন্ট। এখানে পানি রিসাইকল করা হবে, যাতে পানির লবণাক্ততা কমানোর প্রয়োজন কমে যায়। থাকছে dew-catcher। বৃষ্টির পানির সংরক্ষণ করা হবে। পাইপের ছিদ্র চিহ্নিত করার জন্য থাকবে ইলেক্ট্রনিক সেন্সর। থাকবে সবুজ খোলামেলা চত্বর। সেখানে লাগানো হবে মরুকরণবিরোধী গাছ-গাছালি। শুকনো চত্বরে, ফুলগাছ আবুধাবির একটি সাধারণ চিত্র। মাসদার সিটিতে তেমনটি হবে না। সেখানে কোনো গাড়ির অনুমোদন দেয়া হবে না। এর পরিবর্তে মানুষকে হেঁটে চলতে হবে। কিংবা তাদের থাকবে ‘ব্যক্তিগত র্যা পিড ট্রানজিট’। ছোট্ট বিমান কিংবা মেট্রোকার থাকবে। পণ্য চলাচলও হবে একইভাবে। নগরীর চারপাশে থাকবে দেয়াল, যাতে মরুভূমির উষ্ণ হাওয়া এতে ঢুকতে না পারে। গাড়িবিহীন এ নগরীতে সরু ছায়াযুক্ত সড়ক থাকবে। সেখানে বাইরে থেকে প্রবাহিত হবে মৃদু বায়ু। ছাদ ও শামিয়ানার নিচে রাস্তা এবং বিস্তৃত খোলা জায়গায় থাকবে সৌর প্যানেল। নগরীতে ইতোমধ্যেই পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে ৩৩টি উৎপাদক কোম্পানির ৪১ ধরনের সৌর প্যানেল, যাতে করে দেখা যায় কোন ধরনের প্যানেল বেশি কার্যকর রৌদ্রময় ও ধূলিময় মরুভূমি পরিবেশে। সেখানে রয়েছে ওড উইন্ড টাবরাইন, সোলার ওয়াটার-হিটার ও ছোট ছোট ওয়েস্ট-টু-এনার্জি সুবিধা।

পরিকল্পনায় সুযোগ রাখা হয়েছে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের। একটা জায়গা রাখা হয়েছে একটি শৈবালের পুকুর তৈরি করার জন্য, যা থেকে একদিন তৈরি করা সম্ভব হবে জৈব-জ্বালানি। আপাতত তা ব্যবহার করা হবে গবেষণার কাজে। গোটা নগরটি নির্মিত হচ্ছে একটি উঁচু প্ল্যাটফরমের ওপর, যাতে করে পাইপ ও তার সহজেই স্থাপন করা যায়। এতে করে ভবিষ্যতের নতুন নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনও সহজতর হবে। অবশ্য এ নগরীর বিদ্যুতের এক-পঞ্চমাংশ উৎস এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ২০১৬ সালে এ নগরীর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যুতের আরো উন্নতর বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়া যাবে।

পদাঙ্ক অনুসরণ করে

সবকিছু মিলে আশা করা হচ্ছে- এ নগরী এর চাহিদার তুলনায় বেশি জ্বালানি উৎপাদন করতে পারবে। নগরীতে যে বর্জ্য তৈরি হবে, তার ২ শতাংশ ব্যবহার হবে ল্যান্ডফিলের কাজে। সাইট ম্যানেজার খালেদ আওয়াদ বলেন, নগরীতে ভেজিটেশনে কার্বনকে আলাদা সরিয়ে রাখা হয়েছে। সেই সাথে উদ্বৃত্ত গ্রিন এনার্জি প্রচুর পাওয়া যাবে। এর ফলে নির্মাণকাজে কার্বন উদ্গিরণ কমিয়ে আনা হবে। কিন্তু নগরীকে শূন্য-কার্বন পর্যায়ে পৌঁছার দাবি অনেকটা অর্থহীন। কারণ, নগরীতে এমন পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে না, যা সারা রাতের প্রয়োজনটা মেটানো সম্ভব। কারণ, নগরীটি কার্যত হবে সৌর-প্যানেলনির্ভর। এর পরিবর্তে এ নগরী আমদানি করবে আবুধাবির গ্রিড থেকে গ্যাস-ফায়ার্ড বিদ্যুৎ। অন্তত যতদিন জ্বালানি-মজুদ প্রযুক্তির উন্নয়ন না ঘটে, ততদিন এ ব্যবস্থা চলবে। দিনের বেলায় এ নগরীর উদ্বৃত্ত সৌরবিদ্যুৎ আবুধাবির গ্রিডে পাঠানো হবে। তাছাড়া জ্বালানির ব্যবহার কমানোর জন্য এ নগরীতে জ্বালানি-ঘন কোনো শিল্প স্থাপন করতে দেয়া হবে না, যদিও স্থানীয় উৎপাদন মাসদার পদক্ষেপের একটা উল্লেখযোগ্য দিক।

তার পরও আবুধাবির কার্বন উদ্গিরণ কমানোর ক্ষেত্রে মাসদার পদক্ষেপের ভূমিকা হবে খুব ছোট মাপের। সস্তা তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ অব্যাহতভাবে ব্যবহার হবে দেশের গ্যাস উদ্গিরণকারী শিল্পকারখানাগুলোতে। মাসদার নগরীর পরপরই গড়ে তোলা হচ্ছে ‘ফর্মুলা ওয়ান বেস-ট্র্যাক’ ও ‘ফেরারি থিমড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক’। আসলে মাসদারের ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি মুবাদালা ফেরারির ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক এবং এর ফর্মুলা ওয়ান টিমের স্পন্সর। এর মাত্র কয়েক মাইল দূরে এটি নির্মাণ করছে বিশ্বের বৃহত্তম অ্যালুমিনিয়াম স্মেল্টার, যার রয়েছে নিজস্ব গ্যাস-ফায়ার্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কাছেই একটি মল পরিকল্পনা করছে একটি ইনডোর স্কি স্লোপ তৈরির, ঠিক দুবাইয়ের কাছের আরেকটির মতো করে।

সত্যি বলতে, মাসদারের স্রষ্টা এটিকে একটি পরিবেশ প্রকল্প হিসেবে না দেখে বরং দেখতে চান একটি উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে। তারা মনে করেন না আবুধাবি তেল আর গ্যাস ব্যবহার ছেড়ে নতুন কিছু অভ্যাস শুরু করবে। কিন্তু আবুধাবির শাসক শ্রেণী চায় অর্থনীতির বৈচিত্রায়ন। কারণ, একদিন দেশটির তেল ফুরিয়ে যাবে। সে দিনের জন্য প্রস্ত্ততি হিসেবেই এরা অর্থনীতির বৈচিত্রায়ন চায়। যেহেতু স্থানীয় শ্রমিক ও বিশেষজ্ঞদের জ্বালানির ওপর এক ধরনের বিশেষজ্ঞ অভিজ্ঞতা অর্জন হয়ে গেছে, তাই তারা তার ওপর নির্ভর করে চলতে আগ্রহী।

আবুধাবিতে বছরজুড়েই রোদ। আছে পানির অভাব। সেজন্য এ দেশটির জন্য উপযোগী হচ্ছে সৌরপ্রযুক্তির উদ্ভাবন, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানির লবণাক্তরা দূর করা। সুখের কথা, তেলসম্পদ থাকার কারণে তাদের অর্থের অভাব নেই, মাসদার পরিকল্পনা চায় উন্নয়নের সব পর্যায়ে সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিতে অর্থায়ন করতে। এতে নিজস্ব ইনকিউবেটর থাকবে নতুন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা যোগানোর জন্য। এ ছাড়া ক্লিন-টেক ফান্ড থেকে সহায়তা দেয়া হবে অন্যান্য পরিপক্ব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে।

তা সত্ত্বেও ‘মানব মূলধন’ তথা ‘হিউম্যান ক্যাপিটেল’ আরেকটি বিষয়। সুলতান আল-জাবের বলেন, মাসদার সাফল্যের সাথে বিশ্বের নানা প্রযুক্তি গুচ্ছশহরগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা সমাপ্ত করেছে, যাতে একই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যায় আবুধাবিতেও। তিনি বিশেষত আগ্রহী সিঙ্গাপুর ও আয়ারল্যান্ডের মতো স্থানের গ্রহণযোগ্য রেগুলেটরি এনভায়রনমেন্ট ও কার্যকর অবকাঠামো অনুসরণ করতে। তিনি উল্লেখ করেন, যেসব বিদেশী প্রতিষ্ঠান মাসদার সিটিতে দোকান স্থাপন করছে, সেগুলো চাইলে স্থানীয় অংশীদার ছাড়াই কাজ করতে পারবে। এরা অবাধে মূলধন স্বদেশে পাঠাতে পারবে। সেখানে মেধাস্বত্ব কঠোরভাবে সংরক্ষণ করা হবে। সেখানে পেপারওয়ার্ক চলবে খুবই কম। সবচেয়ে লোভনীয় দিক হলো, তাদের কোনো কর দিতে হবে না।

এদিকে এমআইএসটি চায় সম্ভাবনাময় শিক্ষকদের দিয়ে এক সাথে একটি মাত্র কোর্স পড়ানোর ব্যবস্থা করতে, যেখানে থাকবে গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ। মাসদার সিটির ‘ওপেন ল্যাবরেটরি’ হবে আরেকটি আকর্ষণীয় দিক, বললেন এ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মারওয়ান ক্রেইশেহ্। ইতোমধ্যেই কর্নেল, এমআইটি ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অথবা ছাত্রদের এখানে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়েছে। এদিকে মাসদারে নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাজেন্দ্র পাচুরির মতো ব্যক্তিত্বকে। তিনি ছিলেন জাতিসংঘের ক্লাইমেট প্যানেলের প্রধান। সেখানে নিয়োগ পেয়েছেন স্বনামখ্যাত জন ব্রাউন। তিনি বিপির একজন সাবেক কর্মকর্তা। উদ্ভাবনমূলক জ্বালানির ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রার্থীদের বাছাই কাজে তিনি সহযোগিতা করবেন। ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস এমআইএসটির একজন প্যাট্রন বা পৃষ্ঠপোষক।

শেষ কথা

আবুধাবি এখনো সিলিকন ভ্যালি হয়ে ওঠেনি। এমআইএসটি এখনো ক্ষুদ্র। ২০১১ সালের আগে এখান থেকে কোনো ডক্টরেট বের হবেন না। নগরটির আবহাওয়া-পরিবেশ এখনো শোচনীয়। মল ও রেস্তরাঁ ছাড়া বিনোদনের তেমন কিছুই গড়ে ওঠেনি। তারপরও কিন্তু এটি অধিকতর কসমোপলিটন ধরনের এবং অকল্পনীয়ভাবে সংরক্ষণশীল। বিদেশীরা যারা আসছেন তারা এ নগরীকে ‘প্রত্যাশার চেয়ে ভালো অবস্থানে’ দেখতে পাচ্ছেন। সম্ভবত মাসদার সিটির বেলায় তেমনটিই সত্যি হবে। সবচেয়ে বড় কথা সময়ের প্রয়োজন মেটানোর প্রতিশ্রুতি নিয়েই আসছে মাসদার সিটি। এটি হবে প্রযুক্তিনির্ভর পরিবেশবান্ধব এক অনন্য উদাহরণ। আমরা এই বাংলাদেশীরা আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা ভাবছি ও বলছি। মাসদার সিটির আদলে আমরা যদি আমাদের মতো করে একটি প্রযুক্তিনির্ভর পরিবেশবান্ধব কোনো গুচ্ছশহরের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, তবে তা হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনারই একটি অংশ, যদিও ‘সম্পূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিষয়টি আরো ব্যাপক কিছু। তবে আমাদের বেলায় মনে রাখতে হবে আমাদের পরিল্পকনা মাসদার পরিল্পকনার মতো ততটা মূলধনঘন হবে। আমাদের সম্পদের পরিধি বিবেচনায় রেখেই আমাদের পরিল্পকনা প্রণয়ন করতে হবে। তবে লক্ষ্য হতে হবে স্থির; ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মৌল উপাদানের উপস্থিতিটা সেখানে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
কজ ওয়েব

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৯ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস