• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বাংলা কমপিউটিং এবং কয়েকটি বাংলা সফটওয়্যার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ভাস্কর ভট্টচার্য
মোট লেখা:১৯
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সফটওয়্যার
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বাংলা কমপিউটিং এবং কয়েকটি বাংলা সফটওয়্যার



ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। একুশের মাস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাস। এই মাসটি এলেই আমরা বাংলার প্রতি একটু বেশি মনোযোগী হই। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। কমপিউটার জগৎ এর আগে এ বিষয় নিয়ে প্রচুর লেখা প্রকাশ করেছে। এ লেখায় এ বিষয়ে বর্তমান অবস্থা যাচাই ও বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পাব। প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটি লিখেছেন ভাস্কর ভট্টাচার্য।


বাংলা স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার

স্ক্রিনরিডার হচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের কমপিউটার ব্যবহারের জন্য সফটওয়্যার। যারা চোখে দেখতে পারেন না, তাদের কমপিউটার ব্যবহার করার জন্য দরকার এই স্ক্রিনরিডার সফটওয়্যার। কমপিউটার স্ক্রিনে যা কিছু দেখতে পাবেন, তার সব কিছুই পড়ে শোনাবে এ স্ক্রিন রিডিং সফটওয়্যার। এ লেখায় উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলা স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার নিয়ে। পাঠকদের অনেকেই হয়তো জানেন, আমি নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। যখন আমি এ লেখা তৈরি করছি, তখন এটি বাংলায় হওয়ায় আমাকে অন্যের সহায়তা নিতে হচ্ছে। অথচ ইংরেজিতে সব কাজ আমি একাই কমপিউটারে করতে পারি। এ বিষয়ে ‘ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন’ তথা ইপসার প্রধান নির্বাহী মো: আরিফুর রহমান বলেন, ‘ইপসা ২০০৫ সাল থেকে আইসিটি অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার অন ডিজ্যাবিলিটি বা আইআরসিডি নামে একটি বিশেষায়িত এবং উদ্ভাবনীমূলক গবেষণা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে, যেখান থেকে প্রায় শতাধিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন। কিন্তু বাংলায় স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার না থাকায় প্রশিক্ষণার্থীরা অসুবিধায় পড়েন। যদি বাংলা স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার থাকতো তাহলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা অন্যদের মতো সমান দক্ষতায় বাংলাতেও কমপিউটারে কাজ করতে পারতেন।

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। অন্য হিসেবে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ শতাংশ। এ ছাড়াও প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। এ সংখ্যা থেমে নেই, বরং বেড়েই চলেছে বছরের পর বছর।

এদের সমস্যা সমাধানে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে প্রায় সব ধরনের সেবা দেয়ার পদ্ধতি এবং অধিকারভিত্তিক কর্মপদ্ধতি। সম্প্রতি এ ধারার সাথে যুক্ত হয়েছে আইসিটি। কিন্তু ‘সবার জন্য আইসিটি’ ব্যবহারের অন্যতম বাধা হচ্ছে ভাষাগত সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া ভাষাহলো ইংরেজি। বাংলাভাষা ব্যবহার হলেও তা সবার জন্য ব্যবহারোপযোগী নয়।

গরিব ও অভাবী জনগোষ্ঠীর সুনির্দিষ্ট তথ্য ও যোগাযোগ চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে যথাযথ ও সচেতনভাবে ব্যবহার করা হলে দারিদ্র্য মোকাবেলায় প্রযুক্তি সবচেয়ে কার্যকর এবং প্রমাণিত হাতিয়ার। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে দরিদ্রতা ও প্রতিবন্ধিতার সমস্যাগুলো সমাধানে আইসিটির বহুমুখী ব্যবহারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য দরকার সব হার্ডওয়্যার সফটওয়্যারের স্থানীয়করণ তথা লোকেলাইজেশন, প্রযুক্তিকে সবার জন্য ব্যবহারোপযোগী করে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি খন্দকার জহুরুল আলম জানান, ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকার যাতে সংরক্ষিত হয়, সে জন্য কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের বিষয়ভিত্তিক কিছু থিমেটিক গ্রুপ আছে, যার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক থিমেটিক গ্রুপ অন্যতম। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহারোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তি স্থানীয়করণ, বাংলা লোকেলাইজেশন এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে এ গ্রুপ। এ জন্য প্রতিবন্ধী ফোরাম সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রচার চালাচ্ছে।’

গত নভেম্বর ২০১০ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর একা সচিব মো: নজরুল ইসলাম খানের সাথে। তিনি বলেন, ‘এটুআই কার্যক্রমের অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া। এ সেবা পৌঁছানোর অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বাংলাভাষা। আর বর্তমান সরকার বাংলাভাষায় যেকোনো সফটওয়্যারের স্থানীয়করণে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে নিরক্ষর জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে সেবা পৌঁছানো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যেকোনো প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।’



ইতঃপূর্বে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সামনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠী কিভাবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তা তুলে ধরার। আমি প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরি বাংলায় স্ক্রিনরিডিং না থাকার সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে সবার, এক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা কিংবা বাধা থাকলে তা নিরসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বাংলায় স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার কিংবা টিটিএস তৈরি করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম আয়োজিত প্রতিবন্ধী দিবস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার তৈরির প্রতিশ্রুতি জোরালোভাবে ব্যক্ত করেন। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও তা ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে কিছুটা অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি অ্যাক্সসেস টু ইনফরমেশন তথা এটুআই একটি প্রতিবন্ধীবিষয়ক আইসিটি থিমেটিক গ্রুপ গঠন করে।

বাংলা টিটিএস : সুবচন

এটি একটি টেক্সট টু স্পিচের নাম। এ বাংলা টিটিএস তৈরি করছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. জাফর ইকবাল। এই নতুন বাংলা টিটিএসের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। এর শব্দচয়ন ও ভাষার স্বাভাবিকতায় ব্যবহারকারীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে ইতোমধ্যেই।

টেক্সট টু স্পিচ :
সিনথেসিস- এটি একটি শৈল্পিক মাধ্যম, যাতে কোনো লেখাকে শব্দে পরিণত করা যায় কমপিউটারের মাধ্যমে। এর টেকনিক্যাল দিক বিবেচনা না করে ব্যবহারকারীর দিক বিবেচনা করে বলতে গেলে দেখা যায়, এটি কমপিউটারে থাকা যেকোনো লেখাকে শব্দে পরিণত করবে। যদি স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কমপিউটার স্ক্রিনে থাকা যেকোনো আইকন আপনাকে পড়ে দেবে। আপনি যা কমপিউটার মনিটরে দেখতে পাচ্ছেন, তা যিনি দেখতে পাচ্ছেন না কিংবা পড়তে জানেন না, তিনি শব্দের মধ্য দিয়ে শুনতে পাবেন। আর এতে করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি কিংবা কোনো নিরক্ষর মানুষ সহজে কমপিউটার ব্যবহার করতে পারবেন। পূর্ণাঙ্গ বাংলা টিটিএস তৈরি হওয়ার পরে আমরা Full Text , Full Audio ডেইজি ডিজিটাল টকিং বুক তৈরি করতে পারব। যেকোনো বই লেখার সাথে সাথে তা শব্দেও পরিণত হবে। এতে করে যাদের পড়ায় অসুবিধা আছে তারা শুনতে পাবেন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা টিটিএসের কার্যক্রম চলছে প্রায় ৫-৬ বছর ধরে। যারা এর সাথে কাজ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. শহীদুর রহমান, ড. রেজা সেলিম এবং মো: আকতার হোসেন।

মঙ্গলদীপ

এটি একটি স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার, যা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে। বর্তমানে মঙ্গলদীপ ইংলিশে কাজ করতে সক্ষম। সুবচন বাংলা টিটিএস এবং মঙ্গলদীপকে সমন্বয় করে একটি স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যারে পরিণত করা হবে। অর্থাৎ কমপিউটার ব্যবহারকারীরা বাংলা ইংলিশ উভয় ভাষায় কমপিউটার ব্যবহার করতে পারবে। এ প্রকল্পের গবেষক রুহুল আমীন বলেন, ‘এই সফটওয়্যার দুটি তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে ত্বরান্বিত করার জন্য। এ ছাড়াও এর মাধ্যমে ব্যাপকসংখ্যক নিরক্ষর জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে। মঙ্গলদীপ ও সুবচন ব্যবহারকারীদের কাছে আরো সফলভাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরো সহযোগিতা আমরা আশা করি।’

বাংলাদেশ ভিজ্যুয়াল ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি তথা ভিপস-এর পক্ষ থেকে আমরা বিজ্ঞান, ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আবদুর রব হাওলাদারের সাথে দু’বার সাক্ষাৎ করি এবং তার ব্যক্তিগত আগ্রহে বাংলা টিটিএস ও স্ক্রিনরিডার সফটওয়্যারবিষয়ক একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়। এ বিষয়ে মো: আবদুর রব হাওলাদার বলেন, ‘বাংলায় স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার প্রণয়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সব সহায়তা থাকবে, যেহেতু এটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর তথ্য পাওয়ার সুবিধাও বাড়াবে। তাই বাংলা স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যারের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন আশা করি।’

বাংলাদেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অনগ্রসরতার প্রেক্ষাপটে কিছু অগ্রসরমান চিন্তাশীল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রচেষ্টায় ৪ জানুয়ারি ২০০৫ বাংলাদেশ ভিজ্যুয়াল ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পরিচালিত একটি অধিকারভিত্তিক গণতান্ত্রিক, সংগঠন।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অন্যান্য অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির মতো সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে একাভাবে প্রয়োজন তাদের জন্য উপযুক্ত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি পাওয়া ও এর বাধাহীন ব্যবহার সুনিশ্চিত করা। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে বাধাহীনভাবে কমপিউটার তথা ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে সে জন্য ভিপস দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কমপিউটারপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষায় কাজ করার জন্য Bangla text to speech & Screen reader software তৈরিতে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে নিয়মিত প্রচার সভা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভিপস প্রতিনিধিদল গত ৫ আগস্ট ২০১০ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিভাগ ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জাফর ইকবালের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং Bangla text to speech & Screen reader software তৈরি ও তা উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেন। গত ৮ আগস্ট ২০১০-এ ভিপস আয়োজিত আইসিটিবিষয়ক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি Bangla text to speech & Screen reader software তৈরি ও তা উন্নয়নে তার প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রাখবেন বলে আবার প্রতিশ্রুতি দেন। গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১০ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে ভিপস প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে। ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে সচিব Bangla text to speech & Screen reader software তৈরি ও তা উন্নয়নে তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন। একই সাথে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উক্ত সফটওয়্যার প্রস্তুত ও তা উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প এ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জমা দেয়, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে।

কথা : বাংলা টিটিএস

‘কথা’-এটি একটি বাংলা টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার, যা নিয়ে ইতঃপূর্বে কমপিউটার জগৎ-এ লেখা হয়েছে। এটি তৈরি করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অব বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং’। তাদের ওয়েবসাইট : Web : crblp.bracu.ac.bd । ‘কথা’র ব্যবহার করা একটু জটিল। তবে প্রথম আলো ‘কথা’র মাধ্যমে তাদের সংবাদকে শব্দে পরিণত করে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রথম আলো শ্রুতি’। এটি উল্লেখযোগ্য ও প্রশংসনীয়। তবে এর শব্দমান ও পড়ার জটিলতা নিয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন। ওয়েবসাইট : : www.prothom_Alo.com/sruti

সিডিডি বিজয় বাংলা ব্রেইল কনভার্টার

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ বইয়ের লেখা বা দৃষ্টি দিয়ে শেখার কোনো মাধ্যমে সামর্থ্য নয়। তাই প্রচলিত শিক্ষায় ছাপানো বই পড়ে নিজেকে শিক্ষিত করার অবকাশ নেই। তবে তাদের জন্য রয়েছে ব্রেইল, যা তারা হাতে ছুঁয়ে পড়ে নিতে পারে সবই। কিন্তু সমস্যা ব্রেইলে তৈরি বই বা উপকরণ পাওয়া নিয়ে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সহজেই শিখে নিতে পারে ব্রেইল, কিন্তু সনাতনভাবে হাতে লিখে পাঠ্যবই বা কোনো শিক্ষণ উপকরণ তৈরি করা জটিল, যা অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব প্রায়।



তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কমপিউটার ভূমিকা রাখছে শিক্ষাসহ সব যোগাযোগের ক্ষেত্রে। ইংরেজি ভাষায় ব্রেইলের প্রচলন সম্ভব হয়েছে অনেক আগেই, যা আমাদের মাতৃভাষায় অসম্ভব ছিল এই ২ বছর আগেও।

২০০৪ সালে চেষ্টা শুরু হয়, যাতে আমাদের দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভাইবোনেরা কমপিউটারের মাধ্যমে আমাদের ভাষায় ব্রেইল ব্যবহারে সমর্থ হতে পারে। অসম্ভব কিছুই নয়। কেননা, ভারতে বাংলায় ব্রেইল প্রচলিত হয়েছে ইতোমধ্যেই। বাংলা লেখা কোনো ফাইলকে একটি সফটওয়্যারে কনভার্ট করে ব্রেইলে লিখে টেক্সটে রূপান্তর এবং তা থেকে প্রিন্ট নেয়া সম্ভব। প্রথম চেষ্টায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এ প্রযুক্তি নিয়ে আসা যায়। কিন্তু সমস্যা প্রচলিত বাংলা সফটওয়্যার নিয়ে। ভারতে প্রচলিত বাংলা আই লিপ আমাদের দেশে বিজয়ের সাথে কাজ করবে না। তাই বিজয়ের সাথে ইন্টারফেসিং দরকার। শরণাপন্ন হই বিজয়ের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জববারের। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের সহায়তার উদ্যোগ জেনে সম্ভাব্য সহায়তার হাত বাড়াতে এককথায় রাজি হন তিনি। তার সব ব্যস্ততা রেখে পুরো সাত দিন আমার সাথে কলকাতায় ওয়েবেল মিডিয়াট্রনিক্স কোম্পানিতে তাদের কনভার্টারের সাথে বিজয়ের ইন্টারফেসিংয়ের কাজ চলে। সাথে ছিল সিডিডির কমপিউটার বিভাগের প্রধান ব্রজগোপাল সাহা।

সম্ভব হয় সার্থক ইন্টারফেসিং। তবে শেষলগ্নে সমস্যা বাধে এর মূল্য নিয়ে। ব্রেইল টু টেক্স ও টেক্স টু ব্রেইল- এ দুটি কনভার্টার সিডি কিনতে প্রতিসেটের মূল্য দিতে হবে ১৪০০ ডলার। এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? শেষ দিনে কলকাতায় হোটেলে বসে আলোচনা হয়, আমরা কি পারি না আমাদের মতো করে নতুন আঙ্গিকে বাংলা ব্রেইল কনভার্টার তৈরি করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য একটি স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে? মোস্তিফা জববার তার আনন্দ কমপিউটার্সের মেধা ও দক্ষতা আর সিডিডির ব্রেইলসংক্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত হয়- আমরাই তৈরি করব বাংলা ব্রেইল কনভার্টার। বিনামূল্যে পৌঁছে দেব সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির নাগালে। ব্রেইলের অভাবে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না।

ফিরে এসেই শুরু হয় কাজ। বলতে গেলে বিনা পারিশ্রমিকে মোস্তিফা জববারের ঐকান্তিক চেষ্টা ও মেধা নিয়ে সিডিডির পাশে দাঁড়িয়ে দুই বছরে অর্থাৎ ২০০৭ সালে এর সার্থক রূপে আত্মপ্রকাশ ঘটান। এই নতুনপ্রযুক্তির নাম দেয়া হয় ‘সিডিডি বিজয় বাংলা ব্রেইল কনভার্টার’। এতে কমপিউটারে কম্পোজ করা যেকোনো বাংলা ডকুমেন্ট চোখের নিমিষে ব্রেইলে রূপার করে ব্রেইল প্রিন্টারে প্রিন্ট করে নেয়া সম্ভব। সেই সাথে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ ব্রেইলে কমপিউটারে টাইপ করে তা রূপান্তর করে নিতে পারেন সাধারণ টেক্সটে।

গত তিন বছরে এর প্রচলন বিস্তৃত হতে থাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের কাছে। বাংলা ব্রেইল কনভার্টার নামের সোনার হরিণ আজ বিনামূল্যে সবার কাছে। ধীরে ধীরে ব্রেইল প্রিন্টার বাড়ছে, বাড়তে শুরু করেছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

ডাস্কবেরি বাংলা ব্রেইল সফটওয়্যার

পৃথিবীর একটি অন্যতম জনপ্রিয় ব্রেইল সফটওয়্যার এটি, যা বিভিন্ন ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে। সম্প্রতি এরা বাংলায় লোকেলাইজেশনের ওপর কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বাংলায় ব্রেইল কনভার্টার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছে। বাংলাকে ব্রেইলে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে স্কাইপে কথা বলি ডাস্কবেরির কর্মকর্তা ডেভিড হলওয়ের সাথে। তিনি আমাকে জানান, ডাস্কবেরি বাংলা ব্রেইল সফটওয়্যার ২০১১ সালের জুনের মধ্যে বাজারে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। এতে করে বাংলাদেশের ব্যাপক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অনেকেই ডাস্কবেরি সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, যা আমাদের উৎসাহিত করেছে বাংলা লোকেলাইজেশনের।

www.duxburysystems.com/welcome_tester.asp?lang=Bengali&ind=1

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্রেইলসহায়ক যন্ত্রের স্থানীয়করণ

এই ব্রেইল পদ্ধতির প্রধান বাধা হলো ব্রেইলে যে ৬টি ডট আছে তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়ে, বিশেষ করে নতুন শিক্ষার্থীরা। আর এই বিভ্রান্তি দূর করতেই ব্রেইল লিখনসহায়ক যন্ত্রের উদ্ভাবন। এই যন্ত্রটি কমপিউটারের সাথে সংযুক্ত করে চালাতে হয়। যন্ত্রটিতে রয়েছে অডিও সিস্টেম, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়।

আশার কথা, বাংলাদেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কাছে এই যন্ত্রটি পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১০ সপ্তাহের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির (সিএমইউ) টেকব্রিজ ওয়ার্ল্ড নামের গবেষণা কেন্দ্রের ৫ শিক্ষার্থী এবং প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের (এইউডব্লিউ) ১০ শিক্ষানবিস যন্ত্রটি সফল ব্যবহারের লক্ষ্যে এইউডব্লিউ স্থানীয় এনজিও ইপসা’র সাথে সিএমইউর যোগসূত্র স্থাপন করেছে। এ দলের মূল লক্ষ্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যকার প্রযুক্তিগত বৈষম্য তথা ডিজিটাল ডিভাইড দূর করা। টেকব্রিজ ওয়ার্ল্ডের নির্দেশনায় গবেষণা করছেন আই-স্টেপের (ইনোভেটিভ স্টুডেন্ট টেকনোলজি এক্সপেরিয়েন্স) শিক্ষানবিসরা। আই-স্টেপ প্রথম কাজ শুরু করে ২০০৯ সালে তাঞ্জানিয়ায়। এটি তাদের দ্বিতীয় উদ্যোগ।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার বিশেষ পদ্ধতি ব্রেইল লেখা ও শেখার যন্ত্র সম্পর্কে জেন হরউয়িজ বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং নিরক্ষরদের পড়াশোনার জন্য ইপসার একটি নিজস্ব কর্মসূচি চালু রয়েছে। এতে পাঠ্যবইয়ের সাথে শ্রুতিপাঠের (অডিও রিডিং) সমন্বয় করে তাদের শেখানো হয়। কিন্তু এটি ইংরেজি মাধ্যমে। আমরা এর বাংলা সংস্করণের সফটওয়্যার তৈরি করছি, যাতে শিক্ষার্থীরা আরও সহজে সবকিছু আয়ত্ত করতে পারে।

যেহেতু ইপসা বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, তাই যন্ত্রটির উন্নয়নে তাদের অভিজ্ঞতাকে নির্দেশনা হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। এতে তারা বিভিন্ন পাঠ ও গেমের মাধ্যমে ব্রেইলে লেখার অনুশীলন করতে পারবে। তা ছাড়া বর্তমানে কমপিউটারচালিত ব্রেইল যন্ত্রটিতেও আমরা পরিবর্তন আনছি। এর ইংরেজি নির্দেশনাকে বাংলায় রূপান্তর করা হচ্ছে।

যন্ত্রটির পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য একটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের স্কুলে ইতোমধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, যন্ত্রটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণতার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে। যদিও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য যন্ত্রটি আশার আলো জ্বালিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অপর্যাপ্ত কমপিউটার ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধা সৃষ্টি করছে। যার ফলে এখন এই যন্ত্রটিকে কমপিউটারের সাহায্য ছাড়া ব্যবহারের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। শত বাধা দূর করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষিত হওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর করাই হবে প্রকল্পটির সফলতা।

টেকব্রিজ ওয়ার্ল্ডের অধীনে আই-স্টেপ (iSTEP-Innovative Student Technology ExPerience) শিক্ষানবিস হিসেবে চট্টগ্রামে এই প্রথম কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির (সিএমইউ) পাঁচ সদস্যের একটি দল দুটি প্রকল্পে কাজ করার জন্য এসেছে। টেকব্রিজ ওয়ার্ল্ড মূলত সিএমইউর রোবোটিক ইনস্টিটিউটের অধীনে একটি গবেষক দল। টেকব্রিজ ওয়ার্ল্ডের মূল লক্ষ্য হলো উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যকার বিবদমান প্রযুক্তিগত বিভেদ দূর করা। তাদের অধীনে আই-স্টেপের উদ্যোগটি প্রথম শুরু হয় ২০০৯ সালে, যার অন্যতম লক্ষ্য হলো সিএমইউর শিক্ষার্থীদের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সৃজনশীলভাবে ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দান। প্রকল্প দুটির একটি হলো- ইংরেজি শিক্ষার একটি মোবাইল গেমস উদ্ভাবন করা, বাংলা সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। অন্য প্রকল্পটি হলো- কম খরচে ব্রেইল লিখন শিক্ষার সহায়ক যন্ত্র উদ্ভাবন, যা বাংলা ব্রেইল লিখন শিক্ষার কাজেও ব্যবহার করা যাবে।

এই পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট দলের চার সদস্য চট্টগ্রামে এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রের পিটাসবার্গ থেকে সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সমন্বয় করছেন। চট্টগ্রামে অবস্থানরত চার শিক্ষানবিস, এইউডব্লিউর দশ শিক্ষানবিসের সাথে চারটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রকল্প দুটি সফল করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে।

আমিস্ বাংলা

বাংলা আমিস্ একটি মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার। আমিস্ হলো অ্যাডাপটিভ মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম। এটি একটি সম্পূর্ণ ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। www.amis.sf.net-এর বাংলা language pack টি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। এ ব্যাপারে ডেইজি কনসোর্টিয়ামের হিরোসি কাওয়ামুরাসনের সাথে কথা বলি। তিনি আমাকে বলেন, ‘আমিস্ বাংলা লোকেলাইজেশনের মধ্য দিয়ে বাংলাকে আমরা ডেইজির পূর্ণাঙ্গ পরিবারভুক্ত করে নিলাম। এখন থেকে বাংলা ডেইজি ব্যবহারকারীরা Full text, Full Audio বাংলা ডেইজি বই পড়তে ও শুনতে পারবে। ওয়েবসাইট : www.daisy.org

ভাবুন তো এমন একটি বইয়ের কথা :

* এটি এমন ধরনের বই যেটি ডিজিটাল উপায়ে প্রস্ত্তত, সংরক্ষণ এবং বিতরণযোগ্য;
* বইটি শোনা যায়, দেখে এবং স্পর্শ করে পড়া যায়;
* প্রতিবন্ধী বা অপ্রতিবন্ধী, সব বয়সের মানুষ লিখিত ভাষা বা লিখিত ভাষা ছাড়াই বইটি পড়তে পারে;
* ১০০০ পৃষ্ঠারও বেশি এমন একটি বই একটি সাধারণ সিডিতে ধারণ করা সম্ভব;
* আর বইটির উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের প্রযুক্তি মুক্ত, অলাভজনক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত;
* সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই প্রযুক্তির মূল নীতি হচ্ছে সার্বজনীন পরিকল্পনা (ডিজাইন ফর অল), যার সুবিধা সবাই পেতে পারে ও সবার ব্যবহারোপযোগী।

উপরোল্লিখিত কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করতে স্থানীয়করণ করা হয়েছে বাংলা আমিস্কে।

অঙ্কুরের নতুন সফটওয়্যার

অঙ্কুর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন একটি অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে মানসম্পন্ন শিক্ষা, তথ্য এবং যোগাযোগপ্রযুক্তিতে সবার অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ২০০২ সালের অক্টোবরে সূচনালগ্ন থেকেই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অঙ্কুর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বাংলাভাষা এবং বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের স্থানীয়করণ (অনুবাদ) করে আসছে। ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হলো এমন এক ধরনের সফটওয়্যার, যার মেধাস্বত্ব তথা সফটওয়্যারের কপিরাইট এমন যে, ব্যবহারকারীকে এ সফটওয়্যার ও এর সোর্সকোড অনুশীলন, পরিবর্তন এবং মানোন্নয়ন করার অধিকার দেয়, যা কপিরাইট সফটওয়্যারে থাকে না। ওপেনসোর্স সফটওয়্যারকে অনেক সময় মুক্ত ও স্বাধীন সফটওয়্যারও বলা হয়ে থাকে। স্থানীয়কৃত সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে রয়েছে অপারেটিং সিস্টেম, ওয়ার্ড প্রসেসর, স্প্রেডশিট, প্রেজেন্টেশন টুল, ইমেইল ক্লায়েন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজারসহ আরও বেশ কিছু সফটওয়্যার। এ সফটওয়্যারগুলোর জন্য বাংলা ভাষায় প্রশিক্ষণ উপকরণ তৈরি করা হয়েছে, যাতে করে খুব সহজেই সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহার শেখা যায়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন নয় এমন কাজে আইসিটির ব্যবহারে এ সফটওয়্যারগুলো ব্যয়সাশ্রয়ী ও কার্যকর সমাধান।

বাংলা বানান পরীক্ষক :
অঙ্কুর ইউনিকোড ভিত্তিক ‘বাংলা বানান পরীক্ষক’ নামে একটি নতুন সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যা বাংলাভাষায় ইউনিকোডভিত্তিক প্রথম বানান পরীক্ষক। সম্প্রতি অঙ্কুর এই বাংলা বানান পরীক্ষকের হালনাগাদ করা সংস্করণ প্রকাশ করেছে, যাতে রয়েছে ৪ লাখেরও বেশি বাংলা শব্দ। এই বানান পরীক্ষকটি বাংলা শব্দের ভুল বানান শনাক্ত করতে পারে এবং ভুল বানানের জন্য সম্ভাব্য শুদ্ধ শব্দের একটি তালিকাও দেয়। বর্তমানে এই বানান পরীক্ষক মুক্ত ওপেনসোর্সভিত্তিক অফিস প্রোডাক্টিভিটি টুল ওপেনঅফিস.অর্গ-এর সব কম্পোনেন্টসহ ইন্টারনেট ব্রাউজার ফায়ারফক্স এবং ই-মেইল ক্লায়েন্ট থান্ডারবার্ডেও কাজ করে। ওপেনঅফিস.অর্গ, ফায়ারফক্স এবং থান্ডারবার্ডের জন্য আলাদা আলাদা প্যাকেজ অঙ্কুরের ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে।

টাইপিং টিউটর :
অঙ্কুরের তৈরি বাংলা টাইপিং টিউটরের সাহায্যে যেকেউ কমপিউটারে বাংলা টাইপিং অনুশীলন করতে পারবে। বর্তমানে অঙ্কুর এর পরীক্ষামূলক সংস্করণ অবমুক্ত করেছে। এর সাথে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল প্রবর্তিত জাতীয় কীবোর্ড লেআউট এবং অঙ্কুরের প্রভাত কীবোর্ড লেআউট যুক্ত করা হয়েছে।

অঙ্কুর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আইসিটির যথাযথ ব্যবহার এবং স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী যারা দেশ গড়ায় আগামী সৈনিক হিসেবে বিবেচিত তাদের আইসিটি ব্যবহারে দক্ষতা নিশ্চিত করে সুখী, সমৃদ্ধশালী, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অঙ্কুর বিশ্বাস করে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ডিজিটাল বাংলাদেশের জাতীয় কর্মসূচির আওতায় আইসিটি ব্যবহারে দক্ষ জনবল তৈরি এবং সর্বসাধারণের আইসিটি ব্যবহারে ব্যয়সাশ্রয়ী এবং কার্যকর সমাধান হবে মাতৃভাষা বাংলায় অনূদিত মুক্ত ও ওপেনসোর্স সফটওয়্যার এবং মাতৃভাষায় তৈরি বলে তা সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য হবে এবং তা সহজেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

অঙ্কুরের সব কাজ www.ankur.org.bd ওয়েবসাইটে ও সংশ্লিষ্ট প্রোজেক্ট সাইট থেকে ডাউনলোড করা যায়।

Avro ৫.১.০ বিনামূল্যে ইউনিকোড সহায়ক বাংলা লেখার সফটওয়্যার

Avro keyboard version ৫.১.০ ১ জানুয়ারি ২০১১-এ নবতম সংস্করণ বের হয় । এতে অনেক নতুন বিষয় সংযোজিত হয়েছে। Avro keyboard এখন ওপেন সোর্স এবং মজিলা ১.১ পাবলিক লাইসেন্সের আওতাভুক্ত। এটি windows ৭-এ কাজ করতে সক্ষম। Microsoft plug in এর ব্যবস্থা রয়েছে । সম্পূর্ণ ফিচার জানতে এবং ডাউনলোড করতে ভিজিট করুন : www.omicronlab.com/avro-keyboard.html

পঁচিশ বছরে বিজয়

কমপিউটারে বাংলা লেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় কীবোর্ড এবং সফটওয়্যার বিজয় ২০১১ সালে পঁচিশ বছরে পা দিয়েছে। ১৯৮৭ সালে সে যাত্রা শুরু হয়। এই বছরে বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যারসংক্রা দুটি পণ্য এবং ইন্টারএ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করে একটি শিক্ষামূলক পণ্য বাজারজাত করছে।

বিজয় একাত্তর :
বিজয় একাত্তর নামের একটি নতুন সফটওয়্যারে প্রথমবারের মতো বাংলা হরফের পরিপূর্ণ সোন্দর্য দিতে সক্ষম হয়েছে। এতে বিজয়ের ঐতিহ্যবাহী ক্লাসিক কোড ছাড়াও আছে ইউনিকোড ৬.০ এনকোডিং বা বিডিএস ১৫২০:২০১১ এনকোডিং। এই এনকোডিং ব্যবহার করে বিজয় একাত্তর ছাড়াও বিজয় একুশে ২০১১ এবং বিজয় বায়ান্নো ২০১১ নামের আরও দুটি সংস্করণ ইতোমধ্যেই বাজারে এসেছে।

বিজয় ল্যাপটপ :
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজয় ল্যাপটপ বাজারে আসবে। এটি ইনটেলের এ্যাটম প্রসেসরে তৈরি সবচেয়ে কমদামী একটি নেটবুক। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এর কীবোর্ডে বিজয় বাংলা কীবোর্ড মুদ্রিত আছে। পৃথিবীর কোনো নেটবুক বা ল্যাপটপে এখন পর্য বাংলা কীবোর্ড মুদ্রিত হয়নি। অন্যদিকে দুনিয়ার কোনো ল্যাপটপে লাইসেন্সকৃত বাংলা সফটওয়্যার ও আরও অনেক শিক্ষামূলক বাংলা সফটওয়্যার এবং ই-বুক বান্ডল করা হয়নি।

বিজয় শিশুশিক্ষা :
বিজয় শিশুশিক্ষা নামের একটি শিক্ষামূলক সফটওয়্যার বাজারজাত করছে। এটি ৩ থেকে ৬ বছরের শিশুদের জন্য প্রস্ত্তত করা। এতে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক বিষয়গুলো রয়েছে। এটিই প্রথম সফটওয়ার যাতে কাগজে ছাপা বইও যুক্ত করা হয়েছে।

বাংলায় জাতীয় ই-তথ্যকোষ

জাতীয় ই-তথ্যকোষ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ওয়েবভিত্তিক একটি বাংলা তথ্যভান্ডার। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রজেক্ট এ তথ্যকোষ পরিচালনা করে। এ ওয়েবসাইটটি বাংলায় নির্মিত এবং তথ্যকোষে সন্নিবেশিত হয়েছে অডিও, ভিডিও, ই-টেক্রট এবং অ্যানিমেশনসহ নানাবিধ কনটেন্ট। বিস্তিরিত জানতে ও তথ্যকোষ ব্যবহার করতে ভিজিট করুন : www.infokosh.bangladesh.gov.bd

ওয়েবে অরেঞ্জবিডির বাংলা অভিধান

দেশের অন্যতম ওয়েব ডিজাইন ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন প্রতিষ্ঠান অরেঞ্জবিডি ওয়েবে প্রথমবারে, মতো বাংলা অভিধানের সফল সংযোজন ঘটিয়েছে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সানের ইন্টারনেট সংস্করণে বাংলা অভিধান সংযোজন করে অরেঞ্জবিডি এ কৃতিত্বের অধিকারী হলো। এতে ওই পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ যারা পড়বেন, তারা যেকোনো ইংরেজি শব্দের ওপর ডবল ক্লিক করা মাত্রই শব্দটির যথার্থ বাংলা জেনে যাবেন, তাতে অভিধান আর দেখতে হবে না।

অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ভাবনা



আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা করে কিছু করা হয় না। দৈনন্দিন জীবনে তাদেরকে নানা প্রতিকূল পরিবেশের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের কথা অনেক সময়েই তাদের জন্য অসম্ভব কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। সে কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে আমরা সবসময়ই প্রতিবন্ধীদের জন্য নতুন কিছু করার চেষ্টা করি। অনেক দিন আগে বাক্প্রতিবন্ধীদের জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ওপর কিছু কাজ হয়েছে এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার এবং বাংলা টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। সফটওয়্যারগুলো বেশ ভালো, অনেক যত্ন দিয়ে এগুলো তৈরি করা। তবে সত্যিকারের প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি একটি সিস্টেম হিসেবে এখনো তা গড়ে ওঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা তাদের অ্যাকাডেমিক কাজে ব্যস্ত থাকে, তাই পুরোপুরি কার্যকর একটি সিস্টেমে রূপ দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পায় না বলে আমরা সেটি দ্রুত সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারছি না- এ জন্য চেষ্টা করছি। আমাদের আন্তরিকতায় কোনো খাদ নেই।

মার্চে চালু হবে বাংলা ডোমেইন

মার্চ মাসে বাংলা ডোমেইন চালু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের তথা বিটিআরসি চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ। বাংলা ডোমেইন চালু হলে ইন্টারনেটে ভাষা হিসেবে বাংলাভাষা স্বীকৃতি পাবে।

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে টেলিযোগাযোগ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেষ কথা

প্রযুক্তি সময়ের সাথে এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞানের অন্যতম সম্প্রসারিত শাখা প্রযুক্তি। আর প্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে অগ্রসর শাখা হচ্ছে আইসিটি। আইসিটি মানুষের কাজকে যেমনি সহজতর করেছে, তেমনি কাজে এনেছে অভাবনীয় গতি। করেছে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব। একজন প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য যা কখনোই সম্ভব ছিল না, সে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে আজকের আইসিটি। তাই আইসিটিকে পুরোদমে কাজে লাগাতে হবে দেশের যথাসম্ভব বেশিসংখ্যক প্রতিবন্ধীর জীবনে। এর মাধ্যমে তাদের করে তুলতে হবে সমাজের কাঙ্ক্ষিত জন। অতএব প্রতিবন্ধীদের উপযোগী তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবনে ও ব্যবহারে আমাদের হতে হবে আরো অনেক বেশি হারে মনোযোগী। জোরালো করে তুলতে হবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও অন্যান্য দেশের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতা। এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। সে তাগিদটুকু সংশ্লিষ্ট সবার জন্য।

শুধু প্রতিবন্ধী কেনো, একজন সাধারণ ও সবদিক থেকে সক্ষম মানুষও যদি তার কাজের পরিধি বাড়াতে চান, কাজের গতি শতগুণে বাড়িয়ে তুলতে চান, তার মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে আইসিটি। একথা যেনো আমরা ভুলে না যাই, যে উপলব্ধি নিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প ঘোষিত, সে উপলব্ধি থেকে আমরা যেনো সরে না যাই। সঠিক দর্শন আর দূরদৃষ্টি নিয়ে এক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবেই তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে নিশ্চিত হবে আমাদের জাতীয় পদচারণা। বাংলাভাষার কমপিউটারায়ন উঠে আসবে নতুন উচ্চতায়।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : vashkar79@hotmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
২১ মার্চ ২০১১, ৬:০৩ AM
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস