• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আইইউবি, বিসিসি এবং বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয় আয়োজন করছে : ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কমপিউটার প্রসেসিং অব বাংলা-২০১১’
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ড. এম. এ. সোবহান
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
থ্রীডি ম্যাক্স
তথ্যসূত্র:
ফিচার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আইইউবি, বিসিসি এবং বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয় আয়োজন করছে : ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কমপিউটার প্রসেসিং অব বাংলা-২০১১’

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে বাংলাভাষা আন্দোলনের মহান ভাষা-শহীদদের স্মরণে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ তথা আইইউবি’র স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কমপিউটার সায়েন্স এবং বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল তথা বিসিসি, বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কমপিউটার প্রসেসিং অব বাংলা-২০১১’ শীর্ষক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা আইসিসিপিবি-২০১১। এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আইইউবির নবনির্মিত বসুন্ধরা ক্যাম্পাসে ২০১১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে কাজ করছে মাসিক কমপিউটার জগৎ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে কথা রয়েছে।

এ সম্মেলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও ভারত থেকে পাঠানো অনেক গবেষকের বাংলাভাষার ওপর গবেষণা ও উন্নয়নমূলক প্রবন্ধ গৃহীত হয়েছে। প্রবন্ধগুলোতে বাংলা ভাষার ওপর করণীয় গবেষণার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান সরকারের ঘোষিত রূপকল্প : ২০২১ বা ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বাংলাভাষার কমপিউটারায়ন তথা বাংলাকে অধিকতর ইন্টারনেট ও ওয়েববান্ধব করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সেদিক থেকে আইসিসিপিবি-২০১১ সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগে সরকারের সহযোগিতা তার ইতিবাচক মনোভাবেরই পরিচায়ক। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের এক দশক আগে এ সম্মেলনে বাংলাভাষার ওপর কমপিউটারভিত্তিক বিভিন্ন গবেষণার ফল এবং এখানে গৃহীত সুপারিশমালা গোটা দেশকে ইন্টারনেট ও ওয়েব মাধ্যমে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অবদান রাখবে বলে এ লেখক মনে করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন প্রতিবছর আয়োজন করার প্রয়োজন রয়েছে। এতে করে রূপকল্প : ২০২১ বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সেতুবন্ধন সুদৃঢ় হবে। তা ছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অগ্রগতি পর্যালোচনা করার জন্য প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে উন্নয়নশীল ডিজিটাল দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক আইসিটি সম্মেলন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।



ভাষা শহীদ এবং মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে আইইউবি প্রথমে একটি দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করে ২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। আইইউবির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কমপিউটার সায়েন্সের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মেদ আনোয়ার এবং ওই সময়ে আইইউবিতে লিয়েনে কর্মরত প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান একটি কর্মশালা আয়োজনে উদ্যোগী হন। এ কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল কমপিউটার প্রসেসিং অব বাংলা বা কমপিউটারের সাহায্যে বাংলাভাষার ওপর গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকান্ড তথা বাংলা ভাষার কমপিউটারায়নের প্রকৃত অবস্থা জানা। এ কর্মশালায় উপস্থিত বাংলাভাষার ওপর যারা গবেষণা করছেন, তারা খুবই উৎসাহবোধ করেন। আরো ব্যাপক আকারে এ বিষয়ে মতামত বিনিময়ের জন্য কর্মশালায় ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এনসিসিপিবি-২০০৪

২০০৩ সালের কর্মশালায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হয় কমপিউটারে বাংলা প্রসেসিংয়ের ওপর প্রথম জাতীয় সম্মেলন। এর নাম দেয়া হয়- ‘প্রথম ন্যাশনাল কনফারেন্স অন কমপিউটার প্রসেসিং অব বাংলা ২০০৪’ বা এনসিসিপিবি-২০০৪। এভাবে আইইউবিতে সূচনা হয় এনসিসিপিবি নামের একটি সম্মেলনের। এনসিসিপিবি-২০০৪-এ উপস্থাপতি হয় ২৩টি গবেষণা প্রবন্ধ। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির প্রফেসর এম এ মোত্তালিব উপস্থাপন করেন ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাভাষার ওপর কমপিউটারভিত্তিক গবেষণাকর্মের পর্যালোচনামূলক মূল প্রবন্ধ। বাংলাভাষার কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী গবেষণা হয়েছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তিনি তুলে ধরেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের আরো গবেষণা করতে হবে, তার ওপর আলোকপাত করেন।

এই সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধগুলোতে নিচে বর্ণিত বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো :

০১. বাংলা কীবোর্ড ড্রাইভার তৈরি;

০২. বাংলা বর্ণমালার কোডিং;

০৩. বাংলা কীবোর্ড লে-আউট ডিজাইন,

০৪. স্বরবর্ণসমূহের ফোনেমের প্রকাশিত ফ্রিকোয়েন্সি ট্র্যাকিং;

০৫. বাংলাভাষায় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ও এর কম্পাইলার তৈরি;

০৬. ১২ সেগমেন্টে বাংলা সংখ্যা ডিসপ্লে পদ্ধতি;

০৭. ওয়েবে ত্রিমাত্রার বাংলা লিপি ধারণ;

০৮. শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি;

০৯. ইংরেজি থেকে বাংলায় মেশিন অনুবাদ;

১০. বাংলা স্পিচ অ্যানালাইসিস, সিনথেসিস ও রিকগনিশন;

১১. বাংলা সিনট্যাক্স অ্যানালাইসিস;

১২. বাংলা ভাষার ওপর ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং-এনএলপি ইত্যাদি।

এনসিসিপিবি-২০০৪ সম্মেলন শেষে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একই বিষয়ে দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন তথা এনসিসিপিবি-২০০৫ আয়োজন করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এনসিসিপিবি-২০০৫

২০০৪ সালের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০০৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হয় এনসিসিপিবি-২০০৫।

এ সম্মেলনে ৩৮টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। প্রবন্ধগুলোতে নিচে বর্ণিত বিষয়সমূহ প্রাধান্য পায় :

০১. বাংলা ভাষার ওপর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত প্রযুক্তি ও নীতি-প্রশ্নের পর্যালোচনা;

০২. বাংলা ফোনেম প্রোডাকশন অ্যান্ড পারসেপশন; ০৩. বাংলা স্বরবর্ণের ওপর বিশদ বিশ্লেষণ;

০৪. বাংলা বাক্যের পার্সার অ্যালগরিদম তৈরি;

০৫. ইংরেজি থেকে বাংলায় মেশিন অনুবাদ;

০৬. ওয়েবভিত্তিক বাংলা কী-বোর্ডের এসকিউএল ইন্টারফেস;

০৭. বাংলা এনকোডিং;

০৮. বাংলা থেকে বাংলা অভিধান;

০৯. টেক্সট টু স্পিচ সিনথেসিসের জন্য ফোনেম স্পিচ ইনভেনটরি;

১০. নিউরাল নেটওয়ার্কভিত্তিক বাংলা টেক্সটের শ্রেণীবিন্যাস;

১১. বাংলা ভাষায় পিকেআই (পাবলিক কী ইনফ্রাস্ট্রাকচার) বাস্তবায়ন; ১২. এছাড়া আরও অন্যান্য দিকের ওপর আলোকপাত করা হয়।

এনসিসিপিবি-২০০৫ সম্মেলন শেষে ২০০৬ সালে এই সম্মেলনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এভাবে সূচিত হলো আইসিসিপিবি নামের আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

আইসিসিপিবি-২০০৬

২০০৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আইসিসিপিবি। প্রথম আইসিসিপিবি-২০০৬ সম্মেলনে ৩১টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। মূল প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল বাংলা কমপিউটেশনাল লিঙ্গুয়িস্টিক। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পশ্চিমাবিশ্বের ভাষাগুলোর ওপর কমপিউটেশনাল লিঙ্গুয়িস্টিক ক্ষেত্রে গবেষণার ব্যাপকতা এবং ক্ষেত্রগুলো খুবই গভীর। বাংলাভাষার ওপর এক্ষেত্রে গবেষণা এখন শুধু তার শৈশবে। ইন্টারনেটের তথ্যভান্ডারে বাংলা ভাষার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। যা-ও এক-আধটু আছে তা সংরক্ষণ, আবার ফিরিয়ে আনা এবং সঞ্চালনের জন্যও আমাদের প্রস্ত্ততি নগণ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এসব অসুবিধা অবশ্যই দূর করতে হবে। এ লেখায় ‘বাংলা কমপিউটেশনাল লিঙ্গুয়িস্টিক’-এর ওপর অনেক সুপারিশ করা হয়। কিছু সুপারিশ উল্লেখ করা হলো :

০১. বাংলা ডকুমেন্ট প্রসেসিং : ডকুমেন্ট সেগমেন্টেশন;

০২. বাংলা ডকুমেন্ট প্রসেসিং : ওসিআর;

০৩. বাংলা ডকুমেন্ট প্রসেসিং : মেশিন ট্রানস্লেশন- ইংলিশ টু বাংলা এবং বাংলা টু ইংলিশ;

০৪. এনএলপি : বাংলা সিনটেক্স অ্যান্ড সিম্যান্টিকস;

০৫. এনএলপি : বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ স্ট্যাটিস্টিকস;

০৬. এনএলপি : বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ আন্ডারস্ট্যান্ডিং,

০৭. স্পিচ প্রসেসিং : বাংলা স্পিচ পারসেপশন;

০৮. স্পিচ প্রসেসিং : বাংলা স্পিচ অ্যানালাইসিস;

০৯. স্পিচ প্রসেসিং : বাংলা স্পিচ রিকগনিশন;

১০. স্পিচ প্রসেসিং : বাংলা স্পিচ সিনথেসিস।

আইসিসিপিবি-২০০৬ সম্মেলনে অন্যান্য প্রবন্ধে নিচে বর্ণিত বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। উপরে উল্লিখিত সুপারিশ ছাড়াও এ যাবৎ আইসিসিআইটি সম্মেলনগুলোর বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ অংশে প্রকাশিত প্রবন্ধসমূহের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছেন মূল প্রবন্ধের লেখকেরা। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গবেষণার পরিমাণ খুবই নগণ্য।

আইসিসিপিবি-২০০৬-এ প্রকাশিত অন্যান্য প্রবন্ধে নিচে বর্ণিত বিষয়গুলোও আলোচিত হয়েছে :

০১. ইংরেজি থেকে বাংলা ট্রান্সলিটারেশন সংক্রান্ত একটি বিশদ পদ্ধতি;

০২. বাংলা টেক্সট শ্রেণীবিন্যাস;

০৩. প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বাংলা কীবোর্ডের প্রস্তাবনা;

০৪. ইউনিকোড সমন্বয়ন এবং সহজে ব্যবহারোপযোগী কীবোর্ড তৈরি;

০৫. বাংলা মরফো-ফনোলজিক্যাল রিরাইট রুলভিত্তিক মডেলের প্রস্তাব;

০৬. নিরাপদ এসএমএস পাঠানোর পদ্ধতি উদ্ভাবন;

০৭. ইংরেজি থেকে বাংলায় মেশিন অনুবাদের ওপর ১৭ বিট ইনফরমেশন কোড উদ্ভাবন;

০৮. বাংলা বাক্যের অর্থবোধক বিশ্লেষণ;

০৯. ছবিসমৃদ্ধ কোন ডকুমেন্টকে ইলেকট্রনিক ফর্মে জিইউআই ফরমেটে আনা ও সংরক্ষণ;

১০. হ্যাঁ ও না সূচক বাক্যের ওপর পারসিং অ্যালগরিদম উদ্ভাবন;

১১. বাংলা বর্ণমালায় ব্যবহৃত চিহ্ন চেনা;

১২. বাংলা বানান পরীক্ষা পদ্ধতি;

১৩. বাংলা লিপিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউনিকোড সম্পূরক করপাসে রূপান্তর;

১৪. ইউনিকোড উপযোগী লিপির জন্য সিমেট্রিক কী অ্যানক্রিপশন অ্যালগরিদম উদ্ভাবন; এবং

১৫. বাংলায় শব্দভিত্তিক মেনু চালুর পদ্ধতি উদ্ভাবন।

আইসিসিপিবি-২০০৬ সম্মেলন শেষে ২০০৭ সালে এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে, যেমন : সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করা- যা ঢাকায় বেশ ব্যয়বহুল। এ জন্য আমরা আইইউবির পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকি। বিশেষ কারণে আইইউবি ২০০৯ সালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি তথা এমআইএসটির সাথে যৌথভাবে আইসিসিআইটি-২০০৯ সম্মেলন আয়োজন করে। সুতরাং একই বছরে একই সাথে আইসিসিআইটি-২০০৯ এবং আইসিসিপিবি-২০০৯ সম্মেলন আয়োজন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আইইউবি তার নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলে আসায় এখন থেকে প্রতিবছর আইসিসিপিবি সম্মেলন আয়োজন করায় আর কোনো সমস্যা নেই।

আইসিসিপিবি-২০১১

এবার আইইউবি ও বিসিসি যৌথভাবে বাংলা ভাষায় গবেষণা ও উন্নয়নবিষয়ক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি আইইউবির নিজস্ব নবনির্মিত বসুন্ধরা ক্যাম্পাসে। সরকার সাড়া দিয়েছে বেসরকারি উদ্যোক্তার সাথে। সুতরাং আইসিসিপিবি-২০১১ সম্মেলনকে কাজে লাগাতে চাই আমরা। এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত এবং বাংলাদেশ থেকে আমরা গবেষণা প্রবন্ধ পেয়েছি। বাংলাদেশ ইউনিকোড কনসোটিয়ামের সদস্যপদ পাওয়ায় এ জাতীয় সম্মেলন এখন বাংলা ভাষার ব্যবহারের তথ্যপ্রযুক্তিতে সঞ্চালন বাড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান সভ্যতায় যেকোনো জাতির ভাষার কমপিউটায়নের মাত্রা সে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার ওপর ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশই তাদের মাতৃভাষার কমপিউটায়নে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিশ্বায়নের যুগে ভাষাকে জাতীয় ভৌগোলিক সীমারেখার গন্ডির বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম স্থাপিত হয়েছে। এর সাহায্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলোকে বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ইউনিকোড সংস্থা প্রতিটি ভাষার জন্য তার বর্ণমালা এবং কোডসেট নির্ধারণ করে দিয়েছে। প্রমিত কীবোর্ড নির্ধারণ করে ইন্টারনেটবান্ধব লিপি এবং কীবোর্ড তৈরি করে নিতে হবে আমাদেরকে। আজকাল প্রায়ই বিভিন্ন দেশ তাদের ওয়েবসাইটগুলো মাতৃভাষায় লিখছে, যা ইন্টারনেট খুললেই দেখা যায়। বিশেষ করে চীনা ভাষার আগ্রাসনটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। উল্লেখ্য, চীন প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এখন পৃথিবীর সব থেকে দ্রুত অগ্রসরমান দেশ। আমরা কিছুতেই পিছিয়ে থাকতে পারি না।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির রূপকল্প ঘোষণা করেছে ২০০৯ সালে। এ জন্য বাংলা ভাষার কমপিউটারায়ন গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করবে। দেশে ডিজিটাল সরকার এবং সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালাতে হলে প্রথমেই বাংলা ভাষার কমপিউটারায়ন প্রয়োজন এবং তা ইন্টারনেটবান্ধব হতে হবে। সুতরাং আমাদের ভাষার যা কিছু দৈন্য আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে অতিদ্রুত। এ কাজে আমরা এই আইসিসিপিবি-২০১১ সম্মেলন থেকে দিকনির্দেশনা পেতে চাই।

উপসংহার

আইইউবি কমপিউটার প্রসেসিং অব বাংলার ওপর ২০০৩ সালে ১টি কর্মশালা, ২০০৪ সালে ১টি জাতীয় সম্মেলন, ২০০৫ সালে আরেকটি জাতীয় সম্মেলন এবং ২০০৬ সালে ১টি আন্তর্জাতিক সম্মেলনসহ মোট ৪টি সম্মেলনের আয়োজন করে। মাঝে ৪ বছর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। এবার ২০১১ সালে আইইউবি এবং বিসিসি যৌথভাবে আয়োজন করতে যাচ্ছে আইসিসিপিবি-২০১১ শীর্ষক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

এখানে একটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই। আমরা সম্মেলনসমূহে উপস্থাপিত প্রবন্ধসমূহ থেকে দেখতে পাই এক্ষেত্রে গবেষণার পরিমাণ এবং বিষয়গুলোর বিস্তার মোটেই আশানুরূপ নয়। বুকের রক্তে অর্জিত বাংলাভাষার ওপর গবেষণায় আমাদের কার্পণ্য, অনাগ্রহ, গাফিলতি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই রক্তদান শিখিয়েছে লাখো শহীদকে স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে। একুশের রক্তদানই কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করেছে।

তাই এই প্রাণের ভাষার ওপর সব ধরনের গবেষণার জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। জাতীয়ভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এ উদ্দেশ্যে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে বাংলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ কমপিউটারায়ন একান্ত প্রয়োজন।

একটি কথা মনে রাখা দরকার, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ডিজিটাল বাংলা পরষ্পরের সম্পূরক। একটি ছাড়া অন্যটির কথা ভাবা যায় না। নিচে কিছু সুপারিশ পেশ করা হলো :

০১.
সরকারি-বেসরকারি বিশ্বাবদ্যালয়গুলোতে কমপিউটেশনাল লিঙ্গুয়িস্টিক্স ক্ষেত্রে পড়াশোনা ও গবেষণা ব্যাপকভাবে শুরু করতে হবে।

০২.
বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে কমপিউটার প্রসেসিং অব বাংলা ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ গবেষণাপ্রকল্প ও অর্থ প্রদান করতে হবে।

০৩.
বাংলা একাডেমিকে বাংলা পুস্তক প্রকাশ, একুশে বইমেলা আয়োজন ইত্যাদি ছাড়াও কমপিউটার প্রসেসিং অব বাংলার ওপর প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার, সফ্টওয়্যার ও জনবলসহ একটি বিভাগ খুলতে হবে।

লেখক : প্রফেসর, ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sobham30@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস