গুগলের সবচেয়ে বড় পরিচয়, এটি একটি সার্চ ইঞ্জিন। কিন্তু এরপরও গত কয়েক বছরে গুগল বেশ কিছু মজার ও প্রয়োজনীয় ফ্রি গুগল টুল ডেভেলপ করেছে। এর ফলে উপকারটা হচ্ছে : আমরা অনলাইনে কোনো কিছু সহজে খুঁজে পাওয়ার উন্নততর উপায় হাতের কাছে পেয়েছি, সুযোগ এসেছে অনলাইনে ফুল-ব্রাউজ প্রোগ্রাম উপভোগের, যা শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে নামিদামি বাণিজ্যিক সব সফটওয়্যারের। এ লেখায় আমরা তেমনই সেরা ৫ ফ্রি গুগল টুলের ওপর আলোকপাতের প্রয়াস পাব।
সেরা ৫ ফ্রি গুগল টুলের আলোচনায় যাওয়ার আগে উল্লেখ করা ভালো : এগুলোর বেশিরভাগই অনলাইনভিত্তিক ও ব্রাউজারের আওতায় রান করলেও এগুলোর কয়েকটি স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপ্লিকেশনের মতো ডাউনলোড ও ইনস্টল করা প্রয়োজন হবে। বেশিরভাগ টুল লগইন করতে হবে গুগল অ্যাকাউন্টে। আপনার যদি কোনো গুগল অ্যাকাউন্ট না থাকে, তবে একটি ফ্রি গুগল অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলুন গুগল ওয়েবসাইটে।
স্কেচআপ (Sketchup)
‘স্কেচআপ’ একটি অ্যাপ্লিকেশন। এটি টুলগুলোকে থ্রিডি মডেল ক্রিয়েট ও ম্যানিপুলেট করার সুযোগ করে দেয়। অন্যসব গুগল টুল থেকে স্কেচআপ একটু ব্যতিক্রমী। স্কেচআপ অনলাইনে ব্যবহার করা যায় না। এর পরিবর্তে এটি ডাউনলোড করে আপনার কমপিউটারে ইনস্টল করা প্রয়োজন। থ্রিডি অবজেক্ট ক্রিয়েট করার ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত জটিলতা থাকার কারণে স্কেচআপের বরং রয়েছে একটি পরিব্যাপ্ত লার্নিং কার্ভ। তারপরও ইনস্ট্রাক্টর উইন্ডো আপনাকে গাইড করতে সাহায্য করবে প্রতিটি টুলের মাধ্যমে, যদি আপনি ভালো করে এর মৌলিক বিষয়গুলো বুঝে নিতে পারেন। তখন দেখতে পাবেন স্কেচআপ কতটুকু শক্তিশালী হতে পারে।
এটি ছোট ছোট কাজের উপযোগী। যেমন : জেনে নেয়া যায় কিভাবে সর্বোত্তমভাবে একটি কক্ষের আসবাবপত্র নতুন করে সাজানো যায়। তা ছাড়া এটি সাহায্য করবে আরো বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা করতে, যেমন : বাড়ি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা।
ট্রেন্ডস (Trends)
‘ট্রেন্ডস’ একটি আকর্ষণীয় মনোমুগ্ধকর গুগল টুল। এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ। শুধু একটি সার্চ টার্মে এন্টার করে ‘সার্চ ট্রেন্ডস’-এ ক্লিক করুন। রেজাল্ট দেখা যাবে একটি চার্টে। পছন্দের সার্চ টার্ম সম্পর্কে ২০০৪ সাল থেকে বিস্তারিত জনপ্রিয়তার বর্ণনা পাওয়া যাবে এ চার্টে। সার্চ টার্মগুলোর মাঝে কমা বসিয়ে মাল্টিপল টার্মের সার্চ চালানো সম্ভব। আর এর সবগুলোর রেজাল্টই একই গ্রাফে দেখা যাবে। যেমন : ‘notebook’ টার্মটি সম্পর্কে একটি সার্চ চালু করুন। চার্টে দেখা যাবে, এই টার্মটি ২০০৭ সালের আগে পর্যন্ত গুগল সার্চে প্রায় অস্তিত্বহীন। এরপর থেকে এর সার্চ হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করে। এটি কোনো কো-একজিসটেন্স নয় যে, ২০০৭ সালে আসুস চালু করে বিশ্বের প্রথম নোটবুক। পেজটি স্ক্রলডাউন করুন। আপনি আরো তথ্য দেখতে পাবেন। যেমন : জানতে পারবেন পৃথিবীর কোন দেশ এই টার্মটি ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি সার্চ করেছে। বিজনেসের ক্ষেত্রেও এই টুলের আবেদন সুস্পষ্ট। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো দেখতে পারে বিভিন্ন দেশে বছরের বিভিন্ন মাসে কোনো নির্দিষ্ট পণ্য কতটুকু জনপ্রিয় ছিল। এটি মানুষের আচরণ সম্পর্কে জানার ব্যাপারেও খুবই আকর্ষণীয়। আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট আরো বেশিসংখ্যক মানুষের নজরে আনতে এটি আপনাকে সহায়তা করতে পারে। ধন্যবাদ পেতে পারে ট্রেন্ডস চার্ট। এটি পিনপয়েন্টিং করতে পারে সংশ্লিষ্ট খবর ও ঘোষণা। এর মাধ্যমে দেখা সম্ভব কী করে বাস্তব জীবনের ঘটনাগুলো চারপাশে প্রভাব ফেলছে।
অ্যালার্ট (Alerts)
আপনি যদি সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণার অপেক্ষায় থাকেন, কিংবা যদি একই সার্চ বারবার চালিয়ে হয়রান হয়ে থাকেন, তবে গুগলের ‘অ্যালার্ট’ টুল আপনাকে সাহায্য করতে পারে। সংশ্লিষ্ট তথ্যটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ হওয়া মাত্র অ্যালার্ট টুলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা আপনাকে নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেবে। অতএব আপনি একটি অ্যালার্ট টুল সেটআপ করে নিতে পারেন। আপনার নামোল্লেখ করে কোনো ওয়েবসাইটে কোনো কিছু ছাপা হলে অ্যালার্ট টুল তা আপনাকে জানাবে। তা করার জন্য ‘সার্চ টার্ম’ বক্সে আপনার নাম টাইপ করুন। আপনার নামটি উক্তি চিহ্নের মাঝে রাখুন। তাহলে যেসব কনটেন্টে আপনার পুরো নাম থাকবে, সেগুলো অ্যালার্টে আবির্ভূত হবে। আপনাকে বেছে নিতে হবে ড্রপডাউন বক্স ব্যবহার করে কী ধরনের সাইট মনিটর করতে চান। এরপর ই-মেইল নোটিফিকেশনের ফ্রিকোয়েন্সি (কত সময় পরপর মনিটর হবে) ও সাইজ ঠিক করে দিন।
বাই ডিফল্ট আপডেট ই-মেইল আপনার সংশ্লিষ্ট গুগল অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। সবশেষে ‘ক্রিয়েট অ্যালার্ট’-এ ক্লিক করুন সেটিং সেভ করতে। এখন যখনই গুগল আপনার অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কোনো সাইট উন্মুক্ত করবে, তখনই গুগল আপনার কাছে একটি ই-মেইল পাঠাবে।
সাইটস (Sites)
কাজের মাত্রা ও জটিলতা বিবেচনা করে অনেকেই নিরুৎসাহ বোধ করেন তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ডিজাইন করার ব্যাপারে। ‘গুগল সাইটস’ হচ্ছে সহজে ব্যবহারোপযোগী একটি টুল। এর সাহায্যে আপনি চাইলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যকর ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এই ওয়েবসাইটটি তৈরি হয় একটি সহজ ধরন বা ফর্ম ব্যবহার করে। একবার তা আপ করতে পারলেই চালু হয়ে যাবে। এটি সহজে সম্প্রসারণ ও সম্পাদনা করা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, এ জন্য এইচটিএমএল কিংবা অন্য কোনো প্রোগ্রামের জ্ঞান থাকার প্রয়োজন নেই।
এ কাজটি শুরু করতে ‘সাইটস’ হোমপেজে লগঅন করুন। এরপর ক্লিক করুন ‘ক্রিয়েট সাইট’-এ। আপনার সাইটের জন্য একটি টেম্পলেট বেছে নিন। এর একটি নাম দিন। এরপর একটি ওয়ের ঠিকানা বাছাই করুন। আপনার মৌল ওয়েবসাইটটি এখন প্রদর্শিত হবে।
সাইটে কনটেন্ট যোগ করার কাজ শুরু করতে ‘এডিট পেজ’ বাটনে ক্লিক করুন। সাইটের বডিতে টেক্সট ইনসার্ট করার পাশাপাশি শিরোনাম পরিবর্তন, অন্য সাইটে লিঙ্ক দেয়া, ছবি ও ডকুমেন্ট ইনসার্ট করা সম্ভব। এডিটিং শেষ করার পর ‘সেভ’-এ ক্লিক করুন। এরপর আপডেট সাইট প্রদর্শিত হবে।
‘মোর অ্যাকশনস’ বাটনে ক্লিক করে এবং ‘ম্যানেজ সাইট’ সিলেক্ট করে আপনি সাইটের সাইজ সেট করতে পারবেন। পেজ ডিলিট করতে পাবেন। অন্যদের সাথে সাইট শেয়ার করতে পারবেন। আপনি চাইলে এটিকে প্রাইভেট সাইট করতে পারেন। তখন শুধু আমন্ত্রিত অতিথিরাই এ সাইট দেখতে পারবেন। একই সাথে আপনি অন্য লোকদের অনুমতি দিতে পারেন সাইটটির কনটেন্ট ও কাঠামো আপডেট করার জন্য।
কাস্টম সার্চ (Castom search)
বলা হয়, জেনারেল টপিকস সার্চিং করার জন্য গুগলস সার্চ ইঞ্জিন এক মহা সার্চ ইঞ্জিন। কিন্তু মাঝেমধ্যে আমরা এ ক্ষেত্রে পাই পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক কিছু ওয়েবসাইট। ‘কাস্টম সার্চ’ টুলটির কাজ ঠিক সাধারণ একটি গুগল সার্চের মতো। কিন্তু এটি আপনাকে সুযোগ করে দেবে রেজাল্টগুলোকে একটিমাত্র একক সাইটে সীমিত করতে। অতএব আপনি একটি কাস্টম সার্চ ক্রিয়েট করতে পারেন, যা আপনাকে পেজগুলোকে কমপিউটারেকটিভ ওয়েবসাইট থেকে রিটার্ন করে দেবে। কাস্টম সার্চ আপনাকে সুযোগ দেবে কতগুলো সাইটের সংগ্রহ সার্চ করার জন্য একটি সার্চ ক্রিয়েটের। আপনার যদি বিশেষ কোনো শখ থেকে থাকে, তাহলে এর মাধ্যমে আপনি দ্রুত আপনার পছন্দের সব হবি সাইট নিয়মিত সার্চ করতে পারবেন।
আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করে থাকেন, তবে আপনার সাইটে কাস্টমাইজড সার্চ টুল অ্যাড করতে পারেন। কপি ও পেস্ট করার জন্য গুগল আপনাকে সব এইচটিএমএল কোড ব্যবহারের সুযোগ দেবে। ‘কাস্টম সার্চ’ টুলকে কার্যকর করতে চাইলে গুগলের কাস্টম সার্চ ওয়েবসাইটে ঢুকে পড়ুন। ‘ক্রিয়েট অ্যা কাস্টম সার্চ ইঞ্জিন’-এ ক্লিক করুন। সাইন-ইন করতে বলা হলে সাইন-ইন করুন। আপনার সার্চের একটি নাম ও বর্ণনা দিন। এরপর সাইটে সার্চ বক্সে লিখুন www.computeractive.co.uk অ্যাড্রেস। কন্টিনিউ করার জন্য ‘নেক্সট’-এ ক্লিক করুন।
আপনার সার্চ রেজাল্ট পেজের জন্য একটি স্টাইল বেছে নিন। এরপর ‘নেক্সট’-এ ক্লিক করুন। তা করার পর iGoogle-এ যান এবং ক্লিক করুন ‘অ্যাড গুগল কাস্টম সার্চ কনসোল টু আইগুগল’-এ। এখন আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে আপনার আইগুগল পেজে। সেখানে পেজের ওপর অন্যান্য মডিউলের পাশাপাশি ভেসে উঠবে ব্যবহারের জন্য প্রস্ত্তত নতুন কাস্টম সার্চ বক্স। এই প্রক্রিয়া বারবার প্রয়োগ করে আপনি অতিরিক্ত আরো কাস্টম সার্চ অ্যাড করতে পারবেন।
একটি একক ওয়েবসাইট সার্চ করার জন্য একটি কাস্টমাইজড টুল ক্রিয়েট করুন। গুগল কাস্টম সার্চে ঢুকে ‘ক্রিয়েট অ্যা কাস্টম সার্চ ইঞ্জিন’-এ ক্লিক করুন। সাইন করতে বলা হলে সাইন-ইন করুন। আপনার সার্চের একটি নাম ও বর্ণনা দিন। এরপর ঢুকে পড়ুন ‘সাইট টু সার্চ’ বক্সে, www.computeractive.co.uk অ্যাড্রেস এন্টার করুন। কন্টিনিউ করতে ‘নেক্সট’-এ ক্লিক করুন। রেজাল্ট পেজের জন্য একটি স্টাইল বেছে নিন। এরপর ‘নেক্সট’-এ ক্লিক করুন। তা করার পর গুগল কাস্টম সার্চ কনসোল ডাউনলোড পেজে যান। এবার ক্লিক করুন ‘অ্যাড গুগল কাস্টম সার্চ কনসোল টু আইগুগল’-এ।
এখন আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে আপনার আইগুগল পেজে। সেখানে প্রদর্শিত হবে পেজের অন্যান্য মডিউলের পাশাপাশি ব্যবহারের জন্য প্রস্ত্তত নতুন কাস্টম সার্চবক্স। এ প্রক্রিয়া পরপর প্রয়োগ করে আপনি আরো অতিরিক্ত কাস্টম সার্চ অ্যাড করতে পারবেন।
কাস্টম সার্চের বিকল্প কী? গুগলই একমাত্র ফ্রি অনলাইন সেবাদাতা কোম্পানি নয়। আপনি যদি ওয়েব সার্চে কিছুটা সময় দেন, তবে ফ্রি টুলের পুরো সংগ্রহটাই পেয়ে যাবেন।
Jaycut হচ্ছে একটি ফ্রি অনলাইন ভিডিও-এডিটিং অ্যাপ্লিকেশন। এটি আপনাকে সুযোগ করে দেবে একটি টাইমলাইন ব্যবহার করে ভিডিও আপলোড ও এগুলোকে কমপাইল করার। সুযোগ পাবেন প্রচুর স্পেশাল ইফেক্ট ও ট্রানজিশন যোগ করার। একবার আপনার মুভি তৈরি হয়ে গেলে, তা আপনি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন অথবা তা ডাউনলোড করতে পারবেন আইফোনে দেখার জন্য অপটিমাইজড করা ফরমেটসহ বিভিন্ন ফরমেটে।
Zamzar আরেকটি জনপ্রিয় অনলাইন সার্ভিস। এটি আপনাকে সুযোগ করে দেবে প্রচুরসংখ্যক ফরমেটে ফাইল কনভার্টের। যদি আপনার একটি পিডিএফ ফাইল ওয়ার্ড ডকুমেন্টে কনভার্ট করতে চান, তাহলে ঢুকে পড়ুন জামজার সাইটে। আপনার পিডিএফ ফাইল আপলোড করুন। তা .doc-এ কনভার্ট করার জন্য চোজ করুন এবং আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস এন্টার করুন। তখন কনভার্টেড ফাইলের একটি লিঙ্ক ই-মেইল করে আপনার কাছে পাঠানো হবে।
অন্যান্য ফ্রি টুলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অফিস স্যুট Zoho এবং Adrive, যা আপনাকে দেবে ৫০ গিগাবাইট পর্যন্ত ফ্রি অনলাইন স্টোরেজ স্পেস। কিছু কিছু সাইট বিদ্যমান গুগল টুলের ওপর ভিত্তি করে ফ্রি অ্যাপ্লিকেশন অফার করে থাকে। এর একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে : ড্রাফট লজিকের ‘ডসটেন্স ক্যালকুলেটর’। এটি অফ-রোডের দূরত্ব প্লট করতে ব্যবহার করে গুগল ম্যাপস। এটি সাইকেল ও পদব্রজে ভ্রমণকারীদের জন্য খুবই উপযোগী। এর মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন কতটুকু পথ পাড়ি দিলেন।
কজ ওয়েব