• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বাংলা কমপিউটিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক অবদান
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সৈয়দ হাসান মাহমুদ
মোট লেখা:১৪৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
কমপিউটারে  বাংলা ব্যবহার
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বাংলা কমপিউটিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক অবদান

ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস, বাংলা ভাষার মাস, বাঙালির গর্বের মাস। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জববারসহ অনেকে। আমাদের ভাষার প্রতিটি অক্ষর তাদের এ মহান আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলা পৃথিবীর সমৃদ্ধতম ভাষাগুলোর একটি। এর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না এমন কিছু নেই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রকাশ-ক্ষমতা আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিকেও ছাপিয়ে গেছে। বাংলা ভাষা সময়ের সাথে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর পর্যায়ে উঠে আসছে। বাংলা ভাষা যে তথ্যপ্রযুক্তিতে যথার্থভাবেই প্রয়োগযোগ্য একটি ভাষা, সে বিশ্বাসের মাত্রা ধীরে ধীরে সবার মধ্যে বেড়ে উঠছে। বিশ্বায়নের এ যুগে ইউনিকোডের সাহায্যে বাংলাকে বিশ্বে আমরা ছড়িয়ে দিতে পারি কমপিউটার প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে।

বিশ্বের ৪৫ কোটি মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। ভাষাভাষি মানুষের সংখ্যা অনুসারে বাংলা ভাষার অবস্থান চতুর্থ। কিন্তু তারপরও আমাদের এ ভাষার যথেষ্ট মূল্যায়ন হয়নি। কমপিউটারের দুনিয়ায় ও অনলাইনে ইংরেজির পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান, ইতালিয়ান, অ্যারাবিক, ডাচ, পর্তুগিজ, চাইনিজ, জাপানিজ, কোরিয়ান ইত্যাদি ভাষার যেমন রাজত্ব রয়েছে, সে তুলনায় বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসার বেশ কম। বাংলা যেখানে এত বড় জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা, সেখানে অনলাইনে ও অন্যান্য প্লাটফর্মে বাংলা কমপিউটিংয়ের প্রসারের আগে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভাষা হিন্দি ও উর্দুর অগ্রগতি বাঙালির জন্য লজ্জার। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদেরকে প্রযুক্তির সাথে আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন হবে কমপিউটার ও ইন্টারনেটের যথাযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করা। কমপিউটারের মাধ্যমে বাংলার বিস্তার ঘটানোর জন্য আমাদের হাতিয়ার হিসেবে রয়েছে ইউনিকোড। ইউনিকোডে বাংলা যুক্ত হওয়ার বাঙালির স্বপ্নের পালে লেগেছে হাওয়া। তাই আমাদের স্বপ্নতরী তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও বাঙালির কঠোর শ্রম সাধনায়। আমাদের জন্য আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, বাংলা কমপিউটিংয়ের প্রসার এখন বেশ ভালো গতিতেই এগোচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাঙালি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে অচিরেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব এবং আমাদের ভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা সবার সামনে তুলে ধরতে পারব।

বাংলা কমপিউটিংয়ে অবদান রাখা কিছু প্রতিষ্ঠান

বাংলা কমপিউটিংয়ের প্রচার ও প্রসারে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- আনন্দ কমপিউটার্স, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার ও প্রকৌশল বিভাগের অধীনে থাকা সিআরবিএলপি, অঙ্কুর গ্রুপ, ওমাইক্রনল্যাব, একুশে, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক তথা বিডিওএসএন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় তথা নিকস, প্রশিকা, আইইসিবি, উবুন্টু বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ইত্যাদি। সংক্ষেপে তাদের পরিচয় ও কার্যক্রম তুলে ধরা হলো এ প্রতিবেদনে।

আনন্দ কমপিউটার্স



বাংলা কমপিউটিংয়ে এ প্রতিষ্ঠানের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানে দেশের প্রায় ৯৯ শতাংশ পত্রিকা প্রকাশিত হয় বিজয় কিবোর্ড ব্যবহার করে। পশ্চিমবঙ্গেও গত এক দশক ধরে বিজয় কিবোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে এ ব্যবহারের হার প্রায় ৮০ শতাংশ। এছাড়া আসামেও বিজয় কিবোর্ড ব্যবহার হচ্ছে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত শুধু ম্যাকিনটোশভিত্তিক ছিল বিজয় কিবোর্ড। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ উইন্ডোজভিত্তিক বিজয় কিবোর্ড বাজারে আসে। পরে উইন্ডোজ ১৯৯৪ প্রকাশের পর বিজয় কিবোর্ডের নতুন সংস্করণ বাজারে ছাড়া হয়, যা বিজয় ৯৯ নামে বাজারে আসে। বিজয় ৯৯ ভার্সনটিই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে বাজারজাত করা হয়। বিজয় ৯৯-এর পর ধারাবাহিকভাবে ২০০০, ২০০১, ২০০৩ সালে বিজয় কিবোর্ড আপগ্রেড করা হয়। ২০০৫ সালের শুরুতেই ইউনিকোড কম্প্যাটিবল বিজয় একুশে বাজারে ছাড়া হয়। ২০১০ সালে বের হয় উইন্ডোজ ভিসতা ও সেভেনে ব্যবহারযোগ্য সুলভ মূল্যের একুশে বায়ান্ন এবং শক্তিশালী বিজয় একুশের নতুন সংস্করণ। এতে যোগ করা হয় ইউনিকোড থেকে বিজয়ে রূপান্তর করার সুবিধা। এ ছাড়া আরো বের হয়েছে একুশে প্রো, যা উইন্ডোজ মোবাইল সাপোর্ট করে। আনন্দ কমপিউটার্স থেকে বের হওয়া কিছু পণ্যের বিবরণ নিচে দেয়া হলো।

টাইপিং সফটওয়্যার :
বিজয় একাত্তর নামের সফটওয়্যারে প্রথমবারের মতো বাংলা হরফের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য দিতে সক্ষম হয়েছে। এতে বিজয়ের ঐতিহ্যবাহী ক্ল্যাসিক কোড ছাড়াও আছে ইউনিকোড ৬.০ এনকোডিং বা বিডিএস ১৫২০ঃ ২০১১ এনকোডিং। এ এনকোডিং ব্যবহার করে বিজয় একাত্তর ছাড়াও বিজয় একুশে ২০১১ এবং বিজয় বায়ান্ন ২০১১ নামের আরো দু’টি সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। বিজয় একাত্তর ম্যাকিনটোশ ভার্সনও বাজারে অবমুক্ত করা হয়েছে। উবুন্টু লিনআক্সে বাংলা লেখার জন্য বের করা হয়েছে বিজয় একুশের নতুন সংস্করণ। উইন্ডোজ সেভেন ৩২ বিট ও ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেমের জন্য নতুন বছরে বাজারে আসবে আরো উন্নত বিজয় একুশে ২০১২।

বিজয় ল্যাপটপ :
বিজয়ের বেশ কয়েকটি মডেলের নেটবুক ও ল্যাপটপ আমদানি করা হচ্ছে, যা বাজারের অন্যান্য নেটবুকের তুলনায় দামে সাশ্রয়ী। ১৩.৩ ইঞ্চি স্ক্রিনের কালো ও সাদা রঙের এ ল্যাপটপগুলো ২০ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে বিজয় ল্যাপটপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এগুলোতে আছে ইন্টেল অ্যাটম প্রসেসর, ১ গিগাবাইট র্যাাম, ১৬০ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক ও অন্যান্য সুবিধা। বিজয় ল্যাপটপের কিবোর্ডে বিজয় বাংলা কিবোর্ড মুদ্রিত আছে। বিশ্বের কোনো নেটবুক বা ল্যাপটপে এখন পর্যন্ত বাংলা কিবোর্ড মুদ্রিত হয়নি। অন্যদিকে বিশ্বের কোনো ল্যাপটপে লাইসেন্স করা বাংলা সফটওয়্যার, অনেক শিক্ষামূলক বাংলা সফটওয়্যার এবং ই-বুক বান্ডল করা হয়নি।

বিজয় শিশুশিক্ষা :
বিজয় শিশুশিক্ষা নামের একটি শিক্ষামূলক সফটওয়্যার বাজারজাত করছে। এটি ৩ থেকে ৬ বছরের শিশুদের জন্য প্রস্ত্তত করা। এতে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক বিষয়গুলো রয়েছে। এটিই প্রথম সফটওয়্যার যাতে কাগজে ছাপা বইও যুক্ত করা হয়েছে।

বিজয় সফটওয়্যার :
লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনার জন্য বের করা হয়েছে ‘বিজয় লাইব্রেরি’ নামের সফটওয়্যার। বাংলা লেখা শেখার জন্য ইন্টার-অ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার বিজয় লেখালেখি শেখা প্রকাশ করেছে।

সিআরবিএলপি

সেন্টার ফর রিসার্চ অন বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং বা সিআরবিএলপি নামের এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সাল থেকে। ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কমপিউটার, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধীনে এই প্রতিষ্ঠানটি নানা রকমের বাংলা সফটওয়্যার বানানোর কাজ করে আসছে। তাদের এই মহৎ কর্মে অর্থের জোগান দিচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ করপোরেশন তথা আইডিআরসি নামের কানাডীয় একটি প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। সিআরবিএলপি নামের এই সংস্থাটির নেতৃত্বে রয়েছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারপারসন ড. মুমিত খান। সিআরবিএলপি টিমে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- মতিন সাদ আবদুল্লাহ, নাইরা খান, জহুরুল ইসলাম, নওশাদ উজ্জামান, মো: আবুল হাসনাত, ফারহানা ফারুক, এসএম মর্তুজা হাবীব, ফিরোজ আলম, দিল আফরোজ সুলতানা, রাবিয়া সুলতানা উম্মি, অর্পিতা উর্মিসহ অনেকে। সিআরবিএলপির বানানো উল্লেখযোগ্য কিছু সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে- কথা বাংলা টেক্সট টু স্পিচ, বাংলা ওসিআর (অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন), স্পিচ করপোরা, সিআরবিএলপি কনভার্টার, ইউনিকোডভিত্তিক রিচ টেক্সট এডিটর বাংলাপ্যাড, বাংলা ফোনেটিক স্পেলিং চেকার, বাংলা স্পেলার স্যান্ডবক্স বা পুষ্প, জে-কিম্মো নামের জাভা ইন্টারফেস, পাতা-ইংলিশ টু বাংলা ট্রান্সলেশন, সিআরবিএলপি প্রথম আলো লেক্সিকন, অটোমেটেড প্রনাউন্সিয়েশন জেনারেটর ইত্যাদি। কিছু সফটওয়্যার বানানোর কাজ চলছে, যার ডেমো ভার্সন অবমুক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইংলিশ টু বাংলা ডিকশনারি, বাংলা টু বাংলা ডিকশনারি, পরিভাষা, বাংলা ওয়ার্ডনেট, বাংলা প্রনাউন্সিয়েশন লেক্সিকন ইত্যাদি। এ প্রতিষ্ঠানের চলমান কিছু প্রজেক্টের মধ্যে রয়েছে- অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন, ইমোশন রিকগনিশন ফ্রম স্পিচ, স্পিচ সিনথেসিস, স্পিচ করপাস, করপাস অ্যানালাইসিস অ্যান্ড করপাস কালেকশন, লোকালাইড ইউআরএল, লেক্সিকন, ওয়ার্ডনেট, প্যারালাল করপাস ইত্যাদি।

অঙ্কুর গ্রুপ



২০০২ সালের অক্টোবরের শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘অঙ্কুর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে মুক্ত ও ওপেনসোর্স সফটওয়্যার স্থানীয়করণ করে আসছে। অঙ্কুর গ্রুপ ওপেনসোর্সভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। এর মূল লক্ষ্য বাংলা সফটওয়্যার ও অন্যান্য ওপেনসোর্সভিত্তিক সফটওয়্যারের বাংলা ইন্টারফেসের উন্নয়ন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অঙ্কুর গ্রুপের কোনো অফিস নেই, তাদের সব কাজ চলে অনলাইনে। অঙ্কুরের সদস্যরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন উত্তর আমেরিকা, বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। অঙ্কুরের প্রকল্প প্রতিষ্ঠাতা ও মুখ্য সমন্বয়কারী তানিম আহমেদ। তিনি কানাডা থেকে কাজ করছেন। এ প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে রয়েছেন- অর্ণব ভট্টাচার্য, দ্বীপায়ন সরকার, কৌশিক ঘোষ ও শরিফ ইসলাম। ভারতে অবস্থানরত বাঙালিদের মধ্যে রয়েছেন- ইন্দ্রনীল দাসগুপ্ত, কুশাল দাস, রুনা ভট্টাচার্য, সঙ্করশান মুখোপাধ্যায়, শান্তনু চ্যাটার্জী, স্বাগত ঘোষ, সায়ামিন্দু দাসগুপ্ত। বাংলাদেশে যারা এ প্রকল্পে কাজ করে যাচ্ছেন তারা হচ্ছেন- আশাবুল ইয়ামিন, জামিল আহমেদ, খন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম, মাহে আলম খান, মুহাম্মাদ খালিদ আদনান, অমি আজাদ ও সালাউদ্দিন পাশা।

অঙ্কুরের সফল পদক্ষেপের মধ্যে একটি হচ্ছে ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেমে লিনআক্সের উন্নয়ন ও বাংলায় তা ব্যবহারোপযোগী করে তোলা। ডেবিয়ান, ফেডোরা, ম্যান্ডিভা, সুসে, ম্যানড্রেক, রেডহ্যাট ইত্যাদি লিনআক্স ডিস্ট্রিবিউশনে বাংলা সংযোজনের মাধ্যমে অঙ্কুর বাংলা কমপিউটিংয়ের ধারাকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। শ্রাবণী ও হৈমন্তী নামের দুটি বাংলা লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেম বানানো তাদের এক অসাধারণ কাজ। অপারেটিং সিস্টেম ছাড়াও তারা বেশ কিছু সফটওয়্যারের স্থানীয়করণ বা বাংলায় অনুবাদ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে- জিনোম ও কেডিই ডেস্কটপ, ওপেন অফিস স্যুট ওপেন অফিস.অর্গ, ইন্টারনেট ব্রাউজার মজিলা ফায়ারফক্স, ই-মেইল ক্লায়েন্ট থান্ডারবার্ড, ইন্টারনেটভিত্তিক চ্যাটিং প্রোগ্রাম পিজিন, ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার, সেভেনজিপ, সাহানা নামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার, বাংলা গুগল ইত্যাদি। অঙ্কুরের ডেভেলপ করা কিছু সফটওয়্যার ও টুলের মধ্যে রয়েছে- অঙ্কুর বাংলা ইউটিলিটি, বাংলা টাইপিং টিউটর, বাংলা শব্দের তালিকা বা শব্দকোষ, ওয়ার্ডফোর্জ, বাংলা বাংলাদেশ লোকাল ফাইল, বাংলা বানান পরীক্ষক, বাংলা টেক্সট এডিটর লেখ, বাংলা ইউনিকোড ফন্ট (আকাশ, লিখন, অনি, মুক্তি, রাগা, প্রভাত), বাংলা এক্সপঞ্জিকা, বাংলা ডায়েরি, বিস্পেলার, অনুবাদক, ইংরেজি টু বাংলা ডিকশনারি ইত্যাদি। কুয়াশা নামে অঙ্কুরের অনুবাদ করা সব সফটওয়্যার ও অন্যান্য প্রজেক্টসহ একটি লাইভ সিডি লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেমে বের করা হয়েছে। এছাড়া অঙ্কুর এ সফটওয়্যারগুলোর জন্য বাংলা ভাষায় প্রশিক্ষণ উপকরণ তৈরি করেছে, যা সর্বসাধারণকে বাংলা ভাষায় অনূদিত সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারে সহায়তা করছে। ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন হয় না, এমন কাজে আইসিটির ব্যবহারে এ সফটওয়্যারগুলো ব্যয়সাশ্রয়ী এবং কার্যকর সমাধান।

অঙ্কুরের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন http://www.bengalinux.org/projects ঠিকানায়। তাদের সাথে কাজ করার জন্য প্রোগ্রামিং জানা না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ তাদের সব কাজ প্রোগ্রামারনির্ভর নয়। বাংলা ভাষায় যদি আপনার ভালো দক্ষতা থাকে বা আপনি ভালো অনুবাদ করতে পারেন, তবে যোগ দিতে পারেন অঙ্কুরের অনুবাদ প্রকল্পে। আর যদি আপনার হাতের লেখা সুন্দর ও স্পষ্ট হয় তবে কাজ করতে পারেন মুক্ত বাংলা ফন্ট প্রকল্পে। আর যদি ওপরের কোনো একটিও না পারেন, কিন্তু আপনার লেখার হাত ভালো অর্থাৎ সাহিত্যবোধ থাকে তবে অঙ্কুরের সাথে মিলে ইন্টারনেটে বাংলা আর্কাইভে বাংলা লেখার ভান্ডার তৈরিতে সাহায্য করতে পারেন।

ওমাইক্রনল্যাব

ওমাইক্রনল্যাব নামের প্রতিষ্ঠানটি বেশ ভালো সুনাম অর্জন করেছে বাংলা কমপিউটিংয়ে অবদান রাখার ক্ষেত্রে। তাদের সাফল্যগাথার সাথে যে নামটি যুক্ত রয়েছে, তা হচ্ছে অভ্র। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্ভাবন হচ্ছে বাংলা লেখার সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড। উইন্ডোজে ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ অভ্র কিবোর্ড সফটওয়্যারটি আবির্ভূত হয়। এর সাহায্যে বাংলা লিপি ব্যবহার করে এখন সব ভাষাতেই টাইপ করা যায়। এ ধরনের ভাষার মধ্যে অসমীয়া ভাষা অন্যতম। মেহদী হাসান খান নামে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্র ২০০৩ সালে অভ্র কিবোর্ড তৈরির কাজ শুরু করেন। তিনি এটি সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলেন ভিজ্যুয়াল বেসিক প্রোগ্রামিং ভাষা দিয়ে। পরে তিনি তা ডেলফিতে (Delphi) ভাষান্তর করেন। এই সফটওয়্যারটির লিনআক্স সংস্করণ লেখা হয়েছে সি++ প্রোগ্রামিং ভাষায়। পরবর্তী পর্যায়ে রিফাত-উন-নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম, রাইয়ান কামাল, শাবাব মুস্তফা এবং নিপুণ হক এই সফটওয়্যারের উন্নয়নের সাথে যুক্ত হন।

অভ্র কিবোর্ডের সাম্প্রতিকতম সংস্করণ ৫.১.০ গত ১ জানুয়ারি ২০১১-এ প্রকাশিত হয়। সফটওয়্যারটির আগের সংস্করণের লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেম সমর্থিত সোর্সকোড আগে থেকেই মুক্ত ছিল এবং ২০১০ সালে উইন্ডোজে অভ্র কিবোর্ডের ৫ ভার্সনের সাথে এর সোর্সকোড মজিলা পাবলিক লাইসেন্সের আওতায় উন্মুক্ত করা হয়। ২০০৭ সালে অভ্র কিবোর্ডের বহনযোগ্য সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এতে অভ্র কিবোর্ড পূর্ণ সংস্করণের সব সুবিধা রয়েছে। এছাড়া কমপিউটারে অ্যাডমিন অ্যাক্সেস নেই এমন কমপিউটারে অভ্র কিবোর্ড চলা অবস্থায় অস্থায়ীভাবে বাংলা ফন্ট ইনস্টল করার জন্য রয়েছে ‘ভার্চুয়াল বাংলা ফন্ট ইনস্টলার’ নামে একটি প্রোগ্রাম। পূর্ণ সংস্করণ থেকে এটি আকারেও অনেক ছোট। অভ্রতে সাম্প্রতিকতম সংস্করণে যেসব বাংলা লেআউট পাওয়া যাবে তা হচ্ছে- প্রভাত, মুনীর অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমাইক্রনল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লেআউট), বর্ণনা ও জাতীয় (বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লেআউট)।

আসকি বা আনসি কোডের লেখা ইউনিকোডে রূপান্তর করার জন্য অভ্র বের করেছে একটি কনভার্টার। http://www.omi-cronlab.com সাইট থেকে এ সফটওয়্যারগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে। সেই সাথে এ সাইটে দেয়া আছে অনেকগুলো মুক্ত বাংলা ফন্ট। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিয়াম রুপালি, আপনালোহিত, বাংলা, আদর্শলিপি, সোলায়মানিলিপি, রুপালি, আকাশ, মিত্রামন, লিখন, সাগর, মুক্তি, লোহিত এবং একুশের বানানো কিছু ফন্টও পাওয়া যাবে এখানে। এগুলো হচ্ছে- একুশে আজাদ, দুর্গা, মহুয়া, গোধূলি, পুনর্ভবা, পূজা, সরস্বতী, শরিফা ও সুমিত।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়



মানসম্পন্ন গঠনরীতির অভাবে বাংলা ভাষার তথ্যগুলো রূপান্তর করতে বেশ কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হয়। প্রায় বিশ বছর ধরে আমাদের দেশে চলে আসা এনকোডিং সিস্টেম ও অপরিকল্পিত বিন্যাসের কারণে এবং নানা মন্ত্রণালয়ের তথ্যজ্ঞাপনের ভিন্ন ভিন্ন নিয়মের কারণে বাংলা ভাষায় কমপিউটিংয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। ইউনিকোডে বাংলা চলে আসার পর এই সমস্যা কিছুটা লাঘব হলেও পুরনো নথিপত্র ব্যবহার করা যাবে না- এই কথা চিন্তা করে কেউই এ ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করছে না। বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি অনেক কনভার্টার রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর নির্ভুলতা ও কাজ করার ধীরগতি সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। দেশীয় মন্ত্রণালয়গুলোর মাঝে তথ্যবিষয়ক ব্যবস্থা আরো জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় একটি কনভার্টার বানানোর উদ্যোগ নিয়ে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আদ্যক্ষর নিয়ে এই কনভার্টারের নাম দেয়া হয়েছে ‘নিকস’। নিকস বাংলা ফন্ট ও কনভার্টারটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে http://www.ecs.gov.bd/nikosh সাইট থেকে। কনভার্টারটি চালাতে পিসিতে ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ২.০ ইনস্টল করা থাকতে হবে। কনভার্টার ছাড়াও নিকস আরো বের করেছে নিকস বাংলা স্পেল চেকার ও কিছু ফন্ট।

আইইসিবি

ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে যেকোনো কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কমপিউটারে বাংলা ভাষার বিকাশে অবদান রাখছে। এ নাম ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস বাংলাদেশ (আইইসিবি)। সংগঠনটি দক্ষ প্রকৌশলীদের দিয়ে নিয়ন্ত্রিত, যারা আইটি খাতে নানারকম সেবাদান করে যাচ্ছেন। তাদের বানানো কয়েকটি বাংলা সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে :

শাব্দিক :
‘লেখার ঝামেলামুক্ত বাংলা সফটওয়্যার’- এই স্লোগান নিয়ে এরা বাজারে ছেড়েছে শাব্দিক নামের বাংলা টাইপিং ব্যবস্থা। খুব সহজেই এ সফটওয়্যার দিয়ে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, তামিল ইত্যাদি ভাষা লেখা যাবে ফোনেটিক সিস্টেমের সাহায্যে। এতে রয়েছে সক্রিয় বানান সহায়িকা, স্বয়ংক্রিয় শব্দপূরক, অভিধান থেকে শব্দচয়ন, ধ্বনিভিত্তিক কিবোর্ড, একই সাথে বাংলা-ইংরেজি টাইপিংয়ের সুবিধা, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা সংযোজনের সুবিধা, সম্পূর্ণ ইউনিকোড সাপোর্ট, পুরনো অ্যাপ্লিকেশনের জন্য আনসি মোডে টাইপিং সুবিধা ও পুরনো ডকুমেন্টের জন্য ইউনিকোডে রূপান্তরের ব্যবস্থা। এটি শুধু উইন্ডোজে কাজ করে।

শাব্দিক লাইট :
ওয়েব ব্রাউজারে বাংলা লেখার সুবিধার্থে আইইসিবির বানানো শাব্দিক লাইট সফটওয়্যারটি বাংলা ভাষায় কমপিউটিংয়ে দারুণ এক সংযোজন। এতে রয়েছে ফোনেটিক ব্যবস্থায় ব্রাউজারে বাংলা লেখার সুবিধা। এর সাহায্যে খুব সহজেই সার্চবারে বাংলা লিখে বাংলা তথ্য খুঁজে বের করা যায়। এটি আকারে খুবই ছোট। এতে খুব দ্রুত বাংলা লেখা যায়। এতে পুরনো সবরকম কিবোর্ড লে-আউট সমর্থন রয়েছে।

ইক্সপ্যাড :
ইক্সপ্যাড বা wiPAD হচ্ছে খুব দ্রুত বাংলা লেখার একটি ডিফল্ট কিবোর্ড লে-আউট। wiPAD নামটি এসেছে Intelligent Functional (fX) Keypad technology থেকে। এটি টাইপ করার সময় অভিধান থেকে শব্দ পূরণ করে দেয়। ফলে পুরো শব্দ লেখার জন্য যে সময়ের দরকার হতো, তার প্রয়োজন পড়ে না। যেমন- আপনি যদি বাংলা লিখতে চান, তবে শুধু বা লেখার সাথে সাথে লেখার নিচে কিছু শব্দ চলে আসবে, তা হলো- বানান, বাংলা ইত্যাদি। এখান থেকে বাংলা সিলেক্ট করে দিলেই তাড়াতাড়ি বাংলা শব্দটি লেখা হয়ে যাবে।

শব্দভেদ :
RMS ভিত্তিক মোবাইল ডাটাবেজ সমর্থিত মোবাইল ফোনের জন্য বানানো হয়েছে শব্দভেদ নামের একটি ইংরেজি-ইংরেজি ও ইংরেজি-বাংলা ডিকশনারি। এটি চালানোর জন্য মোবাইলে জাভা সাপোর্ট থাকতে হবে। এটি লো-এন্ড মোবাইল সেটেও ভালো কাজ করে।

অহম২১ :
অহম২১ নামে মোবাইলে T9 ভিত্তিক বাংলা লেখার ব্যবস্থার পাশাপাশি বাড়তি স্বাধীনতা হিসেবে রয়েছে পছন্দমতো কিবোর্ড নির্বাচন ও ব্যবহারের সুবিধা। এটি সফটএক্সপো ২০০৮ মেলায় প্রথম প্রদর্শিত হয়।

জাতীয় কিবোর্ড :
বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আইইসিবি ইউনিকোড উপযোগী জাতীয় কিবোর্ড (বাংলা) ও বাংলা ফন্ট জাতীয় লিপির উন্নয়নে কাজ করেছে। ম্যাক এবং পুরনো উইন্ডোজ ভার্সনে এটি কিছুটা ঝামেলা করে, কিন্তু উইন্ডোজ ২০০০-এর পরের ভার্সনগুলো এবং লিনআক্সের (রেডহ্যাট, ফেডোরা কোর ২, ডেবিয়ান সার্জ) সাথে ভালো কাজ করে। বাংলা ভাষার সাথে মিল আছে এমন ভাষাতেও এ জাতীয় কিবোর্ড ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া সুলেখা, ময়না ও সুতন্বী, এমজে এই চারটি ফন্ট থেকে জাতীয় লিপিতে রূপান্তর করার ব্যবস্থা রয়েছে।

এসব সফটওয়্যার বানানোর পাশাপাশি এরা আরো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার মধ্যে বাংলা ভাষার জন্য অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন ব্যবস্থা, ভয়েস রিকগনিশন ব্যবস্থা, টেক্সটকে ভয়েসে রূপান্তর করার সফটওয়্যার, উচ্চারণসহ ডিকশনারি উন্নতিকরণ ও বাংলা ভাষার জন্য ইউনিভার্সাল টাইপিং ব্যবস্থার কাজ বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

প্রশিকা



মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র প্রশিকার শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার কয়েক বছর পর ১৯৭৫ সালের দিকে। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি এনজিও প্রশিকা নামটির উদ্ভব হয়েছে তিনটি শব্দের প্রথম অক্ষর থেকে। এগুলো হচ্ছে- প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও কাজ। মানবকল্যাণের পাশাপাশি আইটি খাতেও তাদের অবদান অপরিসীম। আইটি খাতে তাদের কিছু কার্যক্রমের সাফল্যের কথা নিচে দেয়া হলো :

প্রশিকাশব্দ :
মাইক্রোসফট উইন্ডোজের জন্য প্রশিকাশব্দ একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা ইন্টারফেস। এটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের অধীনে যেকোনো সফটওয়্যারে চলে। প্রশিকাশব্দ ফন্টের পাশাপাশি বিজয়, বসুন্ধরা, লেখনী কিংবা প্রবর্তন সফটওয়্যারের ফন্টও এতে ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে প্রশিকাশব্দের রয়েছে ১৩টি বোল্ড ফন্টসহ মোট ৭৪টি টিটিএফ ফন্ট এবং ১৯টি এটিএম ফন্ট। এতে মেনু থেকেই মুনীর, বিজয়, লেখনী কিংবা জাতীয় কিবোর্ড লে-আউট এবং প্রশিকাশব্দ, বিজয়, লেখনী কিংবা বসুন্ধরা ফন্ট সিলেক্ট করার সুবিধা রয়েছে। বাজারে বর্তমানে এর নতুন ভার্সন প্রশিকাশব্দ ৪.০ পাওয়া যাচ্ছে।

প্রশিকাশব্দ ইউনিকোড :
ইউনিকোডের সাফল্যের মিছিলে যোগ দেয়ার জন্য বের করেছে প্রশিকা ইউনিকোড। কিন্তু এটি শুধু উইন্ডোজ সমর্থন করে। www.proshikashabda.com ওয়েবসাইটে প্রশিকার পণ্যগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

নির্ভুল :
‘নির্ভুল’ হচ্ছে প্রশিকার প্রকৌশলীদের বানানো বাংলা বানান শুদ্ধ করার একটি ব্যবস্থা। প্রশিকা ফন্টে লেখা ডকুমেন্টের বানান ভুল ধরতে এটি খুবই পটু। বানান শুদ্ধ করার জন্য এটি বাংলা একাডেমীর নিয়ম ও রীতি মেনে চলে এবং এর ডাটাবেজে প্রায় দেড় লক্ষাধিক শব্দ রয়েছে।

অন্যরূপ :
প্রশিকার রয়েছে একটি লেখা রূপান্তর করার সফটওয়্যার, যার নাম অন্যরূপ। এটি বাজারে প্রচলিত অন্যান্য ফন্ট থেকে প্রশিকা ফন্টে রূপান্তর করতে পারে।

প্রশিকাডাটা :
বাংলায় ডাটাবেজ এতদিন ছিল স্বপ্নের বিষয়। আজ তা বাস্তব হলো। বাংলা ডাটাবেজের অর্থ বাংলায় নাম, ঠিকানা রাখা নয়- এখানে স্ট্রং, সার্চিং ইত্যাদি ব্যাপার বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হয়। এতদিন বাংলা ডাটা সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব হতো না। তাই বাংলায় ডাটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ করা ছিল রীতিমতো অসম্ভব। প্রশিকাডাটা খুলে দিয়েছে সেই দুয়ার। বাংলা ডাটাবেজ আজ আর কোনো সমস্যা নয়। যারা বাংলায় ডাটাবেজ রাখার চিন্তাভাবনা করছেন, তারা নিশ্চিন্তে প্রশিকাডাটার ওপর নির্ভর করতে পারেন। এছাড়া প্রশিকা বেশ কিছু ফন্টও বানিয়েছে। প্রশিকার বেশিরভাগ ফন্টের নামে ব্যবহার করা হয়েছে ফুলের নাম। ফন্টগুলোর নাম হচ্ছ- লিপি, আদর্শলিপি, দোপাটি, করবী, যূথী, মালতী, পদ্ম, চামেলী, ডালিয়া, ঝুমকো, শাপলা, বেলী, গোলাপ, মাধবী, রজনীগন্ধা, মল্লিকা, পলাশ, টগর, জুঁই ইত্যাদি।

একুশে



বাংলা ভাষায় কমপিউটিংয়ের বিজয় কেতন ওড়ানোর জন্য ‘একুশে’ নামের একটি ওপেনসোর্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে অনেক দিন ধরে কাজ করে আসছে। একুশে ডট অর্গ নামের প্রতিষ্ঠানের মুখ্য ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন অমি আজাদ, যিনি অঙ্কুর গ্রুপেও কাজ করছেন। বাংলা ভাষাভিত্তিক বিভিন্ন সফটওয়্যার নিয়ে তাদের কার্যক্রম চলছে। তাদের যুগান্তকারী উদ্ভাবনের একটি হচ্ছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের জন্য বাংলা টাইপিং সিস্টেম একুশে টাইপিং সিস্টেম। এটি ইউনিকোড সাপোর্ট করে না, তবে বেশিরভাগ TTF ফন্ট এবং সেই সাথে অনেকগুলো ভিন্ন ধরনের কিবোর্ড লে-আউট সমর্থন করে। তাদের নতুন প্রকল্প একুশে স্বাধীনতা নামের বাংলা টাইপিং সিস্টেম আরো বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। নতুন এই বাংলা টাইপিং সিস্টেমটি উইন্ডোজ ২০০০ থেকে শুরু করে তার পরবর্তী সব ভার্সনে চলবে। ‘একুশে’ ও ‘একুশে স্বাধীনতা’ উভয়ের জন্যই মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ৯৭ ও তার পরবর্তী ভার্সনের প্রয়োজন হবে। এতে খুব সহজেই একই সাথে বাংলা ও ইংরেজি লেখা যায়। ফোনেটিক টাইপিং এবং বিপুলসংখ্যক ফন্টের সমর্থন ‘একুশে স্বাধীনতা’র বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

বাংলা কমপিউটিংয়ের জগতে একুশের আরো কয়েকটি অবদানের মধ্যে রয়েছে- মজিলা ফায়ারফক্সের বাংলা সংস্করণ, ওয়েবভিত্তিক কিবোর্ড, বাংলা ভার্চুয়াল কিবোর্ড, অনলাইন বাংলা অভিধান (www.ovidhan.com) ও একুশের চিঠি নামের বাংলা মেইলিং সিস্টেম। এছাড়া একুশের আরো কিছু অবদানের মধ্যে রয়েছে- বাংলা ফন্ট তৈরি, ওয়ার্ডের জন্য একুশে ম্যাক্রোস, বাংলা কিবোর্ড ম্যানেজার সৃষ্টি, বাংলা/ইংরেজি/হিন্দি ভাষ্য এইচটিএমএল এডিটিং সফটওয়্যার ভাষা, পলাশ’স ভাষা, আয়াফিলিয়েট প্রজেক্ট, ইন্ডিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টলার, ওয়ার্ডপ্রেস ও পিএইচপিবিবির জন্য বাংলা ক্যালেন্ডারের প্লাগ-ইনস ও ম্যাক ওএস এক্সের জন্য বাংলা টাইপিং ব্যবস্থা চালুসহ অনেক কিছু।

বিডিওএসএন

বিশ্বব্যাপী কমপিউটার আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছে। তাই সেই আন্দোলনের অংশীদার হতে এবং ওপেনসোর্সের জনপ্রিয়তা আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক তথা বিডিওএসএন। বিডিওএসএন একটি অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যা আমাদের দেশের জনগণের কাছে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারগুলোর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিডিএফআরআই) আওতাধীন এ সংস্থার যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালের ২৪ অক্টোবর। বাংলাদেশে উন্মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার জনপ্রিয় করাটাই হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানের মূলমন্ত্র। পাইরেসি কমিয়ে দেশে মুক্ত সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করার ব্যাপারে জনমত গড়ে তোলা, সবার মাঝে মুক্ত সফটওয়্যারগুলো বণ্টন করা, ওপেনসোর্সের সুযোগসুবিধার ব্যাপারে জনসাধারণকে ওয়াকিবহাল করা, ওপেনসোর্সভিত্তিক সফটওয়্যারগুলোর উন্নতি ও বিকাশের ব্যাপারে প্রোগ্রামারদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি তারা যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে তা হচ্ছে, অনলাইনের অন্যতম বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার (www.wikipedia.org) বাংলা অনুবাদ। উইকিপিডিয়ার বাংলা অনুবাদ করার কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। প্রাথমিক কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এই প্রকল্পের কাজ খুব ধীরগতিতে এগোতে থাকে। এই সমস্যা দূর করার জন্য বিডিওএসএনের অধীনে মুনির হাসানের নেতৃত্বে ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে গঠিত হয় বাংলা উইকি নামের সংগঠন। বাংলা উইকি সম্পর্কে সবার সহযোগিতার আমন্ত্রণ জানিয়ে এই সংগঠন করেছে অনেক সেমিনার, র্যাালি ও আলোচনা। এরা আগস্ট মাসকে উইকি বাংলা মাস হিসেবে অভিহিত করেন। একনজরে বাংলা উইকির অবস্থা দেখা যাক : নিবন্ধ সংখ্যা : ২২,৯৭১টি, ছবি : ১,০১৩টি, প্রশাসক : ৯ জন, মোট সম্পাদনা : ১,১৫৩,৭৬৭টি, ব্যবহারকারী : ২৭,৯৫৭ জন ও সক্রিয় ব্যবহারকারী : ১৯২ জন। বাংলা উইকির ওয়েবসাইট : http:// bn.wikipedia.org।

বিডিওএসএন প্রকাশিত কিছু উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে- প্রযুক্তি কথন (আমাদের প্রযুক্তি টিম), মুক্তবার্তা পত্রিকা, উবুন্টু সহায়িকা (রেজাউর রহমান ও ফাহিম এআই ইসলাম), Why We Are In Favor Of Open Source (এম. জাফর ইকবাল ও মুনির হাসান) ইত্যাদি। উইকিপিডিয়ার বাংলা অনুবাদ প্রকল্পে সবাই এগিয়ে আসলে বাংলা উইকির ভান্ডার খুব দ্রুতই যে আরো বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

উবুন্টু বাংলাদেশ



বাংলাদেশী ও প্রবাসী বাংলাভাষী উবুন্টু লিনআক্স ব্যবহারকারী, ডেভেলপার, অনুবাদক ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত হয়েছে উবুন্টু বাংলাদেশ কমিউনিটি। যারা লিনআক্স ব্যবহারে আগ্রহী তাদের জন্য লিনআক্সকে সহজ করে দেয়াই তাদের কাজ। লিনআক্সের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কমিউনিটির সদস্যরা একে অপরকে সাহায্য করে থাকে। সদস্যরা উবুন্টু অবমুক্তির দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, যাতে সাধারণ মানুষ উবুন্টু সম্পর্কে জানতে পারে। এদের ফোরামে উবুন্টু সম্পর্কিত আলোচনায় অংশ নিয়ে অনেক কিছু জানার আছে। এরা উবুন্টুর নানা দিক আলোচনা করার পাশাপাশি উবুন্টু ব্যবহারের সুফলগুলো নিয়েও ব্যাপক আলোচনা করে থাকেন। উবুন্টু বাংলাদেশের কার্যক্রম বাংলাদেশে উবুন্টু ব্যবহারকারীদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নতুন উবুন্টু ব্যবহারকারীরা উবুন্টু বাংলাদেশের ফোরাম থেকে প্রফেশনাল ইউজারদের কাছ থেকে নানা সমস্যার সমাধান জানার পাশাপাশি উবুন্টু সম্পর্কে তাদের মতামত দিতে পারছেন। উবুন্টু বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো বিশদভাবে জানতে ও উবুন্টুর ব্যবহার সম্পর্কিত যেকোনো বিষয় জানতে http://ubuntu-bd.org ওয়েবসাইটটিতে ঢুকে দেখতে পারেন।

প্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলা কমপিউটিং

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল প্রযুক্তির আবির্ভাব আশীর্বাদস্বরূপ। ১৮২১ সালে ফ্রান্সের লুই ব্রেইল নামের এক প্রতিবন্ধী এ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে তার উদ্ভাবিত ব্রেইলকে পরবর্তীতে কমপিউটারে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় লেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে অনেক ভাষায় ব্রেইল চালু রয়েছে। বাংলা ভাষায়ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল সফটওয়্যার রয়েছে। দেশের প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, যা মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ শতাংশ। প্রতিবন্ধীদের সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য বিশ্বের অনেক দেশে অনেক রকমের কার্যক্রম হচ্ছে। সেই আলোকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। প্রতিবন্ধীরা যাতে আইসিটি ক্ষেত্রে যুক্ত হয়ে স্বীয় ও দেশের কল্যাণে আসতে পারেন তার জন্য তৈরি হয়েছে ব্রেইল সফটওয়্যারসহ নানা প্রযুক্তিপণ্য। বাংলাদেশেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি হয়েছে ব্রেইল সফটওয়্যার, স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার, টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার প্রভৃতি। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে প্রতিবন্ধীদের উপযোগী কিছু সফটওয়্যার বানানো ও তাদের সেবা দেয়ার জন্য। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির অবদান এখানে তুলে ধরা হলো।

ইপসা



ইপসা তথা ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন ২০০৫ সাল থেকে আইসিটি অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার অন ডিজ্যাবিলিটি বা আইআরডিসি নামে একটি বিশেষায়িত এবং উদ্ভাবনীমূলক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে। প্রতিবন্ধীরাও যাতে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা সমানভাবে পায়, সে লক্ষ্যে জেনেভাভিত্তিক সংস্থা ডিজিটাল অ্যাকসেসেবল ইনফরমেশন সিস্টেম তথা ডেইজির সহযোগী সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করছে ইপসা। সফটওয়্যার, ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিবন্ধীদের জন্য বোধগম্য করতে ইপসা ডেইজির বিভিন্ন মান নির্ধারণ করে দেয়। এ ছাড়া ইপসায় প্রায় কয়েকশ’ প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ নেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ড. জাফর ইকবালের নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিবন্ধীদের জন্য সফটওয়্যার। তাদের বানানো দুটি উল্লেখযোগ্য সফটওয়্যার হচ্ছে- সুবচন নামের টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার ও মঙ্গলদীপ নামের স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার। মঙ্গলদীপ ইংলিশে ও সুবচন বাংলায় কাজ করতে সক্ষম। এ দুটি সফটওয়্যারকে সমন্বয় করে একটি স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যারে পরিণত করা হচ্ছে। এর ফলে কমপিউটার ব্যবহারকারী প্রতিবন্ধীরা বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষায় কমপিউটার ব্যবহার করতে পারবেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি নিরক্ষর জনগোষ্ঠীরাও তথ্য শুনে তার মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর রিসার্চ অব বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং তথা সিআরবিএলপি বানিয়েছে ‘কথা’ নামের সফটওয়্যার, যা ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজকে মানুষের বোধগম্য ভাষায় রূপান্তর করার প্রথম বাংলা ভাষাভিত্তিক সফটওয়্যার। একে টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার বলা হয়। সফটওয়্যারটি যেকোনো স্ক্রিনরিডার সফটওয়্যারের সাথে কাজ করতে পারে। কথার ব্যবহার একটু জটিল হলেও এটি ভয়েস রেসপন্স, টকিং বুক, টেলিসেন্টারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে। যদিও এটি রোবটিক ভাষায় কথা বলে, তবুও এর থেকে বের হওয়া কথা প্রায় সবাই বুঝতে পারেন। বর্তমানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাদের সংবাদকে শব্দে পরিণত করে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রথম আলো শ্রুতি’। কথা সফটওয়্যারটি ২০১০ সালে ই-কনটেন্ট অ্যান্ড আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট কনটেস্ট ফাইনালিস্ট হিসেবে পুরস্কারও জিতে নেয়।

আনন্দ কমপিউটার্স

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যাতে হাতে ছুঁয়ে বই পড়তে পারেন তার জন্য অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে ব্রেইল। কিন্তু সমস্যা ব্রেইলে তৈরি বই বা উপকরণ সহজে পাওয়া যায় না। তাই বাংলাদেশে ২০০৪ সালে শুরু হয় কমপিউটারে বাংলা ভাষায় ব্রেইলের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদান। অবশেষে ২০০৭ সালে আনন্দ কমপিউটার্সের মাধ্যমে তৈরি হয় ‘সিসিডি বিজয় বাংলা ব্রেইল কনভার্টার’। এতে কমপিউটারে কম্পোজ করা যেকোনো বাংলা ডকুমেন্ট মুহূর্তেই ব্রেইলে রূপান্তর করে ও ব্রেইল প্রিন্টারে প্রিন্ট করা সম্ভব। একই সাথে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা সহজেই ব্রেইলে কমপিউটারে টাইপ করে তা রূপান্তর করে নিতে পারেন সাধারণ টেক্সটে।

ডাস্কবেরি

ডাস্কবেরি হলো বিশ্বের একটি অন্যতম জনপ্রিয় ব্রেইল সফটওয়্যার। বর্তমানে বিশ্বের ১৩০ ভাষায় এটি কাজ করতে সক্ষম। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের বিভিন্ন সংস্করণসহ এটি অন্যান্য অফিস প্রোগ্রাম থেকে ডাটা কনভার্ট করতে পারে। সফটওয়্যারটি ব্রেইলের বিভিন্ন বই, মেটেরিয়ালস, মেমো ইত্যাদি তৈরি করা সহজ। সম্প্রতি বাংলায় ব্রেইল কনভার্টার হিসেবে কাজ করছে ডাস্কবেরি। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যেকেউ ডাস্কবেরি সিস্টেমের ওয়েবসাইট থেকে এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার জন্য ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে নিয়মিত ব্যবহার করতে কোম্পানির কাছ থেকে লাইসেন্স কিনতে হবে। বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এটি নিয়ে কাজ করছেন অনেকেই।

ডেইজি কনসোর্টিয়াম

অ্যাডাপটিভ মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম তথা আমিস হচ্ছে একটি মাল্টিমিডিয়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। সাধারণত ডেইজি সংস্করণের বই পড়ার জন্য আমিস ব্যবহার করা হয়। এতে রয়েছে সেলফ ভয়েসিং সিস্টেম, যার ফলে কোনো স্ক্রিনরিডার ছাড়াই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা সহজে এটি পড়তে পারবেন। এটি ডেইজি কনসোর্টিয়াম ডেভেলপ করে ২০০৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর উন্মুক্ত করা হয়। আমিসের নেভিগেশন, সাবসেকশন, পেজ, বুকমার্কসহ বিভিন্ন ফিচার প্রতিবন্ধীদের দারুণ সহায়ক। সিডি, হার্ডড্রাইভসহ বিভিন্ন লোকেশন থেকে বই পড়ার জন্য রয়েছে ব্যবহারকারীবান্ধব সুবিধা। http://www.daisy.org/amis/download ওয়েবসাইট থেকে যেকেউ এটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান

ডিজিটাল ব্রেইল পদ্ধতির প্রধান বাধা হলো ব্রেইলে যে ৬টি ডট আছে তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়েন, বিশেষ করে নতুন শিক্ষার্থীরা। আর এই বিভ্রান্তি দূর করতেই ব্রেইল লিখন সহায়ক যন্ত্রের উদ্ভাবন। এই যন্ত্রটি কমপিউটারের সাথে সংযুক্ত করে চালাতে হয়। যন্ত্রটিতে রয়েছে অডিও সিস্টেম, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়। কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি তথা সিএমইউর টেকব্রিজ ওয়ার্ল্ড নামের গবেষণা কেন্দ্রের ৫ শিক্ষার্থী এবং প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান তথা এইউডব্লিউর ১০ শিক্ষানবিস যন্ত্রটি সফল ব্যবহারের লক্ষ্যে এইউডব্লিউর স্থানীয় এনজিও ইপসার সাথে সিএমইউর যোগসূত্র স্থাপন করেছেন। এ দলের মূল লক্ষ্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যকার প্রযুক্তিগত বৈষম্য তথা ডিজিটাল ডিভাইড দূর করা। টেকব্রিজ ওয়ার্ল্ডের নির্দেশনায় গবেষণা করছেন আই-স্টেপের (ইনোভেটিভ স্টুডেন্ট টেকনোলজি এক্সপেরিয়েন্স) শিক্ষানবিসরা। আই-স্টেপ প্রথম কাজ শুরু করে ২০০৯ সালে তাঞ্জানিয়ায়। এটি তাদের দ্বিতীয় উদ্যোগ।

অপারেটিং সিস্টেমে বাংলা

কমপিউটারের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম। আমরা সাধারণত তিন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের সাথে পরিচিত। এগুলো হচ্ছে উইন্ডোজ, ম্যাকিনটোশ ও লিনআক্স। এছাড়াও আরো কিছু অপারেটিং সিস্টেমে রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর ব্যবহার খুবই সীমিত। এখন দেখা যাক অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে বাংলা ভাষা কী অবস্থানে রয়েছে।

উইন্ডোজ

উইন্ডোজে বাংলা ভাষার সূচনা হয় উইন্ডোজ ২০০০ বের হওয়ার পর থেকে। কিন্তু তাতে ভালো করে বাংলা ওয়েবসাইটগুলো বা ওয়েবে বাংলা লেখাগুলো পড়া যেত না। উইন্ডোজ এক্সপি সার্ভিস প্যাক ২ বা তার পরবর্তী সব সংস্করণে ওয়েবে ভালোভাবে বাংলা পড়া যায়। এজন্য উইন্ডোজের কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্ট সাপোর্টটি সক্রিয় করে দিতে হবে। উইন্ডোজে ডিফল্ট ইউনিকোড ফন্ট হিসেবে দেয়া আছে ভ্রিন্দা। এটি দেখতে তেমন একটা আকর্ষণীয় নয় এবং ইংরেজি ফন্টের তুলনায় এর আকার অনেক ছোট। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের পুরনো ভার্সনে এই ফন্ট দিয়ে ওয়েবসাইটগুলো বাংলা লেখা দেখায়। ভালোভাবে বাংলা দেখার জন্য ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের ৭ বা ৮ ভার্সনটি ব্যবহার করতে হয় বা অন্য ব্রাউজার যেমন মজিলা ফায়ারফক্স, অপেরা, সাফারি, গুগল ক্রোম ইত্যাদি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটে বাংলা লিখতে চাইলে ফনেটিক টাইপিং পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। এজন্য অভ্র, শাব্দিক বা একুশের ইউনিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। কিছু কিছু ওয়েবসাইটে বাংলা লেখার জন্য আলাদা করে কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয় না। উইন্ডোজে রয়েছে বাংলা ভাষার জন্য আলাদা ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাক। এটি ডাউনলোড করে নিলে বাংলা লিখতে ও পড়তে সমস্যা কম হবে। ভিসতায় দেয়া হয়েছে দুই ধরনের বাংলা- একটি বাংলাদেশের জন্য, আরেকটি ভারতের বাংলাভাষীদের জন্য। ভিসতা ও উইন্ডোজ সেভেনের জন্য বের হয়েছে বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারফেস প্যাক। বাংলা ভাষা অপারেটিং সিস্টেমে দেয়া হয়েছে ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারফেস প্যাক হিসেবে, তাই পুরো কমপিউটিং বাংলায় পরিচালনা করা যায় না। মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইটের ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাক ডাউনলোড পেজের বাংলা লেখা দেখে ভালোই লাগবে সবার। মাইক্রোসফট বাংলাদেশ নামে মাইক্রোসফটের অধীনে আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে একটি প্রতিষ্ঠান। উইন্ডোজে বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য এই সংস্থা কাজ করছে। যেহেতু উইন্ডোজ ওপেনসোর্সভিত্তিক নয়, তাই আমাদের নির্ভর করতে হবে মাইক্রোসফটের ওপরে। উইন্ডোজে বাংলা ভাষার বিকাশের জন্য আমাদের দেশের অনেক মেধাবী তরুণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মাইক্রোসফটের সাথে। তাই কবে আমরা পুরোপুরি বাংলায় উইন্ডোজ অপারেট করতে পারবো সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ম্যাক ওএস

বিশ্ববিখ্যাত কমপিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের নাম সবার জানা। আমাদের দেশে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মাঝে অ্যাপল কমপিউটার দেখা যায় না বললেই চলে। কিন্তু ডেস্কটপ পাবলিশিংয়ের জগতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভালো মানের মুদ্রণের জন্য অ্যাপলের কমপিউটার বা ম্যাক বা ম্যাকিনটোশের জুড়ি মেলা ভার। উন্নত গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের কারণে বেশিরভাগ মুদ্রণকাজ ম্যাকে হয়ে থাকে। আমাদের দেশীয় প্রকাশনার কাজে ম্যাকের ব্যবহার লক্ষণীয়। অ্যাপলের কমপিউটারগুলোতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ম্যাকিনটোশ বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম। বর্তমানে অ্যাপল পিসির জন্য নতুন ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমটি হচ্ছে ম্যাক ওএস এক্স। কমপিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে ম্যাকিনটোশ কমপিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কমপিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশিদূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি নামে বাংলা সফটওয়্যার। তার অবস্থান দখল করে বিজয়। একুশে অর্গ ও অঙ্কুর গ্রুপ ম্যাকে ইউনিকোডভিত্তিক ফন্টে ফোনেটিক পদ্ধতিতে বাংলা লেখার ব্যবস্থা চালু করায় এখন ম্যাকেও সহজে বাংলা লেখা যায়। বর্তমানে রূপালী, ইউনিজয় ও সোলাইমানিলিপিসহ আরো কিছু ফন্ট ম্যাকে দারুণ কাজ করে। বাংলাদেশের কিছু ডেভেলপার অনুরোধ করায় অ্যাপল কর্তৃপক্ষ তাদের অপারেটিং সিস্টেমে বাংলা সংযোজনের ব্যাপারটি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং ভবিষ্যতে তা নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছে।

লিনআক্স



আমাদের দেশে বেশিরভাগ পিসি ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু তাদের মাঝে খুব কম লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে যারা অপারেটিং সিস্টেমের বৈধ কপি ব্যবহার করেন। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কথা চিন্তা করলে খুব কম লোকই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় উইন্ডোজের অরিজিনাল সিডি কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাবেন। একই জিনিস যদি কেউ হাজার টাকার বদলে মাত্র ৪০-৫০ টাকায় পায় তবে সে নকল সিডির প্রতিই বেশি ঝুঁকবে। কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার দায়ে মূল কোম্পানি ব্যবহারকারীকে দোষী সাব্যস্ত করে জরিমানা করতে পারে। তাই হয় অরিজিনাল কপি ব্যবহার করতে হবে অথবা খুঁজতে হবে এমন কিছু যা অল্পমূল্য বা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। পাইরেসি সমস্যার সমাধানে ওপেনসোর্সের তরফ থেকে বাজারে আসে লিনআক্স নামের অপারেটিং সিস্টেম। ওপেনসোর্সভিত্তিক এই অপারেটিং সিস্টেমটি সবার মাঝে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর কারণ ছিল এটি বিনামূল্যে পাওয়া যেত। সোর্স কোড উন্মুক্ত থাকার কারণে প্রোগ্রামারদের মাঝে লিনআক্স খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল এবং তারা লিনআক্সে বাংলা কমপিউটিংয়ের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হলো। উবুন্টু লিনআক্সে বাংলা সংযোজন বাংলা কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রে বিশাল এক সাফল্য। ইউনিকোডের আশীর্বাদে উবুন্টুকে প্রায় অনেকাংশে বাংলায় অনুবাদ করা সম্ভব হয়েছে। এই কাজ সাধন করার জন্য অনেক বাঙালির শ্রম রয়েছে। লিনআক্সের অন্যান্য ভার্সনেও রয়েছে বাংলা লেখা ও পড়ার ব্যবস্থা। বাংলা ভাষায় বের হওয়া লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেম শ্রাবণী ও হৈমন্তী প্রমাণ করে লিনআক্সে বাংলা কমপিউটিংয়ের জয়ের কথা। তাই এ বিষয়ে আর বাড়িয়ে তেমন কিছু না বললেই চলে। লিনআক্সে বাংলা কমপিউটিংয়ে একটি সমস্যা রয়ে গেছে, তা হলো বাজারে যেসব বাংলাভিত্তিক সফটওয়্যার বের হয় তার বেশিরভাগই হচ্ছে উইন্ডোজের জন্য। লিনআক্সের জন্যও যদি এসব সফটওয়্যার বের করা হয় তবে লিনআক্স ব্যবহারকারীদের জন্য তা অনেক উপকারী একটি পদক্ষেপ হবে। তবে খুশির খবর এই যে, বেশ কয়েকজন ডেভেলপার লিনআক্সের জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপ করছেন।

আন্ড্রয়িড



বাংলা লেখালেখি শুধু ডেস্কটপ কমপিউটার ও ল্যাপটপেই সীমাবদ্ধ থাকেনি তা ছুঁয়েছে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমকেও। গুগলের জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়িডের জন্য বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যার সাহায্যে বাংলা লেখা যায় এবং বাংলা ওয়েবসাইটগুলো ঠিকমতো দেখা যায়। অ্যান্ড্রয়িডের জন্য বাংলা অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপের জন্য বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার কাজ করছেন। মায়াবী নামের একটি বাংলা কিবোর্ড অ্যাপ্লিকেশন বের করা হয়েছে আইওএসের জন্য যা আরো উন্নত করার চেষ্টা চলছে।

আইওএস

আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম তথা আইওএসের জন্যও অভ্রের প্রতিষ্ঠাতা কোম্পানি ওমাইক্রনল্যাব ডেভেলপ করেছে বাংলা লেখার অ্যাপ্লিকেশন। আইওএসে বাংলা লেখা দেখার উপায় ছিল, কিন্তু লেখার উপায় ছিল না। ওমাইক্রনল্যাব সে বাধা দূর করে দিয়েছে। আইঅভ্রপ্যাড নামের অ্যাপ্লিকেশনটি দিয়ে আইফোন, আইপড টাচ ও আইপ্যাডে বাংলা ইনপুট দেয়া যাবে। অ্যাপ্লিকেশনটি ফ্রিওয়্যার হিসেবে মুক্ত করা হয়েছে।

অন্যান্য মোবাইল ওএস

মোবাইল ফোন তথা মুঠোফোনে কতরকম ফাংশন আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। যোগাযোগ, তথ্য সংরক্ষণ, বিনোদন, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি কাজে এর জুড়ি নেই। কিছু কিছু মুঠোফোনে ওয়ার্ড ডকুমেন্টেও কাজ করা যায়, তাই মোবাইলেও বাংলার প্রসার চালানোর ব্যবস্থা থেমে থাকেনি। বিখ্যাত মোবাইল সেট নির্মাতা কোম্পানি নোকিয়া তাদের বিভিন্ন সেটে বাংলা ডিসপ্লে, কিপ্যাড, বাংলা ভয়েস ক্লক ইত্যাদি সুবিধা দিচ্ছে। বুয়েটের তিন ছাত্র থ্রিএসএম সিস্টেম নামের ডেভেলপার টিম তৈরি করে মোবাইলের জন্য বাংলা এসএমএস করার সফটওয়্যার বানাতে সক্ষম হয়। তারা এই সফটওয়্যারটি ২০০৫ সালের ১৩ মে সিটিসেল গ্রাহকদের ব্যবহার করার জন্য অবমুক্ত করে। বাংলালিংকও পিছিয়ে নেই। তারা বের করেছে বাংলায় T9 ডিকশনারি, যা বাংলায় মেসেজ লেখার সময় দারুণ কাজে দেয়। সেন্টিলেন সলিউশন গ্রুপের সহযোগিতায় একটেল কোম্পানি বের করে একটেল মায়ের ভাষা নামের বাংলা মেসেজিং সফটওয়্যার, যা ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি রিলিজ করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে আরো ভালো মানের মোবাইল সফটওয়্যার বের করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে। জাভা সাপোর্টেড মোবাইল ফোনে ওপেরা মিনি ব্রাউজার ব্যবহার করে বাংলা লেখা ওয়েবসাইট দেখা যায় যদি তার সেটিংয়ে কিছুটা রদবদল করা হয়।

স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাংলা কমপিউটিংয়ের আরো কিছু দিক এ সংখ্যায় তুলে ধরা সম্ভব হলো না। তাই পরে এ ব্যাপারে আরো আলোচনা করা হবে। সেখানে থাকবে বাংলা সফটওয়্যারের সমাহার, বাংলা ওয়েবসাইট ও বাংলা ব্লগের সফলতা, বাংলা টিউটরিয়াল সাইট, বাংলা অনলাইন ও অফলাইন ওয়েব টুল, ডিজিটাল প্রকাশনা, ডিজিটাল এডুকেশন সিস্টেম ইত্যাদি বিষয়।

শেষের কথা

ভাষা শহীদদের সম্মানের লক্ষ্যে ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদ দিবস পালন করি ও বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠি। স্বাধীনতার এত বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা কী আমাদের ভাষার যথার্থ মূল্যায়ন করতে পেরেছি? ভাষা শহীদদের স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ, সেই স্বপ্ন কী আমরা পূরণ করতে পারি না? আমরা কী পারি না আমাদের ভাষাকে বিশ্বের কাছে আরো উঁচু করে তুলে ধরতে? বাংলা ভাষার সাহিত্য, আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও দেশীয় সংস্কৃতি বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে? অনেক বাঙালি এগিয়ে এসেছেন বিশ্বায়নের এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলা ভাষা সবদিকে ছড়িয়ে দিতে। তাদের এ প্রয়াস সফল করে তুলতে চাই বাংলা ভাষার ওপর ব্যাপক প্রাযুক্তিক গবেষণা, নইলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। তথ্যপ্রযুক্তির জগতে এই বাংলা ভাষার উপস্থিতি যত সরব হবে আমাদের সামগ্রিক অগ্রগতি তত বেশি সহজতর হবে। বাংলা নিয়ে আমাদের গৌরবের পরিধিও তত সম্প্রসারিত হবে। এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সে উপলব্ধি নিয়েই কমপিউটিংয়ে বাংলা ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে নানাধর্মী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছে। তাদের এ উদ্যোগ মহৎ। দেশবাসী চায় তাদের এ উদ্যোগ আসছে দিনে আরো সম্প্রসারিত হোক। পাশাপাশি আরো নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এ উদ্যোগে তাদের সাথে শামিল হোক। সে উদ্যোগসূত্রেই আরো সমৃদ্ধতর হোক বাংলা ভাষায় কমপিউটিং।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস