লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মুহাম্মদ মেহেদী হাসান
মোট লেখা:১৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি পণ্য
এ যুগের স্মার্টফোন
কিছুদিন আগেও কর্পোরেট মানুষ বলতে চোখের সামনে ভেসে উঠত ব্রিফকেস, ল্যাপটপ, ফাইলপত্রসহ জবড়জং অবস্থা। ব্যবসায়িক মানুষের প্রয়োজনগুলো আগের মতো থাকলেও অবস্থা কিন্তু এখন অনেকটাই পাল্টেছে। এখনও ঠিক আগের মতোই যোগাযোগের জন্য দরকার মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ, প্রয়োজনের সময় দরকার নির্দিষ্ট ফাইলটি, সঠিক সময়ে সঠিক খবরটি না পেলে এখনও ব্যবসায়ের অনেক ক্ষতি হতে পারে, যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ফোন কল, সারাদিনের কর্মসূচি, প্রোজেক্ট আপডেট বা যোগাযোগের প্রয়োজনীয় তথ্য দরকার হাতের নাগালে। সবকিছু আগের মতো থাকলেও পরিবর্তনের বিষয় এই যে, এ সবকিছু করার জন্য এখন দরকার একটি মাত্র ক্ষুদে ডিভাইস-স্মার্টফোন। এ তো গেল কাজের দিক, চিত্তবিনোদনেও স্মার্টফোনের জুড়ি মেলা ভার। মাল্টিকোর প্রসেসর, হাই ডেফিনিশন ক্যামেরা আর ইউজার-ফ্রেন্ডলি অপারেটিং সিস্টেম স্মার্টফোনকে কমপিউটারের সমতুল্য করে তুলেছে। আকারে ছোট ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় মানুষ এখন স্মার্টফোন বেছে নিচ্ছে তাদের নিত্যদিনের কাজের সহায়ক হিসেবে।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে ডেস্কটপ কমপিউটারের স্থান দখল করেছিল ল্যাপটপ কমপিউটার। সম্প্রতি পার্সোনাল কমপিউটার পরিবারের নতুন সদস্য হয়ে এসেছে ট্যাবলেট পিসি। কিন্তু শেকড় গেঁড়ে বসার আগেই প্রযুক্তি জগতে জোরালো আবেদন নিয়ে আবির্ভাব হয় স্মার্টফোনের। স্মার্টফোনের ধারণা কিন্তু একেবারে নতুন নয়। ব্ল্যাকবেরি এবং আরও আগে পিডিএ ফোনগুলোকে বর্তমানের স্মার্টফোনের পূর্বসুরি বলা চলে। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে আমূল পরিবর্তিত রূপে ধরা দিয়েছে বর্তমান ধারার এই ক্ষুদে কমপিউটার। এর নির্মাতারাও যেন সব সুযোগ-সুবিধা একেবারে ঠেসে ভরে দিতে চান যাতে ব্যবহারকারীর সব চাহিদা পূরণ করতে পারে এই একটি মাত্র ডিভাইস। মোবাইল ফোন তো বটেই, এমনকি কমপিউটারের বিকল্প এই স্মার্টফোনগুলো বর্তমানে মানুষের প্রধান আকর্ষণের বিষয়বস্ত্ত। শুধু গত বছরেই ৪৮.৭৭ কোটি স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে যা পিসি এবং ট্যাবলেটের বিক্রির সমন্বিত সংখ্যার চেয়েও বেশি। এ থেকেই বোঝা যায় কীভাবে স্মার্টফোন অন্যান্য কমপিউটারের বাজার দখল করে নিচ্ছে। সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন কমপিউটারের বিকল্প হিসেবে বেশিরভাগ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করা শুরু করবে।
যেসব কারণে স্মার্টফোন কিনবেন
অপারেটিং সিস্টেম :
স্মার্টফোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা সম্ভবত এর অপারেটিং সিস্টেম। গুগলের অ্যান্ড্রোয়িড ও অ্যাপলের আইওএসে চমৎকার গ্রাফিক্সের পাশাপাশি আছে চমৎকার পারফরম্যান্স। নতুন নতুন অ্যাপলিকেশন যেমন চালাতে পারবেন, তেমনি সাজিয়ে নিতে পারবেন নিজের মতো করে। এছাড়া আছে ব্ল্যাকবেরি ওএস, মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোন কিংবা এইচপির ওয়েব ওএস। সবগুলোই ব্যবহারকারীকে দেবে সর্বোৎকৃষ্ট অভিজ্ঞতা। সাথে হালনাগাদ করার সুবিধাও থাকছে।
ইন্টারনেট সংযোগ :
বর্তমানে মোটামুটি সব মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও স্মার্টফোনগুলোতে পাওয়া যাবে ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতা। উঁচুগতির সংযোগের সাথে থাকছে ওয়াইফাই এবং ৩এ-এর মতো প্রযুক্তি। কিছু কিছু স্মার্টফোনে এমনকি 4G পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে।
সিনক্রোনাইজেশনের সুযোগ :
বেশিরভাগ স্মার্টফোনে সিনক্রোনাইজেশন সুবিধা আছে যা আপনার বাসায় রাখা পিসি, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট কমপিউটারটির সাথে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করে তথ্য হালনাগাদ করে নিতে পারে। ফলে আপনার অসমাপ্ত কাজটুকু রাস্তায় চলমান অবস্থায় সেরে নিতে পারবেন। আবার প্রয়োজনে বাসা বা অফিসের পিসি থেকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেখতে বা সম্পাদনা করতে পারবেন।
রিয়েল-টাইম ই-মেইল :
সব মোবাইল ফোনে এসএমএস সুবিধা রয়েছে। স্মার্টফোনেও রয়েছে। তবে স্মার্টফোনে বেশি সুবিধা পাবেন রিয়েল-টাইম ই-মেইল। অর্থাৎ এটি আপনার ই-মেইল ইনবক্সের সাথে প্রতিনিয়ত সংযোগ স্থাপন করবে। ফলে আপনার দরকারি ই-মেইলটি ঠিক তখনি পাবেন যখন সেটি ইনবক্সে এসে পৌঁছাবে।
বড় পর্দা :
স্মার্টফোনের আরেকটি বড় সুবিধা এর বড় স্পর্শকাতর পর্দা। যদিও স্মার্টফোন হওয়ার জন্য এটি জরুরি নয় এবং সব স্মার্টফোনে স্পর্শকাতর পর্দা থাকে না। তবে মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে বড় বড় স্মার্টফোন প্রস্ত্ততকারী কোম্পানি তাদের তৈরি ফোনে বড় পর্দা যোগ করার একটা প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
মাল্টিমিডিয়া :
কাজের চাপে ক্লান্ত মন যখন একটু মুক্তির স্বাদ পেতে চায় তখনও স্মার্টফোন দিতে পারে পছন্দমাফিক বিনোদন। অডিও গানসহ স্মার্টফোন চালাতে পারে হাই ডেফিনিশন ভিডিও। ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় আপনি দেখে নিতে পারেন পছন্দের কোনো মুভি। আবার ছবি দেখে ফিরে যেতে পারেন পরিবারের সাথে কাটানো কোনো সুন্দর মুহূর্তে। আর এসব সুবিধা থাকছে আপনার পকেটেই।
থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন :
স্মার্টফোনগুলো এখন আর নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মোটামুটি সব স্মার্টফোনের সাথে থাকছে হাজার হাজার থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন, যা আপনাকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করবে। সব ধরনের কাজের অ্যাপ্লিকেশন পাবেন সেখানে। প্রয়োজন শুধু নির্দিষ্ট অ্যাপটি অ্যাপ স্টোর থেকে নামিয়ে নেয়া।
উঁচুমানের ক্যামেরা :
স্মার্টফোনের হাই ডেফিনিশন ক্যামেরা আপনাকে দেবে ফটোগ্রাফির স্বাদ। এ ছাড়া হাই ডেফিনিশন ভিডিও ধারণ করার সুবিধাও রয়েছে স্মার্টফোনে। সাথে রয়েছে বড় পর্দায় যেকোনো সময় তা দেখার।
কোয়ার্টি কিবোর্ড :
স্মার্টফোনে পাচ্ছেন পূর্ণ কিবোর্ড ব্যবহারের সুবিধা যা সাধারণত পিসি বা ল্যাপটপে থাকে। ফলে আপনি অনেক দ্রুতগতিতে রিপ্লাই করতে পারবেন কোনো ই-মেইল বা টাইপ করতে পারবেন কোনো দরকারি ডকুমেন্ট।
স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়
বর্তমান বাজারে স্মার্টফোনের প্রচুর চাহিদা। মোবাইল ফোন প্রস্ত্ততকারী কোম্পানিগুলো এই চাহিদার কথা ভেবে তাদের স্মার্টফোনগুলো ডিজাইন করছে। স্মার্টফোন তৈরির ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন বিষয় ভেবে দেখছে। কেউ বড় স্পর্শকাতর পর্দার স্মার্টফোন পছন্দ করেন, আবার কারো দরকার হার্ডওয়্যার কিবোর্ড, কেউ মিনি কমপিউটার হিসেবে ব্যবহার করতে চান, আবার কেউ কলের গুণগত মান যাচাই করেন, কেউ ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করেন, কেউ করেন নিতান্ত শখের বসে। বাজারে এত স্মার্টফোনের মাঝে আপনারটি বেছে নেয়া সত্যি কঠিন। তুলনামূলকভাবে স্মার্টফোন কেনার খরচটা বেশি। তাই কেনার পর এর সুযোগ-সুবিধা যাচাই করার চেয়ে ভালো কেনার আগেই ভেবে দেখা। কিছু কিছু বিষয় ভেবে দেখলে হয়তো আপনার দরকারি স্মার্টফোনটি বাছাই করা সহজ হবে।
কোন অপারেটিং সিস্টেমটি আপনার দরকার
আপনি যদি প্রাত্যহিক কাজের জন্য গুগলের সেবার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হন, তবে অ্যান্ড্রোয়িড অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত স্মার্টফোন বেশি কাজের হবে। সার্চ ইঞ্জিন, জি-মেইল, গুগল ড্রাইভ, গুগল ক্যালেন্ডার, গুগল ম্যাপ, ইউটিউব ইত্যাদি সেবা ভালো পাওয়া যাবে অ্যান্ড্রোয়িড ফোনে। অন্যদিকে আপনার বেশিরভাগ কাজ যদি মাইক্রোসফট অফিস সফটওয়্যার ভিত্তিক হয়, সেক্ষেত্রে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ফোন অপারেটিং সিস্টেমে বেশি ভালো সেবা পাবেন কারণ ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট, অ্যাক্সেস বা আউটলুকের মতো অ্যাপ্লিকেশন উইন্ডোজ ফোনে বিল্ট-ইন থাকে। অ্যাপলের আইওএস তাদের জন্য ভালো হবে যাদের অ্যাপলের অন্যান্য পণ্য আছে বা তাদের সেবা ব্যবহারে অভ্যস্ত। তবে এখনও পেশাদার মানুষদের কাছে ব্ল্যাকবেরি তুমুল জনপ্রিয়। ব্যবসায়িক যোগাযোগ রক্ষার জন্য ব্ল্যাকবেরি সত্যি অতুলনীয়। এখন আপনাকেই ভেবে দেখতে হবে আপনার কাজের ধরন কেমন।
থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন
মোটামুটি সব স্মার্টফোনের জন্য থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন সুবিধা থাকলেও এই সেবাটি ভালো পাওয়া যায় গুগলের অ্যান্ড্রোয়িড এবং অ্যাপলের আইওএস অপারেটিং সিস্টেমে। হাজার হাজার অ্যাপসের পাশাপাশি প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন অনেক অ্যাপ্লিকেশন। তাই আপনার লক্ষ্য যদি হয় প্রচুর অ্যাপস ইনস্টল করে স্মার্টফোনটিকে আরও বেশি উৎপাদনশীল করে তোলা, তাহলে এই দু’টি অপশনের মধ্যে একটি বেছে নিন।
স্মার্টফোনটির ডিজাইন কি আপনার মনের মতো?
যারা শৌখিন এবং স্মার্টফোন কিনবেন অনেকটা শখ মেটাবার জন্য তাদের জন্য রয়েছে প্রচুর অপশন। কারণ সব স্মার্টফোন প্রস্ত্ততকারী কোম্পানির লক্ষ থাকে পণ্যের ডিজাইনের ওপর। অ্যাপলের আইফোন এক্ষেত্রে অন্যতম পছন্দ হতে পারে। এছাড়া এইচটিসি, স্যামসাং এবং নোকিয়ার স্মার্টফোনগুলোর ডিজাইন চমৎকার। স্মার্টফোনের ডিজাইনের ক্ষেত্রে আউটলুক যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভেতরের ব্যাপারটাও ঠিক ততটাই। মোবাইলের পর্দার ভূমিকাও অনেকখানি। সবকিছু দেখার পর নির্বাচন করুন আপনার পছন্দের স্মার্টফোনটি।
জেনে নিন ব্যাটারির আয়ু
স্মার্টফোনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটারি লাইফ। অত্যাধুনিক সব সুবিধা, বড় পর্দা, উঁচুগতির ইন্টারনেট সংযোগ, মিউজিক প্লেব্যাক সব মিলিয়ে অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী অভিযোগ তুলেছেন তাদের ব্যাটারির স্থায়িত্ব কম এবং প্রায় বেশিরভাগ সময় চার্জ করতে হয়। নিঃসন্দেহে এটি খুব বিরক্তিকর। তাই আগেই দেখে নিন ব্যাটারির আয়ু কেমন। সাধারণত টক টাইম এবং স্ট্যান্ডবাই টাইমে ব্যাটারির জীবনীশক্তি বিচার করা হয়। প্রতিটি স্মার্টফোনের ওয়েবসাইটে ব্যাটারি আয়ু সংক্রান্ত তথ্য দেয়া থাকে। কেনার আগে তা দেখে নিন।
স্মার্টফোনে কি পরিমাণ স্টোরেজ দরকার?
ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল-স্মার্টফোনে এই দু’ধরনের কিংবা এর যেকোনো একটি মেমরি থাকে। স্মার্টফোন নির্বাচন করার আগে মেমরির পরিমাণ দেখে নিন। যদি শুধু ইন্টারনাল মেমরি থাকে তাহলে নিশ্চিত করে নিন যে সেই মেমরিটুকু আপনার জন্য পর্যাপ্ত। আর এক্সটারনাল মেমরির সুবিধা থাকলে ঠিক কতটুকু মেমরি বাড়ানো যাবে তাও দেখে নিন।
মাল্টিমিডিয়া সুবিধা যাচাই করে নিন
প্রায় সব স্মার্টফোনে থাকে উঁচুমানের ক্যামেরা। ক্যামেরার গুণগত মান নির্ধারণ করা হয় সাধারণত মেগাপিক্সেলের পরিমাণ, অপটিক্যাল জুম, ভিডিও ফ্রেম রেট ইত্যাদির ওপর। ভিডিওকলের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি ক্যামেরা খুব কার্যকর। এছাড়া অডিও-ভিডিও ধারণ ও প্লেব্যাক, বাসার কমপিউটারটির সাথে সিনক্রোনাইজেশন ইত্যাদি বিষয় দেখে নিতে হবে।
টাচস্ক্রিন নাকি কোয়ার্টি কিবোর্ড?
যদিও বেশিরভাগ মানুষ টাচস্ক্রিন স্মার্টফোন পছন্দ করেন। কারণ টাচস্ক্রিন ফোন দেখতে সুন্দর, স্লিম, বড় পর্দার হয়। অপরদিকে হার্ডওয়্যার কিবোর্ডযুক্ত স্মার্টফোন আকারে কিছুটা মোটা অথবা ছোট পর্দার হয়ে থাকে। তবে এতে সুবিধা হলো খুব দ্রুত টাইপ করা যায়।
বাজেট কেমন হবে?
সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বাজেট। পকেটের কথা বিবেচনায় রেখে তারপর সুবিধার কথা ভাববেন। নইলে সবকিছু নির্বাচন করার পর হয়তো আপনাকে হতাশ হতে হবে।
এছাড়া আরও কিছু বিষয় রয়েছে যা আপনার স্মার্টফোন নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন প্রসেসর, র্যাম, কলের গুণগত মান, ইন্টারনেটের গতি, জিপিএস সুবিধা ইত্যাদি। সবকিছু বিবেচনায় এনে তারপর স্মার্টফোন কিনুন। এজন্য কিছুটা সময় ব্যয় করতে কার্পণ্য করবেন না। আর তথ্যের সবচেয়ে বড় উৎস ওয়েবসাইট। স্মার্টফোনের নিজ নিজ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি জিএসএম অ্যারেনা নামের ওয়েবসাইটটিতে ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন (ঠিকানা : http://www.gsmarena.com), যেখানে বিভিন্ন স্মার্টফোন পাশাপাশি তুলনা করে দেখার সুবিধা আছে।
সেরা কোম্পানিগুলোর সেরা স্মার্টফোন
০১. স্যামসাং-গ্যালাক্সি এস থ্রি :
বর্তমান সময়ের সেরা স্মার্টফোন স্যামসাং গ্যালাক্সি এস থ্রি, ডিজাইন বা পারফরম্যান্স সব দিক দিয়েই অনন্য। ৪.৮ ইঞ্চির চমৎকার সুপার অ্যামোলেড ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিনে রয়েছে করনিং গরিলা গ্লাস ২, যা পর্দাকে যেকোনো ধরনের আঘাত এবং দাগ পড়া থেকে রক্ষা করবে। ডিসপ্লে রিজ্যুলেশন ৭২০×১২৮০। সুন্দর মুহূর্তগুলো ধারণ করে রাখার জন্য থাকছে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, যা দিয়ে একই সাথে উঁচুমানের স্থির এবং চলমান চিত্র ধারণ করা যাবে। সাথে রয়েছে ১.৯ মেগাপিক্সেলের সেকেন্ডারি ক্যামেরা। ফোনটি ১৬, ৩২ এবং ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমরিসহ বাজারে পাওয়া যায়। এছাড়া ৬৪ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমরি কার্ড লাগাবার ব্যবস্থা রয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য রয়েছে জিপিআরএস, ওয়াইফাই, থ্রিজি এবং ফোরজি প্রযুক্তি। স্মার্টফোনটি চালনার জন্য আছে অ্যান্ড্রোয়িড অপারেটিং সিস্টেমের ৪.০.৪ সংস্করণ। কোয়াড কোর ১.৪ গিগাহার্টজ কর্টেক্স প্রসেসর এবং ১ গিগাবাইট র্যামের সাথে আছে মালি-৪০০এমপি গ্রাফিক্স প্রসেসর যা একটি সাধারণ মানের পিসির তুলনায় বেশি। ২১০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিটি স্ট্যান্ডবাই অবস্থায় চলবে ৫৯০ ঘণ্টা পর্যন্ত, ২জি নেটওয়ার্কে একটানা কথা বলা যাবে ২১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট এবং ৩জি নেটওয়ার্কে কথা বলা যাবে ১১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।
একের পর এক স্মার্টফোন তৈরি করে প্রযুক্তি জগতে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে স্যামসাং। তাদের স্মার্টফোনগুলো ওমনিয়া (উইন্ডোজ ফোন), ওয়েভ (বাডা) এবং গ্যালাক্সি (অ্যান্ড্রোয়িড) সিরিজের অন্তর্গত। তাদের তৈরি বর্তমান সময়ের সাড়া জাগানো স্মার্টফোনের মাঝে রয়েছে গ্যালাক্সি নোট, গ্যালাক্সি এস টু, গ্যালাক্সি এস, ওমনিয়া ৭, ওয়েভ থ্রি ইত্যাদি।
০২. এইচটিসি-ওয়ান এক্স :
এইচটিসির ওয়ান এক্স মডেলের স্মার্টফোনটিকে একটি কমপিউটার বললে মোটেই ভুল হবে না। কোয়াড কোর ১.৫ গিগাহার্টজ প্রসেসর ও ১ গিগাবাইট র্যাম দিয়েছে অনন্য গতি। সাথে আরও রয়েছে ইউএলপি জিফোর্স গ্রাফিক্স প্রসেসর। করনিং গরিলা গ্লাস দিয়ে সুরক্ষিত সুপার আইপিএস এলসিডি২ ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিনের আকার ৪.৭ ইঞ্চি। স্ক্রিন রেজ্যুলুশান ৭২০ X ১২৮০ পিক্সেল। ৩২ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমরি থাকলেও এক্সটারনাল মেমরি কার্ড লাগাবার ব্যবস্থা নেই। উঁচুগতির ইন্টারনেট সংযোগের জন্য জিপিআরএসের পাশাপাশি আছে থ্রিজি এবং ওয়াইফাই। ৮ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরার পাশাপাশি আছে ১.৩ মেগাপিক্সেলের সেকেন্ডারি ক্যামেরা। পরিচালনার জন্য রয়েছে অ্যান্ড্রোয়িড অপারেটিং সিস্টেমের ৪.০ সংস্করণ। ব্যাটারিটি ১৮০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের।
পিডিএ তৈরির জন্য বিখ্যাত এইচটিসির সব স্মার্টফোনই বেশ উঁচ্চমানের। এদের মাঝে ওয়ান সিরিজের স্মার্টফোনগুলো বর্তমান সময়ে বেশ প্রচলিত। এগুলোর মাঝে রয়েছে ওয়ান ভি, ওয়ান এস, সেনসেশান, টাইটান, এক্সপ্লোরার, ডিজায়ার সি ইত্যাদি।
০৩. অ্যাপল-আইফোন ফোর এস :
মূলত টাচস্ক্রিন স্মার্টফোনের বাজারে প্রতিযোগিতা শুরু হয় আইফোন তৈরির মাধ্যমেই। স্মার্টফোনের তালিকায় শীর্ষস্থান হারাবার পর আইফোন সম্পর্কে বলা হয়, এটি রাজা না হলেও রাজকীয় পরিবারের সদস্য। গত বছরের অক্টোবরে বাজারে আসে আইফোন ফোর এস। এর ৬৪০ X ৯৬০ পিক্সেলের ৩.৫ ইঞ্চি এলইডি-ব্যাকলিট আইপিএস টিএফটি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন স্মার্টফোনটির শোভা অনেকাংশে বাড়িয়েছে। পর্দার নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত শক্ত করনিং গরিলা গ্লাসের পাশাপাশি ওলিওফোবিক কোটিং রয়েছে যা এমনকি আঙুলের ছাপও পড়তে দেবে না। ফোনটি ১৬, ৩২ এবং ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমরিসহ বাজারজাত করা হলেও কোনো এক্সটারনাল মেমরি কার্ড লাগাবার ব্যবস্থা নেই। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য অন্যান্য স্মার্টফোনের মতোই রয়েছে জিপিআরএস, ওয়াইফাই এবং থ্রিজি প্রযুক্তি। অ্যাপলের বিখ্যাত আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের পঞ্চম সংস্করণ রয়েছে এই আইফোনে। আইফোন ফোর এস ও আইফোনের আগের সংস্করণের মাঝে অন্যতম পার্থক্য এর ক্যামেরা। এলইডি ফ্ল্যাশসহ ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সংযুক্ত হয়েছে এই স্মার্টফোনটিতে। অ্যাপল এ৫ চিপসেটে রয়েছে ডুয়াল কোর ১ গিগাহার্টজ কর্টেক্স এ৯ প্রসেসর। ৫১২ মেগাবাইট র্যাম আছে, আরও আছে আলাদা গ্রাফিক্স প্রসেসর। ১৪৩২ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি রয়েছে যা দিয়ে ২জি নেটওয়ার্কে একটানা ১৪ ঘণ্টা এবং ৩জি নেটওয়ার্কে ৮ ঘণ্টা কথা বলা যাবে। আর স্ট্যান্ডবাই মোডে থাকবে প্রায় ২০০ ঘণ্টা।
আইফোনের বিকল্প শুধুই আইফোন। অ্যাপলের অন্য স্মার্টফোনগুলো একই নামে প্রচলিত। মূলত একের পর এক আধুনিকতম সংস্করণ প্রকাশ করা হচ্ছে। আইফোনের আগের সংস্করণগুলোর মাঝে আইফোন ৪, আইফোন ৩জিএস এখনও বেশ জনপ্রিয়।
০৪. মটোরোলা-ড্রয়িড রেজর ম্যাক্স :
মটোরোলার এই স্মার্টফোনটি প্রকৃতপক্ষেই ‘স্মার্ট’। ডিজাইন, পারফরমেন্স, সুবিধা সব কিছুই চমৎকার। তবে এটি একটি সিডিএমএ ফোন, পৃথিবীর কোনো জিএসএম নেটওয়ার্কেই এই স্মার্টফোনটি কাজ করবে না। বাংলাদেশে একমাত্র সিডিএমএ নেটওয়ার্ক রয়েছে দেশের প্রথম মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি সিটিসেলের। তাই পছন্দের তালিকায় রাখার আগে সে কথা বিবেচনা করে নেয়া ভালো। সিডিএমএ হ্যান্ডসেট হলে কি হবে, এটি ২জি, ৩জি, এমনকি ৪জি প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক সমর্থন করে। করনিং গরিলা গ্লাসে সুরক্ষিত ৪.৩ ইঞ্চি সুপার অ্যামোলেড অ্যাডভান্সড ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিনে রয়েছে ৫৪০×৯৬০ পিক্সেল। ৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমরির সাথে অতিরিক্ত যোগ করতে পারবেন ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমরি। ১ গিগাবাইট র্যাম, ডুয়াল কোর ১.২ গিগাহার্টজ কর্টেক্স এ৯ প্রসেসর এবং পাওয়ার ভিআর গ্রাফিক প্রসেসর। পরিচালনার জন্য অ্যান্ড্রোয়িড অপারেটিং সিস্টেমের ২.৩.৬ সংস্করণ থাকলেও তা ৪.০ সংস্করণে উন্নীত করার সুযোগ থাকছে। ৮০২.১১ প্রযুক্তির ওয়াইফাই সুবিধা থাকছে। ছবি তোলার জন্য থাকছে এলইডি ফ্ল্যাশসহ ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, যা দিয়ে হাই ডেফিনিশন ভিডিও ধারণ করা যাবে। ১.৩ মেগাপিক্সেলের সেকেন্ডারি ক্যামেরা রয়েছে সাথে। অত্যন্ত উঁচুশক্তির ৩৩০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি দিয়ে টানা সাড়ে ২১ ঘণ্টা কথা বলা যাবে, স্ট্যান্ডবাই মোডে চলবে ৩৮০ ঘণ্টা। এছাড়া ইলেকট্রিফাই, ইলেকট্রিফাই ২, অ্যাট্রিক্স, অ্যাট্রিক্স ২, ট্রায়াম্ফ, ফোটোন ইত্যাদি রয়েছে।
০৫. নোকিয়া-লুমিয়া ৯০০ :
চলতি বছরের মে মাসে বাজারে আসা নোকিয়া লুমিয়া ৯০০-এ রয়েছে ৪.৩ ইঞ্চি অ্যামোলেড ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন। ৪৮০ X ৮০০ পিক্সেলের মাল্টি টাচস্ক্রিনের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে করনিং গরিলা গ্লাস যা দাগ পড়া থেকে পর্দাকে রক্ষা করবে। স্মার্টফোনটিতে ১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমরি থাকলেও অতিরিক্ত মেমরি কার্ড লাগাবার সুযোগ থাকছে না। উঁচুগতির ইন্টারনেট সংযোগের জন্য জিপিআরএসের পাশাপাশি থাকছে ওয়াইফাই এবং থ্রিজি প্রযুক্তি। চমৎকার ছবি তোলার জন্য ডুয়াল এলইডি ফ্ল্যাশসহ রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। ভিডিও কলের জন্য থাকছে ১ মেগাপিক্সেল সেকেন্ডারি ক্যামেরা। ১.৪ গিগাহার্টজ প্রসেসর এবং ৫১২ মেগাবাইট র্যামের স্মার্টফোনটি চলবে উইন্ডোজ ফোন ৭.৫ ম্যানগো অপারেটিং সিস্টেমে। ১৮৩০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারিতে একটানা কথা বলা যাবে প্রায় ৭ ঘণ্টা, স্ট্যান্ডবাই অবস্থায় থাকবে ৩০০ ঘণ্টা এবং ৬০ ঘণ্টা মিউজিক প্লেব্যাক করা যাবে।
নোকিয়ার অন্য স্মার্টফোনগুলোর মাঝে রয়েছে লুমিয়া ৮০০, ৪১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ৮০৮ পিউর ভিউ, ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ও হাই ডেফিনিশন ভিডিও ধারণ ক্ষমতার এন৮, এন৯ ইত্যাদি।
০৬. ব্ল্যাকবেরি-বোল্ড ৯৯০০ :
যেখানে বিশ্ববিখ্যাত স্মার্টফোন প্রস্ত্ততকারী কোম্পানিগুলোর মাঝে মাল্টিটাচস্ক্রিন হ্যান্ডসেট তৈরির লড়াই চলছে সেখানে ব্ল্যাকবেরি স্মার্টফোনগুলো হার্ডওয়্যার কিবোর্ড নিয়ে এখনও বেশ জনপ্রিয়। তবে বোল্ড ৯৯০০ স্মার্টফোনটিতে টিএফটি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিনের সাথে রয়েছে QWERTY কিবোর্ড। ২.৮ ইঞ্চি পর্দাতে আছে ৬৪০×৪৮০ পিক্সেল। ৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ হলেও অতিরিক্ত ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ড লাগানো যাবে। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য রয়েছে জিপিআরএস, থ্রিজি এবং ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা। ফ্ল্যাশসহ ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা থাকছে ফোনটিতে। অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে থাকছে ব্ল্যাকবেরি ওএস ৭.০। ১.২ গিগাহার্টজ প্রসেসরের সাথে রয়েছে ৭৬৮ মেগাবাইট র্যাম। ১২৩০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারিটির টক টাইম সাড়ে ৩ ঘণ্টা, স্ট্যান্ডবাই টাইম ৩০৭ ঘণ্টা।
ব্ল্যাকবেরির অন্য স্মার্টফোনগুলোর মাঝে বোল্ড ৯৯৩০, বোল্ড ৯৭৯০, টর্চ ৯৮৬০, টর্চ ৯৮৫০, কার্ভ ৯৩১০ ইত্যাদি বেশ উল্লেখযোগ্য।
একের পর এক চমক দেখিয়ে স্যামসাং একদিকে বাজার দখলে মাতোয়ারা হয়ে আছে, অপরদিকে অ্যাপলের রয়েছে নিজস্ব সুনাম। ব্ল্যাকবেরি তাদের পুরনো রমরমা অবস্থা ফিরে পেতে বদ্ধপরিকর। এদিকে নোকিয়া ও মটোরোলা উঠেপড়ে লেগেছে স্মার্টফোনের বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরির জন্য, আর এইচটিসির রয়েছে নিজস্ব প্রযুক্তি। এদিকে গুগলের অ্যান্ড্রোয়িড, অ্যাপলের আইওএস এবং মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোন নীরব যুদ্ধে নেমেছে বাজার দখলের জন্য। সব মিলিয়ে চারিদিকে এখন স্মার্টফোনের জয়জয়কার। বিক্রিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত বছরের তুলনায় বিক্রির হার বেড়েছে শতকরা ৬২.৭ ভাগ, যা পিসির তুলনায় চারগুণ বেশি। মানুষের চাহিদা আর প্রাপ্তির সমন্বয়ের ভার এখনের সময়ের ওপর।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক: contact@yahoo.com