লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মৃণাল কান্তি রায় দীপ
মোট লেখা:১৫
লেখা সম্পর্কিত
পাইথন প্রোগ্রামিং
তথ্যপ্রযুক্তিতে ঝোঁক আছে এমন মানুষ মাত্রই প্রোগ্রামিং শিখতে আগ্রহী। প্রোগ্রামিং শিখতে হলেই যে কমপিউটার বিজ্ঞান বা তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষার্থী হতে হবে, তা কিন্তু নয়। আইটি শিক্ষার্থী ছাড়া যারা প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী তারা নিজে নিজে চেষ্টা করেই প্রোগ্রামিং ভালোভাবে শিখছেন, সেক্ষেত্রে নিরন্তর অনুশীলন প্রয়োজন নিশ্চিতভাবে। বিভিন্ন বই এবং ব্লগ ও ইন্টারনেট ভালোভাবে প্রোগ্রামিং শেখার এক উপযুক্ত মাধ্যম।
প্রোগ্রামিং শেখা যেকোনো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে শুরু করা যায়। বহুল জনপ্রিয় সি, ভিজ্যুয়াল বেসিক, জাভা ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ অন্তত কঠিন ও দুর্বোধ্য হওয়ায় অনেকেই মাঝপথে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞরা নতুনদের পাইথন শেখার পরামর্শ দেন, কেননা পাইথন অন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে সহজ।
জানুয়ারি, ২০১৩ সংখ্যা থেকে কমপিউটার জগৎ ম্যাগাজিনে পাইথন প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহ সৃষ্টির নিয়মিত টিপস ও টিউটরিয়াল প্রকাশ করা হবে, যা পাইথন প্রোগ্রামিংয়ে নতুনদের সাহায্য করবে এবং যারা আগ্রহী তারা দিকনির্দেশনা পাবেন।
পাইথন কী
পাইথন (Python) একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড উঁচুস্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা। ১৯৯১ সালে গুইডো ভ্যান রোসাম এটি প্রথম প্রকাশ করেন। পাইথন নির্মাণ করার সময় প্রোগ্রামকে পঠনযোগ্যতার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। এখানে প্রোগ্রামারের পরিশ্রমকে কমপিউটারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাইথনের কোর সিনট্যাক্স ও সেমান্টিকস খুবই সংক্ষিপ্ত, তবে ভাষাটির স্ট্যান্ডার্ড লাইব্রেরি অনেক সমৃদ্ধ। পাইথন একটি বহু প্যারাডাইম প্রোগ্রামিং ভাষা ফাংশনভিত্তিক, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ও নির্দেশমূলক এবং এটি একটি পুরোপুরি চলমান প্রোগ্রামিং ভাষা, যার স্বনিয়ন্ত্রিত মেমরি ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এদিক থেকে এটি পার্ল, রুবি প্রভৃতির মতো।
কেন পাইথন শিখবেন
অনেক সময় দেখা যায়, জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো নতুনদের কাছে বেশ জটিল মনে হয়। তাই নতুনদের জন্য প্রোগ্রামিং শুরু করার একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে পাইথন। সাধারণ যোগ-বিয়োগের প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে মাল্টিমিডিয়া প্রোগ্রামিং পর্যন্ত সবই সম্ভব পাইথনে। পাইথন একটি উঁচুস্তরের এবং ইন্টারপ্রেটেড প্রোগ্রামিং ভাষা। সহজ কথায় বলা যায়, আপনি পাইথনে প্রোগ্রামিং কোড লিখলেন। কোড যতটুকু পর্যন্ত সঠিক, ততটুকু পর্যন্ত তার কাজ করবে। অর্থাৎ আউটপুট দেবে। সি কিংবা জাভার মতো পুরো কোডের কোনো জায়গার সামান্য ভুলের জন্য পুরো আউটপুট একদম বন্ধ থাকবে না। তাই নতুন ব্যবহারকারীরা উৎসাহ পাবেন। আরো কিছু উল্লেখ্যযোগ্য বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
০১. পাইথন পোর্টেবল,
০২. পাইথন পড়ে সহজেই বুঝা যায়,
০৩. পাইথন গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস, সিস্টেম প্রোগ্রামিং সব ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য,
০৪. পাইথনে যেকোনো কোড লিখতে অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের চেয়ে অনেক কম সময় লাগবে।
এভাবে আরো অনেক যুক্তি দেয়া যায় পাইথন ব্যবহার করার পেছনে। আর সি, সি#, জাভা ইত্যাদি উঁচুমানের হলেও পাইথনের মতো এত সোজা নয়, আর সহজে বোঝার মতো নয়। তবে একটা কথা বিশ্বাস করতে পারেন- পাইথন একবার শেখা হয়ে গেলে এটা ছেড়ে অন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে যেতে আপনার মন চাইবে না, আর গেলেও অন্য ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা খুব একটা কঠিন হবে না।
পাইথনের ব্যবহার
পাইথন দিয়ে কী করা যায় না? এমন কোনো কমপিউটার সংশ্লিষ্ট কাজের কথা মাথায় আসছে না, যা পাইথন দিয়ে করা যায় না। এটি দিয়ে সোজা থেকে শুরু করে অনেক উঁচুমানের প্রোগ্রামও তৈরি করা যায়। উল্লেখ্য, বেশিরভাগ ওপেনসোর্স প্রোগ্রাম, গেম আর ওয়েবসাইট পাইথন ব্যবহার করে বানানো হয়। সাধারণত দ্রম্নত সফটওয়ার নির্মাণের জন্য পাইথন ব্যবহার হয়।
পাইথনের কিছু উল্লেখ্যযোগ্য ব্যবহার নিচে দেয়া হলো :
০১. ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট,
০২. অ্যাপিস্নকেশন,
০৩. ওয়েব অ্যাপিস্নকেশন,
০৪ ভিডিও গেম,
০৫. ওয়েব ফ্রেমওয়ার্ক,
০৬. গ্রাফিক্স ফ্রেমওয়ার্কস,
০৭. জিইউআই ফ্রেমওয়ার্ক,
০৮. সায়েন্টিফিক প্যাকেজ,
০৯. ম্যাথমেটিক্যাল লাইব্রেরিস,
১০. বাড়তি ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ,
১১. স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে এমডেডেট ও
১২. বাণিজ্যি ব্যবহার।
কারা পাইথন ব্যবহার করে
যেসব বড় প্রকল্পে পাইথন ব্যবহার হয়েছে, তার মধ্যে জোপ অ্যাপিস্নকেশন সার্ভার, এমনেট ডিস্ট্রিবিউটেড ফাইল স্টোর, ইউটিউব এবং মূল বিটটরেন্ট ক্লায়েন্ট উল্লেখযোগ্য। যেসব বড় প্রতিষ্ঠান পাইথন ব্যবহার করে তাদের মধ্যে গুগল, নাসা ও মজিলা ফাউন্ডেশন উল্লেখযোগ্য।
তথ্য নিরাপত্তা শিল্পে পাইথনে বহুবিধ ব্যবহার লক্ষণীয়। এর মধ্যে ইমিউনিটি সিকিউরিটির কিছু টুল, কোর সিকিউরিটির কিছু টুল, ওয়েব অ্যাপিস্নকেশনের নিরাপত্তা স্ক্যানার ওয়াপিটি ও ফাজার টিএওএফ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পাইথন শিখে কী লাভ
যেহেতু বড় বড় প্রতিষ্ঠান পাইথন ব্যবহার করে, তাই বোঝা যায় পাইথনে দক্ষদের চাকরি বাজারে চাহিদা কতটুকু। তাছাড়া ফিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রতিদিন পাইথন প্রোগ্রামিংয়ের জব পোস্ট হচ্ছে অসংখ্য। সহজে শেখা যায় বলে পাইথন প্রোগ্রামারদের মূল্য নেই- এ কথা মোটেও ঠিক নয়। চাহিদার তুলনায় পাইথন প্রোগ্রামারদের অভাব ব্যাপক বিশ্ববাজারে এমনকি আমাদের দেশেও।
পাইথনে হাতেখড়ি
ইনস্টলেশন : পাইথন প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট করে। উইন্ডোজ, ম্যাকওএস, ম্যাকওএসএক্স, এস/৪০০, অ্যামিগা, ওএস/২, বিওএস এবং উইনিক্সভিত্তিক আরও অনেক নাম না জানা অপারেটিং সিস্টেম পাইথন সাপোর্ট করে। http://www.python.org/download লিঙ্ক থেকে পাইথনের সব ভার্সন ডাউনলোড করা যায় বিনামূল্যে। বর্তমানে ৩.৩.০ ভার্সন নতুন এবং সেটাই ইনস্টল করা ভালো।
উইন্ডোজের জন্য রয়েছে উইন্ডোজ ইনস্টলার প্যাকেজ এবং ম্যাকওএসের জন্য পাবেন ম্যাক ইনস্টলার ডিস্ক ইমেজ। উবুন্টুসহ অনেক লিনআক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমেই পাইথন ইনস্টল করা অবস্থায় থাকে।
উইন্ডোজে পাইথন চালানো : ইনস্টল করা বেশ সহজ অন্য সব সফটওয়্যারের মতোই। ডিফল্ট অপশনগুলো সিলেক্ট করাই থাকে। ইনস্টলেশনের পর C:/Python33 ফোল্ডারে গিয়ে python.exe-এ ডাবল ক্লিক করুন। যদি অন্য কোনো ফোল্ডারে ইনস্টল করা হয়, তাহলে ওই ফোল্ডারে গিয়ে python.exe ফাইলে ডাবল ক্লিক করুন। অথবা ইনস্টল করার পর স্টার্ট মেনুতে পাইথন ফোল্ডারে এই console পাওয়া যাবে। পাইথন কন্সোল ছাড়াও IDLE নামের একটা পাইথন GUI এডিটর আছে। পাইথনের IDLE ওপেন করলে ডিফল্ট হিসেবে Python Shell ওপেন হবে। এডিটর ওপেন করতে File > New Window নির্বাচন করুন। এটি একটি ইন্টারেকটিভ এডিটর। এই এডিটরে পাইথন কোড এডিট করা অনেক সহজ। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এই এডিটর দিয়েই পাইথন কোডিং করে।
Python IDLE / GUI Editor সম্পর্কে ধারণা পেতে Help> IDLE Help নির্বাচন করুন।
কজ
ফিডব্যাক : mkrdip@yahoo.com