• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আইটিইউ সম্মেলনের অর্জন ও বিটিআরসি চেয়ারম্যানের প্রতিশ্রুতি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইটি কনফারেন্স
তথ্যসূত্র:
সম্মেলন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আইটিইউ সম্মেলনের অর্জন ও বিটিআরসি চেয়ারম্যানের প্রতিশ্রুতি

গত ৩ থেকে ১৪ ডিসেম্বর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স (ডব্লিউসিআইটি) সম্মেলন। সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশ নেয়া পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস। সম্মেলনে যাওয়ার আগে গণমাধ্যম কর্মীদের সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত কিছু না বলায় সমালোচিত হন একই মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্বে থাকা এই ব্যক্তি। তাই সম্মেলন থেকে ফিরেই চেয়ারম্যান নিযুক্তির পর গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। এ সময় সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছাড়াও দেশের টেলিকম খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন সুনীল কান্তি বোস। আলাপকালে টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে আগামী দুই বছরে ২০টি বিষয় চিহ্নিত করার কথা জানান তিনি। এর মধ্যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাস্তবায়ন করার দিকে ইঙ্গিত দেন। তবে সম্মেলনে সবচেয়ে আলোচিত ইন্টারনেটের স্বাধীনতা খর্ব করার বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে এ সময় স্পষ্ট করে কিছু বলেননি বিটিআরসি চেয়ারম্যান। অবশ্য আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে না বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ঘণ্টাব্যাপী আলাপের শুরুতেই সম্মেলনে বিশ্ব টেলিকম ব্যবস্থাপনায় সেতুবন্ধন রচনায় গঠিত জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সংবিধান ও বিধিমালা এবং পরে প্রণীত আইটিআর নীতিমালায় বেশ কিছু বিষয়ে সংশোধন ও নতুন বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ইন্টারনেট সাইবার সিকিউরিটি, স্পেশাল টেলিকম সার্ভিসেস, অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশনের অধিকার, জীবন-যাপন পদ্ধতি থেকে শুরু করে বিশ্ব মানচিত্র ও রাজনীতির বহু মেরুকরণের মাধ্যমে ঘটমান পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন ২ প্রস্তাবনা

ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেশনের (আইটিআর) প্রস্তাবনায় যুক্ত করা হয়েছে দু’টি নতুন বিষয়। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ এবং অন্যটি তথ্যপ্রাপ্তি বা অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশনকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দান।

৭ বিধান সংযুক্তি

সম্মেলনে আইটিআরে ৭টি বিধান সংযুক্ত করা হয়। এগুলো হচ্ছে- আন্তর্জাতিক পর্যায়ের টেলিযোগযোগ ক্ষেত্রে ‘সেবা মান’ এবং ‘ভোক্তা অভিজ্ঞতা মান’ অন্তর্ভুক্ত করা, বিনা খরচে আন্তর্জাতিক মোবিলিটি কিংবা রোমিং গ্রাহকদের জন্য অপারেটরের মাধ্যমে ট্যারিফ/সেবার শর্ত/জরুরি প্রয়োজনীয় নম্বর-পস্ন্যান বিষয়ক তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি এবং রোবার্স্টনেটের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা। পাশাপাশি অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে অযাচিত বাল্ক ইলেকট্রনিক যোগাযোগ, যেমন স্প্যাম বা প্রতারণাপূর্ণ মেইল যোগাযোগ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপের বিষয়। এক্ষেত্রে বাদ যায়নি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের টেলিযোযোগের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট রেট প্রিন্সিপাল, কালেকশন চার্জ, ট্যাক্সেশন, পেমেন্ট কারেন্সি/মনিটর-ইউনিট ইত্যাদি বিষয় স্পষ্টকরণ বিষয়ও। বিধিমালায় জুড়ে দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবহৃত ইকুইপমেন্টের ক্ষেত্রে এফিসিয়েন্সি এবং ই-ওয়াস্টের মতো বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবনের বিষয়। সার্বজনীন সেবা নিশ্চিত করতে বিধিমালায় আরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অক্ষম/প্রতিবন্ধী/বৃদ্ধ মানুষের জন্য বিশেষ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার বিষয়টিও।

সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি

সম্মেলনে গৃহীত সংশোধনীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ল্যান্ড-লকড কান্ট্রি এবং স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেটগুলোতে ফাইবার অপটিকের সংযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নতুন বিশেষায়িত ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি। এর ফলে বাংলাদেশ স্থলপথে ইন্টারনেট যোগোযোগোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু ব্যবসায় সুবিধা লাভ করবে। নিজস্ব ফাইবার অপটিক সংযোগের মাধ্যমে সহজেই প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানেও আন্তর্জাতিক ডাটা পরিবহন সেবা চালু করতে পারবে বাংলাদেশ। একই সাথে মিয়ানমার এবং আফগানিস্তানসহ সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে আঞ্চলিক IX সংযোগ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এতে সমৃদ্ধ হবে দেশের কনটেন্টভিত্তিক শিল্প, বাংলাদেশ আইসিটিতে একটি আঞ্চলিক হাব হিসেবে আবির্ভূত হবে।

বস্তুত সাসেক (সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন) প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার। এ তথ্য মহাসড়কে যুক্ত হলে বাংলাদেশ থেকে কম খরচে ভারত, ভুটান ও নেপালের সাথে ফোনে কথা বলা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর ফলে ব্যান্ডউইডথও আনা-নেয়া করা যাবে।

এদিকে সাসেক প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। এ প্রকল্পে চারটি দেশ ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত হবে। বাংলাদেশ অংশে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতের সাথে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। বিটিসিএলের অধীনে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ট্রেঞ্চ কেটে ক্যাবল বসানো হবে। এটি দেখভালের দায়িত্বে আছে সরকারের তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকশন্সে (ডব্লিউসিআইটি) টেলিযোগাযোগ খাতের প্রাপ্তি সম্পর্কে সুনীল কান্তি বোস বলেন, ‘ইন্টারনেট প্রশাসনে মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখা এবং ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ।’

সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের কারণে একচেটিয়ার বদলে দরকষাকষির মাধ্যমে মোবাইল ফোনের রোমিং কলের মূল্য নির্ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। কম মূল্যের কল এবং কল শেষ হলে এসএমএসের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের বিল জানাতে বিধান করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্প্যাম মেইল বন্ধে একটি সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এতে করে প্রতারণা ঝুঁকি কমবে। অনাকাঙিক্ষত মেইল বিড়ম্বনা থেকে আমরা রেহাই পাব। এ সময় টেলিকম খাতে মানবাধিকার বিধিবিধান সমুন্নত রাখা এবং আন্তর্জাতিক বেতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকার কথাও তিনি জানান।

সম্মেলনের অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে আলোকপাত করার পর দুই মাস আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর নেয়া অগ্রাধিকারভিত্তিক উদ্যোগ এবং সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ইউটিউব, থ্রিজি ও অবৈধ ভিওআইপি বিষয়ে কথা বলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রধান সুনীল কান্তি। এ সময় তিনি টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে আগামী দুই বছরে ২০টি বিষয় চিহ্নিত করার কথা জানান। এর বেশ কয়েকটি ২০১৩ সালের জানুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়ন করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ চলছে বলে তিনি জানান।

নতুন বছরেই খুলছে ইউটিউব

দীর্ঘদিন দেশে ইউটিউব বন্ধ থাকা বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে ইউটিউব খুলে দিতে গুগলকে ইউটিউব থেকে আপত্তিকর ফুটেজ সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গুগলের প্রতিনিধি আছে। তার সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অন্যান্য দেশকে তারা যেমন সহযোগিতা করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

ইউটিউব খুলে দেয়ার প্রশ্নে সরকারের ইতিবাচক অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যত দ্রম্নত সম্ভব দেশে ইউটিউব খুলে দেয়া হবে। তবে এজন্য নতুন করে কোনো দিনক্ষণের উল্লেখ করতে রাজি হননি তিনি। তিনি বলেন, ইউটিউব ও গুগলের কাছ থেকে যে সহযোগিতা আশা করেছিলাম, তা পাইনি। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ অন্যান্য দেশের আহবানে যেভাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে, আমাদের সাথে তা করেনি। তবে আবারও আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।

গুগলের অসহযোগিতায় ইউটিউব চালু করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বিতর্কিত ইউটিউব লিঙ্ক সরিয়ে ফেলা হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গুগলের বিমাতাসুলভ আচরণে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তবে গুগল বা ইউটিউবের ভালো বিষয় শেয়ার করার পাশাপাশি খারাপ বিষয় থেকে নিজ উদ্যোগে সরে এগুলো ব্যবহার করতে ব্যবহারকারীদের প্রতি আহবান জানিয়ে নতুন বছরে ইউটিউব খুলে দেয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

সবার জন্য থ্রিজি

থ্রিজি বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল প্রযুক্তির লাইসেন্সের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হবে উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, থ্রিজি ইজ অন। বিটিআরসির করে দেয়া খসড়া নীতিমালা তিনি টেলিযোগাযোগ সচিব থাকাকালেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠান বলে জানান।

তার বক্তব্য অনুযায়ী গত ২৩ ডিসেম্বর এ নীতিমালা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে। সুনীল কান্তি বোসের প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করে দিলে পরের আরো এক সপ্তাহের মধ্যে তা তাদের হাতে এসে পৌঁছবে। সেই হিসাবে জানুয়ারি মাসেই বিটিআরসি এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে উন্মুক্ত নিলামের আয়োজন করবে।

পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক বাণিজ্যিকভাবে থ্রিজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে- এমন অভিযোগ দেশের জন্য মঙ্গলজনক ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এটা বেসরকারি অপারেটরদের জন্য একটা বোনাস বলতে পারেন। কেননা রাষ্ট্রীয়ভাবেই এর পটেনশিয়ালিটি নির্ণয় কাজ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের এজন্য বাড়তি চাপ নিতে হবে না।

লাইসেন্সিংয়ের আগেই টেলিটককে থ্রিজি দিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, ইতোমধ্যে তারা এক লাখ সিম বিক্রি করেছে। এখান থেকে শুরু করে অন্য বেসরকারি অপারেটরগুলো এগোতে পারবে। তারা মার্কেটিংয়ের প্রচারমূলক কাজ করে অন্যদের জন্য সুবিধা করে দিয়েছে। তারপরও খুব বেশি লোক থ্রিজি ব্যবহার করছে না বলেও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন বছরের মধ্যে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরকে থ্রিজি সেবা চালুর সুযোগ দেয়া হবে। এজন্য খুব শিগগিরই নিলামের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওই নিলামে থ্রিজি তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য আরও কমানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

তরঙ্গের মূল্য আরো কমছে

সংবাদ সম্মেলনে ৭শ’ মেগাহার্টজের তরঙ্গ খুব দ্রম্নতই উন্মুক্ত করে দেয়ার ঘোষণা দেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান। সেই সাথে বলেন, সামনের দিনে এমন অবস্থা হয়তো আসবে যখন দেখা যাবে এখনকার সবচেয়ে দামি তরঙ্গও কোনো কাজে লাগছে না। সে কারণে অনেক তরঙ্গ তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দেয়া হবে। আবার অনেক তরঙ্গের মূল্য দিন দিন আরও বাড়বে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, বিটিআরসি খসড়া নীতিমালায় প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের মূল্য তিন কোটি ডলার নির্ধারণ করলেও মন্ত্রণালয় তা দুই কোটি ডলার করেছে। কারো সুবিধার জন্য এই মূল্য নির্ধারণ না করে বরং তা এ খাতের স্বার্থেই করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। উদাহরণ দিয়ে বলেন, পাকিস্তানে থ্রিজির তরঙ্গ দুই কোটি ১০ লাখ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। পাশের পশ্চিমবঙ্গে দুই কোটি ডলারে প্রতিমেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি হয়েছে। একই সাথে তিনি বলেন, একশ’ টাকার জিনিস কোনো কারণে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হলে তার মাধ্যমে টাকা আদায় করে নেয়া যৌক্তিক নয়। বরং এর ফলে অসামঞ্জস্যমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও বলেন, সরকারকে যেকোনোভাবে আয় করে দেয়ায় আমি বিশ্বাসী নই। আমি চাই দেশের টেলিকম খাত বিকশিত হোক। এতে করে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আয় হবে।

ভিওআইপি নিয়ে উদ্বেগ

ভিওআইপির অবৈধ ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এর মাধ্যমে গুটিকয়েক লোক লুটে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। একই কারণে মানসম্মত সেবাও পাচ্ছি না, কল ড্রপ বাড়ছে। বিটিআরসির সাথে অবৈধ ভিওআইপির কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে অবৈধ কল টার্মিনেশন হয় না। ইন্দোনেশিয়ায় ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত অবৈধ ভিওআইপি কল হচ্ছে, ভারতে ৫০ শতাংশ। এরপরও আমরা ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এতে বৈধ কলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলে দাবি তার।

বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বনের ফলে দেশে অবৈধ ভিওআইপি কমেছে দাবি করেন সুনীল কান্তি বলেন, ‘নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি দেশে বৈধ পথে আসা কলের পরিমাণ প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিটে নেমে গেলেও বর্তমানে তা চার কোটি মিনিট পেরিয়ে গেছে।’

মোবাইল অপারেটরদের আন্তর্জাতিক অডিট

মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর অডিট সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে সুনীল কান্তি জানিয়েছেন, অডিটের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে অডিটের আগের সব প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের মাধ্যমে এর নতুন কার্যক্রম শুরু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এক্ষেত্রে শুধু কাগজপত্রের হিসাবই নয়, বরং প্রযুক্তিগত অডিটও করা হবে।

তাহলে ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া গ্রামীণফোনের অডিটও কি নতুন করে শুরু করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা যেহেতু আদালতে আছে, আদালতের রায়ের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাছাড়া সবকিছু নিয়ে বিটিআরসি কোর্টে যাবে না। কোর্টের ঝামেলা যতটা সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নেয়া এবং বিতর্কিত বিষয়গুলোকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।

দুর্বল অবকাঠামো

বৈঠকে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল বলে উল্লেখ করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আরও শক্তিশালী অবকাঠামো দরকার। এক্ষেত্রে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক দিক নিয়ে তারা ইতিবাচক মন্তব্য করলেও এ বিষয়ে কেউ ভালো কিছু বলেন না। যোগাযোগের জন্য দেশব্যপী ফাইবার ক্যাবল দিয়ে নেটওয়ার্কিং করা, সাথে দুর্গম এলাকায় ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তৈরি করাসহ আরও অনেক বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের দুর্বল অবকাঠামো উন্নত করা এবং কলসেন্টারগুলোকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে খুব শিগগিরই কমিশন উদ্যোগ নেবে বলে তিনি জানান।

কোয়ালিটি অব সার্ভিস

মোবাইল ফোন অপারেটরের গুণগত সেবার দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে থাকছে বলে দাবি করে সুনীল কান্তি বোস বলেন, এ বিষয়ে এখন বিটিআরসি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। দায়িত্ব নেয়ার সময় থেকেই এটি তার জন্য দুশ্চিন্তার হয়েছে দাবি করে বলেন, সেকেন্ডে সেকেন্ডে এখন কল ড্রপ হয়। সব মিলে মোবাইল ফোনের গুণগত সেবা একেবারেই পড়ে গেছে। চেয়ারম্যান বলেন, মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপনের বিষয়টিকে নিয়ম-নীতিমালার মধ্যে আনার পরিকল্পনা করছেন তারা। গ্রাহক না চাইলে তার কাছে যাতে কোনো বিজ্ঞাপন না যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে

কজ
ফিডব্যাক : netdu@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস